দেবতা ও অসুরগণ:
পুরাণ কাহিনীতে অসুর ও দেবতাগণকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে তাঁরা পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। আদিতে ইরানি আর্য আর ভারতীয় আর্য একই গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন।
আর্য: পণ্ডিতগণের মত সাপেক্ষে এ কথা বলা যায় যে, প্রায় ৫০০০ বছর আগে রুশ দেশের উরাল পর্বতের দক্ষিণে তৃণাচ্ছন্ন শুষ্ক সমতলে একটি ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক জাতিগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল।
এঁরা নর্ডিক বা উদীচ্য নামে পরিচিত। শ্বেতকায়, দীর্ঘদেহী, নীলচক্ষু, হিরণ্যকেশী, দীর্ঘ কপাল, সরল খাঁড়া নাসিকা। বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায়, প্রথমে এই গোষ্ঠী 'ইন্দোগেরম্যানিশ' নামে পরিচিত ছিল।
পরবর্তীতে এঁরাই 'ইন্দো-ইউরোপীয় নামে পরিচিতি লাভ করে। বিভিন্ন কারণে, সম্ভবত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিকারের অপ্রতুলতার কারণে তাঁরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। আনুমানিক ২০০০ খ্রীস্টপূর্বে
এমনই হিত্তিও ভাষাভাষী একটি গোষ্ঠী এশিয়া মাইনরে কাপ্পাদোসিয়া অঞ্চলে এবং আর একটি বৃহৎ ইন্দো-ইরানীয় গোষ্ঠী মধ্য এশিয়ায় বসবাস শুরু করেন। সম্ভবত এই সময়েই ঋগ্বেদের প্রাচীনতম
সূক্তগুলো রচিত হতে থাকে। এই ইন্দো-ইরানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন গোত্র ছিল। 'মদ্র', 'পার্শব', 'পারস', 'পুলস্ত', 'ভরত', 'কাশ্ব' বা 'কাশ্যপ', 'বশ', 'তুর্ব' ইত্যাদি এমনই কিছু গোত্র।
এই সময়ে তাঁরা ঘোড়াকে পোষ মানিয়েছেন বটে তবে উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলতে পারেন নি।
পণ্ডিতদের মতে প্রাচীন আর্যগোষ্ঠী কিছুকাল মধ্য এশিয়ার আমুদরিয়া,শিরদরিয়া উপতক্যা, যা বর্তমানে আফগানিস্তানের উত্তরে উজবেকিস্তানে অবস্থিত, তথায় বসবাস করেছিলেন।
এখানে বসবাস কালে আর্যগণের একটি অংশে বিশেষ একটি জীবনচর্চা গড়ে উঠেছিলো যা প্রাচীন আর্যগোষ্ঠীর জীবনচর্চা থেকে ভিন্ন। আদিম আর্যগণ অগ্নি ও প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনা
করতেন। নতুন এই গোষ্ঠী কিছু ভাবরূপ দেবতার পূজা আরম্ভ করেন। এসব কারণে তাঁদের মধ্যে মতদ্বৈততা শুরু হয়। প্রাচীন প্রাকৃতিক শক্তিরূপী দেবতারা দেইবা বা দইব (ইন্দো-ইরানিয়) এবং
সংস্কৃত দেব নামে পরিচিত হলেন। আর নব্য আর্যগোষ্ঠীর ভাবরূপী উপাস্য দেবগণ অসুর নামে চিহ্নিত হলেন। দেব বা দইব দলের প্রধান হলেন ইন্দ্র আর অসুর দলের প্রধান হলেন বরুণ।
পণ্ডিতদের মতে অসুরপন্থীরা কৃষিকাজ ও গো-পালন করতেন। তাঁরা ছিলেন মার্জিত রুচির চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। আর দেবপন্থীরা ছিলেন অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর দুর্ধর্ষ শিকারী যুদ্ধংদেহী ভাবাপন্ন।
আবার রোমিলা থাপার তাঁর 'ভারতবর্ষের ইতিহাস' বইতে লিখেছেন, ইন্দো-ইউরোপীয়রা নির্গত হয়েছিলেন, কাস্পিয়ান সাগর ও দক্ষিণ রাশিয়ার স্তেপ অঞ্চল হতে। তারপর এঁরা বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত হয়ে
দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েন পশুচারণ ভূমির খোঁজে। তাঁরা এলেন গ্রীস ও এশিয়া মাইনরে, ইরান ও ভারতবর্ষে। তখন এঁদের বলা হলো আর্য।
অনেকানেক পণ্ডিতের মতে ১৬০০-১৫০০ খ্রীস্টপূর্বের সমসাময়ীক কালে এই সকল গোত্রের মাঝে বিভিন্ন সামাজিক নিয়ম-নীতির বিষয়ে চরম মতদ্বৈধতা দেখা দেয় এমনকি তাঁদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃস্টি হয়।
এখানে প্রাসঙ্গিক ভাবে একটি বিষয়ের উল্লেখ করতে হয়, যুদ্ধের প্রয়োজনে কয়েকটি সমমনা গোত্র একত্রিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে একজন সেনানায়ক মনোনীত করে। তাঁর উপাধি হয় ইন্দ্র। এই 'ইন্দ্র'
এর নেতৃত্বে পরশুজন ও নিম্নমাদ্রজনের উপর আক্রমন করে। এখানে এই 'জন' এর পরিচয়ে বলতে হয়, তখনকার সমাজব্যবস্থায় কয়েকটি পরিবার মিলে একটি গ্রাম, কয়েকটি গ্রাম মিলে
একটি 'বিষ্য' এবং কয়েকটি বিষ্যের সমন্বয়ে একটি 'জন'। তাদের অনেক পুরুষ এবং শিশুদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং রমনীগণকে তাদের অধীন করে নেয়। কয়েক শতাব্দি পরেএই 'ইন্দ্র' দেবতা
হিসাবে পূজিত হতে থাকেন।
অনেক পার্শব ও নিম্নমাদ্র নরনারী প্রান বাঁচিয়ে বক্ষু উপত্যকা (তাজিকিস্তান) ছেড়ে পশ্চিম দিকে পালিয়ে যায়। তাদের বংশধরেরা পরবর্তিতে দীর্ঘকাল সেখানে বসবাস করায় পার্শব
(পার্সিয়ান বা ইরানী) এবং মাদ্র (মিডিয়ান) নামে পরিচিতি লাভ করে। এদের পূর্বপুরুষের উপর 'ইন্দ্র' এর নেতৃত্বে যে অত্যাচার হয়েছিল তা তারা কখনই ভোলেনি।
ধারনা করা হয় জরথুশত্র তাদেরই বংশধর ছিলেন, এবং সে কারনেই তিনি 'ইন্দ্র'কে অস্বীকার করেছিলেন।, এবং নতুন পথের সন্ধান করেছিলেন।
আবার অনেক প্রাজ্ঞ ব্যাখ্যাকারগণের মতে দেবতা ও অসুরগণ একই গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁদের মধ্যে কোন এক সময়ে মতদ্বৈধতার কারণে বা নেতৃত্বের কোন্দলে তাঁরা পৃথক দুটি দলে বিভক্ত
হয়ে যান, এবং একদল আরেকদলের উপাস্যদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে থাকেন। আমরা কিন্তু ঋগ্বেদে ইন্দ্রকে দেবতা এবং অসুর এ দুই রূপের পাই। তবে ঋগ্বেদের অসুর ইন্দ্রের কাহিনী সম্ভবত আলাদা।
এ সকল কারণে গোত্রগুলির মধ্যকার সমমনা গোত্রগুলির ভারতবর্ষে আগমন ঘটে। আর অন্যান্য গোত্রগুলি ইরানে বসতি স্থাপন করে।
কোন কোন পণ্ডিতের মতে, ইন্দো-ইয়োরোপীয় জনগোষ্ঠীর যে শাখা শেষ পর্যন্ত ভারববর্ষে পৌঁছেছিল, ইরানের মধ্য দিয়েই তারা এদেশে আসে। সম্ভবত সেই সময়ে তারা কাসাইটদের প্রতিবেশীরূপে কিছুকাল
কটিয়েছিল। এই কাসাইট শাখা ইন্দো-ইয়োরোপীয় জনগোষ্ঠীর মূল জনস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খ্রীস্টপূর্ব ষোড়শ শতকের কাছাকাছি সময়ে ইরানে বসতি স্থাপন করে। গবেষকেরা
বলেন, খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দ্বিতীয়ার্ধে অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল ইরান থেকে ভারতবর্ষে নতুন বসতি স্থাপনের সন্ধানে প্রবেশ করেছিলো। অনুমান করা হয় যে, ১৩০০ খ্রীস্টপূর্ব
নাগাদ ইরানীয়দের সাথে প্রত্ন-ভারতীয় আর্যজনগোষ্ঠীর তুমুল মতান্তর ও সেই কারণে বিচ্ছেদঘটে এবং দক্ষিণ-পূর্বদিকে হয়ে একসময়ে তারা ভারতবর্ষে উপস্থিত হয়।
সম্ভবত ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি কোন এক সময়ে কোন কোন ইন্দো-ইয়োরোপীয় গোষ্ঠী খাইবার গিরিপথ দিয়ে কাবুল উপত্যকায় উপস্থিত হয়। এক কিছুকাল পরে অন্যান্য
ইন্দো-ইয়োরোপীয় গোষ্ঠী হিন্দুকুশ পর্বত হয়ে বলখ্ এলাকায় উপস্থিত হয়। এই শেষোক্তেরাই পরবর্তীকালে বৈদিক আর্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ইতোমধ্যে উপাস্যদের উদ্দেশ্যে স্তোস্ত্রগীত রচিত হয়েছে যা মৌখিক পরম্পরায় রক্ষিত হয়ে আসছিলো।
মতদ্বৈধতা সত্বেও সমগ্র আর্যগোষ্ঠীর উপাস্য হিসাবে 'ইন্দ্র', 'বরুণ' প্রভৃতি দেবগণের প্রশস্তিগীত ঋগ্বেদে দৃষ্ট হয়। ঋগ্বেদে এঁদেরকে অসুর হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে।
"ন তে সখা সখ্যাং বষ্ট্যেতৎসলক্ষা যদ্বিষুরূপা ভবাতি।
মহস্পুত্রাসো অসুরস্য বীরা দিবো ধর্তার উর্বিয়া পরি খ্যন্ ৷৷" (ঋগ্বেদ/১০ম মন্ডল/সুক্ত: ১০/ঋক: ২)
অর্থাৎ,
(যমের উত্তর) -তোমার গর্ভসহচর তোমার সাথে এ প্রকার সম্পর্ক কামনা করেন না। যেহেতু তুমি সহোদরা ভগিনী, অগম্যা। আর এ স্থান নির্জন নহে, যেহেতু সে মহান অসুরের স্বর্গধারনকারী
বীর পুত্রগণ পৃথিবীর সর্বভাগ দেখছেন। ঋগ্বেদের টীকাকার সায়ণাচার্য, 'অসুরের বীর পুত্রগণ' বলতে স্বর্গধারী দেবগণকেই বুঝেছেন।
"এবা মহো অসুর বক্ষতায় বম্রকঃ পড়্ভিরুপ সর্পদিন্দ্রম্।
স ইয়ানঃ করতি স্বস্তিমস্মা ইষমূর্জং সুক্ষিতিং বিশ্বমাভাঃ ৷৷" (ঋগ্বেদ/১০ মন্ডল/সুক্ত: ৯৯/ঋক: ১২)
অর্থাৎ,
হে অসুর ইন্দ্র! আমি বস্র, প্রচুর হোমদ্রব্য দেবার জন্য পাদচারী হয়ে তোমার নিকট এসেছি। তুমি এসে এ ব্যক্তির অর্থাৎ আমার মঙ্গল কর, অন্ন, ও বল এবং উৎকৃষ্ট গৃহ, এমন কী সকল বস্তুই
দান কর।
"পশ্যন্নন্যস্যা অতিথিং বয়ায়া ঋতস্য ধাম বি মিমে পুরূণি।
শংসামি পিত্রে অসুরায় শেবমযজ্ঞিয়াদ্যজ্ঞিয়ং ভাগমেমি ৷৷" (ঋগ্বেদ/১০ম মন্ডল/সুক্ত: ১২৪/ঋক: ৩)
অর্থাৎ,
পৃথিবী ভিন্ন আর এক যে গমন পথ আছে অর্থাৎ আকাশ, তথাকার যিনি অতিথি অর্থাৎ সূর্য, আমি তাঁর প্রতি লক্ষ্য রেখে অর্থাৎ তাঁর বার্ষিক গতি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে নানা যজ্ঞের
অনুষ্ঠান করে থাকি। অসুর দেবগণ পিতাস্বরূপ, তাঁদের মুখোদ্দেশে আমি স্তব উচ্চারণ করে থাকি। যজ্ঞের অযোগ্য অপবিত্র স্থান হতে আমি যজ্ঞের উপযুক্ত স্থানে গমন করি।
"অব তে হেলো বরুণ নমোভিরব যজ্ঞেভিরীমহে হবির্ভিঃ।
ক্ষয়ন্নস্মভ্যমসুর প্রচেতা রাজন্নেনাংসি শ্রিশথঃ কৃতানি ৷৷" (ঋগ্বেদ/১ম মন্ডল/সুক্ত: ২৪/ঋক: ১৪)
অর্থাৎ,
হে বরুণ, নমস্কার করে তোমার ক্রোধ অপনয়ন করি, যজ্ঞের হব্য দান করে তোমার ক্রোধ অপনয়ন করি। হে অসুর! হে প্রচেতঃ! হে রাজন! আমাদের কৃত পাপ শিথিল কর।
ঋগ্বেদের টিকাকার সায়ণাচার্য এই সুক্তের ব্যাখ্যার্থে বলেছেন, অস্ ধাতু অর্থ ক্ষেপণ, অতএব অসুর অর্থ অনিষ্টক্ষেপনশীল। সায়ণাচার্য আরও বলেছেন, বরুণকে অসুর বলবার এ অপেক্ষা গূঢ় কারণ
আছে। আদিম আর্যগণ উপাস্যদেবকে অসুর অথবা দেব উভয় নামেই চিহ্নিত করতেন। পরে আর্যগণের মধ্যে বিবাদ ও বিচ্ছেদ হয়ে দুটি দলে বিভক্ত হল এবং তাদের মধ্যে উপাস্য দেব নিয়ে
বিভাজন সৃষ্টি হল। সেই থেকে দলের লোক অন্য দলের উপাস্যদের নিন্দাসূচক অর্থ করলেন। এই আর্যগণের একটি দল ভারতবর্ষে এসে তারা হলেন ভারতীয় আর্য। এই তারাই প্রাচীন সনাতন
ধর্মালম্বী, যাদেরকে আমরা এখন হিন্দু বলি। আর প্রাচীন আর্যদের আরেকটি দল প্রাচীন ইরানীয়। এই সনাতনী বা হিন্দুগণের উপাস্যরা হলেন দেবতা, আর ইরানীয়দের উপাস্যদের নাম হলো
অসুর। এই সকল আর্যগোষ্ঠীর একে অপরের উপাস্যদের হীন প্রতিপন্ন করতে তাঁদের প্রতি নিন্দাসূচক বিশেষণ ব্যবহার করতে শুরু করলেন। ইরানীয়গণ বা পার্সিকগণ তাদের ধর্মগ্রন্থ
আবেস্তায় অসুরগণকে আহুর মাজদা বা শুভশক্তি হিসাবে গণ্য করে।
গাঁথায় স্বয়ং জরথুসত্র দেওয়াদের সম্পর্কে বলেছেন, দেবতা= কপট/অসুদ্ধ ঈশ্বর। এঁদেরকে বয়কট করার কথা বলা হয়েছে।
প্রাচীন কালে বক্ষু উপত্যকা (তাজিকিস্তান) থেকে আগত 'অঙ্গিরা' নামক একজন আর্য ঋষি, তক্ষশিলায় (পশ্চিম আফগানিস্তান) তাঁর নিজ গৃহে জ্ঞানালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের মাঝে
আর্যদের অতীত ঐতিহ্য, আচারবিধি এবং আর্যরক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দান করতেন। এই আর্য ঋষিই মৃত মানুষের শবদেহ অগ্নিতে দাহ করার বিধান দিয়েছিলেন।
জরথুসত্রের অনুসারীরা মৃতদেহকে অপবিত্র মনে করে। আর অগ্নি হচ্ছে পরম বিশুদ্ধ যা নাকি 'আহুর মাজদা'র প্রতিক। এই অগ্নিকে অবিশুদ্ধ করার বিধান দেবার কারনে জরথুসত্রবাদীরা
ঋষি অঙ্গিরাকে ঘৃণার চোখে দেখতেন। সে কারণেই সম্ভবত তাঁর নাম থেকেই 'অঙ্গর মইন্যু' বা অশুভশক্তি ধারনাটি নেওয়া হয়েছে।
ঋষি অঙ্গিরা ছিলেন দেবপূজারীদের গুরু।
উল্লেখযোগ্য আরও একটি বিষয় হল, জরথুশত্রের গোত্র 'স্পিতামা' সম্পর্কে অথর্ববেদের 'ভার্গব সংহিতা'য় অসুরপুজারীদের গুরু শুক্রাচার্যের গোত্রকে 'স্পিতামা' হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে একদল জরথুশত্র ধর্মালম্বীরা পারস্যের পারস প্রদেশ হয়ে হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভারতের গুজরাটে চলে এসেছিলেন। এঁরা পারস প্রদেশ থেকে এসেছিলেন বলে পার্সি নামে অভিহিত হন।
বর্তমানে ভারতে প্রায় সত্তর হাজার পার্সি আছেন, এঁদের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই মুম্বাইতে থাকেন।
জরথুশত্র ধর্মালম্বীদের ধর্মগ্রন্থ 'আবেস্তা'য় এই অসুরদের আহুর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই যে প্রাচীন জনগোষ্ঠী যাঁরা একদা রাশিয়ার স্তেপ অঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো, এঁরাই বেদে 'আর্য', আবেস্তায় 'ঐরয়' প্রাচীন পারসিক গিরিলিপিতে 'অরিয়' নামে উল্লেখিত হয়েছেন।
সহায়তা:
১)'পৌরাণিকা' (প্রথম খণ্ড)- অমলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২)'ধর্মের উৎস সন্ধানে' - ভবানীপ্রসাদ সাহু
৩)'ইতিহাসের আলোকে বেদ ও বেদিক সাহিত্য' - সুকুমারী ভট্টাচার্য
আর মুখ্যত আমার 'খেরোখাতা'।
মন্তব্য
আরো আসুক। পড়তে থাকি।
"পণ্ডিতদের মতে অসুরপন্থীরা কৃষিকাজ ও গো-পালন করতেন। তাঁরা ছিলেন মার্জিত রুচির চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। আর দেবপন্থীরা ছিলেন অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর দুর্ধর্ষ শিকারী যুদ্ধংদেহী ভাবাপন্ন।" - অর্থাৎ অসুররা দেবতাদের তুলনায় মার্জিত রুচির চিন্তাশীল মানুষ। পণ্ডিতদের এই সিদ্ধান্তের জন্য কি ধরণের যুক্তি পাওয়া গেছে?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এখন জেনেটিক বিশ্লেষণও ইউরোপীয়দের ভারতে আগমন নিশ্চিত করছে, তবে তাদের আগমন আরও অনেক আগে থেকে- দশ হাজার বছরেরও আগে থেকে কখনো কম কখনো বেশী হারে হয়েছে বলা হচ্ছে। সম্ভবত প্রথম দিকের অভিবাসীগন দ্রাবিড় ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিলেন।
ইরানের বাইরে পার্সি বা পার্সিয়ান নামের উদ্ভব আরো অনেক আগে। এক সময় ইরানের ফার্স অঞ্চলটি শৌর্য-বীর্য প্রভাব প্রতিপত্তিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ফলে এদের নামকরন হয় ফার্সি, সম্রাট দারায়ুস ছিলেন একজন মহান ফার্সি। তাঁর বাহিনী গ্রীস আক্রমন করলে ইউরোপেও ফার্সি তথা পার্সি নামটি ব্যাপকতা লাভ করে, এসব খৃষ্টজন্মেরও অনেক আগের কথা। সেই থেকে এক সময় ফার্সির আড়ালে মূল ইরানই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ওরে কারে দেখি সচলে!
কেজো লেখা-
নতুন মন্তব্য করুন