মন্টা খ্রাপ। হঠাত্ কইরা আবার কয়দিন ধরে মনে হইতেসে সবই বৃথা। ঘুরতে ঘুরতে এই লিংকটা পেলাম। অসাধারণ।ছবিপ্রেমীদের স্বর্গ। আমি সবকিছু অবশ্য অনেক দেরীতে খুঁজে পাই। উইকিপিডিয় প্রথম আবিষ্কার করে নিজেকে কলম্বাস মনে হচ্ছিলো। যা হোকম ছবি দেখে মনে হলো বারোক নিয়া একটু আঁতলামি করি।
বারোক শিল্প-সাহিত্যের (অন্তত: আজ আমরা যে নামে এই সময়কালকে চিহ্ণিত করে থাকি) স্থায়িত্বকাল ১৬০০-১৮০০ সাল পর্যন্ত। বারোক সময়কাল সম্পর্কে কথা বলতে গেলে মনে হয় রেনেসাঁ সময়কাল সম্পর্কে হালকা একটু রিভিউ করে নেয়া দরকার।
রেনেসাঁর সাথে বারোকের সম্পর্ক হলো "তোমার হল শুরু আর আমার হল সারা"। রেনেসাঁর ব্যপ্তিকাল ১৪০০-১৭০০ শতাব্দি। রেনেসাঁ কে দেখা হয় মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের মাঝে এক সেতু হিসেবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বারোক অতি স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক যুগের সূচনাকালকে চিহ্ণিত করে। অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে এগুলা সবই পাশ্চাত্য সভ্যতার ঘটনা। এই যুগে শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে, দর্শণের দিক থেকে ভারত-উপমহাদেশ খুব একটা পিছিয়ে ছিল বলে আমি বোধ করি না। কিন্তু সেই সময়ে আমাদের নিজেদের দেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনো ধারণাই আমার নাই। সমাজ বইয়ে ক্লাশ সিক্সে কোন সময়ে কোন রাজা ক্ষমতায় ছিলো সেই সম্পর্কে সামান্য একটু আইডিয়া দিয়েই সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল কোন নদী কোথায় উত্পন্ন হয়ে কোথায় গিয়ে মিশছে তা মুখস্ত করে শূণ্যস্থান পূরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তারপর আর কখনো কেউ নিজের শেকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নি। বাংলা বইয়ে কবি কালিদাস রায়ের বঙ্গবানীতেই কি আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি-চিন্তার সূচনা? মানতে কষ্ট হয়।
আমার একটা ক্ষীণ সন্দেহ, হয়তো ধর্মীয় গোড়াঁমি আমাদের নিজ ঐতিহ্য ইতিহাস ভুলতে চাওয়ার বড় কারণ। আর বিদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের শিক্ষাও বাংলা বইয়ে পড়া দুইয়েকটা প্রবন্ধতেই সীমাবদ্ধ। আমাদের মাধ্যমিকের নবম ও দশম শ্রেনী যায় বোধকরি ১৮ টা গদ্য, ১৮ টা পদ্য (বেশি বলছি কি?) ও একটা উপন্যাসের দাঁড়ি কমা সহ পাঞ্জেরী গাইড মুখস্ত করে। প্রমথ চৌধুরীর "বই পড়া" প্রবন্ধে যার সম্পর্কে সাবধান করা তার মাধ্যমেই.... থাক্
য হোক... ফেরত আসি আসল কথায়... রেনেসাঁ যুগের শিল্রীরা ছিলেন আশাবাদি। তাদের আঁকা ছবিতে থাকতো সাম্য, সিমেট্রি (অনেক কষ্ট করেও বাংলা শব্দটা মনে করতে পারছি না), সৌন্দর্য়ের প্রকাশ এবং বিধি বদ্ধতা (অর্ডার)।
রেনেসাঁ যুগে মানুষ স্বপ্ন দেখত সুন্দর ভবিষ্যতের, সুন্দর পৃথিবীর। তাঁদের আঁকা ছবি, গাওয়া গান ও লিখিত কবিতা ও গদ্যে ফুটে উঠত তার প্রকাশ-
Sandro Botticelli এর ভেনাসের জন্ম (দ্য বার্থ অব ভেনাস) আরো একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
[img=auto]http://www.ibiblio.org/wm/paint/auth/botticelli/botticelli.venus.jpg
[/img] মূল বিষয় ছবির মাঝে রেখে সিমেট্রি সৃষ্টি, সাম্য, স্থিরতা ও প্রশান্তি ছবিতে প্রবলভাবে প্রকট।
আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় অস্হিরতা ও নানা পারিপার্শিকতার কারণে খুব তাড়াতাড়িই এই মনোভাবের পরিবর্তন দেখা গেল সমাজে। মানুষ হল অনেক নেতিবাচক - আপাতদৃষ্টি ও বাস্তবতাকে দেখতে শুরু করলো অন্যভাবে। চিন্তাধারার হলো পরিবর্তন যার ছাপ পড়ল শিল্পতেও । ছবিতে আগের মত সাম্য রাখা হত না, থাকত না অর্ডার। ছবির বিষয়বস্তু হত অনেক বেশি বাস্তবমুখি।
মজার ব্যাপার হল, এই সময়ে কাথলিক চার্চ ঠিক করল যে সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মীয় বক্তব্য পৌঁছাতে হবে শিল্পের মাধ্যমে। বারোক সময়ের বেশিরভাগ শিল্পকর্মই তাই কোনো না কোনো ভাবে খ্রীষ্টধর্মের সাধে সম্পৃক্ত।
ইলিউশনিজম এ সময়ের শিল্পে একটা বড় অংশ দখল করে ছিল। বিস্তারিত উইকিতে দেখতে পারেন।
ধর্মীয় লেবাসের আড়ালেও বারোক ছবিতে থাকতো অস্থিরতা, বাস্তবতা, নেতিবাচক মানসিকতা ও ভ্রম। নারীবাদ ও নারী জাগরনের অনেক ধারনাই এসময়ে রূপ নিতে শুরু করে।
রেনেসাঁ যুগের ছবির সাথে বারোক যুগের ছবির তফাত্ নিচের ছবি দুটো তুলনা করলে একটু স্পষ্ট হতে পারে। দুটি ছবির বিষয়বস্তু একই। জুডিথ শত্রু সেনাপতিকে প্রলুব্ধ করে তাঁর তাঁবুতে প্রবেশ করে। তারপর..
প্রথমটা মাইকেল্যাঞ্জোলো, পরেরটা আর্তেমিসিয়া জেন্টিলেস্কি-
সময় স্বল্প বিধায় তাড়াহুড়ো করে শেষ করলাম। অগোছালো হয়ে যাবার জন্য দু:খিত।
মন্তব্য
"নেতিবাচক" শব্দটি আপত্তিজনক।"অনুসন্ধিতসু" ভালো ব্যাখ্যা করে বোধহয়।
এক দিক দিয়ে ঠিক আবার অন্যভাবে এই একই কাজ Late renaissance তে রেম্ব্রান্ডট(Rembrandt) শুরু করেন। উনি বারোক এ পড়েন না।
এ ছবির মূল বিষয় বিষন্নতা এবং শুধু ভেনাস সে কারনে স্থির।(বাতাসের বেগ এবং চুলের ক্যালিগ্রাফি(arabesque) দেখুন)।
আশপাশ স্থির তো একেবারেই নয়(বরং ঠিক ঊল্টোটা। মূল বিষয়ের জন্য আশপাশ কর্মব্যাস্ত।Contrast).
আপনি এ লেখাটির একটি সিরিজ করতে পারেন।আরো আগে(রেঁনেসা) থেকে শুরু করলে আরো ভালো হয়। একজন নিয়মিত পাঠক পাবেন।
হুম। ঠিক বলেছেন। আমি আপনার সাথে একমত। ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করার সময় এটা হয়েছে। আরেকটু সময় নিয়ে করা উচিত ছিল। "স্থির" শব্দটা একেবারেই যাচ্ছে না।
"Proportion, order, reason, harmony, natural, symmetry, grace " এর অতি সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করতে গিয়ে একেবারেই ল্যাজে গোবরে হয়ে গিয়েছে। আমি আন্তরিক ভাবে দু:খিত।
তবে মনে হচ্ছে রেনেসাঁ নিয়ে আপনি লিখতে শুরু করলে আমরা অনেক বেশি শিখতে পারব। আমি এসব দিকে একেবারেই অর্বাচিন। শুরু করুন না.. তারপর না হয় আমিও চামে দিয়া বামে দুই একটা লেখা দিলাম ঢুকায়া...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
এখানেই সমস্যা। যখন পড়েছি, তা করেছি বাধ্য হয়ে। যখন মজা পেয়েছি তখন মজাদার কএকজন কে নিয়েই ঘাটাঘাটি করেছি।
পুরো সময় নিয়ে লিখতে গেলে পড়াশোনা করতে হবে। তবে আপনি যদি কংকাল ধরেন তবে আমি মাংস লাগাতে পারি। সব সময়েই আমার কএকজন প্রিয় শিল্পী আছেন। তাদের কে নিয়ে লিখতে পারি।(মিকেল এঞ্জেলো, কারাভাজ্জিও, রেম্ব্রেন্ডট এরকম)।
মনামীতে(আফরিন) ছবিটি ভারমীর(Vermeer) এর
"The Girl with pearl earing"। উনি বারোক স্টাইলের।
মুভিটি দেখলে ব্যাপারটি সহজ হবে। রেঁনেসা পর্যন্ত শিল্পকলার(বিষয়বস্তু) প্রত্যেক্টির মাধ্যম কমবেশী প্রধানত বিধাতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বারোক এ এসে তা প্রথম প্রধানত সাধারন মানুষের শিল্পকলা হয়।
বিষয় দেখে খুবই আগ্রহী হলাম, কিন্তু লেখাটা দ্রুত শেষ হয়ে গেলো যে। এটা সিরিজ করুন এবং আরেকটু বিশদে ছবি নিয়ে লিখুন। এক একটা ছবি ধরে আলোচনা করলে বড়ো ভালো হয়। ছবির জ্যামিতি খুব আগ্রহের বিষয়, তবে সে বিষয়ে জ্ঞান খুবই কম তাই আরো জানতে ইচ্ছে হয়। সে নিয়েও লিখুন সাথে সাথে।
পাঠুদার সাথে একদম সহমত। একটা কাজ করতে পারেন ভাই, রেনেসাঁ থেকে শুরু করে বারোকের এই নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ১০০ বছর করে করে বিখ্যাত ছবিগুলো সহ আপনার ব্যাখ্যা আর জ্যামিতিক ব্যাখ্যা দিয়ে একটা সিরিজ করেন।
দাবি জানায় গেলাম।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ভালো লাগলো।
- মুলাদা আর সুহানের সাথে একমত প্রকাশ করলাম।
উপরের ছবিটার নাম আমি জানতাম 'ভিট্রুভিয়ান ম্যান', খুব সম্ভবত ভিঞ্চির আঁকা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভালো লেগেছে। একটা সিরিজ লিখে ফেলেন আরো জানতে চাই।
হুম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখাটায় আসলেই কিন্তু অস্থিরতার ছাপ। সিরিজ হিসেবে শুরু থেকে শুরু করতে যারা মন্তব্য করছেন, তাদের সাথে সহমত পোষণ করছি আমিও।
নিশ্চিত নই, তবে মনে হয় 'সিমেট্রি'র বাংলা প্রতিসাম্য বা এ জাতীয় কিছু হবে।
চিত্রকলা বা নন্দনতত্ত্বের বুঝিনা কিছুই, তবে আগ্রহ ও কৌতুহল রয়েছে খুব। দেখেন, আমাদের অভাজনদের কিঞ্চিৎ তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব কিনা !
ধন্যবাদ লেখার বিষয়ের জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন