টিপিক্যালি অন্যরকম

স্বপ্নাহত এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নাহত (তারিখ: সোম, ১৮/০২/২০০৮ - ১১:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(ফার্স্ট ইনিংস)

কিছু কিছু দিন আছে যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেই মনে হয় দিনটা অন্যরকম হতে যাচ্ছে।কিন্তু আজকে ঘুম থেকে উঠেই বুঝলাম আজকের দিনটা সেরকম হাতি ঘোড়া টাইপ কিছু হবেনা।বিরক্তি নিয়ে লেপের নিচ থেকে ইঁদুর এর মত চোখ বের করে দেয়ালের দিকে তাকালাম।ধুর... দেয়াল ঘড়িটা দেখি ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে চুপচাপ বসে আছে।কী মুশকিল।রেস্ট নিবার আর টাইম পাইলোনা।ঘড়ির ব্যাটারি বদলাতে হবে।ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরি।কিন্তু টাইম কিভাবে দেখি।মাথার পাশে একটা গরিবি এন সিরিজের ১১০০ মডেলের সেট আছে ভুলেই গেসিলাম।নাক মুখ কুঁচকে সেটার দিকে তাকিয়ে লাভের লাভ কিছুই হলোনা।ঠান্ডার দিনে মেজাজটা আরেকটু গরম হলো শুধু।কাল রাতে সীম চেঞ্জ করে বিডিচ্যাট এ নতুন আলাপ হওয়া এক মেয়ের সাথে কথা বলার পর টাইম সেট করার কথা আর মনে ছিলনা।বাঙ্গালী আর মানুষ হইলোনা...

পাশের বেড থেকে সামীর এর নাক ডাকার ঘড় ঘড় আওয়াজ আসছে।শুনে থার্মো ডিনামিক্স ল্যাব এর টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের কথা মনে পড়ে গেল।এবং বেশ আতংক আর আশঙ্কার সাথে আরো মনে পড়লো আজকে আটটায় ফার্স্ট পিরিয়ডেই থার্মোডিনামিক্স ক্লাস টেস্ট হবার কথা।এর আগের একটা ক্লাসটেস্ট দেই ই নাই...সেকেন্ডটার মার্ক্‌স লিখতেও কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে।থার্ড ক্লাসটেস্টও গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিলে আর থাকলো কি।নিজেরেও তখন মান ইজ্জত ডাঙ্গায় রেখে ঝাঁপ দিতে হবে।চোখে যাও একটু ঘুম ঘুম ভাব ছিল তাও গেল।লেপের ওম বিছানায় রেখে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ি।দেখি স্বপ্নিলটাও মরার মত ঘুমাইতেসে।কালকে সারারাত জেগে পড়াশুনার ফল।আজকের ক্লাসটেস্ট মিস করলে ব্যাপারটা ওর জন্য রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর চেয়েও প্যাথেটিক হয়ে যায়।সামীর এর সাথে সাথে ওরেও ডেকে তুললাম।

পুলওভার গলার মধ্যে দিয়ে ঢুকাতে ঢুকাতে রুম থেকে বের হলাম।এমনিতেই পাঁচ মিনিট লেট।শকুন হয়ে গরু মরার দোয়া বিড়বিড় করি।স্যার জানি দশ মিনিট লেট করে আসে।নিচতলায় নেমে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে চোখ পড়ে।ক্ষিদাটা আরেকটু বেড়ে গেল মনে হয়।কিন্তু কিস্যু করার নাই...ব্যাপারটা আর আমার হাতে নাই।ক্লাস রুমের দিকে দৌড়াই।গিয়ে শুনি স্যার আজকে পাঁচ মিনিট আগেই এসে বসে আছে।শুনে দাঁত কিড়মিড় করে।বুড়া মানুষ,কই লেপে মুড়ি দিয়া ঘুমাবো।তা বাদ দিয়ে আসছে টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে। ক্লাস টেস্টের কোশ্চেন পেয়ে আমিও স্যারের গুষ্ঠির খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলাম।প্রশ্ন বুঝতে কোন সমস্যাই হলোনা।খালি উত্তর কি হবে এই ভেবে মাথা চুলকাই। তারপরও খুব বেশি মাথা ঘামালাম না।যা জানি তাই লিখলাম।যা জানিনা তাও লিখলাম।বুড়া মানুষ।চশমা ছাড়া খাতা দেখলে ভুল করে নাম্বার দিয়াও দিতে পারে।
টাইম শেষ হবার দুই মিনিট আগেই বীরের মত খাতা জমা দিয়ে দিলাম।আর স্যারের দিকে দিলাম একটা সেমি তাচ্ছিল্যের চাউনি।ভাবখানা এমন যে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে গিলে ফেলার আগেই এই প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া হয়ে যায়।

প্রথম পুলসিরাতটা তো খোঁড়াতে খোঁড়াতে পার হলাম।আরো বাকি তিনটা ক্লাস।এর মধ্যে দুটোই আবার মুহাম্মদ আলী সাহেবের।মন মেজাজ এর যাও একটু অবশিষ্ট ছিল তাও গেল।মনের দুঃখে নেক্সট ক্লাসটা বাঙ মারলাম।পিছনের দরজা বানানোর আইডিয়া যার মাথায় আসছিল তারে ধরে একটা... কিছু একটা দিতে ইচ্ছা করছিল।থাকগা।এমনিতেই আই ইউ টি তে পড়ি।পাবলিক আবার কি ভাবতে কি ভেবে ফেলে।
এরপর ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকলাম পেটের দুঃখ মিটাতে।সেই উছিলায় মনের দুঃখেরও যদি একটা গতি হয়।জ্ঞানী গুনীরা বলেন- পেট আর মন এর মধ্যে গলায় গলায় দোস্তি।একজন খুশি তো আরেকজনও খুশি।জ্ঞানী গুনীদের কথা আমি আবার ফেলতে পারিনা।
গিয়ে দেখি প্লেট রাখার জায়গায় মাত্র একটা প্লেট।প্লেটের চেহারা দেখে আরেক প্রস্থ মেজাজ খারাপ।ফার্মগেট ওভারব্রীজের ফকিরগুলাও এই প্লেট নিয়ে ভিক্ষা করতে রাজি হবেনা।তবু নিলাম।ছাত্রদের অবস্থা মাঝে মাঝে ফকিরদের চেয়েও করুন যায়।রবিবার দিন তেহারি দিবার কথা।ট্যাপ খাওয়া গাজী প্লাস্টিক টাইপ প্লেটটা মামার দিকে বাড়িয়ে ধরলাম।
-মামা,তেহারি দেন।
-তেহারি নাই
-ক্যামনে কি?এত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ক্যামনে?
প্রশ্ন শুনে মামা এমন ভাবে তাকালেন যেন এমন ফালতু প্রশ্ন তিনি জীবনে শুনেন নাই।
এই অবস্থায় বাংলা সিনেমা টাইপ মার মার কাট কিছু ডায়লগ দিবার কথা ছিল।বদলে রাবার কোম্পানির বাই প্রোডাক্ট 'ব্রেড' নিয়েই খুশি খুশি মুখ করলাম।পেটে ক্ষুধা থাকলে কার কি হয় জানিনা,তবে নাদুস নাদুস টাইপ ডায়ালগবাজি অন্তত আমার মুখে আসেনা...

(সেকেন্ড ইনিংস)

দুপুরের আগ পর্যন্ত তো "সেইরকম" কাটলো।ভাবলাম দুপুরের পর যদি ভাল কিছু ঘটে।বাংগালী আবার সেকেন্ড ইনিংস বরাবরই ভাল খেলে... ।বিকেল বেলা ''প্রোডাকশন গ্রুপ'' এর পোলাপান এর সাথে ফুটবল ম্যাচ। ইজ্জত কা সওয়াল।হেরে গেলে মুখ দেখানো যাবেনা।খেলা শুরু হওয়ার দশ মিনিটের মাথায় নিজের ইজ্জত নিয়েই টানাটানি।গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আঘাত পেয়ে সাইডলাইনে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছি।সব শালাই বদমাশ।একটার পর একটা এসে জিগায়... দোস্ত,ঐ খানে কি বেশি লাগছে?একটূ ম্যাসাজ করে দিবো?... কথা শুনে মনে হয় দরদ সব চুয়ে চুয়ে পড়তেসে।কিন্তু ওদের মুখের দিকে তাকালে মনে হবে আজকালকার সহানুভূতি বোধ হয় সব দাঁতে গিয়ে জমা হয়।গুনে দেখিনি... কিন্তু শয়তানগুলার বের হওয়া দাঁতের সংখ্যা ৩২ টার চেয়ে একটাও কম হবেনা... আমার সেকেন্ড ইনিংস এ মিরাকল ঘটানোর ধান্দার ঐ খানেই সমাপ্তি।

রাতের কথা না হয় নাই বা বললাম।মেকানিক্স এসাইনমেন্ট এর চিপায় পড়ে বাপের নাম ভুলে যাওয়াটাই এখন শুধু বাকি আছে।এখন বাজে প্রায় বারোটা।ডেডলাইন এখনো ছয় ঘন্টা দূরের পথ।ম্যালা সময়... A4 পেইজ এর বান্ডিল আপাতত ড্রয়ার এর ভিতরেই মরুক।ভাবলাম কীবোর্ড সামনে টেনে বরং কিছুক্ষণ সুখ দুঃখের ব্লগর ব্লগর করি...

জানালার ওপাশে রাত বাড়ছে। ব্যস্ততা বাড়ছে মোবাইল ফোন হাতে রোমিও পার্টিরও।অফপিক আওয়ার শুরু হল বলে।চিপার খোঁজে একেক জন ছুটছে একেক দিকে।খালি আমার মত হাভাতে পাবলিক এর দুই চোখ থাকে ব্লগিং এ আর দুই কান থাকে মিসকলের আশায়।ওপাশ থেকে সিগন্যাল পেলেই সিম চেঞ্জ আর সকাল বেলা টাইম দেখতে না পেরে হা পিত্যেশ।

তবুও খারাপ কি... নাই দেশে বিচি কলাই সন্দেশ...


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

দোস্ত অতি জোশিলা লেখা। খুবই ভাল লাগল। তোকে দিলাম জাঝা।

স্বপ্নাহত এর ছবি

দোস্ত,বেশি জোশ দিওনা। কালকে মহাগুরু ইকবাল স্যারের পরীক্ষা।
কিছু বুঝতেছিনা... ক্যামনে কি...

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

পিছনের দরজা বানানোর আইডিয়া যার মাথায় আসছিল তারে ধরে একটা... কিছু একটা দিতে ইচ্ছা করছিল

গিয়ে দেখি প্লেট রাখার জায়গায় মাত্র একটা প্লেট

মামা,তেহারি দেন।
-তেহারি নাই
-ক্যামনে কি?এত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ক্যামনে?

্যস্ততা বাড়ছে মোবাইল ফোন হাতে রোমিও পার্টিরও।অফপিক আওয়ার শুরু হল বলে।চিপার খোঁজে একেক জন ছুটছে একেক দিকে।

দেজাভু ...

অতি উত্তম হইছে ... দারূণ লাগছে পড়তে ...

................................................................................

স্বপ্নাহত এর ছবি

শুনিয়া বড়ই প্রীত হইলাম। আলহামদুলিল্লাহ হাসি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

ক্যামনে কি...

কিন্তু দোস্ত ব্যাপারটা তো হাতে নাই...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বস তো ফাটায়া দ্যান দেখি।
নাইটওয়াচিং শেষে আবার ব্যাট নিয়া নেমে পড়েন বস। ইয়া হাবিবি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

স্বপ্নাহত এর ছবি

জ্বী বস।
প্যাড আপ করে বসে আছি। মাগার নেক্সট টেস্ট যে আবার কবে শুরু হবো সেইডাই তো জানিনা দেঁতো হাসি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

অসাধারণ।
তোর লেখা পড়লে রীতিমত হিংসা হয়।

ব্যাপারটা আমার হাতে থাকল না।
পাঁচ মার্ক দিয়ে দিলাম।

---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

স্বপ্নাহত এর ছবি

তোর লেখা পড়লে রীতিমত হিংসা হয়।

কার হিংসা কে করে??করার কথা তো আমার।

লাস্ট টাইম গাছে চইড়া আর নামিস নাই নাকি? চোখ টিপি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বস আপনেগো ডাইনিঙের মাখলুভা খাওয়ার পরে লন্ড্রীর চিপায় গিয়া বইসা জিনিষ টানতে যে কী মজা!!! গাছে চড়োন আর লাগে না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দিলেই হয়। চোখ টিপি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

স্বপ্নাহত এর ছবি

আই ইউ টি তে বসে ঝিমাইতে ঝিমাইতে বুড়া হয়া গেলাম মাগার আপনে যেভাবে চোখে আঙ্গুল ঢুকায়া দিয়া ব্যাপারটা বুঝাইলেন সেইভাবে কখনো ভাবা হয়নাই।
সাধে কি আর কয় মক্কার মানুষ হজ্ব পায়না...

আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রাখলাম।
ব্যাপারনা... নেক্সট টাইম চোখ টিপি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দারুন লেখা !
দোস্তরা তো দেখি কেহ কারে নাহি হারে সমানে সমান।
চালিয়ে যাও বৎস।
মেরে দোয়ায়ে তোমহারে সাথ হ্যায়....

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্বপ্নাহত এর ছবি

কোন নাম্বারে দোয়া পাঠাইলেন... এখনো পাইলাম নাতো মন খারাপ

ওহ হো... কালকে সীম চেঞ্জ করে আর আগেরটা উঠানো হয়নাই।খাড়ান...এক মিনিট চোখ টিপি

অনুপ্রেরণা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখেগুলি ভালো হচ্ছে। এত সাধারণ সব ঘটনা নিয়ে এত সুন্দর করে লেখেন ক্যমনে?
- শামীম হক

স্বপ্নাহত এর ছবি

একই প্রশ্ন তো আমারও। আমার চারপাশে কত কিছু ঘটে যায়।কিন্তু সেগুলা খালি ঘটনা হিসেবেই দেখি।

আপনার হাতে পড়ে এত সুন্দর গল্প হয়ে যায় ক্যামনে??

ভাল হচ্ছে জেনে ভাল লাগলো হাসি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ফাহিম এর ছবি

সাধারণ!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।