অণু-র সঙ্গে প্রথম পরিচয় এক নাইট ক্লাবে প্রায় ১২ বছর আগে, আরো কিছু বাঙ্গালী বন্ধুদের সঙ্গে এক রঙ্গীন আড্ডায়। বয়েসে ও আমার চেয়ে অনেক ছোট। প্রথম পরিচয়েই ছোকরা (১২ বছর আগেকার অণু কে ছোকরা সম্বোধন করা বোধহয় অযৌক্তিক নয়) আমায় শুধলো- আপনার নাম শুনেছি, আপনি আবৃত্তি করেন; তা, রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দের মাঝে কে আপনাকে বেশী ভাবায়? ড্যান্স ফ্লোরের দিকে যেতে যেতে ইউ টার্ন মারলাম; বুঝলাম এ ছেলে সাধারণ কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জীবনানন্দকে তুলনা করবার ধৃষ্টতা সাধারণেরা করেনা কখনও; তার জন্যে ঢের জ্ঞান অর্জন করতে হয়। রূপসীদের ভিড়, সুরের মূর্ছনা আর মদিরার হাতছানিকে অবজ্ঞা করে বেরিয়ে পড়লাম নাইট ক্লাব থেকে, সঙ্গে অণু। আমরা অনেকটা পথ হেঁটে রেল ষ্টেশনে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, হুমায়ূন আজাদ, শহীদ কাদরী-কে ছাড়িয়ে আলাপ গড়ালো আরো অনেক খানি; নাজিম হিকমত, নেরুদা, বোদলেয়ার, কিটস অবধি। এরপর ট্রেনে করে যে যার বাড়ি চলে গেলাম ঠিকই, কিন্তু সেদিনের সেই পথচলা এখনও চলছে, অবিরাম। সহমত কিংবা সম মনা শব্দের বাস্তবিক অর্থগুলো আমার হয়তো অজানাই রয়ে যেত যদি অণুর দেখা না পেতাম।
আমরা দুজনই হেলসিঙ্কি থেকে অনেক দুরের শহরে পড়ালেখা করতাম, দুজনকেই সপাহান্তে কাজের জন্যে হেলসিঙ্কি আসতে হতো। শুক্র শনি রবি কাজ করে আবার ফিরে যেতাম। যাওয়ার বেলায় দুজনেই রাত ১টার বাস ধরতাম, ৭ ঘণ্টার যাত্রা। অণু নেমে যেত ভারকাউস নামক এক ছোট্ট শহরে, আমাকে যেতে হতো আরো ঘণ্টা খানেক। এভাবে আমরা প্রায় দু’বছর একত্রে যাত্রা করেছি, আর ঐ যাত্রাকালে অণুর কাছ থেকে শুনে শুনে জেনেছি অনেক কিছু; ছেলেটা জানেও বটে!
ফিনল্যান্ডে বসবাসকালে আমার প্রতিটি উদ্যোগে আমার এই অনুজপ্রতিম বন্ধুটিকে আমি পাশে পেয়েছি। যখন পত্রিকা বের করেছি, অণু এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। যখন লিটারেচার ক্লাব তৈরি করেছি, অণু ছিল এক ও অন্যতম সহযোগী।
একবার আমরা এক সঙ্গে ফ্রাঙ্কফুর্ট-এর বইমেলা দেখতে গেলাম, সে এক পরম অভিজ্ঞতা। ওকে যত দেখেছি ততই অবাক হয়েছি। ছেলেটা যতনা পড়ে তার চেয়ে বেশী ঘোরে; এত উদ্দম পায় কোথা থেকে! আমার সাথে প্রতিদিন দেখা হওয়া একটি ছেলে উত্তর মেরুর বরফের উপর ম্যারাথনে অংশ নেয়, হাতে ছেনি-হাতুড়ি আর দড়ি নিয়ে বেয়ে বেয়ে পাহাড়ে উঠে যায়, সমুদ্রের নীল জলে রঙ্গিন মীনের সনে খেলা করে, লম্বা লেন্স হাতে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে ফেরে, বাংলার হাওড়ে হাওড়ে ঘুরে পাখি গুনে বেড়ায়; তিব্বত, মায়া, মাচুপিচু কোথাকার হাওয়ায় জড়ায়নি তার নিঃশ্বাস? যেখানে জড়ায়নি সেখানে অতিসত্বর জড়িয়ে যাবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তাকে দেখে পুলকিত হব না? বয়েসে ছোট হলেও জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় অণু আমার চেয়ে ১০০ বছরের বড়।
অণুর ভেতর সত্যিকারের একজন গ্রন্থকীট আর প্রকৃত একজন ভবঘুরে বাস করে। আমার এতকাছের দেখা একজন ভবঘুরেকে আমি তার লক্ষের শীর্ষে দেখবার সপ্ন পোষণ করি। আমি কামনা করি অণু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আয়োজিত জরিপে বছরের সেরা পর্যটকের সম্মান অর্জন করুক। আমি জানি, এই অর্জনই ওর একমাত্র লক্ষ নয় আর লক্ষের শীর্ষও নয়, তবু এই অর্জনটুকু ওর ভবিষ্যতের মুকুটে একটি স্বর্ণপালক হয়ে থাকবে। ও আমার কাছের মানুষ বলে নয়, এ ক্ষেত্রে ওর মত যোগ্য ব্যাক্তি খুব কমই আছে এ ধরায়।
কামনা ও স্বপ্নটুকু যথেষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে ওকে ভোট দিতে হবে, সেটাই জরুরী। আর ওকে ভোট দেয়াটা যথেষ্ট যৌক্তিক। পরিচয়ের খাতিরে নয়, যোগ্যতার মাপকাঠিতেই অণু একজন সেরা পর্যটক।
আমাদের যা করনীয়-
http://travel.nationalgeographic.com/travel/travelers-of-the-year/ এই ঠিকানায় যেতে হবে প্রথমে,
সেখানে তথ্যের জায়গায় নমিনি'র নামের ঘরে TAREQ ONU
ইমেইল এর ঘরে
ঠিকানার ঘরে MANNERHEIMINTE 85 C 75
শহরের ঘরে HELSINKI
জিপ কোড ঘরে 00270
দেশের ঘরে FINLAND
একটু নিচে নমিনেটর এর ঘরে আপনার নাম, নমিনেটর'স ইমেইল এর ঘরে আপনার ইমেইল ঠিকানা লিখে সাবমিট বাটনটি ক্লিক করুন।
টেলিফোন নাম্বার না দিলেও চলবে।
আর একেবারে নিচের এই চেকবক্সটিতে ক্লিক করতে পারেন -- The trip was featured online and/or in print.
আর হ্যাঁ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কিন্তু আপনি যাকে মনোনীত করতে চাচ্ছেন তাকে কেন করছেন তা নিয়ে কিছু লিখে দিন।
ভোট দেবার শেষ সময় ৩০ জুন।
আর একটা অনুরোধ, আমরা কি পারি না উপরের ছবিটিকে ৩০ জুন অবধি আমাদের ফেসবুক কভার ফটো করে রাখতে; তাতে যদিবা আমাদের ফেসবুকের কোনো বন্ধু উৎসাহী হয়ে অণুকে ভোট দেয় তাতে আমরা উপকৃতই হব।
অণু যদি বিজয়ী হয় সে আনন্দ আমাদের সবার। অন্যের সাফল্যে গর্বিত হওয়ার মাঝে একটা ভীষণ আনন্দ আছে। আর যদি নাও হয় তাতে কি; অণু অণুর কাজ ঠিকই করে যাবে- বসুধা চষে বেড়াবে।
মন্তব্য
ভোট প্রদান করিলাম।
অনু ভাইয়ের নাম আমি বেসিদিন আগে শুনি নি। তার ব্লগ পরে, তার তোলা ছবি দেখে আমি মুগ্ধ। সে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাকে আমি খুব পছন্দ করি। যদিও তার সাথে আমার কখনও আলাপ করার সৌভাগ্য হয় নি। যাইহোক আমি ভত দিয়েছি। সে বাংলাদেশী হিসেবে পক্ষপাতিত্ত করছি না। তার এটা প্রাপ্য।
সহমত; ও সত্যিই যোগ্যতা রাখে।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ভোট দিয়েছি। প্লিজ অনু কে ভোট দিন। এখন শুধু দিন গুনছি।
আপনারা ভোট দেবার সময় মনে করে 'Describe your traveler: What makes this person special? How does he/she travel?' স্থানটিতে কিছু লিখে দিয়েন। ব্যাপারটা জরুরী। কেননা এন জি পরখ করবে কেন আমরা অণু-কে ভোট দিচ্ছি।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ভোট ভোট ভোট চাই।
অণুর আসল লক্ষ কী?
আব্দুল্লাহ এ এম
চাঁদে যাওয়া।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ভোট দিয়েছি
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
আমি যা বুঝলাম, ভোটের আসল উদ্দেশ্য হলো এমন একজন কে নির্বাচন করা যে "ট্রাভেলস উইথ এ কজ" -- এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হইল তারেক অনু কি উদ্দেশ্যে ভ্রমন করেন এবং কেন তাঁর ভ্রমণ কাহিনী শেয়ার করেন? আমার মাথায় প্রথম যেটা আসল তা হলো তাঁর বিলুপ্তপ্রায় পাখিসম্পদ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, আর অন্যান্য ব্যপারও থাকতে পারে, তবে এইটাই আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে -- এই রকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দ্যোগের কথা ভোটের পেজে "সংক্ষিপ্ত বিবরণী" তে লেখে দেওয়া জরুরী।
আর তারেক অনুকে অনুরোধ, একটা ওয়েব পেজ বা এই জাতীয় কিছু একটা খুলুন যেখানে আপনার এইসব পরিবেশ/প্রানী-রক্ষা কর্মসূচীগুলার একটা বিবরণ থাকবে (যেমন আপনাদের "পাখি দেখা কমিটি" ইত্যাদি) -- ব্যপার হল ঐখানে যেসব নমিনি আছেন, তাঁদের সবারই কোন না কোন এইরকম প্রাতিষ্ঠানিক পেজ রয়েছে, যেখানে হয়ত তাঁদের সকলের কাজের বিবরণী পাওয়া যাবে -- সুতরাং "শুধু ভোট" দেওয়ায় কাজের কাজ হবে না (ব্যপারটা হাল আমলের "সুন্দরবন কে ভোট দিন" টাইপের মত হয়ে যাবে)।
-- রামগরুড়
যথার্থ বলেছেন
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
কিছুমিছু না জেনেই আসলে অণু রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দকে একসাথে ঘুলিয়েছিল, আর আপনি তাকে হিরু বানায়ে ফেললেন হিহিহি মজা করলাম! আসলেই ছেলেটি এক পরম বিস্ময় বটে। অনেক শুভকামনা থাকলো অণু'র জন্য।
দারুন লিখেছেন। এখন নিজেরও ইচ্ছে শচ্ছে বেড়িয়ে পরতে!
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ভোট দিছি। লেখককে ধন্যবাদ এরকম সাহায্যকারী একটা পোস্ট দেয়ার জন্য।
আমার মনে হয় এধরনের ভোটাভুটির ক্ষেত্রে ভোট প্রদানকারীর কমেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে ভোট দেয়ার সময় সবাইকে এব্যাপারে একটু ভালোভাবে কমেন্ট করতে বলবো, এতে ভোটের ভ্যালু বাড়বে।
ভোট দিলাম। ফলাফল কী হলো জানবো কী করে?
তখন আরেক বার পোস্ট দিয়েন।
দারুন মানুষকে নিয়ে দারুন লেখা
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
জি এম টি এর লেখার মত ভোট দেয়ার পদ্ধতি মন্তব্যেও থাকলে ভাল হয় - সচলায়তনের পোস্ট তো কপি পেস্ট রেস্ট্রিক্টেড! (ঐ লেখায় মুর্শেদ ভাই এর মন্তব্য দ্রস্টব্য)
তিনি যোগ্য আর তাই তাকে ভোট করলাম।
ভোট দিলাম।কিন্তু স্বচ্ছ,নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মান,অবাধ আরো কি কি জানি ?????
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
দিছি, দিছি, ভুট দিছি... একেবারে পতম দিনেই ঘুষনা দিয়ে জানানোর আগেই দিছি
ডাকঘর | ছবিঘর
খালি এরর খায় কেন?
সবই তো ভরলাম।
দেখি পরে আবার চেষ্টা করে।
অণুদা কই? সে কমেন্টায়না ক্যান? লজ্জা পাইসে?
ভুট চাইলেন, বেনসন কই?
নতুন মন্তব্য করুন