বৃক্ষ নিধন

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/১২/২০১৩ - ২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হঠাৎ সভামাঝে হৈচৈ, মন্ত্রীর দৃষ্টি সরু, বর্শা ফেলি মেঝের প’রে পেয়াদারা তামাশা দেখিতে মগ্ন, উজির নাজির সেনাপতি সকলেই স্বপ্নাবিষ্ট যেন! সভাকবির মস্তিস্কে উদ্গিরিত হইতেছে একে একে বাক্যের ঝঙ্কার। পারিষদ মাঝে আসন আলোকিত করিয়া বসিয়াছেন স্বয়ং রাজাধিরাজ। বৃক্ষসাজে আসিয়াছে রাজসভায় একদল প্রজা, সঙ্গে ফরিয়াদ। এ জীবনে রাজা হেরিয়াছে বহু সাজ, বহু বেশ; বৃক্ষরুপী প্রজা দর্শনে আজি কৌতুকের নাহি শেষ! ঈষৎ হাসিয়া রাজা শুধাইল প্রশ্ন,

- নাম কি হে?
- মেহগনি।
- তোমার?
- আমি দেবদারু মহারাজ।
- আর, ঐদিকে যাহারা?

- আমি শাল, আমি সেগুন, আমি সুন্দরী, আমি নারকোল, নিম আমার নাম, আমি নীপ, আমি আম, পিয়াল আমি, আমি আপনাদের অতিথি ইউক্যালিপটাস, আমি কৃষ্ণচূড়া; আর আমার নাম সপ্তপর্ণ, রাজন।

দক্ষিন শাখা ঊর্ধ্বে তুলিয়া আগন্তুকেরা নিজ নিজ পরিচিতি করিল জ্ঞাপন।

অট্টহাস্যে কহিলেন রাজা- বেশ বেশ, সুমধুর নাম বটে! তা কি হেতুতে করিয়াছ এরূপ ধারণ? সকলই কি বিদ্রুপ, সকলই পরিহাস, নিছকই আনন্দ প্রদান কিংবা চিত্ততুষ্ট করণ? নাকি, সারবস্তু কিছু আছে ইহাতে?

সুযোগ সন্ধানী সভাকবি কন হাসি-
"রাজাগণ যান মৃগয়ায়, যান তপোবন বিহারেতে;
মোদের রাজনের প্রতাপ এমনই, অটবী আসিয়া দাঁড়ায়েছে সমুখেতে।"

দক্ষিন হস্তের ইশারায় কবিরে থামাইয়া রাজা আগত প্রজাগণে কহিলেন- বালখিল্যে অধিক কাল ক্ষেপণ স্বভাবেতে মোর নাই; প্রার্থনা কর বর্ণন।

প্রতিনিধি এক তাহাদের আগাইয়া আসিল; নতজানু, করজোড়, শিথিল স্কন্ধ, আনত মস্তক। কহিল,
- মহারাজ।

‘মহারাজ’ শব্দের এমন ভিন্নতর উচ্চারণ রাজা কখনই শোনে নাই। রাজ্যের যত ক্ষোভ, যত ক্ষেদ, যত মাতম, যত হাহাকার একত্রে বিরাজ করিতেছে যেন ঐ চারটি অক্ষরের মাঝে। প্রাসাদের হস্তিকাকার চারটি মূল স্তম্ভ একত্রে কাঁপিয়া উঠিল ঐ উচ্চারণে। আগন্তুকের সম্মুখে নিজেকে বড্ড তুচ্ছ হইল মনে। ক্ষীণস্বরে কহিলেন রাজা- কহ।

- হে কুলপতি অধিরাজ, আপনাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের উপকরণ যোগান দেয়া আমাদের কর্ম। পুব হইতে পশ্চিমে, উত্তর হইতে দক্ষিনে, ঈশান হইতে নৈঋতে যখন পাগলা হাওয়ারা দাপিয়া বেড়ায়; যখন আসমানের সমান দরিয়ার ঢেউ বাসুকির ফণা তুলিয়া আপনাদের দংশন করিতে আসে, মোরা সংশপ্তক সৈন্যের ন্যায় বক্ষ পাতিয়া শত্রুর মুখামুখি দাঁড়াইয়া তাহাদের তেজ হ্রাস করি যাহাতে আপনাদের ঘরবাড়ি প্রাসাদ রক্ষা পায়, আপনারা রক্ষা পান। আপনাদের জ্বলন্ত উনুনে, গৃহসজ্জায়, আসবাবে আমাদের নিত্য জলাঞ্জলি। তাহা আপনাদের ‘প্রয়োজন’ জ্ঞান করিয়া ওইটুকু ত্যাগ মানিয়া লওয়া আমাদের ধর্ম। আমাদের শিকড়ের বন্ধনে বাঁধিয়া আপনাদের মাটির ক্ষয় রোধ করণ, ফুলে ফলে ছায়ায় আপনাদের আপ্যায়ন- সেও ধর্ম বটে মোদের। আসন্ন পরিবেশ বিপর্যয়ে আমরাই থাকিব বন্ধু আপনাদের। কিন্তু মহারাজ, আজি মোরা হত্যার স্বীকার; গত কয় মাসে স্বয়ংক্রিয় করাতের তলে গিয়াছে আমাদের পনের সহস্র প্রাণ, একদল পশুর সহিংসতার নব কৌশল আজি বৃক্ষনিধন, তাহারা কি জানে না বৃক্ষের প্রয়োজন? পশুর স্বার্থসিদ্ধিতে সড়কের প’রে মোদের জীবনাবসান, মোদের রুধিরে রঞ্জিত আজি রাজ্যের দশ সহস্রাধিক ক্রোশ সড়ক পথ। মোদের গোত্রে, মোদের পল্লীতে আজি স্বজন হারানোর হাহাকার মহারাজ; তাহা শ্রবনের শক্তি নাই মনুষ্যে, নাই সুরাসুরে, ভগবানে। তবে যে বৈজ্ঞানিক কহিয়া গেছে- গাছেদেরও মন আছে, আছে আবেগ, আছে অনুভূতি! মহারাজ, বৈজ্ঞানিক নয় মিছে। মোদের অদৃশ্য অশ্রু, মোদের প্রেম, ভালবাসা, অনুভূতি যাহারা সভ্য কেবল তাহারাই দেখিয়াছে।

চিন্তিত রাজন কহিলেন অবশেষে- তোমরা সত্যিই বৃক্ষ? ইহা ছদ্মবেশ নয়?
- ঐ কর্ম মনুষ্যের, মহারাজ; বৃক্ষেরা কি তাহাতে পারদর্শী হয়?
- কি প্রতিকার করিতেছ প্রার্থনা?
হুংকার ছাড়ি কহিলেন তিনি, “সেনাপতি, সেপাই পেয়াদা সহযোগে হও অগ্রসর, ধরিয়া আনো অন্তত কয়টাকে; ক্ষমা নাহি করিব বৃক্ষ হন্তারকে।”
- মহারাজ, আপনি নমস্য, জ্ঞানের আধার। তবে অভয় দেন তো বলি এই বিচারে হইবে না প্রতিকার।
- তবে?
- একটি বিশাল ছাকনি গড়িতে হইবে।
- ছাকিবো কি তাহাতে?
- মনুষ্যে আর পশুতে।

খবর: রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির সারাদেশে বৃক্ষ নিধনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সারাদেশে ১৫ হাজারেরও বেশি গাছ নিধন করেছে। এর মধ্যে শুধু বন বিভাগেরই রয়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি গাছ। বিভিন্ন আকারের এই গাছ কাটার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে ২০-৩০ বছর সময় লাগবে।

(সড়কের উপর পড়ে থাকা কাটা গাছের স্তুপের একটি ছবি দিয়েও সরিয়ে নিলাম। ঐ ছবি দেখলে কষ্ট হয়।)


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এহ... কইলেই হইল? সব মিডিয়ার সৃষ্টি আর ফটুশপের কারসাজি। আগে 'বৃক্ষ নিধন হয়েছে' এই মর্মে সায়ীদ ছারের একখান স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের ছাট্টিফিকেট লয়া আসেন... তারপর ভাইবা দেহুম, আসলেই গাছ কাটা পড়ছে কি পড়েনাই খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এখন হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিকতার সমালোচনা মারাইতে বিঝি। জামাতের বৃক্ষনাশ বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে ওনাকে বিরক্ত করবেন না।

হিমু এর ছবি

এই গাছগুলোর শেষ গন্তব্য তো মনে হয় করাতকল। সেক্ষেত্রে কারা টাকাগুলো খাচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ঈয়াসীন এর ছবি

পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম, অবরোধ শেষে কাটা গাছগুলো তাণ্ডবকারীরা সঙ্গে নিয়ে যায়; 'স' মিলে বিক্রি করবার জন্যে। সহিংসতার অর্থের যোগান এভাবেও আসে।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

এক লহমা এর ছবি

কী ভয়ানক!
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-12-21&ni=158320
http://www.bangladeshchronicle.net/index.php/2013/12/bnp-jamaat-men-cut-down-40000-trees-in-the-name-of-blockade-says-hasan/

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে, কাঠের দামই কমে যাবার কথা।
যেখানে মানুষই Disposable (বাংলা খুঁজে পেলাম না), সেখানে গাছের জীবন কতটা মূল্যহীন সেটাই ভাবছি।

শুভেচ্ছা হাসি

দীনহিন এর ছবি

চলুক

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

আয়নামতি এর ছবি

কোথায় যেন দেখেছিলাম এমন স্লোগানওয়ালা স্টিকার, 'কথা দেও বাড়ি ফিরে একখান গাছ লাগাইবা'
এবং তাহা আপোষহীন নেত্রীর শাসনামলেই। এমন ধ্বংসযজ্ঞে যে তাদের নেত্রীর মুখেই চুনকালি মাখনো হচ্ছে সেটা বুঝেনা
পাষণ্ডগুলো! এখন আবার 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসী'র নাটক করে হেফুদের ঢাকায় মোষ্ট ওয়েলকামের ঘোষণা আসছে। খোদাই জানেন
গনতন্ত্রের নামে আরো কত ধ্বংসযজ্ঞ চলবে।

শব্দ পথিক এর ছবি

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) থেকেও কোন স্টেটমেন্ট দেয়া হয়নি, অথচ বেলার প্রধান নির্বাহী পরিবেশ নিয়ে কথা বলেই ম্যাগসাসে পেয়েছেন। এওয়ার্ড পেলেই বোধ হয় দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, অন্তত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাই মনে হচ্ছে।

নাকি এখন বৃক্ষ নিধন নিয়ে কথা বললে সেটা ''ডার্টি পলিটিক্স'' হয়ে যাবে!

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

হিমু এর ছবি

প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য নাকি ইসি খেয়ে ফেলেছে। সৈয়দা ম্যাডাম এর প্রতিবাদে বিঝি আছেন। বৃক্ষনিধনের কথা বলে ওনাকে বিরক্ত করবেন না।

শব্দ পথিক এর ছবি

রিজওয়ানা হাসানের আরো কয়েকজনের সাথে মিলে বিবৃতি প্রদান গতকাল দেখেছিলাম, তখন মনে হলো তিনিতো নিজের কাজ বাদ দিয়ে অকাজে বিঝি আছেন।

প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য জানতে চাওয়াতো আর পলিটিক্স না, কেবল গাছ কাটার প্রতিবাদ করাই পলিটিক্স। দৃশ্যমান সুশীল হতে গেলে কখন কোন ইস্যু পলিটিক্সের ক্যাটাগরিতে পড়ে, সেটা বোধহয় বুঝতে হয়। চোখ টিপি

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

তারেক অণু এর ছবি

গুল্লি

দেরীতে হলেও পড়লাম, দরকারি লেখা, এই নিয়ে তথাকথিতরা কোন বিবৃতি দেন না, টাকাটুকা নাই মনে হয় এই ব্যাপারে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গতকাল একটা টকশোতে "সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান" এক ত্যাঁদড় দর্শকের প্রস্নের জবাবে দাবী করেছেন- উনারা যথাসময়ে রাস্তার গাছ কাটার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। মিডিয়া নাকি সেগুলো প্রচার করেনি। কিন্তু মুশকিলের ব্যাপার হল ঘটনাগুলো ঘটার সময়ও উনি টকশোতে আসতেন। এই বিবৃতিটুকুর কথাও তখন তার মুখে শুনিনি।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।