সম্প্রতি ফিনল্যান্ডে টকশো গোছের একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হল। ঠিক টকশোও নয়, বরং সংলাপ বলা শ্রেয়। রাশভারী একটি নামও জুড়ে দেয়া হয়েছে- “কেমন আছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী বাঙ্গালীরা”। টেবিলে উপবিষ্ট ছিলেন গন্যমান্য কতিপয় ব্যাক্তি যারা প্রত্যেকেই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। সঞ্চালক নিজেও একজন ডক্টরেট খেতাব পাওয়া ব্যাক্তি। দর্শক সারির অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। এমন অনুষ্ঠানে অভাগার ঠাই হবে না, তা যথেষ্ট অনুমেয়; তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া থেকে অভাগাদের কে ঠেকায়? শুধু কি তাই! এমন বুদ্ধিজিবি পরিবেষ্টিত অনুষ্ঠানটির উপর আলোকপাত করতে জগতসেরা পত্রিকা (!) প্রথম আলোও পিছপা হয়নি। এই নিন লিংক-
লিংক। (কমেন্ট দ্রষ্টব্য)
এবার অনুষ্ঠানটির একটু অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ করি। সভা আলোকিত করা ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত গুনাগুন নাইবা উল্লেখ করলাম। তাতে লেখার আয়তন এবং তাদের নির্গুণের (চারিত্রিক) পরিমান যুগপৎ বাড়বার সম্ভাবনা থেকে যায়। চারিত্রিক যে গুণাবলীগুলো সামাজিক পর্যায়ে ক্ষতিকর সেগুলোতেই আবদ্ধ থাক আলোচনা। শুরুতেই সঞ্চালক ভাইকে নিয়ে দুচারটি কথা না বললেই নয়। কথিত আছে তিনি মনেপ্রাণে একজন শুদ্ধ বাঙ্গালী, চমৎকার রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারেন। দেশে থাকতে বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। শাহবাগের গণজাগরণের পরপ্রেক্ষিতে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সংহতি আয়োজনে তাকে গুটিকয় অধম নাস্তিকের মাঝে পাওয়া যায়নি সত্য, তবে সাইদির মুক্তির পক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি; তা অবশ্য নেপথ্যে। কোন কোন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যাক্তি সাইদির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেইসব ব্যাক্তিদের সম্পর্কে ইমেইলের মাধ্যমে অন্যদের সতর্ক করেছেন তিনি। সেই ইমেইলগুলো অধমেরা পায়নি, পেয়েছিল অন্যান্য ডক্টরবৃন্দ আর উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায়। এর বাইরে যারা আছে তাদের মুল্য দিতে তার কিংবা তাদের বয়েই গেছে! তবে সে যাত্রা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে তিনি তার অবস্থান মোটামুটি স্পষ্ট করতে পেরেছিলেন। বাগড়া লাগালো ফ্যাসিবাদী সরকার মে মাসের পাঁচ তারিখে। রাতের আঁধারে কেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপর এমন পাশবিক আক্রমন চালালো সরকারের পেটোয়া বাহিনী; তা নিয়ে ভদ্রলোকের হাজারো অভিযোগ। সে যাইহোক আলোচিত টকশোটির মূল আয়োজক তিনি এবং উপবিষ্ট বিশেষজ্ঞ বক্তাদের মাঝে এমন দুজন ছিল যাদের জামাতী সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে তিনি পূর্বে ইমেইল-এ সতর্ক বার্তা ছড়িয়েছেন।
এবার একে একে না হলেও বিশেষজ্ঞ বক্তাদের সম্পর্কে কিছু জানা যাক। এদের মাঝে একজন ফিনল্যান্ডের জামাত ইসলামী সংগঠনের অন্যতম সংগঠক। তারা কোথাকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাতে খোদার কসম কাউরো কিসসু যায় আসে না। যে বিষয়ে যায় আসে তা হচ্ছে শুধুমাত্র দুইজন (একজন মুসলমান নন বিধায়) বাদে বাকী সবাই জামাতের আদর্শে বিশ্বাসী। তারা সবাই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। নিজ নিজ অর্জনের অহংকারে তাদের মাটিতে পা পড়েনা। তারা তাদের নিজস্ব গণ্ডির বাইরে দশজন বাঙ্গালীর নাম পর্যন্ত জানে না। তারা জানেনা দালাল ধরে জায়গা জমি বেচে যে ছেলেটি পনেরো লক্ষ টাকা খরচ করে ফিনল্যান্ডে এসেছে, সে ছেলেটি পুলিশের ভয়ে কোথায় কোন ভাগাড়ে লুকিয়ে থাকে। তাদের জানবার কোনো প্রয়োজন নেই এখানকার বাঙ্গালীদের বৌয়েরা মানসিক ভাবে স্বামী কর্তৃক কতটা নির্যাতিতা। চারটি মস্তিস্ক প্রক্ষালিত বাঙ্গালী ছাত্র যে সিরিয়াতে জিহাদ করতে গিয়েছে এবং আরো কয়েকজন যেতে আগ্রহী তা তারা জানলেও আলোচনার বিষয়বস্তু মনে করে না, ... থাক এই তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ; পরে জানা যাবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল “কেমন আছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী বাঙ্গালীরা ”; সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায় কখনই বক্তাদের আসন অলঙ্কৃত করতে পারেন না। ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের একটি বিশাল অংশ রেস্তরায় কাজ করে, আরেকটি বিশাল অংশ পরিস্কারের কাজে (ক্লিনিং জব) নিয়োজিত। ছাত্র আছে, কর্মহীন গৃহিণীরা আছেন, রাজনৈতিক এবং মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রিতরা আছেন। তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? জনসংযোগ বিহীন গুটিকয় জামাত-বিএনপি ঘরানার উচ্চশিক্ষিতিদের বক্তব্যে কখনই ‘আমরা কেমন আছি’ তা জানা যাবে না।
দর্শক সারি সম্পর্কেও কিছু বলতে হয়। জনাবিশেক হবে হয়তো। এর মাঝে যারা ছিলেন তারা সকলেই আংশিক পরিচিত এবং গত বছর খানেকের অভিজ্ঞতায় এটুকু অকপটে বলাই যায় যে তারা কেউই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সুনজরে দেখে না। রাজাকারের বিচার তাদের চোখে প্রহসন মাত্র, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।
বেছে বেছে এমন সব বক্তা (দুজন বাদে, তবে তাদের অবস্থান পরিস্কার নয়) আর এমন সব দর্শক নিয়ে এমন একটি অপাংক্তেয় অনুষ্ঠান আয়োজন নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক। উদ্দেশ্যটি কি; তা এখনও পরিস্কার নয়, তবে এই আয়োজন যে সাধু উদ্দেশ্যে নয় তা বুঝতে রকেট সায়েন্স জানতে হয় না।
পরিশেষে বলতে চাই, এখানকার সকল বাঙ্গালীর প্রতিনিধিত্ব এই অধমও করে না, তবু কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ‘কেমন আছে ফিনল্যান্ডের বাঙ্গালীরা’; বলবো- নিরবে নিভৃতে এখানে জামাতের একটি বিশাল বাহিনী গড়ে উঠছে আর তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গড়ে উঠছে একটি বিশেষজ্ঞ সুশীল বাহিনী।
মন্তব্য
সাউথ কোরিয়ায় অবস্থানরত একজন গবেষক কে আমি ফেবুতে পাই । আমি যে বিষয়ে আগ্রহী তিনি তেমন একটা গ্রুপে আছেন। তিনি শিবিরের সক্রিয় অনলাইন একটিভিষ্ট (পুর্বে নেতা ছিলেন)হওয়া স্বত্তেও এই ভেবে মেসেজ দিয়েছিলাম যে আমি রাজনীতিতে জড়িত নই বলে তিনি আমাকে উপেক্ষা করতে পারবেনা বরং দেশি হিসেবে সাহায্য করবেন। তার কাছ থেকে কোন রিপ্লাই আমি পাইনি।এই বিষয় টা আমাকে খুব পীড়া দেয়।আমার মনের জোড় শুন্যের কোঠায় চলে গেছে। বাদবাকি সবার কাছ থেকে রিপ্লাই পেয়েছি। এজন্য খুব টেনশনে থেকে এবছর এর মধ্যেই সবার সাহায্য নিয়েই কঠিন পথ পাড়ি দেবার চেষ্টা করছি। তবে আর যাই করি এগুলার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করব।
ট্রোল
আগে আমিও দূরত্ব বজায় রাখতাম। রেখে দেখলাম তাতে লাভ হয়নি, তাদের আস্ফালন কমেনি। এখন তাই মুখোমুখি হই। আস্ফালন তাতেও কমেনা, তবে তাদের পথ কিছুটা হলেও কণ্টকাকীর্ণ হয় বটে।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
যতদুর জানি, আপনি যাকে হিন্দু বলে সম্বোধন করেছেন উনি আসলে ধর্মগতভাবে বৌদ্ধ কিন্তু আদর্শগতভাবে কী, সেটা পরিষ্কার নয়। হয়ত আমন্ত্রিত অতিথিদের সামাজিক অবস্থানকে ব্যালান্স করার জন্য উনাকে আলোচনার জন্য দাওয়াত করে আনা হয়েছে।
ঠিক করে দিলাম। আসলে ব্যাক্তিগতভাবে তাকে আমি চিনি না। হ্যা , ব্যালন্সের বিষয়টি একটি কারণ হতে পারে।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ইনটারেসটিং। এই জমায়েত/অনুষ্ঠানের পেছনে ওদের স্বার্থটা কী?
সবাই কেউকেটা হইতে চায়!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
বাঙালীর বীরত্ব দেখাবার জায়গা খুব কম । আমরা পাহাড় চড়তে পারি না (যাওবা চড়ি তার চেয়ে ফটোশপ বেশি করি), সাতরে সাগর পার হতে পারি না । আমাদের বীরত্ব দেখাবার জায়াগাটা আত্মীয় স্বজন পরিবার পরিজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ । দেশের বাইরে আসলে অবস্থা আরো করুন । সেই গন্ডিটা আরো সীমাবদ্ধ হয়ে যায় । হাতে গোনা যে কজন বাঙালী পাওয়া যায় ছেঁছেপুছে, তাদের সামনেই আমরা কেউকেটা হবার চেষ্টা করি । ছাত্রাব্স্থায় পড়াশোনা আর পার্টটাইম কাজের বাইরে সময় কম পাওয়া যায় । পাশ টাশ করে চাকরীজীবন শুরু করে একধরনের একঘেয়েমী চলে আসে । সেটা কাটানোর জন্যই অনেকে সুশীলতার চর্চা শুরু করে । এই রোগটা সুশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিল না । বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধর্মের পোকাটাও মাথায় কুরকুর শুরু করে বেশী করে । তাছাড়া দেশের বাইরে গিয়ে এর সাথে যোগ হয় মাইনরিটি কম্প্লেক্স ( উদাহরন ঃ হালালোমেনিয়া ) । সুশীলতার পাশাপাশি জায়গা করে নেয় ধর্মীয় রক্ষনশীলতা । এই টাইপের লোকেদের কেউ কেউ সজ্ঞানে আবার অনেকেই অজ্ঞাতসারেই জামাতের পাতে ঘি সরবরাহ করে যাচ্ছেন ।
দস্যু ঘচাং ফু
dosshughochangfoo@gmail.com
==============================
চৈনিক নই, আমি নিতান্তই ভেতো বাঙালী,
নাই কোন তলোয়ার, কি বোর্ড খানাই সম্বল খালি;
জামাত দেখিলে তেড়েফুড়ে তাতেই ঝড় তুলি ।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
আয়োজকের নাম দিলেন না কেনো?!
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
পথমালুর লিঙ্কে আছে। মঞ্জুরে মওলা
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
নতুন মন্তব্য করুন