বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের মাঠে। ১৯৮৮, ক্রিকেট তখনও আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তখনকার ক্রিকেটের উত্তেজনা মানেই ছিল বিদেশীদের খেলা নিয়ে উচ্ছ্বাস; বিশেষ করে ভারত আর পাকিস্তানের খেলা। যাইহোক ঐ সময়টায় খেলায় অংশগ্রহন করাটাই ছিল আমাদের জন্যে চরম সার্থকতা। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অন্যান্যরা তাদের দ্বিতীয় সারির দলকে পাঠাতো আমাদের সঙ্গে খেলতে; সেই দলকেই মনে হত বিপুল শক্তিশালী। স্বভাবত কারণেই ১৯৮৮-র এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে ভারতের কাছে আমরা পর্যুদস্ত হই (ভারত ৯ উইকেটে জয়ী হয়; স্কোরকার্ড)। তাতে যদিও আমাদের কিচ্ছু আসে যায় নি। তারকা খচিত দলের বিপক্ষে আমরা খেলতে পারছি, সেটাই ছিল পরম প্রাপ্তি।
এরপরের খেলাগুলোর দিনক্ষণ ও ফলাফল-
২৫ ডিসেম্বর, ১৯৯০ (ভারত ৯ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
৫ এপ্রিল, ১৯৯৫ (ভারত ৯ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২৪ জুলাই, ১৯৯৭ (ভারত ৯ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১০ জানুয়ারী, ১৯৯৮ (ভারত ৪ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৪ মে, ১৯৯৮ (ভারত ৫ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২৫ মে, ১৯৯৮ (ভারত ৫ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
৩১ মে, ২০০০ (ভারত ৮ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১১ এপ্রিল, ২০০৩ (ভারত ২০০ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৬ এপ্রিল, ২০০৩ (ভারত ৪ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২১ জুলাই, ২০০৪ (ভারত ৮ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২৩ ডিসেম্বর, ২০০৪ (ভারত ১১ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- এই প্রথম জয়কে খুব কাছাকাছি দেখা গেল। আমাদের মাঝে একটি ক্ষীণ বিশ্বাস জাগলো, হ্যা আমরা অবশ্যই ভারতকে একদিন হারাতে পারবো।
২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ (বাংলাদেশ ১৫ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- হ্যা, ঠিকই পড়ছেন। বাংলাদেশ জয়ী। এতক্ষণ ভারতের জয়ের ফিরিস্তি দেখতে দেখতে চোখ যাদের জ্বালাপোড়া করছিল, তারা এবার চোখ রগড়ে বসতে পারেন। ভারতের সঙ্গে ১৬ বছর ধরে খেলা ১২ টি ম্যাচে হারবার পর বাংলাদেশ অবশেষে জয় পেল। আর এই ম্যাচে আমাদের ক্যাপ্টেন মাশরাফি ছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ।
২৭ ডিসেম্বর, ২০০৪ (ভারত ৯১ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৭ মার্চ, ২০০৭ (বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- এই জয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। এই ম্যাচে হেরে ভারত ২০০৭ এর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে।
১০ মে, ২০০৭ (ভারত ৫ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১২ মে, ২০০৭ (ভারত ৪৬ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১২ জুন, ২০০৮ (ভারত ৭ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২৮ জুন, ২০০৮ (ভারত ৭ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
৭ জানুয়ারী, ২০১০ (ভারত ৬ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১১ জানুয়ারী, ২০১০ (ভারত ৬ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৬ জুন, ২০১০ (ভারত ৬ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১ (ভারত ৮৭ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৬ মার্চ, ২০১২ (বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- বাংলাদেশের এই জয়টি একটি মাইলফলক; বিশাল স্কোর তাড়া করে বাংলাদেশ ৫ উইকেটের বিনিময়ে জয় তুলে নেয়। এশিয়া কাপের এই ম্যাচটিকে আর অঘটন বলবার উপায় থাকে না, কেননা একই টুর্নামেন্টে শ্রীলংকাকে হারিয়েও বাংলাদেশ ফাইনাল খেলে।
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ (ভারত ৬ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৫ জুন, ২০১৪ (ভারত ৭ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৭ জুন, ২০১৪ (ভারত ৪৭ জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
১৯ জুন, ২০১৪ (পরিত্যাক্ত)
১৯ মার্চ, ২০১৫ (ভারত ১০৯ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- তবে এই ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসে একটি কলঙ্কের অধ্যায়। সে বিষয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব অবগত।
১৮ জুন, ২০১৫ (বাংলাদেশ ৭৯ জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
২১ জুন, ২০১৫ (বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
- এই জয়টি পরিসংখ্যানে বিপুল পার্থক্য গড়ে দেয়া জয়। এটি শুধু একটি জয় মাত্রতো নয়; এই প্রথম বাংলাদেশ প্রমান করলো ধারাবাহিকতার সংজ্ঞা। সাম্প্রতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিনটি একদিনের এবং একটি টি২০ তে জয় পাওয়া যে কোনো ফ্লুক অর্থাৎ অঘটন ছিল না, আমাদের ব্যাঘ্রশাবকেরা সেটিই প্রমান করলো প্রথমবারের মত ভারতের ন্যায় মহাপরাক্রম দলকে পর পর দুই ম্যাচে হারিয়ে এবং প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিয়ে।
২৪ জুন, ২০১৫ (ভারত ৭৭ রানে জয়ী) সম্পূর্ণ স্কোরকার্ড
বাংলাদেশের ক্রিকেট আর সেই ১৯৮৮ তে পড়ে নেই; ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে অনেক খানি এগিয়ে গেছে। যদিও এই এগিয়ে আসায় প্রবীণ নবীন প্রতিটি খেলোয়াড়েরই অবদান আছে, তবু এ কথা অকপটে স্বীকার করা যায় যে বর্তমানের এই দলটি আমাদের জন্যে শ্রেষ্ঠ। শুধু দল নয়; বর্তমানের অবকাঠামো, বর্তমানের প্রশিক্ষক দল, বর্তমানের ক্রিকেট বোর্ড- সবই অনবদ্য। এই সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে একটি দল। যে দল আমাদের হাসায়, আমাদের কাঁদায়, আমাদের বুকের ছাতিকে প্রশস্ত করে। আমাদের দেশের মেয়েদেরকে (ছেলেদেরও ) বলতে শুনি- ‘ম্যারি মি সাকিব’, ‘ম্যারি মি মুস্তাফিজ’, ‘মাশরাফি মাই হটি হিরো’। সুখে আমাদের বুকের আঙ্গিনায় শুভ্র বাতাস বয়ে যায়। আমরা আনন্দ মিছিল করি, আনন্দের সাগরে ভাসি; আর আমাদের এই আনন্দের উৎস তৈরি করেছে গোটাকয়েক ঝঞ্জার মত উদ্যম তরুণ, গোটাকয়েক সূর্যের ন্যায় প্রখর তরুণ। এই আনন্দের মাঝে হয়তোবা কখনও ব্যত্যয় ঘটবে, আমরা অনেক খেলায় জয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক খেলায় হারবোও, তবু লজ্জা পাওয়ার দিন যে শেষ হয়েছে সেটিতো স্পষ্ট হয়েছে।
কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রসঙ্গ-
সুধীর গৌতম ভারতীয় দলের একজন ডাই হার্ট সমর্থক। ভারতীয় দল যেখানেই যায় সেখানেই তাকে দেখা যায়। ত্যানা তুনা না পেঁচিয়ে সরাসরিই বলছি- সুধীরের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে সে বিষয়টি আমাদের লজ্জিতই করেছে। ভারতীয় সাংবাদিকেরা যেটি প্রথমে প্রচার করেছে সেটি যদি অতিরঞ্জিতও হয়, তবু তাতে আমাদের লজ্জার পরিমান কমে না। সুধীরকে যদি সামান্য ধাক্কা কিংবা গালমন্দও করা হয় সেটি নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত। হতে পারে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং প্রশাসনের ত্বরিত পদক্ষেপও প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু সংবাদ মাধ্যম এবং ছাগু ধাঁচের ফেসবুক পেজগুলো যেভাবে সেটিকে মিথ্যা প্রমানে উঠে পড়ে লেগেছিল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। উদাহরন স্বরূপ এই
ক্লিপটি দেখতে পারেন। সুধীর যেখানে বারবার বলছে- তাকে মারা না হলেও ধাক্কা দেয়া হয়েছে, তাড়া করা হয়েছে, তার সিএনজির উপর ঢিল ছোড়া হয়েছে; তবু দায়িত্বশীল সাংবাদ মাধ্যম কর্মী বারবার তার মুখ থেকে বলানোর চেষ্টা করছে যে তাকে আঘাত করা হয়নি। আরজেস গ্রেনেড ছুড়ে কাউকে উড়িয়ে না দিলে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কাউরো মাথার ঘিলু না বের করা পর্যন্ত সেটি বুঝি আর আঘাতের পর্যায়ে পড়ে না।
আরেকটি বিষয় চোখে পড়েছে- ভারতের কেউ অর্ধশতক করার পর আমাদের খুব অল্প (খুবই অল্প) সংখ্যক দর্শক তালি দিয়ে তা উৎসাহিত করেছে। এই সংস্কৃতি আগে ছিল না। আমি নিজে ক্রিকেট ভাল না খেললেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আমার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার খুব কাছের বন্ধুরা ক্রিকেটের আকাশে নক্ষত্র হয়ে জ্বলেছে। আমি খুব অল্প বয়স থেকে স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতাম। নিজে আবাহনীর সমর্থক ছিলাম। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ২১ নম্বর গ্যালারী (মূলত গেটের নম্বর ছিল ২১)-র সঙ্গে আমার সম্পর্কটি অত্যন্ত আত্মিক। তখন থেকে দেখে এসেছি ক্রিকেটে প্রতিপক্ষকে সম্মান জানানোর বিষয়টি। একদিনের একটি ঘটনা উল্লেখ করি- সন তারিখ মনে নেই; আবাহনী আর মোহামেডানের খেলা চলছিল। প্রথমে ব্যাট করে আবাহনী ২৫৫ (খুব সম্ভবত) রান করে। শুরুর দিকে ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটলেও শেষের দিকে দুর্জয়ের স্বভাবসুলভ মারকুটে ব্যাটিং আর এনামুল হক মনির অপ্রত্যাশিত স্লগের বদৌলতে রান ২৫০ এর কোঠা পার হয়। সে সময়ে ২৫০ অনেক রান। মোহামেডানের শুরুটাও ভাল হয়নি। ১০০ রানের নীচেই ৪্ কিংবা ৫ টি ভাল উইকেট হারায় তারা। ম্যাচ তখন প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ আবাহনীর হাতের মুঠোয়; কিন্তু কোনোভাবেই বুলবুলকে আউট করা যাচ্ছিল না। বুলবুল একাই রান নিয়ে যাচ্ছিল। বুলবুলের উইকেটটি তখন আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরী। আমার এখনও মনে আছে বুলবুল যখন আমাদের প্রাণে তীরের আঘাত সম অর্ধশতক হাঁকালো, গোটা আবাহনী গ্যালারীর সবাই মুখে গালি আর হাতে তালি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বুলবুলকে সম্মান জানিয়েছিল। অনুরুপ দৃশ্য মোহামেডান গ্যালারী থেকেও দেখা যেত। এটাই তো ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক খেলাতেও ছিল একই ধারা। আর এবার যখন শিখর ধাওয়ান অর্ধশতক হাঁকালো, দেখলাম গ্যালারীতে প্রায় শ্মশান নিরবতা। এখন প্রশ্ন তুলতে পারেন আমার এই ভদ্রতা, এই সৌহার্দ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার সময় কেন প্রকাশ করিনা? সেটাওতো ক্রিকেট! খোদার কসম, পাকিস্তান নামটি শুনলেই আমার বমি আসে, আমার চোখে ভেসে ওঠে রায়ের বাজারের বধ্যভুমিতে হাত-চোখ বাঁধা মরদেহের সারি, আমার চোখে ভেসে ওঠে ধলপুর ময়লার ডিপোর আবর্জনার নীচে লাশের স্তুপ, আমি স্পষ্ট দেখতে পাই আমার মা-বোনের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে উলঙ্গ কিছু পশু, আমার বাপ- ভাই এর বুকের মাংস খাবলে খাচ্ছে সেই পশুরা। না, ক্রিকেট কিংবা যেকোনো ভদ্রতার খাতিরেই হোকনা কেন, ’পাকিস্তান’ শব্দটি আমি গ্রহন করতে পারিনা।
এবার শেষ প্রসঙ্গে আসা যাক। দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে ভারতকে পর্যুদস্ত করে আমাদের সোনার টুকরো ছেলেরা সিরিজ জিতে নিল। এমনটা কে ভেবেছিল? অন্তত ২৭ বছরের পরিসংখ্যান বিচারে এমনটা ভাবা দুরূহই। সে যাইহোক, পরিসংখ্যানের মুখে কালিমা লেপে আমাদের নায়কেরা সেই অসাধ্য সাধন করেছে। নেপথ্যে আরো অনেকের অবদান থাকলেও মাঠের খেলোয়াড়গুলোর কৃতিত্বই সর্বাধিক। এই মাশরাফি, এই তামিম, এই সৌম্য, এই মুস্তাফিজই আমাদের জন্যে বিশাল এক জানালা খুলে দিয়েছে, যে জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে আনন্দের সমীরণ। আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতেও কুণ্ঠা বোধ করিনি। তৃতীয় খেলায় বাংলাদেশ পরাজিত হল। অনেকেই এর পেছনে দায়ী করছে টসে জিতে ব্যাট না করার সিদ্ধান্তকে, চার পেসারের পরিবর্তে একজন বাড়তি স্পিনার দলে নেয়াকে, একে বল না দিয়ে ওকে বল করতে দেয়াকে, ব্যাটিংয়ে উঠিয়ে মেরে খেলার উচ্চাভিলাষী মনোভাবকে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, মাঠে যারা খেলে এবং যারা খেলায় তারা আমার আপনার চাইতে ক্রিকেটটা অনেক ভাল বোঝে। তাদের পরিকল্পনা হয়তো কাজে লাগেনি, যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরিকল্পনা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কাজে লাগে; তবু ঝুঁকিতো নিতেই হয়। আমাদের সেই দিন কি আর আছে! শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোনোমতে টিকে থেকে সম্মানজনক পরাজয় বরণ করবার দিন সত্যিই পার হয়ে গেছে। আমরা এখন প্রতিটি খেলা জিতবার জন্যেই খেলি। ৩১৭ তাড়া করতে গিয়ে ওভার প্রতি রানের চাহিদা যখন প্রায় সাড়ে সাত, আমরা তখন টুকটুক করে টিকে থাকার জন্যে খেলিনা। আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেই সাড়ে সাতের কঠিন লক্ষটাকেই ছিনিয়ে আনবার চেষ্টা করে। ‘মারুম নাইলে মরুম’- এমন একটা লড়াকু মনোভাব গড়ে উঠেছে দলের মাঝে, এটি পরম প্রাপ্তি নয়? উচ্চাভিলাষী মনে হচ্ছে? কিন্তু এমন মনোভাব না জন্মালে আমরা কঠিন ম্যাচ জিতবো কি করে? ভারত আমাদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে প্রতিদিন ২০০ বেশী করতে পারবে না, এই আশা করাটা বোকামি নয় কি? আগে ব্যাট না করার পিছনেও অনেক যুক্তি রয়েছে; পরিসংখ্যান আর আবহাওয়া দুটি বিষয়ই এই ম্যাচে রান তাড়া করাটাকেই সমর্থন করে। ৩২ টির মাঝে যে ২৬ টি খেলায় ভারত জিতেছে তার ১৮ টিই পরে ব্যাট করে। আবার যেহেতু বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল, ডার্কওয়ার্ত-লুইসের খপ্পরে পড়বার সম্ভাবনা ছিল, সেহেতু পরে ব্যাট করবার সিদ্ধান্ত বিলক্ষণ যৌক্তিক। আর সবচেয়ে বড় কথা ভারতের কাছে হারাটা অসম্ভব কিছু কি? তাই, এরপরও যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েই থাকে, সেগুলো শুধরে বাঘেরা যে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে গর্জে উঠবে সে বিশ্বাস অবশ্যই রাখা যায়। কিন্তু দোষ চাপানো আমাদের স্বভাব; তাই সব দোষই খেলোয়াড়দের উপর চাপাতে চাচ্ছে অনেকেই। এমন কি এমন, গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত অনেকেই সন্দেহ করছে ম্যাচটি নাকি পাতানো ছিল। কি কারণে পাতানো? কেননা আওয়ামী সরকার ভারতের বন্ধু। বাংলাওয়াশের হাত থেকে বন্ধু ভারতকে রক্ষা করতে সরকারী চাপে খেলোয়াড়রা ইচ্ছা করেই খারাপ খেলেছে। কি সাঙ্ঘাতিক! আচ্ছা আপনারা যারা এমনটা ভাবছেন তারা দুদিন আগেই এই খেলোয়াড়গুলোকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন, ফেসবুকে প্রোফাইল পিকে তাদের ছবি ঝুলিয়েছেন, ম্যারি মি, লাভ ইউ বলে চিৎকার করেছেন, সেই তাদেরই সততা নিয়ে আজ প্রশ্ন করছেন? সেই তাদেরকেই কপট বলে লজ্জা দিচ্ছেন? সেই তাদেরকেই সরকারী চাপে দেশের সঙ্গে বেইমানী করেছে বলে সন্দেহ করছেন? লজ্জা হয় না? আবার যখন অদূর কিংবা দূর ভবিষ্যতে এই ছেলেগুলো আমাদের গর্বিত করবে, বাঘের গর্জনে কাঁপিয়ে দেবে ক্রিকেট বিশ্ব, তখন যখন আবার আপনারা তাদের প্রশংশায় ব্যাকুল হবেন, আপনাদের ‘হিপোক্রেসি’-র মাত্রা কোন উচ্চতায় উঠবে তা ভেবে দেখেছেন?
পশ্চিমা বিশ্বে বর্ণবাদীদের মাঝে একটি বিশেষ প্রকার আছে যাদের বর্ণবাদের ধরণকে বলা হয় ‘হিডেন রেসিজম’; অর্থাৎ তাদের বর্ণবাদী কর্মকাণ্ড তারা ভাষায় কিংবা ব্যবহারে প্রকাশ করে না, কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে কৌশলে বর্ণবাদ চালিয়ে যায়। বাংলায় এদের কি বলে? সুপ্ত বর্ণবাদী? ছুপা বর্ণবাদী? হবে হয়তো। ছাগলামিরও একটি বিশেষ ধরণ আছে। মুখে চোখে প্রগতি, দেশপ্রেম দেখালেন, জামাতশিবির রাজাকার এই কথাও স্বীকার করলেন, অথচ ৪৪ বছর পর এইসব রাজাকারের ফাঁসি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয়না, ইসলামের ঝাণ্ডা বহনকারী নেতাগুলোর ফাঁসি আপনি মেনে নিতে পারেন না, পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া মনির আপনার আবেগকে নাড়া না দিতে পারলেও গো মা রনির কাছে লেখা কাদের মোল্লার চিঠি পড়ে আপনার চোখের কোণে বাস্প জমে; হ্যা ঠিকই ধরেছেন আপনার এই ছাগলামি এই বিশেষ প্রকারে অন্তর্ভুক্ত আর এই জাতটাকে বলে ‘ছুপা ছাগু’। যারা তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়কে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ ক্রিকেটের ‘অ’ ‘আ’ না জানা কিছু সমর্থক; হয়তো অতি আবেগের আতিশয্যেও এমন ধারার সন্দেহের জন্ম হতে পারে তাদের মনে। এক ভাগ অতি সন্দেহবাতিক রোগে আক্রান্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, অনিশ্চয়তায় ভোগা কিছু মানসিক রোগী। আর শেষ ভাগটি হচ্ছে- ছুপা ছাগু, যারা ভেবে চিন্তে, বিচার বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ম্যাচটি পাতানোই ছিল। আরো এক ধারার লোকও আছে, যাদের জন্যে যথার্থ বিশেষণ এখনও তৈরি হয়নি; উদাহরণ চান?
এই নিন।
মনে রাখবেন বাংলাদেশের এই দলটি আমাদের জন্যে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমাদের সোনালী স্বপ্নরথের সারথী এরা। কোনো ছাগলের ছাগলামি এদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। সংযত হোন, ছাগলামি পরিহার করুন। ক্রিকেটকে ভালবাসতে এই জটিল খেলা নাইবা বুঝলেন, অন্তত সাদা আর কালো এই রঙ দুটিকে চিনতে শিখুন।
মন্তব্য
বাঃ! সুন্দর লেখা। এত লিঙ্ক বসাতে খাটনিও হয়েছে ভাল মতই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ, কষ্ট একটু হইছে। কিন্তু এই যে আপ্নের পছন্দ হইল, কষ্টও সেই সাথে সার্থক হইল। ধব্যবাদ
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
দারুন লিখেছেন ভাই ঈয়াসীন।
আপনার অনুমতী ব্যাতিরেকেই ফেবু তে এটা শেয়ার করলাম।
আশা করি কিছু মনে নিবেন না।
অনুমতির জন্য তর সইছিলো না।
কিসের অনুমতি? ধুর! সাচ্ছন্দে শেয়ার করতে পারেন। ধব্যবাদ
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ঈর্ষান্বিত হলাম।
আমাদের ব্যালেন্স করে চলার প্রবনতা নিয়ে চরম উদাস একটা দারুন রম্য লিখেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে কিছু লোকের অসভ্য আচরনের মূলে রয়েছে এই ব্যালেন্স করে চলার প্রবনতা। আর কিছু লোক মনে প্রানে এতটাই পাপীস্থানী যে পাকিদের সাথে ম্যাচ/সিরিজ জেতার পর তাদের বক্তব্য –ইন্ডিয়া আয় , তোদের ......
প্রধানদের জন্য যথার্থ বিশেষণ আসলেই তৈরী হয়নি, তবে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা ও লজ্জা পাবে তার আচরন দেখলে।
আমি তোমাদের কেউ নই
মূলত বিকেএসপির প্রথম ব্যাচের প্রায় সবাই আমার খুব কাছের বন্ধু। ওরা খেলতো আর আমি ছিলাম দর্শক। আর শোনেন, সময় করে আপনার নামটা পারলে একটু ছোট কইরেন।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ইস এইটা কি করলেন ভাই !!! এই টপিক নিয়া কিছু একটা রেডি করার চেষ্টায় ছিলাম। কিন্তু আপনি আগেই চাকু চালিয়ে দিলেন। মুরুব্বিরা আসলে ঠিকই বলতেন। শুভ কাজে দেরী করতে নেই। আমি দেরী করে এখন পস্তাচ্ছি।
ভালই লিখেছেন।
সেদিন টিমে একজন বাড়তি স্পিনার নেয়া হয়েছিল। অবশ্যই স্পিনার নিয়ে কিছু প্ল্যান ছিল। কিন্তু বাজে আবহাওয়ার কারণে এটা নিশ্চিত ছিল সন্ধ্যার পরে মাঠে কুয়াশা থাকবে। মাঠ ভিজা থাকবে। স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হবে। আগে বল করার সিদ্ধান্তের পিছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
দারুণ সংকলন!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
নতুন মন্তব্য করুন