ক্রিকেট ও বাঙ্গালীর পাকপ্রীতি

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/০৪/২০১৬ - ২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

s9

১৯৮৩ আর ৮৭-র ক্রিকেট বিশ্বকাপ টিভিতে সরাসরি দেখবার সৌভাগ্য হয়নি। তখন ক্রিকেট খেলা দেখা যেত না খুব একটা। মাঝে মাঝে বিটিভিতে সন্ধ্যায় চ্যানেল নাইন-এর ধারণকৃত কিছু খেলার হাইলাইটস দেখা যেত; যা উপস্থাপনা করতো রিচি বেনোড। সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক কোনো ক্রিকেট ম্যাচ সরাসরি স্টেডিয়ামে বসে দেখবার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১৯৮৮-র এশিয়া কাপে। তিনটি খেলা দেখেছিলাম; প্রথমটি শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান, এরপর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা, আর শেষেরটি ফাইনাল পরবর্তী চ্যারিটি ম্যাচ; যাতে পাকিস্তানের আব্দুল কাদির আপেল দিয়ে বল করে দর্শকদের মজা দিয়েছিল। বাংলাদেশের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে তহবিল তৈরির লক্ষ্যে সেই ম্যাচটি আয়োজিত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন ভারত আর অন্যদের মাঝ থেকে গড়ে তোলা একাদশের মধ্যে। প্রথম খেলা দেখতে যাওয়ার আগে আমার সে কী আয়োজন! আমার বয়স তখন কম। ক্রিকেট বনেদী খেলা, স্টাইলিশ খেলা, এত কিছু ভেবে গ্যালারীতে গিয়েছিলাম দুলাভাইয়ের ব্লেজার পরে। সে ব্লেজার প্রায় আমার হাঁটু ছুঁই ছুঁই করছিল আর কাঁধের ফিটিং-এর কথা নাই বা বললাম; ভাগ্যিস সেদিন কোনো ছবি তুলে রাখিনি! গ্যালারীতে যাবার পর মনে হচ্ছিল অন্যরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে হয়তো। দুলাভাইকে পটিয়ে বেশি দামে ক্লাব হাউসের টিকিট কিনেছিলাম। এখন গ্যালারী গুলো কিভাবে ভাগ করা হয়েছে জানিনা। তখন ভিআইপি গ্যালারীর ঠিক নীচে ছিল ক্লাব হাউস গ্যালারী, সেটিতে বসবার একটি সুবিধা ছিল কারণ খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমের পাশেই বসে খেলা দেখা আর খেলোয়াড়দের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যেত। প্রথম অভিজ্ঞতাতেই প্রথম ধাক্কা খেলাম। গ্যলারীতে পাকিস্তানের পতাকা খুব অল্পই ছিল, তাও ড্রেসিং রুম এর উপরে ভিআইপি গ্যালারীতে; কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম (আবাহনী-মোহামেডান গ্যালারী নামেই বেশি পরিচিত ছিল তখন) দুই গ্যালারী জুড়েই পাকিস্তানের সমর্থক। না, এমনতো হবার কথা ছিল না! এই ঢাকা স্টেডিয়াম ঢাকায়, বাংলাদেশে; যে দেশে পাকিস্তান নামক একটি বরাহরাষ্ট্র গনহত্যা চালিয়েছিল ৭১ সালে, লক্ষ্য লক্ষ্য মা-বোনকে ধর্ষণ করেছিল। এইসব আমাদের স্কুলে পড়ানো হয়নি, ঐ সময়ে হত না; কিন্তু মার কাছ থেকে বাবার কাছ থেকে আর আমার মুক্তিযোদ্ধা বড়মামার কাছ থেকে আমি ৭১ সম্পর্কে জেনেছি। বেশিদিন আগের কথাতো নয়! মাত্র সতেরো বছর, এই সতেরো বছরে জাতির বুকের অত বড় একটা ক্ষত শুকিয়ে গেল! ঢাকার স্টেডিয়ামে জাভেদ মিয়াদাদ, আব্দুল কাদির এর জন্য বাঙ্গালীর এত ভালবাসা! মিয়াদাদ সে খেলায় আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করেছিল, আমার এখনও মনে আছে সে যখন মাঠ ছাড়ছিল আমার আশপাশের অনেক দর্শকের চোখে আমি ‘ভাই হারানো’ অভিব্যক্তি দেখেছিলাম। শ্রীলংকার মিডিয়াম ফাস্ট বোলার রবি রত্নায়েকের একটি নীচু লেন্থের বল সেলিম মালিক অথবা ইজাজ আহমেদ কার যেন প্যাডে লাগতেই আমি আউট দ্যাট (‘হাউ ওয়াজ দ্যাট’ তখনও জানতাম না) বলে চিৎকার করে উঠি। আমার পাশ থেকে এক লোক কর্কশ স্বরে বলেছিল- নাক টিপলে অহনও দুধ বাইর হইব, এল্পির (এল বি) কি বুঝ মিয়া, এত ফাল পাইরো না, বহ। আমি ভয়ে চুপসে গিয়েছিলাম।

এরপরের বিশ্বকাপ টিভিতে দেখলাম। বুঝলাম যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে পাকিস্তানের ক্রিকেট দলটির প্রতি ভালবাসা ততই গভীর হচ্ছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বারবার শুধু হতাশ হয়েছি। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যেদিন পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হল সেদিন কলোনীতে অনেককেই উল্লাস করতে দেখেছি। ৯৬ এর বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলায় প্রসাদের বলে চার মেরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে পরের বলে যখন আমির সোহেল আউট হয়ে যায় তখন আমার এক নিকটাত্মীয়কে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। সেদিন রাতে তাদের বাড়ীতে নেমন্তন্ন ছিল; না খেয়েই চলে এসেছিলাম ঘৃণায়। ৯৬ এ আমরা বন্ধুরা অনেক পরিনত। পাকিস্তানের যেকোনো খেলায় কলোনীর কোনো ঘর থেকে উল্লাস ধ্বনি শুনতে পেলেই আমরা একত্রে ‘চুপ কর, রাজাকারের বাচ্চা’ বলে চিৎকার করতাম। এই নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হত, আমরা আর ভয়ে চুপসে যেতাম না।

এরপর ৯৯- এর বিশ্বকাপ আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য একটি মাইল ফলক, একটি ইতিহাস। ৩১ মে, সেদিন ছিল সোমবার। খেলা শুরুর আগেই আমরা জানতাম প্রতিপক্ষ অসম এবং শক্তিধর। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলায় আবেগটা আর খেলার গণ্ডির ভেতর থাকে না। বিদ্যুৎ আর অপি দারুণ শুরু করলো। কী নির্ভীক আর দৃষ্টিনন্দন শটে চার মারছিল বিদ্যুৎ! সেই চারগুলো যেন কামানের গোলা হয়ে ছুটে যাচ্ছিল কোনোটি লাহোরে, কোনোটি ইসলামাবাদে আর কোনোটি করাচীর দিকে। মনে হচ্ছিল ছেলে দুটোর চোখেমুখে কোনো ভয় নেই। ওদের ঐ ভয়ডরহীন শুরুটাই সেদিন গোটা দলকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছিল আর প্রতিপক্ষকে অসম থেকে সম পর্যায়ের দলে পরিণত করেছিল। যাইহোক ২২৩ এমন কোনো আহামরি টার্গেট ছিল না। কিন্তু শুরুতেই প্রথম ওভারে সুজনের বলে আফ্রিদির পতন আর এরপর একে একে ইজাজ, সাইদ আনোয়ার, ইনজামাম, সেলিম মালিক; ধীরে ধীরে ধুলায় মিটে গেল ক্রিকেটের এক পরাশক্তি। না, খুব সহজ ভাষায় সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরা সম্ভব নয়। সেদিন খেলা শেষে কেন জানি দৌড় দিয়েছিলাম, দৌড়ুতে দৌড়ুতে দেখেছিলাম আমি একা নই ঢাকার রাস্তায় অনেকেই দৌড়ুচ্ছে। এই যে আমরা এতজন দৌড়ুচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি? মতিঝিল কলোনী থেকে দৌড়ে টিএসসি গিয়ে দেখি সেখানে মহোৎসব শুরু হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের উপর চড়ে জনাকয়েক 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ' বলে চিৎকার করছে আর চতুর্দিকে উত্তাল গণসিন্ধু। সে এক প্রাপ্তি বটে!

এর পরদিন থেকে টানা কয়েকদিন শুধু পত্রিকা থেকে কেটে কেটে মনিরত্ন জমিয়েছি। পত্রিকা ঘাঁটতে ঘাঁটতে জেনেছিলাম এই খেলাতেও অনেক বাঙ্গালী পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। তারা বরাহ প্রজাতির কোন শ্রেণীতে পড়ে জানিনা। ক্রোধে উন্মত্ত হয়েছি, ক্ষেপে গিয়ে দেয়ালে লাথি মেরেছি আর পরক্ষনেই পত্রিকার কাটা অংশগুলো একত্র করে বুকে জড়িয়ে ধরেছি।
এই সেদিন টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলাতেও অনেকে পাকিস্তানের সমর্থন করেছে। হিসাব মিলাতে পারিনা, এ হিসাব কিছুতেই মেলেনা।

এক বরাহশাবকের ফেসবুক থেকে-
zs1

zs2
zs4
zs3

এইসব দেখে আবারো ক্রোধে উন্মত্ত হই। আবারো সেই পত্রিকার কাটা অংশগুলো একত্র করে বুকে জড়িয়ে ধরি। হ্যা, সেই মনিরত্নগুলো এখনও সযত্নে আগলে রেখেছি, রাখবো। পাঠক, আমার সেই অমুল্য সম্পদের কিছু অংশের ভাগীদার আপনারাও হন, এই নিন এই ছবিগুলো আপনাদের জন্য......

s

s1

s2

s4

s6

s7

s8

s10 (1)

s11

s12

s13

s14

s16

s17

s18

s19

s20

s21

s22

স্ক্যান করা এই ছবিটি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ-
সাদাসিধে কথা
জাফর ইকবাল
(জুন, ১৯৯৯)

ji

s23

s24

s25

s26

s27

s28

s29

বাংলাদেশ, তোমাকে বড্ড ভালবাসি।
পাকিস্তান, তোকে ভীষণ ঘৃণা করি।
বাংলাদেশের পাকিস্তানী সমর্থক, তোমাদের দেখে করুণা হয় না, আগের মত আর হতাশ হই না, শুধু উদর উজাড় করে বিবমিষা উদ্গিরিত হয়।


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। বিশেষ করে ১৯৯২ বিশ্বকাপের দিনগুলোর কথা। এসব চলতে থাকে, চলতে থাকবে। আজকাল আর রাগ হয় না পারজদের নির্লজ্জ আস্ফালন দেখলে। ছাগল উৎপাদনে প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে একটা বলে কথা।
লেখার জন্য চলুক

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

ঈয়াসীন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ঈয়াসীন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
অদ্ভুত এক সময়, অদ্ভুত এক জাতি (গোটা জাতির একটি বৃহদাংশ) দেখবার দুর্ভাগ্য হল আমাদের।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অদ্ভুত সুন্দর একটা পোষ্ট। বছর মনে নেই, কিন্তু মনে আছে তারিখটা ছিল ২৫শে মার্চ ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানের বিজয়ে উল্লাস করতে বেরিয়েছে এক দঙ্গল তরুণ, মিছিলের সামনে বড় একটা পাকিস্তানের পতাকা। আমি বিস্ময় আর ঘৃণা নিয়ে দেখছি। ২৫শে মার্চেও তাদের মনে পড়েনি পাকিস্তানের অপকর্মের কথা। এখন আর চুপ থাকিনা।

সোহেল ইমাম

ঈয়াসীন এর ছবি

ধন্যবাদ।
২৫ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি - এই দিনগুলোই তাদের জন্য অসস্তির।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকিস্তান আমাদের সাথে ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় করেছে। তারা তাদের অন্যায়ের জন্য এখনও ক্ষমা চায়নি, ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আর আমরাও তাদের ক্ষমা করিনি। কাজেই প্রতিপক্ষ নির্বিশেষে কোন খেলাতেই পাকিস্তানের সমর্থন করা বাংলাদেশের কোন নাগরিকেেরই বিন্দু মাত্র সুযোগ নেই। তদ্রুপ প্রতিপক্ষ নির্বিশেষে যে কোন খেলা যেখানে বাংলাদেশ দু’টি পক্ষের একটি সেখানে বাংলাদেশের কোন নাগরিকেরই প্রতিপক্ষ দেশকে সমর্থন করার কোন সুযোগ নেই। সেখানে প্রতিপক্ষ যদি কুলাঙ্গারের দেশ পাকিস্তান না হয়ে সুইজারল্যান্ডও হয়। এখন কেউ যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের খেলায় বাংলাদেশকে সমর্থন না করে পাকিস্তানকে সমর্থন করে তবে তা মেনে নেয়া যায় না। যারা সমর্থন করে তারা আর যা-ই হোক মানুষ নয়। পোস্টে সংযোজিত কলামে ডঃ জাফর ইকবাল এসব কুলাঙ্গারদের যার সাথে তুলনা করেছেন সে মনুষ্য বিষ্ঠার চেয়েও ঘৃণ্য কিছুর সাথে তাদের তুলনা করতে পারলে খুশী হতাম। আমি নিশ্চিৎ এরা অবলীলায় নিজেদের মা-বোনদের পাকিস্তানী খেলোয়ারদের হাতে এমনকি যে কোন পাকিস্তানি কুলাঙ্গারের হাতে বা অন্য কারও হাতে তুলে দিতে পারবে। কোন পাকিস্তানি বা অন্য কেউ এদের মা-বাবা, ভাই-বোনকে হত্যা করলেও তাদেরকে অবলীলায় বন্ধু হিসেবে গ্রহন করতে পারবে।
আমার মতে সরকারের উচিৎ তাদেরকে এমন জঘন্য কাজ পরিহার করার জন্য একটি শেষ সুযোগ দেয়া। যদি তারা সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া তারিখের মধ্যে নিজেদেরকে সংশোধন না করে বা তারা যদি নিজেদেরকে সংশোধন করতে অনিচ্ছুক হয় তবে তাদেরকে বলা তারা যেন স্বেচ্ছায় তাদের পিয়ারের দেশে চলে যায়। আর তাদের পিয়ারের দেশ যদি তাদের গ্রহন করতে ইচ্ছুক না হয় তাহলে তাদের তো দোজখ/জাহন্নাম বা সমপ্রকতির কোন জায়গা ছাড়া যাবার আর কোন গন্তব্য থাকবে না।
তবে সরকার সহসাই কিছু করবে বলে বিশ্বাস করার মত দিবা স্বপ্ন সচলায়তনের কোন পাঠক দেখে বলে আমার মনে হয়না। আর আমরাও যদি সব কিছু দেখে এবং বুঝেও কিছু না করি তবে আমরাও আমাদেরকে সরকারের কাতারেই শামিল করব। এ বিষয়ে আমরা যুগপদভাবে দু’টি জিনিস করতে পারিঃ ১। কার্যকরী কিছু করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা ২। দেশবাসীর নিকট তাদের মুখ উন্মেচিত করে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। গ্রামাঞ্চলে দেখেছিলাম, যেসব টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক আছে সেসব টিউবয়েলকে লাল রঙে চিহ্নিত করা হত। তেমনিভাবে কোন ভিজিবল কিছু দিয়ে তাদের বাড়িঘরকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যদি বাড়ীর সামনে লিখে রাখা যায়- “সাবধান! এখানে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তানকে সমর্থনকারী কুলাঙ্গারা বাস করে” তবে কিছুটা হলেও কাজ হবে বলে আমার মনে হয়। ফেইসবুক সহ সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এদেরকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সচল এবং ফেইসবুকসহ সকল মাধ্যমে তাদের নাম, ঠিকানা, কর্মস্থল ও ছবি সহ একটি চলমান তালিকা প্রকাশের উদ্যোগও গ্রহন করা যেতে পারে। আমি এখানে তাৎক্ষনিকভাবে মাথায় আসা দু’একটি বিষয় উল্লেখ করলাম। সচলদের সবার সহযোগিতায় এরকম আরও অনেক কর্মসুচী গ্রহন করে এদেরকে চিহ্নিত করার আরও অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে।

- পামাআলে

ঈয়াসীন এর ছবি

ধন্যবাদ, চমৎকার বলেছেন। আরেকটু বিস্তারিত যোগ করে এই আইডিয়ার (চিহ্নিত করণ) একটা পোস্ট লিখে ফেলেন।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্য। আমি আসলে চমৎকার কিছু বলিনি আপনার অমন মানসম্পন্ন পোস্টটি আসলে আমাকে দিয়ে কথাগুলো বলিয়ে নিয়েছে। পোস্ট লিখার ইচ্ছে দু’একবার যে হয়নি এমন নয়। তবে সমস্যা হ’ল, সুস্থ পা থাকলেই ইচ্ছে হলেই হাটা গেলেও সুস্থ হাত থাকলেই তো আর ইচ্ছে হলেই পোস্ট লেখা যায় না। তা করার জন্য আপনার ন্যায় লিখার হাত থাকতে হয় যে।

- পামাআলে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মিজান, পিষে ফ্যালো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

স্মৃতি ঘোলাটে হয়ে আসছে। তারপরেও ঘেঁটেঘুটে যা মনে পড়ছে, ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল লাইভ দেখানো হয়েছিল বিটিভিতে। পুরো খেলা, না শুধু ওয়েস্ট ইণ্ডিজের ব্যাটিং মনে নাই। ১৯৮৫ সালে বেনসন ও হেজেজ মিনি ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনাল পুরোটাই দেখানো হয়েছিল লাইভ। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনাল আর ফাইনাল লাইভ দেখানো হয়েছিল স্পষ্ট মনে পড়ে। ১৯৮৭ সালের শুরু থেকে টিভি এ্যান্টেনার সাথে এলুমিনিয়ামের হাড়িপাতিলসরা বেঁধে দূরদর্শন দেখা যেতো অনেক বাসায়। পাকিস্তানের ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের ভারত সফরের অনেক খেলাই তখন ঢাকা-চট্গ্রামের অনেকেই ঐভাবে দেখেছেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষের প্রবল পাকিপ্রীতি তখন থেকেই চোখে পড়ে। দশ ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ সেবার ইমরানের পাকিস্তান ৯-১এ জিতেছিল কপিলের ভারতকে হারিয়ে। টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ১-০তে। স্কুলের সহপাঠীদের দুইতৃতীয়াংশই তখন পাকিস্তানের অন্ধ ভক্ত। ব্যাটিং মানেই মিয়াঁদাদ-সেলিম মালিক, ফাস্ট বোলিং মানে ইম্রানাক্রাম, ইসপিড়িঙ(স্পিন উচ্চারণ করতে পারতো না অনেকে) মানে কাদির-তৌসিফ-কাশিম এইসব ছিল সেই সময়ের ক্রিকেটালচনার সারবস্তু। ১৯৮৭র বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যে ভারতের কারচুপিতে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে আর সেই পাপেই ভারতকে ইংল্যাণ্ড বাঁশ দিয়েছে এইসব আলাপও মনে পড়ে। তখন বছরে অন্তত একটা করে ৩-৪জাতি ক্রিকেট হতো শারজায়। ১৯৮৬র পর থেকে পাকিস্তান সেগুলি জিততে থাকে একটার পর একটা। শুধু ঢাকায় আক্রাম-মিয়াঁদাদের অনুপস্থিতিতে ১৯৮৮তে ভারত জিতে যায়। ১৯৮৯ তে ভারতে নেহেরু কাপের সময় হাড়িপাতিল সরা ছাড়াই ঢাকার অধিকাংশ বাসায় (১৯৮৭র তুলনায় অনেক বেশি বাসায়) দূরদর্শন দেখা যেতো। ফাইনালের শেষ বলে পাকিস্তানের দরকার ৩ রান। ভিভ রিচার্ডসের বলে আক্রাম ছয় মেরে দিলো। তারপর পাড়ায় পাড়ায় উল্লাস। ১৯৯২ তে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিওয়ন হবার পরে যে উল্লাসের কথা সবার স্মৃতিতে উঁকি দেয় সেটা আশির দশকের শেষ তিন বছরেও হতো। হয়তো অতটা বড় আকারে না, কিন্তু হতো। আর মেয়েরাতো রীতিমতো পাঠানপুরুষের কামাকর্ষনে কেঁদে ফেলতো। সমবয়সী কিশোরীরা প্রকাশ্যেই ইম্রানাক্রামকাদিরমহসীনকামালের স্টিকারভিউকার্ডপোস্টার চুমাতো। দেখে খারাপ লাগতো। কিন্তু সহ্য করা ছাড়া কোন পথ ছিল না।

এই পথ তৈরী করেছেকরছে বাংলাদেশ। তিরিশ বছরে পাকিপ্রেম অনেকটাই কমেছে । আরো কমবে। দুটো ঘটনা ঘটতে হবে তাতে :

এক. ক্রিকেটে বাংলাদেশের আরো অনেক অনেক পথ এগিয়ে যাওয়া

দুই. বাকি ক্রিকেট খেলা দেশের সাথে পাকিস্তানের পৌণপুণিক পরাজয়

প্রথমটা বাংলাদেশের হাতে। বাকিটার জন্য আমাদের কর্তব্য রুটিন করে পাকিস্তানের অমঙ্গল কামনা করা।

পাকিস্তান ক্রিকেটে ডুবুক। বেলুচিস্তান-পাখতুনওয়া-সিন্ধু স্বাধীন হোক।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক ধন্যবাদ, অনেক তথ্য পেলাম আপনার কমেন্ট থেকে।
পাকি ক্রিকেট ধ্বংস হোক।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।