সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৯/১১/২০১৬ - ১২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাম্প্রতিক নাসিরনগর বৃত্তান্ত আমাদের কলঙ্কের তালিকায় আনকোরা কোনো সংযোজন নয়, এটি আবহমান বাংলার ইতিহাসেরই এবং ঐতিহ্যেরই একটি কালো অংশ। এই নিয়ে সন্ধ্যার এক আড্ডায় জোর বিতর্ক চলছিল, পারিষদেরা সকলেই শিক্ষিত। একজন বললো- সাম্প্রদায়িক কলহ হাজার হাজার বছর ধরেই বৈশ্বিক একটি সমস্যা; সম্প্রদায়ের বিভাজন তাতে কেবল ধর্মে ধর্মে নয়, বর্ণে বর্ণেও; এতে অত্যাচারি আর অত্যাচারিতের রুপ পরিবর্তিত হয় , কিন্তু অত্যাচারের রঙ পাল্টায় না মোটেও। অত্যাচারের ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ে, কমে; কিন্তু তা কখনও থেমে যায়না। এ সমস্যা আমাদের একক দখলেতো নয়! আরেকজন ‘কিন্তু’ ‘তবে’ সহযোগে ত্যানা প্যাঁচালো; বললো- ভারতের দাদরী না কোথায় যেন গরুর মাংস রাঁধার অপরাধে গ্রামবাসীরা মিলে আখলাক নামের এক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অন্য একজনের মতে- সমস্যা যতই বৈশ্বিক হোক, তা এড়িয়ে যাবার কোনো অবকাশ নেই। পৃথিবীর কোথায় কোন ঘটনা ঘটছে, তা দিয়ে নিজেদের অন্যায়ের ন্যায্যতা প্রমান করা বা অন্যায়টিকে হালকা ভাবে নেয়া হীনমন্যতা বৈ অন্য কিছু নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো ঘটনার আলোকে নাসিরনগরে মুসলমান জনগোষ্ঠী দ্বারা হিন্দু মন্দির আক্রমন, প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দু বাড়ি লুট ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাই সভ্যতা। তবে আড্ডার শেষান্তে ভিন্ন ভিন্ন জনে ভিন্নমত থেকেই গেল। এই পৃথিবীর সবার সভ্য হতে বয়েই গেছে! মিজানের মনেও অনেক যুক্তি আছে, তবে সে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। কারো চরম হীনমন্যতার বিপক্ষে (বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক আর যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে) যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝাতে গেলে গলা কাঁপতে থাকে তার, কথা জড়িয়ে আসে বারবার, কান দুটো টকটকে লাল আর গরম হয়ে ওঠে, মুখ থেকে এক সময় বেরিয়ে আসে অশ্রাব্য সব শব্দ। শেষের আগেই আড্ডা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে মিজান। তার এমনতর ব্যবহারে বন্ধু সংখ্যা কমছে প্রতিনিয়ত। এই যেমন এই আড্ডার অনেকেই পরবর্তীতে মিজানকে আড্ডা-সঙ্গী হিসেবে আর মেনে নেবে না হয়তো। বেরুবার আগে যে ছেলেটি ‘কিন্তু-কিন্তু-তবে-তবে’ করছিল, তাকে খুব বিশ্রি একটি গালি দিতে ভুলে যায়নি মিজান।

নভেম্বরের শুরুতেই বেজায় ঠাণ্ডা পড়ে গেছে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে, পাইন গাছগুলোতে থোকা থোকা সাদা দাঁড়ি গজিয়েছে; তাছাড়া সমুদ্রপারের শহর বলে হেলসিঙ্কিতে সবসময়ই বড্ড হাওয়া দেয়। হাঁটতে হাঁটতে জ্যাকেটের কলার উঁচু করে নেয় মিজান। বাতাসের তোড়ে কুচি কুচি বরফগুলো তীরের মত এসে বিঁধছে গালে আর মুখে। না, এভাবে আর হাঁটা যাচ্ছে না; একটা ক্যাফেতে ঢুকে বড় মাপের এক পেয়ালা কফি নিল মিজান। কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে। মিজান নাসিরনগরের আগুন দেয়া বাড়িগুলো থেকে উঠতে থাকা ধোঁয়া দেখতে পায় যেন! শত শত মানুষ প্রানভয়ে ছুটোছুটি করছে, কী অসহায় সেই মানুষেরা! নিজ বসত ছেড়ে তারা ছুটছে, কোথায় ছুটছে জানেনা, তবু ছুটছে; এই ছুটোছুটি অনেক দিনের। পেছনে পড়ে রইল ঘরবাড়ি, পড়ে রইল উঠোনের তুলসি গাছ আর ধুলোর ‘পরে পড়ে রইল তাদের চির আরাধ্য দেবীর ছিন্ন মস্তক। মিজানের মনে হাজারো প্রশ্ন। কেন এমনটি হয়? কেন? এই বিষবৃক্ষের শিকড় কোথায়?

কেউ বলছে সরকার দলীয় দুটি অংশের আভ্যন্তরীণ কোন্দল, কেউ দুষছে প্রশাসনের অতৎপরতাকে, তাছাড়া ইউএনও আর মন্ত্রী সাহেবতো সরাসরিই তাদের খোলস উন্মোচন করেছে; এই এত কোন্দলের আবার একটা হেতুও নাকি আছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ফটোশপ করা একটি ছবি। কিন্তু এই যে রাজনীতি, এই যে প্রশাসন, এই যে অকালকুষ্মাণ্ড ইউএনও আর মন্ত্রী, এই যে ফটোশপ- এর সবইতো সেই হাজার বছরের জল-হাওয়ায় বেড়ে কালকূট সম বিষবৃক্ষের শাখা-প্রশাখা মাত্র, যার শিকড় অন্যস্থানে, এই শিকড় আমাদের মনের গহীন ভিতরে। ঘটনার পর হাম্লাকারি দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে নাসিরনগরের তিনজন আওয়ামীলীগ নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে, দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত হয়েছে থানার ওসি, তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, ৪৪ জনের মতন হামলাকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে, মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব নাকি কচুপাতায় দোল খাচ্ছে- এদেরকে নিঃসন্দেহে যথার্থ শাস্তি দিয়ে সরকারকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। কিন্তু, এতেই সমাধান হবে এই আবহমান সমস্যার? ইনফেকশন জনিত জ্বর কেবল প্যারাসিটামলে সারে? তা যে হয় না তার প্রমান পরমুহূর্তেই নাসিরনগর কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি, যা ছড়িয়ে গেছে ছাতকে, ঠাকুরগাঁয়ে এবং দেশের অন্যান্য স্থানে। প্রতিটি স্থানে ‘রাজনীতি-প্রশাসন-মন্ত্রী-ফটোশপ’ নামক শাখা-প্রশাখাগুলো কিন্তু কমন পড়ে না; যেটি কমন পড়ে সেটি হচ্ছে আমাদের মনের বিষ।

মাথার ভেতর ধোঁয়া ঘুরতে থাকে মিজানের। কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কখন! চুমুক দেয়া হয়নি পেয়ালায়। বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসে মিজান, বাইরে তখন ভীষণ তুষারঝড়। একটা ট্রাম এইমাত্র ছেড়ে গেল, পরেরটার জন্য অপেক্ষা না করে হনহন করে হাঁটতে থাকে মিজান। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। না, তার সম্প্রীতির কোনো স্মৃতি নেই। তার সহপাঠী পার্থ, শঙ্কর, পঙ্কজদের বাড়ি গিয়ে পূজার নাড়ু খাওয়ার কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। পার্থ-শঙ্কর-পঙ্কজ আর তার মাঝে শৈশব থেকেই অদৃশ্য একটা পাঁচিল ছিল। ওরা হিন্দু ছিল- একথা শৈশবের প্রথম পাঠেই শিখে গিয়েছিল মিজান। শুধু সহপাঠীরা নয়, ক্ষতিকর লাল পিঁপড়ারা যে জাতে হিন্দু আর শান্ত কালো পিঁপড়াগুলো যে ওর নিজের জাতের, তা সে শিখেছে বুদ্ধি হওয়ার ঊষালগ্নেই। স্কুলে যে দু’জন শিক্ষক তাকে খুব আদর করতেন তাদের একজন লংকা স্যার অন্যজন আশুতোষ সাহা। কী ভাল ছিল সেই শিক্ষকেরা! মিজান তাঁদের শ্রদ্ধা করেছে এবং সাথে সাথে এও জেনেছে যতই ভাল হোক এই শিক্ষকেরা বেহেস্তে যাবে না কখনও। মিজান জেনেছে- একটা দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকলেও সবাই কিন্তু সমস্তরের ‘মানুষ’ নয়, শুধু যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারাই উচ্চতরের মানুষের পর্যায়ে পড়ে, তাদের সুবিধার্থেই রচিত হয় সংবিধান, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বিবেচনা করেই চলে রাষ্ট্রব্যবস্থা। অবশেষে দেশটা শুধু সংখ্যাগুরুর, মানুষের জন্য নয়। এইসব শিক্ষা মিজান ঘরে পেয়েছে, বাড়িতে আরবী পড়াতে আসা হুজুরের কাছ থেকে পেয়েছে, প্রতিবেশী, সমাজ, পোশাক, মানুষের নামকরণ, পদবী- সবকিছুতেই পাঁচিলের স্পষ্টতা দেখেছে সে। তার ঘরের এবং বাইরের শিক্ষা ও শিক্ষকেরা তাকে কোমর বেঁধে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অংশ বানাতে চেয়েছে, মানুষ বানাতে চায়নি কখনও।

মিজানের মন মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে ঢের দেরীতে। এই পরিবর্তনে তার শিক্ষক ছিল তার নিজ অর্জিত শিক্ষা; যে শিক্ষা স্কুল কলেজের বইয়ের পাতায় খুঁজে পাওয়া যায়না। সে এক সময় উপলব্ধি করেছে মানুষই নিজ স্বার্থে মানবজাতিকে বিভাজিত করে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে। দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নেমে গিয়ে মিজান তার চলার পথ পাল্টে নিয়েছে। তার ধর্মীয় অনুশীলন ছাড়েনি কখনও, এটি তার বহুদিনের চর্চিত একটা অভ্যাস। সে তার উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় অনুশাসন পালন করলেও তা কখনও অন্যের সম্মুখে এনে দাড় করায় না, কারো উপর তার অনুশীলনের পন্থাকে চাপিয়ে দেয় না। সেই অদৃশ্য বিভাজনের পাঁচিলটাকে সে গুঁড়িয়ে দিয়েছে; যে পাঁচিল ছিল তার আর পার্থ-শঙ্কর-পঙ্কজদের মাঝে। তার প্রায়ই শৈশবে ফিরে গিয়ে চেখে দেখতে ইচ্ছে করে পঙ্কজদের বাড়ির নাড়ু খেতে কেমন ছিল!

হাঁটতে হাঁটতেই বাড়ি ফিরে আসে মিজান। সাউনার সুইচ অন করে জামা কাপড় ছাড়তে থাকে। দুই ঘরের ছিমছাম ফ্ল্যাট। বৌ ঘুমিয়ে আছে, সে সন্তান সম্ভবা। মিজান রান্না চড়িয়ে দেয় চুলোয়। সব মশলা, পেয়াজ এক সঙ্গে মেখে হালকা আঁচে গরুর মাংস। হাল্কা আঁচে কেননা সাউনায় ঢুকলে বারাবার বেরিয়ে জ্বাল পরখ করা ঝামেলা। পাতিলের ঢাকনিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, পাতিল ঢাকবার সময় হাত ফসকে ভাত খাওয়ার একটা থালা মেঝেতে পড়ে গেল। এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়লো ভাঙ্গা টুকরোগুলো। বিকট শব্দে বৌয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মিজান তাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে আবার রান্নাঘরে ফিরে এলো। কিছুক্ষণ চেয়ে দেখলো মেঝের দিকে, প্রতিমাগুলো এভাবেই টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিল মন্দিরের মেঝেতে। মৃত্তিকায় গড়া প্রতিমার অনুভূতি শক্তি থাকে, প্রাণ থাকে? মিজান জানে, থাকে না। তবে প্রতিমায় বিশ্বাসী মানুষগুলোর থাকে। যত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেছে প্রতিমার হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মস্তক, তার থেকে অনেক বেশি টুকরো হয়েছে পার্থ, শঙ্কর আর পঙ্কজদের হৃদয়। এর দায় মিজানেরও? আড্ডায় একজন বলছিল- মন্দিরে হামলাকারী সংখ্যায় কয়েক’শ, ষোলকোটির দেশে কয়েক’শর দায় সবার উপর বর্তায় না। সাউনার তাপমাত্রা সেলসিয়াসে ৮৫ ছাড়ায়, দর দর করে ঘাম ঝরতে থাকে তার শরীর থেকে, নিঃশ্বাসে যেন লু হাওয়া ঢুকছে। সামনে রাখা বালতি থেকে আচলা ভরা ঠাণ্ডা পানি তুলে চোখেমুখে দেয় মিজান। বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া তপ্ত হাওয়া তাতে প্রশমিত হয়না। একটা অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। সে ঐ কয়েক’শ নরাধমের অংশ নয়, তবে সব কিছু দেখে চুপচাপ বসে থাকা কয়েক কোটি সুশীলের দলে নয় কি সে! বৈষম্যের যে বিষবৃক্ষ ছড়ানো এই বাংলায়, তার উৎপাটনে তার ভূমিকা আছে কোনো? একার কিংবা সমমনা আরো কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লক্ষের উদ্যোগে সমাজ পরিবর্তিত হবে না ভেবে আরো অনেকের মত সেও কি এতকাল হাত-পা গুটিয়ে ঘরের কোণে দিন কাটায়নি? হামলাকারীর সংখ্যা কি মাত্র কয়েক’শ? যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি গত এক সপ্তাহ ধরে কেবল রেস্তোরায় আর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে চেকইন স্ট্যাটাস দিল, যার দেয়ালে দেয়ালে এই প্রদোষেও ফুল ফুটলো, পাখি গাইলো, লতা আর পাতা গড়াগড়ি খেলো, দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনের অজুহাতে নাসিরনগরের উত্তাপ যাকে যাকে ছুঁতে পারলো না- তারা সবাই কি ঐ কয়েক’শ হামলাকারীর সঙ্গী নয়? অন্যায় হতে দেখে গা বাঁচিয়ে চুপচাপ বসে থাকার মাঝে চতুরতা থাকতে পারে, তবে সততা নেই একবিন্দুও। না, মিজান চতুর হতে চায় না। মিজান জানে এই বহমান নদীর দিক পরিবর্তন সে হয়তো করতে পারবে না; তবু একটা কিছু করতেই হবে তাকে। যদি লক্ষ্য থাকে সত্যের, তবে লক্ষ্যে না পৌঁছেও লক্ষ্য অভিমুখে চলবার মাঝে তৃপ্তি থাকে।

সে পত্রিকায় দেখেছে- হামলা ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী নূর আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ তুন্নান, স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল মজিদ, স্টোরকিপার জামালউদ্দিন আহমেদ, মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ আসমত আলীরা মানবঢাল তৈরি করেছিলেন। মানুষ এগিয়ে এসেছিল মানুষকে বাঁচাতে। একজনকে বাঁচানো কতটুকু আনন্দের তা এই গুটিকয়েক মানুষই জানেন! শত শত শুকর আর হায়েনার সম্মিলিত আক্রমনে সেই মানবঢাল মুহূর্তে গুড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন সেই নূর আলম, তার মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। অনেকেই যখন গোটা বাঙ্গালী জাতির গলায় সাম্প্রদায়িক তকমা পরিয়ে দেয়, মিজান তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। হোক না সংখ্যায় নগন্য তবু এই নূর আলম-তুন্নান-মজিদ-জামালউদ্দিন-আসমত-দের মানবতাকে অপমান করবার অধিকার কাউরো নেই। তাদের ঝরে পড়া রক্ত সাক্ষী- বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক জাত নয়। মিজান তাদের একজন হতে চায়, মিজান তাদেরই একজন।

সাউনা শেষে সাধারণত প্রচণ্ড খিধে পায়। শোবার ঘরে বৌকে ডাকতে গেল মিজান। সারাদিন বুঝি সেও কিছু খায়নি। বৌ অঘোরে ঘুমুচ্ছে। মিজান বিছানায় বসে নিঃশব্দে, কাপড় সরিয়ে স্ফীত উদরে স্নেহের হাত বুলোয়। চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে আসে আবেগে। আগত সন্তানটিকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন! এটা করবে, ওটা করবে, এটা শিখাবে, ওটা শিখাবে; তবে এই মুহূর্তে সব স্বপ্ন গুলিয়ে আসে। শুধু মনে হয়, সন্তানটিকে সে ‘মানুষ’ বানাবে! স্ফীত উদরে চুমু খায় মিজান, মনে মনে বলে- এ বিশ্বকে তোর বাসযোগ্য করে যাব আমি।


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।