বাংলাদেশে মানুষের সংখ্যা সতেরো কোটি (দীর্ঘকাল এটাই শুনে এসেছি, ইদানীং পত্রপত্রিকায় দেখি গণনায় ভুল ছিলো, আসলে পনেরো থেকে সাড়ে পনেরোর মধ্যে হবে), আমার ব্যক্তিগত ধারণা এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ একেবারে বোকার হদ্দ, দারিদ্র্যসীমার মত বেকুবসীমা বলে কিছু থাকলে তার নীচে পড়ে যেত এরকম। নিজের এই অনুসিদ্ধান্তের কারণ হতে পারে দুটো। এক, ঘটনা আসলেই সত্যি। দুই, আমি এবং আমার পরিচিত বলয়ের (বন্ধু, আত্মীয় ইত্যাদি) সবাই খুব বোকা কিসিমের। দ্বিতীয় কারণ সঠিক হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যুক্তি হিসেবে দেয়া যায় বাংলাদেশের অবস্থান সুখী দেশগুলোর তালিকায় এগারোতম হবার খবরটা। বেকুব ডাটা স্যাম্পলার বেছে বেছে শুধু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, হলমার্ক-ডেসটিনির মালিকপক্ষ, শেয়ার ম্যানিপুলেটর, শীর্ষ ঋনখেলাপী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ইত্যাদি শ্রেণীর কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে, তারা সবাই কমবেশি সুখী। মাঝে মাঝে সুখে কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে বলে প্রথম হয়ে উঠতে পারে নি বাংলাদেশ, নইলে এই ট্রফি নিয়ে যায় সাধ্যি কার!
প্রশ্ন করতে পারেন কেন এই ভূমিকা ফেঁদে বসলাম। আসলে ঘটনা হয়েছে কি নতুন নতুন লেখা শুরু করেছি কিনা, মাঝে মাঝেই মনে হয় লেইখ্যা ফাডায়লাম। ওই যে ছোট বাচ্চার দাঁত উঠলে খালি কামড়াতে চায় সেরকম আর কি (দুষ্ট লোকে অবশ্য আরও খারাপ উদাহরণ দিতে চাইবে কিন্তু সেসবে কান দিলে কি চলবে?)। অনেক মন দিয়ে ভেবেও যখন মাথা থেকে জুতসই কিছু বের হয় না তখন চিন্তা করি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোই লিখে ফেলা যাক। অতীত ইতিহাস নাড়াচাড়া করতে গিয়ে লক্ষ করলাম, আমার বুদ্ধি সুদ্ধি থাকলে এগুলোর বেশিরভাগ ঘটতই না। যেমন ধরুন নানাবাড়ির ঘটনাগুলো। ইস, কি বোকা ছিলাম! বরিশালে গেলাম যে প্রথমবার, ওহো, কি বেকুবিটাই না করেছিলাম। শুধু কি প্রথম, দ্বিতীয় বারে কি কিছু কম করেছি? ছিনতাইকারীতে ধরল কয়েকবার, নিজের গাধামির জন্যই তো! তারপর না বুঝে ভুল যায়গায় গেলাম মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে, আরেকটু হলেই গেছিলাম। বেইজিংয়ে গিয়ে পুরোপুরি হারিয়ে গেলাম, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তাই। সেখানে আবার অন্য বিপদেও পড়লাম।
বুঝতেই পারছেন, কেন এই ভূমিকা। আমার জীবনে যা কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, তার ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে নিজের অথবা পরিচিত কারো লঘু থেকে গুরু মাত্রার নির্বুদ্ধিতা জড়িত ছিলো। এই পৃথিবী এক বিশাল জনারণ্য, বাংলাদেশ যেন সেই পৃথিবীতে কঙ্গোর জঙ্গল, সেইখানে আবার বেশিরভাগ লোকই বোকা। একেবারে বোকায় বোকারণ্য। বোকা মানুষদের সেই ঘটনাগুলো নিয়ে অনিয়মিত একটা সিরিজ লিখব বলে ভাবছি। এক কুমীরের ছানা দেখতে দেখতে পাঠক বিরক্ত হতে শুরু করলে অবশ্য লেখা বাদ দিয়ে দিতে হবে!
এইবার আসেন মূল গল্পে যাই। পাঠকের সাথে নিজেকে রিলেট করতেই এই গল্প দিয়ে সিরিজ শুরু করলাম। রাতে চলাফেরা করেন অথচ ছিনতাইকারীর হাতে ধরা খান নি এমন লোক ঢাকা শহরে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কাজেই অভিজ্ঞ পাঠক বর্ণনার সাথে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পাবেন বলেই আমার ধারনা (দেঁতো হাসির ইমো)।
আমার জীবনে প্রথম ছিনতাইকারীর হাতে পড়ি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়। রাত সাড়ে ন’টা বাজে, টিউশনি শেষ করে হলে ফিরব। স্টুডেন্টের বাসা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের গলিতে। মন একেবারে ফুরফুরে, কারণ আজ বেতন হাতে পেয়েছি। বন্ধুদের নিয়ে কোথায় খেতে যাওয়া যায় খুব চিন্তিত হয়ে ভাবছি। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে দেখেই কিনা এক লোক পথ রোধ করে দাঁড়ালো। নেহায়েত ভালোমানুষের মত জিজ্ঞেস করল, ভাই, আপনার কাছে লাইটার আছে? সিগারেট ধরাব। আমি একটু চমকে উঠলেও সামলে নিয়েছি, কারণ জায়গাটা স্ট্রীট ল্যাম্পের কাছেই, আধো আলোতে দেখা যাচ্ছে মাঝারি গড়নের গোঁফওয়ালা এক লোককে, দেখতে মোটেই ভয়ঙ্কর নয়। বললাম, আমি সিগারেট খাই না, লাইটার নাই। তারপরের কথাবার্তা নিম্নরূপ:
- ভাই কি এদিকেই থাকেন নাকি? (জেনে নেয়ার চেষ্টা পাড়ার পোলাপান ডাক দিয়ে আমি ঝামেলা করতে পারি কিনা)
- জ্বী না। আমি পলাশী থাকি (কত বড় বেকুব দেখেন, নিজে থেকে কাপড় তুলে দেয়া শুরু করেছি)
- ও। (এই পর্যায়ে আমার হাত ধরে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে) আমার নাম সুমন, আপনার?
- জ্বী আমার নাম ইয়াসির (হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করি নি, বুদ্ধি থাকলে কথা শুরুর আগেই ঝেড়ে দৌড় দিতাম)
- তোমাকে তো দেখে বয়সে ছোট বলে মনে হচ্ছে, তুমি করে বললে রাগ করবা না তো?
- (ঈষৎ সংকুচিত) আরে না না, কি বলেন?
- দেখো তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি কি মোবাইল ফোন ব্যবহার কর?
- (মনে সন্দেহ উঁকি দেয়া শুরু করেছে) জ্বী না ভাই, আমি মোবাইল ব্যবহার করি না। আমার কাজ আছে, আমি গেলাম (হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা)
- (শক্ত করে হাত ধরে রেখে) তোমার কথাটা বিশ্বাস করলাম না। পকেট দেখাও তো!
- (বুঝে গেছি ঝামেলায় ফেঁসেছি, আশে পাশে তাকাচ্ছি, দুই একজন লোক দেখলে ডাকব) আপনাকে পকেট দেখাব কেন? আপনি কে? (কিছু গাড়ি আর রিকশা পাশ দিয়ে চলে গেল, ডাক দিলে কি কেউ থামবে?)
- আমি কে এইটা তোমার জানার দরকার নাই। (ফুলে থাকা পকেট দেখিয়ে) খালি জেনে রাখ আমার কথা না শুনলে বিপদে পড়বা ।
- (চুপচাপ)
- কি কর তুমি?
- জ্বী পড়ালেখা করি।
- এইখানে আসছিলা কেন?
- স্টুডেন্ট পড়াতে (হায়রে বেকুব)
- পকেট দেখাও
- আপনাকে তো বলছি আমার মোবাইল নাই
- (সামনের দুই পকেট হাতিয়ে) মানিব্যাগ বাইর কর
- (কথা না বাড়িয়ে মানিব্যাগ বের করে দিলাম)
- (কাঁধের স্কুলব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করে), দেখি তোমার ব্যাগে কি আছে?
- (দুটো কম্পার্টমেন্ট, চেইন খুলে দেখালাম। বড়টা থেকে একটা গল্পের বই, একটা আধা ময়লা গেঞ্জি আর কিছু হাবিজাবি কাগজ বের হলো, ছোটটায় কলম)
- হুম। তুমি কি ভাবছ আমি তোমার টাকা নেওয়ার জন্য তোমাকে দাঁড়া করাইছি?
- (আর কি ভাবব?)
- তোমরা সমাজের বড়লোক মানুষ, তোমাদের টাকা পয়সায় আমি মুতি। যতসব চোর বাটপারের পোলাপান
- (একটু অবাক, পাগলের পাল্লায় পড়েছি নাকি?)
- এই নেও তোমার মানিব্যাগ
- (নিলাম)
- আর এই যে তোমার টাকা পয়সা (মুঠ করে ব্যাগের খোলা চেম্বারে হাত ঢুকিয়ে দুইবার হাত ঝাঁকি)
- (চুপ করে কাণ্ডকারখানা দেখছি)
- থুথু দেই আমি বড়লোকের টাকায়। যতসব হারামখোর। যাও ভাগো
আমার জিনিসপত্র সব বুঝে পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে, কাজেই আর কালবিলম্ব না করে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিলাম স্টুডেন্টের বাসার দিকে। পেছন ফিরে দেখবার সাহস হলো না, যদি দেখি তাড়া করছে? স্টুডেন্টের বাসায় ঢোকার ব্যবস্থা একটু ঝামেলার, প্রথমে ফ্ল্যাটের দরজা, তারপর তালা দেয়া কলাপ্সিবল গেট, তারপর বাইরের দরজা। ব্যস্ত হয়ে একটু পরপরই বেল বাজাচ্ছিলাম। স্টুডেন্টের মা (উনি আমার বন্ধুর মামীর বোন, আবার আমার আরেক স্টুডেন্টের কাজিন, সম্বোধন নিয়ে একটু ঝামেলায় ছিলাম) গেট খুলে অবাক হয়ে বললেন,
- কি ব্যাপার ইয়াসির? হাঁপাচ্ছ কেন?
- ছিনতাইকারী ধরেছিলো আন্টি।
- বলো কি? তাড়াতাড়ি ভেতরে আস। কোথায়?
- এইতো আপনাদের বাসার গলিতে। এক গ্লাস পানি দেন। গলা শুকিয়ে গেছে
- (পানি নিয়ে এসে দুঃখিত গলায়) বেতনের টাকা নিয়ে গেছে?
- (একগাল হেসে) আরে না, পারে নি। ব্যাগের চিপায় একটা খুব ছোট পকেট আছে, ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝা যায় না। টাকাগুলো ওখানেই ছিলো। তবে মানিব্যাগের টাকাগুলো নিয়ে গেছে (ব্যাগের ভিতরের হাত ঝাঁকি ছিলো একটা স্টান্টবাজি)। সবমিলিয়ে দুইশো সাতান্ন টাকা।
কিছুক্ষণ ওই বাসায় বসে ভয়ে ভয়ে বের হলাম। আন্টি সাথে আসতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু বারণ করলাম। এমনিতেই নেশাখোর দুর্বল ছিনতাইকারীকে পাত্তা দিয়ে যথেষ্ট বোকামি হয়েছে, সেটা আর বাড়ানোর দরকার নেই।
দ্বিতীয়বার শিকারে পরিণত হলাম বছর দেড়েক পর। রামপুরায় ছাত্র পড়িয়ে ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর বোনের বাসায় গিয়েছি। রাতের খাবার খেয়ে বের হতে হতে সোয়া বারোটা বেজে গেল। রামপুরা বাজারের গলি থেকে রিকশা নিলাম পলাশীর। ফাটা কপাল, মালিবাগ রেলগেটের কাছে আসার ত্রিশ সেকেন্ড আগে একটা মিসকল। তদ্দিনে একটা মোবাইল ফোন আমার হয়েছে বটে। “মিসকলে ডাকে পাখি”র মিসকল নয় মোটেই, কারণ আমার পাখির মোবাইল নেই। কিন্তু তা না হলে কি হবে, কৌতূহল আছে না? (চরম বেকুব না হলে এই গান্ধা যায়গায় কেউ মোবাইল দেখিয়ে বেড়াবে না রাত বারোটায়) পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি রুমমেট এবং প্রাণের বন্ধু আখতার মিসকল দিয়েছে। নিশ্চয়ই কার্ড খেলার পার্টনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! রোসো বন্ধু, আসছি। কিন্তু এ কি? রিকশা থামে কেন? আনমনা হবার কারণে খেয়াল করি নি, সাদা প্যান্ট নীল শার্ট পরা একটা লোক থাম, থাম বলে চোখ রাঙিয়ে চেঁচাচ্ছে। রিকশা থামতেই সেই লোক কষে একটা থাপ্পড় লাগালো চালককে।
- অ্যাই ব্যাটা, দেখে চলতে পারস না? আমার পায়ে গুতা দিলি তুই কোন সাহসে?
- (চুপ করে দেখছি একটু থতমত খেয়ে)
- (রিকশাওয়ালার অনুনয়পূর্বক ক্ষমাপ্রার্থনা শেষ হলে) আপনার নাম কি?
- (মনে মনে ভাবছি, “নাম দিয়া কাম কি?”) আপনার কথা শেষ হইছে রিকশাওয়ালার সাথে? তাইলে এইবার পথ ছাড়েন
- থাকেন কই আপনি? (আবার শুরু হয়েছে, খোদা)
- জ্বি আমি রামপুরা থাকি (আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে মিথ্যা বললাম)
- ও, এত রাতে কই যান?
- (ভালো ঝামেলায় পড়া গেল, ছিনতাইকারীর হাতে আবার পড়েছি নিশ্চিত, পেছনে আরও দুটো ষণ্ডামার্কা লোক দেখা যাচ্ছে) পলাশী যাই, হলে। আমি স্টুডেন্ট।
- (হঠাৎ সম্বোধন পরিবর্তন) তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? তোমার কাছে কি অবৈধ জিনিস আছে? (ফুলে থাকা পকেট দেখিয়ে), অবৈধ জিনিস আমাদের কাছেও আছে। দেখতে চাও?
- জ্বি না (এতো দেখি পুরাই শুদ্ধ ভাষা বলে!)
- তোমার মোবাইল ফোনটা দেখি-
- (হতাশ হয়ে মোবাইল ফোন বের করে দিলাম, এরা দেখে শুনেই আমাকে থামিয়েছে, গেল মোবাইলটা)
- এইটার সিম কার্ড খুলে কিভাবে?
- (আশার আলো দেখতে পেয়ে) ভাই এইটা সিটিসেল এর মোবাইল, এইটায় সিম কার্ড নাই। এইটা আপনি নিয়েন না, কাউরে বেচতে পারবেন না।
- তোমাকে এত কিছু ভাবতে হবে না। ফোন ফেরত চাও? তাইলে টাকা পয়সা যা আছে বের কর।
- (টাকা তো এমনিতেও নিবেন, ঢং করার দরকার কি?) ভাই আমার কাছে একদমই টাকা পয়সা নাই। আপনি আমার মানিব্যাগ, পকেট, ব্যাগ চেক করে দেখেন (সেই ব্যাগটা এখনো আছে, ভেতরের চিপার পকেটে পাঁচশ টাকার একটা নোট)।
- দেখি মানিব্যাগ।
- (আঠারোটা দুই টাকার নোট, একটা পাঁচ টাকার নোট, একটা কয়েন, মোট বিয়াল্লিশ টাকা বের হলো)
- (মানিব্যাগ টাকাসহ ফেরত দিয়ে উদাস গলায়) ঠিক আছে, চলে যাও
- ভাই আমার ফোনটা দিবেন না?
- (ক্ষেপে গিয়ে), রিকশা নিয়ে এখনই চলে যাও, যদি দাঁড়াতে দেখি তাহলে গুলি করব (পকেটে হাত)।
চূড়ান্ত হতাশ হয়ে রিকশায় উঠে বসলাম। এত শখ করে নোকিয়ার ৮৫৮০ সেটটা নিয়েছিলাম! দেখতে সুন্দর, ছোট, ঝকঝকে রূপালি আলো বের হয় আনলক করলে। পরিচিতদের অবাক করে দেবার জন্য মাঝে মাঝেই সামনের কাভার খুলে ফেলি, পাঁচটা অত্যুজ্জ্বল লেড ঝলমল করে ওঠে, দেখে মনে হয় ফ্লাডলাইটের আলো জ্বলছে। আর ফোনটার আছে একটা অনন্য ফিচার, সিলেক্টিভ কল ব্লকিং। কল অপশনে গিয়ে শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নম্বর টাইপ করে দিলেই চলে, বান্দা হাজার চেষ্টা করেও কল এস্টাব্লিশ করতে পারবে না, নম্বর বিজি পেতেই থাকবে।
নাহ! এত সহজে এটাকে হারানো চলতে পারে না। পিঠে টোকা দিয়ে রিকশাওয়ালাকে থামতে বললাম। রিকশা রেললাইন থেকে সত্তর মিটারের মত এগিয়েছে। হেঁটে হেঁটে রেললাইনের কাছে ফেরত গিয়ে দেখি লোকগুলো এখনো আছে। সাদা প্যান্টের কাছে গিয়ে কাতর গলায় বললাম, ভাই, আপনার তো ফোনটা কোন কাজে লাগবে না। সিটিসেল আজকে রাতেই এটা ব্লক করে দিবে। আমাকে ফোনটা দিয়ে দেন। সাদা প্যান্ট কিছুক্ষণ আমার আপাদমস্তক দেখে বলল, ভাইয়েরে বেনসন খাওনের জন্য একশটা টাকা দিয়া যাও (চলিত ভাষায় ফেরত এসেছে, অ্যাক্ট ইজ ওভার)। আমি গলা আরও কাতর করে বললাম, আমার কাছে টাকা থাকলে আমি আপনাকে প্রথমেই দিয়ে দিতাম, তর্ক করতাম না। ফোনটা আমাকে দিয়ে দেন। আমার কাছে যা টাকা আছে নিয়ে নেন। এই বলে বিয়াল্লিশ টাকা মানিব্যাগ থেকে বের করে লোকটার হাতে দিতে গিয়েও তিনটা দুই টাকার নোট আলাদা করে রাখলাম। সাদা প্যান্ট অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকাতে বললাম, ভাই, এই টাকাটা রিকশাওয়ালারে দেই, আমার কাছে আর টাকা নাই। এইবার সাদা প্যান্ট হতাশ হয়ে বলল, আচ্ছা। আমার মায়াই লাগলো!
ফোন ফেরত নিয়ে রিকশার কাছে এসে ভাবলাম, ছয় টাকা আলাদা করার গাধামি করতে গেলাম কেন? রিকশা ভাড়া তো ত্রিশ টাকা। ওকে তো পুরো ভাড়াটা আমি হলে গিয়েই দেব, এমনিতেও, ওমনিতেও!
তিন নম্বর ঘটনা ২০০৫ এর মার্চ মাসে। সিমেন্সে জয়েন করেছি দুই মাস হয়েছে, একটা টিউশনি এখনো আছে। ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করাতে ছাত্রীর মা অনুরোধ করে বললেন পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু দেখতে। যাই হোক, পড়ানো শেষ করে বের হয়েছি সাড়ে সাতটায়। হাটখোলার ভেতরদিক থেকে মেইন রোডে বের হবার যে কোণাকুণি রাস্তাটা (নাম ভুলে গেছি) সেটা দিয়ে। আমার রামপুরার সেই বন্ধু ফোন দিয়েছে খোঁজ খবর নেবার জন্য। আমার পকেটে আরেকটা ফোন (দুটা ফোন তখন, একটা অফিসের, একটা ব্যক্তিগত), কাঁধে অফিসের দেয়া তোশিবার প্রায় নতুন একটা ল্যাপটপ। অফিস থেকে সরাসরি এখানেই এসেছিলাম, মাতব্বরি করে গাড়ি নিয়ে আসি নি। কেউ আবার ভুল করে ভেবে বসবেন না, অফিস থেকে গাড়ি দিয়েছে বলে আমি কেউকেটা হয়ে গেছিলাম। আমার চাকরীটা কামলা খাটার, প্রায়ই শহরের ভেতর এবং বাইরে মুহুর্তের নোটিশে দৌড় লাগাতে হয়, তাই প্রয়োজনের খাতিরে একটা মাইক্রোবাস আমার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। কথা বলতে বলতে এগোচ্ছি, সামনে থেকে এক লোক কর্কশ গলায় বলল, আপনার এত্তবড় সাহস? (ঠিক এই কথাটাই বলেছিলো, নির্জন গলিতে ভরা সন্ধ্যায় মাল সামানা নিয়ে ফোন কানে ধরে হাঁটছি, আমার কি জানের ডর নেই, এটাই বোঝাতে চেয়েছিলো মনে হয়)।
ফোনের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলাম, বিপদ বুঝতে একটু সময় লেগে গেল, আমার খোলা হাতটা ততক্ষনে চেপে ধরেছে ওই লোক। একটা বড় বেকুবি করলাম, জান বাঁচানো বাদ দিয়ে বন্ধুকে বললাম, দাঁড়া, তোকে একটু পরে ফোন দেই। এই কথা বলে ফোন কান থেকে নামাতে নামাতে দেখি বাম পাশ থেকে একজন আর পেছন থেকে একজন এগিয়ে এসেছে। ডান দিকে জায়গা নেই, একেবারে দেয়াল ঘেঁষে হাঁটছিলাম। ফোন দুটো আর ল্যাপটপের মালিকানা ছেড়ে দেবার সময় ঘনিয়ে এসেছে, বুঝতে পারলাম। ধুস শালা! বসের কাছে কি জবাব দেব? কাজের জিনিস নিয়ে জ্ঞান বিতরণ করতে গিয়েছিলাম?
নতুন চাকরির মায়াতেই কিনা, শরীরে হঠাৎ জোশ এসে গেল। প্রাণপণ ঝাঁকুনিতে হাত ছাড়িয়ে পেছনের লোকটিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ভোঁ দৌড় দিলাম। নেশাখোর ছিনতাইকারীরা বড় দুব্বল হয়ে থাকে! নেশার ঘোরে ওদের রিয়্যাকশন টাইমও বেশি হয়ে থাকবে, আমাকে পাক্কা তিন সেকেন্ড পর তাড়া শুরু করতে পারল দলটি। স্টুডেন্টের বাসা মাত্র ষাট মিটার পেছনে, কিন্তু সেখানে যাওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। অনেক পুরনো একটা হিন্দু বাড়ি ওটা, পুরুষে পুরুষে ভাগাভাগি হয়ে এখন তিন চার ঘর লোকের বাস। নিচে এসে কেউ বেল বাজালে আগে ব্যালকনিতে কেউ এসে দেখে কার লোক এসেছে, ভেতরে গিয়ে জায়গামত খবর দেয়া হয়, এর পরে তাদের বাসার কেউ না কেউ এসে দরজা খোলে। একবার আমার ভেতরে ঢুকতে ছয় মিনিট লেগেছিল। এখন তো এত সময় নেই! মুরুব্বীদের দোয়ায় কপাল অনেক ভালো ছিল, বাসার পাশ দিয়ে দৌড়াবার সময় দেখি গেট খোলা, কেউ একজন বেরোচ্ছে। তাকে একেবারে হতচকিত করে দিয়ে ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি কেউ আর দৌড়ে আসছে না। তবুও সেখানে আধা ঘন্টা কাটিয়ে তবে বেরোলাম। এবার দেখে শুনে এবং হাটখোলা রোডের দিকে, ওদিকটা এত নির্জন নয়।
এতক্ষনে যাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে, তাদের জানাচ্ছি, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। অনেক আগে একবার বন্ধু এরশাদের সাথে আরেক বন্ধু টনির বাসায় যাচ্ছিলাম। ইস্কাটনের সাত তলা বিল্ডিংয়ের টপ ফ্লোরে বাসা, লিফট নেই। তিন তলা বাইবার পর এরশাদ সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, যখন দেখবি ক্লান্তিতে একেবারে জিহ্বা বের হয়ে গেছে, তখন বুঝবি আরও এক তলা ওঠা বাকি। আমার গল্পটা সেরকমই (আবার দেঁতো হাসির ইমো)
চতুর্থ এবং শেষ ঘটনা ২০০৭ এর। এপ্রিলে বিয়ে করলেও আচমকা গ্রিজলি ভালুক জ্বরে পড়ে যাওয়াতে দুজন মিলে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি নি (ছুটি শেষ হয়ে গেছিল)। জুলাই মাসে ঠিক করলাম, দূরে কোথাও না হোক, ঘরের কাছে কক্সবাজারটা ঘুরে আসি। প্ল্যান প্রোগ্রাম সব ঠিক করে শেষ দিনে একটা বোকামি করলাম। একজন বন্ধুর ধার শোধ করব বলে কিছু টাকা ব্যাংক থেকে তুলেছিলাম। সে জানালো ঢাকার বাইরে থাকায় সে এই মুহুর্তে টাকা নিতে অপারগ। নিজের নিরেট মাথা খাটিয়ে ভেবে দেখলাম, ভালোই হয়েছে। বাড়তি কিছু টাকা সাথে থাকল। কক্সবাজার থেকে প্রয়োজন হলে টেকনাফও ঘুরে আসা যাবে। যে এখন টাকা ফেরত চায় না, তাকে জোর করে দেবার দরকার কি? মাস দুয়েক পরে দিয়ে দিলেই হবে।
যা হোক, রওনা হয়ে গেলাম কলাবাগান থেকে সিল্কলাইনের বাসে করে। ভোর ছ’টায় বাস এসে থামল জিইসি মোড়ের পাশে তাদের অফিসের সামনে। খোঁজ নিয়ে জানলাম বাস ছাড়তে ঘন্টা দেড়েক দেরি আছে। ব্যাস, সাথে সাথেই মাথায় একটা দুর্দান্ত আইডিয়া খেলে গেল। ঘন্টাখানেক চিটাগাং শহরে রিকশা করে ঘুরলে কেমন হয়? আমরা রিকশা করে অনেক দিন অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এখনও ঘোরার আনন্দ ম্লান হয় নি। চিটাগাং শহর আমি মোটামুটি চিনি, ২০০৫ এবং ২০০৬ এ অনেকবার এসেছি বাংলালিংকের মাইক্রোওয়েভ হপ আর এডিএম কমিশনিং করতে। বউকে সাথে জিইসি মোড় থেকে রিকশা নিয়ে কাজির দেউড়ী হয়ে রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে সার্কিট হাউসের পেছন দিক ঘুরে আবার জিইসি মোড় চলে আসব, বেশ ভালো ঘোরা হবে। এই পর্যায়ে এসে চিটাগাংবাসীরা মুচকি হাসা শুরু করে দিয়েছেন দেখতে পাচ্ছি।
অনতিবিলম্বে প্ল্যান বাস্তবায়ন করা শুরু করে দিলাম, রিকশা ঠিক করে চড়ে বসলাম। সুর্য উঠে গেছে, রাস্তায় লোকজন অবশ্য খুবই কম। রিকশাওয়ালা প্রচন্ড গতিতে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, মনে মনে কিঞ্চিৎ অসন্তুষ্ট হলাম, এভাবে চললে পৌণে এক ঘন্টার প্ল্যান পঁচিশ মিনিটে শেষ হয়ে যাবে। আমরা খাবার একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজছিলাম, যেখানে বসে সকালের নাস্তা করব, কিন্তু জিইসি মোড় তো সেই কখন পেরিয়ে এসেছি। স্টেডিয়ামের পূর্বদিকের রেস্টুরেন্টগুলো এখনও খোলেই নি। আগের রিকশা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছি, নতুন একটা নিয়ে এবার স্টেশনের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা সিএনজি অটোরিক্সা ভীষন বিপদজনক ভাবে পাশ কাটিয়ে গেল, অল্পের জন্য আমাদের রিকশাটাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে ফেলে দেয় নি। স্ত্রী শুনি ক্ষীন গলায় বলছে অ্যাই, অ্যাই! তাকিয়ে দেখি আমাকে ডাকছে না, তার চোখ সিএনজির দিকে। আমি ভাবলাম ওভারটেকিংটাকে ভয় পেয়েছে বোধ হয়। স্ত্রী তখনও বলছে, অ্যাই, অ্যাই। আমি বুঝলাম কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? এবার স্ত্রী ভেজা গলায় বলল, আমার ব্যাগ!
- তোমার ব্যাগ? কি হয়েছে ব্যাগের?
- নিয়ে গেছে
- কি? কে নিয়ে গেছে?
- ওই সিএনজি
মাথায় বাজ পড়লেও বোধহয় কম আঘাত পেতাম। আমার প্যান্টের পকেট থেকে পড়ে যেতে পারে বলে প্রায় সবগুলো টাকা বউয়ের ব্যাগে রেখেছিলাম। সেগুলো তো গেছেই, আরও কি কি ছিল ব্যাগে কে জানে!
- তোমার ব্যাগে কি কি ছিল?
- (প্রায় কেঁদে দিয়ে) ফোন, গহনা, আর নতুন কেনা সব কসমেটিক্স
- বলো কি!
- আমি বাসায় যাব
- আরে না
- না আমি বাসায় যাব। আমি কোথাও বেড়াতে যাব না।
আমি নিজের ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়তে যাচ্ছিলাম, কোন আক্কেলে এই ছয় সকালে রিকশা করে বের হতে গেলাম? চট করে নিজেকে সামলে নিলাম। দুজন মিলে ভেঙে পড়লে পুরো ট্রিপটাই মাটি হয়ে যাবে। হালকা গলায় স্ত্রীকে বললাম, একটা জিনিস ভেবে দেখেছ? চোরগুলো যখন ব্যাগ খুলবে তখন কি অবাকটাই না হবে! এতগুলো চকচকে নতুন নোট, তার ওপর আবার মোবাইল ফোন, গহনা। ওদের ফুর্তির কথা চিন্তা করে আমার নিজেরই আনন্দ লাগছে। স্ত্রী চটে উঠে বলল, সব কিছু নিয়ে রসিকতা করা তোমার একটা বাজে অভ্যাস।
যাক, নিশ্চিন্ত হলাম। কেঁদে না ফেললে সব ঠিক। চটে উঠেছে, তার মানে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। চোখের কোনা দিয়ে দেখি বাম হাতের কনুই ঘষছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? সে বলল, ব্যাগটা হাতে দুই প্যাঁচ দিয়ে আটকানো ছিলো। টান লেগে এখন হাড়ে ব্যাথা করছে। আমি চমকে উঠলাম। দুই প্যাঁচ দিয়ে হাতে আটকানো ছিলো মানে? যদি টান লেগে রিকশা থেকে মাটিতে পড়ে যেত? আমাদের ছেলে তখন ওর পেটে...... এতক্ষন স্বাভাবিকই ছিলাম, কিন্তু চিন্তা ভাবনা হঠাৎ করেই জট পাকিয়ে আসতে থাকে। নিচু গলায় নিজের আশঙ্কার কথা জানালাম। স্ত্রী এবার হেসে ফেলে বলল, যাও, তোমার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। এমন হয় নাকি?
ঠিক একমাসের মাথায় পেপারে একটা খবর দেখি। রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে জনৈক রিকশাযাত্রী নারীর মৃত্যু। ছিনতাইকারী ওই মহিলার হ্যান্ডব্যাগ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল। হাতের সাথে আটকে যাওয়ায় পারে নি। টানাটানিতে মহিলাটি রিকশা থেকে ফুটপাথের ওপর মাথা দিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ভেবে আসছি, কিছু টাকার বদলে কতবড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম!
মন্তব্য
ঠিক এই ঘটনা আমার সাথেও ঘটেছিল। আমি রিকশা তে ছিলাম এক বন্ধুর সাথে। কাঁধে ঝুলান হ্যান্ডব্যাগ ছিল। মিরপুর বাংলা কলেজের সামনের ব্যাস্ত রাস্তাতে- সি এন জি থেকে যখন ব্যাগ ধরে টান দেয় ব্যাগ তখন আমার হাতে ধরা, ধাক্কার ঝটকায় প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম মাঝরাস্তায় (আমি ডান দিকে বসা ছিলাম) , বন্ধু ঠিক সময়ে ধরে নেওয়ায় আর গাড়ির তলে পড়িনাই, নাহলে হয়ত সেদিন আমিও খবরের কাগজের খবর হতাম
আপনার কপাল অনেক বেশি ভালো, আমি দৈবক্রমে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। আমি কোনমতেই আমার স্ত্রীকে ধরে ফেলতে পারতাম না পড়ে যেতে থাকলে। আপনার বন্ধুর রিফ্লেক্স এ ক্লাস
আমার ছিনতাই অভিজ্ঞতা মর্মান্তিক। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুলাই বর্তমান মোহাম্মদপুর থানার পাশে কাজি নজরুল ইসলাম রোডে বেলা সোয়া তিনটায়। মা'কে নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ফিরছিলাম। স্কুটার দিয়া রিক্সা থামানোর পরে ঘাতপ্রতিঘাত এবং আমার পতন। হাসপাতালবাসা মিলিয়ে দেড় মাস বিছানায় পড়ে ছিলাম। পুরো সুস্থ হতে আরো বছর দুই।
অজ্ঞাতবাস
আমার ছিনতাইকারীগুলো দুধভাত ছিলো। আপনার আর দ্রোহীর কপালে মনে হয় জুটেছে প্রফেশনাল। দুই বছরের অপূরণীয় ক্ষতির জন্য বিগ টাইম সহানুভূতি
এখন পর্যন্ত ধরতে পারে নাই। হা হা হা । তবে যা দেখতাছি সময় মনে হয় কাছায় আইতাছে
ভালো ভালো অভিজ্ঞতা আছে তো ইয়াসির ভাই আপনার। চালিয়ে যান
অমি_বন্যা
আছে কিছু অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে। এর মধ্যে একটা তো সেমি দুর্ধর্ষ। পড়ার জন্য
ভাই আপনিতো পুরাই চান কপাইল্লা!!! প্রতিবার ই বেচে গেছেন কঠিন ভাবে।
দুধভাতের কবলে পড়েছিলাম বলে রক্ষা। উপরে দেখেন দুই জনের কি হাল করেছে।
অনেক অনেক ঘটনা!
একেকজন মানুষ গল্পের একেকটা ভান্ডার
চমৎকার ছিনতাই এর বর্ননা। যা হোক খুব অল্পের উপর দিয়ে গেছে ভাগ্য ভালো। লেখা ভালো লেগেছে।
পড়ার জন্য
কিন্তু আপনের নাম কো?
এত ঘটনা! ভাগ্য ভাল যে কোনটাই খুব খারাপ পর্যায়ে যায়নি।
আর আমাদের দেশ নিয়ে দুঃখ করেন না, পৃথিবীর সব জায়গায়ই বোকা লোকজন আছে, স্রেফ বোকামির ধরণ আর মাত্রা ভিন্ন!
এই খবর কোথায় পেলেন?
- সাম্য
সেদিন তাসনীম ভাইয়ের প্রোফাইলে এই খবর দেখলাম। এরকম বেকুব যে আমাদের দেশে নাই তা বলাই বাহুল্য।
এই খবরটা দেখেন
দুইবার ঠ্যাক খাইছি, দুধ-ভাত গাঞ্জাখোরদের হাতে, পান্থপথে। এখন মানবজাতির উপর আশা ছাইড়া দিছি, একটু খটকা লাগলেই দৌড় দেই। এমনিতে ব্যাকআপ প্ল্যান হিশেবে মানিব্যাগে মামাদের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রেখেছি; মামারা একশ টাকা পাইলেও খুশি, শুধু শুধু জান বাজি রাখার কারণ দেখি না।
আপনি তো দেখি প্রথমবার একজন দার্শনিকের কাছে ঠ্যাক খাইছেন। সবার যদি এমন সৌভাগ্য হত!
শ্যামলী শিশুমেলার দিক থেকে রাস্তা পার হয়ে শিশুপল্লীর পাশ দিয়ে যাচ্ছি, আজিমপুরের বাস ধরার ইচ্ছা বাসস্ট্যান্ড থেকে। সেদিনও পকেটে টিউশনির বেতনের টাকা। একলোক পথ আটকে দাঁড়ালো কি যেন জিজ্ঞেস করবে বলে। এক মুহুর্তে ফুটপাথের রেলিং টপকে মেইন রোড পার হয়ে গেলাম আগুয়ান তিনটা বাস আর ট্রাকের মাঝখান দিয়ে। সেটাও অবশ্য একটা বিরাট গাধামী ছিলো, চাপা খেতে পারতাম।
বোকারাই কেবল ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে? নাকি ছিনতাইকারীর কবলে পড়লেই মানুষ বোকা হয়??
_দাদারাকিব
একটু খেয়াল করে দেখেন ঘটনাগুলা,
১। পুরা নিরামিষ এক লোকের কাছে ধরা খাইলাম। একটু সাহস করে ধমক দিলেই ঐ ব্যাটা পালানোর পথ পেত না
২। মোবাইল পকেট থেকে বের না করলে আমাকে থামাত না লোকগুলো
৩। নির্জন রাস্তায় ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে যাওয়া ঢাকায় কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়
৪। আমার স্ত্রী ব্যাগটা রিকশার বাইরের দিকে রেখেছিল। ভেতর দিকে রাখলে এই সমস্যা হতো না
ছিনতাইকারী ধরলেই মানুষ বোকা হবে কেন?
শেষের ঘটনাটা তো খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারতো। নিজের অভিজ্ঞতা নেই, তবে আপনজনদের হয়েছে। লেখা ভাল লেগেছে।
শেষের ঘটনাটা মনে পড়লেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আপনার অভিজ্ঞতা নাই শুনে খুশি হলাম
আমিও এদের পাল্লায় পরিনি এখনো - তাই কোটাপুরনের ভয়ে আছি - দোয়া রাইখেন যাতে দুধভাত থাএ কপালে ----
চারিদিকে দুধভাতের সংখ্যাই বেশি। তবে কাউকে না ঘাঁটিয়ে সহযোগিতা করা ভালো, যদি না আপনার আনআর্মড কমব্যাটের ট্রেনিং থাকে। আমার এক কলিগকে একবার মেরে ছাতু বানিয়ে দিয়েছিল
জুন ২০০৫ এ একবার ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েছিলাম, একটু তেবিত্লামি করতে চেয়ে উত্তম-মাধ্যম সয়েছি; এমন ঘটনা ঘটার সময় আশপাশের মানুষজন কিছু হচ্ছেনা বা তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা এমন একটা ভাবলেশহীন মুডে হেঁটে যায়।
দিবাকর
দেখতে গেলেই তো বিপদ। কে কখন ছুরি বা গুলি মেরে দেয় তার ঠিক আছে? এদের দোষ দিই না, সবাই ভাবে, আমার কিছু হলে আমার ফ্যামিলিকে দেখবে কে?
ভাইজানের দেখি পৌনঃপুনিক অভিজ্ঞতা
আমার মাত্র একবার,
তখন, ঢাকায় কলেজে পড়ি। গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরছি।ভর দুপুর।গাবতলি থেকে রিকশা নিলাম শেখেরটেক যাব বলে। শ্যামলী এলাকার একটা গলিতে ফাঁকা রাস্তায় রিকশা ঘ্যাঁচ করে ব্রেক করে বসলো। রিকশাওলা মধুর হেসে, "মামা পিছে আপনের বড় ভাই ডাকতেছে"। পিছনে তাকিয়ে দেখি ২ গাঞ্জুটি আসতেছে। বিলক্ষণ ছিনতাইকারী। নাক বরাবর দিলাম ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট দৌড়, রিকশায় ফেলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা নারকেলের নাড়ু আর তেলের পিঠা।যদিও নাড়ু আর পিঠাগুলোর জন্য খুব খারাপ লাগতেছিল কিন্তু ওইসময় টাকা খোয়া গেলে আমার না খেয়ে থাকতে হতো। বাপের পেনশনের টাকায় চলতাম
মদন
এইগুলিও দেখি দুধভাত ছিলো
লেখা ভাল লেগছে, শুধু এমন অভিজ্ঞতাগুলো কারো না হলেই খুশী হতাম।
মান্ধাতার আমালে একটা মোবাইল সেট ব্যবহার করছি অনেক দিন ধরে, প্রতি ট্যুরের আগেই ভাবি এবার ছিনতাই হবেই, বিশেষ করে ল্যাতিনে শিওর ছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত সাথে আছে। ভাবছি বাংলাদেশ ঘুরে আসি, তারপরও থাকলে নতুন ফোন নিতে হতে পারে।
facebook
আপনার তো দেখি কপালে দুটো স্টার। একটা ঘুরাঘুরির, আর এক একটা ছিনতাই না হওয়ার
আপনার লেখার ধরণটা দারুণ! (
আরে! ঢাকা মেট্রোর গাড়ী দেখি আমার উঠানে! আমার এই গল্পের কিছুটা প্রেরণা কিন্তু আপনার শেষ লেখাটা থেকে এসেছে। ওই যে আপনি বোঝাচ্ছিলেন আপনার স্ত্রীকে, জানের ওপরে এসেছিল মালের ওপরে গেছে। ওটা পড়ে ভাবলাম, আমারও কাছাকাছি একটা ঘটনা আছে, লিখে ফেলি।
আপনার ছিনতাই ভাগ্য দেখি রীতিমত ঈর্ষণীয়! তবে মনে হলো আমার এক বন্ধুর সাথে আপনার মিল আছে। তাকে বছরে কয়েকটা মোবাইল ছিনতাইকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। প্রথমবার দামী মোবাইল হারানোর পর থেকে সে জোড়া দেড় হাজার টাকা করে মোবাইল কিনে পকেটে রাখে। নিয়ে গেলে আর খারাপ লাগে না। তবে মলমপার্টির উৎপাতটা বেশী ভয়ংকর।
লেখাটা সুখপাঠ্য হয়েছে আপনার দুর্গতি সত্ত্বেও। নতুন বউ নিয়ে সাত সকালে ওই রাস্তায় রিকশায় চড়ার নির্বুদ্ধিতাকে এক তারা দেয়া গেল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ছিনতাইকারীরা জীবনাচরন বদলাতেও ভুমিকা রাখছে আজকাল, বেশ বেশ।
আমার জীবনের গাধামী গুলোর তালিকায় এটা সবসময় প্রথম তিনে থাকবে
আমার অনুজপ্রতীম বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী তারিক সাইফুল্লাহকে একবার ছিনতাইকারী ধরেছিল।
বেচারা সহজ-সরল মানুষ। আত্মরক্ষার্থে এক ঘুঁষিতে ছিনতাইকারীর দাঁত ফেলে দিয়েছে !
বাপের ব্যাটা
একবারই ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিলাম, খুলশিতে। আমি রিকশারোহী, আগতরা সিএনজিতে।
দু-একবার টানাটানি করে দিয়ে দিয়েছিলাম ব্যাগটা। মোবাইল, টাকার ছোট্ট পার্স সব ছিল আসলে অ্যাপ্রনের পকেটে। বেচারারা নিশ্চয়ই আমার মুণ্ডুপাত করেছে পরে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন