কাল রাত থেকে শোঁ শোঁ শব্দে ঝড়ো বাতাস বইছে, সাথে টিপ টিপ বৃষ্টি। প্রকৃতি রুদ্র, বিষণ্ণ। চ্ছঅবর্গীয়জ্জ গ্রহে আজকে আন্তঃগ্রহজাগতিক শোক দিবস। প্রতি বছরই এইরকম একটা শোকের দিন আসে, সবাই বুক ভাসিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। আরও একজন অধিবাসীকে এলাকা ছেড়ে যেতে হবে, এভাবে চলতে থাকলে এই গ্রহ জনশূন্য হয়ে পড়বে শিগগিরই। মোট অধিবাসীর সংখ্যা কমে কমে তিন হাজার সাতশ একাশিতে নেমে এসেছে গত এক হাজার বছরে।
বুয়েন্স আয়ার্সের একটা কফিশপ। সন্ধ্যা ছ’টা। ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল (ডাকনাম ত্ব) একা বসে আছে পুরো ক্যাফেতে। সময় কাটছে না, তাই কানে হেডফোন লাগিয়ে গান বিশ্রবনসম্ভভার গান শুনছে। এই গানগুলো ওর মনে গভীর গ্রহাত্মবোধের জন্ম দেয়। অপেক্ষা করা খুব কঠিন কাজ, ভাবল ত্ব। ক্লডিয়া মেয়েটা খুব দেরি করতে পারে। সাড়ে পাঁচটায় আসার কথা, খবর নেই। আমাজনে একবার উঁকি দিয়ে আসব নাকি? চিন্তাটা মাথায় এলেও ঝেড়ে ফেলল ত্ব। নাহ। দরকার নেই। ওখানে প্রচুর ঘটনা ঘটছে, একবার গেলে সহজে ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না। বিশ্রবনসম্ভভা ঠিকই বলেছিল, পৃথিবী খুব মজার জায়গা। ওর পাঠানো শেষ মেসেজটা পরিষ্কার মনে আছে ত্বয়ের।
“প্রিয় বন্ধুরা,
তোমরা হয়তো জেনে থাকবে আমি খুব ভালো আছি। তোমাদের বিবেচনাবোধকে শ্রদ্ধা জানাই। হাফমজুরের বউয়ের সাথে আমাকে বদলে দিয়ে কি যে উপকার করেছ তোমরা ভাষায় বলা যাবে না। মেয়েটা কোন অদ্ভুত উপায়ে আমাদের গ্রহের প্রচলিত গায়কীতে গান করা শিখেছিল তার রহস্য বুঝতে পারি নি। এ ব্যাপারে আমাকে নতুন কিছুই করতে হয় নি, আমি নিশ্চিন্তে সঙ্গীত সাধনায় মন দিতে পেরেছি। হাফমজুরের বিরামহীন প্রচেষ্টায় সবাই আমাকে এখন একনামে বিভা বিরহমান বলে চেনে। পৃথিবী খুব মজার জায়গা, তোমরা পৃথিবীকে তোমাদের পরবর্তী বাসস্থান হিসেবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে পারো। ভালো থেকো তোমরা সবাই। সবাইকে খুব মিস্করি।”
এই মেসেজ দেখেই ঠিক করে ফেলে ত্ব, ওর পালা আসলে পৃথিবীতে যাবে। তাদের কিছু কিছু সহগ্রহবাসী অস্তিত্ব প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় খুব নাজেহাল হয়েছিল প্রত্যন্তনিচুমান আর দুর্গমনর্ক গ্রহে। কিন্তু পৃথিবীতে বাসিন্দার সংখ্যা অনেক, খুব সহজেই লুকিয়ে থাকা যায়। আর মজার ব্যাপার স্যাপার তো আছেই। আসার পর অবশ্য টের পেয়েছে, সব কিছু বেশ সুখের হলেও ঝামেলা একটা আছে। শরীরে শক্তি পাবার জন্য খেতে হয় দিনের মধ্যে কয়েকবার। আগে দন্ত্যভঙ্গকঠিনিয়াম ধাতুর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে সরাসরি শক্তি শুষে নিত শরীরের প্রতিটি পরমাণু, ঝামেলার বালাই ছিল না। অবশ্য ওখানের সমস্যা হলো, তেজস্ক্রিয়ার ফলে ধাতুর পরিমাণ দিনে দিনে কমে আসছে। কিছু অধিবাসীকে তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর এই গ্রহ ছেড়ে চলে যেতে হয়, যাতে অন্যদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তির সরবরাহ নিশ্চিত থাকে।
কিয়েরে সালগো দে বেবের?
ওয়েটারের গলার আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে ত্ব। কি নেওয়া যায়? ঠান্ডা পড়েছে বেশ, বিয়ার চলবে না। কফিশপে যখন এসেছি, কফিই সই, ভাবল ও। ক্লডিয়া আসলে একসাথে কফি খাবে ভেবেছিল, কিন্তু মেয়েটার টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। ধুর, এই বান্ধবী ছৈলত ন, কত্তবড় সাহস ওকে অপেক্ষা করিয়ে রাখে! আরও দুদিন আর্জেন্টিনায় থেকে ঘুরে ফিরে দেখতে চেয়েছিলো, কিন্তু এই মাত্র মত বদলে গেলো। আজ একটা চৌদ্দ ঘন্টার ঘুম দিয়ে কাল বিকেলে প্যারিসে চলে যাবে, সোফি কে ফোন করে জানাতে হবে খবরটা। মেয়েটা খুব করে ওর সঙ্গ চায়, কিন্তু ত্ব ইচ্ছে করেই বেশি সময় দেয় না। অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে, যা কিছু দুর্লভ, তারই কদর থাকে বহুকাল।
নিজের এই ক্ষমতাটা খুব উপভোগ করে ত্ব। চাইলেই চট করে যেখানে সেখানে চলে যাওয়া যায়, দুরত্ব কোন ঘটনাই নয়। পৃথিবীর মানুষ আবার এটা পারে না। ওদের বেড়াতে বের হবার জন্য কত কিছু লাগে! সাইকেল, গাড়ি, ট্রেন, প্লেন, জাহাজ, মহাশূন্যযান, হ্যান, ত্যান। এগুলোর গতিও খুব বেশি নয়। অথচ ওদের গ্রহে দুটো চমৎকার প্রযুক্তি আছে। এক, পরমাণু স্থানান্তর দুই, পরমাণু পুনর্বিন্যাস। প্রথমটা ব্যবহার করে চোখের পলক ফেলার আগে যেখানে খুশি চলে যেতে পারে এক একজন। দ্বিতীয়টা লাগে নিজেকে অন্য গ্রহের প্রাণীর আদলে বদলে ফেলার সময়,অভিবাসনের জন্য যেটা খুবই দরকার। নিজের চেহারায় গেলে অন্যরা হয়তো জায়গাই দিত না তাদের এলাকায়। তবে এই কাজে প্রচুর শক্তি খরচ হয়, তাই শক্তি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী একেকজন এই রূপান্তরের সুযোগ নিতে পারে মাত্র একবার, নিজের গ্রহ ছেড়ে দিয়ে অন্য গ্রহে পাড়ি দেবার সময়।
টিং টং
এসএমএস এসেছে ফোনে। জ্যামাইকা থেকে এলিজাবেথ লিখেছে, “বেইব। ফেসবুকে তোমার ক্যারিবিয়ান সাগরভ্রমণের ছবি দেখলাম। তুমি এসেছিলে, আমাকে জানাও নি কেন? দুজনে কত ফুর্তি করতে পারতাম। নেক্সট টাইম খবর দিতে ভুলো না হান। টিসি”।
যাঃ শালা। এই মেয়েকে ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দিতে হবে। মুখে মুখে খুব খাতির দেখায়, কিন্তু তলে তলে তিন চারটা মুষকো জোয়ানের সাথে প্রেম। কোনটার কাছ থেকে কি রোগ বাঁধিয়ে রেখেছে কে জানে? দ্রুত কিছু পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিৎ, নিজেকে মনে করিয়ে দিল ত্ব।
এই হয়েছে এক ঝামেলা। দেশ বিদেশের সব মেয়ে ওর জন্য পাগল। পৃথিবীতে আসার আগে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার নকশাভিসন্ধি ওকে বলছিল, তোমাকে একদম সর্বমুখশ্রীসংমিশ্রনশাস্ত্র ডিজাইন দিয়ে দিলাম। পৃথিবীর যে এলাকাতেই যাও, ওখানের মানুষ তোমার মধ্যে নিজের এলাকার ছাপ দেখতে পাবে। সবাই তোমাকে আপন মনে করে মেলামেশা করবে। ত্ব খুশি হয়ে বলেছিল, বাহ! বেশ দারুণ হলো ব্যাপারটা। বুড়ো হেসে বলেছিল, দারুণের এখনও দেখেছো কি হে ছোকরা। পৃথিবীতে একটা মজার ব্যাপার আছে, যুবক যুবতীর প্রেম। তোমাকে যুবক ছাওয়াল বানিয়ে পাঠাচ্ছি, আরেকজন যুবতীর মন গলাতে দুটো জিনিস লাগবে তোমার। একটা হচ্ছে বড় মন, আরেকটা হচ্ছে বড় ...... কথা শেষ করবার আগেই বাধা পড়ে, দলপতি কিংকর্তব্যবিমূঢ় এসেছেন, সব ঠিক মত চলছে কিনা তা দেখার জন্য।
বুড়োর ডিজাইনে এখন হয়েছে মহাবিপদ। সব জায়গায় তরুণী সমাজে নাম ছড়িয়ে গেছে ত্বয়ের, সবাই ওকে চায়। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করলেও এখন আর ভালো লাগে না। কত কাজ, কত জায়গা ঘুরে দেখা বাকি। একটা জায়গায় নাহয় চোখের পলকে চলে যাওয়া যায়, কিন্তু ঘুরে দেখতে তো সময় লাগে নাকি? শুধু কি ঘোরাঘুরি? নতুন নতুন বই পড়া, নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্লগ লেখা, সামাজিকতা, আড্ডা, সময়ের বড্ড অভাব।
কিছু কিছু অভিজ্ঞতা অবশ্য লেখা সম্ভব না, কেউ বিশ্বাস করবে না। ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখের শেষ প্রান্তে একেবারে লাভার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল ত্ব, এটা শুনলে একেবারে পাগল মনে করবে বন্ধুরা। কিংবা ক্যারিবিয়ানে গভীর সমুদ্রের একেবারে তলায় একটা ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর দেখে এসেছে, এটাকেও ফেক বলে উড়িয়ে দেবে। থাক, সবাইকে সব গল্প করার দরকার নেই।
“হ্যাল্লো তারেক! এখনও ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামাও নি?” কখন দরজা খুলে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ক্লডিয়া টেরই পায়নি ত্ব। অপেক্ষার পালা শেষ হলো, ক্লডিয়ার সুন্দর মুখটা দেখতে দেখতে মুচকি হেসে ভাবল সে।
ডিসক্লেইমারঃ জীবিত কোন ব্যক্তির সাথে এই গল্পের কোন চরিত্রের মিল পাওয়া গেলে তা একান্তই পাঠকের নিজস্ব ভাবনা বলে গণ্য হবে।
মন্তব্য
facebook
পাঠকের নিজস্ব ভাবনাগুলো দেখি বেশ ইন্টারেস্টিং
আপনি চেতা কেনু? আপ্নারে কিসু বলে নাই তো!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
হক কথা!
হমম গল্পের চরিত্র খুব পরিচিত মনে হচ্ছে
ষড়যন্ত্র গভীর ষড়যন্ত্র!
ইন্টারগ্যালাক্টিকাস্টিং লেখা
আরে? আপনিও দেখছি একজন এলিয়েন কে চেনেন
শেষ পর্যন্ত তারেক ভাই? পরমানু স্তানান্তর আর পরমানু পুনর্বিন্যাসের কারনে ভিন গ্রহ থেকে এসে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন?
যাহোক, জম্পেস অনু ফ্যান্টাসী! বিভা বিরহমান, বিশ্রবনসম্ভবা, সর্বমুখশ্রীসংমিশ্রনশাস্ত্র, দন্ত্যভঙ্গকঠিনিয়াম ধাতু প্রভৃতি অনাবিল আনন্দ দিয়েছে। ধন্যবাদ, ইয়াসির ভাই।
নিজের আনন্দের জন্য লিখেছি, পাঠকের আনন্দ দেখে খুশি হলাম
পীরসাব তো রাজাগজাগো কাছা খুলত, আপ্নে দেখি উস্তাদ মহামতি ত্বরিতাক্য অস্থানুকালের কাছা ধইরাই টান দিয়া দিলেন। তয় আপনের থিউরী ব্যাফুক হইছে!!!!
--বেচারাথেরিয়াম(টিপসই দিতে মনে ছিল না)
রাজা রাজড়ারা ইদানিং বেশ খুশি, পীরসাহেব শুধু কাছা খুলছেন, আর কিছু না। আজকাল যে সব ডাণ্ডাওয়ালা ছবি বের হচ্ছে বাজারে!
কুনে গেলেন আমাদের ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল?
- বিক্ষিপ্ত মাত্রা
ক্লডিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে একটা ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন
হেহেহে- পাঠক আর ভুদাই নাই- পাঠক অহন সব বুজে...
ধন্যবাদ
পুর্বকথা পড়ে ভাবছিলাম সিরিয়াস টাইপের কল্পকাহিনী বুঝি, কিন্তু বিভা বিরহমান দেখেই বুঝে গেছি ঘটনা খারাপ ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল
সচল-পলাশ
স্থান কাল না মেনে ত্বরিত গতিতে ভ্রমণ করে যে
পাঞ্চলাইনটা যা দিয়েচেন দাদা! হয়েচে!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
ইন্টারগ্যালাক্টিক মেহমানটা কে তা মনে হয় ধরে ফেলছি! আগে সন্দেহ থাকলেও, আপনার ফিকশন পড়ে এখন সব 'চ্ছবর্গীয়জ্জ'র মতই পরিষ্কার, 'তারেএএকাণু' উপস্ চরি কেউ কিচ্ছু শুনে নাই!
শ শ শ
মানহানির মামলায় পড়বেন কিন্তু
_________________
[খোমাখাতা]
ওরে, কে আছিস! আমারে ধর!
পকেট?
উরেব্বাবা, ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল !!!!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল নামটা জটিল হইছে।
এই তাহলে কাহিনী? তারেক অণু অমানুষ( মানে মানুষ না আর কি ) হুম, আমি আগেই জানতাম।
অণু ফ্যান্টাসি অসাধারণ হয়েছে।
আপনিও জীবিত একজনের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছেন?
মানহানির মামলায় আপনার নামও উঠে গেলো বলে
কিসের মানহানি? সারাদিন কাজ কম্ম নাই, খালি ঘুরে, লেখে, পড়ে, সিনেমা দেখে, ছবি তুলে , মানে একটা মানুষের যা যা করতে মন চায় তার সব এই লোক একাই করে ফেলে, আর আমরা দেখে দেখে নিজেদের ক্ষুদ্রতার পরিমাপ করি। একটা করে পোস্ট পড়ি আর একটু করে বুঝে ফেলি আমাদের মান কত খারাপ। এইভাবে আমাদের মানের হানি চক্ষে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য তারেক অণুর বিরুদ্ধেই মান হানির মামলা করা উচিত নেয়াহেতই আমরা ভাল মানুষ
কথা মিছা কন নাই একেবারে
পরমাণু ফ্যান্টাসি - - - জটিল
-অয়ন
ধন্যবাদ অয়ন
আঁই কিন্তু বুইচ্ছি ব্যাফারডা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
"ত্বরিতাক্য অস্থানুকাল"
জোটিলা
ধন্যবাদ কুমার
পুরাই পাংখা!! অণু ভাইয়ের আরেকটা অসাম ফিকশান।
আরেকজন যুবতীর মন গলাতে দুটো জিনিস লাগবে তোমার। একটা হচ্ছে বড় মন, আরেকটা হচ্ছে বড় .....
মেশিন দাদুর লইট্যা ফিশ:-D:-D
অসাধারণ হয়েছে।
প্রতন্তনিচুমান গ্রহের বাসিন্দার সাথে তুলনা করায় তারেক্রানু ভাইয়েয় হামামলা করা উচিৎ আপনার নামে !
facebook
কিন্তু অরে এইটা কে শিখাইল যে সব যায়গায় গিয়া চখাম আইটেম গুলা পপাত করতে হবে ??
সাধু সাধু !
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন