সচলে ভ্রমণ কিংবা ছবি ব্লগ দেয়া একটা লজ্জ্বার বিষয় হয়ে গেছে আমার মত কিছু “আম” পাবলিকের জন্য। চোখ ধাঁধানো সব ছবি কিংবা দুর্ধর্ষ দুর্গম লোমহর্ষক রোমাঞ্চকর যাত্রা কাহিনী এখন ডালভাত। এভারেস্টে না উঠেও মহামতি তারেকাণু নিজেকে নিয়ে গেছেন এভারেস্ট উচ্চতায়, বাকিরাও সেখানে পৌঁছুবার পথ ধরেছেন।
আমরা ন’টা ছটা অফিস করি, বাজার করি, খাইদাই, ...... , ছা পুষি আর উইক এন্ডে ঘরের আশে পাশের কিছু যায়গায় ঘুরে বেড়াই, এই হচ্ছে প্রতি সপ্তাহের অলঙ্ঘনীয় চক্র। খুব সুন্দর দেশে থাকি বলে যা দেখি তারই ছবি পটাপট তুলে ফেলি। বাড়ি এসে কম্পুতে মেমোরি কার্ড লাগানোর পর সেগুলোর দিকে আর তাকানো যায় না। বিমর্ষ হয়ে ভাবি, এই বার আর ছাড়ন নাই, শিখেই ফেলব ফটোগ্রাফি। দুই একটা অনলাইন টিউটোরিয়াল খুঁজে বের করি, ঐ পর্যন্তই। শেষ করার ধৈর্য আর হয় না, ফটো তোলার হাত যেই লাউ সেই কদুই থেকে যায়।
তাই বলে কি আমাদের ভ্রমণ কাহিনী লিখতে ইচ্ছা করে না? গরীব বলে কি আমাদের সাধ আহ্লাদ নেই? নিশ্চয়ই আছে। জয় পরাজয় বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই আসল, এই মূলমন্ত্রে উদ্দীপিত হয়ে আমি তাই বসে গেলাম আমার ছাপোষা গল্প নিয়ে ............
মোটামুটি বছরখানেক আগের কথা। সুইজারল্যান্ডে এসেছি মাস ছয়েক হতে যাচ্ছে, নতুন যায়গায় খাপ খাওয়াতে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে। বিষণ্ণতা কাটাতে হাতের জমানো সব টাকা দিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে এসেছি। ব্যাপারটা চিনি খেয়ে ঘণ্টা দুই দৌড়ে আসার মত। প্রথম দিকে খুব শক্তি পাওয়া যায় বটে, কিন্তু চিনির রাসায়নিক ভাঙনে ক্লান্তি আসে অনেক বেশি। ঢাকায় চার সপ্তাহ খুব ধুমধাম করে কাটিয়ে এসে আমরা আমরা বিষণ্ণতার পুকুর থেকে একেবারে সাগরে পড়ে গেলাম। ডিসেম্বর মাস, বেশ ঠাণ্ডা পড়ে গিয়েছে। এত শীতে অভ্যস্ত নই বলে বের টের হওয়া একরকম বন্ধ করে দিয়েছি। অফিস যাই আসি, আর মাঝে মাঝে অগ্রজপ্রতিম সুহৃদ মিলন ভাইয়ের দোকানে বসে তার সাথে আড্ডা দিই। কথায় কথায় জানা গেল, ডিসেম্বরের একত্রিশ তারিখে ভিয়েনায় এক আত্মীয়ার কাছে বেড়াতে যাচ্ছেন সপরিবারে।
জিজ্ঞেস করলাম, “প্লেনে যাবেন নাকি ট্রেনে”? মিলন ভাই বললেন, “গাড়িতে”।
আমি বললাম, “গাড়িতে এত দূর যাবেন? সে তো প্রায় এক হাজার কিলোমিটার!”।
মিলন ভাইয়ের মুখে মৃদু হাসি দেখা গেল। বললেন, “ধুর মিয়া, এক হাজার কিলোমিটার কোন রাস্তা হইলো? এই রকম কত হাজার কিলোমিটার একদিনে পার হয়ে গেলাম!”
বললাম,” মাঝখানে থামবেন নাকি কোথাও? নাকি সোজা ভিয়েনা?”
বললেন, “নাহ, যাবার পথে মিউনিখে এক রাত থাকতে হবে। রহমান ভাই খুব করে ধরছে”।
ইন্টারেস্টিং। জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর”?
“তারপর তো অনেক প্ল্যান। ভিয়েনাকে হেডকোয়ার্টার বানায়ে একদিন যাবো প্রাগ, একদিন বুদাপেস্ট, একদিন মারিবোর। তারপর আবার মিউনিখ হয়ে লুজান”।
মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে এলো, “বাহ!”। সামনে ল্যাপটপ ছিলো, গুগল ম্যাপস খুলে লেগে গেলাম রুট দেখার কাজে। মারিবোরের নাম আগে শুনি নি। এইটা কোথায়? দেখা গেল, এটা স্লোভেনিয়ায়। আরে আরে, ভেনিস তো দেখি একেবারে কাছে! ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেলাম। এই ট্রিপে যেতে পারলে কতগুলো নতুন জায়গা দেখতে পারতাম! সেই সাথে কল্পনার ভেনিস। কতদিন ভেবেছি, ভেনিস যাবো। পানির ওপরে একটা শহর কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে সেটা দেখার ইচ্ছে সুদূর কৈশোর থেকে। কেউ আবার বলে বসবেন না, আটাশি আর আটানব্বইয়ের ঢাকা শহর দেখে মন ভরেনি?
বাসায় এসেও দেখি আফসোস কমে না। দুইদিন খুব মন খারাপ করে কাটালাম। আমার ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। থাকলে একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া যেত। ট্রেনে করে ঘোরা যায়, কিন্তু খরচ অনেক।
দিন যায়, আস্তে আস্তে মন খারাপ ভাব কমে আসে। ডিসেম্বরের সতেরো তারিখে ফুটখানেক তুষারে চারদিক ঢেকে গেল। আমার জীবনের দেখা প্রথম তুষারপাত। হালকা তুলোর মত টুকরোগুলো নাচতে নাচতে নেমে আসছে, কিছু কিছু আবার বাতাসের ধাক্কায় ওপরে উঠে যাচ্ছে ছুটোছুটি করে, দেখে মন ভালো হয়ে গেল একেবারে। আমার স্ত্রী অনুযোগ করলেন, চারদিক কেমন অসুস্থ লাগছে দেখছ? মনে হচ্ছে রং হারিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে সব। বুঝলাম, তার ঢাকা ছাড়ার শোক এখনও কমে নি।
ছবি ১ - ঘরের জানালায় বসে দেখা প্রথম তুষারপাত
দিন কয়েক পরে মিলন ভাইয়ের সাথে দেখা। কি মনে করে বলে ফেললাম, আপনার সাথে কি আমরা যেতে পারি? আপনি আত্মীয়ের বাসায় বেড়ালেন, আর আমরা ট্যুরিস্ট স্পটে? তিনি একগাল হেসে বললেন, সেটা তো ভালোই হয়। চলেন যাই। গোছগাছ করে ফেলেন।
যাই বললেই তো হয় না, প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। মিউনিখে আর ভিয়েনায় হোটেল বুকিং দিতে হবে তাড়াতাড়ি। ক্রিসমাসের সময়, কোন মুল্লুকে সুবিধাজনক বুকিং পাওয়া যাবে সেটাই ভাবনার বিষয়। মিলন ভাইকে ধরলাম। ওনার যে দুজন কন্ট্যাক্ট আছেন দুই শহরে তাঁরা কি একটু সাহায্য করতে পারবেন? মিলন ভাই বুক ফুলিয়ে বললেন, আমি থাকতে এত টেনশন করেন ক্যান? এইদিক থেকে তুড়ি বাজাবো, ওইদিকে কাজ হয়ে যাবে। বাইশ বছর ধরে ইউরোপে আছি, একটা দাম আছে না ব্যাপারটার?
ত্রিশ তারিখ বিকালে একটা ছোটখাটো দুঃসংবাদ পেলাম। মিলন ভাই তার একটা পরিচিত গ্যারেজ থেকে গাড়ি ভাড়া করে থাকেন। সেখানে যে শুধু ভাড়া অর্ধেকেরও কম তাই নয়, আরও আছে শিথিল শর্তে গাড়ি নেয়া, ফেরত দেবার ব্যবস্থা। ঘটনা হলো, ওখানের সব বড় গাড়ি ভাড়া হয়ে গেছে, একমাত্র যেটা পড়ে আছে সেটা হলো একটা টয়োটা ইয়ারিস ১.০ যার দরজা মাত্র দুইটা। আমরা মানুষ ছয় জন, সিট মেরে কেটে পাঁচটা। ক্যামনে কি? মিলন ভাইকে বললাম, বাদ দ্যান। আপনারা যান, আমরা থাকি। তিনি তেড়েফুঁড়ে বললেন, তাই কি হয় নাকি? সব ব্যবস্থা করে ফেলসি। চলেন আল্লার নাম নিয়ে এই গাড়িতেই রওনা হয়ে যাই। আমি চুপ করে রইলাম। এইভাবে যাওয়া সম্ভব নয়। বাচ্চা দুজনের একজনকে কোলে নিয়ে বসতে হবে। পুলিশ ধরলে মোটা অঙ্কের জরিমানা। জেনেশুনে বিষ খাবার দরকার আছে কি? মিলন ভাই অধৈর্য হয়ে বললেন, কি ভাবেন? বললাম, ফাইন দিতে দিতে জান শেষ হয়ে যাবে। ওনার মুচকি হাসি আবার ফেরত এলো। বললেন, সুইজারল্যান্ডে আড়াই বছর ধরে গাড়ি চালাই। কোন পুলিশ আমারে কখনো থামায় নাই। ড্রাইভিং ঠিক থাকলে পুলিশ আসবে না আপনার কাছে। চলেন যাইগা।
দীর্ঘক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি। বেড়াতে যাবার লোভ ষোল দুগুণে বত্রিশ আনা। রাজি হয়ে গেলাম।
প্রথম দিনঃ মিউনিখের পথে
পরদিন সকালে মিলন ভাই গাড়ি নিয়ে হাজির। আমাদের স্যুটকেস রাখতে গিয়ে দেখি, বুটে জায়গা নেই। মিলন ভাই দুইটা ছোট ব্যাগ আর কিছু খাবারদাবার নিয়ে এসেছেন, তাতেই জায়গা শেষ। তার ওপর আমার সাথে আছে সাধের ল্যাপিটি। ইয়ার ক্লোজিং এর কিছু কাজ বাকি, সেটা করতে হবে সোমবার সকালের মধ্যে। ল্যাপি ছাড়া আমার উপায় নাই গোলাম হোসেন অবস্থা। মিনিট খানেক জায়গা বের করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম। আমাকে দিয়ে হবে না। মিলন ভাই ঝাড়ি দিলেন, আপনে মিয়া কোন কাজের না। দেখি সরেন। অবাক কাণ্ড, সব এঁটে গেল দেখি। আমি আসলেই কোন কাজের না।
অনেক আগে অধ্যাপিকা আনোয়ারা সৈয়দা হকের একটা লেখা পড়েছিলাম পত্রিকায়। সেখানে তিনি বাঙালি পুরুষের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছিলেন তারা মোটা বউ পছন্দ করে বলে। কে জানে কথাটা সত্যি কিনা। তবে আমি খুবই খুশি হলাম আমাদের অর্ধাঙ্গীনিদ্বয় দুই বাচ্চা সহ পেছনের সিটে পাশাপাশি বসতে পারলেন দেখে। তারা শীর্ণকায়া নন, কিন্তু তাদেরকে কেউ মোটাও বলতে পারবে না। যাত্রা শুরু হলো।
ছবি ২ - আমাদের ময়ুরপঙ্খী
কোন ঝামেলা ছাড়াই পেরিয়ে এলাম শ’পাঁচেক কিলোমিটার। মিউনিখে এসে উঠলাম রহমান ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে। নাম তাজমহল। প্রচুর ভারতীয় গ্রাহক আসে বলে চারদিকে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি, প্রতিকৃতি, দেয়ালচিত্র এসব দিয়ে সাজানো। যস্মিন দেশে যদাচার। রেস্টুরেন্ট মালিকের বন্ধু বেড়াতে এসেছে জেনে স্টাফদের কাছ থেকে যে খাতির পেলাম সেটা আর বলার নয়। রহমান ভাইকে দেখেও খুব ভালো লাগলো। অমায়িক, পরিশ্রমী এবং মিতভাষী একজন মানুষ। ভরপেট খেয়ে দেয়ে এবার হোটেলে যাবার পালা। রহমান ভাই সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মাত্র চারশ মিটার দুরেই হোটেল। তাড়াতাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। এগারোটায় উঠে বেরোতে হবে। থার্টি ফার্স্টে মিউনিখবাসী কেমন আতসবাজী ফোটায় সেটা দেখব না?
যতখানি ক্লান্ত ছিলাম তাতে পুরো রাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু এলার্মের শব্দে উঠে যেতে হলো। উঠে রেডি ফেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। তারমানে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার পরিকল্পনা বাদ। কিন্তু ছাদওয়ালা জায়গা কোথায় পাই? রহমান ভাইকে কল দিতে তিনি বললেন অলিম্পিক টাওয়ারে চলে যেতে। ওপরে কাঁচ ঘেরা রুম আছে, চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে। খুশিতে নেচে উঠে সেখানে পৌঁছে দেখি ভুল জায়গায় চলে এসেছি। ওয়াচ রুমটি ছোট এটা বলা যাবে না, কিন্তু এত লোক আগে থেকেই উঠে আছে যে পা ফেলার যায়গা নেই। মনে হলো ঈদের আগে ঢাকার গাউসিয়া মার্কেটের ফুটপাথে কেনাকাটা করতে এসেছি। চারিদিকে উঁচু উঁচু শ্বেতাঙ্গ নরনারীর ভীড়। তাদের মাথা ছাড়িয়ে আমার মত খাটো লোক বাইরে উঁকি দেয় সাধ্য কি?
এইটুকু জায়গার ভেতর একটা ক্যাফে আর একটা মিউজিক মিউজিয়াম আছে। বিখ্যাত মিউজিশিয়ানদের অটোগ্রাফ দেয়া নানান বাদ্যযন্ত্র রাখা। ঘুরে ঘুরে সেগুলোই দেখলাম, কি আর করা।
ছবি ৩ - অটোগ্রাফওয়ালা গিটার
পরদিন সকালে চেক আউট। রুমের ভাড়া দিতে গেলে রিসেপশনিস্ট জানালো, আগেই সব পেমেন্ট হয়ে গেছে। রহমান ভাইয়ের কাজ। মিলন ভাইয়ের সাথে তার পুরনো বন্ধুত্ব, কিন্তু তিনি আমারটা দিয়ে দেবেন কেন? হাতে হাতে টাকা দিয়ে দেব, এই কথা শুনে মিলন ভাই আটকালেন। বললেন, রহমান খুব আঘাত পাবে। বেচারা নরম মনের মানুষ। বাসায় একেবারে একেবারে ন্যাদা বাচ্চা আছে বলে সেখানে থাকার আয়োজন করে নি। অতিথিকে হোটেলে রাখতে হচ্ছে এই বেদনাতেই সে অস্থির। তাকে নতুন করে ঘাঁটানোর দরকার নেই।
আমার ভারি সংকোচ বোধ হচ্ছিলো। আমি কেবল বুকিং দেবার কথা বলেছিলাম, পেমেন্ট দেবার কথা তো হয় নি। আমার বাসায় কেউ বেড়াতে এলে তাকে আমি পয়সা খরচ করে হোটেলে রাখতে পারব না। নিজের দেবার সামর্থ্য নেই এরকম আপ্যায়ন কেমন করে নিই?
দ্বিতীয় দিনঃ মিউনিখ
চাপা অস্বস্তি নিয়েই সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম। দিন একেবারেই ছোট, বেশি ঘোরারও সুযোগ নেই। গ্লিপ্টোথেক মিউজিয়ামের আশপাশ, মারিয়েনপ্লাটজ ক্যাথেড্রাল, ইংলিশ পার্কের কিছু অংশ আর পড়ন্ত দুপুরে ফের অলিম্পিয়াপার্ক এই ঘুরে আমাদের মিউনিখ যাত্রার ইতি টানলাম। সমস্ত আপত্তি, বাধা উপেক্ষা করে রহমান ভাই যখন পিজা হাটে লাঞ্চের বিলটাও দিয়ে দিলেন তখন থেকেই আরও থাকার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভিয়েনার দিকে গাড়ি তাক করলাম পৌনে পাঁচটায়। পৌঁছুতে পৌঁছুতে পৌনে দশটা।
ছবি ৪ - বন্ধ গ্লিপ্টোথেক মিউজিয়াম, এদিক সেদিক পড়ে আছে আগের রাতের আতসবাজির আবর্জনা
ছবি ৫ - দ্য স্ট্যাচু অব জোসেফ ম্যাক্সিমিলিয়ান, প্রিন্স অফ বাভারিয়া, ১৭৯৯-১৮০৫
ছবি ৬ - মারিয়েনপ্লাটজ ক্যাথেড্রালের কিছুটা
ছবি ৭ - বিএমডব্লু’র অফিস
ছবি ৮ - অলিম্পিক টাওয়ার
ছবি ৯ - অলিম্পিয়াপার্ক লেকে পাখির মেলা
মিলন ভাই ধোঁকা দিয়ে থাকতে পারেন আগেই সন্দেহ করেছিলাম, অবাক হলাম না যখন জানা গেল আদতে আমাদের হোটেল বুকিং দেয়াই হয় নি। রাতে থাকছি ভাবীর খালাতো বোনের বাসাতেই। আমি আর সহধর্মিণী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। এইরকম সিন্দবাদের ভুত হয়ে কারো ঘাড়ে আগে কখনো চড়ে বসি নি, সংকোচের পরিমাণ একেবারে সব ধরণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। গৃহকর্তা (পলাশ ভাই) আর কর্ত্রী (অ্যালিস ভাবী) অবশ্য এমনভাবে বরণ করলেন, মনেই হলো না অপরিচিত কারো কাছে এসেছি। খাবার দাবারে আয়োজনের চূড়ান্ত করা ছিলো, চরম স্বাস্থ্যসচেতন লোকও ভরপেট না খেয়ে উঠতে পারবে না। খাওয়া শেষে হালকা গল্পগুজবে মেতে উঠেছি, কলিং বেলের আওয়াজে তাতে বাধা পড়ল। পীপহোলে চোখ রেখে পলাশ ভাই দেখার চেষ্টা করছিলেন এত রাতে কে এলো। কিছুক্ষণ দেখে টেখে উনি আবার ডাইনিং টেবিলে ফিরে এলেন। আমরা চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই বললেন, “নিচ তলার বসনিয়ান মেয়েটা এসেছে। আর বইলেন না, ফাজিল একটা। খুলব না গেট”।
বার তিনেক বেল বাজিয়ে সাড়া না পেয়ে দরজায় দুইবার করাঘাত করল আগন্তুক। তারপর কিঞ্চিৎ উঁচু গলায় বকতে বকতে চলে গেল। আমরা যারপরনাই অবাক হলাম। কেমন প্রতিবেশী? জানলাম দুইজনের বছরখানেক ধরে চলা ঝামেলার গল্প। বাসায় অতিথি এলে কিছু হইচই, বাচ্চাদের ছুটোছুটি এসব হয়, তাতে এনার ভারি আপত্তি। যেহেতু রাত দশটার বেশি বেজে গিয়েছে, চাইলে সে প্রতিবেশীদের হল্লার অভিযোগে পুলিশের শরণাপন্ন হতে পারে। সেই হুমকিই দিয়ে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার! আমি ভেবেছিলাম এই সমস্যা শুধু আমার সুইস প্রতিবেশীদের। বেড়াতে এসেও তাদের ভুত আমাকে তাড়া করে ফিরবে কে জানত? আমার কপাল! বহুব্রীহির মামার ভাষায়, মি অ্যান্ড মাই মিসফরচুন, ইন ডেথ উই পার্ট! সেখানে নাহয় মেঝে কাঠের, এখানে তো তা নয়। এমনিতেই নিচু গলায় গল্প করছিলাম, এবার সেটা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে ঘুমাতে গেলাম সবাই।
তৃতীয় দিনঃ ভিয়েনা
পরদিন পলাশ ভাই আমাদের বেড়াতে নিয়ে গেলেন ভিয়েনার বিখ্যাত শনব্রন প্রাসাদে। রাজ রাজড়াদের ব্যাপার স্যাপার দেখলে আমার যে কথা প্রথমেই মনে আসে সেটা হচ্ছে, তাদের বিলাসের দাম মেটাতে কত লোক প্রাণ দিয়েছে? কত লোক নিষ্পেষিত হয়েছে? প্রাসাদগুলো চোখ ধাঁধানো সুন্দর, কিন্তু তার আশেপাশের বাতাস বড্ড ভারী।
ছবি ১০ - শনব্রন প্রাসাদের প্রবেশদ্বার
ছবি ১১ - শনব্রন প্রাসাদ
ছবি ১২ - শনব্রন প্রাসাদের গ্লোরিয়েটা
ছবি ১৩ - নেপটুনব্রনেন
অচিরেই বেলা পড়ে এলে আমরা রাতের নগরী দেখতে বের হলাম। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ার উপলক্ষে অনেক দালান রং বেরংয়ের বাতি দিয়ে সাজানো। সিটি সেন্টারে উপচে পড়া ভিড়। স্টেফানসডম ক্যাথেড্রালের সামনে ভিড় যেন আরও বেশি। শয়ে শয়ে লোক দাঁড়িয়ে আছে, অনেকের গায়ে বিচিত্র সাজসজ্জা। কেউ সেজেছে ভুত, কেউ সেজেছে মধ্যযুগীয় কাউন্ট, কেউ আবার কালো আলখাল্লা গায়ে দিয়ে আলোর ম্যাজিক দেখাতে ব্যস্ত। সে এক এলাহী কারবার। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম, ছবি তোলার কথা মনে নেই।
ভিয়েনাকে কেন হেডকোয়ার্টার বানাবার কথা বলেছিলেন মিলন ভাই সেটা এসেই বুঝতে পেরেছিলাম। এখানে তার অনেক বন্ধুবান্ধব, আসামাত্র তিনটি দাওয়াত পেয়েছেন। নিজেদের অনাহুত স্ট্যাটাসটা আর ভালো লাগছিলো না। জোর করে ভ্রমণসঙ্গী হয়েছি বটে, কিন্তু তারপর থেকে একের পর এক বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়েই চলেছি। এর একটা বিহিত হওয়া অবশ্য প্রয়োজন। দাওয়াতে যাবার অনিচ্ছা প্রকাশ করতেই সবাই হা হা করে উঠলেন মিলন ভাই আর পলাশ ভাই। বললেন যারা দাওয়াত দিয়েছেন তাঁরা সবাই জানেন যে আমরা দল বেঁধে ভিয়েনায় এসেছি। আমরা যদি এমন করতে থাকি তবে তাঁরা বাকি সব দাওয়াত বাতিল করতে বাধ্য হবেন। এই কথার ওপর কথা চলে না। গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি সেখানে কেক রাখা। আমার পুত্রের জন্মদিন জানুয়ারির দুই তারিখে এটা জেনে পলাশ ভাই এই ব্যবস্থা করেছেন। আয়োজন দেখে আমরা যারপরনাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম।
গভীর রাতে আমাদের জন্য নাটক অপেক্ষা করছে সেটা বুঝতে পারি নি। পলাশ ভাইয়ের বাসায় যখন ফিরেছি তখন সোয়া দশটা বাজে। গেট দিয়ে ঢোকার আগে দেখি দোতলার কিচেনে বাতি জ্বলছে, জানালার ওপর ছায়ার নড়াচড়া। আমি মিলন ভাইকে সেটা দেখিয়ে বললাম করিডোরে বা বাসায় শব্দ কম করতে। কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে বসেছি কেবল, আবার কলিং বেলের শব্দ, একবার, দুবার, তিনবার। সন্দেহ করলাম এটা দোতলার প্রতিবেশী নয়, অন্যকেউ। পলাশ ভাই গেট খুলেই দেখেন পুলিশ। তাদের প্রথম প্রশ্ন, রাত পৌনে এগারোটা বাজে, তোমাদের ঘরের সব বাতি জ্বালানো কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, কেন তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো নি দশটার আগে? প্রায় মিনিট পাঁচেক কুসুম গরম তর্কাতর্কির পর পুলিশ সতর্কবাণী শুনিয়ে বিদায় নিল। আমরা কানে ধরলাম, দশটার পরে যদি আর টুঁ শব্দ করেছি এই দেশে!
চতুর্থ দিনঃ ভিয়েনায় আটকে গেলাম
পরের প্ল্যান প্রাগ। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। আটটায় বেরিয়ে পড়ার কথা, বের হলাম সাড়ে দশটায়। রাস্তার পার্কিংয়ে গিয়ে দেখি, গাড়ি নেই! দিনের আলোতে বোঝা গেল, কি ভুল করেছি। রাস্তার দুই পাশে শ’দেড়েক পার্কিং স্পেসের ভেতর, একটাই ছিলো একটা গ্রোসারী শপের লোডিং জোন। সেখানে গাড়ি রাখা যাবে কেবল রাত দশটা থেকে ভোর ছটার ভেতর। নিশ্চয়ই পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে গেছে!
ছুটলাম থানায়। হুম, ঘটনা সত্যি। শহরের শেষ প্রান্তে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে পুলিশের আটক করা গাড়ির ডিপো, সেখানে যেতে হবে। দুশো সাতষট্টি ইউরো ফাইন। কি আর করা, প্রাগ যাবার চিন্তা বাদ দিয়ে গাড়ি উদ্ধারে নামলাম। দিনটাই মাটি।
পঞ্চম দিনঃ বুদাপেস্ট
এরপর বুদাপেস্ট যাবার পালা। সকাল সকাল রওনা হয়ে গেলাম গাড়ি করে। এখন পর্যন্ত চাইল্ড সিটের জন্য পুলিশ ধরেনি দেখে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বর্ডারে চলে এসেছি। রাস্তার আশেপাশে অনেকগুলো দানবীয় উইন্ডমিল, ঘুরছে জোরে জোরে। ছবির মত দৃশ্য। আমাদের উচ্ছ্বাসে বাধ সাধল বেরসিক বর্ডার পুলিশ। বক্তব্য, টোল টিকেট দেখাও। আমরা অবাক! কোথাও তো কোন টোল গেট দেখি নি! টিকেট আসবে কোত্থেকে?
ছবি ১৪ - গাড়ি থেকে তোলা উইন্ডমিল
ঘটনা হচ্ছে, এই দেশে কোথাও টোল গেট নেই। পেট্রল পাম্পগুলোতে সাতদিন, চৌদ্দদিন ইত্যাদি বিভিন্ন মেয়াদে টোল টিকেট পাওয়া যায়। সাতদিন মেয়াদের টোল টিকেটের দাম বারো ইউরো। যেহেতু আমরা সেটা কিনি নি, পুলিশ ধরে নিয়েছে আমরা ফাঁকি দেবার তাল করছিলাম। জরিমানা একশো বিশ ইউরো। শিখলাম এবং বর্ডার পার হয়ে প্রথম পাম্প থেকেই হাঙ্গেরির টোল টিকেট কিনে নিলাম।
আমাদের কপাল খারাপ, বুদাপেস্টের আকাশ ঘন ধূসর এবং টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। শহরের প্রধান আকর্ষণ ফিশারম্যান’স বেস্টনে গিয়ে দেখি দুরের জিনিস দেখা যায় না। বন্ধু বান্ধবের ফেসবুক অ্যালবামে দানিয়ুবের নজরকাড়া ফটো দেখি, আমরা পেলাম ঘোড়ার ডিম।
ছবি ১৫ - ম্যাথিয়াস চার্চ
ছবি ১৬ - ব্রোঞ্জ স্ট্যাচু অফ স্টেফান ১ অফ হাঙ্গেরি, নিচে দাঁড়িয়ে আছে বাজপাখিওয়ালা
ছবি ১৭ - এই সেতুটি শেষ কবে ব্যবহৃত হয়েছে কে জানে!
দুপুরে হালকা খেয়েদেয়ে গেলাম পুরনো শহরে। উদ্দেশ্য, ইউ এন হেরিটেজ এরিয়া ঘুরে ঘুরে দেখা। সেটা পণ্ড হয়ে গেল মুষলধারে বৃষ্টির কাছে। গাড়িতে বসেই দুই একটা ফটো নিলাম, আর কি করব?
ষষ্ঠ দিনঃ ভেনিসের পথে
এবার মারিবোর যাবার কথা। মিলন ভাইকে আগেই বুদ্ধি দিয়েছিলাম, চলেন এইবার আর ভিয়েনায় ফিরে না আসি। মারিবোর থেকে ভেনিস, ভেনিস থেকে মিলান, মিলান থেকে লুজান। মিউনিখের রাস্তা দিয়ে তো আসলাম, এবার অন্য পথ ধরি? সেটাই ঠিক হলো। ভিয়েনাকে বিদায় জানিয়ে চললাম স্লোভেনিয়ার পথে, পেছনে রেখে গেলাম উষ্ণ অভ্যর্থনার মায়াময় স্মৃতি।
আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা খুব সাবধান হয়ে গেছি। বর্ডার পার হয়েই টোল টিকেট কিনতে হবে, নিজেদের মনে করিয়ে দিচ্ছি বারবার। চারপাশের বাড়িঘর বেশ সুন্দর। আমি আগেও দেখেছি, ইউরোপের সীমান্ত শহরগুলো যেন একটু বেশিই গোছানো থাকে। আমাদের দেশে উল্টো, রাজধানী থেকে যত দূরে, শহরগুলো তত বেশি অযত্নে লালিত। একটা উঁচু তোরণ আর উড়তে থাকা দুটো বড় পতাকা দেখে বুঝতে পারলাম, বর্ডার এসে গেছে। কিন্তু পেট্রল পাম্পে থামার এক্সিটটা খুঁজে পেলাম না। মিলন ভাই বেশ জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, কিছু বোঝার আগেই সেটা পার হয়ে এলাম। যাকগে, পরের পাম্প থেকে কিনে নিলেই হবে। একটা বাঁক ঘুরেই দেখি, পুলিশের গাড়ি, স্টপ সাইন দেখিয়ে থামতে বলছে। মুখটাই তেতো হয়ে গেল। এমন কপাল কেন আমাদের? এবারের জরিমানা তিনশো ইউরো প্লাস টোল টিকেট আট ইউরো। বিদেশী বলে আমাদের জন্য পঞ্চাশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট, দেড়শো ইউরো। মন্দের ভালো।
রেগেমেগে ঠিক করলাম, যাবো না মারিবোর। সোজা ভেনিস চলে যাই। কিন্তু পেট জানান দিচ্ছে, খাবার চাই। কাজেই ফ্রিওয়ে থেকে বের হয়ে শহরে ঢুকলাম। একটু হেঁটে টেটে দেখলাম দুই একটা এলাকা, ঐটুকুই। খেয়ে দেয়ে আবার রাস্তায়। মিলন ভাইয়ের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাফিজ ভাই, অধ্যাদেশ জারি করেছেন তার বাসায় উঠতে হবে। হোটেলে ওঠার প্ল্যান যেন আমরা বাদ দিই। কাজেই ভেনিসকে একশ কিলোমিটার পেছনে ফেলে আমরা চলে গেলাম চিয়াম্পো। পরদিন সকালে হাফিজ ভাই ভেনিস ঘুরে দেখাতে নিয়ে যাবেন।
ছবি ১৮ - মারিবোরের পথে পথে রঙিন আলোকসজ্জা
সপ্তম দিনঃ ভেনিস! ভেনিস!!
বুকের মধ্যে কেমন যেন কাঁপন অনুভব করছিলাম। এসেছি অবশেষে স্বপ্নঘন সেই সমুদ্রনগরে। ইচ্ছা ছিলো শহরের অলিগলি হেঁটে হেঁটে দেখবার। কিন্তু কয়েকদিনের টানা ভ্রমণে বাচ্চারা বেশ ক্লান্ত, কাজেই সেটা বাদ দিতে হলো। খালের শহরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে মোটর লঞ্চ। একটা রুট আছে শহরের বাইরে দিয়ে খাঁড়ি হয়ে অন্যপ্রান্তে পৌঁছানো। আরেকটা রুট শহরের ভেতর দিয়ে মেইন ক্যানাল ধরে এঁকে বেঁকে গিয়েছে। ইচ্ছা ছিলো শহরের ভেতর দিয়ে যাবার, কিন্তু দিক ভুল করে খাঁড়ির পথে উঠে গেলাম। তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি অবশ্য। শহরের বাইরের দিকটাও কম সুন্দর নয়।
ছবি ১৯ - পন্তে দেলা কস্তিতুতসিয়নে থেকে দেখা মেইন ক্যানাল
ছবি ২০ - পন্তে দেলা কস্তিতুতসিয়নে থেকে দেখা মেইন ক্যানাল -২
ছবি ২১ - মেইনল্যান্ড থেকে ট্রেন আসছে
ছবি ২২ - খাঁড়ি থেকে ভেনিস
ছবি ২৩ - খাঁড়ি থেকে ভেনিস - ২
ছবি ২৪ - খাঁড়ি থেকে ভেনিস - ৩
ছবি ২৫ - নাম না জানা চার্চ
ছবি ২৬ - তেসোরো দেলা ব্যাসিলিকা
ছবি ২৭ - বিয়ের জন্য কেউ কেউ ভেনিসকে বেছে নেবে এ আর আশ্চর্য কি?
ছবি ২৮ - আহা! গনডোলা!!
ছবি ২৯ - সান মার্কোর ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের জিনিস
এই প্রথম দিন ছোট হবার জন্য আফসোস লাগলো। বেশি কিছু দেখার আগেই ঝপ করে সন্ধ্যা নেমে গেল। তাও আলো আঁধারির ভেতর এদিক সেদিক যতটুকু পারা যায় দেখে নিলাম। ফিরতি পথে লঞ্চ গেলো শহরের ভেতর দিয়ে বড় খালটা ধরে। ভেতরে গাদাগাদি ভীড়, জানালার কাছে কোন খালি জায়গা পাই নি। ফাঁক ফোঁকর দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো কিছু কিছু বাড়িঘর। সত্যিই সেগুলো পানির ওপর ভাসছে। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এইরকম ঝামেলা সয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই অবাক লাগে।
অষ্টম দিনঃ বাড়ি ফেরার পালা
পরদিন মিলান। লাঞ্চ এবং বৈকালিক বিশ্রাম নেবার ডাক পড়েছে মিলন ভাইয়ের আরেক বন্ধু আলমগীর ভাইয়ের বাসায়। আমাদের টনক নড়েছে, কারণ সুইস বর্ডারে সবসময় পুলিশ চেকিং থাকে। থামালে সীটের অতিরিক্ত মানুষের জন্য ধরবেই। তার ওপর চাইল্ড সীট তো নেইই। কত ফাইন খেতে হবে জানি না। বুদ্ধি আঁটলাম, ইটালির সীমান্ত শহর দোমোদোসোলায় নেমে যাব আমি। ট্রেনে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্রিগ শহরে নামব। বিশ মিনিটের ব্যাপার। আর বাকিরা গাড়িতে চড়েই সীমান্ত পাড়ি দেবে, আমাকে উঠিয়ে নেবে ব্রিগ থেকে। দোমোদোসোলায় পোঁছে আমার পুত্রের পেট খারাপ হলো। তাঁকে নিয়ে তার মা ঢুকল এক রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে। কপালের ফেরে সেই রুমের তালা গেল আটকে। চাবি দিয়েও খোলে না, না ভেতর থেকে না বাইরে থেকে। তাও কপাল কিছুটা ভালো, মিনিট বিশেক পর একবার চাবি লাগলো, তালা খুলল। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকবে না, আমাদের শেষ ট্রেন চলে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
লক্ষ্মণ দেখে মনে হচ্ছে, আজকে কপালে ধরা খাওয়া নিশ্চিত। যেখানে নয়েজ নেই, সেখানে নয়েজ হবার সম্ভাবনা শতকরা একশো ভাগ, এই তত্ত্ব কে যেন দিয়েছিল? পুরো ট্রিপে পুলিশ জানতে চায় নি আমরা ছয়জন মানুষ এই গাড়িতে কি করছি, এবার নিশ্চয়ই করবে। কি করা যায়? আবার গুগল ম্যাপস খুললাম। ব্যবহার কম হয়, এমন একটা বর্ডার দরকার। সেখানে রাত দশটার পরে চেকিং থাকার সম্ভাবনা অনেক কম। অনেকগুলো বিকল্প পথ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বেশিরভাগ রাস্তাই পাহাড়ের ওপর দিয়ে এঁকেবেঁকে গেছে। নিশ্চয়ই বরফ জমে আছে সেগুলোতে, একবার আটকে গেলে ভোর না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই বসে থাকে হবে। আরেকটা একটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে দোমোদোসোলা-ভারবানিয়া (ইটালি)-লোকারনো (সুইজারল্যান্ড)-বেলিনজোনা-লুক্রেন-বার্ন হয়ে লুজানের দিকে। অনেক ঘোরাপথ। কিন্তু লোকারনোর পর থেকে দেখাচ্ছে ফ্রিওয়ে। ঘুরলাম পেছনদিকে আবার। গন্তব্য ভারবানিয়া। রাস্তা মোটেই সমতল কিংবা সোজা নয়, পাহাড় ঘেঁষে থাকা কিছু ছোট ছোট শহর পাড়ি দিয়ে পড়লাম ভারবানিয়ার লেকের পাশে। পুরোটা রাস্তা সাপের শরীরের মতো, একটু পরপর বাঁক। গতি কিছুতেই পঞ্চাশের ওপর তোলা যাচ্ছে না। ক্লান্তিকর দীর্ঘ যাত্রায় পুত্রধনের শরীর একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে, রাত সাড়ে দশটার দিকে সে হড়হড় করে পুরো গাড়ি ভাসিয়ে বমি করে দিল। খোলা বাতাসে নামলাম সবাই। জানুয়ারি মাসের তীব্র শীতে একেবারে হাড় কাঁপিয়ে নিচ্ছিল। গাড়ি পরিষ্কার করে রওনা হতে হতে এগারোটা।
তীব্র শীত অথবা রাত বারোটা, যে কারণেই হোক, সত্যিই বর্ডার চেকপোস্টে কেউ নেই। অনেকক্ষণের সঙ্গী দুশ্চিন্তা হঠাৎ চলে গিয়ে কেমন যেন ফুরফুরে হয়ে উঠল মন। এখনও চার ঘণ্টার রাস্তা বাকি, কিন্তু পৌঁছে যাব নিশ্চয়ই একসময়।
অপ্রাসঙ্গিক দুই ছত্রঃ
মিলন ভাই গত মাসের তেইশ তারিখে ঢাকা গিয়েছিলেন। ফেরার কথা এই মাসের সাতাশ তারিখে, কিন্তু ফিরে এলেন এক তারিখে। রামপুরায় মধ্যরাতে রাস্তা পার হবার সময় একটি প্রাইভেট কার ফুলস্পীডে ধাক্কা নিয়ে তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নীচটা গুড়ো করে দিয়েছে। গাড়িটা নাকি থামার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল, হয়তো খুব সামান্য কিছু ঘটত অথবা ঘটত না। চালক থামার ব্যাপারে আগ্রহ তো দেখায়ই নি, উল্টো শেষ মুহুর্তে স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছে। গাড়ির নম্বর প্লেট দেখা যায় নি।
ফ্লাইটের খরচ কমাতে মিলান থেকে প্লেনে চড়েছিলেন, এখন গাড়িটা হয়ে গেছে গলার কাঁটা। ট্রেনে যেতে যেতে গল্পটা লিখছি, মিলান যাচ্ছি সেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসতে। দোয়া করছি, মিলন ভাই যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ঠিক একবছর পর, প্রায় একই রাস্তায় আবার ফিরব রাতের বেলা, একা।
মন্তব্য
আপাতত ছবি দেখলাম। হাতি সাইজ লেখা দিছেন, একটু টাইম দেন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
যত খুশি টাইম নেন, পড়লেই আমি খুশ
আপনার ভ্রমণকাহিনি চমৎকার লেগেছে, ছবিগুলোও সুন্দর। সময়ের অভাবে ইউরোপে একটা বড় ট্রিপ দেওয়া হয় নাই, ভ্রমণকাহিনি পড়ে তাই শখ মেটাই।
তবে পোস্টের শেষে আপনার মিলন ভাইয়ের দুর্ঘটনার খবর শুনে খারাপ লাগল, আশা করি দুর সুস্থ হয়ে উঠবেন উনি।
এই প্যারাগ্রাফটা নিয়ে আমার কিছু কথা বলার আছে। ঠিক কী কারণে আপনি লজ্জা পাচ্ছেন বা নিজেকে আম পাব্লিক মনে করছেন আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি সচলে বেশ কিছুদিন ধরে লিখছেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে মন্তব্য পাচ্ছেন তারপরেও আপনার নিজেকে "আম" পাব্লিক মনে হচ্ছে। এই মনে হওয়াটা বা পোস্ট দিতে লজ্জা পাওয়াটা কিন্তু পজিটিভ কিছু না।
আমি তো আরো ভাবতাম তারেক অণুর পোস্ট মানুষকে ভ্রমণে আরো উৎসাহ দিবে। অণু ভাই তো পেরুর আন্দিজ নিয়ে লিখে আবার বাংলাদেশের গাঁ-গেরাম নিয়েও লিখে।
ভ্রমণকাহিনির স্বাদ নির্ভর করে এক্সোটিক লোকেশানের উপর না, বরং দেখার চোখের উপরে। প্রতিদিন শ'খানেক লোকে তাজমহল দেখে। একজন স্থাপত্যে আগ্রহ যার সে হয়ত দেখে মিনারের গঠন, ইতিহাসের ভক্ত খুঁটিয়ে পড়ে মিনারের বিবরণ, খাদ্যরসিক কেউ বা আবার আগ্রার সুতলি কাবাব নিয়ে মশগুল থাকেন। এই ভিন্নতাটুকু আছে বলেই লোকে এখনো ভ্রমণের কথা বলে, লিখে। আপনি যে সুইটজারল্যান্ড, ইটালি, হাংগেরি ঘুরে এলেন - কয়জনেরই বা এই সৌভাগ্য হয়?
হয়ত আপনি এতকিছু ভেবে লিখেন নাই। হয়ত এটা শুধুই বিনয়বশত। কিন্তু একটা চমৎকার ভ্রমণকাহিনির এরকম শুরু একদমই মানাচ্ছে না।
আরো ছবি-লেখার প্রত্যাশায় থাকলাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনার উদার মন্তব্যে প্রায়ই সংকুচিত হয়ে যাই।
আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু ওই যে বললাম, এত ভালো ভালো ছবি আসে সচলে যে খুব সংকোচ লাগে নিজের গুলো পোস্টাতে। দেখেন না ভেনিস বাদে অন্য জায়গার ছবি তেমন দেই নি। ছবি কিন্তু তুলেছি সব মিলিয়ে প্রায় শ'পাঁচেক। বাছাই করতে গিয়ে যেগুলো সব থেকে পরিষ্কার মনে হয়েছে সেগুলোই দিয়েছি।
একেকটা শহরে কত কিছু দেখার থাকে। আমরা গড়ে সময় পেয়েছি দিনে পাঁচ ঘন্টা করে। ফলে বিভিন্ন জায়গার বদলে লোকের বর্ণনা এসেছে বেশি। এই কারণেও সংকোচ এসে ঘিরে ধরছিলো এটাকে ভ্রমণকাহিনী বলতে। স্মৃতিচারণ হিসেবে মনে হয় ঠিক আছে।
লেখা, ছবি দুই-ই ভাল লেগেছে। আর ভাল লেগেছে, আপনার মিলন ভাইকে।
মিলন ভাই খুব প্রাণোচ্ছল মানুষ। পর্তুগালে তার বিশাল ব্যবসা ছিলো। রিসেশানে সব গেছে। কিন্তু ভেঙে পড়েননি তিনি। সুইজারল্যান্ডে এসে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করেছেন সাড়ে তিন বছর আগে। এইবার তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
শুধু ইচ্ছে হল বললেই আমরা মানবো কেন? এখন থেকে নিয়মিত ভ্রমন কাহিনী লিখুন। চমৎকার লাগলো তো।
-মনি শামিম
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মনি শামিম।
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ eva
দারুন হয়েছে কিন্তু! খুব মজা করে পড়লাম। বিনয় না আত্নসংশয় কোনটা জানিনা, কিন্তু লেখার শুরুর দিকের ঐ কথাগুলির কোন দরকার ছিল না। লেখাটা যথেষ্ট ভাল হয়েছে।
****************************************
আত্মসংশয় ঝেড়ে ফেলে লিখব এখন থেকে, ঠিক করলাম।
আপাততঃ রাখুন
কিছু ছবি কমন পড়লো, গতবছর প্রাগ আর বুদাপেস্ট ঘুরে এসছি। দারুন লেখা। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এভাবে রোডট্রিপ করার সাহস করছেন এইটাই মেলা।মিলন ভাই সেরে উঠুক এই কামনা করছি।
প্রাগ হচ্ছে রোমান্টিকতায় ভরা শহর - আমাদের বন্ধু জুটি জয়া আর ইমতিয়াজ সেখান থেকে ঘুরে এসে এই কথাই বলেছিলো। যতজন সেখানে গিয়েছে, উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। আমরা ঠিক করেছি, সামনের সামারে যাব।
তার আগে, আপনি আপনার অভিজ্ঞতা লিখে ফেলে আমার কিছু উপকার করতে পারেন
(২৬৭ + ১২০ + ১৫০) X ১০৪.৭২ = ৫৬,২৩৪.৬৪!!! যাক্গে ব্যাপার না - শখের দাম আশি টাকা তোলা।
**************
হাঙ্গেরীর ব্যাপারে মোটামুটি কিছুই বলেননি। একেবারেই যে কিছু দেখতে পাননি তা তো নয়। সেটুকুই বলুন। এই ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে।
**************
এক ধনীর দুলাল কোটি টাকা মূল্যের এক স্পোর্টস কার কিনেছেন। জিজ্ঞেস করলাম, "এই গাড়ি চালাবেন কোথায়"? উত্তর দিলেন, "রাত বারোটার পর ঢাকার রাস্তাতেই"। মিলন ভাইয়ের দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ কী কী হতে পারে সেটা কিছু কিছু বোঝা যাচ্ছে।
প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাবার পথে মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতে বিকট গর্জন করে বিপুল বেগে চলা এক স্পোর্টস কার আমার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেবার উপক্রম করে। আমি সভয়ে দুই হাতে আমার স্ত্রী-পুত্রকে চেপে ধরি। সংসদ ভবন এলাকায় এই অরাজকতা চললেও পুলিশকে আজ পর্যন্ত কিছু করতে দেখিনি। পুলিশকে আমি দোষারোপ করি না। তাদের হাত-পাও বাঁধা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
*******
হাঙ্গেরির ব্যাপারে বেশি কিছু না বলার কারণ হচ্ছে ঝাপসা ছবি আর মাত্র দুইটা স্পটে ঘুরাঘুরি। তারপরও এক ক্যাসল ডিসট্রিক্ট নিয়ে দশটার ওপর পোস্ট লেখা যাবে। এত বেশি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা একসাথে আর কখনো দেখি নি। কিন্তু আমরা অলস বাহিনী শুধু বাইরে বাইরে দিয়ে ঘুরে গেছি, একটারও ভেতরে ঢুকি নি। কিছু ছবি দিয়ে দিই নিচে। প্রথম চৌদ্দটা ছবি মাত্র ছয়শ মিটার ঘুরেফিরে তোলা। শেষেরটা হিরো'জ স্কয়ার এর, গাড়িতে বসেই তোলা। এই স্থাপনাটি আন্দ্রাসি ওয়ে এর শেষ মাথায়। দানিয়ুবের পূব কিনার থেকে স্কয়ার পর্যন্ত আসতে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য পুরনো জমকালো ভবন আছে। সম্পুর্ণ এলাকাটিকেই ইউ এন হেরিটেজ এরিয়া বলে ঘোষনা করা হয়েছে।
১ - এক প্রস্থ দানিয়ুব, দূরে এলিজাবেথ ব্রিজ
২ - সেইন্ট স্টেফান'স ব্যাসিলিকা
৩ - চেইন ব্রিজ - ১
৪ - ম্যাথিয়াস চার্চের পাশে মনুমেন্ট
৫ - হাঙ্গেরিয়ান ন্যাশনাল গ্যালারীর একাংশ - ১
৬ - হাঙ্গেরিয়ান ন্যাশনাল গ্যালারীর একাংশ - ২
৭ - ন্যাশনাল গ্যালারীর নীচে ব্রোঞ্জ ভাষ্কর্য
৮ - বুদাপেস্ট হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বার, ভেতর থেকে
৯ - বুদাপেস্ট হিস্ট্রি মিউজিয়াম
১০ - ন্যাশনাল লাইব্রেরী
১১ - দানিয়ুবের উত্তর দিকে
১২ - ন্যাশনাল গ্যালারীর বাইরের আঙিনায় ব্রোঞ্জ ভাষ্কর্য
১৩ - চেইন ব্রিজ - ২
১৪ - জেলার্ট হিলে স্টাচু অফ লিবার্টি (হেঁটে উঠতে হয় বলে যাওয়া হয় নি)
১৫ - হিরো'জ স্কয়ার
অসংখ্য ধন্যবাদ। ছবিগুলো অবশ্য মূল লেখায় জুড়ে দিতে পারতেন।
এটা তো স্মৃতিচারণমূলক প্লাস ছবিব্লগ হলো, এবার ছোট ছোট করে প্রত্যেকটা দেশ নিয়ে আলাদা আলাদা করে লিখুন। সেখানে শুধু ঐ দেশের মানুষকে নিয়ে লিখুন। মানুষ আমার খুব আগ্রহের বিষয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমিও পাণ্ডব দার কথাটাই বলতে চাচ্ছিলাম।
***********
চেষ্টা থাকবে সামনে
কিট লেন্সে দেখা যায় ভালোই ছবি আসে!
লেখা ছবি দুটোই ভালো হইছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
বিগ বস, ছবির ব্যাপারে আপনের সান্ত্বনাও অনেক বড় সার্টিফিকেট। লেখার প্রশংসা মাথা পেতে লইলাম
ছবিতে ।
শেষে মন খারাপ করায় দিলেন।
ওরে না! ছবিতে বুড়ো আঙ্গুল পড়ছে !!
সুজনে সুযশ গায় কুরব নাশিয়া
ভ্রমন খুবই মজারু হইছে।
মিলন ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগলো। উনার সুস্হতা কামনা করছি।
--ফ্রুলিংক্স
আজকে উনার ২য় দফা অপারেশন। ডাক্তাররা সন্দেহ করছিলেন ইনফেকশন হতে পারে, তাই এতদিন ফাইনাল কাটাছেঁড়া বন্ধ রেখেছিলেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তাঁরা, দেখা যাক কি সংবাদ পাই।
এই বছর অথবা আগামী বছর আমাদের ইউরোপ বেড়াতে যাবার ইচ্ছে। আপনার লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। যেটা আমি একদমই পছন্দ করিনি সেটা হল কার সীট ছাড়া বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া। এত ঝুঁকি নিয়ে কি যাওয়া ঠিক? আপনিই বলুন? জোরে একটু ব্রেক কষলেই কিন্তু বাচ্চা কোল থেকে পড়ে যেতে পারে। আশাকরি আর কখনো করবেন না, প্লিজ।
আপনার লেখা দেখলেই আমি পড়ি, ভাল লাগে।এবার ছবি আর লেখা ভাল হয়েছে।
দেশে যাবার কথা মনে হলে যে দুশ্চিন্তা মাথায় থাকে তা হল রোড এক্সিডেন্ট।
মিলন সাহেবের জন্য খারাপ লাগছে।কামনা করি উনি ভাল হয়ে উঠুন।
নিশ্চয়ই সামারে আসবেন? দিনগুলো অ-নে-ক বড় থাকে, সময়ের তাড়া না খেয়েই ঘোরাঘুরি করা যায়। শরৎকালটাও বেছে নিতে পারেন, রঙে রঙিন হয়ে থাকে চারদিক (অবশ্য আম্রিকার অনেক রঙিন ছবি দেখেছি, এখানে এত বৈচিত্র্য চোখে পড়ে নি)।
এই বছরে আসলে মনে করে আমাদের একটু দেখা দিয়ে যাবেন কি? আমরা বেশিরভাগ সময় ব্যাপক নিঃসঙ্গতায় ভুগি।
চাইল্ড সীটের ব্যাপারে আমার সচেতনতার মারাত্মক অভাব ছিল, বিপদের কথা জানতাম না। ঢাকায় কিংবা সাউথ আফ্রিকায় কখনো প্রয়োজন হয় নি, তাই একটা বদভ্যাস গড়ে উঠেছিলো। এখন আমাকে কেউ লাখ টাকা সাধলেও আমি চাইল্ড সীট ছাড়া বাচ্চাদের গাড়িতে ওঠাব না।
ঢাকা শহরের কোন গ্যারান্টি নাই, কার যে কি হয়ে যাবে কখন, কেউ বলতে পারে না। সারাক্ষণ চুম্বকের টান অনুভব করি ঢাকায় যাবার, কিন্তু যখন সত্যি সত্যি পৌঁছে যাই, মাথায় একটা সার্বক্ষনিক দুশ্চিন্তা ঘুরতে থাকে। এর থেকে কি আদৌ মুক্তি মিলবে কোন সময়?
ভাল লাগলো ভ্রমণ কাহিনী সেই সাথে ছবিগুলোও। কিন্তু শেষে মিলন ভাইয়ের কথা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আশা করি উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
লেখা ভালো লেগেছে জেনে সুখী বোধ করছি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ সাফি
দারুন লেখা। এক টানে পড়ে ফেললাম, আরও লিখুন আরাফাত ভাই।
ছবিও ভালো লেগেছে। আমার জার্মানি ভ্রমন কাহিনীও বেশ মজার ছিল, আফসুস তেমন কোন ছবি নাই।
মিলন ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা রইল।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ছবি তো গুগলেই পাওয়া যায়, সেটা নিয়ে লোকজন তেমন চিন্তিত নয়। কিন্তু মজার গল্প কয়জনের কাছে থাকে? লিখে ফেলুন ঝটপট।
অনেক দিন ধরেই ভাবছি দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু জায়গা নিয়ে লিখব, হয়ে উঠছে না। ডিটেইলস ভুলে যাবার আগেই নামিয়ে ফেলতে হবে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অনেক ধন্যবাদ নিবিড়
দারুণ সব ছবি আর চমৎকার বর্ণনা। এই নিন
আগুতি খেয়ে খেয়ে নিশ্চয়ই মুখ পঁচে গেছে আপনার? আপনিও কিছু রাখুন, সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা করে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে মাখিয়ে খেলেন
প্রথম ছবিটা দারুণ, লেখা পুরোটা পরে পড়ব'নে
প্রথম ছবিটার প্রশংসার জন্য আপনার একটি বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা হয়েছে। ছবি ভালো/খারাপ বলে নয়, পেছনের স্মৃতিটার জন্য
আপনার ছবি তোলার হাত তো দিব্যি। দু এক জায়গায় দিগন্তরেখা একটু বেঁকে গেছে, যেটা বোধহয় তাড়াহুড়োর ফল। লেখাটা আরেকটু বিস্তৃত হলে আরো ভালো হত।
এমন একটা জঘন্য অপরাধ করে প্রাইভেট কারওয়ালা পার পেয়ে গেল, এটা ভেবে খুবই খারাপ লাগছে। ওনার সুস্থতা কামনা করি।
নির্ঝর অলয়
আমার ধারণা এটা মুদ্রাদোষ
(দাঁত কিড়মিড় করার ইমো)
দারুণ লাগলো আপনার এই ভ্রমণকাহিনী, সেইসাথে ছবিগুলোও। উপরে ষষ্ঠ পান্ডবদার সাথে মন্তব্যের সাথে একমত পোষন করছি। প্রতিটি দেশ নিয়ে আলাদা আলাদা পোস্ট আসলে আরো খুশী হবো।
মিলন ভাইয়ের সম্পূর্ণ আরোগ্য কামনা করছি। গত রোববার দিন হরতালের সময় ভোরে গুলশান - ১ থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে একটা ভেড়া শাবককে রাস্তার উপর নিথর পড়ে থাকতে দেখেছি। দেখেছি পাশে নির্বাক দৃষ্টিতে সন্তানের লাশের দিকে তাকিয়ে থাকা মা ভেড়াটিকে। একটা হিউম্যান হলারের ড্রাইভারের নৃশংসতার স্বাক্ষী হয়ে নিজেকে মনুষ্য জাতির একজন পরিচয় দিতে খুব ঘৃণা হচ্ছিলো।
ফারাসাত
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফারাসাত এই দীর্ঘ লেখাটি পড়ার জন্য।
ভেড়া জায়গায় মানুষ হলেও সম্ভবতঃ চালক একই কাজ করত। ভেবে আতংক বোধ করছি
ভীষণ ভালো লেগেছে। ঝরঝরে বর্ননা আর তরতাজা ছবিসহ দারুণ
হসপিটালে শুয়ে শুয়ে লিখাটা পড়তে বেশ ভালই লাগলো, অনেল ভাল লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে ।
আর যারা আমার জন্য দোয়া ও সুস্থতা কমনা করেছেন তাদের সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ
ও কৃতকগতা ।
নতুন মন্তব্য করুন