পুরাতন দুষ্টচক্র, নতুন দুর্ঘটনা। ধ্বসে গিয়েছে আরও একটি বহুতল ভবন, কেড়ে নিয়েছে শ’য়ে শ’য়ে তাজা প্রাণ। আবারও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে কিছু জানোয়ার, নিজের মুর্খামি আর লোভের জন্য মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে অসহায় শ্রমিকদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার এবং দলের ‘দোষ’ আড়াল করবার হাস্যকর চেষ্টায় যতখানি ব্যস্ত, উদ্ধারকাজে এবং দুর্গতদের চিকিৎসায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ততখানিই অবহেলা। আবারও সাধারণ মানুষ সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অচেনা লোকের প্রাণ বাঁচাতে, আবারও চিত্রপটে অনুপস্থিত সিএসআর ইত্যাদি ধুনফুন করে বেড়ানো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমুহ। আবারও ছাড়া পেয়ে যাবে আরেকটি বীভৎস গণহত্যার জন্যে দায়ী মালিক এবং তার লাঠিয়াল বাহিনী...............
দাঁড়ান!
আবারও ছাড়া পেয়ে যাবে মানে? কত টাকা সোহেল রানা নামের বিষ্ঠাখেকো পশুটার? দশ কোটি? বিশ কোটি? চল্লিশ কোটি? একশো কোটি? পাঁচশ কোটি?
আমাদের অভাগা দেশটায় টাকার কাছে সবকিছু বিক্রি হয়। দুঃখের বিষয়, আমরাই বিক্রির ঠিকাদারি তুলে দিয়েছি কিছু দুর্নীতিবাজ লোকের কাছে, মহা ধুমধামের সাথে নির্বাচন করে। সেই বাজারে বাহিনীর সবচেয়ে সস্তা সদস্যটি হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এই পদটি বিক্রি হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্তে। আমরা জানি কেন সোহেল রানাকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা জানি কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘গেট নাড়ানো’ তত্ত্বের জন্ম দিচ্ছেন, যেমন ‘নাশকতা’ তত্ত্ব দিয়েছিলেন তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ডের ঘটনায়। আমরা জানি কিভাবে ছাত্র সংগঠনের নামের আড়ালে কিছু দানব প্রচলিত আইনকে পাশ কাটিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন গড়ে তোলে। আমরা জানি কিসের জোরে তারা স্বেচ্ছাচারী, কোন ক্ষমতায় লাঠি দেখিয়ে তারা হাজার হাজার মানুষকে ভগ্নপ্রায় ভবনে তলে ফেলার দুঃসাহস দেখায়। আমরা শুধু জানি না একজোট হয়ে রক্তখেকো ঘটোৎকোচগুলোর ঘাড় মটকে দিতে।
এই সত্য অপরাধীরাও জানে। তারা নিশ্চিত, নিজের অবৈধ রোজগারের কিছুটা ভাগ কিছু নেতাকে দিতে পারলে কোন কিছুতেই কেউ তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। তাদের লোভের বলি হওয়া লাশের সংখ্যা নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। তারা জানে, লাশের সংখ্যা কম হলে অল্পেই ক্ষতিপূরণের দায় শেষ করা যাবে। বেশি হলে ‘মোক্তার’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আছেই, ক্ষতিপূরণের টাকা যাতে না দিতে হয় সেই ব্যবস্থা সেই করে ফেলবে, কিছু কমিশনের বিনিময়ে।
আমরা এই ব্যবস্থার অবসান চাই। আমরা চাই, মাসিক তিন হাজার টাকার চুক্তিতে পাওয়া শ্রমিকের জীবনের মর্যাদা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। আমরা চাই, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে অকালে মৃত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বিশ হাজার টাকা নয়, ন্যুনতম বিশ লাখ টাকা হবে। আহত এবং অঙ্গহানি হওয়া শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ হবে ত্রিশ লাখ টাকা, তাদের চিকিৎসা এবং পরবর্তী প্রতিকূল জীবনধারণকে বিবেচনায় নিয়ে। অঙ্গহানি না হওয়া সকল আহত শ্রমিকের সমস্ত চিকিৎসার ভার কোম্পানীকে নিতে হবে, চিকিৎসাকালীন সময়ে পূর্ণ বেতন ভাতা পরিশোধ করতে কোম্পানী বাধ্য থাকবে। কোন কোম্পানী অন্যথা করলে দ্রুত বিচার আইনে এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে আদালতের সম্মুখীন করতে হবে।
মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আগে মালিকপক্ষ যেন মানুষের সংখ্যা আমলে নেয়, তার জন্য চাই শক্ত আইন এবং কঠোর প্রয়োগ। অনুগ্রহ আপনার পরিচিত অপরিচিত সব মহলে এই ধরণের আইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা করুন। জনমত তৈরীর চেষ্টা করুন, সরকারে ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। জনতাই শক্তি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি সোহেল রানা সহ রানা প্লাজার পাঁচটি গার্মেন্টসের মালিকদেরকে তাদের কর্মচারীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হোক। নিশ্চিত হোক সুবিচার।
মন্তব্য
আপনার কি মনে হয় সোহেল রানা এখনো দেশে আছে?????
সুবোধ অবোধ
পালালে বড়জোর ইন্ডিয়া যাবে। আমাদের সরকারের হাত ঐদিকে বেশ লম্বা। আন্তরিকতা আছে কিনা, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ
সরকারী সহযোগীতা ছাড়া পালাবে কিভাবে?????
আপনার কি মনে হয় সরকারের কারো সহযোগীতা ছাড়া পালানো সম্ভব???
সুবোধ অবোধ
বিডি নিউজের এই খবর অনুযায়ী সাভারের এমপি মুরাদ জং'এরই জানার কথা রানার সন্ধান।
অজ্ঞাতবাস
অবশেষে কিঞ্চিৎ সুখবর
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-28/news/348410
রাষ্ট্র চাইলে সবই করতে পারে কিন্তু করে না । তা না হলে কি আমরা বাঙালি । সেই দিন পুলিশ তথা উদ্ধারকর্মীদের উচিত ছিল রানাকে উদ্ধার করে সাথে সাথে হাসপাতালে না পাঠিয়ে হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া । এখন চিরুনি অভিযান আর সার্ফ-এক্সেল অভিযান যাই চালানো হোক কোন লাভ নাই। তারও তো জীবনের মায়া আছে নাকি ???
,,,,,,,,,,,,,,,,,দার্শনিক আমি
এবার বিচার করতে না পারলে সরকার নিজেই বিচারের সম্মুখিন হবে।।। বোজবাজির দিন শেষ।।।।
বিচার করবার মত শক্তি এখনও জনতা অর্জন করে উঠতে পারে নি। দল বদল হয়, কিন্তু সরকারী দুর্নীতিগুলো টিকে থাকে
প্রশ্নটা বোধহয় হওয়া উচিত “রাষ্ট্র কি এই হত্যাকান্ডের যথাযথ বিচার করবে?”
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
পারার প্রশ্নটাও জড়িত আপা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং আমলারা এত বেশি ডাইমেনশনে দুষ্টচক্রগুলোর সাথে জড়িত, আমার ধারণা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীরও ক্ষমতা নেই এই জাল ছেঁড়বার। সাভারের সোহেল রানা একটা উদাহরণ মাত্র, সারা দেশে এমন হাজার হাজার সোহেল রানা ছড়িয়ে আছে
ইয়াসির, আপনি আর আমি আসলে একই কথা বলছি। রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন চাইলে পারে না, এমন কিছু নেই। যে দুষ্টচক্রের কথা বলছেন, সেই “দুষ্ট” চক্রটি কাদের জন্য, কারা তার নির্মাতা, কারা তার ফলভোগকারী?
ন্যায় বিচার করার সব রকম ক্ষমতা ও অধিকার আছে এদের। কিন্তু ওই যে রশুনের কোয়াগুলো আলাদা, কিন্তু মূল এক জায়গায়। কাজেই, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন আর সব রাবনের এক রা। দরিদ্র, খেটে খাওয়া, ক্ষমতাহীন আম জনতার বিচারের দাবী নিভৃতে কেঁদে মরে।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সোহেল রানাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কোন লাভ নাই।
-- রামগরুড়।
ঠিক তাই। আমার ফেবু স্ট্যাটাসটা কোট করছি
সোহেল রানার সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে আমি। এই বিষ্ঠাখোরটা মারা গেলে কারও দুই পয়সার উপকার হবে না। ওর শাস্তি হওয়া উচিৎ ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, এক মাসের মধ্যে অনাদায়ে কংক্রীটের স্ল্যাব চাপা দিয়ে মৃত্যু
আমি অবশ্য অন্য অর্থে বলেছিলাম, ব্যপারটা একদম এরশাদ শিকদারের ঘটনার মত। সরকার ঘটা করে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি দিল ঠিকই কিন্তু যারা এইসব ফ্র্যঙ্কেনস্টেইন তৈরির কারিগর, তারা সারজীবন ধরা-ছোঁওয়ার বাহিরেই থেকে গেল।
-- রামগরুড়
নতুন মন্তব্য করুন