গোল্লা হলো তীর্থস্থান, অশেষ উপকারী

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি
লিখেছেন ইয়াসির আরাফাত [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৭/১১/২০১৩ - ৫:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত উইকএন্ডে খুব ঘুরে বেড়িয়েছি, তার আগের সপ্তাহে বেশ কিছু কাজ জমিয়ে রেখেছিলাম। ফলে সোমবারে এসে দশ ঘণ্টা খেটে মরতে হলো। এই তিনদিন সংবাদপত্র দেখা হয় নি একেবারেই। আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধো জাগরণে ফেসবুকে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম। খবরে প্রকাশ, শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল পদত্যাগ করেছেন।

খবরের বিস্তারিত পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে, খুব বেশিদিন হয় নি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ওপর স্যারের লেখা একটা চমৎকার আর্টিকেল পড়ছিলাম, ভেবেছিলাম দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা মৌলিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। অচিরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পর ছাত্র ছাত্রীদেরকে আর জায়গায় জায়গায় দৌড়াতে হবে না। মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও খুব দ্রুত এটার জনপ্রিয়তা বাড়বে, তথাকথিত ‘এলিট’ প্রতিষ্ঠানগুলোও এক কাতারে এসে সামিল হয়ে যাবে শিগগির। অসংখ্যবার পড়া দীপু নাম্বার টু এর একটি দৃশ্যও চকিতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পিটি স্যারকে শিক্ষা দেবার জন্য ক্লাসের সবকটি ছেলে মিলিয়ে মিশিয়ে পা ফেলে দৌড়ুচ্ছে, দুষ্টু তারিক এগিয়ে থাকলেও অল্প পরেই নিজের ডানে বামে তাকিয়ে সাবধানে এসে দলের সাথে মিশে যায়।

সেই বিপুল সম্ভাবনা শুরুতেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কে ভাবতে পেরেছিলো? নিজের আকাশস্পর্শী ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে স্বদেশে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে শূন্য থেকে গড়ে তোলার ভালোই পুরষ্কার পেলেন বলতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা নির্বোধ, এটা প্রমাণ করা মনে হয় খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো কিছু মানুষের।

যারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করেছেন, তাদের যুক্তি (যদি সে জিনিসের আদৌ অস্তিত্ব থাকে) শুনতে পেলাম না। আমার সন্দেহবাদী মন কিছু কিছু অনুমান করতে চাইছে

১। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে ফর্ম বিক্রির সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যার অনুপাতে কমে যাবে।

২। ঘুষ নিয়ে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থীকে ধুনফুন কোটায় বা বিনা কোটায় অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে

৩। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ওপরে তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ হারাবেন

৪।পরীক্ষার উছিলায় প্রতিবছর জমজমাট হোটেল বা পর্যটন ব্যবসায় বিপর্যয় ঘটবে। এতে আখেরে দলীয় চাঁদা সংগ্রহে টান পড়তে পারে

৫। জাফর ইকবালকে একটা শিক্ষা দেয়া যাবে। বুঝিয়ে দেয়া যাবে, কাদের কথায় দেশ চলে।

মুশকিল হচ্ছে, একটি সম্ভাবনাও প্রকাশ্যে বলার যোগ্য নয়, পাবলিক নয়তো সাংবাদিকেরা আগাপাছতলা ধুয়ে দেবে। কাজেই আন্দোলন নামের উদ্ভট এক আচ্ছাদনের তলায় সুশীল কুশীল নির্বিশেষে জড়ো হলো, মূল অভিপ্রায় যাতে প্রকাশ না হয়ে যায় সেজন্য ৫০ শতাংশ সিলেটী কোটার দাবী ঢুকিয়ে দেয়া হলো বলে আমার ধারণা।

আমাদের স্বনামধন্য অর্থমন্ত্রীর ব্যাপারটা বুঝি, কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কেমন করে এর মধ্যে যুক্ত হলেন জানি না। বেশি জানার চেষ্টা করাও ঠিক না, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে। আবারও অনুমান করি, বৃহত্তর জামাতের দুই শাখা বিম্পি জামাত এবং উপশাখা ছাত্রশিবির ডঃ ইকবালকে আওয়ামী দালাল বলে অপপ্রচার চালালেও তিনি যে আসলে কারো অন্ধ অনুগত নন, সেটা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতাদের খুব ভালো জানা থাকার কথা। সুযোগ পেয়ে তাই তারা দুই এক হাত নিলে অবাক হবার কিছু নেই। তবে বিম্পি, আম্লীগ, জামাত, তেঁতুলদল, বাম, চিনাবামের এই বিরল ঐক্য মনে কেবল বিস্ময়ই জাগায় না, ভীতিরও উদ্রেক করে।

খারাপ মানুষদের একটা ব্যাপার খুব লক্ষণীয়। তাদের নিজেদের কোন নৈতিকতা বা মেরুদণ্ড না থাকলেও একজন শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা মানুষ কিসে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, এটা তারা খুব ভালো বোঝে। ভাংচুর, হত্যা, গুম ইত্যাদি হুমকিতে কোনভাবেই জাফর ইকবালকে অতীতে টলানো যায় নি, কিন্তু তাঁর কাজে বাধা দিলে তিনি একরোখা হয়ে উঠবেন এটা খুব সহজেই তারা অনুমান করেছে। অপমানিত হয়ে পদত্যাগ করতে পারেন, এই সম্ভাবনাও নিশ্চয়ই তাদের মাথায় ছিলো।

যা হোক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জনগণের কথায় চলে, এটা অন্ততঃ একটা সুখবর। সিলেট অঞ্চলের জনগণ যা চেয়েছিলেন, তা তারা পেয়েছেন। উল্টো গাধায় চড়ে পেছন দিকে যেতে মজা পাবার লোক দুনিয়ার সবজায়গাতেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু আমার সোনার দেশে সে সংখ্যাটা এতো বেশি কেন, সেই প্রশ্নটা ইদানীং আমাকে জ্বালায় না।

প্রিয় স্যার, অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়েও আপনি পারলেন না, কাদা এতোই বেশি, তার মধ্যে আবার আছে চোরা কাদা, আপনি যে এতোদূর এসেছেন এটাই এক বিস্ময়। এত কিছুর পরও আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখেন, ম্যাডাম কাজ করতে চান এই দেশেরই নির্যাতিত নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে। আপনারা কি ধাতুতে গড়া?


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

১। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে ফর্ম বিক্রির সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যার অনুপাতে কমে যাবে।

কীভাবে? পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে যে কোনো লোকেশনে বসে দেওয়া যাবে, কিন্তু তার মানে তো এটা না যে ফর্মও একটাই কিনতে হবে। নাকি?

২। ঘুষ নিয়ে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থীকে ধুনফুন কোটায় বা বিনা কোটায় অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে

মনে হয় না। বেহুলার বাসর দ্রষ্টব্য।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

কর্তৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমি জানি না। আমার মতে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার সবচেয়ে যৌক্তিক এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি হওয়া উচিৎ এক ফর্ম, এক পরীক্ষা, এক মেধাতলিকা, অতঃপর আসন বিতরন।

যদি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনটি ফর্ম কিনতে হয় তাহলে আমি বলব, ব্যাপারটা দুঃখজনক।

বাংলাদেশে কিছুই অসম্ভব নয়। তাই বলেছি প্রায় অসম্ভব। সমন্বিত পরীক্ষায় কোন একটি কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ থাআকবে বিধায় স্থানীয় পর্যায়ে অনেক কিছুই করা বেশ কঠিন হওয়ার কথা। আর সাংবাদিকেরা তো আছেই চাল্লু

স্পর্শ এর ছবি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জনগণের কথায় চলে, এটা অন্ততঃ একটা সুখবর। সিলেট অঞ্চলের জনগণ যা চেয়েছিলেন, তা তারা পেয়েছেন। উল্টো গাধায় চড়ে পেছন দিকে যেতে মজা পাবার লোক দুনিয়ার সবজায়গাতেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু আমার সোনার দেশে সে সংখ্যাটা এতো বেশি কেন, সেই প্রশ্নটা ইদানীং আমাকে জ্বালায় না।

মন খারাপ


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

সত্যিই ভাবায় না। হাসিব ভাইয়ের রাজধানী নির্ধারনের বিষয়ে একমত

মেঘলা মানুষ এর ছবি

স্বাভাবিক কারণে শাবিপ্রবিতে আবেদন বেশি পড়ে, যশোরের চেয়ে।
"ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কেবল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ৪৩ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী। আর যশোরের জন্য ৫ হাজার ৮২৫ জন শিক্ষার্থী।আর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির আবেদন করেছে- এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬১৩ জন। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৮১৮ জন যশোর কেন্দ্রে বসে শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান। আর সিলেট কেন্দ্রে বসে যশোরের জন্য পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ৩ হাজার ২০৩ জন শিক্ষার্থী। "

আমি যোগ করি:
৬। যশোরে বসে এত লোক কেন সিলেটের পরীক্ষা দিয়ে দেবে?

যদি সংখ্যাটা উল্টো হত, তাহলেও কি সিলেটবাসি এই অভিমান করে বসতেন?
সিলেট মেডিক্যালে তো সিলেটে না এসেও পরীক্ষা দেয়া যায় (যতদূর জানি মেডিক্যাল পরীক্ষা একসাথেই হয়)।
সেটা নিয়ে সিলেটিদের কোন মাথাব্যথা নেই, কারণ ওটা জাফর ‌স্যার করেন নাই।

চলুন নিজেদের পিঠ চাপড়ে দিই এই সাফল্যে (!)

স্পর্শ এর ছবি

শাহজালালে মোট সিট কতগুলো? আর যশোরে সিট কতগুলো কেউ জানেন?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শাবিপ্রবি তে ১৪০০, যবিপ্রবি তে ৬১০, বিজ্ঞপ্তি এখানে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি
ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

একজ্যাক্টলি। জাফর স্যার কিছু একটা করেছেন এটাই এখানে মূল ইস্যু।

ঘটে বিন্দুমাত্র ঘিলু থাকলে যে কেউ বুঝবে, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা হতে পারে একটি যুগান্তকারী প্রক্রিয়া। এই ক্রেডিট তো জাফর ইকবালের কাছে যেতে পারে না। কাজেই জাফর হঠাও ছান্দোলন (!) শুরু হয়ে গেল

এক লহমা এর ছবি

৪ আর ৫ নং-ই কি আসল সমস‌্যা?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

আমার ধারণা ৫ নম্বর

অতিথি লেখক এর ছবি

অক্ষম রাগে নিজের উপরই বিরক্ত লাগছে, কেন যে আমরা জাতি হিসেবে এত বুদ্ধিমান মন খারাপ
ইসরাত

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

সিলেটে কয়লার প্রাচুর্য, আয়োডিনের কিঞ্চিৎ অভাব। প্রকৃতি সাম্য পছন্দ করে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ১, ২ নং পয়েন্টের সাথে একমত হতে পারছিনা।
জাফর ইকবালকে একটা শিক্ষা দেওয়াটাই এখানে মূল বিষয় হিসাবে কাজ করেছে। আমার ধারনা পুরোনো শত্রু বিএনপি জামাতের সাথে প্রথম আলুর ঘনিষ্ঠ আওয়ামি লোকজন এক হওয়াতে স্যারের বিরদ্ধে সর্বদলীয় জোট করতে পেরেছেন তারা । প্রথম আলুতে স্যার এখন লেখেন না, সেটা মতি চোরার জন্যে যথেষ্ট অপমানের। সেই অপমানের একটা দেনা তোলার অপপ্রয়াস মনে হয়েছে আমার কাছে। (এটা শুধু আমার ধারনা, স্মারক লিপিতে সই করা আওয়ামি পন্থি লোকজন প্রথম আলুর বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই এমনটা মনে হয়েছে। )

মাসুদ সজীব

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ধন্যবাদ মাসুদ সজীব।

এখানে কোন ফ্যাক্ট নেই। এগুলো শুধুই হতাশ মনের বাই প্রোডাক্ট। ওপরে এক লহমার মন্তব্যে আমার প্রতিমন্তব্য দেখুন

ওয়াইফাই ক্যানসার এর ছবি

খুবই ইন্টারেস্টিং পরিস্থিতি। জাফর স্যারের অনেক মোটিভেশান। এবং ধৈর্য। আশা করি শেষ পর্যন্ত সমন্বিত পরীক্ষাই হবে আর ম্যাডাম এবং স্যার আবার শাহজালালে ফেরত যাবেন।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

তাঁরা ফেরত এসেছেন হাততালি

স্যাম এর ছবি

চলুক এবং সমন্বিত পরীক্ষাই হবে, তবে রাতের বেলায় জামত শিবির যথারীতি কক্টেল ফাটিয়েছে, গুলিও হয়েছে

হাসিব এর ছবি

আপনার ৫টা কারণ কি এতোগুলো মালটিডাইমেনশনাল পক্ষকে একত্র করতে পারবে?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

শেষেরটার একটা বড় শক্তি আছে, কিন্তু তারপরও সব মিলিয়ে পাঁচটা যথেষ্ট নয়।
আসল কারন ভুট, সেটা এখন পরিষ্কার।

কথা হচ্ছে, বেকুবগুলো জানে না এতে যদিও বা আপনার বলা রাজধানীতে এক দুই ভুট বাড়ে, সারা দেশে আম্লীগের সমর্থনে চ্যাড়াবেড়া লেগে যাবে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।