আটপৌরে ঘোরাঘুরি ৪ – স্বপ্নরাজ্যে তিন দিন

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি
লিখেছেন ইয়াসির আরাফাত [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১০/১০/২০১৪ - ৫:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জায়গাটিতে জাদু দেখানো হয় না।

কিন্তু সবকিছুই যেন তৈরী হয়েছে কোন আশ্চর্য জাদুকরের ছোঁয়ায়। সেখানে আছে এক মায়াপর্বত, কিছু মায়াহ্রদ আর এক বিশাল মায়াপ্রাসাদ। সেখানে বছরের বারো মাসেই উৎসব, প্রতিদিন। প্রতিরাতেই প্রাসাদে জমে ওঠে আলো ঝলমলে রঙের মেলা, রূপকথার সব চরিত্র স্বপ্নের অস্পষ্ট দেয়াল ভেঙে জ্যান্ত হয়ে ওঠে চোখের সামনে।

নগরের নাম ডিজনীল্যান্ড, জাদুকরের নাম ওয়াল্ট ডিজনী। স্বপ্নকে যিনি হাতের মুঠোয় ধরে এনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন জনে জনে।

ডিজনীল্যান্ডের কথা শুধু শুনেছি, সেটা কি জিনিস কোন ধারণাই ছিলো না। সত্যি বলতে কি আটপৌরে জীবনযাপনের বাইরে বিস্তীর্ণ পৃথিবীটা আমার কাছে অনেকটাই অচেনা, অজানা। জগতে কত ধুন্দুমার কান্ড ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, জীবনের ভারে তার খোঁজ রাখবার সময় পাওয়া মুশকিল।

আমার বাসা থেকে কয়েক ঘন্টার দূরত্বে ঐতিহাসিক প্যারিস শহর, সেটিকে দেখতে যাবার ফুরসৎ যখন বের হলো, ঠিক করলাম যাচ্ছি যখন একটু সময় হাতে নিয়ে যাই। দিন পাঁচেক থেকে রয়েসয়ে ঘুরে আসি। বাঙালি মধ্যবিত্তের অবকাশযাপন প্রায় কখনোই আনন্দের হয় না, অল্প সময়ে বেশী জায়গা ঘুরে পয়সা উসুলের চেষ্টা থাকে সদাই। এবার ব্যতিক্রম হোক। প্রাচীণ দালানকোঠা আর জাদুঘর বাচ্চারা পাঁচ দিন একটানা সহ্য করবে না, কাজেই তাদের জন্য সপ্তাহমধ্যে একদিন ডিজনীল্যান্ডে ঘোরা বরাদ্দ থাকলো। একটা প্রমোশন যাচ্ছিলো, কম পয়সায় একদিনের টিকেট কেটে রাখলাম মাসখানেক আগে। জাদুঘর এবং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের টিকেট জায়গামত গিয়ে কাটব। চার রাতের হোটেল বুকিং দিয়ে ছুটিফুটি নিয়ে যাত্রার জন্য যখন শতভাগ প্রস্তুত, বসন্ত ঋতু বেরসিকের মত বাচ্চাদের মাখিয়ে দিয়ে গেলো ফ্লু’র জীবাণু। দুজনেই অসুস্থ, স্বাভাবিক উপসর্গের পাশাপাশি রয়েছে ক্রমাগত বমন, যাবার ঠিক আগের দিন বাধ্য হলাম যাত্রা স্থগিত করতে। নিয়মমাফিক একরাতের হোটেল খরচ গচ্চা। ডিজনীল্যান্ডের টিকেটটা ছয় মাস মেয়াদী, সেটা তুলে রাখা হলো উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়।

দিন যায়, আমরা সময় বের করার চেষ্টা করি, ব্যাটে বলে হয় না। মাঝখানে দেড় মাস দেশে থেকে এলাম। ফিরে এসেই আবার ছুটি চাওয়া ভালো দেখায় না, কিন্তু মনখারাপ কমাতে আর কোন বিকল্প মাথায় এলো না। টিকেটের ছয়মাস শেষ হয়ে এলো বলে, ছুটি মঞ্জুরের দরখাস্ত জমা দিলাম। বড়কর্তা মৃদু আপত্তি সহকারে সম্মতি দিলে সোৎসাহে বুকিংফুকিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া গেল।

বিধি বাম। মাটি নিয়ে খেলতে গিয়ে আমার পুত্রের আঙ্গুলে ইনফেকশন হয়ে গেল । মাত্র দশ দিনে এত দ্রুত ইনফেকশন ছড়িয়ে গেল, অ্যান্টিবায়োটিক বাদ দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে সার্জারি করাতে হলো। ক্ষত সারতে ছয় সপ্তাহ, সম্পূর্ণ আরোগ্য হতে আঠারো মাস। এই ভয়ংকর অবস্থায় কোথাও যাওয়া অসম্ভব।

ডাক্তার সাহেবের অবশ্য কিছুদিন পরেই অভয় দিলেন। সার্জারি সফল, ইনফেকশন পুরোপুরি দূর হয়েছে, আমরা চাইলে বেড়াতে যেতে পারি।

ইতিমধ্যে ছয়মাস পেরিয়ে গেছে, কেটে রাখা টিকেট বাতিল। নতুন পরিকল্পনা করা হলো। নিজেদের মনোরঞ্জনের চাইতে পুত্রের আনন্দ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিজনীল্যান্ডের জন্য তিন দিন বরাদ্দ করা হলো, প্যারিসের জন্য এক। আর যাতায়াতে একদিন। বিধাতার নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পথে।

গাড়ি করে প্যারিস যাবার বুদ্ধিটা আমার। টিজিভির হাই স্পীড ট্রেনে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় প্যারিস পোঁছে যাওয়া যায়, কিন্তু প্যারিস থেকে ট্রেন বদলে আবার ডিজনীল্যান্ড যেতে আরও ঘন্টাখানেক। তার চেয়ে পাঁচ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ড্রাইভে নিজেদের মত করে গেলে বেশ হয়, এই ছিলো যুক্তি। গুগল ম্যাপস বলছে আমাদের পশ্চিমে যেতে হবে, মহানন্দে সেদিকে রওনা দিলাম। এই পথে যেতে জিপিএস এরও সায় আছে দেখা গেলো, কাজেই আপত্তির কিছু নেই। পুরো ব্যাপারটা যে বুমেরাং হয়ে যাবে, কে জানত?

সুইস সীমান্ত পার হতে ত্রিশ মিনিট, ঢুকে গেলাম ফ্রান্সে। সরু রাস্তা, গাড়িঘোড়া তেমন নেই, তবে প্রচুর সিগন্যাল আছে, মাঝে মাঝে ইয়া বড় ট্রাকের পেছনে পড়ে যাবার দুর্গতি আছে, সবচেয়ে বেশি আছে পথের দুইপাশে অপূর্ব সব জায়গায় থেমে পড়বার হাতছানি। ফ্রান্স একক বিস্ময়কর দেশ। সুইজারল্যান্ডে ঢুকলে আপনি খুব দ্রুত মানুষের হাতের ছোঁয়া অনুভব করবেন চারিদিকে, ঝকঝকে রাস্তা, দুইপাশে ফুলের বিছানা, ঘনসবুজ মাঠ, বাসভবনগুলো থেকে ক্রমাগত ফুলজ উদ্ভিদের উঁকি, গোছানো বন আর পরিষ্কার হ্রদ। এমনকি পাহাড়ের গায়ের বরফহীন জায়গাগুলো পর্যন্ত পরিচর্যা করা হয় নিয়মিত। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ফ্রান্স কৃত্রিমতার ছাপ থেকে অনেকটাই মুক্ত। খোলা জায়গায় বাধাহীনভাবে বেড়ে উঠেছে গাছপালা আর ঘাসের মাঠ, কিন্তু তা অপরিকল্পিত লাগে না। দেখে মনে হয় কোন শিল্পী ক্যানভাসে জীবন্ত ছবি এঁকেছিলেন। প্রাণ পেয়ে সেই ছবি নিজের মত গড়ে উঠেছে সত্যি, কিন্তু শিল্পীর স্বপ্নের বাইরে পা ফেলতে পারে নি।

থামব না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েও অন্ততঃ চার জায়গায় জমে গেলাম। এর মধ্যে একটি জায়গা ভয়ংকর সুন্দর। অনেকক্ষণ ধরেই আমাদের সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলো সরু এক পাহাড়ী ঝর্ণা। হঠাৎ একজায়গায় বাঁক নিতেই শোঁ শোঁ শব্দ পেয়ে গাড়ী থামালাম। ঘন গাছপালায় দৃষ্টিসীমা সীমিত, পথ ছেড়ে একটু নেমে দেখি এলাহী কারবার। মোটামুটি মাঝারী আকৃতির একটা ব্যারাজ, সেটি উপচে রীতিমত গর্জন করে পানি পড়ছে। এখানেই শেষ নয়, পথ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলে দেখতে পেলাম ঘন সবুজে ঘেরা টিলার গা ফেটে শক্তিশালী এক জলধারা বের হয়েছে, দৃশ্যটির বন্যতা মনকে মুহুর্তে আচ্ছন্ন করে ফেলে। একই জায়গায় অল্প ব্যবধানে দু’দুটো জলপ্রপাত, একটা কৃত্রিম, একটা প্রাকৃতিক!

গাঁয়ের সরু পথ পেরিয়ে একসময় আমাদের ফ্রিওয়েতে ওঠার কথা। জিপিএস বাবাজী বেগড়বাই শুরু করলেন। তিনি যেদিক দিয়ে নিতে চান, সেদিকে নো এন্ট্রি। সাইনবোর্ডগুলোও আচ্ছা বজ্জাত। একটাতেও প্যারিসের কথা লেখা নেই। ফ্রিওয়েতে ভুল দিকে উঠে পড়লে অনেকখানি দূর ঘুরে আসতে হতে পারে, তাই নিজেরা মাতবরি করা থেকে বিরত থাকলাম। ফলাফল, আবার গাঁয়ের পথ ধরে অনিশ্চিতভাবে যাত্রা। খারাপ লাগছিলো সেকথা বলা যাবে না মোটেই। ছায়াঢাকা সবুজে ঘেরা পথ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা, খোলা সোজা রাস্তায় ককেশিয়ান এলম গাছের সারি, শরতের শেষ দিকে গাঢ় হয়ে ওঠা রঙিন পাতা, অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর যাত্রা। সমস্যা একটাই, দেরী হয়ে যাচ্ছে। গড়ে ঘন্টায় পঞ্চাশ কিলোমিটার এগোচ্ছি, ফ্রিওয়ের স্পীড লিমিট একশো ত্রিশ (সর্বনিম্ন, কারণ সীমা মেনে কম লোকেই চালায়)।

একসময় জিপিএস এর মাথা ঠাণ্ডা হলে সে আমাদের ফ্রিওয়েতে উঠিয়ে দেয়। দুপুর দেড়টা বাজে, যেখানে এতক্ষণে আমাদের ডিজনীল্যান্ডে থাকার কথা, সেখানে পথ বাকী দেখাচ্ছে তিনশো একচল্লিশ কিলোমিটার। সর্বনাশ, পাঁচ ঘন্টায় মাত্র দুইশো কিলোমিটার এসেছি?

বাচ্চারা ইতিমধ্যে ক্লান্ত তো বটেই, বড়রাও কিঞ্চিৎ বিধ্বস্ত। কিছুটা গতিস্থিতি জড়তায় আর বেশিটা ক্ষুধায়। হারিয়ে যাওয়া ফ্রিওয়ে পেয়ে দাবিয়ে একসেলারেটর ধরার বদলে ব্রেক কষে একটা পেট্রোলপাম্প কাম রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলাম। পাক্কা একঘণ্টা সেখানেই শেষ।

খেয়েদেয়ে পেট মন দুইই সতেজ, এখন যাওয়া চলে। ফ্রেঞ্চরা বেশ ভদ্রলোক, রাস্তায় যেখানে স্পীড ক্যামেরার সাইনবোর্ড তার পরেই ক্যামেরা, কাজেই সেটা পার হয়ে গেলে নির্ভয়ে কিছুটা গতি বাড়ানো যায়। মাখনের মত রাস্তা, কাজেই আমার অজান্তে (!) কাঁটা একশো সত্তর ছুঁই ছুঁই করবে এতে আর আশ্চর্য কি, মনেই হয় না ষাটের বেশি গতিতে যাচ্ছি।

বলা নেই কওয়া নেই, পনেরো মিনিটের নোটিশে সমস্ত আকাশ কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এলো। গতি একশো বিশে নামিয়ে আনতে বাধ্য হলাম, প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থা চলল গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন্ত। সেখানেও স্বস্তি নেই, জিপিএস রাস্তা চেনে না। হোটেলটা মনে হয় বেশি পুরনো নয়। ডিজনীল্যান্ড কর্তৃপক্ষ নিখুঁত একটা বৃত্তাকার রাস্তা বানিয়েছেন তাদের অধিকৃত এলাকার মধ্যে, সেটাতে গোলগোল দুই চক্কর খেলাম বেহুদাই। মাননীয় দিকনির্দেশককে গলা চেপে চুপ করিয়ে নিজের চোখ দুটোকে কাজে লাগালাম, সাইনবোর্ড দেখে পথ খুঁজে পাবার আশায়। কপাল ভালো, একসময় পেয়েও গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ হোটেলের কারপার্কে নোঙর ফেললাম।

আমাদের বুকিং দুই রাত তিনদিনের, কাগজে পরিষ্কার লেখা আছে অ্যারাইভাল ১৬ই অক্টোবর, ডিপারচার ১৮ই অক্টোবর। তার মানে আজকের দিনটা গচ্চা গেলো। প্যারিস শহরে ভালোমত ঘুরে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে, মনে মনে ভাবলাম।

রিসেপশনিষ্ট ইংরেজীতে পুরোপুরি দক্ষ নয়, কাজেই তার কথার মর্মোদ্ধার করতে দুই তিন বার লেগে গেলো। সে বলতে চাইছে, কর্তৃপক্ষ তিন দিনের টিকেট দিয়ে থাকেন, তা সে পরবর্তী সাত দিনের যে কোন তিন দিন হতে পারে। তবে হোটেলের জন্য সেরকম কোন সুবিধা নেই, দুই রাত থেকেই আমাদের ভাগতে হবে। তথাস্তু এবং ইয়াহু! একদিন প্যারিস থেকে আসা কোন ব্যাপার নয়, মোটে তো সাতচল্লিশ কিলোমিটার।

পুরো একদিন রাস্তায় গেছে, তাই প্যারিসের জন্য বরাদ্দ সময়ে টান পড়বে। ভাবলাম রাতের আইফেল টাওয়ার দেখে আসি আজকেই। ভাবতে দেরি, কাজে নয়। কোনমতে দুটো মুখে দিয়ে আবার গাড়ি নিয়ে দৌড়।

আমাদের কোন কিছু দেখে মুগ্ধ হওয়া লাগছে না, আমরা আসার আগে থেকেই মোহিত হয়ে এসেছি, যাই দেখি ভালো লাগছে। তারপরও রাতের আইফেল টাওয়ার দেখে মাত্রাছাড়া মুগ্ধতায় আক্রান্ত হলাম। ফ্রান্সের চিরশত্রুও যদি এখানে আসে, প্রশংসা না করে পারবে না। পুরো টাওয়ারটি বিশ হাজার বাতির আলোয় ঝলমল করছে, একেবারে চূড়ায় লাগানো আছে একটি দুমুখো সার্চলাইট, তার ওপর রেডিও অ্যান্টেনা। নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বাভাবিক বাতির পাশাপাশি জ্বলে উঠছে বিশেষ ঝিকিমিকি বাতি, ফলে মনে হতে পারে হঠাৎ আলোর বিস্ফোরণ হয়েছে সমস্ত গা জুড়ে। সব মিলিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য। ভাবা যায়, এই অনন্য স্থাপনা নির্মানের তীব্র বিরোধিতা করে ফ্রান্সের বাঘা বাঘা শিল্পী, চিত্রকর, সমালোচকেরা দিনের পর দিন বাধা দিয়ে গেছেন?


ছবি ১ - রাতের আইফেল টাওয়ার

তীব্র শীতে হাত পা জমে যাবার জোগাড়, বেশিক্ষণ থাকা গেলো না। সাড়ে দশটার দিকে ফিরতি পথ ধরলাম। শহরের ভেতর দিয়ে একটা টানেল, সোজা চলে গেছে ফ্রিওয়েতে, সংস্কার কাজের জন্য সেটা বন্ধ। শহর বহির্মুখী সমস্ত গাড়ি তাই ধীরে ধীরে সাইড রোড দিয়ে এগিয়ে চলেছে পরবর্তী এন্ট্রির আশায়। সেই ধীরগতি কমতে কমতে একসময় মিনিটে দশ মিটারে নেমে গেল। মাঝে মাঝে একেবারে থেমে যায়, মাঝে মাঝে আবার অল্প একটু এগোয়। চারপাশে তীব্র পেট্রোল পোড়া গন্ধ, সব জানালা বন্ধ করে বসে আছি ভেতরে। রসিকতা করে স্ত্রীকে বললাম, ফিরে গিয়ে গল্প করতে পারব, ঢাকা আর প্যারিসের রাস্তাঘাটে খুব একটা পার্থক্য নেই, দুটোতেই মধ্যরাত পর্যন্ত অসহনীয় জ্যাম থাকে।

সামনের গাড়ি থেকে কুৎসিত গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে অল্প অল্প করে, সম্ভবতঃ তার ক্লাচ পুড়ছে । অনভিজ্ঞ ড্রাইভারদের এই এক সমস্যা, জ্যামের ভেতর একটু একটু করে এগোতে গিয়ে ক্লাচের বারোটা বাজায়। কিছুটা সহানুভূতি অনুভব করলাম তার জন্য।

আমাদের পাশের লেনটা একটু বেশি সচল। যারাই আমাকে ওভারটেক করছে, ঘাড় ঘুরিয়ে একটা অবাক ‘লুক’ দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটাতে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করলেন স্ত্রী। ‘সবাই এরকম করে তাকাচ্ছে কেন?’ বললেন তিনি। আমি বললাম, ‘হয়তো সারাদিনের ধকলে আমাদের চেহারা কিম্ভূতকিমাকার হয়ে আছে। বাদ দাও’। তিনি বললেন, ‘উঁহু, কিছু একটা সমস্যা আছে। গাড়ি থেকে নেমে দেখ চাকা টাকা পাংচার কিনা’। আমি চমৎকৃত হলাম। এটা একটা সম্ভাবনা বটে।

পুরো বহর দাঁড়িয়ে আছে, এখন নামা যায়। গাড়ির দরজা খুলতে দেরি, সালফার পোড়া তীব্র গন্ধে মাথা ঘুলিয়ে উঠল। সন্দেহ হওয়াতে ঝুঁকে নিজের গাড়ির চাকার নীচে তাকালাম। মহা সর্বনাশ। সামনের গাড়ি থেকে যে ধোঁয়া আসছিলো বলে ভেবেছিলাম, সেটা আসলে আমার নিজের গাড়ি থেকেই আসছে, ক্লাচ পুড়েছে ভয়ানকভাবে। আর যার জন্য সহানুভূতি বোধ করছিলাম, সেই আনাড়ি ড্রাইভারটি আমিই! আলসেমি করে হাফ ক্লাচে এগিয়ে যাচ্ছিলাম একটু একটু করে, তার ফল ফলেছে। আগুন ধরে যায় নি এই বেশি। কল্পনায় দেখতে পেলাম, জ্যামের মধ্যে বিকল গাড়ি নিয়ে বসে আছি, আর সড়ক অধিদপ্তর থেকে টো ট্রাক এসেছে গাড়ি সরিয়ে নেবার জন্য।

এই রাস্তায় থাকা চলবে না। এখানে ভীড় শেষ হবার নয়। ডানের একটা ফাঁকা গলিতে ঢুকে গেলাম। জিপিএস তারস্বরে চেঁচাচ্ছে আগের রাস্তায় ফেরত নিতে, আমি নাচার। ধীরগতিতে চলা যাবে না। গাড়িতে তেল ভরে নিয়েছি একটু আগে, দরকার হলে অনেক পথ ঘুরব, তবু সেই ফ্রিওয়ের পথ ধরব না। নিজের বুদ্ধিতে আন্দাজে চলতে গিয়ে বারবার পথ হারিয়ে ফেলে আরও কিছু ছোটখাটো ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে যখন সঠিক রাস্তায় উঠেছি, ততক্ষণে মোট সাড়ে তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, ডিজনী হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত আড়াইটা।

আমাদের ভার্চুয়াল গাইড বন্ধু ইমতিয়াজ। সে পরিবার পরিজন নিয়ে আগেই এদিকে ঘুরে গেছে। তার পরামর্শ মোতাবেক সকালে ডিজনী পার্কে যেতে হবে আটটার আগে। গিয়ে প্রথম থেকেই ফাস্টপাস বুকিং শুরু করতে হবে। তাহলে কিউ এড়ানো সহজ হবে। এমনিতে জনপ্রিয় রাইডগুলোতে আধা থেকে এক ঘণ্টা করে অপেক্ষমান থাকতে হয়, সেটা টপকে যেতে না পারলে অপেক্ষাতেই অর্ধেকের বেশি দিন শেষ হয়ে যেতে পারে।

দুই বাচ্চা নিয়ে এমনিতেই আমরা কখনোই নয়টার আগে বের হতে পারি নি, গতকালই ছিলো ব্যতিক্রম। পরপর দুই দিন ব্যতিক্রম করা যায় না নিশ্চয়ই। কাজেই মরার মত ঘুমিয়ে টুমিয়ে নাস্তা করে করিয়ে যখন শাটল বাস ধরতে এসেছি তখন সাড়ে নয়টা বাজে। কার্যদিবস বলেই হয়তো পার্কের গেটে ধুন্দুমার ভীড় নেই। তবে খুব কমও নয়। ইমতিয়াজের পরামর্শপত্র হোটেলে ফেলে এসেছি। শুধু মনে আছে ‘স্পেস মাউন্টেন’ রাইডে চড়তে হবে, এটা ‘অতি অবশ্যই মাস্ট’। ভেতরে ঢোকার মুখেই পার্কের বাহারী রঙিন মানচিত্র পাওয়া যায়, খোপ খোপ বাক্সে রাখা, একটা তুলে নিয়ে হাঁটা দিলাম। ভেতরে গিয়ে দেখি কিছু বুঝতে পারছি না, কারণ পুরোটাই জার্মান ভাষায় লেখা!

প্রবেশপথের সাথেই লাগোয়া ডিজনীল্যান্ড রেইলরোড মেইন স্ট্রীট স্টেশন। ট্রেন দাঁড়ানো, পুরো পার্ক ঘিরে চক্কর দেবার জন্য রেইলরোডটা তৈরী করা। এটাতে চড়ে একবার ঘুরে আসলে পুরো পার্ক সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যাবে। ট্রেনে ওঠার জন্য শ দুয়েকের বেশি লোক অপেক্ষা করছে, স্বাভাবিক অবস্থায় এমন লাইনের পেছনে আমি দাঁড়াই না। কিন্তু ডিজনী রেল বলে কথা, এখানে হয়তো কখনোই এর থেকে কম ভীড় হবে না।

অপেক্ষার পালা শেষে ট্রেনে চড়ে উঠে বসতেই অনন্য এক অনুভূতি হলো। ওয়াইল্ড ওয়েস্টের সেই স্টীম ইঞ্জিন রেলগাড়ি, ছুটে চলেছে যেন পূব থেকে বুনো পশ্চিমে। ধীরে ধীরে পার হলাম পার্ককে চারভাগে ভাগ করা এলাকাগুলো, ফ্রন্টিয়ারল্যান্ড, অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড, ফ্যান্টাসিল্যান্ড, ডিসকভারিল্যান্ড। ফ্যান্টাসিল্যান্ডের পেছনে পার্কের সীমানা প্রাচীরের বাইরে গাঢ় কমলা পোশাক পরা একদল লোক অপেক্ষা করছিলো, ট্রেনের যাত্রীদের দেখে সোল্লাসে হাত পা নেড়ে শুভেচ্ছা জানালো। একটু পরে দেখি, এরা আসলে হ্যালোইনের বিশেষ নর্তক দল, কেউ কেউ মাথার ওপর বিশালকায় কুমড়ো পরে আছে।


ছবি ২ - ডিজনী রেল


ছবি ৩ - থান্ডার মেসা রিভার বোট

ট্রেন থেকেই পুত্রের চোখে পড়েছে অটোপিয়ার ওপর। এখানে সীমানাবাঁধা ট্র্যাকে গাড়ি চালানো যায়, রয়েছে পঞ্চাশের দশকের আদলে বানানো কিছু খেলনা গাড়ি। বাচ্চা বুড়ো মিলিয়ে গিজগিজে ভীড়, এখানে দাঁড়ালে অনেক সময় নষ্ট হবে। পুত্রধন গাড়ির নামে অজ্ঞান, সে চড়বেই। অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাইলে রীতিমত কান্না শুরু করে দিলো। ফলে সেই বিশাল লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এটাও বুঝলাম কেন পার্কে আটটার সময় আসা উচিৎ আর ট্রেনের পেছনের লাইনটা কত মামুলি ছিলো। ঝাড়া পঞ্চাশ মিনিট পর আমাদের পালা এলো, আর মহানন্দে বাপ ব্যাটা গাড়িতে গিয়ে বসলাম।

আটোপিয়ার পাশেই বিখ্যাত স্পেস মাউন্টেন। উদ্বোধনের পরে দুই বছর লোকসান দেয়া ডিজনীল্যান্ডকে লাভের মুখ দেখিয়েছিলো এই রাইডটিই। বাচ্চাদের চড়া নিষেধ, কাজেই আমাদেরকে একজন একজন করে চড়তে হবে। বীরদর্পে এগিয়ে গেলাম আমি প্রথম হবার জন্য। করিডোর দিয়ে হেঁটে যাবার সময় ভেতর থেকে তীব্র চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছি, নিশ্চয়ই ভয়ের কোন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। একেবারে শেষ মুহুর্তে বুঝতে পারলাম, সিনেমা হল নয়, এটি আসলে রোলার কোস্টার রাইড। আগে কখনো চড়ি নি, উথালপাথাল দুলুনিকে আমার চিরকাল ভয়। বেইজিঙয়ে একবার এক থিম পার্কে নড়ন্ত সিনেমা দেখেছিলাম, মানে স্ক্রীনে দেখানো সিনেমার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের সীটটাও নড়বে। সেটা সামলাতেই খবর হয়ে গেছিলো।

কেটে পরব কিনা ভাবছি, দেখি পেছনে লম্বা লাইন, পিছু হটার উপায় নেই। আমার পাশে এক ইংরেজ ভদ্রমহিলা তার নাতীকে ক্রমাগত সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কোন ভয় নেই, এই বলে। এর মধ্যে পিছু হটা মানে, নিজের কাপুরুষত্ব স্বীকার করে নেয়া। যা আছে কপালে, বলে সামনে এগোলাম। যাত্রা শুরু হতে দেরী, বিশ সেকেণ্ডের মাঝে বুঝে গেলাম, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলেছি। চোখের সামনে ঘূর্ণির মত দুলছে বিশাল থ্রিডি স্ক্রীনে ফুটে ওঠা মহাকাশ আর রুপালি তারারা, আর আমার বাহন একের পর এক তিনশো ষাট ডিগ্রী পাক খেয়ে চলেছে ভয়াবহ গতিতে। বুকে একটু চাপ অনুভব করছি, ভয়ে নাকি গতির কারণে, পরিষ্কার বুঝছি না। একটা পর্যায়ে যখন মনে হচ্ছিলো শরীরের কলকব্জা সব খুলে আসছে, তখন চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

অনন্তকাল পরে রাইড শেষ হলে নামবার পালা এলে, দেখি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। চোখের সামনে পুরো ডিজনীল্যান্ড দুলছে, আর পায়ের কাছের মাটিটাকে মনে হচ্ছে বুকের কাছাকাছি উঠে এসেছে। ঝাড়া পাঁচ মিনিট পর ধাতস্থ হলে সঙ্গীদের খোঁজে এগিয়ে গেলাম। স্ত্রী ভ্রূ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন বুঝলে? তোমরা যখন অটোপিয়াতে ছিলে আমি একবার কাছাকাছি গিয়ে দেখে এসেছি। ভেতরে চিৎকার শুনেই বুঝেছি, এটায় চড়া আমার কম্ম নয়’। আমি দুর্বল গলায় বললাম, ‘আর যদি জীবনে রোলার কোস্টারে চড়েছি! কানে ধরলাম!’


ছবি ৪ - স্পেস মাউন্টেন মিশন ২


ছবি ৫ - নটিলাস

পাশেই আছে টয় স্টোরির বাজ লাইটইয়ার এর শুটিং গেম। দুষ্ট রাজা যার্গ এবং তার দলবলকে গুলি করে পয়েন্ট জড়ো করতে হবে। স্পেস মাউন্টেনের শতাংশ গতির এই রাইডে উঠে কারো কারো হাই উঠে যেতে পারে, কিন্তু আমরা উপভোগ করলাম অনেক, বিশেষ করে পুত্র। তার আবদারে একাধিক বার এটাতে চড়া গেলো।

বের হয়ে দেখি মেইন স্ট্রীটের দুপাশে ভীড় জমে গেছে। সার বেঁধে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে কিছু একটার অপেক্ষায়। বেশি দেরি হলো না, ঝমঝম করে বাজনা সহকারে গান শুরু হয়ে গেলো, আর দেখতে পেলাম অদূরে স্লিপিং বিউটির দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসছে হ্যালোইনের স্পেশাল ইভেন্ট টিম। যেমন শ্রুতিমধুর গান, তেমনই দৃষ্টিনন্দন নাচ আর তেমনই নজরকাড়া সবার পোশাক। প্রতিটি মুহুর্তই আমরা উপভোগ করলাম প্রাণ ভরে। এমনকি প্রতিদিন যে তিনবার করে এই নৃত্যানুষ্ঠান চলেছে, সামনে পড়ে গেলে প্রতিবারই আমরা ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছি, শুধু আমরা নই, আশেপাশে ইতস্ততঃ ঘুরতে থাকা বেশিরভাগ দর্শনার্থীই।


ছবি ৬ - হ্যাপি হ্যালোইন - নর্তকীরা


ছবি ৭ - হ্যাপি হ্যালোইন - শস্য কন্যা


ছবি ৮ - হ্যাপি হ্যালোইন - কুমড়ো ভুত


ছবি ৯ - হ্যাপি হ্যালোইন - যে কোন উৎসব হোক, মিকি থাকবেই

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য খুলি গুহা আর পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান রাইড। গুহাটা দেখে রীতিমত ‘টাসকি’ খেলাম। পুরোপুরি মানব করোটির আদলে বানানো অবয়ব এর মুখগহ্বরের মধ্য দিয়ে জলপ্রপাত বানানো হয়েছে। এই জিনিস প্রাকৃতিক হবার কথা নয়, আবার মনুষ্যনির্মিত হলে কতখানি শ্রম দিতে হয়েছে সেটা ভাববার বিষয়।


ছবি ১০ - খুলি গুহা

পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান রাইড আজীবন মনে রাখার মত একটা অভিজ্ঞতা (অন্যগুলোও অবশ্য তাই, কিন্তু এটা বেশি ভালো লেগেছে)। নৌকায় করে অন্ধকার গুহায় চক্কর খাবার ব্যবস্থা, প্রবেশ প্রথ থেকে শুরু করে ভেতরের সমস্ত ইন্টেরিয়র মধ্যযুগীয় কায়দায় সাজানো, আপনি একলাফে চলে যাবেন কয়েকশো বছর পেছনে। স্প্যানিশ মেইনের সেই বর্বর জলদস্যু যুগ, যেখানে নিয়ম কানুনের থোড়াই পরোয়া করত লোকে। দেখতে পাবেন বন্দর এলাকায় চলছে চরম অরাজকতা। দস্যুরা সাধারণ মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে, ইতস্ততঃ গাদা বন্দুকের গোলাগুলি চলছে থেকে থেকে, আর কিছু মানুষ অদূরে বসে থেকে পা দাপিয়ে উল্লাস করে চলেছে। একটু ওপরে চলছে ডুয়েল লড়াই, তার কিছুদূরেই বসেছে সওদাগরী হাটবাজার। এক বুড়ি তার মিনসেকে ঝাড়ু হাতে তাড়া করেছে, সেই দেখে পাশের লোকজনের সে কি হো হো হাসি! এক জলদস্যু সর্দার তার লুটের বাক্স নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে, আর এক মাতাল বুড়ো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে মদের পিপের পাশে। কিছুদূর এগোলে দেখা যাবে অন্ধকূপে কিছু বন্দী মানুষ, তারা আর্তনাদ করে আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে উদ্ধার পাবার আশায়। আপনি না দেখার ভাণ করে এগিয়ে যাবেন, এখন যেমন করেন।

একে একে দেখে ফেললাম সুইস ফ্যামিলি রবিনসনের ট্রি হাউস (আহা ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম নিউ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে গাছের ওপর বাসা বানাচ্ছি), দস্যুদের পরিত্যক্ত ভাঙা জাহাজ, অ্যাডভেঞ্চার আইল, ক্যাপ্টেন হুক’স পাইরেট শিপ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, সারাদিন ঘুরে সবাই ক্লান্ত। শাটল বাসে করে হোটেলে ফেরত গিয়ে খেয়ে দেয়ে ছোট্ট একটা ঘুমও দিয়ে ফেললাম। রাত এগারোটায় নাকি ফায়ারওয়ার্কস দেখা যাবে, সেই আশায় ন’টার দিকে আবার যাত্রা করার ইচ্ছে। রিসেপশনে গিয়ে জানলাম সবদিন ফায়ারওয়ার্ক আর লেজার শো রাত এগারোটায় শেষ হয় না, বিশেষ বিশেষ দিন, যেমন উইকএন্ডে হয়। এমনিতে পার্ক বন্ধ হয় রাত ন’টার মধ্যেই। হতাশ হবার মত খবর। জানতে চাইলাম আর কি করতে পারি রাতের বেলায়? জানা গেল ইচ্ছে করলে পার্কের বাইরে ডিজনী ভিলেজে যেতে পারি, ওটা রাত দুটো পর্যন্ত খোলা থাকে, আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্ট্রীট শো এর আয়োজন থাকে। ডিজনী ভিলেজের শপিং মলে দুই ঘণ্টা কাটানো হলো। বাচ্চারা মন খুলে বিভিন্ন খেলনা রাইডে চড়ে বেড়ালো।


ছবি ১১ - শিপরেক


ছবি ১২ - ক্যাপ্টেন হুক'স পাইরেট শিপ


ছবি ১৩ - কল্পনার ট্রি হাউস এরা বাস্তবে বানিয়ে ফেলেছে

দ্বিতীয় দিন সকালে উঠে দেখি ঘন কুয়াশায় চারিদিক আচ্ছন্ন। পার্কের ভেতরে স্লিপিং বিউটির দুর্গ আধা দৃশ্যমান, তার পেছনের আর কোন কিছু দেখাই যাচ্ছে না। গতকাল বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলো, কিন্তু দিন ছিলো ঝকঝকে। তারও আগের দিন পূর্বাভাস না থাকা সত্বেও ভয়ানক বৃষ্টি দেখেছি। আজকের ফোরকাস্ট ছিলো সানি, তার মানে বৃষ্টিস্নান আজকে অবধারিত।

খুবই মৃদু বৃষ্টিপাত শুরু হয়েও গেলো। আমরা ঢুকে গেলাম লিজেন্ড অফ দ্য ওয়াইল্ড ওয়েস্টে, গুলি করে কিছু ক্যাকটাস, কোচগাড়ি আর ক্যানেস্তরা উড়িয়ে দেবার আশায়। পাশেই থান্ডার মেসা রিভারবোটে চড়ার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু স্ট্রলার ঠেলে ওপরের কেবিনে ওঠা একটু দুঃসাধ্য। নিচের ডেকে বসে থেকে খুব একটা দেখার সুবিধে হবে না ভেবে ক্ষ্যান্ত দিলাম।


ছবি ১৪ - নিশানা চর্চ্চা

এগারোটার দিকে ভেন্যু পরিবর্তন, পার্ক থেকে বের হয়ে ওয়াল্ট ডিজনী স্টুডিওতে গমন। আমাদের টিকেটের গুণে আমরা যতবার খুশি দুটোতে সুইচ করতে পারি। মূল স্টুডিওতে ঢোকার আগেই মিকি মাউসের একটা ভাষ্কর্য দৃষ্টি কেড়ে নেবে, সাথে আছে জাদুর ঝাড়ু। প্রবেশকক্ষটি বিশাল, সেখানে রয়েছে যাবতীয় রেস্তোরাঁ আর ছোটখাটো রিক্রিয়েশন এরিয়া। একপাশের দেয়ালে হলিউডের একটা জমকালো হোর্ডিং আছে, দেখে মুগ্ধতা জাগে।


ছবি ১৫ - স্টুডিওর প্রবেশদ্বার


ছবি ১৬ - প্রবেশকক্ষ


ছবি ১৭ - ডিজনী সাহেব আর তার অমর সৃষ্টি

স্টুডিওটি মূলতঃ দর্শকদের হলিউডি সিনেমার নমুনা এবং সিনেমার পেছনের কারিগরি দেখাতে তৈরী করা। কিন্তু এখানেও বেশ কয়েকটি রাইড আছে। ইতিমধ্যে কুয়াশাকে কাঁচকলা দেখিয়ে রোদ উঠে গেছে, বেশিরভাগ মেঘ সরে গিয়ে আকাশের রঙ হয়েছে গাঢ় নীল। ফোরকাস্ট একেবারে মিথ্যে নয় তাহলে!

প্রথমে দেখলাম অ্যানিমেশন শো ‘অ্যানিমাজিক’। তাক লাগানো পারফর্মেন্স প্রতিটি আর্টিস্টের। স্টেজের নকশা, নির্মানশৈলী আর চোখের নিমেষে বিন্যাস বদল অবাক করার মত। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যেতে এদের মুহুর্তও লাগছে না, মনে হয় প্রতিটা দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে। এর পর সিনেমা শো ‘সিনেম্যাজিক’। হলিউডের নামকরা সব ছবি জোড়াতালি দিয়ে বানানো অদ্ভুতুরে কাহিনীতে চমৎকার অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের মোহিত করে রাখেন পাত্রপাত্রীরা।

ছোটখাটো কিছু রাইড পেরিয়ে এলাম মিনি র‍্যাডিয়েটর স্প্রিংয়ে। খেলনা লাইটনিং ম্যাককুইনে চড়ে চমৎকার কাটলো কিছু সময়।


ছবি ১৮ - মিনি র‍্যাডিয়েটর স্প্রিং

বিকেল বেলা আবার পার্কে ফেরত। গতদিন পাইরেটদের চক্করে পরে বিখ্যাত ডিজনী প্যারেড দেখা হয় নি। ডিজনী স্টুডিওর বানানো রূপকথাভিত্তিক অথবা অ্যানিমেটেড সিনেমার বিভিন্ন চরিত্র একে একে নেচে গেয়ে মিছিল করে চলে যাবে, গতদিন দেখা হ্যালোইন প্যারেডের তুলনায় তার রঙ, উজ্জ্বলতা আর বৈচিত্র্য বহুগুন বেশি।


ছবি ১৯ - ডিজনী প্যারেড - রাপাঞ্জেল আর ফ্লিন, বেরসিক দর্শক শেষ মুহুর্তে মাথা গলালেন


ছবি ২০ - ডিজনী প্যারেড - ২


ছবি ২১ - ডিজনী প্যারেড - ৩


ছবি ২২ - ডিজনী প্যারেড - ৪


ছবি ২৩ - ডিজনী প্যারেড - ৫


ছবি ২৪ - ডিজনী প্যারেড - ৬


ছবি ২৫ - ডিজনী প্যারেড - ৭


ছবি ২৬ - ডিজনী প্যারেড - ৮


ছবি ২৭ - ডিজনী প্যারেড - ৯


ছবি ২৮ - ডিজনী প্যারেড - ১০

প্যারেডের শেষ হতে হতে অন্ধকার প্রায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে লেজার শো আর ফায়ারওয়ার্কস। আমার বিবেচনায় এটিই ডিজনীল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষন। স্লিপিং বিউটির দুর্গকে পর্দা বানিয়ে রঙিন লেজার আলো ফেলে মুভি দেখানো হলো, তারপর জমকালো আতশবাজির খেলা। বিষয়বৈচিত্র্য আর নিখুঁত সমন্বয়, এই দুইয়ে মিলে অসাধারণ হয়ে উঠেছিলো প্রতিটি সেকেন্ড। বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে মিলনমেলা ভাঙ্গলো, আমরা আবিষ্ট হয়ে বসে রইলাম অতিরিক্ত কয়েক মিনিট।


ছবি ২৯ - লেজার শো এর আগে স্লিপিং বিউটির ক্যাসলের সামনে ফোয়ারা নাচ

তৃতীয় দিনের শুরুতেই সোজা স্টুডিওতে। একশন মটরস বলে একটা শো আছে, সেটা দেখা হয় নি এই দুই দিনে। দূর থেকে প্রচণ্ড শব্দ পেয়েছি অনেকবার, কি এমন হয় দেখার ইচ্ছে। তবে দিন শুরু করলাম হলিউড ট্রাম ট্যুর দিয়ে। সিনেমার পেছনের কিছু কৌশল দেখানো হবে, আর জলোচ্ছাসের একটা দৃশ্য অভিনীত হবে শেষে। সব জানা আছে, তবুও চূড়ান্ত মুহুর্তে চোখের সামনে কয়েক হাজার লিটার পানি গড়িয়ে পড়া আর ট্রামের ডাইনে বাঁয়ে শক্ত ঝাঁকুনিতে সব এলোমেলো লাগতে থাকে। অসামান্য অভিজ্ঞতা।

অনতিবিলম্ব পরেই ডিজনী প্যারেডের অনুকরনে স্টুডিও প্যারেড। এখানে রূপকথার বদলে সাম্প্রতিক মুভিগুলোর চরিত্র বেশি, পুরনোদের মধ্যে আছে কেবল মিকি আর মিনি মাউস, সাথে ডোনাল্ড ডাক।


ছবি ৩০ - মাইক ওয়াজোস্কির সাথে নিবিড় মুহুর্ত


ছবি ৩১ - স্টুডিও প্যারেড ১


ছবি ৩২ - স্টুডিও প্যারেড ২

দুপুর আড়াইটায় বহু প্রতীক্ষিত অ্যাকশন মটরস। এটি একটি স্টান্ট শো। গাড়ি এবং মোটরসাইকেল আরোহীরা ভয়ংকর সব লাইভ স্টান্ট দেখান। পৌণে একঘণ্টা ধরে বিভিন্নভাবে কসরত দেখানো চলে। সিকোয়েন্সগুলো সাজানো, কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয় একটি বিশেষ অ্যাকশন দৃশ্য ধারণের কাজ চলছে, শুটিং শেষে পুরো দৃশ্যটা সম্পাদনা করে দর্শকদের দেখানো হবে। পুরোটা সময় আমার গাড়ি পাগল পুত্র এক মুহুর্তের জন্যও উল্লাস বন্ধ করে নি, তার বিস্ময় আর আনন্দ দেখে আমি যারপরনাই সন্তুষ্ট বোধ করেছি এই ট্রিপের পরিকল্পক হিসেবে।


ছবি ৩৩ - অ্যাকশন মটরসে বাইক স্টান্ট


ছবি ৩৪ - ঘিরে ফেলার আগেই নায়ক ১৮০ ডিগ্রী টার্ন নিচ্ছে


ছবি ৩৫ - পর মুহুর্তেই চারজন ভিলেনের ত্বরিত অনুসরণ


ছবি ৩৬ - লাইটনিং ম্যাককুইনের দিকে চুপিচুপি এগিয়ে যাচ্ছে ভিলেন

শেষ বিকেলে শেষবারের মত ডিজনী পার্কে প্রবেশ। আরও একবার ডিজনী রেলে ভ্রমণ, আরেকবার হ্যালোইন প্যারেড, ডিজনী প্যারেড দেখা। সন্ধ্যার আগে আগে ঘুরে ঘুরে পৌছালাম ফ্যান্টাসিল্যান্ডের এক কোণে। বাইরে লেখা, ইটস আ স্মল ওয়ার্ল্ড। কথা সত্যি, সন্দেহ নেই। কতটা সত্যি, সেটা ভেতরে ঢোকার পর পরিষ্কার হলো। আবারও নৌকাভ্রমণ, তবে এবার আঁধারে নয় আলোয়। ভেতরটা অসংখ্য মানুষ, জীবজন্তুর আর পাখির পুতুল দিয়ে সাজানো। প্রতিটি মহাদেশের কিছু কিছু নমুনা আছে, সবার হাতে নিজেদের এলাকার বাদ্যযন্ত্র, গায়ে নিজস্ব সংস্কৃতির বহুরঙা পোশাক। আলো ঝলমলে পরিবেশে নেচে নেচে সবাই গাইছে ‘ইটস আ স্মল ওয়ার্ল্ড, স্মল ওয়ার্ল্ড’। লেজার শো শুরু হতে বেশি বাকি নেই, দ্বিতীয়বারের মত সেটিকে অবশ্যই দেখার ইচ্ছে। তারপরও স্মল ওয়ার্ল্ডে আরেকবার ঘুরে এলাম। খুশিতে ছেলে হাততালি দিতে থাকল একটু পর পর।


ছবি ৩৭ - ইট'স আ স্মল ওয়ার্লড ১


ছবি ৩৮ - ইট'স আ স্মল ওয়ার্লড ২


ছবি ৩৯ - স্লিপিং বিউটি ক্যাসল - কয়েক মুহুর্ত পরেই শুরু হয়ে যাবে আলোর ভেলকিবাজি

আরেকবার লেজার শো আর আতশবাজির খেলা দেখে, শেষ হলো স্বপ্নময় তিনটি দিন।

ডিজনীল্যান্ড ঘুরে আসার পর থেকেই, ‘টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না’ এই তত্ত্বের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। সুখের সংজ্ঞা সার্বজনীন নয়, বিষয়টি অমিমাংসীত এবং আরও দীর্ঘদিন তাইই থাকবে। বরং এটিকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি নিজের মত, ‘সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না’ আর ‘কিছু কিছু সুখ টাকা ছাড়া কেনা যায় না’।

জগতের সর্বপ্রাণী সুখী হোক।


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাঁচ তারা দাগালাম! আমি গিয়েছিলাম, সেই ২০০২ তে। আপনার পোষ্ট পড়ে সেইসব স্মৃতি নিয়ে লেখবার ইচ্ছেটা চাগিয়ে উঠলো। ধুসর সে পাণ্ডুলিপি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ রোমেল ভাই।

কবিরা মহাকালকে ধারণ করতে পারেন, সে তুলনায় এক যুগ নিতান্তই নস্যি। লিখে ফেলেন, রঙ আপনা থেকে এসে যাবে হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পোষ্ট ভুলে যাব একদিন কিন্তু শেষ লাইনটা মনে থাকবে অনেক অনেক দিন।

‘সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না’ আর ‘কিছু কিছু সুখ টাকা ছাড়া কেনা যায় না’

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ধন্যবাদ নামহীন

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

আবারও যেতে বলছেন? আমি রাজী দেঁতো হাসি

আয়নামতি এর ছবি

তিন চিমটি! মাস ছয়েক হলো ডিজনী ঘুরে এসেছি। সে এক জায়গা বটে!
আপনাদের অনুভূতির সাথে নিজের মিল পেলেম কিছু কিছু দেঁতো হাসি
তবে এখানে এমন ভীড়ভাট্টা বাপরে! তড়িৎ টিকিট থাকার পরও মানুষের ভীড়ে একটা প্যারেডও সামনে থেকে দেখতে পারিনি ওঁয়া ওঁয়া
অবশ্য সে ক্ষোভ ভুলে গেছি ফায়ারওয়ার্কস আর লেজার শো' দেখে। ডিজনীর জাদুময় ঝট্কায় বুঝি আপনার 'জ' 'য' তে প্যাচ লেগেছে?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

চিমটি বড় মধুর লাগলো আয়নামতি। অনুভূতিটা এমন, শুধু যারা দেখেছে তাদের সাথেই ঠিকভাবে ভাগ করে নেয়া যায়।

আমরা খুব ক্যাজুয়ালি ঘুরেছি, কিছুতেই তাড়া ছিলো না। তাই রাইডে চড়া বাদ দিয়ে প্যারেডের অপেক্ষায় ঘণ্টাদুয়েক আগে থেকেই বসে ছিলাম।

বানান ভুলের জন্য 'হিহি করা হাসি থেকে জিবে কামড় দেয়া' পিএনজি ইমো দরকার। ঠিক করে দিলাম। হাসি

তিথীডোর এর ছবি

‘সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না’ আর ‘কিছু কিছু সুখ টাকা ছাড়া কেনা যায় না’।

চলুক চলুক
দামি কথা!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তিথীডোর হাসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে জায়গাগুলোর বর্ণনা আর ছবি দিয়ে আমাদের সামনে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলার জন্য। মানুষের কী বুদ্ধি!

আর শেষে এসে একটা দামী কথা বলে গেলেন,

‘সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না’ আর ‘কিছু কিছু সুখ টাকা ছাড়া কেনা যায় না’।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

শুভেচ্ছা মেঘলা মানুষ।

আসলে যাবার এক বছর পূর্তিতে মন কেমন করছিলো। নিজের জন্যই লিখে ফেলা, যাতে ভুলে না যাই। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে পড়তে পারবে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে যেতে ইচ্ছে করছে। খুব ভালো লাগল চলুক

ফাহিমা দিলশাদ

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিমা। সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দলবল জুটিয়ে। পয়সা মার যাবার সম্ভাবনা কম। তবে ডিসকাউন্টে টিকেট কিনতে ভুলবেন না। একটা পরামর্শ, ডিজনী হোটেলে থাকলে পার্কের এন্ট্রি ফ্রি। এমনিতে জনপ্রতি পার্কের টিকেটের দাম মোটামুটি একরাতের হোটেল খরচের সমান। তার ওপর ডিজনীল্যান্ড এলাকার বাইরে থাকলে নিজের খরচে যাতায়াত করতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা চলুক । জায়গাটা যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম।

ইসরাত

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ছবি না দিলেও চলত বলছেন? চিন্তিত

মনে হয় না। তবু প্রশংসা মাথা পেতে নেয়াই দস্তুর। ধন্যবাদ ইসরাত হাসি

নীলকমলিনী এর ছবি

প্যারিস ভ্রমন এর গল্প ভালো লাগলো. অনেক সুন্দর করে ছবি দিয়ে যত্ন করে লেখা. আগে কখনো ইচ্ছে হয়নি ডিজনী তে যেতে, তোমার লেখা পড়ে ইচ্ছে হচ্ছে. আমার রাইড ভালো লাগে না, কিন্তু অন্য সব কিছু এনজয় করব. অস্ট্রেলিয়ার গল্প কবে আসছে ?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নীলু আপা, মায়াটুকু আপনি বুঝেছেন। এই ট্রিপের আগে আমি কখনোই কোন নির্ঝঞ্ঝাট ভ্রমণে অংশ নিতে পারি নি, সবসময়ই একটা না একটা ঝামেলা লেগে ছিলো। পরিচিত পৃথিবীর ব্যস্ততা আর গ্লানি ঝেড়ে ফেলে পাঁচটি দুর্দান্ত দিন কাটিয়েছি। এই সফরের স্মৃতি গাঢ় দাগ কেটে বসে গিয়েছে চিরদিনের মত।

অস্ট্রেলিয়ার গল্প আসতে মনে হয় সময় লাগবে। গত কয়েক মাস শীতে কোথাও বেরুইনি। আবার ক্রিসমাসে দেশে যাচ্ছি, কাজেই সামনের দিনগুলোতে প্লেজার ট্রিপ বন্ধ। দুএকটা জায়গায় যাও গিয়েছি, সে বিশেষ কিছু নয়, এক দুই ছবিতেই শেষ করে দেয়া যায়। সব মিলিয়ে লেখার মতো কিছু জমে নি হাতে।

আপনারা আসেন, একসাথে ঘুরিফিরি হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

আহা! যাব একদিন।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

২০১৮ তে একটা প্ল্যান আছে আবার যাওয়ার, দেখা যাক হাসি

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

দারুন লাগলো - বর্ণনা, ছবি দুটোই! কিন্তু মজার বিষয় হলো, আমাকে কেনো যেনো মানুষের তৈরি কোনোকিছু খুব একটা টানে না। আজীবন ঢাকা থেকে শিশু পার্কে গিয়েছি মাত্র ১ বার! তবে ফ্রান্সের প্রকৃতীর যা বর্ণনা দিলেন, তাতে যাবার লোভটা আরো বাড়লো।

নগদ পাঁচটি তারা।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

একজন পছন্দের ফটোগফুর ছবি ভালো বলেছেন, ব্যাপারটা আনন্দের। অনেক ধন্যবাদ অনুপম ভাই।

আপনার লোভ বাড়াবার জন্য ঘোরাঘুরি ১,২,৩ পড়বার আমন্ত্রণ জানালাম। শয়তানী হাসি

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ফ্লিকর একাউন্টটা অবশেষে উদ্ধার করা সম্ভব হলো, ছবি এম্বেড করে দিলাম। সচলায়তনের ডিফল্ট ছবি যুক্তকরণ টুলটি ব্যবহার করলে ছবির কোয়ালিটি ডিগ্রেড করে এটাও লক্ষ্য করলাম।

নতুন সজ্জা চোখের জন্য কিঞ্চিৎ বেশি আরামদায়ক লাগছে। যারা আগে পোস্ট দেখে গেছেন তাদের কাছে কিছু দুঃখপ্রকাশ দেনা রইলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।