চিত্রশিল্পীরা কেন ঘুরে ঘুরে সেলফ পোর্ট্রেট করেন? দিনের শেষে, সব সৃষ্টিই কি আত্মপ্রতিকৃতি? কবির চেতনার রঙেই কি পান্না সবুজ হয়ে ওঠে? তাহলে, গভীর নিশীথে, এক তাড়াহীন মানুষ আর ঘরহীন একপাল ভেড়াকে ঘিরে এমন ঘনঘোর বর্ষা কেন নামে? কার প্ররোচনায় শূন্যঘরের দরজাগুলো ঝপাত্ ঝপাত্ খোলে আর বন্ধ হয়? এসব প্রশ্নকে মূলতবি রেখেই বর্ষা অবিরাম ঝরে, চোখ-না-ফোটা বেড়ালবাচ্চাটির ঘুমের চারপাশে, এক জাদুময় নৈঃশব্দ্য বানিয়ে দেয় ওকে।
(কবি নামে ভিন্ন ভিন্ন দুটি কবিতা লিখেছিলাম জীবনের ভিন্ন ভিন্ন দুটি সময়ে। এখানে একসাথেই থাকল তারা, যথারীতি ফিউশন, এবার পঙ্কজ মল্লিক আর সুমিতা সেন-এর বর্ষাসঙ্গীতের সাথে।)
[url]
|
[/url]
১.
পাঠ্যপুস্তকের ভিতর শ্রাবণ অঝোরে ঘুমাচ্ছে
এই নৈশবেলায়। মেষদলটির কথা ভাবে নি সে।
কিংবা ভেবেছে, হয়ত মুষড়ে পড়েছে, কাল
টিউটোরিয়াল।
তাই তালাবদ্ধ দোকানঘরের বাড়তি চালার নিচে আধভেজা
পরম আরামে চোখ বুঁজে-বুঁজে বর্ষা দেখি। আমি আর মেষদল।
আমি ভাবি এই ক্ষুদে পর্যটকদের কথা
পেশাদার ভবঘুরে ওরা এই মফস্বলে, একেকটা ইবনে বতুতা
বিভিন্ন শৈশব থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু পশমের টুপি
ওরা ভাবে, আহা! কবি!
.................................
[url]
|
[/url]
২.
বিরামহীন বর্ষা অবশেষে ওকে ঘুম পাড়িয়ে গেছে
দরজাগুলো খুলছে আর লাগছে, খুলছে আর লাগছে
বর্ষা এসেছে ওর ক্রন্দনধ্বনির প্রতি করুণাবশত
চোখ-না-ফোটা বেড়ালছানাটি এর আগে আমাকে
একফোঁটা ঘুমাতে দেয় নি
এখন নিজেই সে স্বপ্ন দেখছে, ঝোড়োবাতাসের খেয়ালখুশির ভেতর
আনমনা বইয়ের মত এ-পাতা ও-পাতা, ব্যাকরণহীন যত স্বপ্ন
ঝোড়ো হাওয়ার অসমান ছন্দে আর বিপন্ন নয় সে
বেড়ালছানাটি বর্ষার ধারাবাহিক নৈঃশব্দ্যে সমাহিত
নাকি আমিই নিদ্রিত, শূন্যঘরে আমার রোমশ অস্তিত্ব
আমার মার্জার-জন্ম
অনিদ্র এক কবিকে দয়ার্দ্র করতে চাইছে?
সেই কবি, তার কবিতার চেয়েও স্বয়ম্ভূ হয়ে আছে এই
প্রাপ্তবয়স্ক শ্রাবণরাত্রিতে
আমি তার পায়ের কাছে শূন্য দেশলাই বাক্সের ভেতর
কখন যে ঘুমিয়ে গেছি!
মন্তব্য
০১
বৃষ্টিটা ভেজালো বলেই শীত লাগছে বলে ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলে তুমি
আর শীত লাগছে বলেই তোমাকে জড়িয়ে রাখা ছাড়া অন্য কিছু করার ছিল না আমার
বৃষ্টির নিচে জড়িয়ে যাবার পরে কি আর অভিমানের অস্তিত্ব থাকে কোথাও?
আমাদের আবহাওয়া অফিস কি পারে না প্রতিদিন এরকম বৃষ্টি ঝরিয়ে দিতে?
০২
সে কি জানে বৃষ্টির রাতে তুমি বাঘিনি হয়ে ওঠে আর হরিণ না পেলে নিজেকেই কামড়ে খাও?
নতুন মানুষ কি বৃষ্টির রাতে উপযুক্ত হরিণ হতে পারে তোমার থাবায়?
সে কি জানে বিড়াল পোষার নিয়ম; জানে কি সে তুমি এক সাদা বিড়াল হয়ে যাও বৃষ্টির রাতে?
০৩
তার শেষ বেলার মুখ আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বারোমাসি বৃষ্টির নিচে
এ বৃষ্টির বিরাম নেই; অসময় বলে কিছু নেই
চোখ থেকে গালে- গাল থেকে হৃদয়ে গড়িয়ে পড়ে জল
আর আমি নির্বোধ শৈশবে দাঁড়িয়ে দেখি;
আকাশে ছিদ্র করে ঝরে পানি; মাটি ক্ষয় করে নামে পানি
পানি ঝরে- পানি নামে... ঝরে আর নামে...
নামে আর ঝরে পানি বারো মাস ধরে আমার
জন্ম নেয়া জংলি টিলায়
বৃষ্টি একটা হাবিজাবি জিনিস। আর কবি একটা হাবিজাবিখোর অর্ধমানুষ
আরে... এ যে দেখছি মন্তব্য আকারে আস্ত কবিতা!! মেঘ না চাইতেই সুনামি!! ধন্যবাদ।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
রেটিং দিতে পারলে ৫ দিতাম...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
মানে?? সচলে রেটিং দেয়া বন্ধ করা হয়েছে নাকি? কই, রেটিং তো দেখছি নানা জায়গায়!!
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
আহা!কবি!
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সুমন ভাই, দেশলাই বাক্সের ভেতরে ঘুমাতে কেমন লাগে? ইস, যদি এটে উঠতাম!
দারুণ।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
এই এঁটে উঠাটাও হয়ত "আসল ফকিরি"
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
নতুন মন্তব্য করুন