আমার বয়স যখন তিন তখন বাবুর্চি হতে চেয়েছিলাম। ছ'বছর বয়সে হতে চাইলাম নেপোলিয়ন। তখন থেকেই আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
২৯ বছর বয়সে যখন প্রথম আমেরিকার মাটিতে পা দিলাম, সেই দিনই টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ওরা আমার ছবি ছাপায়। সেই ছবিতে দেখা যায়, পৃথিবীর সবচে ছোট একটা গোঁফ পরে আছি আমি। তখন থেকে দুনিয়া কেবল চুপসে যেতে থাকে আমার চারপাশে আর আমার গোঁফ, আমার কল্পনাশক্তির মত, ক্রমেই ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে।
ধূমপান করি না, তাই ভাবলাম একটা গোঁফ গজাতে দেয়া যাক, গোঁফ থাকা নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল! যাক, ধূমপান না করলেও আমি সবসময় একটা মুক্তোখচিত সিগারেট কেস সাথে রাখি, যার ভেতর সিগারেটের বদলে রাখা আছে নানান ধরনের গোঁফ। ঠিক এডলফ মেনজো স্টাইল। যথোচিত বিনয়সহ সেসব গোঁফ আমি আমার বন্ধুদের সাধাসাধি করি:
“গোঁফ লাগবে? গোঁফ? গোঁফ?”
মজার ব্যাপার হল, তাদের কেউই সেসব ছুঁতে সাহস করত না। গোঁফের মধ্যে একটা পুতপবিত্র ব্যাপার যে আছে, আমি এভাবে সেটা টের পেলাম।
বাইবেলে মনুষ্য কেশরাশির বেড়ে ওঠার ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দেয়া আছে। দেলাইলা চুলের ক্ষমতায় বিশ্বাস করত, দালিও সেটা করে। সপ্তদশ শতকের ন্যাচারাল ম্যাজিকের উদ্ভাবক লা পোর্ত ভাবতেন, গোঁফ কিংবা ভুরু হচ্ছে এন্টেনা। কীটপতঙ্গ যেমন তাদের সুঁচালো এন্টেনা দিয়ে অনেক খবরাখবর পায়, তেমনি এইসব মনুষ্য-এন্টেনা মারফত সৃজনশীল প্রেরণাগুলো মানুষের মন পর্যন্ত পৌঁছায়। প্লেটোর বিস্ময়কর ভুরুজোড়া, কিংবা তার চেয়েও নিবিড় ঘন এবং প্রায় চোখ-ঢেকে-ফেলা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি-র ভুরুজোড়া হচ্ছে মুখস্থ কেশরাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল নজির।
কিন্তু মুখস্থ কেশরাশির সবচেয়ে দুর্দান্ত ডিসপ্লে দেখার জন্য দুনিয়াকে বিশ শতক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। দালির গোঁফ দেখার আগ পর্যন্ত সেটা সম্ভবই ছিল না।
এখানে গোঁফের নানারকম উদ্ভাবনী ব্যবহারের কিছু দৃষ্টান্ত থাকল। অবশ্য প্রতিদিনই আমি গোঁফের নতুন নতুন ব্যবহার খুঁজে পাই। এই যেমন আজ সকালে, শেভ করার আগে আগে, হঠাত্ মনে হল আমার গোঁফকে বেশ আলট্রা-পারসনাল ব্রাশ হিসাবেও কাজে লাগানো যায়! গোঁফের সূঁচালো আগা দিয়ে আমি একটা মাছি পুরা ডিটেলে এঁকে ফেলতে পারি।
আর এই মাছি আঁকতে আঁকতে গোঁফ সম্পর্কে নানান দার্শনিক ভাবনাও মনে আসছে আমার। এই সেই গোঁফ যেখানে আমার সময়ের সকল মাছি আর কৌতুহল আঠার মত লেগে থাকার জন্য ছুটে আসছে। কোনোদিন কেউ হয়ত এই গোঁফজোড়ার মতই অদ্ভূত আরেকটা সত্য আবিষ্কার করবে - ও হ্যাঁ, সালভাদর দালি, ওই গোঁফঅলা, সম্ভবত ছবিটবিও আঁকত!
অনুবাদ: সুমন রহমান
মন্তব্য
উত্তম।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
আপনার আগের পোস্টে এই ব্যাটার আঁকা (স্কুলগার্ল) ছবিটা দেখে ইন্টারনেটে খুঁজেছিলাম। তখন সম্ভবত উইকিতে এই গোঁফের ছবিও দেখেছিলাম, কিন্তু স্কুল-বালিকার বন্ধঘরের (আমার কল্পনা) ভেতর থেকে সমুদ্র দর্শনের ছবিটা খুঁজেই পেলামনা। ছবিটার কনসেপ্ট দারুণ!
কিন্তু ছবিটা ওয়েবে আছে তো।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
আবরণের ভিতরে রেখে পেছন দিকটাকে এত মনোরম ও মনোময় করে আঁকার ঘটনা সম্ভবত একটু বিরলই। কী বলেন সুমন ভাই?
আর দালির গোঁফবিলাসটা আমার খুব মনে ধরেছে। ধনুকও যেন ওতে হার মানে।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
শুধু কি গোঁফবিলাস?গোঁফের পক্ষে ইতিহাস পাতিহাঁস বাইবেল ঘেঁটে কত কিছু......তাই বিডিনিউজে এই লেখাটার নাম দিয়েছিলাম "গোঁফের নন্দনতত্ত্ব"।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
সুমন ভাই, রাখবেন নাকি ছবির মতন এইরকম গোঁফ?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
নাহ। পারলে দুইটা শিং রাখুম...
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মজার
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
বার্লনে ওনার একটি একজিবিশনে গিয়েছিলাম। ভাল লাগার কারনেই প্রায় সারাদিনই ছিলাম।
পরে বেরিয়ে এসে অনেকটাই আউলা ঝাউলা লাগছিল।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অসাধারণ!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। দালি-র দ্বিতীয় পর্বটা ছাড়তে পারতেছি না, কারণ ছবিগুলো ঠিকমত আসতেছে না। দেখা যাক কী হয়।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
নতুন মন্তব্য করুন