‘
বালক শত্তুরদল ডুবসাঁতারে ছিন্নভিন্ন করে গেছে ঘনবুনোট রহস্য কচুরির (সচলায়তন নীতিমালার!)। সামান্য বাতাসে তারা ঝাঁক বেঁধে বজরার মত ভাসছিল।
: আবারো তাকাচ্ছ, হাড়মিচকে শয়তান ছেলে! বাপ মায়েরও ঠিক নেই যে কড়া করে নালিশ করে দেবো। শুনেছি কোন্ সাহেবের বারান্দাওলা টুপির তলায় লুকিয়ে ব্রাজিল থেকে পালিয়ে এসেছ, আর ভাবখানা সদ্য ডিম ভেঙ্গে এই পুকুরে নাইতে নেমেছেন। আইবুড়োদের মত বয়স লুকিয়ে কদ্দূর যাবে -- জলের তলায় দিব্যি একগাছি দাড়ি যে দেখা যাচ্ছে! আমার কচি মেয়েদের ফাঁকি দিতে পারলেও তুমি কি ভেবেছ তোমার ঐ ভাঁজ-খাওয়া বেলেল্লাপনা আমি বুঝি না?
: অযথাই গালাগাল দিচ্ছেন কেন, মোটেও আমি আপনার ফোকলামুখী মেয়েগুলোর দিকে তাকাই নি। আর আপনি যাকে দাড়ি বলছেন সেগুলো আসলে আমার অসংখ্য পা, আপনার যেমন শেকড়। আমার ছোট্ট ডানকিনে বন্ধুরা এখানেএই ঝুড়ি ধরে দোল খায়। ওরা বলে, এগুলো ওদের প্রাসাদের অসংখ্য পিলার, সত্যিকারের প্রাসাদ ওরা যে কখনো দেখে নি। মাছরাঙ্গা নামে একটা বদমাশ পাখি আছে, আমার ছোট্ট বন্ধুদের খুউব জ্বালাতন করে, তাই ঘাড় তুলে যখনই সে আসছে কি না দেখতে যাই -- অমনি ঐ পেত্নীমুখোর দল আমায় চোখ টিপে দেয়!
: ঐ বদমাশ পাখিগুলোর পাল্লায় পড়েই তো মেয়েগুলো বখে গেছে। জলে নামলে সাঁতার জানতে হয়, বোকার হদ্দদের আমি কতবার বুঝিয়েছি! তিনদিন পর দেখা যায় সবগুলো মরে ফুলে পচে ঢোল হয়ে ভেসে উঠছে। তখন ওদের খুবলে খাবার জন্য তুমিই আবার ডানকিনে কুত্তাদের লেলিয়ে দাও, দাড়িমুখো ছাগল কোথাকার!
: আমাকে কখনোই ছাগল বলে গাল দেবেন না, আমি কি ঐ ছাগলদের মত আপনার মেয়েদের শুনিয়ে শুনিয়ে কোনো বাজে কথা বলেছি কোনোদিন ? আর 'দাড়িমুখো' বলছেন কেন, ওগুলো তো আমার শেকড় -- বলি নি আপনাকে ?
: চামসে দাড়িগুলোকে শেকড় বলে চালানো হচ্ছে! শুনলে এমন কি বদমেজাজী কেউটেও একচোট হাসত। ছোঃ! শেকড়ের অর্থ বোঝো ? বহু অজগর মরে গিয়ে তবে একটি শেকড় হয় -- দেখছ না পুকুরপাড়ের মাটি ধ্বসে গিয়ে আমার একটি পা বেরিয়ে আছে। এই পায়ে ভর দিয়ে কত লোক পিচ্ছিল পুকুরঘাটে স্নান সেরে যায়, দেখেছ ? শেকড় হচ্ছে এইই। গোটাকয় কেঁচো ঝুলিয়ে গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়ালেই ওগুলো শেকড় হয়ে যায় না -- ভাসমান গর্দভ কোথাকার!
: আমাকে 'ভাসমান' বলতে পারেন, কিন্তু মোটেও গর্দভ নই আমি। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বাংলাস্যারদের মত আমায় 'সঞ্চরণশীল' বলে ডাকেন। আমি এমন অনেককে চিনি যাদের আমার চেয়েও ছোট্ট ছোট্ট শেকড়। আপনি কি ঘাসকন্যা ও শ্যাওলাশিশুদের পা দেখেছেন ?
: আমি কি তোমার মত বেলেল্লা যে দেখতে যাবো ?
: আপনি ওদের দেখতেই পাবেন না! ঘাটের কানায়, আপনার ঐ ব্রহ্মদত্যির মত উরুর আড়ালে ওদের বাড়ি। ওদের শেকড় ছোট্ট হলেও গানের গলা কী মিষ্টি! আমি তো রোজ ওদের গান শুনতে শুনতে ঘুমাই।
: জ্ঞান দেয়া হচ্ছে! ছোটমুখে বড়কথা শুনলে ডাল ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। এটা কি তোমার বাপের ভিটে যে পাখোয়াজি ফলাচ্ছ! এটা ব্রাজিল নয়, বাংলাদেশ -- উজবুক কাঁহাকা!
: বাংলাদেশ-ব্রাজিল বলে চেঁচাচ্ছেন কেন, এ তো দুটি নাম মাত্র। ওখানে সারি সারি মেপল আর দেবদারুভরা অরণ্যে দীর্ঘ এক হ্রদের শেষ মাথায় আমার জন্ম। প্রচন্ড বৃষ্টির কোনো এক সময়ে আমি জন্মাই। বৃষ্টি তো নয়, যেন দেবতার অসংখ্য বর্শা পড়ছে -- এর কোনো শেষ নেই। অনেকের জন্ম থেকে মৃত্যু কেটে যায় একই বৃষ্টিতে। সেই প্রলম্বিত বৃষ্টির কোনো ভোরবেলায় আমি পালাই, বহু ঘাট ঘুরে এখানে এসে খুঁজে পাই হাঁসেমাছে পয়মন্ত ছোট্ট পুকুরটি। এটাই আমার দেশ। আপনার বড়ত্বের গর্ব থাকলে ব্রাজিলের অরণ্যে গিয়ে দেখুন নিজেকে বামন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় কি না।
: শোনো, তুমি যেখান থেকেই আসো, এতে কিছুই যায় আসে না। তুফান যখন শিকড়সুদ্ধ তোমাকে সারাপুকুরে কাপড় কাচার মত আছড়াতে থাকে -- তখন ওরকম হাস্যকরভাবে না চেঁচিয়ে ভদ্রলোকের মত চুপচাপ থাকলেই পারো!
: বাতাস আমাকে ভাসায় পুকুরের এমাথা ওমাথা। দুষ্ট ছেলেদের ডুবসাঁতারে আমার জামা-প্যান্ট খুলে গেলে ওই তো সারাক্ষণ আমার চুল আঁচড়ে দেয়, বোতামগুলো ঠিকঠিক লাগিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে একটু বাড়াবাড়ি করে বটে, এটাই সব নয়। আর দমকা হাওয়াই আপনার দুয়েকটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে না -- তাও কিন্তু নয়!
: এর দেখছি নাপিতের মত বুদ্ধি! পেটে ফন্দি থাকলেই কোনো কিছু প্রমাণিত হয় না, এটা মনে রেখো। তোমার মত ভবঘুরে শয়তানকে আমি কক্ষনোই একটা ন্যালাখ্যাপা ছারপোকার বেশি কিছু গণ্য করি না।
: ছেলের দল দুপুরবেলা হেসেখেলে যখন আপনার গা বেয়ে উঠে আমার বুক বরাবর লাফ দিতে থাকে, তখন ওদের উল্লাসে আমার যেমন বুক ভেঙ্গে যায়, আপনারও তেমনি দম বন্ধ হয়ে আসে -- বলুন আসে কি না.....
মন্তব্য
এই জিনিস আমার আয়ত্বের বাইরে।
তবে প্রচন্ড কাব্যিক লেগেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বটগাছ আর কচুরিপানা।
বাবুই ও চড়াই, খাঁচার ও বনের পাখি টাইপ প্রায় এরকমই একটা লেখা কার যে পড়েছিলাম মনে করতে পারছি না। মাইকেলেরও কি একটা কবিতা আছে এরকম। বাংলাদেশে না থাকার সমস্যা। এসব স্মৃতিগুলো চট করে মনে পড়ে না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
মাইকেলের আছে কিনা জানি না। তবে মাইকেলের নাতি-তস্য-নাতির একটা আছে। সেই উত্তমের নাম ঈশান জয়দ্রথ, তিনি এই অধমেরে উনার কবিতাস্বত্ব বিক্রি করে তিব্বতগামী হৈয়া গেছেন
পড়ে খুব মজা পাইলাম। সাঁই সাঁই করে মাথার উপর দিয়ে গেল সব। তবু মজার উপরে তো কিছু নাই। অছ্যুৎ বলাই এর মতনই কই, প্রচন্ড কাব্যিক লেগেছে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ভাল লাগল। একটা মেল করবেন?
এ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
চুপ থাকাই শ্রেয়।চুপ থাকলাম।
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
আরিফ, আমার লেখার নিন্দা শুনে আমি কিন্তু কখনই রাগ করি নি। চুপ না থেকে নির্ভয়ে গালাগাল দিয়ে দিন
সুমন ভাই,যতোটুকু পেরেছি রস নিয়েছি।কিন্তু কেন যেন মনে হয়েছে,লেখাতে যতোটুকু রস দেয়া হয়েছে,তার সবটুকু নেয়া হয়তো সম্ভব হয় নি,নিশ্চয়ই বেশ কিছু অজান্তে মিস করে গেলাম।
'ভালো লেগেছে'অবশ্যই কিন্তু কিছু কিছু লেখায় বোধহয় হুট করে 'ভালো লেগেছে' না বলে বরং লেখার মাঝেই ডুবে থাকাটা দরকার।এটা সেরকমই মনে হলো।
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
নতুন মন্তব্য করুন