বাবাদিবসের এই দিনে আমি সচলায়তনের খাতা খুললাম।
আমার ছেলের নাম তুরীয়। আজ সারাদিন আমার বগলে বগলে ছিল। একটু আগে ঘুমাইতে গেল সে। সারাদিন তার এই আবদার ঐ আবদার। বাবাদিবসে আমার নিজের বাবা নিয়া ভাবার সময় কই? বরং আজ এই বৃষ্টিময় ছুটির দিনে নিজ পুত্রপ্রবরের বাবাদিবসের সাক্ষী হৈয়াই থাকলাম। ঘুমাইতেছে সে এখন, ফলে অবসর আমার, ভাবতে বসলাম, কোন দূর দেশে এক ভাঙাচোরা কবরের ভিতর আমার নিজের বাপ ঘুমাইতেছে!
বৃষ্টি, না পেডেস্টাল ফ্যানের আওয়াজ? ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা মনে পড়ে, "হোয়্যার দ্য নয়েজেজ অব এঞ্জিনস ক্যারি দ্য মেমরি অব রেইন..."
নিজের বাবার কথা ভাবতে ভাবতে ভাস্করের বাবার কথাও ভাবলাম একটু। নানান আর্থসামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক কারণে আমাদের সমাজে ছেলে বাবার আদর্শিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে বড় হৈয়া ওঠে। আমি যখন ছোট ছিলাম, বাবাকে নিয়া কবিতা লিখছিলাম একটা, নাম "পিতৃজন্তু"। আর উনি যখন মরলেন, লিখলাম "গরিবি অমরতা"। জীবিত বাবা থেকে মৃত বাবা মনে হয় অনেক বেশি ক্ষমতা রাখে, অনেক বেশি শাসনক্ষমতা তার! যে বাবার স্বপ্নের "শব" (আরিফ-এর শব্দ) আমি বাল্যবয়সে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিছিলাম, আজ তাকেই আবার ধুয়েমুছে বয়ামে ভরে রাখলাম, আমার ছেলের জন্য।
ছেলে হয়ত ছুয়েই দেখবে না ওসব বয়ামে-ভরা জিনিস! ঐ এয়ারটাইট বয়ামটার ভিতর বাপের স্বপ্নটাকেও রেখে দিবে সে, যত দ্রুত সম্ভব। নিম্নমধ্যবিত্ত পিতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবেই বেড়ে উঠাই হয়ত ওর নিয়তি! আর বাবার কাছে বাড়ন্ত সন্তান অনেক আনন্দ আনে যেমন, আবার কিছু বিষণ্নতাও আনে বৈকি? বেড়ে উঠতে থাকা সন্তানের সামনে পিতার যে বিষাদ, তা জীবনভর আরেকটা অন্তরঙ্গ শত্রুতার জন্য তৈরি হৈতে থাকার বিষাদও বটে। বাবার জন্য।
অনেক রাতে যখন ঘুম ভেঙে যায়, উঠে গিয়ে অন্য ঘরে যেখানে পুত্র ঘুমায়, দেখে আসি ওর গা থেকে কাথা সরে গেছে কিনা। এই যে এইটুকু, এইটা একান্ত বাবারই গল্প, ঘুমন্ত সন্তান এই গল্পের একটি চরিত্র। একটা ঘুমন্ত চরিত্র।
এই বাবাদিবসে বৃষ্টিই হৈতেছে সারাদিনরাত। থেমে থেমে। আবার একনাগাড়ে। যেন পৃথিবীর ভুত-অভুত সকল পরাজিত বাবাদের স্মরণে প্রকৃতি আজ বড় সহমর্মী হৈয়া ওঠেছে!
মন্তব্য
হুমম...
-----------------------------------------------------
বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
ভালো লাগলো। পাঁচ বছর আগে চলে যাওয়া বাবাকে ভাবলাম।
বছর তিনেক আগে আমার পুত্র, তখন তার বয়স ছয়, একদিন জিজ্ঞেস করে, "বাবা, তুমি আমাকে বাবা বলো কেন?" উত্তরে বলি, "আমার বাবা নেই তো, তাই!"
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আমাদের ফ্যামিলি ট্র্যাডিশন আরো আজিব জুবায়ের ভাই। আমার দাদা যখন মারা যান, তখন আমার বাবা আমার দাদীর গর্ভে। আবার আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার ছেলে ওর মায়ের গর্ভে। তাই ভাবতেছি, ছেলেকে "ব্যাচেলর" হওনের সবক দেওন যায় কিনা। দীর্ঘজীবনের আপাতত এইটাই রাস্তা!!
সুমন, 'শিওর কিওর' বলে কিছু আছে?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আমার জানা নাই। এইটা কি কোনো ফ্রেজ?
সুমন, ইংরেজি কম জানি, ব্যাকরণ আরো কম। মার্কিন দেশে কথাটা বলতে শুনেছি।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
অনেকটা "সব মুশকিল আসান"এর মত শুনাইতেছে শব্দটা। তবে "শিওর" জিনিসটা তো পদার্থবিদ্যা থিকাও নাকি বিদায় নিছে, কোয়ান্টামের চক্করে পৈড়া। আর "কিউর" জিনিসটা যদি রোগবালাই সংক্রান্ত হয় তাইলে তো "পিউর" আর্টস!! সেই অর্থে, শিওর কিওর মনে হয় কাজীর গরুর মত জিনিস, কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালঘরে নাই!
আমার দাদা যখন মারা যার, আব্বা তখন ৬ বছরের। আব্বা খুব মজা করে বলেন, বাপ মরার খবর দিলেও আমি ঘুম থাইকা উঠবনা!
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমারে অবশ্য ঘুম থিকা তুইল্যাই বাপের মৃত্যুসংবাদ দিছিল আমার বউ।
ভালো।
______________________________________________
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
ঠিক @ সুমন। "অব্যর্থ মহৌষধ" জাতীয় কথা এককালে আয়ুর্বেদীয় ওষুধের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হতো। এই কথাটা সম্ভবত সেই অর্থেই।
পুত্রকে ব্যাচেলর থাকার পরামর্শ দিলেও তা পিতৃত্ব অর্জনে বাধা হবে কি? দিন বদলে যাচ্ছে দ্রুত।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
এইখানে একটা "শিওর কিওর" পলিসি আছে, ক্লিফ রিচার্ডের পুরান একটা গান, মুখটা এইরকম:
When I was young my father said,
Son I have something to say
And what he told me I will never forget
Until my dying day
He said, son you are a bachelor-boy
And thats the way to stay
Son, you will be bachelor-boy
Until your dying day!
আগের মন্তব্য লেখার সময় ঠিক এই গানটির কথা আমার মনে পড়েছিলো। কী করে জানলেন? গানটা অনেককাল শোনা হয়নি। আছে একটা ক্যাসেটে, খুঁজতে হবে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
হা হা হা টেলিপ্যাথি, জুবায়ের ভাই!
আপনাকে স্বাগতম । বহুকাল পরে একটা ভালো গল্প পড়লাম । ধন্যবাদ ।
ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ভাল লাগলো।
স্বাগতম আপনাকে।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নতুন মন্তব্য করুন