আয়না: আইজাক সিঙ্গার-এর গল্পের অনুবাদ (পর্ব ১)

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: শুক্র, ২৯/০৬/২০০৭ - ১১:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

small

১.
এক কিসিমের জাল আছে যেইটা মিথুসেলার মত আগিলা, মাকড়সার জালের মতন নরম ও ছ্যাঁদা-ছ্যাঁদা Ñ কিন্তু শক্তিসামর্থে কমতি নাই। কোনো শয়তান যখন অতীতকালের পিছে বা বাতাসকলের চক্করে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হৈয়া পড়ে, তখন সে কোনো আয়নার ভিতর প্রবিষ্ট হৈয়া যায়। সেইখানে জাল বিছায়া সে মাকড়সার মতই বৈসা থাকে, মাছি ধরা পড়বেই। খোদা দুনিয়ার রমণীকূলে দিছেন অন্তঃসারশূন্যতা Ñ বিশেষত যেসব রমণী ধনী, সুন্দরী, বাচ্চাকাচ্চাহীন, যুবতী এবং যাদের খরচ করার মত সময় বিস্তর আছে, অথচ সঙ্গীসাথী নাই।
...............................
..................................


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়লাম ।
প্রশ্ন হলো এরকম কথ্য ভাষায় কেনো লিখলেন? আপনি কি এরকম লিখতে সাবলীল? তাহলে কোনো কথা নাই । আমি যদি আমার কথ্যভাষা সিলেটীতে লিখতে সাবলীল হই, তাই লিখবো । কার তাতে কি?
কিন্তু এতে অন্য পাঠকের হোঁচট খাবার সুযোগ তৈরী হয় যারা আমার কথ্যভাষাতে সহজাত নয় ।

চলুক । বাকী পর্বের অপেক্ষায় ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

এটা আসলে বিশেষ কোনো অঞ্চলের কথ্যভাষা নয়, এখানে বরং ক্রিয়াপদগুলোকে একটা কথ্যরূপে লেখা হয়েছে, অন্যসব কিন্তু ঠিকই আছে। আঞ্চলিক শব্দ আছে, সেটা নিশ্চয়ই অসুবিধা করে না। একজন সিলেটি কথ্যভাষী হিসেবে এই ভাষায় আপনি হোঁচট খেলেন কিনা জানিয়েন।

পড়বার জন্য, এবং মন্তব্য করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সুমন রহমানের লেখা না পড়লে নিজের ক্ষতি,এটা মেনে নিয়েও পড়লাম না।
কেন পড়লাম না?কারন তাতে করে কথ্য ভাষায় দীর্ঘ লেখার ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ করা হলো।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

কথ্য ভাষায় হ্রস্ব রচনা যদি পড়া যায়, তবে দীর্ঘ রচনা না পড়ার আদর্শিক কারণ কী হতে পারে ভাবতেছি...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমিতো কথ্য পইড়া তেমন সমস্যা বোধ করলাম না। বরং আরও ক্লোজ মনে হইল বাস্তবের।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

??? এর ছবি

ধন্যবাদ মুর্শেদ। কথ্যে আমিও তেমন সমস্যা দেখি না, আর এজন্যই যখন প্রয়োজন লাগে ইউটিলাইজ করি। আরিফের মন্তব্যে ধন্দে পড়ে গেছিলাম, লেখ্য আকারে কথ্য কী সমস্যা করতে পারে তাই ভাবতেছিলাম। হতে পারে এইটা অনভ্যাসের কারণে হয়েছে আরিফের, কিংবা কোনো আদর্শিক বোঝাপড়া থেকে তিনি কথ্যকে কাগজে দেখতে চান না। আশা করি এ বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন।

কনফুসিয়াস এর ছবি

আগে পড়েছিলাম গল্পটা। এখন আবার পড়ছি আপনার অনুবাদে।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যদি কথ্য বলা হয়, এটা কার কথ্য? লেখকের? লেখক যদি মনে করেন তিনি তার সহজাত কথ্য ভাষায় লিখবেন-পাঠকের বলার কিছু নেই ।
আর লেখক যদি মনে করেন তার কথ্যটা সকল পাঠকের কাছে সহজাত হবে, তাহলে বোধকরি পাঠকবেচারার উপর একটু চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

সাহিত্যের ভাষা শেষপর্যন্ত লেখকেরই ভাষা। আর লেখকের ভাষা সবসময় পাঠকের কাছে "সহজাত" হবে এমনটা হয়ত না। আর পাঠককে বেচারা ভাবারই দরকার বা কি? তার সামর্থের ওপর আস্থা রাখা স্বাস্থ্যকর, লেখকের জন্য। পাঠকের জন্য কী সহজাত, সেটা সন্ধান করার চেয়ে লেখকের প্রয়োজন তার নিজের ক্ষেত্রে কী সহজাত সেটা সন্ধান করা। তাতে, বেচারা লেখক, পাঠকের রূচি দিয়ে শেপড হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াইতে পারেন বলে আমার ধারণা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দ্যাজ ইট! আমি এটাই বোঝতে চেয়েছিলাম ।
পাঠককে এড়িয়ে পারা যায়? পাঠককে এড়িয়ে যাওয়া যায়না বলেই আমরা আমাদের লেখার জন্য বাংলাভাষী পাঠক খুঁজি ।
আমি খাস সিলেটিতে লিখতে পারবো । সচলায়তনের পাঠক যারা-তাদের দুচারজন ছাড়া কেউই সেই ডায়ালেক্ট এর সিংহ ভাগ বোঝবেননা । এ ক্ষেত্রে আমার কাছে সহজাত আমার যে কথ্য ভাষা সেটা কতোটুকু মানানসই?
লেখালেখিটা কি আদতে একটা কমিউনিকেশন মিডিয়া নয়?
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

তর্কটা চালিয়ে যাওয়ার আগে আগের প্রশ্নটা আবার করা যাক। আপনি সিলেটি কথ্যভাষার একজন পাঠক হিসেবে আমার কথ্যভাষায় কতটুকু অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন জানাবেন কি? এর আগে মাহবুব মুর্শেদ জানিয়েছিলেন তার এই ভাষায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি । বাংলাদেশের প্রায় সকল কথ্য(খাস চট্রগ্রামের ছাড়া) ভাষার সাথে আমি পরিচিত । তবে নিঃসন্দেহে প্রমিত বাংলায় এর চেয়ে বেশী সাবলীল বোধ করি (প্রথমতঃ সিলেটী, তারপর প্রমিত বাংলা, তারপর আপনি যে কথ্য ব্যাবহার করেছেন-- সাবলীলতার সিকুয়েন্স টা এরকম হতে পারে)

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কথ্য ভাষায় আমার কোন আদর্শিক দ্বন্ধ নেই।
কিন্তু কথ্য ভাষায় লেখাটা পড়লে কেন যেন একাত্ম হতে পারি না।হয়তো অনভ্যাসের কারনেই।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

আমার ধারণা, খাস চট্টগ্রামের ভাষা ছাড়া বাকি সব কথ্যভাষার মধ্যে একটা নিবিড় আদানপ্রদান থাকায় তাদের বোঝার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হয় না। আপনি যেমন বুঝেছেন, আমার মনে হয় সিংহভাগ পাঠকেরই এমনি বোঝার কথা। এবার আসি আপনার আগের চিঠির প্রসঙ্গে: পাঠককে এড়ানো নিশ্চয় সম্ভব নয়। কিন্তু পাঠকের মর্জিমত লেখক সবসময় লেখেন না। পাঠকের চাহিদা এবং লেখকের লক্ষ্যের মধ্যে একটা ডায়ালেকটিকস থাকে। বা থাকা উচিত। সেখানে, সেই স্কেলে একজন লেখক কোন্ জায়গায় দাঁড়াবেন সেটা তার নিজস্ব বোঝাপড়া। তিনি হুমায়ুনের মত পাঠক-বান্ধব লেখক হতে মনস্থ করতে পারেন, কিংবা কমলকুমারের নীতি অবলম্বন করতেও পারেন। জাঁ জেনের একটা আলাপ আছে, সার্কাসের দড়াবাজদের নিয়ে। সেখানে তিনি বলছেন, দর্শকের অপরাধ কি? দর্শকের অপরাধ হচ্ছে, দড়াবাজ যখন তার সবচে কঠিন খেলাটা দেখায় তখন সে চোখ মুঁদে ফেলে। লেখক-পাঠক ডায়ালেকটিস-এ আমি এসব বিষয়আশয়কে গুরুত্ব দিই।

লেখার ভাষা একটা চাপানো ব্যাপার: সেটা সাহিত্যই হোক আর অসাহিত্যই হোক। যে মান বাংলা বা প্রমিত বাংলার কথা আপনি বলছেন, সেটাও যে চাপিয়ে দেয়া একথা আপনি মানবেন নিশ্চয়। লেখার ভাষায় নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাভাষায় কমলকুমার মজুমদারের ফরাসী সিনট্যাক্স ফলো-করা বাংলার কথা আমরা জানি, জেমস জয়েসের ইংরেজি নাকি মেইনস্ট্রিম ইংরেজি থেকে অনেকখানিই ভিন্ন এমনতো অনেকেই বলেন।
কথ্যভাষায় সাহিত্য আমরা বাংলায় কম পড়ি নি। তবে সেখানে ঐ কথ্যভাষা উদ্ধৃতির ঘেরাটোপের বাইরে আসতে পারে নাই। এভাবে সাহিত্যে ন্যারেটর-এর একটা নন-ফিকশনাল স্ট্যান্স দাঁড়ায়া গেছে: তার পজিশন, ভাবনা এবং ইমোশনাল এটাচমেন্ট পাঠক হিসেবে আমরা অনুমান করে ফেলতে পারি।

আমার অনুসন্ধানের বিষয় এই অবস্থাটা। সাহিত্যে ন্যারেটরকেও ফিকশনের অংশ করে তোলা যায় কিনা? অর্থাৎ যে গল্পটি বলা হচ্ছে, সেটি কে বলছে, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বলছে, সেসব নিয়েও ভাবনা জারি রাখা। কথ্যভাষার ন্যারেশন সেই প্রক্রিয়ার অংশ।

আরিফ জেবতিক জানালেন কথ্যভাষার সাথে তার কোনো আদর্শিক দ্বন্দ্ব নেই। বাঁচা গেল! না-পড়ার প্রতীকী প্রতিবাদ দেখে আমি উনার কোনো আদর্শিক বোঝাপড়ার অনুমান করেছিলাম। অনভ্যাসের ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই। নিজেদের অভ্যাসের টলারেন্স নিয়ে আমাদের আন্ডারএস্টিমেশন আছে। হয়তবা।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এজন্যই বলছি যে ছোট লেখাতে কথ্য ভাষা পড়তে পারি।আশাকরি বড়ো লেখাতেও পারব খুব তাড়াতাড়িই।

আমার মনে হয় ভাষার একটা বাক এখানে নেয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
একসময় সংস্কৃত ভাষায় না লিখলে সেটাকে লেখাই বলা যেত না,তারপর এই সেদিন পর্যন্ত সাধু ভাষার প্রতাপ ছিল দেখার মতো।তার বিবর্তনে এসেছে চলতি বা প্রমিত ভাষা।

যেহেতু প্রমিত ভাষাও আমাদের মুখের ভাষা নয়,আরো জীবন ঘনিষ্ঠ ভাষার জন্য হয়তো আমাদেরকে কথ্য ভাষাতেই যেতে হতে পারে।কথ্য ভাষায় ৫১ বর্তী'র মতো নাটক আনিসুল হক আর সারোয়ার কিন্তু টিভিতে নিয়ে এসেছেন,অথচ এর আগে নাটকে শহুরে মধ্যবিত্তের বৈঠকখানায় প্রমিত ভাষা ছাড়া কিছু ভাবতে পারতাম না।

কে যানে আগামী দিনের ভাষার গতিপথ হয়তো সুমন রহমান ,জামাল ভাষ্কর এদের লেখার মাঝদিয়েই পথ খুজে দেখছে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

সাহিত্যে কথ্যভাষা প্রয়োগের ব্যাপারে আমি কেস-বাই-কেস সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষপাতী। যেমন, "ডেঙ্গুচর্চার দিনগুলি" নামের একটা গল্পে আমি ন্যারেশন প্রমিত বাংলায় করেছি, কিন্তু সংলাপ রেখেছি কথ্যে। আবার "শায়লার দিকে যাওয়া" গল্পে ন্যারেশন কথ্য বাংলায়, সংলাপ কিন্তু প্রমিতে। এখানে যুক্তি হল, আমরা অনেক সময় প্রমিত ভাষায় আলাপ করি, কিন্তু মনে মনে আউড়ানোর জন্য কথ্যের দ্বারস্থ হই। আবার "ডুমরি" বা "মনোগ্যামির ভুত" গল্পগুলোয় প্রমিত বাংলা থেকে দূরে থেকেছি।
আপনি ঠিকই বলছেন, ভাষা প্রবহমান বিষয়। তবে এর গতিপথ পাল্টে দেয়া একজন বা দুজন সাহিত্যিকের কম্ম নয়। সাহিত্যিক প্রগনস্টিক্যাট করেন মাত্র, তার পর্যবেক্ষণ ভুল হতে পারে, ঠিকও হতে পারে। আর প্রমিত বাংলাকে রিপ্লেস করা সাহিত্যে খুব সহজ কাজ না। সেই চেষ্টার চেয়ে আমি ভাষার নিজস্ব রিফাইনারী সিস্টেমে আস্থা রাখতে বেশি পছন্দ করি। তবে, আমার ইচ্ছা আছে সাহিত্যের ভাষা নিয়ে গুরুচণ্ডালি করে দেখার।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওই টার্গেট গ্রুপ ব্যাপারটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি ধরে নেই কথ্য ভাষায় অভ্যস্ত জনগোষ্ঠী আমার টার্গেট পাঠক তাহলে আমি ওইভাবেই লেখব। যদি চাই শ্যালো চিন্তার মানুষদের জন্য লেখব তখন হুমায়ুন আহমেদের মত লিখব। টার্গেট গ্রুপটাই এখানে অনেকখানি অনুঘটক।

আরেকটা ব্যাপার আছে, গল্পে যে ধরনের চরিত্র নির্মান করা হচ্ছে তাদের পরিচিতি। এই গল্পে যেমন মনে হয়েছে, টার্গেট গ্রুপের চেয়ে শয়তানের "চলতি" ভাবটাই ফুটে উঠেছে ভাষাতে। একটা আলাদা ধার (শার্পনেস) বা রাফনেস এসেছে শয়তানের গপ্পে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

??? এর ছবি

ঠিক কথা মাহবুব মুর্শেদ। শয়তান, বিশেষ করে ইম্প বা পিচ্চি শয়তানের বক্তব্য আসলে প্রমিত বাংলায় ঠিকমত আসতেছিল না। আসার কথাও না অবশ্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।