এক ছিল চোর। চুরি করত সে, আর ধাওয়া খেলে, শহরের এক প্রান্তে একটা জনশূন্য দোতলা পোড়োবাড়ির নিচতলায় গিয়ে লুকিয়ে থাকত। সেই পোড়োবাড়ি ছিল আরো ভয়ানক। সেখানে মানুষকে নিয়ে এসে খুন করে গুম করা হত। ওরকম খুন করার দৃশ্য আমাদের সেই চোর অনেক দেখেছে সেই পোড়োবাড়িতে। দিনের পর দিন বেওয়ারিশ লাশগুলোকে সেখানে পড়ে থাকতেও দেখেছে। শুনেছে এক ডাইনি বুড়ির কথা, সেই বুড়ি ঐ লাশের বাড়িতে রাতবিরাতে ঘুরে। আমাদের চোর ছিল নিতান্ত সাধারণ একটা চোর, সেসব কাহিনী তার কাছে যথেষ্ঠ ভয়ের উপলক্ষ্য ছিল। তো একদিন সেই চোর খুব বাজে ধাওয়া খেল। উপায়ান্তর না দেখে সে ঐ দোতলা বাড়ির দোতলাতেই উঠে গেল প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। কিন্তু প্রাণ কি বাঁচবে? নিচে জনমানুষের ধাওয়া, আর উপরে ডাইনি বুড়ির ভয়! দুরকম ভয়েই কাঁপছিল সে, আর দেখছিল ঘরের মেঝেতে বেওয়ারিশ অনেক লাশ। একসময় সে দেখল সেই ডাইনি বুড়ি, মোমবাতি-হাতে একা একা ঘুরছে সেই লাশের রাজত্বে। আসন্ন মৃত্যুর আশংকা আমাদের চোরকে বোধয় কিছুটা বেপরোয়া করে ফেলে থাকবে। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে ঐ ডাইনি বুড়ির ওপর সর্বশক্তিতে। কঁকিয়ে ওঠল বুড়ি, কোনরকমে বলল, আর কোনদিন আসবে না এখানে। আরো বলল, সে আসলে পরচুলা বানায়, তাই এখানকার লাশের মাথা থেকে চুল খুলে নিতে আসত এখানে।
যতদূর মনে পড়ে, এটাই রিউনুসুকে আকুতাগাওয়ার "রাশোমন" গল্পের মূল কাহিনী। এই গল্পটির কথা ভাবছিলাম আজ। ভাবছিলাম, কিভাবে এক ভয়ানক ডাইনি বুড়ি নিতান্ত দুঃখিনী চুলটোকাই হয়ে যায়? বা কিভাবে একজন সাধারণ চুলটোকাই জনমানসে অতিকায় ডাইনীবুড়ির ফানুষ হয়ে দাঁড়ায়!
ভাবছিলাম বাংলাদেশের "শক্তিধর" সুশীল সমাজের কথা। যাদের শক্তিমত্তার ক্রিটিক ছিলাম আমরা, তবু তাদের কাছে সামান্য কিছু ইতিবাচকতার প্রত্যাশাও কি ছিল না আমাদের? ক্ষমতার কাছাকাছি আছেন তারা, ফলে অদ্ভূত একটা স্বস্তিও ছিল কোথায় যেন। এই দেশ অন্তত মৌলবাদীদের আখড়া হয়ে পড়বেনা, এমন মনে হত।
আর এখন কী হল? সুশীল সমাজের সম্পাদক মতিউর রহমান উবু হলেন বায়তুল মোকাররমের খতিবের সানুদেশে! বললেন, হুজুর আমাকে ডাইনি বুড়ি ভেবেছেন খামোখাই, আমি তো নিতান্ত চুল টোকাই, পরচুলার ব্যবসা আমার পেশা!
মন্তব্য
সুমনীয়।
হুমম। খোলশ ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ডাইনী বুড়ি আর চোর তো পাওয়া গেল। লাশগুলা কি আমরা?
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
একশ তে একশ।
বনসাই মাত্র ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই ঘটনা দুঃখজনকভাবে প্রমাণ করেছে, আমাদের সো-কলড রোবাস্ট সিভিল সোসাইটি আদতে সেই ন্যাংটা রাজার মিথ।
মনে হয়েছে, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার চেয়েও ভয়াবহ এবং সুদূরবিনাশী প্রভাব পড়বে এই হাঁটুগাড়া ক্ষমা প্রার্থনার।
.................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
একমত
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
একমত।
-------------------------------------------------
'অত্তাহি অত্তনো নাথো, কোহিনাথো পরোসিয়া'
নিজেই নিজের প্রভু, অন্য কোন প্রভুর প্রয়োজন নাই।
হায়!
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
সিভিল সোসাইটি...
গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা
আগামী নির্বাচনে এই মাফ চাওনের গল্প কেমনে কাজে লাগাইবো মোল্লাতন্ত্র সেইটা ভাবতেছি...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
"সিভিল" প্রসঙ্গে সিবিলের গল্প মাথায় আসল। আলাদা পোস্ট না দিয়ে বরং এই পোস্টের লেজেই বলি:
পুরকালে সিবিল নামে একজন ছিল। একবার দেবতা তার ওপর খুশি হয়ে তাকে যা খুশি বর চাইতে বললেন। সিবিল জানাল, সে অমর হতে চায়। দেবতা সিবিলকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বললেন। কিন্তু সিবিল অনড়। সে কোনোদিন মরতে চায় না। অবশেষে তাই হল। দেবতার বর পেয়ে অমর হয়ে গেল সিবিল।
দিন যায়, বছর যায়, যুগ যায়, শতাব্দীও যায়। কিন্তু সিবিল মরে না। ওর ছেলেপুলে নাতিনাতনী সব মরে ভুত। আর সিবিল বুড়ো হতে হতে, ছোট হতে হতে, শেষটায় একটা বানরের মত হয়ে গেল। উত্তরপুরুষেরা তাকে একটা খাঁচায় করে বারান্দায় ঝুলিয়ে দিল।
দুষ্ট ছেলের দল সে পথ দিয়ে যখন খেলতে যেত, সিবিলের খাঁচার সামনে একদণ্ড থামত ওরা। জিজ্ঞেস করত, সিবিল, কী চাও?
সিবিল কোনরকমে বিড়বিড় করে বলত, মরতে চাই।
এই হচ্ছে গল্পটা। এখন ভাবছি, আমাদের সিভিল-রাও কি মৌলবাদীদের খপ্পরে শেষমেষ এই তরিকায় অমর হয়ে যাবার রাস্তা ধরছে!
..................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
নতুন মন্তব্য করুন