১৯৯৩ সালের কথা। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভৈরব ফিরে গেছি, পুরোদমে কবিতার ভিতর। আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী বলতে ইমরুল হাসান আর আমিনুল বারী শুভ্র। প্রতিদিন সকালে আমি লিখতে বসতাম, বিকালবেলায় শুভ্র আর ইমরুল আসত, বেরুতাম ওদের সাথে। ওরা আমাকে নিয়ে যেত এক খাড়ির পাশ দিয়ে। যেতে যেতে দেখতাম, ভাঙ্গাচোরা লঞ্চ, শ্যালো ইঞ্জিনের প্রপেলার স্তূপ করে রাখা, ফায়ার সার্ভিসের সেই কবে ডুবে-যাওয়া এক মোটর লঞ্চের মাস্তুলের চূড়া। ঐ খাড়ির পাশ দিয়ে প্যারাবোলা-আকারে বেঁকে যাওয়া এক পরিত্যক্ত রেলপথ। এক শীতে, ভাবলাম, শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে যাওয়ার আগে এই ছোট্ট খাড়িটিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া যাক।
লালাবাই//
জলডাকাতদের আস্তানা উঠে গেল মেঘালয়ের হাওয়ার
শাসানি শুনে, সেই থেকে
মৌন নৌকাগুলো, ওদের শ্যালো খুলে নেয়া হয়েছে
যেন কুয়াশার শাদা থান পন্ড করে দিয়েছে ওদের
বিদ্যাসাগরীয় অভিলাষ
কয়েকটি লঞ্চ শুধু ন্যুব্জ ঘোড়ার মত ঝিমাতে ঝিমাতে
কাঠমিস্ত্রীদের সমালোচনা শুনছে
এখনও তুমি চোখের ওপর থেকে সরিয়ে দিচ্ছ কচুরি দাম
এখনও বুঝতে চাইছ শোকগ্রস্থ হবার কী কারণ ঘটেছে
পাতাঝরানো জারুল গাছটির
আমার নতুন পুলওভারটিও তোমায় জিজ্ঞাসু করে তুলছে!
ছোট্ট খাড়ি, তোমার উদ্যম এখও মেশে নি বঙ্গোপসাগরে
বিভিন্ন পুস্তক থেকে দু-দশ পৃষ্ঠা পড়ে শোনালেও
তুমি বুঝবে না সুদূর মেরুতে রাত্রি কী অর্থ বহন করে, কেনইবা
সূর্য সেখান থেকে পালিয়ে তোমার দৃষ্টিসীমায়
টমাটো হয়ে ফুটতে চায়!
আমাকে বিষণ্ণ দেখে তুমি জিজ্ঞেস করবে না
সিন্ধুঘোটকের চর্বি গলতে শুরু করেছে কি না
তোমার ঘাটে ঘাটে বলিরেখার মত স্পষ্ট হচ্ছে শ্যাওলা
স্রোতশিলাগুলো থিতিয়ে যাবার পর থেকেই তোমাকে
ঘুমিয়ে যেতে বলছি, গান গাইছি
আর তুমি হাততালি দিচ্ছ বাতিল ওয়াগনের চাকায়
লতিয়ে ওঠা কাঁটাঝোপের সাফল্যে!
ঘুমাও, দূরের মাঠে আগুন জ্বালিয়ে
তরুণদের প্রেমের গল্প জমে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পড়
ঐ আগুন পোহাবার পক্ষে তোমার হাত যথেষ্ট দীর্ঘ নয়
তাছাড়া তোমার দাঁতও শিরশির করবে
আমলকিগুলোর টসটসে হাবভাবে
চিটাগুড় আর আলকাতরায় মাখামাখি নদী আর বন্দর
ওদেরও মাথা ভারি হয়ে আছে সপ্তডিঙার বিরহে
স্রোতস্বিনী -- মা-বাবার বকাঝকা শুনতে শুনতে শুকিয়ে যাওয়া
মধ্যবিত্তের আইবুড়ো মেয়ে
যেন বুধবার বিকেলের গৃহগামী ব্যস্ততায় হারিয়ে গেছে
ওর নতুন দুলজোড়া
যেন ওর অপরাধ অশ্রুপাতেরও যোগ্য নয় - তোমার
অভিযোগের আগেই
ভগ্ন বন্দর তার গুমোট গুদামগুলোতে
তালাবদ্ধ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
তোমার তলদেশ আবার লালায়িত
ধানচারার গোড়ার অংশ কামড়ে ধরার আশায়
প্রাদেশিক সীমারেখার মত প্রকট হয়ে উঠছে গোপাট -- মুখর হয়ে উঠছে
ভিতরের লাটভিয়া এস্তোনিয়াগুলো
চারদিকে শামুকেরই দেশপ্রেম আজ
দেশান্তরিত মত্ স্যসমাজ
হৈ হৈ হাঁসের ডামাডোলে খুব আর্ত বোধ করছে
একটি জলঢোঁড়া
১৯৯৩
মন্তব্য
অসাধারন! আপনার গল্পগুলো পড়লে মনে হয় আপনি আসলে বেটার গল্প লেখক। আবার কবিতা পড়লে মনে হয় আপনি আসলে কবি হিসেবেই বেটার। চলুক।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ঐ আর কি! কবিতার গল্পগুলো বা গল্পগুলোর কবিতা।
আসল কথা মনকে ছুঁয়ে যাওয়া, নাড়া দেয়া।
আমাদের ভাগাভাগির শিল্প।
ছবিটা নিশ্চয়ই সেই খাড়ির না। নেট থেকে সংগ্রহ? কিন্তু খুব ভালো মিলেছে বর্ণনার সঙ্গে।
ঠিক এরকম সত্যি সত্যি খাড়ি না থাকলেও চলবে।
কাব্যের সত্যই সত্য।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ছবিটা নেট থেকে সংগ্রহ করা, ঠিক ধরেছেন শোমচৌ। ধন্যবাদ, সঙ্গে থাকার জন্য। এহসান লেনিন ও সুমন চৌধুরী.... ধন্যবাদ।
...............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
চলবে শিউর! নিঃশ্বাস নিতে দেবো না তোমাকে নিঃশ্বাস নিতে দেবো না!!
......................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
......................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
সুন্দর, অসাধারণ। আর কোনো কিছু প্রশংসনীয় উপমা আমার জানা নেই। অন্তত এই মুহূর্তে।
দারুন হয়েছে।
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
ভালৈছে।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সিকদার আমিনুল হক ।
পুরো আন্তর্জাতিক কবিতা । ছবি,কাব্য,স্পর্শ,ভালো লাগা সব মিলিয়ে
---------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সিকদার আমিনুল হক?
............................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
ঐ আর কি । আসমুদ্রহিমাচল । তুষারপাত,মরুঝড় সব মিলেঝুলে
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনি আমার মাথা খারাপ করে দিতেছেন সুমন ভাই, খেলুম না!
কিন্তু, দীর্ঘ কবিতা ট্যাগ কই?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এইটা আসলে আয়তনের দিক থেকে দীর্ঘ, কিন্তু মেজাজের দিক থেকে না। দীর্ঘ কবিতার একটা স্পেসিফিক মেজাজের বিষয় আছে, মানে একটু এপিকধর্মিতা বোধয় দরকার হয়। এই কবিতায় সেটা নেই বলে মনে হচ্ছে।
ধন্যবাদ তারেক।
.........................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
সাংঘাতিক।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
নতুন মন্তব্য করুন