এক বুড়ার কাহিনী বলি, বোবা হয়ে গিয়েছে সে, অবসাদে-ভরা একটা মুখ, হাসবার কিংবা রাগ করবার জন্য যথেষ্ট ক্লান্ত। ছোট একটা শহরে থাকে, গলির শেষ মাথায় বা সদর রাস্তার কাছাকাছি। তার চেহারার বর্ণনা দেয়া আদতে নিরর্থক, কারণ পাঁচজন থেকে তাকে আলাদা করার মত খুব সামান্য কিছুই হয়ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তার মাথার টুপি ছিল ছাইরঙা, ট্রাউজার ছাইরঙা, পরনের জ্যাকেট ছাইরঙা, শীতকালে লম্বা যে ওভারকোটটা পরত সেটাও ছাইরঙা। তার গলা ছিল চিকন এবং ঘাড়ের চামড়া ছিল শুকনা ও কোঁচকানো, ফলে শাদা শার্টের কলার তার গলায় অনেকখানিই ঢলঢলে লাগত।
বাড়িটার সবচে উপরের তলার চিলেকোঠায় থাকে সে, হয়ত একসময় বিয়েশাদী করেছিল আর বাচ্চাকাচ্চাও ছিল, হয়ত আগে অন্য কোনো শহরে থাকত। একসময় সেও নিজেও নিশ্চয়ই শিশু ছিল, তবে সে সময়টায় বাচ্চারা বড়দের পোশাক পরত মনে হয়। দাদীর ছবির অ্যালবামে এইরকম জিনিস পাওয়া যাবে। বুড়ার ঘরে দুইটা চেয়ার, একটা টেবিল, একটা কার্পেট, একটা খাট আর একটা ওয়ার্ডরোব। ছোট্ট একটা টেবিলের ওপর একটা এলার্ম ঘড়ি, তার পাশে পুরান সংবাদপত্রের ¯তূপ আর একটা ছবির অ্যালবাম, তার পাশে একটা আয়না আর দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবি।
সকালে হাঁটতে বের হত সেই বুড়া, আবার বিকালেও হাঁটত, পাড়াপড়শির সাথে টুকটাক দুয়েকটা কথা বলত, এবং সন্ধ্যায় আবার টেবিলে এসে বসত।
এর কোনো ব্যতিক্রম হত না, এমনকি রোববারেও একই রুটিন। টেবিলের সামনে বসেই লোকটা এলার্ম ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পেত, সবসময় সে এলার্ম ঘড়ির শব্দ শুনতে পেত।
তারপর একদিন সেই বিশেষ দিন এল, সূর্যকরোজ্জ্বল একটি দিন, খুব গরমও না, আবার খুব ঠান্ডাও না, পাখপাখালির কিচিরমিচিরে ভরা একটা দিন, বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার মত একটি দিন, বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখার মত - এবং সবচে বিশেষ যে ঘটনাটি ঘটল সেটা হল ঐ দিনটি আমাদের বুড়ার মনে প্রভূত সন্তোষ বয়ে আনল।
হাসল সে।
“এখন সবকিছু বদলে যাচ্ছে দেখছি”, ভাবল সে। শার্টের উপরের বোতামটা খুলে দিল, টুপি হাতে নিল, আর হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল। অনেকদূর হেঁটে এল সে, যতক্ষণ না হাঁটুতে আরাম লাগতে শুরু করে, খুব খুশি দেখাচ্ছিল তাকে। তারপর নিজের গলিতে ফিরে এল, বাচ্চাদের দেখে মাথা নোয়াল, বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে গেল, সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠল, পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলল।
কিন্তু তার ঘরের সবকিছু আগের মতই ছিল, একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার, একটা খাট। আর যখনি সে বসল, বরাবরের মতই ঘড়ির টিকটিক শব্দও কানে এল তার, নিমেষে সব আনন্দ যেন উধাও হয়ে গেল তার মন থেকে, কোনো কিছুই বদলাল না বলে।
ভীষণ রাগে গা জ্বলতে লাগল বুড়ার।
আয়নায় খুটিয়ে খুটিয়ে সে তার নিজের লাল হয়ে-ওঠা মুখটা দেখল, তারপর হাত নামিয়ে আনল টেবিলের ওপরে, প্রথমে একটা টোকা দিল, তারপর আরেকটা, তারপর সে পাগলের মত টেবিল বাজাতে আরম্ভ করল আর চেঁচাতে লাগল বারবার:
“বদলাইতে হবে। বদলাইতে হবে!”
এর ফলে আর সে এলার্ম ঘড়ির শব্দ শুনতে পেল না। কিন্তু একটু পর হাতে ব্যথা অনুভব করতে লাগল সে, গলাও ধরে এল, এবং তারপর আবার সে এলার্ম ঘড়ির শব্দ শুনতে শুরু করল এবং কোনকিছুই বদলাল বলে মনে হল না।
“প্রতিদিনই সেই একই টেবিল”, বলল বুড়া লোকটা, “একই চেয়ার, বিছানা আর ছবি। এবং টেবিলকে আমি টেবিলই বলছি, ছবিকে ছবি, আর চেয়ারকে চেয়ার। কেন, কোনোদিন ভেবেছি কি সেটা? ফ্রেঞ্চরা বিছানাকে বলে ‘লি’, টেবিলকে বলে ‘তাহবল’, ছবিকে বলে ‘তাহব্লো’ আর চেয়ারকে ‘শেজ’, এবং তারা একজন অন্যজনকে ঠিক বুঝতে পারে। চীনারাও তো একে অন্যকে ঠিক বুঝতে পারে।”
“খাটকে ছবি ডাকলে কি সমস্যা?” ভাবল লোকটা আর হাসল নিজের মনে, এবং হাসতেই থাকল, যতক্ষণ না ওর পাশের ঘরের প্রতিবেশী দেয়ালে বাড়ি মেরে ওকে থামতে বলল।
“এখন তাইলে সব বদলাইতে শুরু করছে”, সে চেঁচিয়ে বলল এবং তখন থেকেই সে খাটকে “ছবি” বলে ডাকতে আরম্ভ করল।
“কাহিল লাগতেছে, ছবিতে যেতে চাই”, বলল সে, এবং প্রায় সকালেই সে বহুক্ষণ ছবিতে শুয়ে থাকল এরপর থেকে, ভাবতে লাগল চেয়ারকে কী বলে ডাকা যায়, এবং এভাবেই চেয়ারকে সে “এলার্ম ঘড়ি” বলে ডাকতে শুরু করল।
কাজেই সে বিছানা ছেড়ে, কাপড় পরে, এলার্ম ঘড়ির ওপর বসল, এবং টেবিলের ওপর হাত বিছিয়ে দিল। কিন্তু টেবিলের নাম তো আর টেবিল নাই, ততক্ষণে সে “কার্পেট” নাম পেয়ে গেছে। সুতরাং সকালবেলায় আমাদের বুড়া ছবি ত্যাগ করে, কাপড় পরে, তারপর কার্পেটের পাশে এলার্ম ঘড়ির ওপরে এসে বসে, আর ভাবে কোনটাকে কী ডাকা যায়।
বিছানাকে সে ছবি ডাকতে শুরু করল।
টেবিলকে সে কার্পেট ডাকতে শুরু করল।
চেয়ারকে সে এলার্ম ঘড়ি বলতে শুরু করল।
খবরের কাগজকে সে বিছানা বলতে আরম্ভ করল।
আয়নাকে সে চেয়ার বলে ডাকতে শুরু করল।
এলার্ম ঘড়িকে সে ছবির অ্যালবাম বলে ডাকতে শুরু করল।
ওয়ার্ডরোবকে সে খবরের কাগজ ডাকতে শুরু করল।
কার্পেটকে সে ওয়ার্ডরোব বলে ডাকতে শুরু করল।
ছবিকে সে টেবিল নামে ডাকতে শুরু করল।
ছবির অ্যালবাকে সে আয়না ডাকতে শুরু করল।
কাজেই:
সকালবেলা আমাদের বুড়া অনেকক্ষণ তার ছবির মধ্যে শুয়ে থাকে, নয়টায় ছবির অ্যালবাম বাজতে শুরু করে, তখন সে উঠে দাঁড়ায় ওয়ার্ডরোবের ওপরে, যাতে তার পায়ে ঠান্ডা না-লাগে, তখন সে খবরের কাগজের ভেতর থেকে কাপড়চোপড় বের করে পরে, দেয়ালে ঝোলানো চেয়ারের দিকে তাকায়, তারপর কার্পেটের পাশে এলার্ম ঘড়ির ওপর বসে বুড়া আয়নার পাতা উল্টাতে থাকে যতক্ষণ না সে তার মায়ের টেবিলটা খুঁজে পায়।
এই খেলায় খুবই মজা পেল বুড়া, সারাদিন ধরে খেলতে লাগল, তার স্মৃতিভান্ডারে যত শব্দ আছে সব নিয়ে। প্রতিটি জিনিসকেই সে নতুন নাম দিল। এখন সে আর কোনো মানুষ না, একটা পা মাত্র, আর পা হচ্ছে সকাল, আর সকাল হচ্ছে মানুষ।
এবার তুমি তোমার নিজের জন্য এই কাহিনী এগিয়ে নিতে পার। আর এভাবে, ঐ বুড়ার মত, তুমিও অপরাপর শব্দগুলোকে বদলে দিতে পার।
ঘন্টা বাজানো মানে হল দাঁড়ানো।
শীত লাগা মানে হল তাকানো।
মিথ্যা বলা মানে হল ঘন্টা বাজানো।
জেগে ওঠা মানে হল শীত লাগা।
দাঁড়ানো মানে হল পৃষ্ঠা উল্টানো।
কাজেই আমরা এমনটা পেতেই পারি:
মানুষবেলা বুড়া একটা পা ছবির মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে ঘন্টা বাজাল, নয়টায় ছবির অ্যালবামটা দাঁড়িয়ে গেল, বেচারা পা ঠান্ডা ফিল করতে লাগল, আর তাই ওয়ার্ডরোবের পাতা উল্টাতে লাগল যাতে করে তার সকালটাকে ঢেকে ফেলা যায়।
বুড়া একটা নীল রঙের খাতা কিনে আনল এবং নতুন নতুন সব শব্দ বানিয়ে সেসব লিখে লিখে খাতা ভরিয়ে ফেলল, ফলে সে আগের চেয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ল, এবং এখন রাস্তায় তাকে খুবই কম দেখা যায়।
এভাবে সে চারপাশের সব জিনিসের নতুন নাম শিখে ফেলল এবং পুরনোগুলো একটা একটা করে ভুলে যেতে লাগল। এভাবে একটা নতুন ভাষা তৈরি হয়ে গেল যেটা একান্ত তার।
এভাবে সে তার নতুন ভাষায় স্বপ্ন পর্যন্ত দেখতে শুরু করল, স্কুলে যেসব গান গাইত সে, ওগুলোকে এখন এই নতুন ভাষায় অনুবাদ করে করে আপন মনে একা একা গাইতে শুরু করল।
কিন্তু দেখা গেল ঐ অনুবাদের কাজই কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য, কারণ সে পুরনো ভাষাটা প্রায়-একদমই ভুলে গেছিল, এবং পুরনো শব্দের অর্থ বের করার জন্য তাকে প্রায়ই নীলরঙা খাতাটা ঘাঁটতে হত। লোকজনের সাথে কথা বলতে ভয় পেতে লাগল সে, কারণ কোনো জিনিসকে লোকেরা কী নামে ডাকে সেটা মনে করার জন্য তাকে বহুক্ষণ স্মৃতি হাতড়াতে হয়।
তার ছবিকে লোকেরা ডাকে বিছানা।
তার কার্পেটকে লোকেরা ডাকে টেবিল।
তার এলার্ম ঘড়িকে লোকে বলে চেয়ার।
তার বিছানাকে লোকে বলে খবরের কাগজ।
তার চেয়ারকে লোকে বলে আয়না।
তার ছবির অ্যালবামকে লোকে বলে এলার্ম ঘড়ি।
তার খবরের কাগজকে লোকে বলে ওয়ার্ডরোব।
তার ওয়ার্ডরোবকে লোকে বলে কার্পেট।
তার টেবিলকে লোকে বলে ছবি।
তার আয়নাকে লোকে বলে ছবির অ্যালবাম।
আর বিষয়টা এমন দাঁড়াল যে, লোকের কথাবার্তা কানে গেলেই বেদম হাসতে শুরু করত সে।
“কাল কি তুমি ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাচ্ছ?” অথবা কেউ যদি বলল, “দুই মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে” বা বলল, “আমেরিকায় আমার এক চাচা থাকে”।
বুড়া হেসে হেসে লুটোপুটি খায় কারণ এসব বাক্যের একবর্ণও বুঝতে পারে না সে।
কিন্তু এটা কোনো হাসির গল্প নয়। এর শুরু হয়েছিল বিষাদ থেকে আর শেষটাও বেদনার।
ছাইরঙা কোট-পরা আমাদের বুড়া এখন আর কারো কথা বুঝতে পারত না, কিন্তু সেটা বড় সমস্যা ছিল না।
সমস্যা যেটা হল, লোকেও তার কথার একবর্ণ বুঝতে পারত না।
আর এ কারণেই সে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। বোবা হয়ে গেছিল।
চুপচাপ থাকত সে।
আর নিজের সাথেই কথা বলত।
লোকজন তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আগের মত আর মাথাও নোয়াত না সে।
ভাষান্তর: সুমন রহমান
মন্তব্য
এই বুড়ার বেদনা আমার হৃদয় ছুঁইয়া যায়...এমনকি তার হাসিও আমার দুঃখবোধ জাগায়...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
পড়লাম। অর্থহীন কথামালা বইল্যা মনে হইল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অ্যানিমেল ফার্মীয় গল্প।
মন্দ নয়।
সুমন ভাইকে ধন্যবাদ।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
পিটার বিকসেল এই ক্ষীনদেহী গল্পগুলো দুর্দান্ত । আপনার অনুবাদ ও ঝরঝরে ।
এই অংশ কি একটু খেয়াল করবেন? কাপড়ের নাম এখানে বদলে যাওয়ার কথা নয়?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার মনে হয় এখানে কাপড় মানে সংবাদপত্র... নাকি?
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
তাহলে 'পরে'র বদলে 'পড়ে' হবে
ধন্যবাদ সবাইকে। ইমরুল, নতুন করে বিক্সেল অনুবাদ করার পেছনে একটা ছোট্ট উদ্দেশ্য ছিল। আমি এই গল্পটা সচলের তথা ব্লগের পাঠকরা কিভাবে কম্যুনিকেট করেন সেটা দেখতে চেয়েছিলাম। সেটা দেখার সাধ কিঞ্চিত্ হলেও মিটেছে।
হাসান মোরশেদ (এবং আপদ), না ঠিকই আছে। " কাপড় পরে"ই হবে, মিলিয়ে দেখলাম আবার। হয়ত তখনো কাপড় পরার অনুবাদ/বিকল্প কিছু বার করতে পারে নাই বুড়া।
অমিত আহমেদ, এনিম্যাল ফার্মীয় গল্প মনে হৈল ক্যান? একটু ব্যাখ্যা পাইলে আরাম লাগত।
মাহবুব মুর্শেদ, অর্থহীন কথামালাই বটে। আসলে, এক অর্থে, প্রব্লেম অব মীনিং-ই বিক্সেল-এর বেসিক থিম, বিভিন্ন গল্পে। এই অর্থহীনতা, তথা অর্থের ফ্লেক্সিবিলিটি-ই তার ক্ষমতার উত্স। নইলে, ইংরাজি ভাষায় মাত্র দুইটা গল্পগ্রন্থ অনুদিত হওয়া সত্বেও পিটার বিক্সেল-কে লোকে জীবিত লেখকদের মধ্যে এত ওপরে র্যাংকিং করেন ক্যান?
ভাস্কর, ধন্যবাদ। তোমার বিক্সেল-প্রীতি আমার অনূমিত ছিল।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
গল্পটা দারুন লাগলো। নাড়া দিলো খুব। সাধু...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পিটার বিক্সেলের কোন পুস্তক কি বাংলায় অনূদিত হইছে ?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কথাটা হালকা চালে বলা - এক গল্প লিখে আরেক গল্প বলার ধরনটা হাইলাইট করা। পাথ্যর্ক শুধু ওই জায়গার কাজটা স্থূল, এখানে সূক্ষ - আর এ জন্যই গল্পটা আমার ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সুমন ভাই।
(আমি প্রথমবার পড়ে ভাবছি বদ্দার লেখার স্টাইল তো দেখি আমূল বদলায় ফেলছে... কাহিনী কি? এইটা কি অনুবাদের স্বার্থে? পরে দেখি সুমন ভাই আর বদ্দার মধ্যে গুলায়া ফালাইছি... )
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
এই গল্পটা বাংলা অনুবাদে প্রথম পড়ি ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ইফফাত আরা সম্পাদিত সাহিত্য কাগজ 'দ্বিতীয় চিন্তা'য়, ১৯৯৩ বা ১৯৯৪-এর দিকে। প্রাবন্ধিক, অনুবাদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী (কথাসাহিত্যিক ইফফাত আরার বড়ো ছেলে) এটির যোগান দিয়েছিলেন। অনুবাদটি ছিল মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
তখন গল্পটা কেমন লেগেছিল মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে দ্বিতীয় চিন্তার কার্যালয়ে কয়েকজন কবিবন্ধু মিলে গল্পটা আমরা শব্দ করে পড়েছিলাম ও পাঠোত্তরে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনায় মেতেছিলাম। এরপর থেকে আমাদের কারো কারো লেখালেখিতে এর একাধটু প্রভাবও পড়তে থাকে, অদ্ভুত ও মানেহীন শব্দ দ্বারা মানেযুক্ত শব্দ রিপ্লেস হওয়ার ভিতর দিয়ে। সেটা কীরকম তার একটা উদাহরণ দিই জহর সেন মজুমদার থেকে। তিনি লিখলেন 'পেঁপেঁগাছের হাতের লেখা কেমন?' ধরা যাক, এই বাক্যের 'পেঁপেঁগাছ' নামপদটি দ্বারা 'সালমাআপা' বা অন্যকোনো নামপদ রিপ্লেসড হয়েছে। সেরকমই তো হবার কথা, তাই না? কারণ বস্তুতপক্ষে পেঁপেঁগাছের তো আর হাতের লেখা থাকতে পারে না।
যাহোক, সুমন রহমানের কল্যাণে একযুগেরও বেশি সময় পরে গল্পটা আবার পড়ে মনে হলো অবসরগ্রস্ত প্রায়নিষ্কর্মা নিঃসঙ্গ মানুষের জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাবার এটি একটি মজাদার খেলা। যে খেলা অনেক তরুণ লেখকও খেলেন প্রচল, একঘেঁয়ে ও অভ্যস্ত ঘরানার থেকে বাইরে বেরিয়ে নতুন স্বর ও ঢং রপ্ত করবার আকাঙ্ক্ষায়। এ গল্পের বুড়োর পরিণতিটা অবশ্য এরকম ইঙ্গিত দেয় যে, খুব বেশি নতুন হবার ফল বিষাদাত্মক হয় বা হতে পারে। শব্দ-বাক্য খুব অচেনা হয়ে যাওয়ায় পাঠকরা তাঁকে বুঝতে পারেন না, তাই মুখ ফিরিয়ে নেন অন্যদিকে। এই বুড়ো যেমন যোগাযোগ করতে না পারায় বোবা হয়ে গেছেন, ওই তরুণ লেখকও তেমনই যোগাযোগসক্ষম না হয়ে আর লিখতে পারেন না।
পিটার বিকসেলের গল্পের বাংলা অনুবাদ বই আকারে বাংলাদেশেই বেরিয়েছে। অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব সম্ভব সেটা আজকের কাগজ গ্রুপের প্রকাশনী 'কাগজ প্রকাশন' থেকে। তথ্যটা কাল কনফার্ম করতে পারব।
মানবেন্দ্র অনুবাদ করেছিলেন গল্পটার। আরো কেউ করেছিলেন বোধয়, ইমরুল বলেছে যে শিশুসাহিত্য হিসেবে বাংলায় বের হয়েছিল বিকসেল-এর বই। এর কারণ এই যে বিকসেল-এর একটা বইয়ের নাম ইংরেজিতে "স্টোরিজ ফর চিলড্রেন"।
ধন্যবাদ মুজিব আর নজরুলকে।
আমার সংগ্রহে/আয়ত্তে বিকসেল-এর দুইটা বই আছে: স্টোরিজ ফর চিলড্রেন, আর "এন্ড রিয়েলি ফ্রাউ বাম...."। সম্ভবত আর কোন বই ইংরেজিতে পাওয়া যায় না। কিন্তু জর্মনে তো নিশ্চয়ই আছে, বিশেষত এখনো বিকসেল বেঁচে আছেন। যারা জর্মনমুল্লুকে থাকেন এবং জর্মন জানেন তারা কি একটু খোঁজখবর দেবেন দয়া করে?
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
পিটার বিসকেলের গল্প নামেই কলকাতা থেকে একটা সংকলন বের হয়েছিল। অনুবাদকের নাম মনে নাই। আমার কপিটাও অনেকদিন খুঁজে পাচ্ছি না। কোন এক বিটকেল মেরে দিয়েছে নিশ্চয়!
আজ সকালে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানলাম, 'কাগজ প্রকাশন' পিটার বিকসেলের গল্পের অনুবাদ প্রকাশ করে নি। এক্ষেত্রে আমার আরেকটি সম্ভাবনার কথা মনে পড়ে, সেটা হলো মফিদুল হক ভাইয়ের 'সাহিত্য প্রকাশ' বইটি প্রকাশ করে থাকতে পারে। কিন্তু 'জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র' প্রকাশিত 'বাংলাদেশের বই ১৯৯৮' এ প্রকাশনীটির যে ফোন ও ফ্যাক্স নাম্বার দেয়া আছে তার কোনোটিই ঠিক নেই। ফলে ওদের সঙ্গে যোগাযোগটা করে উঠতে পারলাম না।
নাকি 'আপদ' যে তথ্য দিলেন সেটাই ঠিক! আমি কি তাহলে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বইটিই দেখেছি? যাহোক আমি আরো খোঁজ নেব।
কাগজ থেকে বের হয়েছে বলে আমারও মনে হয়না... হইলে চোখ এড়াইতো বইলা মনে হয়না। কি জানি হইতেও পারে। খোঁজ নিবো।
তবে এই না পড়া গল্পটার সন্ধান দানের জন্য কৃতজ্ঞতা... এতটুকুই যথেষ্ট... এবার আমার দায় পিটার বিক্সেলকে খুঁজে নেওয়া। আশা করি পাবো।
মফিদুল ভাইয়ের ফোন নম্বর সম্ভবত আমার কাছে আছে...
মুজিব মেহদীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যতই পাগল হোক
টাকা আর খাবারের নাম কিন্তু বদলায়নি
ইহাকে বলে জেএমটিটি
(জাতে মাতাল। তালে ঠিক)
পিটার বিকসেলের এই অনুবাদ গ্রন্থটি পেলে ভালো হতো। আমি সংগ্রহ করেছিলাম দেশ পত্রিকা থেকে। সে বহুদিন আগের কথা। ১৯৯২-৯৩ হবে। অভিভূত হয়েছিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন