সকালে অফিস এসে বাংলাদেশের একটা শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলতেই চোখে পড়ল খবরটা। 'হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করায় আ.লীগ নেতার ৫৭ ধারার মামলা, গ্রেফতার ২' শিরোনামে খবরটার সারমর্মঃ মোহন কুমার মন্ডল নামক এক ভদ্রলোককে ৫৭ ধারার আওতায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গ্রেফতার করা হয়েছে, 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার' অভিযোগে। বাদী হিসেবে মামলা করেছিলেন শ্যামনগর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর কবীর। মন্ডল সাহেব সাম্প্রতিক হজ ট্র্যাজেডিতে সৌদি সরকারের গাফিলতি নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, সেটাই ছিল এই মামলার উৎস। মন্ডল সাহেবকে গ্রেফতার করার সময় সেখান উপস্থিত ছিলেন শওকত গাজী নামের এক ভদ্রলোক। মন্ডল সাহেবকে গ্রেফতার না করতে পুলিশের কাছে সুপারিশ করলে শওকত সাহেবকেও গ্রেফতার করা হয়। শ্যামনগর থানার ওসি সাহেবকে ঠিক কি পোস্টের জন্য মন্ডল সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি সে বিষয় কিছু বলতে পারেননি। পোস্ট কি ছিল তা না জেনে শুধু একটা মামলার জেরে কেন দুইজন ভদ্রলোককে গ্রেফতার করা হলো, সে বিষয়েও কিছু বলেননি ওসি সাহেব। এখানে আরও উল্লেখ্য, মন্ডল সাহেব কিন্তু তার পোস্ট কিছুক্ষন পরে নিজেই মুছে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা করতে পারেননি, ৫৭ ধারায় গ্রেফতার তাকে হতেই হয়েছে। বিস্তারিত খবর নীচের লিঙ্কেঃ
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করায় আ.লীগ নেতার ৫৭ ধারার মামলা, গ্রেফতার ২
এমন কি চরম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছিলেন মন্ডল সাহেব? ফেসবুকে একটু ঘাটাঘাটি করতে হলো খুঁজে বের করার জন্য। অবশেষে একজনের টাইমলাইনে পেলাম সেই 'ভয়ঙ্কর উস্কানিমুলক' পোস্টের স্ক্রিনশটঃ
কি জানি, আমার বোধহয় গন্ডারের চামড়া, কিন্তু আমি এই পোস্টে এমন উস্কানিমুলক কিছুই খুঁজে পেলাম না। আকবর কবীর সাহেবের ধর্মীয় অনুভূতিতে এমন আঘাত লাগার মত কি ছিল এই পোস্টে তা আমার বোধগম্য নয়। উপরের শেয়ার করা খবরের লিঙ্কটা আবার ভালো করে পড়লাম। আর এবার একটা বাক্যে চোখ আটকে গেলঃ 'খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আকবর কবীর একসময় জামায়াতে ইসলামির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, পরে আওয়ামীলীগে যোগ দেন।' এটা পড়ার পর আর এই ঘটনা আমাকে অবাক করলো না।
'ধর্ম নিরপেক্ষ' দল হিসেবে নিজেদের দাবী করা আওয়ামী লীগে পাইকারি হারে জামাত-শিবির আর বিএনপি থেকে নেতাকর্মী যোগদান করা নিয়ে অনেক আগে একটা পোস্ট লিখেছিলাম (রাজনৈতিক মিলমিশঃ কিছু ভাবনা)। এরপর অনেক কিছুই ঘটে গেছে। জামাত-শিবির আর বিএনপি কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া অব্যাহত আছে, রাজাকারের ছেলে (তবে আওয়ামী লীগের এমপি) প্রকাশ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে চাবুক মারার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে আছে, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের ছেলে (স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই) তার বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ার দুঃসাহস দেখানোর অপরাধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, পা-হারা প্রবীণ সাংবাদিককে ৫৭ ধারায় মামলা করে জেলে পুড়েছে, ওলামা লীগ নামের 'সরকারের সহযোগী সংগঠনের' বক্তব্য এবং দাবীগুলো ধর্মান্ধতায় জামাত আর হেফাজতকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আজকের এই ঘটনা সেই আবহমান ধারারই নতুন সংযোজন।
৫৭ ধারায় আজ পর্যন্ত ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক বা উস্কানিমুলক কথা লেখার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শুনেছি বলে মনে পড়ে না। দেশে অহরহ প্রতিমা ভাঙ্গা হচ্ছে, মন্দির প্যাগোডা পোড়ানো হচ্ছে, হিন্দু এবং অন্যান্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস/মন্তব্য ফেসবুকে দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় আওয়ামী লীগ মন্ত্রী/এমপিদের নিজস্ব ভেরিফাইড পেজেই এসব মন্তব্য মানুষ করে যাচ্ছে। কিন্তু এদের কাউকে কি কখনও ৫৭ ধারার আওতায় আনা হয়েছে? কিন্তু 'ইসলামের অবমাননা' করে ৫৭ ধারার রোষানল থেকে খোদ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারাও রেহাই পান না, সেটা লতিফ সিদ্দিকীর পরিনামই আমাদের দেখিয়েছে। তাহলে কি করে, কোন মুখে আওয়ামী লীগ এখনও নিজেদের 'ধর্ম নিরপেক্ষ' বলে দাবী করে, সেটা আসলেই বুঝা মুশকিল, কারন আমি তো নিরপেক্ষতা না, শুধু পক্ষপাতিতাই দেখছি। অবশ্য আমি বা আমার মত যারা চিন্তা করে, তারা কিই বা জানি। আমাদের চেয়ে জ্ঞানীগুণী লোকজন তো বলেই দিয়েছেন আমরা যারা এসবে শঙ্কিত, তারা অবোধ।
যাই, এসব নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো মুমিনের মত হ্যাশট্যাগ বিপ্লব করি।
#istandwithgaza
মন্তব্য
উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ!
হাঁচি দিলেও চাবুক মারার ২১ এ আইন শীঘ্রই চালু করা দরকার।
দেবদ্যুতি
'খুব বেশি' কেটে ব্র্যাকেট উঠিয়ে দিতে পারেন। গণতন্ত্র ইজ এভ্রিহোয়্যার, ইউ নো
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তা ভাল বলেছেন বটে সত্যানন্দ-দা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
শয়তানকে পাথর মারতে বললে শয়তান ছাড়া আর কারো কিছুতে তো আঘাত লাগার কথা না।
এভাবে চিন্তা করি নাই হিমু ভাই, ভালো বলেছেন তো!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইহা পকিত লীগ নহে
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কিছু বলার নাই ভাই। মাঠ পর্যায়ে আম্লিগ-জামাত-বিম্পি কোন ভেদাভেদ নাই। আর দেশের ৯০% মানুষ যখন এই কাজকে সাধুবাদই জানাবে, তখন আম্লিগ কেন এমন করবে না? কোথায় যেন মন্দিরের সামনেই গরু জবাই দিচ্ছে দেখা গেলো। ১০০% খাটি মুসলিম দেশ বানাতে, বিনা উস্কানিতে আমরাই যখন এত উদগ্রীব, ক্ষমতাসীনরা তো আরো উৎসাহই পাবে।
দেশের ৯০% লোক জামাতকে ক্ষমা করে দিতে একপায়ে খাড়া বলে আমার মনে হয়। সুতরাং তাদের আম্লিগই বা জায়গা দিবে না কেন? এই দেশের রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষেরই প্রতিচ্ছবি, আমরা তাদের মাঝে মাঝে গালি দিয়ে নিজেদের তাদের থেকে মহৎ মনে করি, ফিল গুড ফ্যাক্টর আর কি! দিনশেষে এরা ভোটের ব্যবসা করে, আর ভোটের ব্যবসায় ধর্মের বাজার ভালো।
ঢাকাতেই
বিপ্লব কুমার কর্মকার
ধ্রুব ভাই এটার সাথে একমত না। দেশের ৯০ ভাগ মানুষি রাজাকারের বিচার চায় না তাই বলে বিচার কিন্তু থেমে থাকেনি। রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আদর্শ থাকতে হয়, জনগন মুর্খ হলে রাজনৈতিক দল মুর্খ হবে কিংবা জনগনের প্রতিচ্ছবি হবে এমনটার সাথেও একমত না। পৃথিবীতে যেখানেই অন্যায় কে দূরে সরিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে অন্যায়কারীর সংখ্যাই সবসময় বেশি ছিলো। ফরহাদ মাসুম ভাইয়ের একটা পোষ্টকে তেমন ঘটনার উদাহারণ হিসেবে উল্লেখ করছি।
আপনার মন্তব্যে শেষ লাইনটির সাথে ভীষনভাবে সহমত। এটিই আসলে মূল কথা।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
একটি সহীহ হ্যাশট্যাগওয়ালা পোস্ট
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
নিউজ ফীডে একবার একটা পিচ্চির(খুব বেশি হলে তার বয়স ১০/১২ হবে) ওয়াজ বা ঐ টাইপের কিছুর এক ভিডিও দেখেছি। সেই ছেলে অনুভূতিরে পুরা শুইয়ে দিচ্ছিল(ভিডুটা দেয়া গেলে বুঝতেন)। অবশ্যই নাসারা এবং হিন্দুধর্মের প্রতি। এদের বেলায় '৫৭ ধারা স্পিকটি নট হয়ে যায় কেনু! আইন তো শুনি চোখবান্ধা সে রামও চিনে না রহিম কিংবা যোশেফরেও না। তাইলে??? ভণ্ডামীর একটা সীমা থাকা দরকার। ঠিকই বলেছেন হ্যাশট্যাগে ঝুলেই পূণ্য কামাই তারচে
নতুন মন্তব্য করুন