রক্তাক্ত ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে জল্লাদ। ইতিমধ্যে জবাই করা হয়ে গেছে বেশ কয়েকজনকে। এবার সিরিয়াল পড়েছে ছেলেটির। জল্লাদের সহকারী দুজন একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে তাকে মঞ্চে তুললো, রক্ত মাখা বেদীর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসতে বাধ্য করলো। চুল ধরে টান মেরে মাথা বেদীর উপর পজিশন করলো, অপেক্ষা শুধু জল্লাদের ছুরির।
জল্লাদ দোয়া পড়ছে। লোকে বলে মৃত্যুর আগমুহূর্তে নাকি গোটা জীবন চোখের সামনে ভেসে উঠে। ছেলেটার অবশ্য তেমন কিছু হলো না, শুধু গত কয়েক বছরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা চোখে সামনে ভেসে উঠলোঃ
সেদিনকার কথা, প্রগতিশীল ব্লগারটাকে রাস্তায় কুপিয়ে মারা হলো, পরেরদিন সরকার সেই ব্লগারটিকে ‘ধর্মবিদ্বেষী পর্নো লেখক’ বলে বকে দিয়ে সবাইকে সীমা লঙ্ঘন না করার হুমকি দিলো, সে সহমত পোষণ করে বলেছিল ‘আস্থা রাখুন’।
তারপর ওই যে, মৌলবাদীদের কথামত সরকার স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে বিধর্মী লেখক/কবি-দের লেখা সরিয়ে ফেললো। সেদিনও ‘দেশের উন্নয়নের সময় স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখা উচিৎ’ বুঝ দিয়ে আবারও সহমত পোষণ করে সে বলেছিল ‘আস্থা রাখুন’।
সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যটিকে ‘মূর্তি’ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে অপসারণ করা হলো সরকারের সম্মতি নিয়ে। কোর্টের সামনেই ঈদগাহ, তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, সেটা এড়াতেই এই সাময়িক ‘কৌশল’, এই দোহাই দিয়ে ছেলেটি তার কাছের মানুষদের বুঝিয়েছিল ‘আস্থা রাখুন’।
এর পরের ঘটনাগুলো যেন একটার পর একটা খুব তাড়াতাড়ি চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকলো। পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিষিদ্ধ হলো, অপরাজেয় বাংলা সরানো হলো ঢাবি থেকে, শহীদ মিনার (নাকি স্মৃতিসৌধ? নাকি দুটোই?) ভাঙা হলো, সরকারের পতন হলো, একে একে তার পরিচিত মানুষগুলো হয় রাতারাতি বদলে গেলো, নাহয় ছুরির নীচে জবাই হলো... কখন একটা ঘটনা শুরু কখন শেষ তার আর হিসেব রাখতে পারলো না ছেলেটা, তবে হ্যাঁ, একেকটা ঘটনার পরে যে সে ‘আস্থা রাখুন’ বলে গিয়েছিল সেটা তার মনে পড়ছে। এই ধারায় একদিন নিজেও কি একটা কারনে ধরা পড়লো, এবং ‘ধর্ম অবমাননার’ দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হলো...
জল্লাদের দোয়া পড়া শেষের দিকে। ছুরিটা গলার ঠিক নীচে ঠেশ দিয়ে ধরলো। হিমশীতল ইস্পাতের ছোঁয়ায় বাস্তবে ফিরে এলে ছেলেটি। অস্ফুট স্বরে কাতরে উঠলো, ‘ভাই, বেশী কষ্ট দিয়েন না’।
বিরক্তি ভরা কণ্ঠে জল্লাদ উত্তর দিলো, ‘আরে ভাই, কম মানুষ তো জবাই করলাম না। টেনশন নিয়েন না। আস্থা রাখুন।‘
ছুরি চলা শুরু করলো।
মন্তব্য
কয়দিন পরে এয়ারপোরটে লুঙ্গি খুইলা মাথায় চামড়া দেখবে, না থাকলে দেশে ঢুকতে দিবে, থাকলে খবর আছে!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বাস্তবতা এখন স্যাটায়ারকেও হারিয়ে দিচ্ছে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আমরা এখন একটা মতিকন্ঠ যুগে বাস করছি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই প্রসঙ্গে প্রথম আলোর জন্মকথা মনে পড়ে গেল। প্রথম আলো যখন প্রকাশিত হয় শুরুর দিকে এরকম একটা বিজ্ঞাপন দিত-
রহিম সাহেব সাধারণ একজন মানুষ। তিনি আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ সংবাদের সন্ধানে দিনে তিনখানা পত্রিকা পড়তেন। ডান বাম মধ্য। তিন পত্রিকার জন্য অর্থ এবং সময় সবই অপচয় হতো। কিন্তু যেদিন বাজারে প্রথম আলো নামলো সব পত্রিকা বাদ দিয়ে একটা পত্রিকাই কিনতে শুরু করলেন। এক পত্রিকাতেই তিনি সব পেয়ে গেলেন।
এই বিজ্ঞাপনের কিছুদিন পর আমার এক প্রতিবেশী করিম সাহেবের সাথে দেখা হলে তিনি বেশ উৎফুল্ল হয়ে বললেন- ভাই, এতদিনে মনের মত একটা পত্রিকা পাইছি। দৈনিক সংগ্রাম বাদ দিয়ে এখন 'প্রথম আলো' রাখি।
প্রথম আলো কাউকে নিরাশ করে না। সার্কুলেশানই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
কিন্তু ভোটের রাজনীতির জন্য আওয়ামী লীগ যে কোনদিন 'প্রথম আলো' হয়ে উঠতে পারে সেটা ভাবিনি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লেখা চমৎকার, প্রেক্ষাপট মন খারাপের। তবু সবকিছু শুভ হোক।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
আস্হার অবস্হা এখন কাপাস তুলার মত!
নতুন মন্তব্য করুন