"ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আরে ভাই বিচার চাইতে হবে ভালো কথা, কিন্তু তাই বলে চার পাঁচ বছরের শিশুদের হাতে 'ফাঁসি চাই' পোস্টার দিয়ে নিয়ে আসতে হবে কেন? ওরা কারা, যারা কোমলমতি শিশুদের মনে এভাবে ঘৃণার চাষ করছে?"
"দেখ ভাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমিও চাই, তবে সেটা তো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের এবং সবার গ্রহণযোগ্য হতে হবে, তাই না? এই আইসিটি না ফাইসিটি তো কোন জাতেরই কিছু হচ্ছে না।"
"সব রাজাকারদের বিচার চাই আমি। কিন্তু এখানে খালি এক রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঘৃণ্য পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই না।"
"এই কাদের মোল্লা সেই কাদের মোল্লা না।"
"দেশে হাজার একটা সমস্যা থাকতে এখনও এই পুরাতন ইতিহাস নিয়ে পরে থাকার মানেটা কি, হ্যা? আমি বর্তমান সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজা নিয়ে বেশী আগ্রহী।"
"শাহবাগ? নাউজুবিল্লাহ। ছেলেমেয়ে অবাধে মেলামেশা করা, ড্রাগস খাওয়া, অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার একটা আজুহাত দরকার ছিল এই নাস্তিকগুলোর, পেয়ে গেছে। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী, এইটা একটা ছুতো মাত্র।"
"শুনলাম আওয়ামী লীগ সরকার নাকি শাহবাগে মানুষকে আনার জন্য কাচ্চির বন্দোবস্ত করেছে। এভাবে লোভ দেখায় যেখানে মানুষ আনা হচ্ছে, সেটা আবার কিসের জনগনের প্রানের দাবী নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন?"
"শাহবাগে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিছে। এ থেকেই প্রমানিত এইটা বাকশালি আওয়ামী লীগের চক্রান্ত।"
"সব নাস্তিক আর ইন্ডিয়ার দালালগুলো এক জায়গায় একাট্টা হয়েছে। এই দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম সরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই নেমেছে এরা। নাহলে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে, তাদের প্রায় সবাই টুপি-দাড়ি পড়া বুজুর্গ আলেম কেন? আমি ভাই ধর্মভীরু মুসলমান মানুষ, এইসবের মধ্যে নাই। নিশ্চয় মহান আল্লাহতা'আলাও এইসব মেনে নিবেন না।"
"স্যরি, আমি আসলে মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাস করি না। তাই এইসব শাহবাগ ফাহবাগে আসতে পারবো না। মৃত্যুদণ্ড, সো স্যাড, সো ব্র্যুটাল, ম্যান!"
উপরের সবগুলো অজুহাত (এবং এরকম আরো অনেকগুলোই) আমরা সবাই শুনেছি সে সময়ে। অফিসের সহকর্মীদের সাথে চায়ের কাপে, পারিবারিক দাওয়াতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, ফেবু/টুইটারে অপরিচিত কোন আগন্তুকের সাথে বাকবিতণ্ডায়। শাহবাগ সেই সময়ে মানুষ চিনিয়েছিল, মানুষ আর দুপেয়ে ছাগলদের মধ্যে ভেদাভেদ করতে শিখিয়েছিল। একটা অব্যর্থ কেপি টেস্টের জন্ম হয়েছিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৫ এর সেই আগুনঝরা দুপুরে। পাঁচ বছর পরেও সেই কেপি টেস্ট আগের মতই ফলপ্রসূ আছে। কাউকে চিনতে হলে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেব্রুয়ারি ৫ ২০১৩ এবং তার পরের দিনগুলোর কার্যকলাপে চোখ বুলিয়ে নিলেই হয়। তাহলেই কে কি জন্য ঘষছে তা পরিস্কার হয়ে যায়।
শাহবাগ বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে প্রতিটি একাত্তরের চেতনাধারী বাঙালীর হৃদয়ের মাঝে। সেই অগ্নি শিখা জ্বলছে অর্ধ দশক পরেও, জ্বলবে অনির্বাণ। জয় বাংলা।
মন্তব্য
সম্পূর্ণ সহমত!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
শব্দটা 'অজুহাত'; সংশোধন করে নিন।
মাসের'৫' তারিখটা খুবই মরতবাপূর্ণ। এই দেখুন না ২০১৩ সালের মে মাসের ৫ তারিখের গুরুত্ব কতো! ঐদিনের ঘটনা নিয়ে একটা 'কেপি টেস্ট' করুন। দেখবেন কারেন্ট জালে মাছের 'আণ্ডাবাচ্চাসহ সকলেই ধরা'র মতো কতো জনে ধরা খেয়ে যাবে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পাণ্ডব-দা। বানান ঠিক করে দিয়েছি। ৫ তারিখ নিয়ে খুবই ভালো পয়েন্ট তুলেছেন। ৫ই মে-ও খুবই ভালো কেপি টেস্ট হিসেবে কাজ করে বৈকি!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
জানুয়ারী মাসের '৫' তারিখের কথাটাও ভুলবেন না!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
পূর্ণ সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
২০১৩-য় আমার যেসব স্মার্ট, আধুনিক এবং আপাতদৃষ্টে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয় বলে জানতাম এমন দীর্ঘকাল প্রবাসী বন্ধুরা শাহবাগ আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে পোস্টে উল্লেখিত কুযুক্তি সহ আরও অজস্র কুযুক্তি খাড়া করে প্রবল গা-মুচরামুচড়ি করছিলো, ধরি-মাছ-না-ছঁই-পানি মার্কা দু'কুল রক্ষাকারী কথাবার্তা দিয়ে সরকারকে চামেচিকনে ধুয়ে দিচ্ছিল, বিষোদ্গার করছিলো আধুনিকতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক স্বচ্ছ বিচার, অর্থনীতি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশরক্ষা ইত্যাদির ভড়ং ধরে - এখন তাদেরই অনেককে দেখছি বাংলাদেশে সন্ত্রাসের প্রকোপে (বিশেষত হলি আর্টিজানের পর থেকে) কান্নাকাটি করতে করতে জান কয়লা করে ফেলতে। এদের এই আকস্মিক সুর বদলে প্রথমে বেশ কনফিউজড হয়ে গেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি, ইউরোপ-আম্রিকায় যেসব উচ্চশিক্ষিত ও সফল প্রবাসীরা আছে, ঐখানে গিয়ে বাহ্যিকভাবে আধুনিক জীবন-যাপন করে, তাদের অনেকেই মনের প্রতিক্রিয়াশীলতাটা ওখানেও সাথে করে নিয়ে যান এবং লুকিয়ে রাখে্ন। আম্রিকায় গিয়ে ডেমোক্র্যাট সমর্থক, বৃটেনে গিয়ে লেবার সমর্থক, ইত্যাদি হন। মানবাধিকারের, ডাইভার্সিটি ইত্যাদির পক্ষে গলা ফাটান হয়তো। কিন্তু দেশের প্রসঙ্গ আসলেই অন্য রূপটা দাঁতনখসহ বেরিয়ে পড়ে। একটু নাড়াচাড়া দিলেই মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, হাসিনা, ৭৫, সেকুলারিজম, ইত্যাদি বিষয়ে তাদের প্রবল এলার্জিটা বেরিয়ে পড়ে। তবে -- এইবার আসল কথা - এইবার এমন বাটে পড়েছে এরা যে এদেরও কারও কারও সুর বদলাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাস তাদের যে শিক্ষা দিতে পারেনি, জন্মভূমির ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ তাদের যে শিক্ষা দিতে পারেনি - স্রেফ নিজের গায়ের চামড়া বাঁচানোর স্বার্থবোধ, উন্নত বিশ্বে নিজের ও নিজের সন্তানদের স্বচ্ছন্দ জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখার নিতান্ত স্থুল বৈষয়িক স্বার্থবোধটাই বোধহয় তাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে! ইউরোপে-আম্রিকায় অনবরত জঙ্গি হামলা, আইসিসের উত্থান, ট্রাম্প-প্রপঞ্চ এবং এসবের প্রতিক্রিয়ায় ও ফলশ্রুতিতে ঐসব দেশে একটা বিরাট-সংখ্যক অমুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদীী এবং মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের বিস্তৃতি, নতুন নতুন কালাকানুন (যেমন ট্রাম্পের মুসলিম ট্রাভেল ব্যান, ইত্যাদি), মিডিয়া প্রচারণা -- ইত্যাদিতে এদের অনেকে মনে হয় ব্যাপক ভয় খেয়ে গেছে। আমার শাহবাগ-বিরোধী আম্রিকা-প্রবাসী বন্ধু, যার সাথে ২০১৩-তে শাহবাগ নিয়ে ব্যাপক ইমেইল-বিতর্ক হয়েছিল এবং যে শাহবাগ, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ শ্রেণী (আসলে যুদ্ধাপরাধ বিচারের কারনে আম্লীগ) ইত্যাদির বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রচুর বিষোদ্গার করতো, এখন দেখি সে পারলে প্রধাণমন্ত্রীর আঁচলের তলায় লুকায়। ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। বোধহয় ভুল বুঝিনি?
****************************************
আমার মনের কথাটিই যেন বলেছেন ভাই।
বাংলাদেশ মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেলে, এখানে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটলে - যতদূরেই থাকুক না কেন তারাও যে এর ফলাফল ভোগ করবেন অন্য কিন্তু অত্যন্ত বাস্তবভাবে সেটা তারা মনে হয় এখন বুঝতে পারছেন। নিরাপদ দূরত্বে উন্নত সেকুলার গণতান্ত্রিক দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীণতার সুযোগ-সুবিধা নিজে পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করেও নিজদেশে সেকুলার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের বিরুদ্ধে মনের সমস্ত বিষ উগ্রে দিয়ে আর গালাগালি করে যে তারা নিরাপদ থাকতে পারবেন না বরং তাদের একদম বাস্তব ধন-মান-নিরাপত্তা-প্রতিষ্ঠায় কুঠারাঘাত হতে পারে এতে, সেই বোধোদয় কারও কারও এখন হচ্ছে মনে হয়। তারা বুঝতে পারছেন হয়তো যে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। বিদেশে গিয়ে মনের পশুটা লুকিয়ে রেখেও নিস্তার নেই - তাদের যে ছদ্মবেশী নিরব সমর্থন বা উপেক্ষা নিজদেশে এই দানবের জন্ম দিয়েছে, সেটার কারনে আজ তাদের প্রবাসের প্রতিষ্ঠাও বিপন্ন হতে পারে, দুর্বিষহ হতে পারে। তারা বুঝেছেন যে রোম পুড়লে নিরোও পুড়বে, দূরে বসে নিশ্চিন্তে বাঁশি বা ভুভুজেলা বাজানো যাবে না! সে কারনেই তাদের কারও কারও এই আপাত ভোল বদল। কোনো নৈতিক উপলব্ধি থেকে নয়, বরং অত্যন্ত নিরেট স্বার্থপর বৈষয়িক কারনেই।
****************************************
জিনিসটা আমিও লক্ষ্য করেছি। পড়ার জন্য
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
জায়নিজম এবং ইসরায়েলকে গালি না দিলে যাদের ভাত হজম হত না, তারা পর্যন্ত এখন বাটে পড়ে আমেরিকান জ্যুয়িশ কমিটির মত কট্টর জায়নবাদী এবং ইসরায়েল-সমর্থক গ্রুপের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে! তাদের মোটিভ খুবই পরিষ্কারঃ
সোজা বাংলায় নিজে বাঁচলে প্যালেস্টাইনের নাম আরকি! এই যুক্তিকে হালাল করার জন্য আবার বেচারা ইসলামকেও টানতে হল!
Emran
আমার দেখামতে আরেকটা আছে -
আমি আগে আওয়ামীলীগ করতাম, আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামীলীগ করে, কিন্তু আমি আর এখন করিনা, কারন ওরা অবিচার করে
এরকম ধারার আরেকটা হলোঃ
"ভাই আমার বাবা/চাচা/খালু/ফুপা/মামা/বাসার হেল্পিং হ্যান্ড সবাই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু এই বিচার নিরপেক্ষ না।"
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
ফেসবুকে ২০১৩ সাল সার্চ দেয় কেম্নে? (বড়ই বাজে গেছে সময়, গোলমাল-হট্টগোল)
লেখাটা এতবছর পরেও সময়ানুপুযোগিতা হারায়নি!
নতুন মন্তব্য করুন