গতবছর অমর একুশে নিয়ে বাণিজ্য এবং তা কতটুকু কুরুচিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে সচলে লিখেছিলাম (এখানে)। আমার ধারনা ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের ভাবগাম্ভীর্যতা যথাযথভাবে বজায় না রেখে সেটাকে বোধহীনভাবে পুঁজি করে ব্যাবসা করার প্রচলনটা সাম্প্রতিক। আজ আমার কাছে থাকা সংবাদপত্রের ই-আর্কাইভের একটা খবর দেখে ভুলটা ভাঙলো। নীচে সেই খবরের স্ক্রিনশট দেয়া হলোঃ
খবরটা ১৯৭২ সালের ২৫শে মার্চের বাংলাদেশ অব্জার্ভার পত্রিকা থেকে। ভয়াল অপারেশন সার্চলাইটের এক বছর হয়েছে তখন, নব্য স্বাধীন বাংলাদেশ তখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত, অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ এবং নয় মাস ধরে পাকিস্তানী মিলিটারি এবং তাদের দেশীয় দালাল কর্তৃক চালানো গণহত্যার ক্ষত তখনও জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে। তখনকার খবরের কাগজগুলোতে প্রতিনিয়ত উঠে আসতো দেশে কোন না কোন স্থানে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের নৃশংস এবং করুন বিবরণী। এর মাঝে, বিশেষ করে এই দিনে, এই খবরটা দেখলে চোখে আটকে যেতে বাধ্য। পুরো প্রতিবেদনটা এখানেও তুলে দিলাম, যদি স্ক্রিনশট থেকে পড়তে কষ্ট হয়ঃ
There has been a tendency among certain members of the business community to exploit the memory of the martyrs for their individual interests. They used the names of the martyrs in occupying abandoned establishments and encroaching other’s lands.
Now they have adopted yet another novel way of exploiting the memories of the martyrs. A pharmaceutical firm of Dacca recently published a calendar displaying the photograph of the body of Mrs. Selina Parveen, a victim of the Pakistani hordes.
This has created a considerable resentment among the public. They feel that Government should take immediate steps to check this shameless practice.
কবি সেলিনা পারভীন ছিলেন আল-বদরের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়া বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে তাঁকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন মাত্র নিজের সাত বছরের পুত্র সন্তানকে খাওয়াতে বসেছিলেন তিনি, সেটা শেষ করতে পারেননি। বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী ১৪ই ডিসেম্বর রাতে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। মরার আগে তাঁর ঘাতকদের কাছে শত অনুনয় করেছিলেন তিনি, তিনি না থাকলে তাঁর ছেলেটাকে দেখার কেউ থাকবে না এটা বলেও প্রানভিক্ষা চেয়েছিলেন। আল-বদরদের নরপিশাচরা কর্নপাত করেনি।
এক শহীদ বুদ্ধিজীবীর বেয়োনেটে জর্জরিত বুলেটবিদ্ধ লাশ নিয়ে ব্যবসা করতে বাঙালীর এক বছরও লাগেনি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর যে অমর একুশের স্পেশ্যাল চকোলেট কেক বানানোর প্রণালী প্রকাশিত হবে, একুশের জন্য স্পেশ্যাল সাজ কি হতে পারে তা নিয়ে জনৈক ফ্যাশন বোদ্ধা ফিচার লিখবেন, বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যা হওয়ার দিবসে বিরিয়ানি ভোজন করাটাই উপলক্ষ হয়ে দাঁড়াবে (বিরিয়ানির প্যাকেটে আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি, যা কিনা খাওয়ার পর অবজ্ঞার সাথে রাস্তায় আবর্জনার সাথে ফেলে যাওয়া হয়), সেসবে অবাক হই কেন?
খবরের কাগজের আর্কাইভের জন্য কৃতজ্ঞতায়ঃ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (ICSF), সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ (CBGR), ওমর শেহাব।
মন্তব্য
কোথায় যেন পড়েছিলাম, কোন এক ইতিহাসবিদ নাকি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু এমন এক জাতি কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন যে জাতি কোনদিন স্বাধীনতা চায়ন(আমি ভুল তথ্যও পেতে পারি, এটি কতটা সত্য কোনদিন খুঁজে দেখি নি)। তাই হয়ত আজ আমরা বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে মেতে উঠি।
মাঝে মাঝে বসে ভাবি আমরা এতটা বেজন্মা হলাম কিভাবে?
-বৃদ্ধ কিশোর
"বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন" - অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছিলেন কথাটা।
দুঃখজনক হলেও,আমার কাছে কথাটা উল্লেখযোগ্য বাঙালীর ক্ষেত্রেই সঠিক পর্যবেক্ষণ বলে মনে হয়েছে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
নতুন মন্তব্য করুন