Warning: Creating default object from empty value in theme_img_assist_inline() (line 1488 of /var/www/sachalayatan/s6/sites/all/modules/img_assist/img_assist.module).

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান! পোকা খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করুন... প্লিজ...

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: রবি, ২১/০৬/২০০৯ - ৬:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মণিপুরীদের নববর্ষ উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি মণিপুরী থিয়েটার একটা নাট্যোৎসব করতো। সেবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। আলোচনা-টনা হয়ে যাবার পর দর্শকদের সাথে অতিথিদের একটা কথোপকথন পর্ব ছিল। অনেক কথাই হলো, এক পর্যায়ে ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে উঠে দাঁড়ালো অধ্যাপক আনিসুজ্জামান-কে একটা প্রশ্ন করতে। মেয়েটি নিজেকে সম্ভবত ক্লাস ফাইভ বা সিক্সের ছাত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিল, হাতে ছিল পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত তার ক্লাসের একটা বই, বইটার লেখক- অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মেয়েটি বইয়ের একটা পাতা খুলে পড়া শুরু করলো- মণিপুরী উপজাতি সিলেটে বসবাস করে, তারা সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় খেয়ে থাকে, ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটির প্রশ্ন ছিল- স্যার, আমরা তো সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় খাই না; আপনি বইয়ে এটা কেন লিখেছেন?

কিন্তু খেলে মন্দ হতো না। আমাদের দলের প্রত্যেক সদস্য পোকাহত। সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোকার কামড়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। আমার নিজের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। পায়ে আর পিঠে কোথায় একটু ভাল জায়গা আছে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। প্রচণ্ড গরমে জামা খুলে কাজ করতে থাকলে, ক্ষতের ওপর আবার কামড়। "হাউ টু এভয়েড ইনসেক্ট বাইটিং?" গুগল, উইকিপিডিয়া, অ্যানসারসডটকম সার্চ দিয়ে কোনোটাতেই কোনো উপায় পাওয়া গেলো না। ঠাকুরগাঁও-য়ে যে প্রাচীন ভবনটির প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও পুনরানয়নের কাজ আমরা করছি, তার আশেপাশে অনেক আদিবাসী জাতির বসবাস। আনিসুজ্জামান গং-দের ভাষ্যমতে এইসব উপজাতি(?)-দের তো পোকামাকড় খাওয়ার কথা! কাজেই আমরা হাটে-বাজারে গিয়ে আদিবাসী মানুষদের ধরে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইবোনেরা, আপনারা কি পোকামাকড় খান? সবাই আমাদের প্রশ্নে বিস্মিত হয়ে গেলেও আমরা হাল না ছেড়ে দিয়ে মুদ্রিত কাগজের দোহাই দেই। তবু হায়, পতঙ্গভুক মানবের দর্শন মিললো না।

ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে একটা পুরাতন মসজিদের প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও পুনরানয়নের কাজ করছি আমরা। আমরা মানে, আমরা যারা বাংলাদেশে পেশাদারি প্রত্নতত্ত্ব চর্চার জন্য গত কয়েক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের মসজিদটির সংরক্ষণ কাজের হালচাল সময়সুযোগ মতো সচলায়তনে জানাবো আশা করছি। (যদিও অনেকদিন পরেই সচলায়তনে লেখার মতো একটু সময় আজ পেলাম)। মসজিদটির কাজ শেষ হলে আমরা শুরু করবো পাশের উপজেলা রাণিসংকৈল-এর একটি প্রাচীন মন্দির সংরক্ষণ কাজ। এখনো পর্যন্ত মসজিদের কাজের খরচ স্থানীয় জনসাধারণ বহন করছেন এবং তারা এলাকার বিত্তশালীদের কাছ থেকে বাকি খরচের টাকা দান হিসেবে গ্রহণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মসজিদটি সংরক্ষণ ও পুনরানয়নের জন্য প্রয়োজনীয় খরচাপাতি এখান থেকে ব্যবস্থা হয়েই যাবে। তবে মন্দিরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি তেমন না-ও হতে পারে। এখন পর্যন্ত খরচাপাতির টাকা কোত্থেকে আসবে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তবে, তবু আমরা কাজে হাত দিতে চাই। তিনশ' বছরের পুরোনো সারা গায়ে কান্তজীর মন্দিরের মতো নয়নাভিরাম পোড়ামাটির ফলক নিয়ে মন্দিরটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে অথবা গোবিন্দ জিউ-র মন্দিরের মতো একটা বিকৃত পরিণতি হবে, সেটা আমরা কোনোভাবেই হতে দিবো না। উপায় একটা হবেই আশা করি।

কিন্তু পোকামাকড়গুলোর কী উপায় হবে? আদিবাসীরা তো পোকা খায় না বললো। আদিবাসী নেতা সুনীল টুডু অনেক দিন চেষ্টা করে, নিজের জায়গা, বাঁশ, চালা দিয়ে যা-ও একটা স্কুল দিলো, তার আবার মাস্টার নাই। এমনকি নিজে সব বাচ্চার জন্য বই কিনে দিতে চেয়েছেন সুনীল (যদিও তার নিজের খাবার-ই ঠিকমতো জোটে না)। স্কুল-টা চালু না হলে, আদিবাসীগুলো (?) কিভাবে জানবে যে, ওদের খাদ্য হলো পোকামাকড়। তবেই না তারা আমরা বিদেশ-বিভুঁই থেকে ওদের মাটিতে গিয়ে আস্তানা গেঁড়ে পোকামাকড়ের কামড়ে জর্জরিত হলে, ওরা এসে পোকাগুলোকে খেয়ে আমাদেরকে একটু স্বস্তি দেবে!!!

****সত্যিই আমি জিজ্ঞেস করেছি, আদিবাসীরা পোকামাকড় খায় কিনা। তারা জানিয়েছে, খায় না। এই অবস্থায় কোনো সচলের কাছে পোকার হাত থেকে বাঁচার যদি ভাল কোনো উপায় জানা থাকে, জানাবেন। আর http://www.banglaspot.blogspot.com/ এই ব্লগে সংরক্ষণ সংক্রান্ত ফটো ও তথ্য রেগুলার আপডেট করবো, যদিও এখনো করি নাই। কারো আগ্রহ থাকলে ঢুঁ মারতে পারেন।


মন্তব্য

অভিজিৎ এর ছবি

মেয়েটি বইয়ের একটা পাতা খুলে পড়া শুরু করলো- মণিপুরী উপজাতি সিলেটে বসবাস করে, তারা সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় খেয়ে থাকে, ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটির প্রশ্ন ছিল- স্যার, আমরা তো সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় খাই না; আপনি বইয়ে এটা কেন লিখেছেন?

সেটাই। লেখাটার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

তবে একটি ব্যাপার কিন্তু ভুললে চলবে না। সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসীদের নিয়ে আমাদের ধ্যান ধারণা কিছুটা পাল্টেছে। ক্লাস ফাইভের পাঠ্যপুস্তকের কথা জানিনা, তবে মিডিয়ার খুব কম লেখাতেই এখন আমি 'উপজাতি' শব্দটির ব্যবহার দেখি। বরং আদিবাসীদের সংস্কৃতি নিয়ে সচেতন লোকজনের সংখ্যা এখন অনেক চোখে পড়ে। এই যে আপনার এই লেখাটার মত লেখা আমি বছর দশেক আগে মিডিয়া চষে ফিরলেও পেতাম না। আমরা প্রতিনিয়ত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমাদের সনাতন মনমানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছি। এটাও কিন্তু কম নয়। পাসশ্চাত্যে উনিশ বা বিশ শতকের প্রথমদিককার অনেক 'বিখ্যাত' লেখকদের রচনাতেই কিন্তু 'নিগ্রো' শব্দটির ব্যবহার পাবেন। এখন পাবেন না। কালো মানুষদের নিয়ে কিংবা সমকামি মানুষদের নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে ধ্যান ধারণা পাল্টেছে। সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে ধারণাও পাল্টেছে বিস্তর। তার কিছুটা ঢেঊ আমাদের দেশেও পৌছাচ্ছে। তবে গতিটা ধীর। একাত্তুরে স্বাধীনতার পর আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে মুজিব যেভাবে বলেছিলেন, 'তোরা সব বাঙ্গালী হইয়া যা' - এমন 'ঔপনিবেশিক' মনোভাব হয়ত এখনকার রাস্ট্রনায়কেরা করবেন না।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ।

আর অভিজিৎ ভাইয়ের মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

রণদীপম বসু এর ছবি

যেদিন রাজপুত্রটি জন্মালো উজিরে আলা দেখলো নবজাতকের গায়ের রঙ রাজার মতো ততোটা গৌরবর্ণ নয়, কিঞ্চিৎ শ্যামলা। উজিরে আজম অ্যালান করলেন- রাজ্যে রাজপুত্র এসেছে তবে গাত্রবর্ণ কালো। রাজধানী পেরিয়ে খবর গেলো রাণীর ঘরে পোলা হইছে তয় কাউয়ার মতো কালা। এভাবে হাতে হাতে মুখে মুখে রাজ্যের শেষপ্রান্তে যখন খবর গেলো, সবাই জানলো- ছি ছিঃ রাণীর ঘরে একটা কাইয়া হইছে !

হা হা হা ! এই অবস্থাও এর চে বেশি ভালো নয় মনে হয়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ইনি কি ঢাবি'র প্রফেসর আনিসুজ্জামান? ওনার উত্তর কী ছিল?

যূথচারী এর ছবি

উনি বলেছিলেন, বই ছাপতে তাড়াহুড়ার কারণে ঠিকমতো দেখা হয়ে ওঠেনি, পরবর্তী সংস্করনে ঠিক করা হবে। উল্লেখ্য, বইটা কয়েক বছর পাঠ্য ছিল। ভুল সহই।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

সবজান্তা এর ছবি

উনি নিশ্চয়ই দাবি করেননি যে এটা কোন রকমের বানান প্রমাদ ? হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

আনিসুজ্জামানের বইটা কারো হাতের কাছে থাকলে পৃষ্ঠাটা স্ক্যান করে রাখুন। নিরানন্দ জীবনে কত আনন্দের খোরাক চোখের আড়ালে রয়ে যায়। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া ... ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

একুশ তাপাদার  [অতিথি] এর ছবি

উনি বোধ হয় আধিবাসিদের চাইনিজ মনে করেন!!

অধ্যাপক সাহেব মোটামোটা বই লেখেন, দেখলেই ডর করে পড়িনি এখনো- এত গবষনা করে উনি জেনেছেন - আধিবাসীরা (উনার ভাষায় উপজাতি) পোকামাকড় খায় !!!

এইরকম শ্রেষ্ট্র ঠাট্রার জন্য উনার নাম তো গিনেস বুকে নাম উঠার কথা । যারা একটি জাতির জীবন ধারনের প্রক্রিয়া নিয়ে টিটকিরি করেন তাকে সম্মান করতে মন চায় না

ধুসর গোধূলি এর ছবি
যূথচারী এর ছবি

ব্লগস্পট আমি খুব একটা ব্যবহার করিনা, আমি ছাড়া কেউ পড়েও না। আর আমার চোখের-ও সমস্যা, তাই ব্লগস্পট, সচলায়তন সবগুলোরই ফন্ট সাইজ-ও অনেক বড় করে রাখছি। তবে, আজকালের মধ্যেই ফন্ট ছোট করে দিবো। ধন্যবাদ।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

তুলিরেখা এর ছবি

এইরকম সব অদ্ভুত ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখেছি। দিল্লিতে পড়তে এসে হোস্টেলে থাকা উত্তর-পুবের ছেলেপুলেরা নাকি পোকার সিজনে হোস্টেলের খাবার খায় না, খাবে কিকরে? তারা নাকি সকালে উঠেই মুখ ধুয়ে বেরিয়ে পড়ে, পোকা খেতে। তারা নাকি বলে তাদের দেশের ছেলেপুলেরা পোকার সীজনে খিদের কষ্ট পায় না, সকালে উঠেই মুখ ধুয়ে পাহাড়ের দিকে চলতে থাকে, উড়ন্ত পোকা ধরে ধরে মুখে দেয়।

এইসব জিনিস হ্য়তো ঠাট্টা ইয়ার্কি হিসাবে চলতে পারে( তাও ঠিক না, অনেকসময় জাতির সেন্টিমেনট জড়িত থাকে ), কিন্তু এইসব সব ধারণা যখন একজন গবেষক রীতিমতন বইয়ে লেখেন, তখন চিন্তায় পড়তে হয়।

ইন্ডিয়ানা জোনসের সিনেমা দেখে যেমন সাহেবেরা একবার জেনিভার কনফারেন্সে ভারতীয়দের জিগ্গেস করেছিল,"তোমরা তো সাপ খাও, এখানে তো পাও না, তখন কি করো?"
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। হাসবো, নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

'উপজাতি' কথাটার মধ্যে ইংরেজ বাহাদুর থেকে শুরু করে পাকিস্তানি এলিট জাঁহাবাজ গোষ্ঠীর হামবড়া ভাবের কটুগন্ধ লেগে আছে। বাংলাদেশের যত আদিবাসী জাতি আছে তাদেরকে অচিরেই 'উপজাতি' বলে সম্বোধন করা বন্ধ করা হোক। এটা করতে হবে বইপুস্তক থেকে শুরু করে আদালত, সরকারি, এবং সকল ক্ষেত্রে দাপ্তরিক কাগজপত্রে আর মিডিয়ায় তো অবশ্যই।
জয় হোক মানুষের!!

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবার কাছে একটা বিনীত প্রশ্ন। "আদিবাসী" মানে কী? এর মানে কি এই যে বাঙালীরা এইদেশের আদিবাসী নয়? "আদিবাসী" শব্দটি অস্ট্রেলিয়ার aboriginal বা কানাডার inuit বা আমেরিকার red indian -দের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু বাঙালীরা বাংলাদেশে বহিরাগত? মানতে পারছি না।

মাথা গোনায় সংখ্যায় কম হলেই কোন জাতি "উপজাতি", "পাহাড়ি" বা "আদিবাসী"তে পরিণত হয় না। ত্রিপুরারা বা মনিপুরীরা বাংলাদেশে হলে উপজাতি আর ভারতে হলে জাতি (যেহেতু সেখানে তাদের নিজস্ব রাজ্য আছে)। এমন উদ্ভট যুক্তি সুস্থ্য মানুষের মাথায় আসবে না। তাহলে বিলেত-আমেরিকায় বাস করা লাখ লাখ বাঙালীকে কি সেখানে tribal, first people ইত্যাদি বলা হবে?

ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মানুষকে আরেকটি জাতির মর্যাদা দিলে আমাদের মর্যাদায় কি ঘাটতি পড়ে যায়?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

যূথচারী এর ছবি

এইসব কী কথা? ষষ্ঠ পাণ্ডবের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত। মাথার সংখ্যা দিয়ে আদিবাসী নির্ধারিত হয় নাকি? আপনি মনে হয় ব্যস্ত আছেন, তাই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ভেবে লেখার সুযোগ পাননি।

জাতিত্ব হলো সেই বিশেষ চিহ্ন যা একদল মানুষকে অন্য একদল মানুষের থেকে পৃথক করে। বিষয়টা এতো সরলভাবে বলা খুব কঠিন। মোটামুটিভাবে বলা যায়, যে বোধটি একদল মানুষকে তার স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য প্রণোদনা জোগায় তা-ই জাতিত্ব। জাতিত্বের মাপকাঠিতে আদিবাসী এবং জাতির মধ্যকার পার্থক্য সংখ্যা বা নিজস্ব রাজ্য দিয়ে নির্ধারিত হয় না। এমনকি ভাষা বা ধর্ম দিয়েও নয়। জাতিত্বের মানদণ্ডে বাঙালিকে জাতি আর চাঙমা (ভুল বানানে চাকমা)-কে আদিবাসী বলা হচ্ছে তার কারণ- চাঙমা জাতি তার আদি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পেরেছে আর বাঙালি তার আদি বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করেছে, তবে একদল মানুষের মধ্যে একটা সম স্বর আছে, তাই বাঙালি একটা জাতি। বাংলাদেশের মণিপুরীরাও একটা জাতি এবং সেই সাথে আদিবাসীও। ভারতের মণিপুরীরা আদিবাসী, এমনকি ভারতের বাঙালিরাও আদিবাসী এবং তা নিয়ে তারা লড়াইও করছে। সেখানকার রাজনৈতিক সামাজিক বাস্তবতায় বিষয়গুলো ভিন্ন রকম। এই আলোচনায় প্রাসঙ্গিক নয় বলে বাদ দিচ্ছি।

ষষ্ঠ পাণ্ডবের সাথে এখানে আমি একমত- "জাতি"-ই বলার কথা এবং আমরা তাদেরকে জাতি-ই বলি। তবে জাতির সাথে সাথে তাদের অতিরিক্ত গুণ এটা যে, তারা নিজেদের আদি সংস্কৃতি বজায় রেখে আদিবাসী-ও বটে। আদিবাসী শব্দটি কোনোভাবেই আদিকাল থেকে বাস করছে তা বোঝায় না।

রাগিবের সাথে এই বিশেষ ব্যাপারটাতে দ্বিমত করছি, বাংলাদেশের আমরা যারা বাঙালি আমরা আদিবাসী নই। অন্তত আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমার অষ্টম প্রজন্ম ছিল ম্রাইনমা (ভুল বানানে মারমা)। পরে অন্য ধর্মের মানুষকে বিয়ে করে এবং অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বাঙালির সাথে মিশে যায়। এমন ঘটনা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই ঘটেছে। মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, ব্লগে যেসব বাঙালি আছেন, তাদের অধিকাংশই আদিবাসী নন।

নুরুজ্জামান মানিকের সাথেও আমি একমত নই, তার কারণ তিনি রাগিবের সাথে একমত বলে। মানিক সময়টাকে চার হাজার বছর পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। কিন্তু জাতি হিসবে বাঙালির বয়স কয়েকশ বছরের বেশি নয়। এর আগে বাঙালির তেমন কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। কয়েকশ বছর আগে বড় ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়ার সময় অনেকে মান্দি, ম্রাইনমা যারা ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন, তারা বাঙালি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। তবে কালান্তরে, জাতিত্বর সম বোধে তাড়িত হয়েছেন বলেই জাতি গঠন করেছেন। [মনে রাখা দরকার, এর মধ্যে আরো কিছু জটিল প্রপঞ্চ কার্যকর ছিল]। বরং বাংলাদেশে তিন-চার হাজার বছরের পুরনো জাতি বললে আমাদের বলতে হবে মুণ্ডা ও মান্দিদের কথা। এই দুই জাতির মৌখিক ইতিহাস এবং এখন অবধি প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক বসতি নিদর্শন এই দুই জাতিকে তিন হাজার বছর পেছনে নিয়ে যায়। বাঙালির তেমন কোনো গল্প-ও নাই, তেমন কোনো নিদর্শন-ও পাওয়া যায়নি।

সবশেষে সবাইকেই বলছি (যারা নিচে মন্তব্য করেছেন তাদেরকেও), জাতি বিষয়টি আসলে খুব জটিল। আর তার কারণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক। ব্যক্তিগত/শ্রেণীগত লাভালাভের বিষয়টি এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এই জটিলতার কারণে এই বিষয়ে মন্তব্য করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য Sian Jones-এর The Archaeology Of Ethnicity অথবা সোহেইল জাফরের "জাতিত্ব" বইগুলো পড়তে পারেন।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিন্তু জাতি হিসবে বাঙালির বয়স কয়েকশ বছরের বেশি নয়। এর আগে বাঙালির তেমন কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।
কোট করে রাখলাম যাতে আলোচনায় সুবিধা হয়।

আপনার এটা কি তথ্য নাকি মতামত?

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মন্তব্যটা করার আগে আপনার পোস্টের জন্য চলুক দেই আর বলে নেই, আপনার লেখার মূল সুরের সাথে সম্পূর্ণ একমত।

জাতিত্বের মানদণ্ডে বাঙালিকে জাতি আর চাঙমা (ভুল বানানে চাকমা)-কে আদিবাসী বলা হচ্ছে তার কারণ- চাঙমা জাতি তার আদি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পেরেছে আর বাঙালি তার আদি বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করেছে... আদিবাসী শব্দটি কোনোভাবেই আদিকাল থেকে বাস করছে তা বোঝায় না।

এই জায়গাগুলো পুরোপুরি বুঝলাম না। এই সংজ্ঞাটি কি আপনার মতামত, নাকি প্রতিষ্ঠিত তত্ব? ভুল বুঝবেন না - আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি না, পরিস্কার করে জানতে চাইছি এই বিষয়ে আমার নিজের পড়াশোনার সীমাবদ্ধতার কারণে। আমি তো বুঝতাম যে কোন জাতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই যাবে, তবে যদি সেটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবর্তন না হয়, তাহলে আর তারা আদিবাসী বলে গন্য হবেন না।

"আদি বৈশিষ্ট"র কতটা ধরে রাখলে আদিবাসী বলা হবে? সময়ের সাথে সাথে তো অনেক কিছুই পাল্টে যায়, যেমন পাল্টে গেছে চাঙমাদেরও অনেক কিছু। অনেক আদিবাসী পরিবারে তো টিভি-রেডিও আছে, তারা বাজারে গিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে জিনিস কেনে - যেগুলো কোনটাই তাদের "আদি বৈশিষ্ট" নয়। আমেরিকাতে আদিবাসী আমেরিকানরা রাজনীতিতে আসছেন, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাথি ফ্রিম্যান কমনওয়েলথ গেমসে বা নোভা পেরিস অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পেয়েছেন অদিবাসী হবার অধিকার না হারিয়েই। এগুলো একটা দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে পারেন, কিন্তু এবরিজিনালদের আজকের জীবনযাত্রা প্রায় পুরোটাই তাদের "আদি বৈশিষ্ট" থেকে ভিন্ন। আজকের আমেরিকান ইনডিয়ানরা কেউই মাথায় পালক পড়েন না বা তীর ধনুক নিয়ে শিকার করতে যান না। তাদেরকে তো এখনো আদিবাসী বলা হচ্ছে আর সরকার থেকে আদিবাসী হিসেবে অনেক সুবিধাও দেয়া হচ্ছে। বাঙ্গালি হিসেবে আমরা আমাদের আদি বৈশিষ্টগুলি ধীরে ধীরে হারানোর কোন পর্যায়ে ওই এলাকার আদিবাসী হবার যোগ্যতা হারিয়েছি? চাঙমারা সময়ের সাথে সাথে আর কতটা বৈশিষ্ট হারিয়ে ফেললে আমরা তাদের আর অদিবাসী বলব না?

আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় যেটা হয়েছে যে আদিবাসীরা ছাড়া যারা ওখানে আছে তারা কেউ সেখানকার "নেটিভ" না। তাই ওই নন-নেটিভদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনটা প্রাকৃতিক নয়। তাই তারা আদিবাসী নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে বদলে গিয়ে আমরা বাংলাদেশে বসবাস করা বাঙ্গালিরা কেন আদিবাসী হব না একটু বুঝিয়ে বলবেন?

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আদিবাসি এবং উপজাতি শব্দ দুইটার অর্থ, প্রয়োগ এবং কোথায় কোনটি ঠিক বা কোনটি বললে সেটা ভুল হবে এই ব্যাপারে জানতে চাইছি। কারণ আমি নিজে জানি না। স্কুলে কী পড়েছিলাম মনে নেই, তবে তখনকার শিশুমনে যে প্রশ্ন জেগেছিল সেটার উত্তরে পোকা খাওয়ার ঘটনা শুনলে সেটা ভয়াবহ হতো। আনিসুজ্জামানের শপথ দেখে তাঁর উপরে শ্রদ্ধা কমেছিল, এখন সেটা আরো শীর্ণ হয়ে গেল।

যূথচারী এর ছবি

আদিবাসী শব্দটির মানে ওপরে দিয়েছি, উপজাতি আসলে অবজ্ঞাসূচক সম্বোধন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নাজী মতবাদ বিকাশের সময় এই অবজ্ঞাবোধের মুদ্রিত প্রকাশের বীজপত্তন হয় পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে ও পরে ব্রিটিশ (ও কিছুটা ফরাসি)-দের হাতে এই অবজ্ঞা পূর্ণতা পায়। প্রাথমিকভাবে নাজীরা জার্মান ছাড়া ইউরোপের অন্য সকল জাতিকেই অবজ্ঞাভরে উপজাতি বলতো, মানে ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ, পোলিশ সবগুলো জাতিকেই তারা জার্মানদের উপজাতি মনে করতো। পরে ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চরা তাদের কলোনীগুলোর মানুষকে উপজাতি মনে করতো। পরে কলোনীগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গেলে সেখানকার সংখ্যালঘু অথবা ক্ষমতাহীন জাতিগোষ্ঠীদেরকে এই অবিধা দেয়া হয়। যত সরলভাবে বলা হলো বিষয়টা তত সরল না, তবে মোটামুটি এই রকমই। বিস্তারিত কথা বলতে মেইলে যোগাযোগ করুন-


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সেটাই । আমরা এখানে বাস করছি চার হাজার বছর আগে থেকে ।

রাগিব আর ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্যে

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার কাছে 'আদিবাসী' বা 'উপজাতি' কোনটাতেই আবেদন কমেনা। উপজাতি বললে কেউ কেউ কেন মন খারাপ করেন সেটাও এতদিন জানতামনা। এসব নিয়ে খামাখা বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে বলে মনে হয়। রাজনৈতিক কারণে চট্রগ্রামে সমস্যা ছাড়া দেশের আপামর জনগন তাদের অপছন্দ করে বলে আমি বিশ্বাস করিনা। বিষয়টার এরকম রূপ দেয়াকেই বরং আমার কাছে উস্কানিমূলক মনে হয়।

যূথচারী এর ছবি

সরল মনে যা-ই বলেন কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু ডিসকোর্সগুলো এতো সরল না। ব্যক্তি হিসেবে আমাকে বা আপনাকে কেউ হাবারাম, গাধারাম বলেও ডাকতে পারে, কিন্তু আপনি আপনার অফিসিয়াল চিঠিতে আপনার বসকে এটা সম্বোধন করবেন না নিশ্চয়ই, যতোই সে আপনার সাথে মাইডিয়ার হোক।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

অভিজিৎ এর ছবি

আমার কাছে 'আদিবাসী' বা 'উপজাতি' কোনটাতেই আবেদন কমেনা। উপজাতি বললে কেউ কেউ কেন মন খারাপ করেন সেটাও এতদিন জানতামনা। এসব নিয়ে খামাখা বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে বলে মনে হয়।

আসলে সংঘর্ষটা পলিটিকাল কারেক্টনেসের নিরিখে। আমি যেখানে থাকি - সেখানে আদি আমেরিকানদের আগে 'রেড ইন্ডিয়ান' বলে অভিহিত করা হত। এখন বলা হয় 'নেটিভ ইন্ডিয়ান'। কালোদের প্রতি সম্বোধন 'নিগ্রো' থকে শুরু করে 'ব্ল্যাক' হয়ে এখন 'আফ্রিকান আমেরিকান'-এ এসে পৌঁছেচে। সমকামিদের প্রতি সম্বধোন 'কুইয়ার', 'হোমোসেক্সুয়াল' থেকে শুরু করে এখন 'গে' তে এ এসে ঠেকেছে।

একজন আদিবাসী আমেরিকান যে কারণে 'রেড ইন্ডিয়ান' বললে ক্ষুব্ধ হয়, ঠিক একই কারণে একজন চাকমা বা মনিপুরীকে 'উপজাতি' হিসেবে সম্বধোন করলে ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা।

একইভাবে বলা যায়, হিন্দুদের 'মালু' সম্বধোনের কথাও। অনেকে ভাবতে পারেন এটা 'বাড়াবাড়ি' কিন্তু আমি এগুলোকে দেখি সচেতনতার উত্তোরণ হিসেবে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উপজাতি বললে আসলেই তারা মন খারাপ করেন, নাকি সেখানেও রাজনীতি চলছে? উপজাতি/আদিবাসীদের নিয়ে নিজের কোনো কমপ্লেক্স নেই, তবে হাজার বছর ধরে এই ভূমিতে যারা বসবাস করছে তারা আদিবাসি নয় সে যুক্তিটা মানা কঠিন। (একটা মন্তব্যে এমনটি এসেছে)

ব্যক্তিগতভাবে আদিবাসীদের বিষয়ে আমার নরম অনুভূতি আছে। কিন্তু সচেতনা যেন সংঘর্ষের রাজনীতিতে পরিণত না হয় সেটাই কামনা করবো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আদিবাসী বিষয়ক আপনার ব্যাখ্যা ঠিকআছে, কিন্তু সেটা যুক্তি হিসেবে মানলে যারা এখানে হাজার বছর ধরে আছে তাদের যুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক হয়। বাঙালি হাজার বছর ধরে থাকলেও তাদের জীবন ধারা হাজারবার পরিবর্তিত হয়েছে, ওদিকে তারা এখনো তাদের জীবন ধারনের আদি-পদ্ধতি ধরে রেখেছে। উপজাতির ইতিহাস উপরের মন্তব্যে যা বললেন তাহলে আমাদের এখানে সেটা ঢুকলো কিভাবে? এতকিছু ভেবে তারা ঢুকিয়েছে নাকি না ভেবেই ঢুকিয়েছে?

জীবন যাপনের পদ্ধতিই যদি নামকরণের নির্ণায়ক হয় তাহলে আদিবাসীরা শহুরে হয়ে গেলে তাদের কী বলা হবে? তখন কি তাদের জাতিত্ব পরিবর্তিত হয়ে যাবে?

আবার বাঙালি যদি তাদের মত জীবন যাপন শুরু করে তাহলে কি তাদের আদিবাসী বলা হবে?

জিজ্ঞাসু এর ছবি

বাঙালি জাতিকে বলা হয় সঙ্কর (মিশ্র) জাতি যারা এক হয়েছে মূলত ভাষা এবং আবাসভূমি ভিত্তি করে। বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেমন ভাষাভাষি জাতিগোষ্ঠী আছে তেমনি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীও বিদ্যমান। বাঙালি কোল, মুণ্ডা, সাঁওতাল দের নিকট তাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের জন্য ঋণী। অর্থাৎ আমরা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী। ভাষাটা আমাদের নিজস্ব যা প্রাকৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত। বিভিন্নভাবে কালের বিবর্তনে ভাষা আজ একটা রূপ পেয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাষার অসংখ্য ডায়ালেক্টগুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে - যেগুলো প্রমাণ করে আমাদের ভাষাটা বিবর্তিত হয়েছিল। বাঙলা ভাষার শব্দগুলোর উৎস এবং ব্যবহার বিশ্লেষণ করলেও অনেক কিছু জানা যাবে। চর্যাপদ পড়লেও জানা যায় অন্তত একহাজার বছর আগে বাঙলা ভাষার রূপ কেমন ছিল।
বর্তমানে বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি ধর্মের পথ ধরেও অনেক বেশি মিশ্র জাতিগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। সময় জাতিগোষ্ঠীর এই পরিচয়ে আবারও হয়তো কোন একদিন পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আদিবাসীদেরও নিজস্ব জাতিস্বত্ত্বা আছে। তারা চাঙমা বা চাকমা, গারো, সাঁওতাল ইত্যাদি। কিন্তু অর্থের দিক থেকে তারা 'উপ'জাতি না। আমরাও কোন দেশে গিয়ে সংখ্যালঘু হয়ে থাকলেও আমরা 'উপ' জাতি না বরং আমরা আরও বেশি মিশ্র জাতিগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছি দিনের পর দিন। দেশে থাকলে হয়তো বাঙালিত্ব ধরে রাখতে পারব। অন্য কোথাও হিজরত করলে হয়তো একসময় বাঙালি পরিচয় হারিয়েও যাবে।

জীবন যাপনের পদ্ধতিই যদি নামকরণের নির্ণায়ক হয় তাহলে আদিবাসীরা শহুরে হয়ে গেলে তাদের কী বলা হবে? তখন কি তাদের জাতিত্ব পরিবর্তিত হয়ে যাবে?

আমার মতে তাদের জাতিত্ব পরিবর্তিত হবে। তবে সেটা হবে একটা দীর্ঘ সময় নিয়ে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কেউ নিজের জাতপাত ছাড়তে পারে না বা ছাড়ে না।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

জীবন যাপনের পদ্ধতিই যদি নামকরণের নির্ণায়ক হয় তাহলে আদিবাসীরা শহুরে হয়ে গেলে তাদের কী বলা হবে? তখন কি তাদের জাতিত্ব পরিবর্তিত হয়ে যাবে?

আমার মতে তাদের জাতিত্ব পরিবর্তিত হবে। তবে সেটা হবে একটা দীর্ঘ সময় নিয়ে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কেউ নিজের জাতপাত ছাড়তে পারে না বা ছাড়ে না।

তাহলে তো বলতেই হয় আমার ৬ষ্ঠ পুরুষ (এ পর্যন্ত ইতিহাস জানি) বাঙালি ছিলেন কারণ তারা বনে-জঙ্গলে বাস করতেন, মাছ ধরতেন, কৃষিকাজ করতেন। এখন আমি এর কিছুই করিনা-- আমার জাতিত্ব কি তাহলে পরিবর্তিত হয়ে গেছে?

তানবীরা এর ছবি

আমিও পিপিদার দলে, তাইলে আমি কি? কি আমার পরিচয়? ষষ্ঠদার মন্তব্য ঝাজা।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

যূথচারী এর ছবি

খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্তব্য এসেছে দেখছি। মাত্র ঢাকায় ফিরলাম, কাল লিখবো ডিটেইল। শুধু এইটুকু বলে রাখি ব্যাপারটা খুব জটিল।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।