"আমি মরলে আমার হাড়গুলি নিয়েও বাণিজ্য হবে"- বলেছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। ২০০৩ এর ১৬ অক্টোবর প্রথমালোতে সেটি ছাপা হয়। এবং মর্মান্তিক হলেও সত্যি, প্রথমালো এই মহান শিল্পীকে যথেষ্ট অত্যাচার করেছে। মারা যাবার কিছুদিন আগেও ভয়াবহ অসুস্থ এই শিল্পীকে তারা বন্ধুসভার মতো একটা চতুর্থশ্রেণীর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এনে হাজির করেছে এবং অসুস্থ শিল্পীকে গান গাইতে বাধ্য করেছে। এই জঘন্য কীর্তিকে আবার তারা তাদের কাগজে মহান কর্ম হিসেবে ফলাও করে ছাপিয়েছেও।
প্রথমালোই শুধু নয়, আমরা যারা শিল্প-সংস্কৃতির সেবায় জান লড়িয়ে দিচ্ছি, আমরাই বা কম কিসে? গিটার-ড্রাম বাজিয়ে তার ভাটিয়ালি ও বাউল ঘরানার গানগুলোকে রক বানিয়ে ফেলেছি, সেটাও মানা যেত, যদি অন্তত তার কথা ও সুরের মূল দিকটা ঠিক রাখতাম। গান লেখার, সুর করার মুরোদ যদি না-ই থাকে, অন্যের লেখা-সুর করা গান তার মতো করেই তো গাইতে হবে, নাকি?
নাগর শিল্পীরা আব্দুল করিমের গান গাইলেন, লন্ডন নিউইয়র্ক থেকে বিভিন্ন শিল্পী ইংরেজি (অথবা হিব্রু-ও হতে পারে, আমি কিছু বুঝতে পারিনি) কিছু ডায়লগ আর কানঝালাপালানিয়া গোলাগুলির শব্দমিউজিকের সাথ তার গানের অ্যালবাম বের করলেন, শুনলাম অনেক বিক্রিও নাকি হয়েছে। কাগজে আর চ্যানেলগুলোতে বস্তার পর বস্তা আলোচনা হচ্ছে, ফেসবুকে আমরা শত শত স্ট্যাটাস আর লিংক পোস্টাইলাম, ক্যাসেট কোম্পানীগুলো তার ক্যাসেটের হাজার হাজার কপি বের করে তুমুল কামিয়ে নিল, প্রচুর শোকসভা হলো বিধান ও অ-বিধানসভায়, কিন্তু লোকটা মারা গেল না খেয়ে, প্রায় বিনা চিকিৎসায়। ছেলে নূর জালালের ভাষ্যমতে, শেষের দিকে আর জাতীয়/আঞ্চলিক পদক আনতে যেতে চাইতেন না, কারণ পদক নিয়ে বাড়ি ফেরার গাড়ি ভাড়া থাকতো না।
ফেসবুকে নজরুল ভাই মন্তব্য করেছিলেন, "এতদিন কিছুই হয় নাই, শাহ্ আব্দুল করিমের গান নিয়ে খেলা এবং ব্যবসা এখন মাত্র শুরু হবে। অপেক্ষা করেন...।"
আব্দুল করিম জানতেন, তাকে নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে এবং আরো অনেক হবে। বাংলাদেশের সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতি তিনি ভাল করেই বুঝতেন। বুঝতেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি পর্যন্ত সবকিছুই তার গানে উঠে এসেছে। সমকাল থেকে দূরে থেকে এক আধ্যাত্মিক কূপে বসবাস করেননি তিনি, অন্য অনেক মারিফতি বাউলের মতো। আধ্যাত্মিকতা/বাউলিয়ানা তার সঙ্গীতের ভিত্তি হলেও সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি তিনি অনুধাবন করেছিলেন বলেই বলে গেছেন, মরার পর হাড়গোড়গুলো নিয়েও ব্যবসা হবে। তবে সেই ব্যবসা এখনো শুরু হয়নি। নজরুল ভাই, অপেক্ষা করতেছি, সেই ব্যবসাটা কবে শুরু হয়, তা দেখার জন্য।
মন্তব্য
কারো নাম নিয়ে ব্যবসা কি খারাপ জিনিস? বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধাপরাধীদের নিয়েও অনেকে ব্যবসা করছে। কই সেটা নিয়ে তো কেউ মাথা ঘামায় না। আব্দুল করিম কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
যারা এইগুলা করে তাদের মুরোদ থাকলে নিজের নাম নিয়ে ব্যবসা করতে বলেন, অন্যের নাম নিয়ে ব্যবসা করার দরকার কী? বঙ্গবন্ধু বা যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ব্যবসা করছে বলেই এইসব অনৈতিক ব্যবসা হালাল হয়ে যায় না। আর গুরুত্ব জিনিসটা আপেক্ষিক, একেক জনের কাছে একেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
আপনার নতুন গান বিরোধী যুক্তি গুলোকে গলাবাজী মনে হল। গান নিয়ে সবসময় নতুন নতুন পরীক্ষা হবে। যেটা শ্রোতাদের ভাল লাগবে সেইটাই ঠিকে থাকবে, তা আপনি যতই শিল্পসংস্কৃতির সেবাই জান লড়িয়ে দেন না কেন?
না, শ্রোতাদের গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাটার আমি বিরোধিতা করি না, আপনি র্যাপ, জ্যাজ, রক, মেটাল, লালন, রবীন্দ্র, জীবনমুখী যা খুশী শোনেন অথবা শোনা থেকে ১০০ হাত দূরে থাকেন- এটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমার লেখা ও সুর করা গান যদি কেউ আমার মতো করে না গায়, আমি ব্যাপারটা সহ্য করবো না; আমার চামড়া অতো মোটা না। আপনি সহ্য করলে করেন, আমার আপত্তি নাই। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে আমি মানতে পারি না।
আমার কথা হলো, নিজে লেখেন, নিজে সুর করেন এবং সেই রচনা ও সুর নিয়ে যতোখুশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন, আমার আপত্তি নাই। এবং ঘরানার ক্ষেত্রেও আমার আপত্তি নাই, আপনি বাংলা লোকসংগীত রচনা করেন এবং তার সাথে আফ্রিকান বা জাপানী শোকসংগীতের পরীক্ষা করেন, কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আব্দুল করিমের গানের ওপর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমি মানতে পারি না।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
ভাই, পোস্টের শিরোনামটা কেমন যে আপক্তিকর ঠেকছে। মনে হচ্ছে পুরনো কোন বিষয়কে নতুন করে তুলে আনা হচ্ছে; আগুনে ঘী ঢালার মতো। আর কেন যেন একটা বিশেষ পত্রিকার প্রতি ক্ষোভটা একঘেয়ে লাগছে। সমালোচনা করলাম বলে কিছু মনে নিয়েন না।
হা হা হা। যতো খুশী সমালোচনা করেন; কোনো ব্যাপার না। আমার ব্যক্তিগত অবস্থান এটা। আর ব্লগে এই ধরনের ব্যক্তিগত মত প্রকাশের ব্যাপারে আপত্তি থাকলে "আপত্তি জানান"-এর ওপর গুতা দেন, মডারেটর-রা ব্যাপারটা দেখবে, হয় প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেবে অথবা কোনো একটা ব্যবস্থা নেবে। (এবং তখন আমিও আমার ব্লগিং বিষয় নিয়ে ভাববো)।
পুরনো বিষয়কে নতুন করে তুলে আনার ব্যাপারটা বুঝলাম না, পত্রিকার পুরনো সংখ্যা থেকে তুলে দিয়েছি বলে এটা পুরনো? নাকি ইস্যুটা আর বর্তমানে প্রাসঙ্গিক নেই?
প্রথমালোর প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ নেই, ওদের বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে ওরাই বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানকে বিতর্কিত করেছে। এবং এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত একটা ব্যাপার। সাম্রাজ্যবাদী/আগ্রাসী একটা চরিত্র থাকার পরেও বিশেষ কিছু সুবিধাজনক ব্যাপার (যেমন-কাজ, শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা ইত্যাদি) থাকায় মানুষ যেমন এখনো আমেরিকা যায়, প্রথমালোও আমাদের দেশের পত্রিকাজগতে এমনি একটা ব্যাপার; সাম্রাজ্যবাদের প্রতি প্রথমালোর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিটি কাজ করা সত্ত্বেও মানুষ প্রথমালো পড়ে কয়েকটি বিশেষ সুবিধার কারণে (যেমন- বাড়িভাড়া, পাত্রীচাই এই জাতীয় বিজ্ঞাপন প্রথমালোতে অনেক বেশি থাকে)।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
না ভাই, আমার কেমন লাগছিল সেটাই বললাম। "আপত্তি" জানানোর কিছু নাই। ব্লগে তো নিজের ভাবনা চিন্তার কথাই লেখা হয়।
প্রথম আলো বাড়িভাড়া আর পাত্রীচাইয়ের বাইরেও কিন্তু অনেক কারণে মানুষ পড়ে। জরীপ করে দেখা যেতে পারে অনলাইনে কোন পত্রিকাটা মানুষ প্রথম খোলে। আমার মনে হয় ইত্তেফাক আর প্রথমআলো ১ বা ২ নম্বরে থাকবে। জরিপ না করেও প্রক্সি চলক (যেমন সাইট ড়্যাংকিং) দিয়েও সেটা বোঝা যায়।
বাড়িভাড়া, পাত্রীচাই ব্যাপারটা তো একটা উদাহরণ মাত্র। আমি নরমালি প্রথম আলো কিনি, যখন বাসা বদল করার দরকার হয় তার আগে শুক্র ও শনিবার; অথবা যখন কেউ আমাকে বলে প্রথম আলো-তে আর্কিওলজি বিষয়ে কোনো লেখা ছাপা হয়েছে। আরো অনেকের অন্য অনেক আগ্রহের ব্যাপার থাকতে পারে। আনন্দবাজার-ও অনেক চলে, সিএনএন-ও অনেক চলে; চলা দিয়ে আসলে গুণ বিচার করা যায় না। আমরা যেমন সচলে লিখি, কিন্তু আসলে তো বেশিরভাগ মানুষ তো সামো-তে বা অন্য ব্লগে লেখে; অন্তত প্রক্সি চলকগুলো তো সেটাই বলে।
মিডিয়াতে পারফেকশনের যে কথা বললেন, ওটা এই দেশে এখনো হয় নাই; অন্ততপক্ষে আমি জানি না। তবে এই সমালোচনাগুলো না থাকলে, ওটা হওয়ার যে আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে আছে, ওটা যে খুব দরকার- এটা তো বোঝা যাবে না; আকাঙ্খা এবং প্রয়োজন-ই তো যে কোনো কিছুর সৃষ্টির আগে বেশি জরুরি। তাই না?
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
আপনি সাধারণত (বাসা বদল এবং আর্কিওলজি বাদে) কোন সংবাদপত্র পড়েন জানতে ইচ্ছা হচ্ছে।
কিছু মনে করেবেন না কিন্তু আপনার কাজের আমি একনিষ্ঠ সমর্থক।
করিমের কোন গানটার সুর এবং/অথবা উচ্চারণ বিকৃত করা হয়েছে বলে আপনি দাবী করছেন? নির্দিষ্ট করে বললে ভাল হয়।
বাপ্পা-সঞ্জীব করিমের গান গেয়েছে মাত্র একটা। আর হাবিব গাইয়েছে ৪টা। একজন গীতিকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতি গানের জন্য কত পেতে পারেন? হাবিব কি তা দিয়েছে? দয়া করে আবেগের বাইরে এসে টাকা পয়সার হিসাবটা করবেন। আপনি একবার গিটার দিয়ে বাউলের গান গাইবার বিরোধিতা করছেন, আবার যারা গেয়েছে তাদের কাছে টাকা দাবী করছেন। এটা স্ববিরোধিতা।
হাবিবের করা গান নিয়ে বাউল নিজে কোনদিন বিরক্তি প্রকাশ করেছে বলে শুনিনি, বরং তাদের অন্তত আটটা সাক্ষাৎকারের খবর পত্রিকায় পড়েছি।
বাংলাদেশে আরো বহু বাউল আছেন। না তাদের সংখ্যা জানি, না জানি নাম। তারা কেন পরিচিত হলেন না। যদি বলা হয়, বাপ্পা-সঞ্জীবের করা "গাড়ী চলে না" র পরই করিম সুনামগঞ্জ-সিলেটের বাইরে পরিচিতি পেয়েছেন তা কি খুব ভুল বলা হবে? আরো একটা প্রশ্ন করি, বাউলের গান কি কেবল কথা আর সুর? তার সাথে যারা বাজাত, সঙ্গ দিত তাদের নাম কেউ জানে না কেন?
সবশেষ কথা, করিমকে আপনি কী সূত্রে চিনেন? তার হাড়-গোর পেতে আপনাকে আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্য-প্রমান ছাড়া খুব সহজে এন্টি-এস্টাবলিশমিন্ট লেখার সাথে অপরিচিত নই একেবারেই। প্রপার হোম ওয়ার্ক করেছেন লেখার আগে? কত জন মিউজিশিয়ান শাহ আব্দুল করিমের গান ব্যবহার করে লাভবান হল, সেটার হিসাব পাওয়াটা জরুরি। তাদের গানে বিকৃতির মাত্রাটাও জানাতে ভুলবেন না।
সত্যি কথা তিতা হলেও কাউকে না কাউকে তো বলতেই হতো। লেখককে ধন্যবাদ।
এই জন্যই আসলে আইনের দরকার। বাউলরা তাঁদের গানগুলি প্যাটেন্ট না করায় কপিরাইট আইনে মামলা করতে পারে না। এরকম মামলার উদাহরণ চালু হওয়া খুবই জরুরি। আর অন্যকোন শিল্পী কোন জীবিত বা অনুর্ধ ৫০ বছরের মধ্যে মৃত কোন বাউল বা শিল্পীর লেখাসুরকরা কোন গান রেকর্ড করে বাজারে ছাড়তে চাইলে সেই শিল্পী বা তাঁর পরিবারের অনুমতি নিতে হবে এবং তাঁকে বা তাঁদেরকে রয়ালটি দিতে হবে। এইক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতট্রেক্ষিত জাতীয় কথাবার্তা বলার মানে হচ্ছে ....এতকালই যখন ঠকাইয়া গেলাম ..তো ঠকাই আরো কিছুকাল!....অসুবিধা কী?
আমি দু:খজনকভাবেই বহু সচলের সাথে ব্যান্ড শিল্পীদের বাউল গান নিজের মতো করে গাওয়া প্রসঙ্গে কঠোরভাবে দ্বিমত পোষণ করি। আমি যে ধরণের শ্রোতা তাঁরা হুইস্কির সাথে রসগোল্লা খান না। আমি মনে করি যারা এরকম খেতে ভালোবাসেন তারা হুইস্কি বা রসগোল্লা কোনটাই চেনেন না।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
দুঃখিত এভাবে বলতে হচ্ছে।
প্যাটেন্ট হয় কোন invention এর। গান কোন ইনভেনশন না, তাই প্যাটেন্ট হয় না।
গানের ক্ষেত্রে কেবল কথার (লিরিকসের) আর সুরের (মেলডির) কপিরাইট হয়। কর্ড প্রগ্রেসন (হারমনি) এর কপিরাইট হয় না। কপিরাইটের জন্য নিবন্ধন শর্ত না। এগুলো পশ্চিমা নিয়মের কথা।
একটা গানের কপিরাইট থাকে সাধারণত লেবেল প্রকাশকের (বিস্তারিত নির্ভর করে শিল্পীর সাথে চুক্তির উপর)। কেউ যদি অন্যের গান গায়, ঠ্যালা যাবে নকল গানের প্রকাশকের উপর। আবার যথাযথ শর্তের অভাবে একজন শিল্পী নিজে স্টেজে গান গাবার সময়, লেবেল অধিকারীকে পয়সা দিতে হয় শিল্পীর। (পল ম্যাকার্টনি দিয়া সার্চ দেন গুগলে কাহিনী পাবেন।)
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন বহুকাল থেকেই আছে, কয়েক বছর আগে সেটা সফটওয়ারের জন্য যুগোপযোগী করা হয়েছে।
একজন ব্যান্ডশিল্পী যখন বাউল গান গান, তখন কী চুক্তি হয় বা আদৌ হয় কিনা পাবলিক জানে না। সেজন্য "বাংলাদেশের প্রেক্ষিত" বললেই চুরি বৈধ করার কথা বলা হয় না। অনেক বাউল গানই পুরনো গানের সুরে তৈরী। সেখানে যে বাউল পুরনো সুরের উপর নতুন কথা বসাচ্ছে তাকেও চোর বলতে হবে তাহলে।
আপনার প্রথম চার প্যারাগ্রাফের কথাবার্তা আমার বক্তব্যের সাথে একেবারেই না যাওয়ায় সেগুলির জবাব দেওয়ার কিছু নাই।
আমার কথা হইল একজন প্যান্টশার্ট পড়া গায়ক আরেকজন প্যান্টশার্ট পড়া গায়কের গান গাইতে গেলে হয় তার কাছ থিকা অনুমতি নেয় নাইলে তারে টাকা দেয়। বাংলাদেশের উচ্চমধ্যবিত্ত ব্যান্ড শিল্পীরা বাউলদের গান গাওয়ার আগে -
১. লিখিত অনুমতি নেয় কী না
২. রয়ালটি দেয় কী না
না নিলে বা না দিলে সেইটা কেন? ঐ বাউল গ্রামের গরীব বইলা?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আমি আপনার বক্তব্যে সহমত জানিয়ে গেলাম। আমার যা বলার তা আমি আমার আগের একটা পোস্টে বলেছিলাম।
শাহ্ আব্দুল করীমের গান নিয়ে কারা ব্যাবসা করেছে, করছে, করবে সেসব নির্ণয় নাহয় পরেই করি।
উনি নিজে তাতে সম্মত না অসম্মত ছিলেন সেসব বাদ দিয়েও, এই পত্রিকার সাক্ষাৎকারের শিরোনামটা দেখলেই মনে হয় অনেকটা বোঝা যায়।
উনি যখন বলেন যে "আমি মরলে আমার হাড় নিয়েও বাণিজ্য হবে" তখন বুঝতে হবে যে উনাকে নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে বলে তিনি জানেন এবং এই বাণিজ্যের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে উনি ধারণা করছেন। আর এই কথাতেই তার ক্ষোভটা ধরা পড়ছে আমার চোখে স্পষ্টই।
তার গান তো রাহেলিল্লাহ্ ছাইড়া দেন নাই তিনি যে যা খুশি তা করবে?
এখন ধরা যাক পিপিদার একটা ছবি আমার খুব পছন্দ হইলো, সেই ছবি তোলার ক্ষমতা আমার নাই, আমি একটু একটু গ্রাফিক্সের কাজ করি। তো পিপিদার সেই ছবি নিয়ে আমি বিরাট একটা ক্যারিক্যাচার করে ফেললাম। এবং আমি সেইটা পয়সা দিয়ে বিক্রি করলাম। অবশ্যই পিপিদার ক্রেডিট সহই।
এই পর্যন্ত কোনো অসুবিধা নাই।
এর পরে পিপিদা যদি সাক্ষাৎকারে বলে যে "আমার ছবি নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে" এবং সেই কথায় যদি বোঝা যায় যে তার ক্ষোভ আছে বিষয়টাতে। তখন বুঝতে হবে এখানে একটা ঘাপলা আছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার সাথে একটু দ্বিমত হই:
বাউল মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই অনেকটা শয্যাশায়ী এবং অপ্রকৃতস্থ ছিলেন। এর পরও পত্রিকাওয়ালারা তার সাক্ষাৎতার নিছে, ক্যামনে নিছে তারাই ভাল জানে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পরস্পর বিরোধী কথাও আছে। সে সব থেকে যে যার মতো অর্থ বের করে নেয়। সেটার স্বাধীনতা তো আছেই।
কিছুদিন আগে আব্দুল জব্বার বলেছেন, 'তার' নীল দরিয়া গানের রিঙটোন বিক্রী হইছে কয়েক কোটি। সেই থেকা এক টাকাও তিনি পান নাই, কেউ তার অনুমতিও নেয় নাই। এখন কে তারে গিয়া বোঝাবে যে, নীল দরিয়া গানের মালিক তিনি না, মালিক হলো, সারেঙ বৌ ছবির প্রযোজক। আব্দুল জব্বার সরকারের কাছে আব্দার করছেন মারা যাওয়ার আগে যেন নিজের একটা ফ্ল্যাট বাড়ী থাকে।
শেষ বয়সে অনেকের অনেক অপ্রাপ্তি থাকে, তাই অনেক কথাও হয়। কিন্তু সব কথা ধরলে কী আর চলে।
আব্দুল জব্বার পত্রিকায় বা সরকারকে যা বলেন তারচেয়ে অনেক বেশি বলেন প্রতিসন্ধ্যায় গোল্ডেন ড্রাগনে বসে... সে এক বিভীষিকা...
নীল দরিয়া গানের মালিক তিনি না, প্রযোজক। টাকা পাইলে প্রযোজক পাবে। আপনার এই কথা সত্য।
কিন্তু আব্দুল করিমের গানের মালিক তিনি নিজেই। কোনো অংশীদার নাই।
আমি যতদূর জানি, তারে টাকা দেওয়া হইছিলো। হাবিব তার সঙ্গে দেখা করে অর্থ সাহায্য করছে তার বাড়িতে গিয়ে।
গীতিকার সুরকার একটা গানের জন্য কতো পান? এইটার কোনো সঠিক মূল্য নাই। একটা গান লিখে সাধারণত একজন গীতিকার ২-৫ হাজার টাকা পান। আবার এই দেশে একটা গান লেখার জন্য ঢাবির একজন স্বনামধন্য অধ্যাপককে ১ লক্ষ টাকাও দেওয়া হইছে বইলা শুনছি।
দেশে এখন সুরকার বলতে আলাদা তেমন কিছু নাই। কম্পোজারই সুরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে। একটা গান করতে সাধারণত ১৫/২০ হাজার টাকা নেন। হাবিব তার একটা এলবামের জন্য ক্যাসেট প্রকাশনা সংস্থা থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিছে বলে শুনছি। (যদিও সেই এ্যালবাম ব্যাবসায়িকভাবে চরম ফ্লপ খাইছিলো, বাংলালিঙ্কের স্পন্সর ছিলো বলে রক্ষা)
এখন আসেন করিম সাহেবের ব্যাপারে। সঞ্জীবদা যখন গাড়ী চলে না গানটা করেন, অনুমতি নিছিলেন। টাকা পয়সা হিসাবে আসে নাই। যেহেতু করিম সাহেব বিনা শর্তে মৌখিক অনুমতি দিছিলেন, এইটা নিয়া তাই কথা নাই। যদিও 'কোন মিস্তিরি নাও বানাইছে' গাইতে পূর্বানুমতি তিনি নেন নাই বলে জানি।
কিন্তু হাবিব অনুমতি নেয় নাই। আসলে হাবিব লণ্ডনে বসে স্রেফ এক্সপেরিমেন্ট হিসাবেই কয়েকটা গান রেকর্ড করছিলো। ঐভাবে পরিকল্পনা করে কিছু করে নাই। সেখানে করিমের গান ছিলো। আর তখন ভিন্নস্বাদের প্রকাশনা একতার জন্ম নেয়, এবং এই এ্যালবাম বাইর হয়। এবং হিট করে। তার আগ পর্যন্ত আসলে এইটা নিয়া কেউ খুব একটা ভাবে নাই।
হিট হয়ে যাওয়ার পরে হাবিব করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করে টাকা দেন। কিন্তু তখন আর মূল্য নির্ধারণের সুযোগ নাই। হাবিব যা দিছে তাই সই... তাই ধন্য।
অন্যের গান গাওয়াটাকে আমি আপত্তিকর মানি না। ফিউসন বা এক্সপেরিমেন্টেও সানন্দেই রাজী। কিন্তু গানটার মূল মালিকরে অখুশী করে সেটা করাটা অন্যায় বিবেচনা করি আমি।
আপনার মন্তব্যটা খুবই ভালো। একেবারে প্রফেসনালি বিষয়টাকে ভাবছেন। এটাই উচিত। আব্দুল করিমের গান টাকা দিয়ে কিনে নেউক কেউ। তারপরে যা খুশি তা করুক। আপত্তি নাই।
কিন্তু হাবিব বিষয়টা প্রফেসনালি করে নাই। এইটাই সম্ভবত সত্য। সে পরবর্তীতে যা দিছে সেটাও প্রফেসনের আওতায় দেয় নাই। আর্থিক সাহায্য টাইপ ব্যাপার হইছে। ব্যাপারটা অনেকটা করুণার মতো মনে হইছে আমার কাছে। এইটা খারাপ লাগছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এক, এই লেখাটা লিখে আমার গুরুত্বপূর্ণ দু'টি লাভ হয়েছে, প্রথমত. দু'টি গুরুত্বপূর্ণ লেখার লিংক পেলাম, একটা মনামির লেখা আরেকটা হাসান মোরশেদ-এর লেখা। ধন্যবাদ দু'জনকেই। দ্বিতীয়ত. শিল্প ও শিল্পীর সত্তা বিষয়ে মানুষের আন্ডারস্টান্ডিং কি সেটা-ও খানিকটা বোঝা গেল।
এবার বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেই- তবে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব করিম নিজেই দিয়ে গেছেন; অন্যের গান নিজের নামে গাওয়া তিনি পছন্দ করতেন না, তার গান নিয়ে মানুষ বাণিজ্য করবে এটাও তিনি পছন্দ করতেন না; গানের বিকৃতিও তিনি পছন্দ করতেন না। এবং এইসব ব্যাপার তিনি খোলাখুলি বলে গেছেন, অনেকের কাছেই। আমি আমার গান নিয়ে ব্যবসা হোক এটা চাই না, আমি আমার গান বিকৃত হোক এটা চাই না; আপনি কোন বালের গান-পণ্ডিত ওস্তাদ আসলেন, আমাকে আমার গানের ফিউসন এক্সপেরিমেন্ট শেখাতে আসেন? আব্দুল করিম অনেকটা এই ভাবেই তার গানের স্বকীয়তা রাখতে বলে গেছেন বহুবার। ছিয়ানব্বই বছর ধরে যথেষ্ট ফিউসন, যথেষ্ট এক্সপেরিমেন্ট করেই তিনি গানগুলো লিখেছেন। হাবীবের মতো মাথায় মালহীন লোকেরাই এইসব "দাদাকে ...দা শেখানো"র কাজ করতে যেতে পারেন; আর কিছু লোক এইসব পর্ণো দেখেশুনে মজাও পেতে পারেন। আমি অন্তত পাই না।
দুই. কোনো হোমওয়ার্ক-ই আসলে করি নাই আমি, কোনো গবেষণা জাতীয় রচনা এটা না। বার বার বলছি, ব্যক্তিগত অনুভূতি এইসব। অহেতুক প্যাচানোর কোনো মানে হয় না।
তিন. প্রথম আলো "কিনি না" মানে "পড়ি না" এমন না, আমি মাঝে মাঝেই প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে আমি ঢুঁ মারি। আর পারফেক্ট মিডিয়া নিয়ে আসলে বলাটা খুব জটিল। তবে এক সময় আমার ইত্তেফাক খুব ভালো লাগতো, কারণ এনালাইসিসের নামে ইনটেনশনাল এনালাইসিস-এর বদলে ওরা খবর দিতো অনেক বেশি। আজকাল আর একটা পত্রিকা পড়ে হয় না, এক খবর ৪/৫টা মিডিয়ায় না দেখলে আসল ঘটনা বোঝা যায় না। আমি আসলে সংবাদপত্রে সংবাদের যথাযথ উপস্থাপনটাকে বেশি পছন্দ করি, সংবাদ বিষয়ে আমার কি অবস্থান, কি মতামত, এইসব ভাল্লাগে না। আপনার মনে আছে হয়তো, এক সময় যখন রেডিও-র ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার-রা সব ছিল মোহামেডানের সাপোর্টার, ওরা বলতো এই ভাবে- "সত্যজিৎ রায় রুপু বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মোহামেডানের সীমানায়, তাকে কড়া বাধা দিচ্ছেন কায়সার হামিদ, আপনার জানেন কায়সার হামিদ বাংলাদেশের সেরা ডিফেন্ডার, তাকে পেরিয়ে গোলপোস্টের কাছে যাওয়া এতো সহজ নয়, যাই হোক রুপুর কাছ থেকে বল চলে গেল আসলামের কাছে, এবং একি করলেন কানন? বাংলাদেশের সেরা গোলকীপারের কাছে এমনটা কেউ আশা করতে পারে না। আসলামের একটি দুর্বল শট তিনি ধরতে পারলেন না (মানে মোহামেডান গোল খেয়েছে)। যা-ই হোক, ঘুরেফিরে বল চলে এসেছে কায়সার হামিদের কাছে, তিনি ছুটছেন দুর্বার গতিতে, ঢুকে পড়েছেন আবাহনীর বিপদসীমানায় (মানে মাঝমাঠ ক্রশ করলেন), গোল হবার সম্ভাবনা... ইত্যাদি ইত্যাদি)। প্রথম আলো-ও অনেকটা এই রকম, আজকাল প্রথম আলোর খেলার বিবরণী পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাদের ম্যাক্সিমাম আবাহনীর সাপোর্টার এবং এটাও আমার ভালো লাগেনা। ব্যাপারটা বোঝাতে পারলাম মনে হয়, আমি আসলে খেলার সত্যিকারের ধারাবিবরণীটা চাই, কোনো এক পক্ষের হয়ে চাই না। বেশিরভাগ গণমাধ্যম-ই একটা পক্ষ নিয়ে ফেলে এবং পক্ষটা সাধারণত হয় টাকাওয়ালা, ক্ষমতা ওয়ালা এই সব লোক/প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। দেখছেন না, প্রতিদ্বন্দ্বী বসুন্ধরা এবং র্যাংগস এর বিরুদ্ধে প্রথম আলো কি নগ্নভাবেই না লেগেছে। একসময় শাজনীন হত্যা-কে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যা-র চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু করে তুলেছিল, ইয়াসমিন বা সীমা বা কৃষক জায়েদা হত্যা নিয়ে কিন্তু তেমন কিছুই করেনি। ইনটেনশন বোঝার জন্য তো মহাপণ্ডিত হতে হয় না, প্রত্যেক দিন প্রথম পাতায় শাজনীনের রঙিন ফটো দেখলেই বোঝা যায় প্রথম আলো কাদের প্রতিনিধিত্ব করে।
চার. যারা সমালোচনা করেছেন বা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের দু'একটি মন্তব্যে আমি খুব-ই বিব্রত। বিশেষ করে, প্রকৃতিপ্রেমিকের মন্তব্যে আমি যারপরনাই লজ্জিত। আমি যা লিখি তার সব-ই সত্যকে প্রতিনিধিত্ব করে না এবং আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি কারো ভালো না-ই লাগতে পারে। আমি এই ভালো না লাগা নিয়ে বিব্রত হই না, বরং এই ব্লগ থেকে আমি নিজেকে কিছুটা পরিবর্তিত-ও করেছি এবং বোঝাপড়াও অনেক বেশি জোরালো হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় আমি এই ব্লগের অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য কিছুটা ব্যক্তিগত গবেষণাও করেছি। এখন যেমন ভাবছি, মিডিয়া এনালাইসিস অথবা করিমের গান নিয়ে ব্যবসার একটা হিসাব এই টাইপের কিছু করবো কিনা? সময় পেলে হয়তো করবো। কালকে ঢাকায় এসেছি, আগামীকাল ঢাকা ছাড়ছি, সময় খুবই কম।
সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
যূথচারী ভাই,
আমি দুঃখিত যদি আমার মন্তব্যে লজ্জা পেয়ে থাকেন। ব্লগে মন্তব্য বা সমালোচনা করার একটা বিপদ আছে। সেটা আমি জানতাম। তাই বেশ কয়েকটা লাইনের শেষে ইমোটিকন দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমি কিন্তু ঠিক বুঝিনি কেন আপনি বিব্রত হলেন। আমি এই পোস্টে কিন্তু বলিনি আব্দুল করিমের গান অন্যভাবে গাইলে ক্ষতি নেই।
মানুষের একাধিক সত্তা থাকে, আমারো হয়তো আছে। আমি হয়তো নজরুলের বা রবীন্দ্রনাথের গান কেউ ভিন্নভাবে গাইলে প্রতিবাদ করে উঠবো, কিন্তু করিম সাহেবের গান করলে ততটা করবনা। তার কারণ হলো করিমের গান আমি প্রথমে যেটা শুনেছি সেটা "বিকৃত" ভাবেই শুনেছি। কাউকে ছোট করা তো উদ্দেশ্য নয়রে ভাই। আপনি যেমন আপনার ভাবনা প্রকাশ করেছেন, আমিও তেমনি ভাবনা প্রকাশ করেছি।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি।
আপনার বা ব্লগের অধিকাংশের সাথেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। ব্লগের লেখার মাধ্যমেই চেনা পরিচয়, সেই থেকেই মানসপটে সেই ব্লগারের ছবি আঁকার চেষ্টা। আপনাকে আগেও বলেছি, মেসেজেও বলেছি, এখনো বলছি, আপনার বা আপনাদের কাজকর্মের আমি সমর্থক, এবং সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই পোস্টে আপনার লেখার কোন্ দিকটা আমার কেমন লাগে সেটা জানাতে গিয়েছিলাম। বলা যেতে পারে এটা একটা টেস্ট কেস ছিলো। বেশ কিছুদিন আগে ইশতিয়াকের সাথে মন্তব্য বিনিময় হচ্ছিল। তখন একটা প্রসঙ্গ এসেছিল-- আমরা কারো লেখার সমালোচনা করিনা কেন, এবং মাঝে মাঝে যে সমালোচনাও করা উচিত, ইত্যাদি। পুরনো সচল হিসেবে আমিও সাহস করে আপনার লেখার ধরন (যাকে আমি বলি প্রতিক্রিয়া ধরনের লেখা) সম্পর্কে একটু বলতে চেয়েছি। সেখানেই শিরোনাম প্রসঙ্গ এসেছে।
আমি ধারণা করি আলমগীর ভাই, বা মামুন যদি এই মন্তব্য করতো, তাহলে এর প্রতিক্রিয়া অন্যরকম হতো। আমার সমালোচনা বা মন্তব্য পড়ে সবার আগে আপনার মধ্যে আমার অসমালোচক 'ইমেজ'টি ভেসে উঠেছে বলে ধারণা করছি। আর সেকারণেই সম্ভবত আহত হয়েছেন।
আবারো বলছি, আমার কারণে মন খারাপ করবেন না। যা কিছু হয়েছে, নিজের অজান্তে যা ব্যাথা দিয়েছি, তার জন্য দু:খ প্রকাশ করছি। ভালো থাকুন।
আমি বিব্রত হয়েছি "কিছু মনে করবেন না কিন্তু" কথাটাতে।
"I may not agree with what you Say but I will defend to the death your right to say it".
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
মূল লেখার চেয়ে এই মন্তব্যটিই বেশি ভালো লেগে গেলো।
প্রথম আলোর আগাগোড়া ভন্ডামি। হাবিবের আগা কিংবা গোড়া কিছুই নাই - তার কথা বাদ। আর 'হোমওয়ার্ক' এর কথা তুললেন যিনি তার আলগা মাস্টারি অত্যন্ত আপত্তিকর। আপনার পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সচলায়তনে এরকম ভাষা ব্যবহার করা হয় না। আরেকজনের মতকে আলগা মাস্টারি বলার মতো অধিকার সচলায়তন তার সদস্যদের দেয় না বলেই জানি।
মডারেটররা যদি মনে করেন, তাহলে এই মন্তব্য মুছে দিতে পারেন। আমি কোনো অরুচিকর তর্কে জড়াতে চাই না।
(ডিসক্লেইমার : রুচির বিষয়টি আপেক্ষিক, অরুচিকর অর্থ - আমার কাছে যা অরুচিকর, এবং আমি মনে করি ব্যক্তিগত রুচি-অরুচির উর্ধে উঠে কমিউনিটি ব্লগিং করার কোনো অর্থ আছে বলে আমি মনে করি না, কারণ এখানে ব্যক্তির সাথেই সমষ্টির বিনিময় ঘটে থাকে)
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এ দুটা কথায় আপত্তি জানালাম। সচলে এভাবে কেউ অন্যের কথার উত্তর দেয় না বলেই বিশ্বাস।
আপনি আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি। তার উপর করিমের উপর আপনার এতই জানাশোনা যে ওই সাক্ষাৎকার দুটো আজকে মাত্র চোখে পড়ল।
ভাল থাকুন।
প্রথম উদ্ধৃতিতে আমি এবং আপনি আসলে আমি এবং আপনি না; পরের লাইনেই বলেছি, এটা করিম এবং তার গানের ফিউসনকারীদের মধ্যে করিমের অভিব্যক্তির তর্জমা। তবে তর্জমাটা ভালো লাগেনি বোঝা যাচ্ছে অনেকেরই। ঠিক আছে, নেক্সট টাইম থেকে অন্যরকম দিবোনে।
দ্বিতীয় উদ্ধৃতি বিষয়ে আমার অবস্থান বদলাচ্ছি না, বাংলা প্রবাদটার সাথে অন্য কোনো কিছু যায় না, ওটা এমনই সবচেয়ে ভালো শোনাচ্ছে। আগের লাইনের সাথে মিলিয়ে পড়েন, ভালো লাগবে। না লাগলে আর কিছুই করার নাই।
করিমের ওপর আমার অনেক জানাশোনা এটা আপনি কেন ধারণা করলেন? আর্কিওলজি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়েই আমার তেমন জানাশোনা নাই। কিন্তু নিজস্ব ভালো লাগা খারাপ লাগার একটা ব্যাপার আছে। এই লেখা তার-ই একটা অংশ। (এবং জানিয়ে রাখি আমি খুব ভালো ব্লগার-ও না, আগেও জানিয়েছি আবারো জানাচ্ছি, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সচলায়তনের পাতা খুলতে অনেক সমস্যা হয়, অনেক সময় নেয়, অনেক সময় অনেক মন্তব্য বা লেখা পোস্ট করার পর কানেকশন সমস্যার কারণে পুরো হারিয়ে যায়, এইসব কারণে সচলে আমি আসি খুব কম)।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
যার যার পছন্দ তার তার কাছে। এসব বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ হচ্ছে 'ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট' তৈরী হবে বৈধ-অবৈধ দুই ভাবেই। আজকে হাবিব/ফুয়াদ/বাপ্পার তৈরী প্রডাক্ট যদি কেউ লুফে নেয় সেটার ক্রেডিট দুই পক্ষকেই দিতে হবে। সেখানে শাহ আব্দুল করিমের গান বৈধ না অবৈধ ব্যবহার হল সেটার নির্ণায়ক হবে আদালত। আমার জানা মতে আফজাল হোসেনের এক নাটকে অনুমতি ছাড়া অর্ণবের একটা গান ব্যবহার করা হয়েছিলো, অর্নব উকিল লোটিশ পাঠানোর পরে সেবিষয়ে সমঝোতা হয়।
আজকের বিতর্কের বিষয়ে টেডের এই ভিডিওটি কিছুটা রেলভান্ট
১০.৩ এর অনিন্দ্য রহমানের প্রতি উত্তরে
"আর 'হোমওয়ার্ক' এর কথা তুললেন যিনি তার আলগা মাস্টারি অত্যন্ত আপত্তিকর।"
হোমওয়ার্কের কথা এমনি তুলি নাই ভাইজান। সচলায়তনের তুলোনামুলক ম্যচিউরড ব্লগারদের থেকে এক্সপেক্টেশন একটু অন্য রকম। যেমন যে সংগীত-নৈতিকতা নিয়ে কথা বলবে তার সংগীতের ধারা/ইভোলিউশান/মার্কেট ডিমোগ্রাফী/গ্লোবাল ট্রেন্ড সম্পর্কে 'বেসিক' নলেজ আবশ্যক মনে করি। এইসব নলেজের অভাব যাহাদের তাহারাই অতি সরলিকরনে উস্তাদ।
"নাগর শিল্পীরা আব্দুল করিমের গান গাইলেন, লন্ডন নিউইয়র্ক থেকে বিভিন্ন শিল্পী ইংরেজি (অথবা হিব্রু-ও হতে পারে, আমি কিছু বুঝতে পারিনি) কিছু ডায়লগ আর কানঝালাপালানিয়া গোলাগুলির শব্দমিউজিকের সাথ তার গানের অ্যালবাম বের করলেন, শুনলাম অনেক বিক্রিও নাকি হয়েছে।"- এখানেই লেখকের হোমওয়ার্কের অভাব , তার কোন গানই হাবিব/ফুয়াদ/বাপ্পা "কিছু ডায়লগ আর কানঝালাপালানিয়া গোলাগুলির শব্দমিউজিকের" ব্যবহার করে নাই। লেখক তার বক্তব্য প্রতিষ্ঠার জন্য এধরনের অসততার আশ্রয় নিয়েছেন।
হিসাব জটিল কিছু না। গীতিকার সুরকার জীবিত থাকা অবস্হায় আবশ্যই সেই সংগীত ব্যবহার করতে হলে তার অনুমতি নিতে হবে। তিনি জীবিত থাকা কালিন সময়ে হাবিব/ফুয়াদ/বাপ্পার বিরুদ্ধে তার কোন মন্তব্য চোখে পরে নাই। তারা চুক্তি করে তার গান ব্যবহার করেছিলো না করে নাই সেটাও জানি না। রিমিক্স বিষয়ে করিমের অনুভুতি কি সেটাও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। কোথায় কারা বিকৃতি করলো সেটারও কোনো তথ্য-প্রমান নাই। মৃত্যুর পরও কোন হিট এলবামও বের হয় নাই যে বলা যাবে তারে নিয়ে ব্যবসা করে "কিছু মিউজিশিয়ান" ফাটায় ফেলতেসে দাবী করা যাবে। তথ্য-উপাত্ত ছাড়া একটা ইমোশনাল কথার উপর ভিত্তি করে ব্লগ লিখলে এধরনের মন্তব্য জোটার সম্ভাবনা একেবারেই উড়ায় দেয়া যায় না।
যে অংশটা উদ্ধৃত করেছেন, ওই অংশটা সত্যি। হাবিব বা ফুয়াদ অথবা অন্য কে তা বলতে পারছি না এই মুহূর্তে, তবে আমি অনুসন্ধানে আছি, পাওয়া মাত্রই আপলোড করে দিবো। সত্যিই করিমের গান হিব্রু (বা অন্য কোনো ভাষার) ডায়লগের সাথে গোলাগুলি টাইপ মিউজিকের সাথে মিক্সড করা হইছে।
আজীবন অসংখ্যবার করিম তার গানের এইসব যথেচ্ছ ব্যবহারের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছেন। তার অতি নগণ্য অংশই আসলে মিডিয়াতে এসেছে।
'ফাটায় ফেলতেসে' কিনা বলতে পারছি না, তবে হাবিব যে করিম ও বাউলদের গান মিক্সড (কৃষ্ণ এবং মায়া) করেই পরিচিতি পেয়েছে, এটা তো সবাই-ই জানে।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
যূথচারী ও অনিন্দ্য রহমান, আপনারা বিতর্ক আর আলোচনায় অপরের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার পূর্ণ অধিকার রাখেন, কিন্তু তার প্রকাশ যেন তর্ককে তিক্ত বিতণ্ডার দিকে ঠেলে না দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়।
অবশ্যই। বিতর্কে সতর্ক হলাম।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হা হা হা ! লেখাটার চাইতেও মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যগুলোই উপাদেয় বেশি হয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, দেখো, আবেগ যেনো কাজটাকে গিলে না খায়। আবার রবীন্দ্রনাথ বলতেন, আবেগ ছাড়া কাজ হয় না। আর আমি এ দুটোকে মিশিয়ে নিতেই পছন্দ করি। যেকোন কাজের পেছনের কাজটা করে আবেগই। আবেগ না থাকলে যেমন আমরা যন্ত্র হয়ে যাবো, তেমনি কেবল আবেগ প্রকাশ বিষয়টাকে জলো করে ফেলে। তবে সচলে আমরা যারা লিখি তারা মনে গবেষণা সন্দর্ভ রচনা করি না। মোটামুটি আবেগটাকে প্রাধান্য দিয়ে মনের ভাবটুকুই প্রকাশ করি। সেক্ষেত্রে লেখককে ধন্যবাদ তিনি তার আবেগপ্রসূত ভাবটাকে প্রকাশ করেছেন। এর সাথে কেউ একমত হতেও পারে, নাও পারে। একমত না হলে যেমন হামলে পড়ে আক্রমণ করবো তা যেমন ঠিক নয় তেমনি সমালোচনা করলে লেখক নিজেকে আক্রান্ত বোধ করবেন, তাও ঠিক নয়।
কোন লেখায় কোন মন্তব্য না হলে লেখক কি বুঝতে পারেন তার লেখাটা মিথষ্ক্রিয়ায় কতোটা সফল হলো ? ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বলতেন- নোবোডি কিকস এ্যা ডেড ডগ। লেখাটার একটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলেই তো মন্তব্য করা। আর খুব স্বাভাবিকভাবে মন্তব্যকারীর চাইতে লেখকের সহনশীলতাটাই মনে হয় জরুরি বেশি। লেখক এতে মনঃক্ষুণ্ন হলে কেউ কি কোন মন্তব্য বা নিজের মতামতটা প্রকাশ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে ?
একজন লেখক অন্যকোন মিডিয়া বা লেখা নিয়ে সমালোচনামূলক লেখা লিখতে পারবেন, অথচ তিনি নিজে তার লেখার সমালোচনা মানতে পারবেন না, এটা কী করে হয় ! মানতে পারছেন কি পারছেন না তা বুঝা যায় মন্তব্যকারীর শব্দ-চয়নের মধ্য দিয়েই।
যাক্, আমার কথা বুঝাতে পারলাম কি না জানি না। তবে আপনার লেখাটির মূল বক্তব্যের সাথে আমার সহমত রয়েছে। শাহ আবদুল করিমের অবিকৃত সৃষ্টিই আবদুল করিমের পরিচয়। আমরা যদি বিকৃত করতে করতে করতে একসময় মূলটাই না থাকে, তাহলে প্রকৃত আবদুল করিমকেই একদিন আমরা হারিয়ে ফেলবো বলে আমি বিশ্বাস করি। যদিও সময়ের বিবর্তনে অবশ্যম্ভাবি কিছু পরিবর্তন চলতেই থাকে, তবু সচেতন থাকলে মূলটা সহজে হারায় না বা তা সংরক্ষিত থাকে।
মন্তব্য বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, শালীনতাটুকু ঠিক রেখে যার যার মনোভাব নির্দ্বিধায় প্রকাশ করাটাই পারস্পরিক আস্থা ও উৎকর্ষতার জন্য জরুরি। (উৎকৃষ্টতা না বলে উৎকর্ষতা শব্দটা সচেতনভাবেই ব্যবহার করেছি আমি, কেননা আমি এটাকে ভুল মনে করি না।)
ধন্যবাদ সবাইকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা'র বক্তব্যের সাথে পূর্ণ সহমত জানিয়ে গেলাম। আমরা আরো সহনশীল হবো আশা করি।
------------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
মিথষ্ক্রিয়ায় ভাষার ব্যবহারে সংযম এবং অন্যান্য সচলদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখবার অনুরোধ রইলো।
নতুন মন্তব্য করুন