বালিয়া মসজিদ সংরক্ষণ : গুইসাপ

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: সোম, ০২/১১/২০০৯ - ৫:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই ছবিগুলো আজ দুপুরে তোলা, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া মসজিদের সংরক্ষণ কাজ করতে করতে আমরা যেসব প্রাণীকুলের দেখা পেয়েছি, তার মধ্যে উনাদের জ্ঞাতি-স্বজনরাও ছিলেন। আমরা উনাদেরকে নিকটস্থ কবরস্থানে পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা করেছি। এই পুনর্বাসন প্রকল্পের (!) বিরোধিতাকারী কিছু দখলবাজ পুঁজিবাদী অথবা সকল সম্পত্তিতেই সকলের অধিকার আছে এমন কম্যুনিস্ট অথবা তোমাদের সম্পত্তিতে আছে অসহায়দের অধিকার এমন আয়াতের ভুল ব্যাখ্যাকারী মৌলবাদী অথবা জানিনা কোন্ মতবাদে বিশ্বাস এমন- যাই হোক, উনি আমাদের কথা রাখলেন না, উনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। বাংলার ঐতিহ্য যে ভবন সেই ভবন দখল আর বাংলার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কোনো না কোনো অর্থে তো সমান হতেও পারে। বিস্তর অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে আমরা যেসব লুকায়িত হানাদার বাহিনীকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছি, তাদের মধ্যে আজকের উনিও একজন।

উনার গ্রেফতারের কাহিনী সাদ্দামের গ্রেফতারের কাহিনীর মতোই রোমাঞ্চকর। একটি হন্তারক ব্যাঙ পথ হারিয়ে আমাদের ভবন-অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, তার বিশাল বপু নিয়ে সে বেশি লাফাতেও পারছিল না, ইতোমধ্যে যে দু'চারটি ঘাসফড়িং হত্যা করে এসেছে, এটা তার ঠোটে লেগে থাকা ঘাসফড়িংয়ের রক্ত দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু বাবার-ও বাবা আছে, দাদার-ও দাদা। যেই না এই খুনি ব্যাঙ আমাদের ভবনে প্রবেশ করে, তৎক্ষনাৎ প্রায় শূন্যে ঝাপিয়ে পড়ে তাকে দখল করে বক্ষমান গুইসাপ। প্রথম ছবিটিতে গুইসাপের পাশে যে মৃত ব্যাঙটিকে দেখতে পাচ্ছেন, সেটিই ছিল ওই হতভাগা ব্যাঙ। এই অতি লোভাতুর হত্যাকাণ্ডের কারণেই আজ গুইসাপের এই পরিণতি। আমাদের সংরক্ষণ কাজের একজন শ্রমিক ছিল এই হত্যার রাজসাক্ষী। নিধিরাম সর্দার হিসেবে অচিরেই এই শোক সংবাদ আমি পাই এবং ক্যামেরা নামক মারণাস্ত্র ব্যবহার করে তাকে অচিরেই তাকে পিছু হটতে বাধ্য করি এবং কবরস্থানে প্রেরণ করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিজরতকালে তিনি ব্যাঙটি ফেলে যান। এখানে উল্লেখ্য যে, মান দেবো তবু জান দেবো না নীতিতে বিশ্বাসী এই বর্বর গুইসাপটি সদর পথে প্রস্থান না করে ছাদ বেয়ে পেছনের পথে প্রস্থান করে। দ্বিতীয় ছবিতে তার সেই প্রস্থানের চিত্রই প্রস্ফুটিত হয়েছে।
বালিয়া মসজিদে গুইসাপবালিয়া মসজিদে গুইসাপবালিয়া মসজিদে গুইসাপবালিয়া মসজিদে গুইসাপ


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাই, লেখা অংশটুকু ছবিদুটোর আগে দেন, তাহলে প্রথম পাতায় এতটা জায়গা নিবেনা।

যূথচারী এর ছবি

অনেক কিছুই করলাম, কিছু লাভ হলো কিনা, বুঝলাম না।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

হিমু এর ছবি

আরো কিছু টেক্সট যোগ করে দিতে পারেন। মনে হচ্ছে গুঁইসাপের গল্প আরো অনেকটা বাকি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

যূথচারী এর ছবি

আসলে কোনো গল্পই নাই, সাধারণ একটা গুইসাপ আমাদের বিল্ডিংয়ে ছিল, তার দুইটা ছবি। তবে বললেন বলে, একটু মেকআপ লাগিয়ে দিলাম।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

গল্প নাই এইটা ঠিক না। পরিত্যক্ত জাঈঙ্গার যদি গল্প থাকতে পারে সেইখানে তো গুইসাপ একটা উপন্যাস ধারণ করে ....



অজ্ঞাতবাস

সবজান্তা এর ছবি
যুধিষ্ঠির এর ছবি

অত্যন্ত মূল্যবান কথা।

হিমু এর ছবি
প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এইবার জোস হয়েছে। আপনি তো ভাই ভালো রম্য লিখতে পারেন মনে হচ্ছে। লেখেননা কেন?

পোস্টটাকে ফেভারিট করলাম।

যূথচারী এর ছবি

আমি কনজারভেশন করলে এই দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণের কি দেশোদ্ধারকীর্তি সাধন হবে সেটা বড়ো কথা নয়, তবে খুব বেশি লোকের ভাত নষ্ট হবে না, এটা নিশ্চিত। কিন্তু সেটাও বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো- আমি সাহিত্য করলে এদেশের সাহিত্যিক সমাজের কি হবে? আপনি কি এই দেশের সাড়ে সাত কোটি সাহিত্যিকের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব নিবেন? এটাও বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

এনকিদু এর ছবি

গুইসাপ কি প্রায় খাড়া দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ? এরকম আগে দেখি নি তো !


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

যূথচারী এর ছবি

আপনে কথা একটু আস্তে কইয়েন, গুইসাপ শুনলে হাসবো। কারণ এই ঘটনা গুইসাপ সমাজে খুবই দৈনন্দিন ব্যাপার।
প্রায় খাড়া না, পুরা খাড়া, এক্কেবারে ৯০ ডিগ্রি খাড়া। আর এই জিনিস আগে না দেখার তো কারণ নাই; মনে করতে পারছেন না হয়তো।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

যুধিষ্ঠির এর ছবি

শুধু দেশেই না, বিদেশেও এদের জ্ঞাতিভাইরা একই রকম ফিচেল প্রকৃতির, খাড়া গাছ বেয়ে উঠে যেতে সমান পারদর্শী:

Iguana

হিমু এর ছবি

আচ্ছা, এইটা কি গুঁইসাপ না গিরগিটি? গুঁইসাপ তো জানতাম "মনিটর" এর জেনেরিক বাংলা, নাকি? যেটার চামড়া বেশ দামী।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বলা মুশকিল। সাইজ জানা গেলে আন্দাজ করা যেতো। আমরা যাকে গুইসাপ বলি, সেটার ইংরেজী Bengal monitor. এরা সবাই Monitor. কিন্তু গুইসাপের এরকম দেয়াল বাওয়া একটু নতুন লাগছে। কেউ জানলে শেয়ার করেন। ডানপাশের ছবিটা দেখে এটাকে গুইসাপই মনে হচ্ছে অবশ্য।

উইকি বলছে:

Bengal Monitors are usually solitary and usually found on the ground although the young are often seen on trees. Varanus bengalensis nebulosus has a greater propensity for tree climbing.

হিমু এর ছবি

এটা মনে হয় গিরগিটি বা Gecko ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিন্তু গেকো এত বড় হয় কি?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা গিরগিটি বলেই মনে হচ্ছে। ঘাড়, পিঠ, লেজ দেখে অমনটাই মনে হচ্ছে। দেশী গিরিগিটিদের মধ্যে "রক্তচোষা", "ষণ্ডা" গোত্রের সদস্যদের আকার নেহাত ছোট নয়। পুরনো দেয়াল, জংলা জায়গার গাছ এদের প্রিয় স্থান।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উপরে করা আমার মন্তব্যে আমার অবস্থান থেকে একটু সরতে হচ্ছে ডানদিকের ছবি আরো ভালোভাবে দেখার পর থেকে। ছবির একটা ইটের উচ্চতা তিন ইঞ্চি ও দুই ইটের মাঝখানের মর্টারের উচ্চতা এক ইঞ্চি ধরলে ঠোঁট থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২৭ ইঞ্চি (৬৮.৫৮ সেমি)। এদিকে গিরগিটি ২৪ ইঞ্চির বেশি লম্বা হবার কথা না, পক্ষান্তরে গুইসাপ হরহামেশাই ২৭ ইঞ্চির চেয়ে লম্বা হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মজা লাগলো পোস্টটা।

নৈষাদ এর ছবি

যুধিষ্ঠিরের ছবির প্রাণীটি গুইসাপের জ্ঞাতিভাই (Lizard), কিন্তু গুইসাপ না।

দ্বিতীয় ছবিটা দেখে আমার মনে হয়েছিল এটা তক্ষক (এক ধরনের Gecko)। (যূথচারী আপনি আক্রান্ত বোধ করবেন না, আমি আসলে নিজেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি)। প্রকৃতিপ্রেমিকের দেয়া লিংকের বেংগল মনিটরই আসলে গুইসাপ (চামড়া দেখুন)। কিন্তু বাংলা উইকিতে গুইসাপের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা আমার মনে হচ্ছে ইংরেজী উইকির সাথে মিলছে না।

আমার কৈশরের স্মৃতির গুইসাপ বেংগল মনিটরের সাথে মিলছে, কিন্তু দ্বিতীয় ছবির সাথে কেন জানি তেমন মিলছে না।

যূথচারী এর ছবি

উয়ারি-বটেশ্বরের খনন থেকে পাওয়া কার্নেলেনিয়ান পাথরের একটা ছোট ভাস্কর্যের বেলায়-ও এই ঘটনা ঘটেছে (নিচের ছবি দেখুন) ; ওটা নেকড়ে না কুকুর না অন্য কিছু এই নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বহুধাবিভক্ত হয়ে গেলেন। আসলে প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে আরো অনেকের মতো প্রাণীবিজ্ঞানী উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের-ও সার্বক্ষণিক অংশগ্রহণ দরকার।
উয়ারি থেকে প্রাপ্ত নেকড়ে


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

ওডিন এর ছবি

খুবই বিভ্রান্তিকর আলোচনা- আরো বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম এই লাল রঙের নেকড়ে-কুকুর (?নেকুড়) এর ভাস্কর্য দেখে।

তবে সব মিলিয়ে উপভোগ্য পোস্ট।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।