বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরী মহাস্থানগড়। যদিও কার্বন-১৪ তারিখ নির্ণয় পরীক্ষায় উয়ারি-বটেশ্বরের একটি স্তরে মহাস্থানগড়ের চেয়ে ৩০ বছরের পুরনো নিদর্শন পাওয়া গেছে, কিন্তু নগরের ব্যাপ্তী এবং প্রাপ্ত নির্দশনের প্রতুলতার নিরিখে মহাস্থানগড়ই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান। “সংবঙ্গজ”-দের রাজ্য পুণ্ড্রবর্ধনের প্রধান নগরী পুণ্ড্রনগর এখানেই অবস্থিত। মহাস্থানেই পাওয়া গেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো লিখিত নিদর্শন; খ্রীস্টপূর্ব ৩য় শতকে মাগধী-প্রাকৃত লিপিতে লিখিত ওই শিলালপিতে কেন্দ্রীয় শাসক স্থানীয় শাসককে নির্দেশ দিচ্ছেন দুর্যোগকালে যেন সংবঙ্গজ জনসাধারণকে ধান, কাঠ, তেল ও মুদ্রা ধার দেয়া হয় এবং সুদিন এলে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়। শুধু লিপিতেই নয়, বস্তুগত অন্য অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য দিয়েও মহাস্থানগড় (পুণ্ড্রবর্ধন)-এর নগরপরিকল্পনা, শাসনকাঠামো, সমাজপদ্ধতি, শিক্ষাব্যবস্থা, স্থাপত্যজ্ঞান, মোটকথা বাংলার ইতিহাসের এক পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় চিত্রায়ন সম্ভব।
দীর্ঘ সময় ধরে (কমপক্ষে ২ হাজার বছর) এখানে জোরদার শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকায়, এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অনেক ভবন গড়ে উঠেছে, তার কোনোটি প্রাসাদ, কোনোটি প্রশাসনিক ভবন, কোনোটি বিহার, কোনোটি মন্দির। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূপ, ঘাট ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা ‘লালমাই কমপ্লেক্স অব স্ট্রাকচারস’, ‘ষাটগম্বুজ কমপ্লেক্স অব স্ট্রাকচারস’, ‘পুঠিয়া কমপ্লেক্স অব স্ট্রাকচারস’ এবং ‘পানাম কমপ্লেক্স অব স্ট্রাকচারস’-এর মতো মহাস্থানগড়েও একসঙ্গে অনেকগুলো ঐতিহাসিক ভবন ও নিদর্শনের দেখা পাওয়া যাবে। তবে সময়ের বিবেচনায় এগুলোর কোনোটিই মহাস্থানগড়ের সাথে তুলনীয় নয়। সরকার যদি মহাস্থানগড় অঞ্চলটিকে পুরোপুরি অধিগ্রহণের মাধ্যমে দখল করতে পারতো এবং এটিকে যথাযথ খনন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারতো, তবে এই অঞ্চল ভ্রমণের মাধ্যমেই প্রাচীন বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি, পর্যটনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ উপার্জন করাও সম্ভব হতো। কিন্তু ঠিক এই জায়গাটিতেই সরকার ব্যর্থ।
এবং সেই ব্যর্থতার প্রধান কারণ দখল। নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান সংসদে বলেছেন, যেকোনো কিছু দখলের প্রথম কাজ হলো মসজিদ বানানো (২ মার্চ ২০১১ দৈনিক ইত্তেফাক)। মহাস্থানগড়ও তার ব্যতিক্রম নয়। দখলপর্ব এখানেও শুরু হয়েছে মসজিদ দিয়েই। মহাস্থানগড়ের কাছে একটি কোনো এক সুফি সাধকের আস্তানা ছিল সপ্তদশ শতক থেকেই। তবে কবে কখন কিভাবে সেখানে মাজার তৈরি হলো, তা জানা যায় না। সম্প্রতি সেখানে নির্মিত হয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা; হয়েছে মাজারের সম্প্রসারণ, নির্মিত হয়েছে মাজারসংলগ্ন চাতাল, মাজারের প্রবেশদ্বার ইত্যাদি। অবৈধ জমিতে মসজিদ মাদ্রাসা নির্মিত হলেও সেইসব নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বঘোষিত বাংলার গান্ধী সৈয়দ আবুল মকসুদ। পত্রিকান্তরে, তিনি হুমকি দিয়েছেন, মাজারসংলগ্ন মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে “বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় আগুন জ্বলবে”। সবাই জানলেও সৈয়দ সাহেব হয়তো জানেন না, অবৈধভাবে দখল করা জমিতে মসজিদ তৈরি করা হলে সেটিও অবৈধ থাকে এবং সেখানে নামাজ হয় না, মন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তথ্যটি নিজেই সংসদে জানিয়েছেন। মহাস্থানগড় থেকে অবৈধ মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো সরকারের অবিলম্বে অপসারণ করা উচিৎ।
মাজার কোত্থেকে এলো?
যে মাজার ও সংলগ্ন মসজিদ নিয়ে এতো ঝামেলা, মহাস্থানসংলগ্ন ওই মাজারটিকে সুফি সাধক শাহ সুলতান ইব্রাহিম বিন আদম বলখী মাহীসওয়ার-এর মাজার বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, মাছের পিঠে চড়ে বা মাছের আকৃতির নৌকার পিঠে চড়ে তিনি নদী পাড় হয়েছিলেন, তাই তার নাম মাহীসওয়ার।
প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা অধ্যাপক আব্দুল করীম, শাহ সুলতান মাহীসওয়ার সম্পর্কে লিখেছেন,
“The account about the arrival of Shah Sultan and his wars with the kings Balaram and Parasuram have come down only through traditions. He is popularly called Mahisawar (fish rider) perhaps because he came on a fish-shaped boat. Such stories are found in Bengal about some other saints also and traditions of Mahisawar saints are popular in this country. It is difficult to identify Shah Sultan Mahisawar, but people regard him as one of the great saints with spiritual attainments.” (বাংলাপিডিয়া)
শাহ সুলতান মাহীসওয়ার সম্পর্কে প্রচলিত গল্পটি হলো-
“মহাস্থানে পরশুরাম নামে এক নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন। তার শাসনকালে মহাস্থানগড়ের পাশে মথুরা নামক গ্রামে মীর বোরহান নামের এক মুসলমান বাস করতেন। বোরহানের কোন সন্তান না থাকায় তিনি মানত করেন, আল্লাহ যদি তাকে একটি সন্তান দান করেন তাহলে তিনি একটি গরু কোরবানি করবেন। এরপর তার এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বোরহান একটি গরু কোরবানি করেন। একটি চিল এক টুকরা গরুর মাংস নিয়ে পরশুরামের প্রাসাদ চত্বরে ফেলে। রাজা পরশুরাম এতে ক্ষিপ্ত হন এবং বোরহানের দু’হাত কেটে নেওয়া হয় এবং তার শিশুপুত্রকে মা কালীর মন্দিরে নরবলি দেওয়া হয়। মনের দুঃখে বোরহান বিবাগী হয়ে যান, পথিমধ্যে তার সাথে দেখা হয় শাহ সুলতানের; বোরহানের সব কথা শুনে শাহ সুলতান পরশুরামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ১০৪৩ সালে পরশুরামকে পরাজিত ও হত্যা করেন।” (কাজী মেছের আলী : বগুড়ার ইতিকাহিনী, আজিজুল হক : বগুড়া ও মহাস্থানগড়ের ইতিহাস এবং প্রভাষ চন্দ্র সেন : বগুড়ার ইতিহাস)
লক্ষ্য করুন, এই একই গল্প প্রচলিত আছে, সিলেটের হযরত শাহজালাল সম্পর্কে। শুধু তা-ই নয়, শাহ সুলতান-এর বাংলায় আগমন সম্পর্কিত মিথটিও হুবুহু হযরত শাহজালালের অনুরূপ। শাহজালালের মতোই শাহসুলতানের পীরও তাকে এক মুঠ লাল রঙের মাটি দিয়ে আদেশ করেন, যেখানে এই রকম মাটির মিল পাবে, সেখানে ধর্মপ্রচার করবে।
পরশুরামের গল্পটি খ্রিস্টীয় একাদশ শতকের শুরুর দিকের। বাংলায় তখন পাল যুগ চলছে; গৌড়, বরেন্দ্র ও পুণ্ড্র অঞ্চলে দৌর্দণ্ড প্রতাপেই রাজা ন্যায়পালের শাসন চলছিলো (১০৩৮-১০৫৪), তার পরবর্তী শাসক ছিলেন রাজা বিগ্রহপাল (১০৫৪-১০৭০) ও রাম পাল। মহাস্থানগড়ের পাল বিহারগুলো ছাড়াও এই সময়ে বিশ্ববিখ্যাত সোমপুর (পাহাড়পুর) বিহার নির্মিত হয়। এই বিহারকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ ধর্ম ও শাসন তখনো বাংলার ইতিহাসে উজ্জ্বল। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্যও এটি উজ্জ্বলতর সময়। রামপালকে নিয়ে সন্ধ্যাকর নন্দী-র রামচরিত এই সময়ের অন্যতম সাহিত্য নিদর্শন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, চর্যাগীতিকার অধিকাংশ পদ এই সময়েই রচিত হয়। সুতরাং পাল শাসনের সমান্তরালে একই স্থানে একই সময়ে একজন হিন্দু নৃপতির মহাপ্রতাপশালী হয়ে ওঠা সত্যিই কঠিন কল্পনা।
শুধু তাই নয়, দশম-একাদশ শতকে কি বাংলা অঞ্চলে কোনো মুসলমান ছিল যার পক্ষে গরু কোরবানি করা সম্ভব? ১২০৪ সালে বখতিয়ার খলজির নদীয়া আক্রমণ অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী ও সীমিত অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। মহাস্থানগড় কিংবা তিস্তা-করতোয়ার আশেপাশে মুসলিম বিস্তার চতুর্দশ শতকের আগে ছিল না বললেই চলে। সুতরাং বাংলায় মুসলিম বিস্তারের প্রায় চারশো বছর আগে মুসলমানদের জন্য গরু জবাই নিষিদ্ধকরণ আর প্রকাশ্যে গরু জবাই করে সেটিকে ইস্যু করে যুদ্ধবিগ্রহ করা, এই সব কিছুই দশম-একাদশ শতকের বিচারে অসম্ভব মনে হয়।
শাহ সুলতান মাহীসওয়ার-এর সময় নিয়ে অপর একটি ঝামেলা হলো, বলখ্-এ তার শাসনকাল; ৮১২ খ্রীস্টাব্দে তিনি উত্তর আফগানিস্তানের বলখ্ প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন। এর প্রায় আড়াইশ’ বছর পরে ১০৪৩ খ্রীস্টাব্দে বাংলায় এসে কোনো হিন্দু শাসকের সাথে যুদ্ধ করছেন, বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কাজেই শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলে আদৌ কেউ ছিলেন কিনা কিংবা যদি থাকেনও তবে তিনি কি দশম-একাদশ শতকের সুফি নাকি সপ্তদশ শতকের? কেননা, দলিলে দেখা যাচ্ছে, ১৬৮৫ সালে স্থানীয় শাসক মুজাফফর জং একজন সুফির আস্তানার জন্য সেখানে জমি বরাদ্দ করছেন। এই সুফিই যদি শাহ সুলতান মাহীসওয়ার হয়ে থাকেন, তবে তিনি দশম-একাদশ শতকে পরশুরামের সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী নন।
কিন্তু তার মাজারটি কোত্থেকে এলো? কোনো ঐতিহাসিক বিবরণী থেকে মাহীসওয়ারের মাজার বা কবরের বিবরণ পাওয়া যায় না। মাহীসওয়ার যে এখানেই মৃত্যুবরণ করেছেন, তারও কোনো প্রমাণ নেই। শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী বলে একজন সুফি সন্দ্বীপে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। সেই সময় যেহেতু আরব বণিকদের সাথে বাংলাদেশের নৌবাণিজ্য প্রচলিত ছিল, সুতরাং মাহীসওয়ার বা মাছের মতো নৌকার সওয়ারী থাকতে পারে, এবং তাদের কারো নাম শাহ সুলতান হলেও হতে পারে, সুতরাং সন্দ্বীপে তার আগমন অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু বগুড়ার মতো সমুদ্র থেকে বহু দূরবর্তী একটি স্থানে তিনি কি করে আস্তানা গাঁড়েন? মুজাফফর জং যে সুফির আস্তানার জন্য জমি বরাদ্দ করছেন, তিনিই যদি মাহীসওয়ার হন, তবে আফগানিস্তান থেকে মৎস্যনৌকা নিয়ে তার বগুড়া আসা ভৌগোলিক কারণে প্রশ্নাতীত নয়। সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তর হলো- মুজাফফর জং যে সুফির জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন, কালে কালে তার ওপরেই মাহীসওয়ার এবং শাহ সুলতান বলখী পরিচয় আরোপিত হয়েছে।
মহাস্থানগড় : ইতিহাসের গহ্বর থেকে
অষ্টাদশ শতকে ভারতে মুসলিম শাসনের অবসানের পর ইংরেজ শাসনামলে গঠিত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চালায়। মহাস্থানগড় অঞ্চলে যারা প্রথম জরিপ পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, বুখানন, ও’ডনেল, ওয়েস্টম্যাকট, বেভারিজ এবং স্যার আলেক্সান্ডার কানিংহাম। এদের মধ্যে কানিংহামই এখানে ব্যাপক জরিপ চালান এবং ১৮৭৯ সালে প্রথম এই স্থানটিকে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর বলে রিপোর্ট করেন। বলা আবশ্যক, এখন পর্যন্ত পুণ্ড্রবর্ধনের প্রমাণ হিসেবে যেসব নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, তার বেশিরভাগ কানিংহামের আবিষ্কার। কে এন দীক্ষিত ১৯২৮-২৯ সালে প্রথম এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করেন। তার এই খননের পরপরই ১৯৩০ সালে সরকার মহাস্থানগড়কে প্রোটেক্টেড সাইট হিসেবে ঘোষণা করে এবং বগুড়ার জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অধিগ্রহণ করে। শুধু মহাস্থানগড় নয়, বগুড়া জেলা প্রশাসনে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব দলিলাদি নাড়াচাড়া করতে পেরেছি, সেখানে দেখতে পেয়েছি, মহাস্থানগড় ও এর আশেপাশে তো বটেই, পুরো বগুড়া জেলার হাজার হাজার একর জমি সরকারের অধিগ্রহণ করা আছে। তবে এর অধিকাংশই এখন আর বগুড়া জেলা প্রশাসন কিংবা সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দখলে নেই।
কে এন দীক্ষিতের পর পাকিস্তান আমলেও এখানে ব্যাপক খনন কাজ পরিচালনা করা হয়। তবে পাকিস্তান আমলের প্রত্নতত্ত্বের মূল লক্ষ্য অনুসারে এখানেও খননের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- মুসলিম নিদর্শন খুঁজে বের করা। (মনে করুন, পাহাড়পুর থেকেও সুলতানী মুদ্রা আবিষ্কার করে পাহাড়পুরের সাথে মুসলিম সংযোগ আবিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছিলো) তবে সেই লক্ষ্য ততো একটা পূরণ না হওয়ায় খনন পরিত্যক্ত হয়। ১৯৮৮ সালে খনন আবার শুরু হয়, বেসরকারীভাবে সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এখানে খনন করেন ১৯৮৯-৯০ সালে। ১৯৯৩ সালে ফরাসি একটি খনন দল এখানে খননকাজে যুক্ত হয়। ১৯২৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত খননে মহাস্থানগড়ে মৌর্য-পূর্ব, শুঙ্গ, কুষাণ, মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং মুসলিম যুগের নিদর্শন পাওয়া যায়। বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, তবু বলছি, মুসলিম যুগের নিদর্শন বলতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যেটি দেখিয়েছে, তা হলো অষ্টাদশ শতকে নির্মিত ফররুখ শিয়ারের ১৫ গম্বুজ মসজিদ। অষ্টাদশ শতকের নিদর্শন সাধারণত মুসলিম যুগের বলে চিহ্নিত করা হয় না।
মহাস্থানগড়ের মাজারবাণিজ্য এবং বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব
মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪০ বছর পরেও বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব এখনো পাকিস্তান আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার সাধারণ প্রবণতা থেকে খুব একটা আলাদা নয়। জাতীয়তাবাদ আমাদের এখানকার প্রত্নতত্ত্বের এক সাধারণ প্রবণতা এবং পাকিস্তানী মানসে এখানকার প্রত্নতত্ত্ব অনেকাংশে ইসলামী জাতীয়তাবাদে প্রভাবিত। এ কারণেই মুসলিম নিদর্শন বা স্থাপনা অনুসন্ধান, খনন বা সংরক্ষণের জন্য যতো দ্রুত ও যতো বেশি পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, বৌদ্ধ বা হিন্দু স্থাপনা সংরক্ষণে ততো হয় না। মুসলিম স্থাপনার ক্ষেত্রেও আবার রয়েছে বৈষম্য, মাজারের সংরক্ষণ বা উন্নয়নে যতো উদ্যোগ তার ১ শতাংশও করা হয় না মসজিদের জন্য। ইসলামে মাজার পূজা হারাম হলেও বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসন মাজারের জন্যই নিবেদিত। প্রধান দুই নেত্রী নির্বাচনী প্রচারণাই শুরু করেন মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে। জাতিগতভাবে বৃহতের বা মহতের প্রতি নিজেকে নিবেদনের সংস্কৃতি যেমন আছে, তার চেয়েও বড়ো হয়ে আছে বাণিজ্য। মাজারগুলো সত্যিই অসামান্য বাণিজ্যের উৎস। বগুড়ার মাহীসওয়ারের যদিও তেমন কোনো বিশেষ কেরামতির কথা শোনা যায় না, কিন্তু এই মাজারের ব্যবসাও ভালো, তার প্রধান কারণ কাছেই দর্শনীয় প্রত্নস্থান ও জাদুঘরের অবস্থান। জমজমাট এ ব্যবসার কারণেই সবসময় মাজার কমিটির প্রধান থাকেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কোনো নেতা; বর্তমান মহাস্থানগড় মাজার কমিটির চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিনও স্বভাবতই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। এই মাজার কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দালালরা মহাস্থান জাদুঘর ও প্রত্নস্থানে প্রবেশের রাস্তার দুই পাশে অজস্র দোকান করে প্রত্নস্থান ও জাদুঘরগামী মানুষদের এক কথায় জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই একদল দালাল আপনাকে ছেঁকে ধরবে মাজারে আগরবাতি-মোমবাতি ইত্যাদি দেয়ার জন্য।
এই মাজার-ব্যবসায় অর্জিত মুনাফার ভাগ পায় স্থানীয় প্রশাসন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সাংসদ এমনকি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত। এ জন্যেই প্রশাসনের নাকের ডগাতেই চলছে মাজার উন্নয়নের নামে জায়গা দখলের কাজ। শত শত দোকান গড়ে উঠলেও জেলা প্রশাসন গণমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিজস্ব নৈশ প্রহরী এবং মহাস্থানের জন্য পুলিশের বিশেষ প্রহরা থাকার পরেও প্রত্নস্থানে খোড়াখুড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় পুলিশ সুপার বলেন, রাতের অন্ধকারে কাজ হয়েছে, তার করার কিছু ছিল না ইত্যাদি।
গণমাধ্যমের কল্যাণে মহাস্থানগড়ের ঘটনাক্রম আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-র লালসালু’র মতো এখানেও একটি মাজার ও মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, আবুল মকসুদের মতো কতিপয় বুদ্ধিজীবী আবার সেই মাজারের পক্ষেই লড়ছেন, অথচ একই স্থানে থাকা আড়াই হাজার বছরের পুরনো কীর্তি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউই- না প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, না প্রশাসন, না সরকার, না স্থানীয় জনসাধারণ, এমনকি আমাদের বুদ্ধিজীবীরাও না।
মন্তব্য
উয়ারি বটেশ্বরের কার্বন ডেটিঙের রেজাল্ট আরো একটা বিস্তারিত জানার আগ্রহ জাগছে।
বছরের সেরা ডায়লগ হিসেবে এটাকে মনোনয়ন দেয়া যায়।
মকসুদের ঐ লেখাটা কই ছাপা হয়েছিলো জানেন কেউ? মকসুদকে মজলুম বুদ্ধিজীবি হিসেবে দাড় করানোর একটা চেষ্টা হচ্ছে। মকসুদের সব গাধামো ডকুমেন্টেড থাকা দরকার।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সম্ভবত ঐ লেখা যাতে কেউ খোঁজ করে না পায়, সে জন্যেই আলুর আর্কাইভ বুঁজিয়ে রাখা হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে।
কার্বন-১৪ তারিখ নির্ণয় পদ্ধতিতে উয়ারি-বটেশ্বরের সময় পাওয়া গেছে খ্রীস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ; তবে প্রত্নস্থানের সময়কাল নির্ণয়ে একটি একক তারিখকে স্থির ধরে নেওয়া যায় না, ক্যালিব্রেটেড বা সম্ভাব্য আরো কয়েকটি তারিখও সেই সাথে থাকে; উয়ারি-বটেশ্বরের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য তারিখগুলো খ্রীস্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৫০০ অব্দের মধ্যেই রয়েছে।
আবুল মকসুদ আদালতে হলফনামা আকারে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, সংবাদপত্রের খবরে সেই বিবরণ রয়েছে; এখানে দেখুন; শেষ থেকে ৪র্থ প্যারার ২য় লাইনে তিনি আগুন জ্বলার কথা বলেছেন।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
বাংলার গান্ধী মক্সুদ বড়ই আমোদপ্রদ চরিত্র। মাহীসওয়ারের মাজারের পশ্চাত বাঁচাতে তিনি প্রথমে পত্রিকায় মাহীসওয়ারকে গাছে তোলেন, তারপর আদালত পর্যন্ত ধাওয়া করেন বিচারকদের মই কেড়ে নিতে।
মার্চ ০৩, ২০১১ তারিখে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে দেখা যায়,
মক্সুদের লীলা বোঝা বড়ই ভার। ওনার গায়ে গান্ধীর চাদরখানা ঈশপের গল্পের সেই ছাগচর্মাবৃত তরক্ষুটির কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে আদালত তার এই খোদকারিতে নাখোশ হয়েছেন। একই খবরে দেখতে পাই,
মার্চ ০৪, ২০১১ তারিখে আবার কালের কণ্ঠেই দেখতে পাই,
গান্ধী আইনজীবী ছিলেন বলেই মনে হয় আদালতের সামনে এমন রোমাঞ্চাভিলাষে মত্ত হননি। কিন্তু গান্ধীর চাদর গায়ে মক্সুদ কেন হঠাৎ মাজারখাদেমদের রবিন হুড হয়ে গেলেন, সেটা বোঝা দুষ্কর। তবে কাগজে আরো লিখেছে,
আদালত বলেন, 'লেখাপড়া করে আইনজীবী হতে হয়। কয়েক বছর চর্চা করে হাইকোর্টের সনদ নিতে হয়। তারপর বিচারপতি হতে হয়। অথচ উনি কিছু না জেনেই হরিদাস পাল হয়ে গেছেন। কোর্টকে শেখাতে আসেন।'
শেষমেশ মার্চ ০৭, ২০১১ তারিখে কালের কণ্ঠেই জানা গেলো
আদালত মক্সুদকে নির্বোধ এবং হরিদাস পাল বলেছেন। হরিদাসপালিতার ব্যাপারে আমি একমত, কিন্তু মক্সুদ নির্বোধ নয়। তিনি হলফনামা দাখিল না করেই ব্যাপারটা "ম্যানেজ" করার ধান্ধায় ছিলেন। ইতিহাস নিয়ে তিনি বইটই লিখেছেন, জানেন এসব হলফনামা পরে ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
এরপর তিনি বেশ কয়েকদিন একটু ম্রিয়মান ছিলেন। এমনিতে তিনি আলুপেপারে দুইদিন পর পরই লিখে ফাটিয়ে ফেলেন, কিন্তু এভাবে হাটে কলসি ফুটো হয়ে সব পানি বেয়ে পড়ে যাওয়ায় তিনি গান্ধীর চাদরের আড়ালে গা ঢাকা দেন বেশ কয়েকদিন।
মার্চ ১৪, ২০১১ তারিখে প্রথম আলোয় মক্সুদের ভুলুণ্ঠিত গান্ধীর চাদরখানা উত্তরীয়রূপে তার স্কন্ধে পরানোর লক্ষ্যে দুলা মিয়া সওদাগরের আরেক সুপুত্র মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আদালতকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন এ-ই বলে,
জাহাঙ্গীর সাহেব আমাদের এই শিক্ষা দিতে চান যে জ্ঞানপাপীদের কোনোরূপ তিরস্কার করা আদালতের সাজে না, সেসব তিরস্কার কেবল "রাস্তার লোকের" ওপর প্রযোজ্য। এমনই এক দেশে আমরা বাস করছি, যেখানে জ্ঞানীগুণীরা দেশটার বারোটা বাজালেও তাদের সম্মানের বাটখারাটিকে কথায় কথায় আইন ও বিচারের বিপরীতে পাল্লায় চাপিয়ে দেয়া হয়। একটা রাস্তার লোক কি মক্সুদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর? কেবল রাস্তার লোককেই আদালত তিরস্কার করবেন, আর এইসব গান্ধীর ছাল গায়ে গান্ধা বুদ্ধিজীবীদের ছাড় দিয়ে যেতে হবে আদালত ও সমাজকে?
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনানুযায়ী আদালত কর্তৃক নির্বোধ ও হরিদাস পাল আখ্যায়িত মক্সুদ ইতিহাস থেকে প্রায়ই নানারকম বোলচাল ঝেড়ে আঁশটে সব প্রস্তাবনা ঝাড়েন পত্রিকায়। আশা করি তিনি নিজেই ইতিহাস থেকে কিছু শিখবেন। আদালতের তোপে পড়ে কিন্তু উনি মাহীসওয়ারের মাজারে মোমবাতি জ্বালাতে যাননি, প্রথম আলোর আইন-স্টাইন মিজানুর রহমান খানকেই বগলস্থ করে আদালতে ফিরেছিলেন। তাই মাহীসওয়ারের মাজার বিপন্ন হলে অন্তত মক্সুদের ঘরে যে আগুন জ্বলবে না, এ কথা পরিষ্কার।
ইদানিংকালে এটা মনে হয় বাংলাদেশ সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যালাসি। এই একই ফ্যালিসিতে নোবিল বিজয়ী ইউনূসরেও গ্রেস মার্ক দেবার কথা হয়। প্রাজ্ঞ কলামিস্ট, নোবেল বিজয়ী সবাই যেন একটা লোক আইনের উর্ধ্বে!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সুশীল জাহাঙ্গিরের (ইউনূসের ভাই)কাছ থেকে এরকম ফ্যালাসি আসাই স্বাভাবিক ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
গুরুত্বপূর্ণ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
জটিল!
লেখার জন্য ধন্যবাদ। নতুন জিনিস জানলাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
লেখকের মন্তব্যটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ:
কে এন দীক্ষিত ১৯২৮-২৯ সালে প্রথম এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করেন। তার এই খননের পরপরই ১৯৩০ সালে সরকার মহাস্থানগড়কে প্রোটেক্টেড সাইট হিসেবে ঘোষণা করে এবং বগুড়ার জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অধিগ্রহণ করে। শুধু মহাস্থানগড় নয়, বগুড়া জেলা প্রশাসনে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব দলিলাদি নাড়াচাড়া করতে পেরেছি, সেখানে দেখতে পেয়েছি, মহাস্থানগড় ও এর আশেপাশে তো বটেই, পুরো বগুড়া জেলার হাজার হাজার একর জমি সরকারের অধিগ্রহণ করা আছে। তবে এর অধিকাংশই এখন আর বগুড়া জেলা প্রশাসন কিংবা সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দখলে নেই।
স্বাধীনতাপূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশে প্রত্নতাত্বিক স্থান রক্ষার জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রচুর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতার পর ভারতে আরও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অধিগ্রহণ অটুট রাখার জন্য ১৯৫১ সালে The Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains Act প্রণীত হয়, যার ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ সালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী গৃহীত হয়। যার দ্বারা এখনও সে দেশের প্রত্নস্থলগুলি গুরুত্ব বিবেচনায় কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার দ্বারা সংরক্ষিত।
আমার যতদূর জানা আছে পাকিস্থানেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমলে অধিগৃহীত জমির অধিকাংশই আজ বেদখল। এইরকম দুর্ঘটনা ভারতে বা পাকিস্থানে ঘটেনি।বাংলাদেশে এ ঘটনা ঘটতে পেরেছে কারণ এই বিষয়ে কঠোর আইন নেই, নজরদারি করবে যে সংস্থা, Archaeological Survey যা ভারত ও পাকিস্থান উভয় দেশেই আছে, বাংলাদেশে তার ক্ষমতা, লোকবল ও অর্থমঞ্জুরীর দিক নিতান্তই দীন। শিক্ষিত কর্মীর অভাবও যথেষ্ট।
বাংলাদেশে কি পরিমাণ প্রত্নস্থল সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস এবং কি পরিমাণ স্থল বিপদের মুখে তার একটি সমীক্ষা হলে বিপদের গুরুত্ব বোঝা যাবে।
১৯৫১ সালের The Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains Act আসলে ১৯০৪ সালের Ancient Monuments Preservation Act-এর নবায়ন; বাংলাদেশেও সেটি নবায়ন হয়েছে, তবে ভারতের মতো এখানেও ব্রিটিশ আইনটি হুবুহু একই আছে, ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ সালের সংশোধনীগুলো জানা নেই, তবে বাংলাদেশে যে সংশোধনীগুলো হয়েছে, সেগুলো বলার মতো কিছু না, যেমন- "পূর্ব পাকিস্তান" শব্দগুলোর স্থলে "বাংলাদেশ" হইবে- এই ধরনের।
বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ক্ষমতা সীমিত, একথাটি একেবারেই সত্যি নয়। বাংলাদেশের গুটিকতক যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে ইনডেমনিটি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার মধ্যে অন্যতম। তার গৃহীত কোনো পদক্ষেপ নিয়েই আদালতে মামলা বা প্রশ্ন করা যাবে না; সুতরাং এমন অসীম ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতার দিক থেকে দীন বলা চলে না। তবে শিক্ষিত কর্মীর অভাব রয়েছে- এটি সত্যি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে লোকবল ও নিয়োগ নিয়ে আগে কিছু কিছু লিখেছি, মাঠেময়দানে আন্দোলনও করেছি; এখন ব্যাপারটি নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মোটামুটি প্রতিজ্ঞা করেছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে পাস করা কোনো প্রত্নতাত্ত্বিককে তারা নিয়োগ করবে না, কাজেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতেও অনেক সময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কথা উল্লেখ থাকে না। তাদের সমান্তরালে বেসরকারীভাবে আমরা যেসব কাজ করে যাচ্ছি, সময়ের বিবেচনায় অধিদপ্তরের কাজের পরিমাণ ও মানের দিক থেকে সেগুলো অনেক উন্নত।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কোনো উদ্যোগ নিলে ভাল হয়। ইতিহাস সমাজের জিনিস। রাষ্ট্র পাহারাদার।
মোটাদাগে, বুদ্ধিজীবীদের থাইকা কিছু আশা করি না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
খুবই দামী কথা বলেছেন অনিন্দ্য ভাই। ইতিহাস কিন্তু ভোলেনা আমরা তাকে নিয়ে কি খেলা খেলি। কালের বিবর্তনে ঠিকই ইতিহাসের বুক চিরে সত্যিটা বেরিয়ে আসে। সমাজও অনেকটা একই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র এই ইতিহাস ও সমাজ নিয়ে যারা খেল্টু করেন তাদের অবাধ প্রশ্রয় দিয়ে চলে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বভাবতই মধ্যযুগের মুসলিম চরিত্রগুলোকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর একটা প্রবণতা আছে। ইখতিয়ারুদ্দিন খিলজীর জীবন ও যুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে কোন গবেষনা আছে কিনা, জানিনা, কিন্তু তার গল্পটা সবখানে পাওয়া যায়। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ নিয়ে নাকি এই আফগান সেন রাজত্ব জয় করে ফেলেছিল। কেউ কেউ আবার এক কাঠি সরেস হয়ে বলে ফেলে এই ইখতিয়ারুদ্দিনই খিলজী রাজবংশ তথা বাংলায় মুসলিম শাসনের পত্তন করে। একটা দেশ আক্রমন করে গিয়ান্জাম লাগিয়ে দেয়া একজিনিস, আর একেবারে রাজত্ব জয় ফেলা আরেক জিনিস।
মানলাম যে খিলজীর সেন রাজত্বের পশ্চিমাংশ আক্রমনকালে অশীতিপর বৃদ্ধ লক্ষন সেন তার রাজত্বের পূর্বে অবস্থান করছিল। খিলজী আদতে যে ভুখন্ড স্পর্শ করেছিল, সেটা এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত, তার কোন প্রমান নেই। এটাই নিশ্চিত নয় যে সেনরাজ ইখতিয়ারুদ্দিনেরর ভয়ে পালিয়েছিল, নাকি সেন নৃপতির অনুপস্থিতির সুযোগেই ইখতিয়ারুদ্দিন (ডাকাতরা যেমন সচরাচর করে) সেনরাজধানী আক্রমন করেছিল, সেটাও নিশ্চিত নয়।
তবে এটা নিশ্চিত যে ইখতিয়ারুদ্দিন খিলজির আক্রমনের পরেও বেশকিছুদিন লক্ষনসেন রাজত্ব করেছিল, তার মৃত্যুর পরে তার পুত্র বিশ্বরূপসেনে সুদীর্ঘ ১৯ বছর এবং তারও পরে কেশব সেন চার বছর রাজত্ব করেছিল। এরপরেও বাংলায় মুসলিম রাজত্ব স্থাপিত হয়? জ্বী না। এর পরেও অন্তত পূর্ববঙ্গে বিক্রমপুর/মুন্সিগন্জের দেব - দের রাজত্ব ১২৮১ পর্যন্ত বলবত ছিল।
এই যদি হয়, তাহলে বাংলার ইতিহাসে ইখতিয়ারউদ্দিনকে এত উজ্জ্বল নক্ষত্র বানালো কে? কবে থেকে? কেন?
কারা তাকে উজ্জ্বল নক্ষত্র বানিয়েছে তার একটা তালিকা সহজেই পেয়ে যাবেন বখতিয়ার খলজি-র বঙ্গ বিজয়ের ৮০০ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির তালিকা দেখলেই; ১৯৯৩ সালে ১০ বছর ধরে এই উৎসব উদযাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়, তবে সুখের কথা- ইতিহাসবিদদের একাংশের চাপের মুখে অনুষ্ঠানমালা ততো জমজমাট বা ব্যাপক আকারে হয়নি, এই অনুষ্ঠানমালার বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক একেএম শাহনাওয়াজ।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
বখতিয়ারকে প্রথম গাছে তোলেন সম্ভবত মেজর র্যাফার্টি। যূথচারী ভালো জানবেন এ নিয়ে।
বখতিয়ার খলজি সলিড মূর্খ ছিল। বাংলার দিকে অগ্রসর হবার সময় একটি বৌদ্ধবিহারের সকল ভিক্ষুকে হত্যা করে। তার ধারণা ছিল এরা ন্যাড়া বামুন এবং মারাত্মক যোদ্ধা। ঐ তছনছ করা বিহারের নাম থেকেই পরে বিহার প্রদেশের নাম করা হয়।
বখতিয়ারের ধারণা ছিল ভূটানের ওপরে তুরস্কের অন্য প্রান্ত রয়েছে। এই কারণে সে ভূটান ডিঙিয়ে তুরস্কের সেই অংশ জয় করতে যায়। এই অভিযানে ভূটানের রাজা তাকে সলিড ধোলাই দেয়, আর কামরূপের রাজা তার ফিরে আসার রাস্তা থেকে সকল শস্য ও খাবার সরিয়ে নেয়। বখতিয়ারের বাহিনী নিজেদের ঘোড়া মেরে খেতে খেতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। ঐ অভিযানের পর বখতিয়ার অসুস্থ হয়, এবং আলী মর্দান এসে তাকে অসুস্থ অবস্থায় ছুরি মেরে খুন করে।
বখতিয়ার যাদের নায়ক, তাদের বুদ্ধিশুদ্ধিও বখতিয়ারের কাছাকাছিই হবে।
তথ্যবহুল রচনার জন্য কৃতজ্ঞতা।
নিশ্ছিদ্র সততায় এগিয়ে চলুক অতীত অনুসন্ধান।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
খালি মসজিদ বানানো নয়
জায়গার নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস বদলানো আরেকটা ধারা
অনেক জায়গাতেই সত্যনারায়ণকে সত্যপীর বানিয়ে মুসলমান বানিয়ে ফেলা হয়েছে
০২
সাম্প্রতিক কালে একটা মজার তথ্য পেলাম
চট্টগ্রামের একটা জায়গায় আলিকদম
সবই বরে হযরত আলীর পায়ের ছাপ থেকে আলিকদম জায়গাটার নাম হয়েছে
কিন্তু সাম্প্রতিককালে একটা বইয়ে দেখলাম জায়গাটার নাম আলিকাডং
ডং মানে পাহাড় (কোন আদিবাসী ভাষা জানি না)। কেওকারাডং- তেঞ্জিনডং এই ধারাবাহিকতায় আলিকাডং...
এর উচ্চারণ বদলে আলিকদম হতে হতে (কিংবা বদল করতে করতে) এর ইতিহাস্ও বদলে ফেলা হয়েছে
০৩
সুন্দরবন বিষয়ে পড়ছি ইদানীংকালে
ইতিহাস পড়তে গিয়ে দেখি সুন্দরবনের ভেতরেও প্রচুর মুসলমানিত্ব খোঁজা কিংবা আরোপ করা হচ্ছে
পড়েছিলাম শওকত ওসমানের লেখায়, মহাখালীর আগের নাম ছিল মহাকালী। ওখানে কালিমন্দির ছিলো একটা।
আমাদের এলাকার জয়কালীর হাট মুখে মুখে জয় আলির হাট বা 'জোয়ালিরাট'। এছাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বি.বাড়িয়া করা বা রামকৃষ্ণ মিশন রোড আর. কে. মিশন রোড বলা বা লেখা কিন্তু সুশীল সমাজের অবদান। ময়মনসিংহ মোমেনশাহি করাটাও প্রায় তাই।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
সুশীল সমাজ আর যারা নামধাম ইসলামীকরণ করতে চায় - এরা দুইটা পক্ষ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আবুল মকসুদ না কদিন আগে যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার নিয়ে কন্নাকাটি করেছিলেন?
ইনি যে বখতিয়ার খিলজির উত্তরসুরি হবেন তাতে আশ্চর্য কী?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
প্রাচীন বাংলার উপর অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনাকে এবং মন্তব্যে আলোচনাকারীদের ধন্যবাদ।
দারুণ পোস্ট...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন