দেখা হবে। পর্ব-২।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: শনি, ২২/০৩/২০০৮ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

প্রথমে যখন সে এ বাড়ীতে আসে তখন সে পারতপক্ষে কথা বলতোই না। তার পেট থেকে একটা কথা বের করতে অন্ততঃ দশ বার প্রশ্ন্ করতে হোত। গায়ের রং ঘোর কালো, ছোটখাট কিন্তু মোটাসোটা গড়ন। এক গরমের দুপুরে মুশতাকের এক দূর সম্পর্কের খালু বরকত উল্লাহ্‌ গ্রাম থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। গ্রামে অভাবে আছে, এখানে সংসারের টুকটাক কাজে সাহায্য করতে পারবে।

মুশতাক প্রথমে একটু দুশ্চিন্তায় ছিল। চোর-টোর নাতো?
বরকত উল্লাহ্‌ সাহেবের নাকে নস্যি নেবার স্বভাব আছে। তিনি মুশতাকের প্রশ্ন শুনে এতই অবাক হয়ে গেলেন, যে দু আঙ্গুলের ডগায় এক টিপ নস্যি নিয়েও সেটাকে নাকের গর্তে ঢুকাতে ভুলে গেলেন। দু মিনিট ধরে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলেন মুশতাকের দিকে। তারপর অভ্যাসবশতঃ রুমালে নাক মুছতে গিয়ে বুঝতে পারলেন যে নস্যি হাতেই আছে, নাকে যায়নি।
"তুমি হঠাত্ এই সন্দেহ করলে কেন বাবা? একজন লোক গরীব হলেই যে সে চোর হবে তার তো কোন কথা নেই। আর তাছাড়া এ তো একটা বাচ্চা ছেলে, নাক টিপলে দুধ বেরোয়, নিজের নামই ঠিক মত বলতে পারেনা। এ চুরি করা শিখবে কোথা থেকে? আর জেনেশুনে আমি তোমার বাসায় একটা দাগী জেলখাটা চোরকে নিয়ে আসবো এটাই বা তুমি কিভাবে ভাবতে পারলে?"

মুশতাকের তখন মনে পড়ে যে মায়ের কাছে সে শুনেছে যে বরকত উল্লাহ্‌ সাহেব গ্রামের একজন দক্ষ সালিশবাজ। তার সাথে তর্ক করে জেতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। উনি কথা বলা শুরুই করেন কিস্তির চাল দিয়ে। তাড়াতাড়ি সে স্ট্র্যাটেজী বদলায়।
"ওসব কথা বাদ দেন খালু। ঢাকা শহরে থাকতে থাকতে আমাদের মনটাই কেমন যেন সন্দেহবাতিক হয়ে গেছে। অচেনা কাউকে দেখলেই মনটা কু-ডাক দেয়।"
"একেবারে খাঁটি কথা বলেছ বাবা। এই কারণেই তো ঢাকায় থাকলাম না। তোমার খালা যদিও অনেক চেষ্টা করেছিল । কিন্তু আমার ওই একটা ব্যপারে ঘাড়টা একটু তেড়া আছে। আমাকে বললে আমি তোমার জুতা পর্যন্ত পালিশ করে দেব, কিন্তু ঢাকায় থাকতে পারবোনা। আমাদের গ্রামে কি নাই বলো? শুধু ইলেক্ট্রিসিটিটা ছাড়া আর সবকিছুই আছে, তাও এবার শুনলাম সামনের বছরে নাকি সেটাও এসে যাবে। সময় পেলে বৌমাকে নিয়ে একবার বেড়াতে এসো, তোমাদের ঘুরিয়ে দেখাব সব। এমন আলো বাতাস যে এখনো এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় তা না দেখলে তুমি বিশ্বাস করবেনা। একবার নিঃশ্বাস নিলে কলজেটা ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
আলোচনা আবারো বেগতিক দিকে চলে যাচ্ছে। মুশতাক মনে মনে আশংকিত হয়। আর দু এক মিনিট এই হারে চললে খালু এখনি রিকশা ডেকে তাদেরকে নিয়ে গ্রামে রওনা দেবেন। আবারো ছেলেটার প্রসংগে ফিরে আসে সে।
"এর নাম কি খালু?"
"এদের আবার নাম কি? গ্রামের ছেলে, অভাবের সংসার। একবেলা খাওয়া হলো, তো আর এক বেলা খাওয়া নাই। জামা গায়ে আছে তো, পরনে লুঙ্গিটা নাই। এদের অত নামের বাহার নাই। আমরা বলটু বলে ডাকতাম, তোমাদের পছন্দ না হলে পালটায়ে দিও। ঢাকা শহরে তো শুনি এখন সব চাকর-বাকরের নামই আজকাল আবদুল হয়ে গেছে। "
"কাজকর্ম কি কি পারে?"
"কাজকর্ম কি পারে? কিছুই পারেনা। তোমরা শিখায়ে পড়ায়ে নিও। বললাম না গ্রামের ছেলে, মাথার মধ্যে এক হাজার রকমের বদবুদ্ধি। এর উপর কড়া নজর রাখবা সব সময়। স্বভাব খারাপ হইতে বেশীক্ষন লাগেনা। পরে আবার আমার বদনাম হবে। এই তুমিই বলবা, খালু দেয়ার সময় বলে গেল সাধুপুরুষ যুধিষ্ঠির, আসলে তো দেখি আলীবাবা ও চল্লিশ চোর।"

ছেলেটি ঘরের কোনায় চুপ করে বসেছিল। খালু হাত তুলে তাকে ডাকলেন কাছে। তারপর মাথায় হাত রেখে বললেন, "এনাকে সালাম কর্‌। ইনি যা বলেন শুনবি, যা করতে বলেন করবি। বেয়াদবি করবিনা। তেড়িবেড়ি করলে কিন্তু খবর আছে।"
ছেলেটি মুশতাকের পা লক্ষ্য করে ঝাঁপ দেয় সালাম করার জন্য। মুশতাক শশব্যস্তে পা সরিয়ে নেয়।
"আহা- থাক্‌, সালাম করা লাগবে না। তোমার কিছু লাগলে বা অসুবিধা হলে আমাকে বলো। তা খালু - একে পয়সা-পাতি কি রকম দিতে হবে?"
এই প্রশ্নে বরকত উল্লাহ সাহেব রীতিমত আঁতকে ওঠেন। যেন তার গায়ে কেউটে সাপ তুলে দিয়েছে কেউ। মাথাটা মুশতাকের একদম কানের পাশে নিয়ে তিনি প্রায় ফিস ফিস করে বললেন, "কাজটা ঠিক করলেনা বাবাজী। টাকা পয়সার আলাপ এদের সামনে করাটা একদম বারন। তোমাকে বললাম না গ্রামের ছেলে, অভাবের সংসার। আজেবাজে লোকের সাথে মেশামেশি আছে কিনা কে জানে। পয়সার কথা শুনলে এদের কানটা ঘুমের মধ্যেও খরগোশের মতো খাড়া হয়ে ওঠে।"
মুশতাকের একবার বলতে ইচ্ছে করলো, এইনা আপনি একটু আগে বললেন যে এই ছেলের স্বভাব ফেরেশতার মতোন। এখন আবার উলটো কথা বলছেন কেন? কিন্তু সে অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে এই কথা শুনলেই খালু আবার দশ কাহন গল্প ফেঁদে বসবেন। তার চেয়ে চুপ করে থাকাই ভাল।
বরকত উল্লাহ সাহেব আবার ফিস ফিস করে বললেন,"সর্বক্ষন চোখে চোখে রাখবে একে। আর যেখানে সেখানে টাকা-পয়সা বা পয়নাগাঁটি ফেলে রাখবে না। বৌমাকেও ভাল করে বুঝিয়ে বলবে। খামাখা ভয় পাওয়ার কোন দরকার নাই, তবে কিনা আবার সাবধানেরও মার নাই। ভাল কথা, বৌমাকে দেখছি না যে। ঘুমাচ্ছে নাকি? অবেলার ঘুম কিন্তু ভাল জিনিস না। আল্লাহপাক রাতকে সৃষ্টিই করেছেন তো বিশ্রামের জন্য আর দিনকে বানিয়েছেন কাজ করার জন্য। যে সময়ের যে জিনিস সেটা সেই সময়েই করা উচিত। তা বৌমাকে একটু ডাকতো, দেখাটা করেই যাই। আমাকে আবার চারটের বাস ধরতে হবে।"
মুশতাক মনে মনে খুশী হলো। তার মানে খালুর অত্যাচার আর বেশীক্ষন সহ্য করতে হবে না। আরও খুশী হলো যে তুলি বাসায় নেই। সে থাকলে খালু একটু বেশী আহ্‌লাদী সুরে কথা বলা শুরু করেন, আর তুলিও একের পর এক প্রশ্ন করে চলে। দুজনের ভ্যাজর ভ্যাজর শুনতে শুনতে মুশতাকের মাথা ধরে যায়।
মুশতাক মুখে ছদ্ম বিমর্ষতা এনে বললো, "খালু, তুলি তো বাসায় নেই। সে আজকে একটা জন্মদিনের পার্টিতে গেছে। বিকেলের দিকে ফিরবে। আপনি তাহলে বসুন নাহয় একটু। খাবেন কিছু? ভাত আছে, দেবো?"
বরকত উল্লাহ সাহেব ভয়ানক মুষড়ে পড়েন এই দুঃসংবাদে। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলেন, " তাহলে আমি আজকে যাই। পরে আর একদিন এসে নাহয় বৌমার সাথে দেখা করে যাবো।"
যাবার আগে তিনি ছেলেটাকে কাছে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন বলেন আস্তে আস্তে। ছেলেটা মাথা নাড়ে সে কথায়।

খালু চলে যাবার পর মুশতাক ছেলেটাকে বলে, " তোর কি খিদে পেয়েছে?"
ছেলেটা মাথা নাড়ে।
"মন খারাপ লাগছে বাড়ীর জন্য? বাড়ীতে কে কে আছে তোর? কয় ভাই বোন তোরা?"
ছেলেটা মাথা নীচু করে থাকে। মুশতাকের মনটা খারাপ হয়ে যায়। এইটুকু ছেলে পয়সার জন্য কাজ করতে এসেছে। অবস্থা ভাল হলে তার এখন স্কুলে থাকার কথা। জীবন কেন এতো নিষ্ঠুর হয়?
"বলটু, বেশী মন খারাপ করিস না। আমাদের বাসায় তোকে বেশী কাজকাম করতে হবেনা। শুধু টুকটাক দু একটা জিনিষ এগিয়ে দিবি। আমি তোকে কয়েকটা বই কিনে দেব। রাতের বেলায় আমার কাছে পড়বি। পড়বি তো?"
ছেলেটা এইবার মুখ তোলে। তার দু'চোখে পানি। ভেজা গলায় সে বলে, "আমার মায় বইলা দিছে, আমার নাম গনি মিয়া। আর মক্তবের ওস্তাদজী আমারে ডাকতো আবদুল গনি।"
মুশতাকের হাসি পেয়েছিল সে কথা শুনে। সে বলেছিল, " কিন্তু খালু যে বললেন তোর নাম বলটু।"
গনি মিয়া তখন গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল," উনি আমার নাম ভুইলা গেছেন, তাই ফট্‌ কইরা আমারে বলটু নামটা দিয়া ফালাইলেন। আমার নাম বলটু না, আর বলটু নামটা আমার ভালোও লাগে নাই। আমার নাম গনি মিয়া, আপনি আমারে গনি বইলা ডাকতে পারেন।"
" তা তুই তাহলে ওনার সামনে বললি না কেন যে তোর নাম বলটু না, তোর নাম গনি মিয়া।"
"এই কথা বলার সমস্যা আছে। উনি তাইলে আরো দশটা কথা শুনাইয়া দিতেন। খামাখা বেশী কথা শুনার দরকার কি? আপনার এখানে থাকুম, আপনে নাম জানলেই হইলো।"
গনি মিয়াও তাহলে খালুর বক্তৃতা পছন্দ করেনা দেখা যাচ্ছে। এই ব্যপারে মুশতাকের সাথে তার মিল আছে। গনি মিয়ার সাহচর্য্য বেশ মজাদার হবে বোঝা যাচ্ছে।

এসব তিন মাস আগের ঘটনা। মুশতাক ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। মানুষ চেনাটা বড়ই কঠিন ব্যপার।

গনি মিয়া তখন ছিল গুটিপোকা। চুপচাপ, নির্বিকার এবং হার্মলেস। এখন তার অন্য রকম চেহারা। এই ক'দিনে তার স্বভাবে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। অবশ্য তার জন্যে নিরানব্বই ভাগ দায়ী হচ্ছে তুলি। তার আশকারা পেয়ে পেয়ে গনি মিয়া আগেকার সরল সোজা চেহারার খোলস ছেড়ে এখন বহুবর্ণা প্রজাপতি। তার গায়ে এখন রংবেরঙ্গের জামা। চুলে তেল দেয়ার গ্রাম্য অভ্যাস সে ত্যাগ করেছে বহু আগে। রুক্ষ চুলের পরিচর্যায় মাঝে মাঝে সে এখন শ্যাম্পুও লাগায়।

প্রথম দিন বাসায় ফিরে গনি মিয়াকে দেখেই তুলি থমকে গিয়েছিল। জিজ্ঞেস করেছিল, "ছেলেটা কে?"
"এ হচ্ছে গনি মিয়া। তোমার পেয়ারের বরকত খালু দুপুরে এসে দিয়ে গেলেন। সংসারের কাজে টুকটাক সাহায্য করবে তোমাকে। তুমি কি তাকে কাজের লোকের কথা বলেছিলে নাকি? আমিতো অবাকই হয়েছি একটু। তোমার লোক লাগবে জানলে আমি অফিসের দারোয়ানকে বলে দেখতাম। "
তুলি মুশতাকের কথা শুনছিলো না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল গনি মিয়ার দিকে।
"কি তুমি কথা বলছোনা কেন?"
তুলির চমক ভাঙে। "কেন, কি বলছিলে তুমি?"
"বলছিলাম খালুকে কি তুমি কাজের লোকের কথা বলেছিলে? বলা নেই কওয়া নেই, কোত্থেকে হুট করে একজনকে এনে হাজির করলো।"
"আমি অমন করে তেমন কিছু বলিনি খালুকে। তুমি কি কিছু খেতে দিয়েছো ছেলেটাকে?"
"আমি জিজ্ঞেস করেছি দু'বার। খেতে চায়নি।"
তুলি একটু বিরক্ত হয়েছিল। "তোমার কথার কোন মাথা মুন্ডু নেই। খাবার কথা কি জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি? ফ্রিজ থেকে বের করে দিলেই খেতো। নিশ্চয়ই অনেকক্ষন কিছু খায়নি। বেচারার মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। তোমার দয়ার উপর ভরসা করে থাকলে কেয়ামতের আগে এর কপালে ভাত জুটবে না। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা, আমিই ওকে খাবার দিচ্ছি।"
মুশতাক একটু অবাক হয়ে গিয়েছিল তুলির চড়া গলার স্বরে। তুলি খুবই নরম এবং লাজুক স্বভাবের মেয়ে। তার গলার আওয়াজ মন্দিরাধ্বনির মতো সুমধুর এবং সংগীতময়। তাদের বিয়ের তিন বছরের মধ্যে তুলি বোধহয় তিন দিনও ঝগড়া করেনি।
গনি মিয়ার হাত ধরে তুলি সোজা রান্নাঘরে চলে গিয়েছিল হতভম্ব মূশতাকের সামনে দিয়ে।
রাতে শোবার আগে বেডরুমে এসে তুলি ঘোষনা দিল, " দু'টো কথা আছে। গনি মিয়াকে দিয়ে ঘরের কোন কাজকাম হবেনা। তুমি তোমার অফিসের দরোয়ানের সাথে কালকে কথা বোল। পারলে সে যেন একটা কাজের লোক দেয়।"
মূশতাক শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল। তুলির কথায় সে বই নামায়।
"ঠিক আছে। আমি কালকেই মনসুরের সাথে কথা বলবো। অবশ্য সে যে কবে লোক দিতে পারবে তা জানিনা। কাজের লোকের দরকার কথাটা আমাকে আগে বলোনি কেন?"
"যখন পারবে, তখন লোক দিলেই হবে। আমার অত তাড়াহুড়া নাই।" আয়নার সামনে বসে তুলি গম্ভীর মুখে লোশন লাগায় মুখে। মুশতাকও চুপ করে বসে থাকে। ঘরের ভিতরে হঠাত্ করেই কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে।
"এখন তো তাহলে আমাকে আবার গ্রামে গিয়ে গনি মিয়াকে রেখে আসতে হবে। খালু কবে আবার আসবে সে ভরসায় থেকে তো আর লাভ নেই।"
তুলি সে কথার কোন উত্তর দিলনা।
"দ্বিতীয় কথাটা কি সেটাতো বললেনা তুলি।"
"গনি মিয়া আমাদের এখানে থাকবে। আমি ওকে গ্রামে ফেরত পাঠাবো না।"
মুশতাক সোজা হয়ে উঠে বসেছিল বিছানায়। তুলির ঘাড়ে কি আজ কোন ভূত-টূত ভর করলো নাকি?
"এখানে থাকবে মানে? ওকে দিয়ে তোমার ঘরের কাজ যদি না চলে, তাহলে ও এখানে থেকে কি করবে?"
"অন্য বাচ্চারা যা করে তাই করবে। খাবে, ঘুমাবে, খেলবে, পড়াশুনা করবে। গনি মিয়াকে আমি মানুষ করবো।"
"বাচ্চা মানুষ করার সখ হলে পরের বাচ্চা মানুষ করবে কেন ? নিজের ঘরে যেন বাচ্চা আসে সেই বন্দোবস্ত করতে হয় তাহলে।" মুশতাক অল্প হেসে বলে।
তুলি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। " আমি জানি তোমার নিশ্চয়ই খুব অবাক লাগছে আমার কথা শুনে। হঠাত্ করে আমি অজানা-অচেনা একটা ছেলের জন্য কেন এত পাগল হচ্ছি? আমি নিজেও জানিনা কেন আমার এমন লাগছে। আজকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে পর্যন্ত তো ভালই ছিলাম। শ্রাবনীর জন্মদিনে আমরা কয় বান্ধবী মিলে কি দারুন আড্ডা মারলাম। বাসায় ফিরে গনি মিয়াকে প্রথম দেখেই বুকের ভিতর কেমন যেন লাগলো। আমি তোমাকে ভাল বোঝাতে পারবো না। এরকম আমার আগে কখনো লাগেনি। মনে হচ্ছিল আমি যে জাতিস্মর কেউ, দ্বিতীয় বার জন্মেছি এই পৃথিবীতে। গত জন্মে আমি যেন চিনতাম গনি মিয়াকে, সে যেন আমার খুব কাছের কেউ ছিল। পরিচিত, অথচ কোথায় কিভাবে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সেটা মনে পড়ছে না।"

মুশতাকের গা ছমছম করে ওঠে। তুলির গলার স্বরটিও অপরিচিত মনে হচ্ছে। মধ্যরাতে সুনসান নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু সিলিং ফ্যান মৃদু শব্দে ঘুরছে। হাওয়ায় তুলির রুক্ষ এলো চুল উড়ে এসে ঢেকে দিয়েছে মুখের একপাশ। তুলির চোখ নামানো, তাই তার মুখের অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছেনা। এতদিন একসাথে থাকার পরও তুলির এই চেহারা কোনদিন মুশতাক দেখেনি।

"তোমার কি অন্য কোন কারণে মন খারাপ হয়েছে ? তুমিতো সাধারণতঃ এমন কথা বলোনা। হঠাত্ এরকম কথা মনে হচ্ছে কেন?"
তুলি ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে দাঁড়ায়। অল্প দু এক পা হাঁটে ঘরের মধ্যে। তারপর মুশতাকের মুখোমুখি হয়ে বসে বিছানার উপরে। মুশতাক খেয়াল করলো তুলির দু চোখ ভেজা। তার বুকের ভিতরে তোড়পাড় করে ওঠে।
"তোমার কি কষ্ট হচ্ছে তুলি? প্লিজ- আমাকে বলো।" মুশতাক হাত দিয়ে তুলির চোখ মুছে দেয়।
"আমি নিজেই জানিনা তো তোমাকে কি বলবো। হাজার চিন্তা করেও আমি কুল পাচ্ছিনা। আমার বারবার মনে হচ্ছে যে আজকে আমাদের বাসায় যে খালু ছেলেটিকে নিয়ে এলেন তা যেন পূর্ব নির্ধারিত ছিল। ছেলেটার এখানে আসাটাই যেন নিয়তি এবং তাকে মানুষ করাটাও যেন আমার কর্তব্য। গোটা ব্যাপারটাই অদৃশ্য কারো হাতের ইশারায় ঘটছে। গনি মিয়া যে এখানে আসবে এবং আমি যে তাকে দেখে এমন পাগলামী করবো সবই যেন আগে থেকে ঠিক করা ছিল। তুমি বিশ্বাস করো, আমি বহুবার চেষ্টা করেছি এর কারণ খুঁজে বের করার। চিন্তা করতে করতে আমার মাথাটা যেন আরো বেশী খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে যে আমি যদি গনি মিয়াকে আশ্রয় না দেই, তাহলে আমাদের খুব একটা বড় সর্বনাশ হবে।"
তুলি ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললো। মুশতাক গভীর স্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার নিজেরও চোখ ভিজে আসে।
"তুমি এত অস্থির হয়োনা তুলি। তোমার যদি ইচ্ছে হয় তো গনি মিয়া থাকবে এখানে। ওতো থাকতেই এসেছে। আমি পরে গ্রামে গিয়ে ওর বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করে বুঝিয়ে বলবো ব্যপারটা। তারা নিশ্চয়ই আপত্তি করবেনা।"

পরদিনই স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল গনি মিয়া। তার জন্যে এল নতুন বই খাতা, পেনসিল-কলম, স্কুলের ইউনিফর্ম। তুলি প্রতিদিন বিকেলে কাজ থেকে ফিরে মহা উত্সাহে তাকে পড়াতে বসে।
মুশতাক একদিন বলেছিল,"সারাদিন স্কুলে বাচ্চা পড়িয়ে তোমার একে পড়ানোর মতো ধৈর্য্য থাকে?"
তুলি ভ্রু কুঁচকে উত্তর দিয়েছিল,"স্কুলের বাচ্চা আর বাসার বাচ্চা কি এক হোল? ওদেরকে তো পড়াই পয়সার জন্য, আর গনি মিয়াকে পড়াই নিজের জন্য।"
মুশতাক সে কথার জবাব দেয়নি। আলোচনাটা তাহলে প্রীতিকর হবেনা। সে চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছিল।

একমাস পর বরকত উল্লাহ সাহেব বেড়াতে এসে রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
"সুবহানাল্লাহ্‌। এতো দেখি সপ্ত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য্য। আমাদের বলটু মিয়ার একি অবস্থা!"
গনি মিয়া আগের মতোই মাথা নীচু করে বসে ছিল।
"খালু, ওর নাম কিন্তু আবদুল গনি।" মুশতাক আমতা আমতা করে বললো।
"মাশাল্লাহ্‌, বাপ মায়ের দেওয়া নামটাও বদলায় ফেলছে।"
বরকত উল্লাহ সাহেব আরো অবাক হয়ে যান। "তুমিতো আমাকে ভয়ানক সমস্যায় ফেললে বাবাজী। গ্রামের ছেলে সাহেব হয়ে গেল, এরতো গ্রামে আর মন টিকবে না। এর বাপ-মাকে আমি কি জবাব দেব ফিরে গিয়ে?"
তুলি চা নাস্তা এগিয়ে দিচ্ছিল। সে এবার কথা বললো।
"খালু, আপনার সাথে আমাদের গনির ব্যাপারেই কিছু পরামর্শ আছে। আমরা ওকে লেখাপড়া শিখাতে চাই, আমরা চাই ও যেন মানুষ হোক। এইটুকু বাচ্চা ছেলে, অভাবে পড়ে কাজ করতে এসেছিল। নাহলে তো তার এখন আর দশটা বাচ্চার মতো স্কুলে যাওয়ারই কথা। আমরা চাই ও এখানে থেকে পড়াশুনা করুক। দেখা যাক ভবিষ্যতে কিছু করতে পারে কিনা। এখন আপনি কি বলেন?"
বরকত উল্লাহ মাথা চুলকান কিছুক্ষন। তারপর একটিপ নস্যি নিয়ে ফুলকাটা রুমালে নাক মোছেন।
"আমার উপদেশ কি তোমাদের পছন্দ হবে বৌমা?"
"আপনি মুরুব্বী মানুষ খালু। আপনার মতামতের দাম তো আছেই আমাদের কাছে।"
"একভাবে দেখলে এটা তো খুবই সওয়াবের কাজ। একটা গরীবের ছেলে যদি তোমাদের আশ্রয়ে থেকে মানুষ হয়, তাতে তো আল্লাহপাকও খুশী হন। কিন্তু বৌমা, আজকাল দুনিয়ার কাজ কারবার আলাদা, মানুষের ভাল কাজও লোকে বাঁকা চোখে দেখে। এরা গ্রামের লোক, অভাবের সংসার থেকে এসেছে। অভাবে স্বভাব নষ্ট। এদেরকে খেতে দিলে শুতে চায়, শুতে দিলে ঘরের দখল চায়। তুমি শহরের মেয়ে বৌমা, গ্রামের লোককে তুমি চেননা। গ্রামের লোকের পেটে হাজার রকমের প্যাঁচ। তুমি কি তা সামলাতে পারবে মা?"
"এখানে প্যাঁচের কি আছে খালু? একটা দুঃস্থ ছেলেকে মানুষ করছি, এর মধ্যে প্যাঁচের তো কিছু আমি দেখিনা।"
বরকত উল্লাহ সাহেব ম্লান হাসেন। "সেইটাই তো সমস্যা রে মা। তোমার চোখে সবই সাদা। তোমার মতো মেয়ে কুচকুচে কাল জিনিসকেও ধবধবে সাদা দেখবে। কিন্তু সবাই তো আর তোমার মতো না। যেমন ধরো, দু' মাস পরে যদি গনির বাপ তার আরো দুই ছেলেকে নিয়ে এসে বলে যে তাদেরকেও তোমার এখানে রাখতে হবে, তখন তুমি কি করবে? এরা যে খারাপ লোক তা বলিনা, তবে যে বললাম, অভাবে স্বভাব নষ্ট। যখনই এর টের পাবে যে গনির প্রতি তোমার একটা মমতা জন্মেছে, তখনি তারা তোমার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানান অছিলায় পয়সা হাতানোর ধান্দা করবে। বর্তমান সময়টা হচ্ছে মা কেয়ামতের জমানা। হিন্দুরা বলে কলিকাল। এই সময়ে ভাল কাজের কোন দাম নাই, আর অসত্ জিনিষের জয়জয়কার।"
তুলি চুপ করে বসে কথাগুলো শুনছিল। সে এবার চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। "চা খান খালু, আপনার জন্য গুড় দিয়ে বানিয়েছি।"
বরকত উল্লাহ সাহেব এবার খুশী হন। চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দেন শব্দ করে। তার মুখে একটি পরম তৃপ্তির আভা জ্বলজ্বল করতে থাকে। "তোমাকে আমি বড়ই কষ্ট দেই বৌমা। তোমার হাতের চা পেলেই আমি খুশী, কষ্ট করে গুড় দিয়ে চা বানানোর কোন দরকার নেই।"
"এটা কোন কষ্ট না খালু। আপনার জন্য আমি সব সময় ফ্রিজে গুড় রেখে দেই, এতে নতুন গুড়ের গন্ধটা নষ্ট হয়না।"
"তোমার মাথা খুব পরিষ্কার, বৌমা। আমি একটু অবাক হচ্ছি যে তুমি হঠাত্ করে গনি মিয়াকে দেখে এতো উতলা হলে। এখানে ওকে রাখার চেয়ে বরং মাসে মাসে কিছু পয়সা দিয়ে দিও আমাকে। আমি কথা দিচ্ছি যে এই পয়সাটা দিয়ে গ্রামে ওর পড়াশুনার বন্দোবস্ত করব।"
"আপনাকে গুড় দিয়ে চা খাওয়ানোর পিছনে একটা কারণ আছে। আপনি গ্রামের প্রভাবশালী লোক, আপনার কথায় লোকে ওঠে বসে। আপনি ফিরে গিয়ে গনি মিয়ার বাবা মাকে এমন ভাবে সব কিছু বূঝিয়ে বলবেন যেন কোন রকম ঝামেলা না হয়। তারা যেন হুট করে আমাদের বাসায় না চলে আসে। আপনার ঘাড়ে এই ঝামেলাটা চাপাতে আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে, কিন্তু আপনি ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই। গ্রামে গিয়ে গনির পড়াশুনা হবেনা, খামাখা পয়সা নষ্ট। আমি আপনাকে বলছি, দু বছরের মধ্যে আমি গনির চেহারা পালটে দেব। দেখবেন সে একদিন খুব বড় কিছু একটা করবে। কিন্তু তার জন্য আপনার সাহায্য প্রয়োজন। আমাকে আপনি আরো দশটা উপদেশ দেন, কিন্তু আপনি এ ব্যাপারে না বলতে পারবেন না।"
মুশতাক দুজনের কথা শুনছিল। সে অবাক হয়ে দেখলো, তুলির কথায় বরকত উল্লাহ সাহেব রাগলেন না। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। একটু হেসে বললেন,"বুঝতে পেরেছি বৌমা, তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছো। আমাদের গনি মিয়ার কপাল ভাল, সে তোমার নেক নজরে পড়েছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন তোমাকে যেন সাহায্য করেন। আমার যা করার আমি করবো। তবে মা, মনে রেখো গনি মিয়া পরের ছেলে, তাকে খুব বেশী নিজের করে নিওনা। যেহেতু তাকে আমি এ বাড়ীতে নিয়ে এসেছি, তুমি কোন কারণে মনে কষ্ট পেলে আমার নিজেরও অনুশোচনা হবে।"

গনির কারণে সংসারের রুটিনে কিঞ্চিত্ পরিবর্তন হয়েছে। আগে প্রতি সকালে একসাথে বেরোত দুজনে, তুলিকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে যেত মুশতাক। এখন মুশতাককে দুবার বেরোতে হয়, প্রথমে গনিকে পাড়ার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসতে হয় তুলিকে নেবার জন্য। সকালের ঘুমটা মুশতাকের চিরকালই প্রিয়, তাই আগের সময়ের চেয়ে একঘন্টা আগে উঠতে হয় বলে প্রথম ক'দিন তার মেজাজ খারাপ ছিল।

কিন্তু তুলির আনন্দের জন্য কোন কিছু করতে কষ্ট হয়না মুশতাকের। সে জানে প্রতিদিন সকালে তুলি হাসিমুখ করে তাকে ঘুম ভাঙ্গাবে, মাথার চুলে নাক ঘষতে ঘষতে বলবে,"জাঁহাপনা, এবার উঠতে হয়। আপনার প্রজারা অপেক্ষা করছে।"
মাঝে মাঝে মুশতাক চোখ বন্ধ করে বলে," আজকে আর উঠবোনা। প্রজারা খাজনা ঠিকমত দিচ্ছেনা আজকাল, এরকম প্রজার ডাকে সাড়া দেবার দরকার নেই।"
তুলি কাঁচের চুড়ির মতো রিন রিন শব্দে হাসে। "দেবো, দেবো, খাজনা ঠিকই দেবো। সুদ সমেত দেবো।"
মুশতাক তাওও চোখ খোলেনা। "কবে দেবে?"
"আজই দেবো জাঁহাপনা। এবার দয়া করে উঠুন। বেলা যে বয়ে যায়।"
"কিছু এ্যাডভান্স পেমেন্ট হবেনা এখন?"
"জাঁহাপনা অতিশয় হিসেবী। আচ্ছা, দিচ্ছি এ্যাডভান্স পেমেন্ট।" তুলি আলতো করে চুমু খায় কপালে।

মুশতাক তখন চোখ খোলে। সামনে তুলির সদ্যস্নাতা মুখ। পবিত্র সকালের রোদে তাকে আরো পবিত্র মনে হয়। তোয়ালে জড়ানো ভিজে চুল, দীর্ঘ চোখের পাতার মৃদু কাঁপুনি, গায়ের নাম না জানা সুবাস। মুশতাক এক দৃষ্টিতে সে অপরূপ মুখ খানির দিকে তাকিয়ে থাকে। কতদিন হয়ে গেল, তারপরও মনে হয় আজই সে প্রথম দেখছে তুলিকে। আহা- তার কেন এত সৌভাগ্য হোল? প্রগাঢ় ভালোবাসায় মুশতাকের চোখে পানি আসে। চোখের পানি লুকাতে সে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।

আজও তেমনি একটা প্ল্যান ছিল মাথায়। তুলির প্রথম ডাকে সে তাই সাড়া দেয়নি। দ্বিতীয় ডাকের আগেই কর্কশ শব্দে ফোন বেজে উঠলো। তুলি দৌড়ে ড্রইংরুমে গেল ফোন ধরতে।
শুরুতেই যাত্রাভঙ্গ দেখা যাচ্ছে। মুশতাক ছাদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে। সুন্দর প্ল্যানটা মাঠে মারা গেল।

কিছুক্ষন পর তুলির পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। মুশতাক দেখলো দরজার পর্দা ধরে তুলি দাড়িয়ে আছে। তার মুখ বিবর্ণ, চোখে টলমল করছে অশ্রু। সে ঠোঁট কামড়ে প্রাণপনে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। মুশতাক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলো।
"কি হয়েছে তুলি? কে ফোন করেছিল?"
" ইসলাম চাচা। কাল রাতে আব্বার ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। অবস্থা ভালোনা।"

পরের পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ফার্স্ট পর্ব আবারো পড়লাম... তারপর সেকেণ্ডটা পড়লাম...
আপনার লেখার মন্তব্য অসাধারণ ছাড়া আর কীইবা হতে পারে...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রিয় জাহিদ হোসেন:
লেখনীর বাইরে একটু কথা বলি। হয়তো দেখে থাকবেন, ব্লগে যাঁরা আসেন তাঁদের বেশিরভাগেরই মতামত - 'বড় লেখা তেমন পড়া হয় না।'
একটা কারণ, সময়। অন্যটা কম্পিউটারের মনিটরে লম্বা লেখা পড়ায় ক্লান্তি কিংবা ধৈর্য্যের অভাব অথবা অনাগ্রহ। এই তিনটি অন্তত: আমার মধ্যে আছে।
তাই একটু পরামর্শ (ক্ষমা করবেন, যদি অনধিকার চর্চা হয়ে যায়) - প্রতি পর্বের শব্দ সংখ্যা ৬০০-৮০০ এর মধ্যে রাখুন। প্রতিদিন এক পর্ব করে দেন, এতে করে পাঠক খেই হারাবে না।

ধন্যবাদ ।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
আমি একটু কনফিউজড। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখা পর্বগুলোকে যখন ভেঙে ভেঙে (ক) (খ) করে পোস্ট করেছিলাম, তখন আবার আমাকে বলা হয়েছিল গোটা পর্বটিকে একসাথে পোস্ট করতে।
আমি এখন কই যাই?

দেখি কি করা যায় সামনে?

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লম্বা হলেও পড়েছি এবং ভালো লেগেছে।
দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে শিমুলের পরামর্শটা দারুণ।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ। আশাকরি সামনের পর্বগুলোতেও আপনাকে সাথে পাবো। আপনারা আছেন বলেই না এগোতে সাহস করছি।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

লিইখা যান গুরু...
যেখানেই যান পিছু ছাড়তেসি না কইলাম
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।