পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
পর্ব-৬(খ)
রেশমা উঠে কিচেনের দিকে গেল। লিলিও সাথে সাথে এল।
"তুই কেমন আছিস লিলি? সংসার কেমন চলছে?"
"চলে যাচ্ছে। খুব খারাপ না, তবে বুঝিসই তো টানাটানির সংসার।"
"জামিল কি চাকরি পেয়েছে কোথাও?"
"নাহ- তবে আমাদের চেনাশোনা একজন বলেছেন যে ব্যাংকে একটা চাকরি হতে পারে। এখন দেখা যাক, না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই।"
"তাহলে সংসার চলছে কি ভাবে?"
"ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে। আপাততঃ টিউশানী করছি আমরা দুজনেই। জামিল তিনটা করছে, আমি দুটো। তাতে মোটামুটি পেটে ভাতে চলে যায়। তুই কেমন আছিস?"
"আগের মতোই। আমার জীবন হচ্ছে গ্রামের দীঘির পানির মতো নিস্তরংগ। ঢেউ তোলার মতো কিছু ঘটেনি এর মধ্যে।"
"সে হয়নি তোর দোষে। ঢেউ কেন, পানিতে সাইক্লোন তোলার জন্য কতজন পুকুরপাড়ে এলো। তুইইতো তাদের নামতে দিলিনা।"
রেশমা পিছন ফিরে পানি ঢালছিল গ্লাসে। সে এবার ঘুরে তাকায় লিলির দিকে। তার মুখে এক ধরনের অদ্ভুত বিমর্ষতা।
"আসল জন এখনো আসেনি । সে এলেই দীঘিতে ঢেউ উঠবে, পদ্মফুল ফুটবে।"
"তোর মাথায় আসলেই ছিট আছে।" লিলি হাসতে হাসতে বলে। "মনে আছে একবার পিকনিকে তুই শফিক স্যারের ওয়াইফকে বলেছিলি যে স্যারকে তোর খুব ভাল লাগে আর তোর খুব ইচ্ছে যে তুই যদি সারাজীবন বসে বসে স্যারের কথা শুনতে পারতি। রাগে ওনার মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল সেদিন, আর একটু পরেই উনি স্যারের হাত ধরে টানতে টানতে চলে গিয়েছিলেন। তার কিছুদিন পরেই স্যার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদেশ চলে গেলেন। সেদিন নিশ্চয়ই স্যার বাসায় ফিরে অনেক বকা খেয়েছিলেন বৌয়ের কাছে।"
"আমাকেও নিশ্চয়ই গালি দিয়েছিল মহিলা আড়ালে। ভেবেছিল আমি নিঃসন্দেহে চরিত্রহীন একটা নিম্ফোম্যানিয়াক। আসলে কাজটা করা উচিত হয়নি আমার। শফিক স্যারকে আমার আসলেই খুব ভাল লাগতো। আমার জন্যে একজন ভদ্রলোককে খামাখা গালি খেতে হয়েছিল।
আচ্ছা ধর, আমি যদি তোকে বলি যে জামিলকেও আমার কাছে খুব ভাল লাগে আর আমার খুব ইচ্ছে হয় সারা জীবন আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, তাহলে তুই কি বলবি? জামিলের হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ী চলে যাবি? আর তারপর আমাকে চরিত্রহীন বলে গালি দিবি?"
লিলি অকস্মাত্ এই প্রশ্নে হকচকিয়ে যায়। তারপর সে কিছুক্ষন মাথা নীচু করে থাকে। যখন সে মুখ তোলে, তখন দেখা গেল সে কান্না থামাতে পারেনি। চোখের পানিতে তার গাল ভেজা।
রেশমা ভারী লজ্জা পায়। "আই এ্যাম স্যরি লিলি, জাস্ট ঠাট্টা করছিলাম তোর সাথে। তুই এত সিরিয়াসলি নিবি তা বুঝিনি।"
লিলি শাড়ীর আঁচলে চোখ মোছে। তারপর ধরা গলায় বলে, "জামিলকে নিয়ে এই জাতীয় ঠাট্টা করিস না রেশমা। ওকে আমি বড় বেশী ভালবাসি। তুইতো জানিস, সব মেয়েদের শাড়ী গয়নার লোভ থাকে, বাড়ী গাড়ির লোভ থাকে, টাকা পয়সার লোভ থাকে। আমারও আছে। কিন্তু প্রত্যেকদিন যখন টিউশানী শেষ করে ক্লান্ত হয়ে জামিল বাড়ী ফেরে, আমি দৌড়ে রান্নাঘরে যাই খাবার গরম করতে। কেননা আমি চাইনা জামিল আমার চোখের পানি দেখুক। চুলোর ধোঁয়ার আড়ালে আমি রোজ কাঁদতে বসি। কেন জানিস? কেননা এই মানুষটা আর সব সুন্দরী মেয়েদেরকে বাদ দিয়ে শুধু আমাকে ভালবেসেছে বলে। কি হবে আমার গা ভর্তি সোনার গয়না দিয়ে? তুই পৃথিবীর সব পুরুষ মানুষকে নিয়ে যা, সব ঐশ্বর্য্যকে নিয়ে যা, শুধু বোকাসোকা এই মানুষটার নামে কোন কথা বলিস না। ক্লান্ত মানুষটা প্রতিদিন খাওয়া শেষ করে বলে, অনেক খেয়ে ফেললাম লিলি, তোমার রান্নাটা খুব ভাল হয়েছে আজ। তখন আনন্দে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। জানি সে খুব ক্ষুধার্ত ছিল, ঐ অবস্থায় তাকে কাদামাটি দিলেও হয়তো তাই খেয়েও সে একই কথা বলতো, তবুও গর্বে আমার সারা রাত ঘুম আসেনা। জামিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভাবি, কি আছে অস্থির, পাগলাটে এই মানুষটার মধ্যে? আর কিইবা আছে আমার মতো অতি সাধারণ একটা মেয়ের মধ্যে? বাবা মায়ের পছন্দ মত বিয়ে করলে হয়তো আমার সংসারে আরও একটু স্থিতি থাকতো, আরও একটু স্বস্থি থাকতো, কিন্তু প্রত্যেকটা দিন চুলোর ধোঁয়ার আড়ালে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে কান্নার মত সুখতো আমি পেতামনা।"
রেশমা চুপ করে তাকিয়ে থাকে লিলির মুখের দিকে। লিলির গায়ের রং একটু কালোর দিকে ঘেঁষা, তবুও কান্নার কারণে তার মুখ বেশ লাল হয়ে গেছে। চোখের পাপড়িতে গুড়ো গুড়ো অশ্রুবিন্দু লেগে আছে, চুলের বৃত্তে আটকে আছে কানে ছোট্ট দুলটি। অপুর্ব সুন্দর সে মুখশ্রী।
"মাঝে মাঝে আমার ভয়ে দম আটকে আসে। কেন জানি মনে হয় এক সময় আমাদের এই প্রেম প্রেম খেলা শেষ হয়ে যাবে, তখন হয়তো আমরা একে অন্যকে আর সহ্যই করতে পারবোনা। কে জানে, হয়তো কোনদিন তোর মত একটা রূপসী, বড় ঘরের মেয়ে এসে নিয়ে যাবে জামিলকে। আমার সারা জীবনের সমস্ত আনন্দকে আমি হাতের মুঠোয় করে দিয়েছি এই মানুষটাকে, ওকে ছাড়া আমার আর কোন আনন্দ নেই। যদি কোনদিন ওর ঘরে ফিরতে বেশী রাত হয়, সেদিন আমি সারাক্ষন অস্থির হয়ে থাকি। মনে হয় যদি ও আর কোনদিন না ফিরে আসে, যদি ওর কাছে এই ঘর সংসার অসহ্য লাগে, যদি ওর কাছে আমি পুরনো হয়ে যাই। সেই সব রাতে আমাকে খুশী করার জন্য খুব ছোট হলেও কিছু একটা জিনিষ হাতে করে নিয়ে আসে জামিল। রজনীগন্ধার ডাঁটি, নাহয় কটকটে রংএর চুলের ফিতে বা মাটির তৈরী ঘর সাজানোর জিনিষ। তারপর খুব ভয়ে ভয়ে বলে, আজকে হঠাত্ করে রকিবুলের সাথে দেখা হয়ে গেল, সেইই জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গেল। আমি তখন কোন কথাই শুনতে পাইনা, আমি রাগ করিনা, ঝগড়া করিনা, শুধু ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকি। জামিল হাসে আমাকে দেখে। তুমি একটা পাগল, এখন ছাড়ো আমাকে, আমার গায়ে ঘামের গন্ধ। কিন্তু ঐ গন্ধকেই তখন ভাল লাগে আমার, মনে হয় আমি ওর গায়ে মুখ ডুবিয়ে অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকি। আমি বোধহয় আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছিরে।"
লিলি কথা বলতে বলতে হেসে ফেলে। "দ্যাখ- একটু আগেই আমি বললাম যে তোর মাথায় ছিট আছে। এখন আমাকে দেখে তুই নিশ্চয়ই ভাবছিস যে আমারই মাথা খারাপ। এতদিন পর তোর সাথে দেখা করতে এসে কি একটা ছোট্ট কথায় ছেলেমানুষের মত কান্নাকাটি করলাম, এতগুলো আজেবাজে কথা বললাম। তুই রাগ করিস না, রেশমা। আমি জানি তুই ঠাট্টা করেছিস, তারপরেও কেন যে এই রকম করলাম।"
রেশমা নিঃশব্দে লিলির চোখ মুছিয়ে দিল। তারপর বলল, "যা- বাথরূমে গিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে আয়। তোকে এই অবস্থায় দেখলে জামিলও আবার কান্নাকাটি শুরু করে দেবে।"
ড্রইংরুমে এসে রেশমা দেখলো যে জামিল সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। খুব সন্তর্পনে পানির গ্লাসটা নামিয়ে রেখে রেশমা পাশের সোফায় বসলো। সত্যিই, কি আছে অতি সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত এই মানুষটার মধ্যে? রেশমার খুব জানতে ইচ্ছে করলো।
লিলি পাঁচমিনিট পর ঘরে এলো। ঘুমন্ত জামিলের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো সে ভাল করে। তারপর হাতের ইশারায় রেশমাকে বাইরে ডাকলো।
আবার কিচেনে ফিরে গেল তারা। ডাইনিং টেবিলে বসে লিলি বলল,"তোর কাছে একটা দরকারে এসেছিলাম, খুবই গোপনীয়। জামিলের সামনে বলা যাবেনা, ভাল হয়েছে যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। এক ঢিলে দুই পাখী মারা যাবে।"
"কি লাগবে বল?"
"খুবই ছোট একটা সাহায্য লাগবে তোর। তোকে একটু মিথ্যে কথা বলতে হবে জামিলের সামনে।"
"কি মিথ্যে কথা?"
"আর বলিস না, এই লোকটার জন্য আমাকে যে কতরকম ধানাইপানাই করা শিখতে হোল। পুরো ব্যপারটা খুলেই বলি। গত সপ্তাহে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দেবার জন্য আমি তোদের এদিকে এসেছিলাম। সেটা শেষ হবার পরে দু চারটি দোকানে ঘুরছিলাম, এমনিতে তো আর এদিকে আসা হয়না। একটা দোকানে হঠাত্ ভারী সুন্দর একটা ফুলদানী চোখে পড়লো। আমি সাধারণতঃ এইসব দামী দোকানে ঢুকিনা, কিন্তু সেদিন আর থাকতে পারলাম না। ফুলদানীটা বেলজিয়ান কৃষ্টালের তৈরী, পাতলা কাঁচের উপর সূক্ষ্ন হাতে একটা মারমেইডের ছবি খোদাই করা। বাতাসে তার চুল উড়ছে, মেয়েটি বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে। শিল্পীর হাত এতোই ভাল, যে তুই পরিষ্কার বুঝতে পারবি যে তার দুচোখ ভর্তি পানি। মেয়েটির মুখটা দেখলে তুই ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলবি, এতো সুন্দর।
জানতাম এমন একটা জিনিষের দাম অনেক বেশী হবে, আমার জিজ্ঞেস করাটাই অনুচিত, তাও জিজ্ঞেস করলাম। ওরা দাম চাইলো চৌদ্দ হাজার, বুঝলাম দামাদামী করলে হয়তো দশ-এগারো হাজারে দিয়ে দেবে। আমি দাম শুনে অবাক হইনি, জিনিষটা আসলেই সুন্দর। সেদিন বাসায় ফিরে জামিলকে ফুলদানী দেখার কথাটা বলেছিলাম, কত দাম সেটা আর বলিনি। আমার বোকামী, বলা উচিত ছিল।"
রেশমা পরিস্কার বুঝছিলনা ব্যপারটা। "কেন, কি হয়েছে তাতে?"
"কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছিস? মহা কেলেংকারী হয়ে যেতো। ভাগ্যিস- তোর বাসাটা এ দিকে ছিল বলে রক্ষা।"
"খুলে বল, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।"
"সাধারণতঃ জামিল বিকেল তিনটের দিকে বেরিয়ে যায় টিউশানীতে। আজকে দুপুরে খাওয়ার পর দেখি বিছানায় গড়াচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যপার? প্রথমে কিছুই বলেনা, শুধু বলে সারপ্রাইজ দেবো তোমাকে। অনেক চাপাচাপির পর শয়তানটা আমাকে বললো যে সে ঐ ফুলদানীটা আমাকে কিনে দেবে, এবং তার জন্যে সে তার টিউশানীর বেতন এ্যাডভানস নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে তো ফুলদানীটার দাম জানে না, জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা আছে তোমার কাছে? তাও সে বলবে না, পরে বললো দুমাসের বেতন অগ্রিম এনেছে সে, সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকা। আমি কিছুই বলিনি তাকে, শুধু শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষন কাঁদলাম। আনন্দে নাকি দুঃখে তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমাদের এই অভাবের সংসারের এত টানাটানির মধ্যেও আমার পাগল স্বামী আমার সখের একটা ফুলদানী কেনার জন্য তার দু মাসের বেতনের টাকা এ্যাডভানস নিয়ে এসেছে। এমন ভাগ্য ক'জনের হয় বল? একই সাথে খুবই কষ্ট হোল জামিলের জন্যে, বোকাটা তো জানেনা তার দুমাসের বেতনের টাকায় কেনা যাবেনা ফুলদানীটাকে, সেটা কেনার মতো সামর্থ্য আসলে তার নেই। কথাটা বলে আমি তার আনন্দকে নষ্ট করে দিতে চাইনি, পরে ভাবলাম দোকানে যেয়ে বেইজ্জতি হবার আগে তোর এখানে আসবো। প্ল্যানটা হচ্ছে যে তুই শুধু জামিলকে বলবি যে ঐ দোকানটা প্রত্যেকদিন বিকেল বেলাতেই বন্ধ হয়ে যায় অতএব সেখানে আজ গিয়ে কোন লাভ নেই। বরঞ্চ, তুই কাল সকালে গিয়ে ফুলদানীটা কিনে রাখতে পারবি আমাদের জন্য। দু এক দিন পর এসে আমরা নিয়ে যাবো তোর কাছ থেকে। অথবা তুই কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবি আমাদের বাসায়।"
"কিন্তু পাচঁহাজার টাকায় ফুলদানীটা আমার কাছে বেচবে কেন দোকানদার? বেশী টাকা চাইলে কি আমি বাকীটা দিয়ে দেব?"
লিলি আবারো হাসে। "তুইও আরেকটা গাধা। তোকে কি আমি ফুলদানীটা সত্যি সত্যি কিনতে বলছি নাকি?"
"তাহলে?"
"তুই কালকে ড্রাইভারকে দিয়ে একটা চিঠি পাঠাবি। তাতে লিখবি যে ফুলদানীটা ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে, তাই তুই কিনতে পারিসনি। অবশ্য তুই দোকানে বলে এসেছিস, আবার যদি কখন এই ধরনের জিনিষ আসে তাহলে তারা তোকে জানায়। ব্যস-খেল খতম, মামলা ডিসমিস। ঐ ফুলদানী আর জীবনেও আসবেনা, আর আমাদেরও বেইজ্জতি হতে হবেনা। টাকাটা দিয়ে আমি বরঞ্চ কয়েকটা জামা-প্যান্ট বানাবো জামিলের জন্য। এমনিতেই তো পাগুলে চেহারা, তার উপর পোশাক-আশাকের কোন ঠিক নেই। চাকরি এই জন্যেই পায়না বেচারা। কিন্তু সেদিকে কি তার কোন খেয়াল আছে? না। তার শুধু খেয়াল আছে আমার জন্যে ফুলদানী কেনার ব্যপারে। এমন মানুষকে নিয়ে আমি কি করি?" লিলির চোখে আবারো পানি টলমল করে।
"জানিস রেশমা, যদি টাকা থাকতো, তাহলে পুরো দুনিয়াটাই বোধহয় কিনে ফেলতো জামিল আমার জন্যে। বেচারা খুব চেষ্টা করে আমাকে খুশী করার জন্যে। পারেনা বলে আরো বেশী মায়া হয় তাকে দেখে।"
"তোর কি টাকা লাগবে? লাগলে বল, আমি এনে দিচ্ছি।"
"সে আমি জানি। কিন্তু না- টাকা লাগবে না আজকে। যদি কোনদিন লাগে, বলবো তোকে।"
রাতের বেলা মাহফুজ সাহেব বাসায় ফিরে দেখলেন রেশমা স্তম্ভিতের মত বসে আছে। চোখ দুটো বেশ লাল, মনে হচ্ছে কান্নাকাটি করেছে অনেক।
"তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে মা?"
"না ড্যাড। আমি ভালই আছি। আজ সন্ধ্যেবেলা আমার দুই পুরনো বন্ধু এসেছিল। তাদের সাথে পুরনো দিনের কথা বলতে বলতে হঠাত্ মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।"
"আমারও মনটা ভাল নেই। একটা খারাপ খবর পেলাম মসজিদ থেকে বেরিয়েই।"
"কি হয়েছে ড্যাড?"
"ইশতিয়াক আমার মোবাইলে ফোন করেছিল। কাল রাতে তার আব্বার একটা হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। আগামীকাল সকালে সে বাড়ী চলে যাচ্ছে। কয়েকদিন পর আসবে।"
"ওনার অবস্থা কি খুব খারাপ?"
"এখন একটু স্টেবল। কিন্তু ইশতিয়াক ভয় পাচ্ছে আবার একটা এ্যাটাক যদি হয় সেটা হয়তো ফ্যাটাল হবে। আমি ইশতিয়াককে বলেছি ওনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকায় আনারই চেষ্টা করতে। বেচারাকে সবকিছু একা একাই সামলাতে হচ্ছে। তার বড় ভাইটা বিদেশে থাকে। তাকে খবর দেয়া হয়েছে, কিন্তু সে যেখানে থাকে সেখানে এখন নাকি আবহাওয়া খুব খারাপ, এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বন্ধ। কবে আসতে পারবে কে জানে।"
"তুমি পারলে ওদেরকে হেল্প কোর ড্যাড।"
"এইজন্যেই ওনাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে বললাম, যদি ভালভাবে আসতে পারে তাহলে তোর ডাক্তার মামার ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেব।"
"থ্যাংক ইউ, ড্যাড।"
"ইউ আর ওয়েলকাম। এখন খেতে চল।"
(চলবে)
মন্তব্য
এতদিন ছিলেন কই? উপন্যাস আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে হবে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
জহিদ ভাই, এত ভালো লেখা, শুধুই বলা উচিত খুবভালো
ধন্যবাদ আপনাদের দুজনকে মন্তব্যের জন্য। অন্যদেরকে লেখাটি পড়ার জন্য।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
পুরোটা বের করছেন কবে?
নতুন মন্তব্য করুন