অণুগল্প-৪। ওরা দুজন।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: রবি, ২৭/০৪/২০০৮ - ৭:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাইরে প্রচন্ড গরম, কিন্তু তারপরও গাড়ীর কাঁচ তোলা। ভিতরে বসে থাকা মহিলাটি একটু বিরক্ত। গরমের জন্য না, গাড়ীর ভিতরে ফুলস্পীডে এয়ারকন্ডিশনার চলছে। মহিলাটি বিরক্ত কেননা ড্রাইভারটি এখনো আসছেনা তাই। সামান্য ক'টা জিনিস কিনতে এতক্ষণ লাগে?

একটু পরেই অবশ্য ড্রাইভারকে দেখা গেল। ঝাঁঝাঁ রোদের মধ্যে সে এসে গাড়ীতে বসলো। মহিলাটির হাতে ধরিয়ে দিল একটি ছোট প্যাকেট।

"বাসায় চলো।" সে কথায় ড্রাইভার গাড়ী ঘোরায়।

নিজের ঘরে ঢুকে মহিলা প্যাকেটটি খোলেন। দুটো বই রয়েছে ভিতরে। একজন মহা জনপ্রিয় লেখকের সদ্য প্রকাশিত বই।

মহিলা প্রথম বইটি খোলেন। বরাবরের মতোই বইটিকে উতসর্গ করা হয়েছে দুজনকে।

"একজনকে যার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছি।"

লাইনটি পড়ে মহিলা হাসেন। সস্নেহে হাত বুলান বইটির উপর। তারপর সযত্নে বইটিকে শেলফে তুলে রাখেন। লেখকের এযাবত প্রকাশিত আর সব বইয়ের সাথে।

পরের বইটিও একই বই। এবার সেটিও খোলেন মহিলা। উত্সর্গপত্রের দ্বিতীয় লাইনটি পড়েন তিনি।

"আর একজনকে যে আমাকে শুধুই ঘৃণা করে।"

লাইনটি পড়ে প্রতিবারের মতো এবারেও মহিলার সুন্দর মুখটি অব্যক্ত ঘৃণায় কুঁচকে যায়। তিনি একটানে ছিঁড়ে ফেলেন বইটি, তারপর প্রতিটি পৃষ্ঠা কুচিকুচি করেন রাগে।

পাঁচ মিনিট পর ওরা দুজন আবার এক হয়ে যায়।

(বিঃ দ্রঃ এত দ্রুত গল্প আমি আগে আর লিখিনি। তাই এর মান সম্পর্কে আমি নিজেই বেশ সন্দিহান। খারাপ লাগলে নিজগুণে মাপ করে দেবেন।)


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

দূর্দান্ত লাগলো।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঃ(

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বাহ!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আকতার আহমেদ এর ছবি

অণু পরমাণু বুঝিনা, তবে ভালোবাসা আর ঘৃণার দূরত্বটা টের পাওয়া যায় আপনার লেখায় !
নিয়মিত লিখুন

রায়হান আবীর এর ছবি

জাহিদ ভাই, মাথার উপর দিয়ে গেলো তো আমার!! মন খারাপ
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

নজমুল আলবাব এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই আজকাল কেমিস্ট্রি ভুলতে বসেছি। অণু পরমাণু নিয়ে আপাতত গোলকধাঁধায় আছি।
চির আমি

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

আমি না গল্পটি বুঝি নি ------- এটা দুঃখজনক যে সন্তান জন্ম দেবার পর সন্তানের নাক মুখ সনাক্ত করে চেনানো -------- তবু লেখাটি ভাল লাগলো বলে জানতে চাইলাম---------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍আমিও বুঝি নাই। মাথার উপর দিয়া গেছে গিয়া মন খারাপ
অ্যান্টেনা দুর্বল তো...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

গল্পটা আমিও ঠিক বুঝিনি। অনেকেই বলার পর সাহস করে নিজেরটাও প্রকাশ করে দিলাম।
আমি যেটুকু বুঝেছি তা অনেকটা হয়তো এরকম, উৎসর্গ করা হয়েছে একই মানুষকে। যে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে লেখক নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন সেই মানুষটাই লেখককে খুব ঘৃণা করে। আর মানুষটা হয়তো এই মহিলা!
ব্যাপারটা কি আসলেই এমন? মানে অনুভূতির দ্বন্দ্ব? অনেকটা হয়তো ইংরেজিতে যাকে বলে "অ্যাম্বিভ্যালেন্স"। অবশ্য আমার বোঝার ভুলও হতে পারে। জাহিদ ভাই-ই বুঝিয়ে বলতে পারবেন হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ

আততায়ী

জাহিদ হোসেন এর ছবি

গত দু'দিন নেটে আসতে পারিনি বলে আপনাদের মন্তব্যগুলো দেখা হয়নি। আজ সেগুলো দেখে তো চোখ চড়কগাছ। বেশ কয়েকজনে বলেছেন তাঁরা বুঝতে পারেননি। আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আপনারা না বললে আমি কোনভাবেই বুঝতে পারতামনা।

যদিও প্রথম থেকেই লেখাটি নিয়ে আমার নিজেরই একটা দোনোমোনো ভাব ছিল। (সে কারণেই লেখাটির নীচে নিজের সন্দেহের কথাটি লিখেছিলাম।) কেমন যেন হুট করে লিখেছিলাম। চিন্তা করেছি কম, সময় দিয়েছি আরো কম।

লেখাটিতে কি বলতে চেয়েছি আমি? আমার আগেই এ ব্যাপারে অতন্দ্র প্রহরী বলে ফেলেছেন সেটি।
"আমি যেটুকু বুঝেছি তা অনেকটা হয়তো এরকম, উত্সর্গ করা হয়েছে একই মানুষকে। যে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে লেখক নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন সেই মানুষটাই লেখককে খুব ঘৃণা করে। আর মানুষটা হয়তো এই মহিলা!
ব্যাপারটা কি আসলেই এমন? মানে অনুভূতির দ্বন্দ্ব? অনেকটা হয়তো ইংরেজিতে যাকে বলে "অ্যাম্বিভ্যালেন্স"।"

ব্যাপারটি ঐ রকমই।

সম্প্রতি লেখাটির একটা ভিন্ন ভার্সনের কথা মনে এসেছে। দেখা যাক অন্যভাবে এই লেখাটি শেষ করা যায় কিনা।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রায়হান আবীর এর ছবি

পরেরটা ভালো লাগছে!!
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।