বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে। "দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো"। ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, এর অর্থ আমাদের সকলেরই জানা।
আমাদের বন্ধু কিসলুর থিওরী ছিল উলটো। সে বলতো,"ঘোলেই যদি স্বাদ মেটানো যায়, তাহলে এক্স্ট্রা পয়সা খরচ করে দুধ কেনার দরকারটা কি?"
আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইচ্ছেমত যা খুশী করে বেড়াই। প্রবলেম হোল যে কিসলু তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি করে সাজেশন (বা বাগড়া) দেওয়া শুরু করলো। তার যুক্তি হোল যে আমরা অনেক কিছুই শর্টকাটে সারতে পারি যেটা হয়তো আসল জিনিসের মতো হবে না, কিন্তূ কাছাকাছি। "আসল আসল" করে পয়সা বা সময় খরচ করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
দু চারটে উদাহরণ দেওয়া যাক।
তখন আমরা বেশ ক'জন ছিলাম বইয়ের পোকা। কেউ নতুন কোন বই পেলেই সেটা অন্যেরাও চেয়ে নিয়ে পড়তো। কিসলু ফতোয়া দিল যে এটা একেবারেই বাজে ব্যাপার হচ্ছে। সবাই মিলে একই বই আলাদা ভাবে কেন পড়ছে? তার চেয়ে একজনে বইটি ভাল করে পড়ুক, এবং সে পরে এসে অন্যদেরকে সংক্ষেপে কাহিনীটি বললেই হোল। এতে করে অনেক সময় বেঁচে যাবে।
সেবারে একটা ইংরেজী ছবি এলো ঢাকাতে। নাম "সানফ্লাওয়ার"। মার্সেল্লো মাস্ত্রোয়ানী আর সোফিয়ে লরেন এর ছবি। খুবই নাকি সুন্দর। আমরা সবাই দল বেঁধে সে ছবি দেখতে যাবো বলে মনস্থ করেছি।
কিসলু বললো, সে যাবে না।
"সেকি, কেন?"
"ওই ছবি আমার দেখা আছে।"
"তুমি দেখলে কিভাবে? ছবিটাতো রিলিজই হয়েছে দুদিন আগে।"
"ছবি দেখার জন্য তো ছবি দেখার কোন দরকার নাই।"
এ আবার কি কথা? ছবি দেখার জন্য ছবি দেখার দরকার নাই। মহা দার্শনিক তত্ত্ব মনে হচ্ছে।
সে এবার খোলাসা করে। "শোন- আগামী সপ্তাহে "বিচিত্রা"য় ছবির রিভিউ বেরোবে। ওটা পড়লেই ছবির কাহিনীটা জানা হয়ে গেল। আর তিন সপ্তাহ আগে অন্য একটা সিনেমা দেখার সময় আমি "সানফ্লাওয়ার" এর ট্রেলার দেখেছি। ট্রেলারে সবসময় ছবির ভাল ভাল অংশগুলোই দেখায়। এ দুটো যোগ করলে তাহলে এখন কি দাঁড়ালো? মোটামুটি ভাবে বলা যায়, যে ছবিটার বেশীর ভাগই আমার দেখা। খামাখা পয়সা খরচ করে আবার সিনেমা হলে যাওয়ার দরকার কি?"
অকাট্য যুক্তি! বরাবরের মতোন।
পড়াশুনা শেষ করে বিদেশ চলে গেলাম। কিসলুর সাথে দেখা সাক্ষাত্ নেই বহুদিন।
একবার দেশে গেছি। চাপে পড়ে যেতে হোল একটি বিয়ের দাওয়াতে। গুলশানে সে এক আলীশান বিয়ের পার্টি। নানান ধরণের মোগলাই ভরপেট সেঁটে সেখান থেকে বেরোচ্ছি, এমন সময় দেখা হোল কিসলুর সাথে। সে দোকান থেকে পান কিনছে। মনে পড়লো যে সে ছিল ভয়ানক ভোজনরসিক।
"কিরে, কিসলু? অনেক দিন পর দেখা হোল। কেমন আছিস?"
"ভাল।"
"ভরপেট খেয়েদেয়ে পান সাঁটাচ্ছিস?"
কিসলুর মুখটি একটু ম্লান হয়ে আসে সে প্রশ্নে।
"নারে-দোস্ত। ওইদিন আর নাই।"
"কেন?"
"ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ব্লাডপ্রেসার। তিনটেই ধরেছে আমাকে। খাওয়া-দাওয়া একদম বারণ।"
"তাহলে এই বিয়ে বাড়ীর সামনে কি করছিস? আবার দেখি পানও চিবুচ্ছিস।"
"এখানে মাঝেমাঝে আসি খাবারের গন্ধ নিতে, আর সাথে এই বইটা পড়ি।"
তার হাতে ধরা বইটির নাম "মোগলাই খাবার-দাবার"। বুঝলাম সেটা রেসিপির বই।
"আর তারপর বড় একটা মশলা দেওয়া পান খেয়ে ঢেঁকুর তুলি। বুঝলিনা, খেতে তো আর পারিনা, তাই এই বন্দোবস্ত।"
বুঝলাম স্বইচ্ছায় না হলেও কিসলুর ঘোল খাওয়া এখনো চলছে।
(এবার মনে হয় অণুগল্প ছাড়ান দেওয়ার সময় এসেছে। কেউ আমাকে থামতে বলেন, প্লিজ।)
মন্তব্য
গল্পটা মজার। তবে অণুগল্প নাম দিতে মন সরছে না।
কেন? কবিরা কি কখনও বলেন, "ঢের কবিতা লিখেছি। আর নয়।"
যা লিখতে ভালো লাগে বা যেমন লেখা মাথায় বা কলমে/কিবোর্ডে আসে, তা লেখাটাই কি উচিত নয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হাহাহা। জটিল। সব কিসলুই দেখি একটু ইয়ে... থামবেন কেন? চলুক চলুক।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
- আপনারে কিসলু ভাইয়ের 'ঘোল'র কসম লাগে, থামাইয়েন না।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি ভাবছিলাম আপনে বোধহয় কিসলু ভাইয়ের বিবাহিত জীবন নিয়ে কিছু জিগাইবেন, মানে ক্যম্নে কী? কিন্তু কিছুই কইলেন না। হতাশ হইলাম
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
সংসারে এক সন্ন্যাসীর সাথে আমি সহমত।
যতক্ষন ভাল লাগবে ততক্ষনই লিখুন।
আমাদেরও ভাল লাগছে!
----
স্পর্শ
কিসলু ভাই মজার লোক।
একটা বিষয়েঃ
আপনি প্রায়ই দেখছি 'হোল' লিখছেন। এটা কি ইচ্ছাকৃত? জানতে ইচ্ছে করছে।
নির্বাসিত'দা-
আপনার জন্য রহিয়াছে উত্তম জাঝা
ঘোলটা খেতে স্বাদের হয়েছে খুব.
-
কৈলাশ
দারুন!!! চলতে থাকুক...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
ভালো লেগেছে। থামা চলবে না। কিসলু ভাইয়ের কথা পড়ে আমারও এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেলো । ধন্যবাদ।
সৈয়দ আখতারুজ্জামান
আহা! বেচারা কিসলু! জীবনের আনন্দটাই নিতে পারলো না।
আপনার অনুগল্প ভাল লাগছে খুব!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অসাধারণ! পাঁচে পাঁচ।
এটাকে অণুগল্প বলতে ইচ্ছে করছে না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হাহাহা আসলেই খুব মজার আপনার বন্ধু কিসলু, খুব ভালো লাগল
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
কিসলু তো দেখি জিনিস একখান !
মজা পাইলাম। এইসব থামাথামির নাম মুখে আনার দরকার দেখি না।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন লেখা কই?
আহা কিসলু।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন