এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো সুবিমল বাবুর চোখে জল এলো।
বয়েস বেশী হয়ে যাওয়ার অনেক ফ্যাঁকড়া। তার মধ্যে একটা হচ্ছে যে শরীর আজকাল আর কথা শুনতে চায়না। ডানে বললে বাঁয়ে যায়, দাঁড়াতে বললে আছাড় খায়। মনেও থাকছেনা অনেক কিছু। এইতো সেদিন ঘরে বসে কিছুতেই মনে করতে পারলেন না যে কাকের বাসায় কোকিল ডিম পেড়ে যায়, নাকি কোকিলের বাসায় কাক।
রিটায়ার করার পর থেকেই কথায় কথায় চোখে জল আসাটাও শুরু হয়েছে। অথচ এই সুবিমল সান্যালের সামনে বহু মাস্তান ছেলেপিলে কাপড়ে প্রস্রাব করে দিয়েছে। ‘বাঘা স্যার’ এর দাপটে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলে একসময়ে বাঘে-ছাগলে একঘাটে জল খেয়েছে।
তবে আজকে চোখে জল আসার মূল কারণটি তাঁর সামনেই বসে আছে। ঝকঝকে দামী স্যুট পরে থাকা মানুষটিও তার চোখের রীমলেস চশমাটি খুলে সুগন্ধী রুমালে চোখ মোছে।
‘স্যার-আপনার কি মনে আছে আপনি একবার আমাকে বেদম মেরেছিলেন? তখন বোধহয় আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি। কি দোষ করেছিলাম তা মনে নেই। শুধু মনে আছে একদম শেষে আপন আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন-তোর কি মানুষ হতে ইচ্ছে করেনা? অত মার খেয়ে যে আমি সেদিন কাঁদিনি, কেন যেন আপনার ওই ছোট্ট কথায় আমর চোখে জল এসেছিল। আর কোনদিন আমি জীবনে সেকেন্ড হইনি। এখন আমেরিকাতে আমার অফিসের দেয়ালে আপনার ওই কথাটিকে আমি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছি। ডোন্ট ইয়্যু ওয়ান্ট টু বিকাম সামবডি?’
সুবিমল বাবু জলভরা চোখে হাসেন। ‘আমি ওই কথা বলেছিলাম নাকি? কি জানি, হবেও বা। কত কথাই তো বলেছি এই জীবনে। তুমি শুনেছো বলে তুমি মানুষ হয়েছো। যে শোনেনি, তার কিছু হয়নি।’
মানুষটি প্রবল আপত্তিতে মাথা নাড়ে। ‘কথা অনেকেই বলে স্যার, কিন্তু আপনার কথায় কি যেন একটা ছিল। এই এক আমেরিকাতেই আমি আমাদের স্কুলের অন্ততঃ কুড়ি-পঁচিশ জনকে চিনি যারা শুধু আপনার জন্যেই জীবনে এস্ট্যাবলিশড্ হয়েছে। আমরা চিন্তা করছি আপনাকে আমেরিকাতে নিয়ে যাবো। ছ’মাস ওখানে থাকবেন, আমাদের সবার বাড়ীতে ঘুরে ঘুরে বেড়াবেন। দেখবেন কত মানুষকে আপনি অনুপ্রাণিত করেছেন।’
দরজার ওপাশ থেকে কে যেন খুকখুক করে একটু কেশে উঠলো। সুবিমল বাবু চোখ তুলে ঘড়িতে সময় দেখলেন। রাত ন’টা বাজে প্রায়। তিনি একট সচকিত হ’লেন। সময় বেশী নেই।
মানুষটি হয়তো আরো কিছুক্ষণ বসতে চেয়েছিল, কিন্তু সুবিমল বাবুর উসখুস করা দেখে অনিচ্ছা নিয়ে চলে গেল। তবে আবার হাতে সময় নিয়ে আসবে পরে। তার নাকি স্যারের কাছে আরো অনেক কিছু শেখার বাকী আছে।
ভিতর বাড়ীতে ঢুকতে স্ত্রী তাড়া লাগালেন,‘তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘরে যাও। ওর তো এসে পড়ার সময় হয়ে গেল।’
ও মানে সুকুমার। সুকুমার সান্যাল। বাঘা স্যারের একমাত্র ছেলে। মোটরগাড়ীর মেকানিক। সারা দিন কাজ করে প্রতিরাতে একটি দেশী মদের বোতল বগলদাবা করে বাড়ী ফেরে সে। নেশা চড়লে তার অশ্রাব্য গালিগালাজে পাড়ায় কান পাতা দায়।
এই সময়টিতে সুবিমল বাবু অন্ধকার ঘরে বসে দু হাতে কান ঢেকে নিজের মৃত্যু কামনা করেন।
ঘরে ঢুকবার সময় তাঁর আজও মনে পড়লো না যে কে কার বাচ্চাকে মানুষ করে। কাক কোকিলের, নাকি কোকিল কাকের।
মন্তব্য
ভাল লাগসে... এইরকম গল্প আগেও শুনসি বলে মনে হয় তারপরো ভাল লাগসে... গল্পের জন্য আপনাকে
_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
আপনার কথা একদম সত্যি। মাস্টারদের ছেলেপেলেরা অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভাল করেনা। এই রকম কাহিনী ভুরিভুরি আছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
ভালো লাগলো..।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভালো লাগলো
খারাপ লাগলো
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার এক ভয়াবহ গল্প
ধন্যবাদ। পড়ার জন্যে। ভাল লাগার জন্যে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মূচীর পায়ে জুতা থাকে না । সত্য কথা..
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
গল্প ভালো লেগেছে।
অপ্রাসঙ্গিক, কিন্তু গল্প পড়ে মনে আসলো "সুবিমল বাবু", "বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল" এই ধরণের নামগুলো গল্প-উপন্যাসে এতো ব্যবহার করা হয় কেনো...
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আমাকে ছেলেবেলায় এক মাস্টারমশাই পড়িয়েছিলেন, তাঁর নাম ছিল বিমল স্যার। সেখান থেকেই গল্পটির চরিত্র সুবিমলের সূচনা। আর আমার বেশ ক'জন বন্ধুর মুখে টাংগাইলের বিন্দুবাসিনী স্কুলের নাম শুনেছি। নামটা মনে ধরেছিল কেন জানিনে। আজকে চান্স পেয়ে চালিয়ে দিলাম।
গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আমাদের স্কুলেরও অনেক শিক্ষক এমন দীর্ঘশ্বাষ ছেড়েছেন...
...বর্ণচোরা
গল্পটার শেষ মুহূর্তে এর চমক টের পেলাম।।
অসাধারণ।।।
এটাও প্রচন্ড রকম ভাল লাগল
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
চমৎকার লাগলো ।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কি বলব, বুঝতে পারছি না। এমন একটা গল্প লিখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
স্রেফ অসাধারণ।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেকদিন পর আবার গল্প লেখার একটা চেষ্টা চালালাম। দেখি সামনে আরো কয়েকটা ক্ষুদে গল্প নামানো যায় কিনা। ভাল থাকুন সবাই।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
ভালো লাগলো পড়ে জাহিদ ভাই।সুন্দর,সাবলীল
নতুন মন্তব্য করুন