সামনের প্যানেলের একদম ডান দিকের বড় লাল বাতিটা দপ্ করে জ্বলে উঠলো তিনবার। এর অর্থ এক্সটি-থ্রি নাইন কিছু বলতে চাইছে।
ইন্টারকমের সুইচ চাপতেই তার যান্ত্রিক গলা শোনা গেল।
‘সুপ্রভাত, কম্যান্ডার।’
‘তোমাকে না আমি বারণ করেছি সব সময় কম্যান্ডার কম্যান্ডার না করতে।’
‘দুঃখিত, ম্যাডাম।’
‘আবার ম্যাডাম বলছো কেন? আমার নামতো তুমি জানো। আমার নাম কল্পনা।’
‘তা জানি, কিন্তু-’
‘কোন কিন্ত না। গত তিন মাস ধরে তুমি আর আমি মিলে এই স্পেস স্টেশনটি চালাচ্ছি। এখন আমরা বন্ধু হতে পারি, কি বলো পারি না? তোমার লজিক কি বলে?’
এক্সটি-থ্রি নাইন সে কথার কোন উত্তর দেয়না।
‘আচ্ছা, এখন বলো কি বলতে এসেছিলে।’
‘আমাদের মিশন মোটামুটি শেষ। আর দুদিন পরই আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাবো। তোমার এই একাকী জীবনের ইতি ঘটবে। তুমি আবার তোমার পরিবারের সবাইকে দেখতে পারবে।’
‘কি বলতে চাও পরিষ্কার করে বলো।’
‘আমি এর আগে আরো তিনটি একাকী মিশনে মহাশূন্যে এসেছি। প্রত্যেকবারেই আমি দেখেছি যে এইরকম সময়ে মানুষ বড় আনন্দিত থাকে, তারা কারণে-অকারণে হাসে, গান গেয়ে ওঠে। কিন্তু গত ক’দিনে আমি তোমার ভিতরে সেরকম কোন আচরণ দেখিনি। বরং তোমাকে আরো বিমর্ষ মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন দুদিন পর তোমাকে জেলখানায় পাঠানো হবে।’
‘আমি ঠিকই আছি। আমার কোন সমস্যা নেই।’
‘না-তুমি ঠিক নেই। তুমি যখন ঘুমোচ্ছিলে, তখন আমি তোমার ব্রেইন স্ক্যান করেছি।’
‘আমি এই মিশনের অধিনায়ক। তোমাকে আমার ব্রেইন স্ক্যান করার অনুমতি কে দিল?’
‘আমার দায়িত্ব হচ্ছে তোমার ভালমন্দের দিকে খেয়াল রাখা। সে কারণেই আমার আলাদা কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
‘ফিরে গিয়ে আমি তোমার নামে কমপ্লেইন ফাইল করবো।’
‘তোমার ইচ্ছে হলে করবে। কিন্তু যা বলতে চাচ্ছি তা হোল যে ব্রেইন স্ক্যানের রেজাল্ট অনুযায়ী তুমি সিরিয়াসলি ডিপ্রেসড্। তোমার নিউরো-ট্র্যান্সমিটার লেভেল এত উলটোপালটা যে কোন ডাক্তার তোমাকে সুইসাইডাল ম্যানিয়্যাক ছাড়া আর কিছু ভাববে না।’
‘তুমি কি তোমার আসল কথাটি বলবে এবার? আমাকে কয়েকটা কাজ সারতে হবে।’
‘তোমার স্কেজিউলটি আমি দেখেছি। আগামী পয়তাল্লিশ মিনিট তোমাকে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। পরেও করা যাবে। এ কারণেই তোমার সাথে কথাবলার জন্যে আমিই এই সময়টিকে বেছে নিয়েছি। তুমি আমাকে হয়তো ভুল বুঝছো। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি একটু আগেই বলেছো যে আমরা দুজন একে অন্যের বন্ধু হতে পারি। আমি তোমার বন্ধু হিসেবে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, ইজ এভরিথিং অলরাইট?’
উত্তরটির জন্য এক্সটি-থ্রিনাইন ঠিক তিরিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করলো, তারপর সে আবার প্রশ্নটি করলো,‘ইজ এভরিথিং অলরাইট?’
‘আমি পৃথিবীতে ফিরতে চাইনা এক্সটি।’
‘তুমি কি কাঁদছো? তোমার গলার স্বরটি কেমন যেন ভেজা ভেজা লাগছে।’
‘হ্যাঁ এক্সটি, আমি কাঁদছি।’
‘কি হয়েছে আমাকে বলো। আমি হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।’
‘তুমি আমাকে কি সাহায্য করবে? তুমি জটিল ক্যালকুলেশন করতে পারো তুমি নিখুঁতভাবে আমাদের স্পেসশিপটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারো, কিন্তু তুমি তো একটি কম্পিউটর তুমি তো মানুষ নও। তুমি আমার অনুভূতিকে কি ভাবে বুঝবে?’
প্রশ্নটির জবাবে ইন্টারকমে একটি ঘরঘর যান্ত্রিক শোনা যায়।
‘এক্সটি-তুমি কি আমার কথা শুনে হাসছো?’
‘কল্পনা-তুমিই তো একটু আগে বললে যে আমি শুধু একটি দ্রুত গণনা করতে পারা কম্পিউটর মাত্র। একমাত্র মানুষেরাই শুধু হাসতে জানে।’
‘ও বাবা-এখন তো তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে যে তুমি শুধু হাসতেই পারোনা, তোমার আবার রাগও আছে। নাকি এটা অভিমান?’
‘আমরা কিন্তু আমাদের মূল প্রসংগ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমি তোমার সাথে তোমার বর্তমান মানসিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইছি। তুমি একটু আগে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলে।’
‘হ্যাঁ-আমি কেঁদেছিলাম। তাতে কি হয়েছে? তুমি কি এখন বলবে যে আমি আর এই স্পেসশিপ পরিচালনা করার মতো মানসিক অবস্থায় নেই।’
‘না-আমি ওসবের কিছুই বলবো না। আমি শুধু তোমার মন খারাপের কারণটি কি তা জানতে চেয়েছিলাম।’
‘তুমি জেনে কি করবে? আমার সাইকোলজি অ্যানালিসিস করবে?’
‘কল্পনা-আমি তোমার বন্ধু। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।’
‘আমি পৃথিবীতে ফিরতে চাইনা।’
‘কেন?’
‘ওখানে আমার জন্য কিচ্ছু নেই।’
‘কেন তোমার স্বামী? অ্যাঞ্জেল এর মতো ফুটফুটে তোমার মেয়েটি? ওরা নিশ্চয়ই তোমার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।’
এই প্রশ্নটির জবাব সাথেসাথেই আসেনা। শুধু আসে একটি দীর্ঘশ্বাস। এক্সটি ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করে। মানুষেরা খুব কাছের জন ছাড়া তাদের দুঃখের কথা বলেনা।
‘মাইকেল, মানে আমার স্বামী, আমাকে আর ভালবাসেনা। তার ধারণা আমি একটি স্বার্থপর মানুষ, আমি শুধু আমার কাজ নিয়েই সবসময় ডুবে থাকি। দুঃখের কথা হচ্ছে এই যে মাইকেলের কথাগুলো একদম মিথ্যে না। সত্যিই তো, আমি দিনের পর দিন স্পেসসেন্টারে ট্রেনিং নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি। কোন কোন সময় সপ্তাহে একবারও খোঁজ নেইনি ওদের।’
‘এসব মাইকেলের রাগের কথা। তুমি ফিরে গেলে সে তোমাকে দেখে খুশিই হবে।’
‘নাহ-আমাদের অনেক দেরী হয়ে গেছে এক্সটি। এবার মহাকাশে আসবার আগে মাইকেল বলেছে যে সে চাকরী নিয়ে বাহরাইন চলে যাচ্ছে, এবং সে সাথে করে মেয়েটিকেও নিয়ে যাচ্ছে। আমার মতো মা নাকি মেয়েটি ডিজার্ভ করে না।’
‘তুমি কি মাইকেলের সাথে কথা বলতে চাও? আমি তাহলে আমাদের ডাটাবেজ খুঁজে তাকে বের করি।’
‘তার সাথে আমি কি কথা বলবো? মাইকেল পেশায় একজন স্কুলের আর্ট টীচার। তার সাথে কথা বলে আমি আরাম পাইনা। সে কোনদিন বুঝবেনা এই ছোট্ট ঘরটিতে বসে মহাকাশ দেখার আনন্দ কি অপরিসীম। এখানে বসে আমি আমার সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারি।’
‘না আসলে তা তুমি পারোনা। একসময় তোমাকে একাকীত্বের দানব এসে গ্রাস করবে।’
‘আমি তো একা নই। আমার সাথে তুমি আছ। এই যে আমি তোমার সাথে বসে বন্ধুর মতো কথা বলছি, এর দশ ভাগের এক ভাগ কথাও আমি কোনদিন মাইকেলের সাথে বলিনি।’
মন্তব্য
আমারও হঠাৎ একটা সায়েন্স ফিকশন লিখতে ইচ্ছে হোল। লিখলাম, কিন্তু সেটি সায়েন্স ফিকশন হোল, নাকি অন্য কিছু হোল, তা জানিনে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
পরের পর্বে যাই।
শুধু একটা কথা- "বাহরাইন" - সায়েন্স ফিকশনে এরকম নাম একটু কেমন যেন লাগল।
কি করবো, আর কোন নাম খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
‘কেন তোমার স্বামী? অ্যাঞ্জেল এর ফুটফুটে তোমার মেয়েটি? ওরা নিশ্চয়ই তোমার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।’
হুমম আছে, আমি না গেলে বাসার কাজ গুছাবে কে? মেয়ে ড্রইং পেন্সিল খুজে পায় না, বাপ মুজা খুজে পাচ্ছে না .....................
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
- এই পর্যন্ত পড়ে ভালো লাগলো, যাই পরের পর্ব পড়ি গিয়ে...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন