রাত্তিরবেলা দরোজা খোলা থাকে; বৃষ্টি হলে, সামনের পুকুরটায় কেমন জল হয়, অন্ধকারে দেখা যায়না; যেখানে কাপড় শুকোতে দেয়া হয়, সে জায়গাটা ভিজে যায়, কিছু কাপড় সেখানে সারারাত ভেজে ... মশারির ভেতর, বিছানায় শুয়ে, হঠাত চোখ খুললে দেখি - দূরের কোনো হল্দে বাতি, চোখে লাগে, দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলি, আবারো কখনো চোখ খুলে যায়, কখন - মনে থাকে না ... ওয়ারড্রোবের পাশে হেলানো ঝাড়ুটি শুধু শুধু কিভাবে যেন পড়ে যায়, পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হয়; বাসার কোথাও একটা টিকটিকি ডাকে, কেউ বোধহয় এখন মিথ্যে বলছে ... রাস্তায় অনেক বাতি অকারণে জ্বলে, বেশিরভাগই হলুদ, কিছু বাড়ির জানালায় আলো থাকে, আঁধখানা ফ্যান ঘুরতে দেখি সেসবের কোনো কোনোটাতে, ক্লান্ত-ক্লান্ত ভঙ্গীতে ... সারাদিন ঘুমুবার পর একটা শিশু কোথায় জানি জেগে ওঠে, ঘুমভাঙার কান্না শুনি, ... ট্রাফিকপুলিশের দাঁড়ানোর জায়গাটা, কি যেন বলে ওটাকে, কি যেন ... সেখানে অঘোরে ঘুমায় কেউ, কোথাও কোথাও ভিখিরিরা জেগে থাকে, চুপচাপ, এখনো দু-একজন পথচারী দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে, কয়েক পাড়ার দারোয়ান হুশিয়ারি দিতে দিতে একসাথে হয়, কিন্তু এদের থেকে কিছু চাওয়া যায় না, এখন ভিক্ষে করতে নেই, ... মাঝে মাঝেই নৈশরিকশাওয়ালাদের উপস্থিতি টের পাই, সরকারি টহলদাররা রাতের দোকান হতে কিনে নেয় বিড়ি, বা সিগ্রেট, সারারাত খোলা থাকা কোনো মুদির দোকানে তারা গল্প করতে থাকে, একসময় গল্প শেষ হয়ে যায়, ঝিমুনো কোনো কথা-বলা ফের শুরু হয় এরপর, ... ফুটপাতকে বাড়ি করে ফেলা কোনো শিশুর অবোধ কান্না, কুকুরের আচমকা ডাক, আকাশে শাদা মেঘ দেখি, অনেক বাড়ির সামনে কেউ কেউ বসে থাকে, বোধহয় দারোয়ান, হাত দুটো মুখের কাছে এনে ঝিমোয়, বা চেয়ে থাকে ... হঠাত, সমুদ্রের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয় খুব, না, নদী, নাফ নদী, কিন্তু সেতো বহুদূর ...
ঘুমওতো একধরণের বেঁচে থাকা; পথগুলোয় কত কিছু পড়ে থাকে, ছোট কাগজের টুকরো, পাতলা কাঠি, দেয়ালের পোস্টার, ধুলো, নোংরা নালায় পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ হয়, কোথাও মৃদুভাবে হাছন রাজা বাজে, কে শোনে এখন? ঐ শিশুটি বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে, উৎকর্ণ হলাম - কোনো আওয়াজ নেই, পুকুরের জলে একটা মাছ লাফিয়ে ওঠে, হঠাত মনে হয় - আজ কি জোছ্না? বাইরে এই শীতে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না, কতো জোছনাই তো দেখলাম, তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি দেখা হলো না, দেখা হবে না, হালকা আলসেমি হয়, আমি শুয়ে থাকি, জোছ্নার কথা জানা হয়না আর, ... আমি আবারও পাশ ফিরি, খাটটা শব্দ করে ওঠে, স্যারের কথা মনে পড়ে, স্যারের ছেলে মারা গিয়েছিল, একমাত্র ছেলে, কেমন আছেন তিনি, ছেলেটিকে কোনোদিন দেখিনি... আমার এখনো সেরকম কেউ মারা যায়নি, দাদা-দাদী, বড়আব্বা, দুজন বন্ধু, বাসার পুরনো কাজের ছেলেটি, এই, আর কেউ না, তাছাড়া, ... ওঃ, আমারও একটি আপন বোন মারা গিয়েছিল, কতদিন হয়ে গেছে, কখনো মনে পড়ে না, হাসি পেয়ে যায়, নিজের বোনের কথা-ই ভুলে বসে আছি; চোখদুটো নিজে নিজে খুলে যায় আবার, বারান্দার দড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে সেই দূর হল্দে আলোটি চোখে লাগে, আমি চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করতে থাকি...
মন্তব্য
যখন এইটা লিখসিলাম, কারুরে উতসর্গ করার সাধ ছিলো;
সেই সাধটাকে পুরাই অর্থহীন মনে হচ্ছে এখন... পুরাই...
একটা বিশাল ম্যন্তব্য দিছিলাম, সেন্ড করতে গিয়ে উধাও হয়ে গেল...একটা বাল টাইপ ব্যাপার ঘটলো আর কি...যায় গাঞ্জা বানাতে যায়...এটলিষ্ট আমার অলসতাটা কাটিয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা...কি আর বলবো??...জয়তু নিঃসংগতা না বললেও জিতে সে ঠিকই...
কারো নিজের চিন্তাভাবনার ছায়া দেখলে কার না ভালো লাগে! আপনার মতো আমি লিখে ফেলতে পারিনি।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
তারপরও বলেন, শুনি।
ছায়াটা নিয়ে এসে দাঁড়ান।
kobe tui shushtho hobi?
নতুন মন্তব্য করুন