জাতীয় শিক্ষানীতির প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতির (চুড়ান্ত খসড়া) প্রতিবেদন। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষানীতির এই প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনের উপরে মতামত আশা করছে সরকার।
শিক্ষানীতির এই খসড়া প্রতিবেদনটি মোট ২৮ টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। আলোচনায় এবং নীতিতে যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত নানাদিক। এই শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং সমাজের এক ধরনের অংশগ্রহণের দিক রয়েছে। তবে এই লেখার মূল জায়গা ভিন্ন। আর তা হলো এই শিক্ষানীতির লিঙ্গীয় দিকটি খতিয়ে দেখা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, এই খসড়াতে নারী শিক্ষা ( অধ্যায় ১৭) আলাদাভাবে স্থান পেয়েছে। এই বিষয়ে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও। নারী শিক্ষা অধ্যায় ছাড়াও অন্য বেশ কিছূ অধ্যায়তেও যোগ হয়েছে নারী শিক্ষা কেন্দ্রিক বেশ কিছূ ধারা। যেমন, অধ্যায় ২ ( প্রাক প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নং ধারায় দেয়া হয়েছে ‘মেয়ে শিশুদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অধিক, তাই এই সকল শিশু যাতে ঝরে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন বিদ্যালয়ে কোনোভাবে উত্যক্ত না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে’। এর কাছাকাছি আরেকটি ধারার উল্লেখ রয়েছে নারী শিক্ষা ( অধ্যায় ১৭) এর ২ নং অুনচ্ছেদে-‘ ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ঝরে পড়া ছাত্রীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদেরকে এভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবেনা তাদেরকে বিভিনড়ব বৃত্তিমূলক কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে’।
এই ক্ষেত্রে যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়গুলো থেকে ছেলে এবং মেয়েদের ঝরে পড়ার কারন. ধরন এবং সংখ্যা কোনটিই এক নয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল এবং মাধ্যমিক স্কুল থেকে মেয়ে শিশু ঝরে পড়ার কারনও অনেকাংশেই ভিন্ন। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া কমানোর জন্য ছেলে শিক্ষার্থীর মতো শুধূ বৃত্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবেনা। তাই একে পৃথকভাবে দেখা একান্তভাবেই প্রয়োজন।
অধ্যায় ২ (প্রাক প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নং ধারাটির দ্বিতীয় ভাগে যুক্ত হওয়া অংশটি ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ যেখানে গবষেণা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল ছাড়ে বখাটেদের উৎপাতে। শুধু তাই নয়, মেয়ে শিক্ষার্থী এবং নারী শিক্ষক উভয়কেই যেন উত্যক্ত করতে না পারে সেই বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করবে সেই বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই।
নারী শিক্ষা অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাজেটে নারীশিক্ষা খাতে নির্দিষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে এবং বেসরকারি উদ্যোগ ও অর্থায়নকে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ কিন্তু নারী শিক্ষার জন্য নির্দিষ্টভাবে অর্থনৈতিক সহায়তার কথা বলা হলেও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপের ধরনের কথা বলা হয়নি।
বলা হয় যে সামাজিক নির্মানের পাশাপাশি একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে সামাজিক লিঙ্গীয় ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে পাঠ্যপুস্তক থেকে। বিশেষ করে অংকের মতো বিষয়ে যেখানে উল্লেখ থাকে, ‘একজন পুরুষ সমান দুইজন নারী’র মতো হিসেবের বাহানা। এই বিষয়ে যদিও একটি ধারা আছে , ‘প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঠ্যসূচিতে যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর ইতিবাচক ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি ও সমান অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে এবং ইতিবাচক দিকগুলো পাঠ্যসূচিতে আনতে হবে, যাতে নারীর প্রতি সামাজিক আচরণের পরিবর্তন হয়।’ ( ধারা ৫, নারী শিক্ষা, অধ্যায় ১৭)। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যদি বইতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ছবি ( যেখানে নারী পুরুষকে সমানভাবে উপস্থাপণ করা হবে), উদাহরন এবং ভাষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া জন্য শিক্ষা নীতিতে একটি ধারা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এই অধ্যায়ের ৬ নং ধারাটিও আলোচনার দাবী রাখে যেখানে বলা হয়েছে ‘ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে আরও অধিক সংখ্যক মহীয়সী নারীর জীবনী ও নারীদের রচিত লেখা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।’ সেক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন এটি যেন ধর্মীয়, জাতিগত কিংবা শ্রেনী নিরপেক্ষ হয়, কেননা বাংলাদেশে সকল ধর্ম, বহু জাতি এবং একাধিক শ্রেনীর শিক্ষার্থী বিরাজমান।
এই অধ্যায়ের ৭ এবং ৮ নং ধারা অত্যন্ত প্রশংসনীয় দুইটি ধারা যেখান উল্লেখ করা হয়েছে , মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে "জেন্ডার স্টাডিজ" এবং প্রজনন-স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে বিষয় নির্বাচনে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সকলের পুরো স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং সকল বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়েদের কোন বিশেষ বিষয়ের দিকে (যেমন গার্হস্থ্য অর্থনীতি) উৎসাহিত করা বা ঠেলে দেয়া যাবে না।
এই অধ্যায়ে আরও বেশ কিছু ইতিবাচক অনুচ্ছেদ রয়েছে, যার মধ্যে দুষ্টি দেয়া হয়েছে ছাত্রীদের যাতায়ত ও বাসস্থানের সুবিধা, বিজ্ঞান ও পেশা দারি শিক্ষার সুবিধা , স্বল্প সুদে ব্যাংশ ঋণের ব্যবস্থাসহ নীতি নির্ধারনী ও সিদাধন্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীদর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রনীত যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন সংক্রান্ত প্রনীত বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরন করার জন্য নির্দেশ।
তবে এই নারী শিক্ষার কোথাও খেলাধুলার প্রসঙ্গ নেই। তার মানে হলো নারী শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলার কোন সম্পর্ক নেই। এই শিক্ষানীতির ১৯ নং অ্যধায়ে রাখা হয়েছে ক্রীড়াশিক্ষা। সেখানেও নারীর খেলাধূলার কোন বিষয় নেই। এর বাইরে আরেকটি অধ্যায় রাখা হয়েছে ‘বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্লস গাইড এবং ব্রতচারী’ নামে ( অধ্যায় ১৮)। এখানে মেয়ে এবং ছেলেদের জন্য শুধূ একটি ধারা আছে সেটি হলো ‘শরীর চর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষা দিতে হবে’ (অনুচ্ছেদ ২)। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা কিছুতেই এক নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্কুল মাঠে শুধূ ছেলে শিক্ষার্থীরাই খেলে। খেলাধুলার বিষয়টি অনেকাংশেই লিঙ্গীয় পক্ষপাতমূলক। স্কুল পর্যায়ে লিঙ্গ নিরপেক্ষ খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। যাতে মেয়ে এবং ছেলে উভয়ই খেলাধূলা করার সুযোগ পায়। কারন শারীরিক সুস্থতা সকলেরই প্রয়োজন। শিক্ষানীতিতে নারীদের খেলাধূলার প্রতি জোর দেয়া দরকার।
খসড়া শিক্ষা নীতিতে শিক্ষার বিষয় নারীর স্বাধীনতা নির্বাচনের ঘোষণা থাকলেও ম্যাধমিক পর্যায়ে কিছূ বিষয় ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য বাধ্যতামূলক থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাধারন আইন (যাতে আইন সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা জন্মে, রাষ্ট্রীয় অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে) কুষি, ব্যবসা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ কিছূ বিষয়।
অনেক বিষয় এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের স্থান দিলেও সবচেয়ে যে বিষয়টি এই শিক্ষানীতিতে বাদ পড়েছে তা হলো ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা নারী-পুরুষ এর বাইরে যাদের যৌন পরিচিতি রয়েছে (যাদেরকে স্থানিক নামে ‘হিজড়া’ বলা হয়) তারা। আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে, বাংলাদেশে এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কোন ধরনের শিক্ষার সযোগ নেই। অথচ ভারত, নেপালসহ অনেক দেশেই রয়েছে এদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ। এবারের শিক্ষানীতিতে এদের শিক্ষার বিষয়টি যোগ হওয়া প্রয়োজন, তাহলে আরও বেশি প্রশংসিত হবে শিক্ষানীতি। বৈষম্যহীন সমাজ গড়াই যে শিক্ষানীতির অন্যতম লক্ষ্য।
zobaidanasreen@জিমেইল.কম
মন্তব্য
গা বাচানো লেখা। আপনার আগের লেখাগুলোর মতো এটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ধন্যবাদ ফীরোজ। এই বিষয়ে গুছিয়ে আরেকটি লেখা তৈরির চেষ্টা করছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে একটা ওয়েবসাইট আছে, সেটাতে যে আবার জনমত আহ্বান করা হয়েছে, তাতেই আমি চমৎকৃত!
আগের প্যারাটা পড়ে তো মনে হলো যে যেসব মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় ফিরিয়ে আনা যাবে না, চেষ্টা করা সত্ত্বেও, তাদের জন্যই ঐ বৃত্তিমূলক ব্যবস্থা। তাই না?
আপনার এই বিশ্লেষণটির সাথে ভীষণভাবে একমত! ৭ এবং ৮ নং অধ্যায়ের প্রস্তাবনা/নীতিগুলোও ভালো লাগলো।
নীতি তো ভালোই, কিন্তু কদ্দূর কী বাস্তবায়িত হবে সেটাই আসল। তারপরও কাগজে কলমে অন্তত যে জেন্ডার রিলেশনের ব্যাপারটা এতো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেটা দেখে ভালো লাগলো। একইভাবে 'নারী/পুরুষ'এর বাইরে আর কোন জেন্ডারের চিন্তা না করাটা হতাশাজনক লাগলো।
সব মিলিয়ে পোস্টটার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, এখনো তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টাকে জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এড়িয়ে যাওয়া হলো ! এ ব্যাপারে কোন ধারা যুক্ত হলে 'হিজড়া বিষয়ক এই পোস্টটাতে' একটা আপডেট দেয়ার আনন্দ পেতাম। আপাতত হতাশাই ঝুলে থাকলো।
লেখাটা ভালো লাগলো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সুন্দর পোস্ট। সমস্যাগুলো জানলাম। সমাধান নিয়ে কিছু বলুন।
জেন্ডার স্টাডিজ আর প্রজনন স্বাস্থ্য নারী শিক্ষা বিষয়ক অধ্যায়ে আলোচিত হওয়াটা কোনভাবেই ইতিবাচক হতে পারে না। কারণ এর মধ্য দিয়ে ইস্যু দুটিকে আরো প্রান্তিক করে ফেলা হয়। তাছাড়া জেন্ডার স্টাডিজ এর মূল প্রতিপাদ্য হল নারী পুরুষ (ক্ষমতার) সম্পর্ক আর প্রজনন স্বাস্ত্য নারী পুরুষ উভয়েরই স্বাস্ত্য সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করে । সুতরাং ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই বিষয় দুটি জানা জরুরী। কাজেই ইস্যু দুটি সাধারণ কোন অধ্যায়ে আলোচিত হলে ইতিবাচক হতে পারত।
মনে হচ্ছেগার্হস্থ্য অর্থনীতি্র মত জেন্ডার স্টাডিজ আর প্রজনন স্বাস্থ্যকেও এই শিক্ষা নীতি শুধু নারীদের বিষয় বলেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কাউকে লিঙ্গভেদে বাড়তি সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতী না। কোটা সিস্টেমের মতো এই জিনিসটাও হয়তো স্বল্প পরিসরে স্বল্প সময়ের জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে; কিন্তু বৃহত পরিসরে বা দীর্ঘমেয়াদে এটাও এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী উদ্যোগ।
আমাদের দেশে যা আছে তা হলো সামাজিক বা অর্থনৈতিক বা রাষ্ট্র পরিচালনার সমস্যা। একটা মেয়ে শিশু স্কুলে গেলে যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তার জন্য আলাদা করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে কেন? হয়রানির সাথে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো আলাদা মাহাত্ম নেই। স্কুলের বাইরে হয়রানিও শাস্তির, স্কুলের ভেতরে হয়রানিও শাস্তির। আর স্কুলে হয়রানির বিষয়টা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে হয়। অনেক ছেলে শিশুও দেখা যায় সহপাঠীর মাস্তানির ভয়ে স্কুলবিমুখ হয়ে পড়েছে।
অনেক মেয়ে শিশু তাড়াতাড়ি স্কুল ছাড়ে। এর একটা প্রধান কারণ (যা এই পোস্টে থাকা উচিত ছিলো; কিন্তু নেই) বাল্যবিবাহ। এটা মূলত একটা সামাজিক সমস্যা। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি বা আইনের যথাযথ প্রয়োগ (১৮র নিচে বিয়ে বন্ধ) করে এর সমাধান করতে হবে। মেয়েদেরকে আলাদা বৃত্তি দেয়ায় অনেকেই স্কুলে যাওয়ার নাম নেই; কিন্তু ক্লাসের খাতায় নাম তুলেই খালাস। এবার লিঙ্গভেদে এর বিপরীত সিনারিও লক্ষ্য করেন। অনেক ছেলে শিশুও স্কুল ছাড়ে। একটি ছেলে শিশু স্কুল ছাড়ে কেন? প্রধান কারণ, উপার্জনে নিযুক্ত হওয়া। এই শিশুটি হয়তো আর্থিক সুবিধা পেলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারতো; কিন্তু মেয়ে না হওয়ায় সে বঞ্চিত হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের যে সমস্যার কথা বললেন, শিক্ষাকে লিঙ্গভেদে ভাগ না করলে ওই সমস্যার উদ্ভবই হয় না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীকে যদি অবলা হিসেবে দেখা হয়, যার জন্য তার বাড়তি সুযোগ প্রয়োজন, তাহলে একই প্রেক্ষাপটে পুরুষের উপার্জনটা প্রাধান্য পাবে। এবং উপার্জনের ফর্মূলায় শিক্ষাটাও দেখা যাবে পুরুষেরই বেশি প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি সুস্থ অবস্থার পরিচায়ক না। স্বল্পমেয়াদে যদিও মনে হবে, নারীদেরকে শিক্ষায় অফুরন্ত বাড়তি সুযোগ দিয়ে তাদেরকে টেনে তুললেই ঝামেলা শেষ, আসলে তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এতে অনেক সামাজিক সমস্যাও সৃষ্টি হবে। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে কম যোগ্যতার পুরুষকে বিয়ে করা নারী এই দেশে এখনও সুলভ নয়।
আমার মতে, শিক্ষানীতি লিঙ্গনির্ভর না হয়ে মেধানির্ভর হওয়া উচিত। দেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে মেধার সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত শিক্ষানীতির প্রধান লক্ষ্য। এখন প্রশ্ন চলে আসবে, অমেধাবীদের তাহলে কি হবে? এর জবাবে প্রথমেই বলি, শিশুদের মধ্যে অমেধাবী বলে কিছু নেই। কেউ অঙ্কে ভালো; কেউ ভাষা শিক্ষায়; কেউ খেলাধুলায়, কেউ আঁকায়। প্রত্যেকেই আসলে মেধাবী। এই মেধার যথাযথ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাই শেষবিচারে লাভজনক। শিক্ষানীতি শিক্ষার্থিদেরকে তাদের মেধা চিনতে সাহায্য করুক, সেই মেধাকে যোগ্যতায় রূপান্তরের কাজটি করুক শিক্ষা এবং সেই যোগ্যতাটি যেন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তার হিসাবটা করুক দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারীরা।
লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী যে কোনো সিদ্ধান্তই কারো জন্য আরামে পা তোলার ব্যাপার হলেও অন্য অনেকের জন্য হতাশার ব্যাপার হতে পারে। হতাশ জনগোষ্ঠী থেকে উত্তোরণের ব্যাপারটি একদিনে সম্ভব না, দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ৫০ বছর পরে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে - এই বাক্যে বিশ্বাস না করলে আমাদের পরিকল্পনা হোক বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতকেও মাথায় রেখে, বর্তমানের কোনো অ্যাডহক পরিকল্পনা যেন ভবিষ্যতের মাথায় বাড়ি না মারে, সেটা দেখা খুবই প্রয়োজন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অছ্যুৎ বলাইয়ের মন্তব্যে
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
অছ্যুৎ বলাই, জোবাইদা নাসরীন আপনার মন্তব্যের জবাবে কী বলবেন জানি না, কিন্তু এই বিষয়ে যেহেতু আমারও নিজস্ব কিছু মতামত আছে, আমি কয়েকটা কথা বলছি।
এই যে 'সামাজিক' সমস্যার কথা বললেন, "লিঙ্গভেদে বাড়তি সুযোগ" দেয়ার ব্যাপারটা এসেছেই তো সেই কারণে। অবশ্যই, আমাদের সমাজে শুধু লিঙ্গবৈষম্য দূর করলেই সব সামাজিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না, সেটা তো কেউই আশাও করছে না বা বলছেও না। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের কারণে যেহেতু বড় কিছু সামাজিক সমস্যা থেকেই যায়/যাচ্ছে, এই বিষয়টাকে তাই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে এপ্রোচ করা দরকার বলে কি আপনি মনে করেন না?
আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন - ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে স্কুলে হয়রানির শিকার হওয়া, মেয়েদের স্কুলের বাইরে হয়রানির শিকার হওয়া বা বয়স ১৮ বছরের নিচে বিয়ে না হওয়ার আইন করা - আছে তো সেসব নিয়ে আইন। এবং সেখানেই আসে আপনার রাষ্ট্র পরিচালনার সমস্যার কথাটা। আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ অতি অল্প, এমনকি আইনের দ্বারস্থ হওয়ার হারও (কোন পরিসংখ্যান জানি না, বাংলাদেশে বড় হওয়ার কারণে আর পত্র পত্রিকা ত্থেকে এই ধারণা) অল্প, এবং তার কারণও আবার ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছে সামাজিক সমস্যার দিকে। সামাজিক সচেতনতা বাড়াবার যে উদ্যোগ নিতে বলছেন, সেটার জন্যই তো 'আলাদা' করে মেয়েদের কথা বা জেন্ডার রিলেশনের কথা বলা।
কোটা সিস্টেম আমিও মনে করি এক অর্থে একটা এক্সক্লুসশনারি প্রসেস। ঠিক। কিন্তু সেটা পুরো ঘটনাটা যখন একটা ফেয়ার প্লেয়িং লেভেল থেকে দেখা যায়, তখন বলা যায়। এখন তো সেই 'ফেয়ার' প্লেয়িং লেভেলই নেই, কারণ সামাজিক সচেতনতাই হোক, কিংবা অর্থনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় সমস্যার কারণেই হোক - মেয়েরা তো অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের কারণেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাহলে, লিঙ্গভিত্তিক সমস্যাটাকে দূর করা বা করার চেষ্টা না করে সামগ্রিকভাবে একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যাবেই বা কীভাবে, আরে গেলেও বা লাভ কতটুকু হবে?
যে মেধাভিত্তিক সুযোগ বা শিক্ষাদানের কথা আপনি বলছেন, সেই মেধা কোন বাচ্চাটার কতটুকু আছে সেটাই তো ঠিকমতো নির্ধারিত হতে পারে না, কারণ আর্থ-সামাজিক শ্রেণী, লৈঙ্গিক-পরিচয় এবং এরকম আরো নানাকিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সব বাচ্চারা একই 'প্লেয়িং লেভেল' থেকে শুরু করতে পারে না, তাদের মেধার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না।
'জেন্ডার' তো কোন বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। আপনি যে যে পয়েন্টগুলো বললেন তার যে কোন একটাকে পাকড়াও করতে গেলেই তো সমাজ সচেতনতা তথা জেন্ডার রিলেশন নিয়ে সচেতনতা তথা 'মেয়ে' বা 'ছেলে' হবার কারণে সমাজ আমাদের কাছ থেকে কী আশা করে বা সমাজ আমাদের কাকে কতখানি সুযোগ দিতে সম্মত হয়, সে ব্যাপারটা আসবেই।
স্নিগ্ধাপু,
আপনার মন্তব্যের কথাগুলো আমি মন্তব্য লেখার সময়ই কমবেশি ভেবেছি। আপনি যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলেন, সেগুলোকে আমার কাছে সারফেসের সমস্যা মনে হয়েছে। স্বল্পমেয়াদী সমাধান বলতে আমি মূলত এই বিষয়টাকেই বুঝাতে চেয়েছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আমি সমস্যার মূলে যেতে চাই।
সারফেসের সমস্যা কেন মনে হলো বলি। কোনো আইন বা পরিকল্পনা যদি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে তা অর্থবহ হয় না। যেমন, হয়রানি জিনিসটা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হয়তো পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, মেয়েরা হয়রানির শিকার বেশি হয়। কিন্তু সেজন্য ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা আইন বানিয়ে সেটার বিচার করলে সেটা কি ফেয়ার হবে? একটা মেয়েকে এসিড মারলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, অন্যদিকে একটা ছেলেকে এসিড মারলে ভিকটিম ছেলে বলে ৩ বছরের জেল, এরকম আইন কি আপনার কাছে ফেয়ার মনে হয়? এরকম আইন কয়েকটা কেস স্টাডিতে (সারফেস) অ্যাপ্লাই করা গেলেও কি শেষতক (দীর্ঘমেয়াদ)জেন্ডারবেসিসে বৈষম্য সৃষ্টি করে না?
আমি যেটা চাই, তাহলো জেন্ডার বৈষম্য থাকলে তা কমাতে। বৈষম্যের সমাধান বৈষম্য দূর করা; কিন্তু আবার বৈষম্য সৃষ্টি করে, এরকম কোনো সমাধান কখনো কাম্য নয়। মেয়েদের লিঙ্গভেদে বৈষম্যের একটা উদাহরণ আমিই দেই। মনে করেন, একটা অফিসের বড়কর্তার আলুর দোষ আছে, অধীনস্ত সুন্দরী মেয়েটির প্রতি তার আচরণ সন্তোষজনক নয়। কিন্তু একই আলুর দোষের প্রভাবে সে সুন্দরী মেয়েটির বেতন তার ছেলে সহকর্মীর চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এখানে যেটা নিশ্চিত করা দরকার, তাহলো 'যোগ্যতা'র গুণে বেতন, সেটা ছেলে কর্মী হোক আর মেয়ে। লিঙ্গভেদে আলাদা নীতি করে মেয়েটিকে বাড়তি সুবিধা দিলে ছেলেটির কাজের অবমাননা করা হয় না?
আরেকটা বাজে উদাহরণ দেই। মনে করেন, একটা ছাগোলের তিনটা বাচ্চা আছে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে, একটা উভলিঙ্গ। এখন একটা বাচ্চা সাময়িক অসুস্থ হলে তার জন্য স্বল্পমেয়াদে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া হয়; কিন্তু সুস্থাবস্থায় (দীর্ঘমেয়াদে) লিঙ্গ নির্বিশেষে তিনটা বাচ্চার প্রতিই সমান যত্ন নেয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীশিক্ষা যেমন প্রয়োজন, পুরুষ শিক্ষাও সমানভাবে প্রয়োজন। নারীশিক্ষার ওপর বাড়তি জোর দিয়ে সব মেয়েকে শিক্ষিত করে ফেললাম, অন্যদিকে সুযোগবঞ্চিত বিরাটসংখ্যক ছেলে শিশু বখাটে হয়ে গেলো, অপরাধে জড়িয়ে পড়লো; এতে শেষতক লাভের ঘরে কি রইলো?
বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন মেয়েরা এতোটা পিছিয়ে নেই যে, তাদের জন্য স্পেশ্যল নীতিমালা করা খুব দরকার। গত এসএসসিতে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ছাত্রের বিপরীতে ছাত্রী ছিলো ৩ লাখ ৬৪ হাজার। সুতরাং এখানে আকাশপাতাল বৈষম্য নেই যে, মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য স্পেশ্যল ট্রিটমেন্ট দরকার।
আমাদের যেটা দরকার, তাহলো ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সমাজের যথাযথ অ্যাটিটিউড তৈরি করা, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা। তা না করে আমরা যদি ছেলেদের জন্য এক রেসিপি, মেয়েদের জন্য আলাদা রেসিপি - এভাবে একমুখী সমস্যাকে দ্বিমুখী রূপ দেই, সেটা শেষবিচারে সুফল বয়ে আনবে না বলে আমার অভিমত।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার পর্যবেক্ষণগুলো খুবই প্রয়োজনীয়।
আশা করা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আপনার পরামর্শগুলো বিবেচনায় নেবে।
শিক্ষা নীতিটি পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। পরে নানান জনের নানান লেখা পড়ে এর কিছু কিছু ত্রুটি সম্পর্কেও অবহিত হচ্ছি। এই যেমন তৃতীয় লিঙ্গদের শিক্ষানীতির আওতায় না আনার ব্যাপারটি।
আপনার বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে।
মহসীন রেজা
অ.
জোবায়দা নাসরীন এই লেখায় নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি। বোধহয় তাড়াহুড়া ছিলো। তবে না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভালো। শিক্ষানীতিটাকে জেন্ডার পরিপ্রেক্ষিতে দেখার কাজটা এবার খুব কম হয়েছে- এটা এখানে দেখলাম, আর আরেকটা দেখলাম স্টেপস-এর।
আ.
শিক্ষানীতির যে ধারায় মেয়েদের ঝরে পড়ার হার অধিক বলা হয়েছে, সেটা আসলে কোন উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তবে বাস্তবতা হলো, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ছেলেদের চেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি, ঝরে পড়ার হার, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্ত করার হার ইত্যাদি দিক দিয়ে মেয়েদের অবস্থা অনেক ভালো। বরং গুণগত শিক্ষার কথা বিবেচনা করলে ছেলেরা এখনও মেয়েদের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে। সর্বশেষ এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
ই.
বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা উত্যক্ত হয় না। উত্যক্ত হয় বিদ্যালয়ে আসার পথে। এটা পরিষ্কারভাবে আইনের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষানীতি এখানে কী করবে? এই বিষয়ে শিক্ষানীতির কাছ থেকে কী চাওয়া হচ্ছে সেটা পরিষ্কার না। আর এ ধরনের বিষয়গুলোর নির্দেশনা কোন কারণে শিক্ষানীতিতে থাকবে তাও পরিষ্কার নয়। শিক্ষানীতি যদি এ ধরনের সবকিছু নিয়ে ডিল করতে শুরু করে তাহলে তো মুশকিল!
ঈ.
বিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার কমেছে যা আগেই বলেছি। কিন্তু ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। সুতরাং শিক্ষানীতিতে আলাদা করে মেয়েদেরটাই কেন গুরুত্ব দিতে হবে তা বোধগম্য নয়। আমরা কি নারী শিক্ষা বা মেয়ে শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে দিন দিন টাইপো হয়ে যাচ্ছি? বলাইদার সাথে একমত যে, অনেক বিষয়কে এখন থেকে আসলে জেন্ডার পার্সপেক্টিভ থেকে নারীকে আলাদা করে না দেখাই উচিত।
উ.
কারিকুলাম জেন্ডার-সেনসেটিভ করার কথা শিক্ষানীতিতে বলা আছে। খেলাধুলার বিষয়টিও আছে। এখন যেটি নেই সেটি হলো- আলাদা করে সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে হবে জাতীয় কথাবার্তা বলা। প্রতিটা চ্যাপ্টারের প্রতিটা ধারায়ই যদি এভাবে বলা হয়, তাহলে শিক্ষানীতি কেন? এগুলো তো নারীনীতির পার্ট হওয়া উচিত!
ঊ.
এই শিক্ষানীতিতে অনেক কিছুই নেই- যেগুলো আসলে জোবাইদা নাসরীনের লেখায় আসা উচিত ছিলো। যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ কম, এসএমসিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী উপেক্ষিত কিংবা শিক্ষক নিয়োগে দক্ষ ও যোগ্য নারীর প্রাধান্য দেওয়া। এগুলো ছাড়াছাড়াভাবে এলেও সার্বিকভাবে শিক্ষা সেক্টরে নারী নেতৃত্বের কোনো আলামত পাওয়া যায় না- যদিও এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ নারী রয়েছে সারা দেশে। জোবাইদা নাসরীনের লেখায় এগুলো আসা খুবই দরকার ছিলো।
তারপরও লেখার জন্য ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন