।। পর্ব -১ ।। পর্ব - ২ ।। পর্ব - ৩ ।। পর্ব -৪ ।। পর্ব -৫ ।। পর্ব -৬ ।। পর্ব -৭ ।। পর্ব -৮ ।। পর্ব -৯ ।।
১২.
বাইরে তখন শো শো শব্দে তুমুল তুষার ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে । মুহুর্মুহু দমকা হাওয়ার ঝাপটা এসে নুইয়ে দিচ্ছে পাতাবিহীন গাছগুলোকে । কোন রকমে একটা ঝাপটা সামলে উঠে দাঁড়ানোর আগেই আরেক ঝাপটা এসে আঘাত করছে । কাঁচের জানালায় বিন্দু বিন্দু তুষারকণারা জমে জমে আবছা করে দিচ্ছে । বাড়ী আর গাড়ীর ছাদের জমে যাচ্ছে পুরো তুষারের স্তর । ঠিক এই সময়ে যারা গাড়ী চালাচ্ছে তাদের অবস্থা অনেকটা সাইক্লোন আক্রান্ত উপকূলের জেলেদের মত । উথাল পাতাল ঢেউয়ের তালে তালে নৌকা সামলাবে কি করে? ছলাৎ ছলাৎ করে ছুটে আসা ঢেউয়ের ঝাপটা যে দু’চোখের দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দেয়! দমকা হাওয়ার সাথে গাড়ীর উইন্ডস্ক্রিনে আছড়ে পড়া তুষারকণাদের ঝোড়ো ঝাপটা দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে দেয় ।
ডাক্তার চ্যাডউইকের সাথে হলওয়েতে বের হয়ে আসতেই একটি তরুণী নার্স এগিয়ে এল । মাঝারী গড়নের মেয়েটিকে দেখে মনে হয় না বিশের কোঠা পার হয়েছে খুব বেশী দিন । মৃদু ঢেউ খেলানো কালো চুলের ফ্রেমে সাদা কোমল মুখটি দেখতে খুব মায়াবী লাগছে । উজ্বল কালো চোখের কচি দৃষ্টিতে শীতের সকালের নরোম রোদের ছায়া পড়েছে । ডাক্তার ওদেরকে নার্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, “This is Antonella. She will take care of you.” তারপর এন্টোনেলার দিকে হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিল, “Antonella, please put rush on all the tests. I want the tests to be done before Christmas.” এবারে মিতির কাঁধের ওপর আলগোছে হাতটা একটু ছুঁয়ে দিয়ে বলল, “I’ll see you soon, Momota.” বলেই হাঁটতে শুরু করল হলওয়ের উলটো দিকে । একটু লক্ষ্য করে তাকালে বোঝা যায় ডাক্তারের কাঁধদু’টো একটু ঝুলে আছে । এতদিন হয়ে গেল তবুও প্রতি বার নতুন কোন রোগিকে ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস বলার পরেই এমন হয়, শক্ত কাঁধদুটো ঝুলে যায় । ডাক্তার চ্যাডউইক হলওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল, “What was in her eyes when she said…she had a son? How old… she said? Was it …. five years? What will happen to this family tonight? Which song she will sing to her son at the bed time?”…
১৩.
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা মিতির কাছে এগিয়ে এল এন্টোনেলা, “Momota, I will be your nurse here. Anytime you need anything or you have any question, please feel free to ask me. Now, I’ll need some information from you. Would mind to follow me?”
মিতি আর রাফাত নীরবে এন্টোনেলাকে অনুসরন করে আরেকটা রুমে এল । ছোট্ট রুমটা নার্সদের কনসালটেশন রুম । রুমে আরো একজন ডাক্তার ও নার্স দাঁড়িয়ে কথা বলছে । কোন একজন রোগিকে দেখার আগে ডাক্তার নার্সের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে তার সবশেষ টেস্টগুলোর সম্পর্কে । এন্টোনেলা মিতির দিকে তাকিয়ে খুব মমতা মাখা কণ্ঠে বলল, “I know it is very hard on you. But, you have to be strong. May I ask, is there any chance you might be pregnant now?” শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকা মিতি মাথা নেড়ে জানালো, না ।
এন্টোনেলা এরপর হাতের কাগজপত্রের দিকে তাকিয়ে বলল, “I will arragne your tests as fast as possible. Which number should I call to let you know the appointments? Keep in mind that it might be very short notice. You know the holiday is getting closed, eh...”
মিতি ওর অফিসের ফোন নাম্বার দিতেই এন্টোনেলা জানতে চাইল, “Where do you work? How far is it?” মিতি যখন জানাল যে রাস্তার উল্টোদিকের সেন্ট্রাল এক্সপেরিমেন্টাল ফার্মে তার অফিস, তখন এন্টোনেলা বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে বলল, “Good, then it is very close. You’ll get call as soon the appointments are set. If there is any preparation for the tests, I will let you know. Do you have any question?” এন্টোনেলার কথার জবাবে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল মিতি আর রাফাত । কী প্রশ্ন করবে ওরা? …
নীরবতা ভেঙ্গে এন্টোনেলাই আবার কথা বলে উঠল, “Oh I forgot to give you the information guidebook for breast cancer patients.” দেয়ালের শেলফ থেকে রিংয়ে বাঁধা ধূসর রংয়ের মোটাসোটা একটা বই এগিয়ে দিল, “This book will provide you information about breast cancer, the treatment options. It was developed for the breast cancer patients to cope up with the diagnosis. You will read some stories of people who have gone through the treatment. Also, it has a calendar which you will find handy to keep track of your treatment related appointments. You can write questions for your next appointment. By the way, do you have any kids?”
মিতি এই প্রথম কথা বলল ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরে, “I have a five years old son.” মিতির কথা শুনে এন্টোনেলার দু’চোখে একটা ছায়া পড়ল, “Oh, then I’ll have to give you another book. This one is very good to help cancer patients who have children. Especially if anyone has young children to whom “cancer” does not mean anything.” এন্টোনেলার বাড়ানো হাত থেকে বইটা নিয়ে মিতি তাকিয়ে দেখল মলাটের গায়ে লেখা “What About My Kids? A Guide for Parents Living with Breast Cancer”.
এন্টোনেলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা দু’জন এলিভেটরে নিচে এল । রাফাত ভারী দরজা ঠেলে বাইরে এসে গ্রাইমস লজের সামনের পার্কিং লটের দিকে হাঁটতে লাগল । কিছুটা এগিয়ে খেয়াল হল মিতি এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে । সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা মিতির দৃষ্টি খুব শুন্য মনে হল রাফাতের । রাফাত ওর দিকে এগিয়ে যেতেই মিতি বলে উঠল, “তুমি যাও, আমি হেঁটে যাব অফিসে ।” রাফাত কিছু না ভেবেই বলে উঠল, “এই ওয়েদারে তুমি হেঁটে যাবে, মিতি? চারিদিকে কেমন ঝড় উঠেছে দেখছো না?”
মিতি কেমন আত্মনিমগ্ন সুরে একটু হেসে জবাব দিল, “কোথায় ঝড়? সবকিছুতো থেমে গিয়েছে ।” মিতির কথায় রাফাত চারিদিকে তাকিয়ে দেখল, সত্যিই থেমে গিয়েছে তুষারের ঝড় । হঠাৎ আসা ঝড়, হঠাৎই থেমে গিয়েছে । এই ভর দুপুরের পার্কিংলটে চারিদিক কেমন শুনশান । ফুটপাথে জমে থাকা বরফের স্তুপগুলো আরো উচু হয়েছে, গাড়ীর ছাদের ওপরে আরো তুষার জমেছে । পাইন গাছগুলোর শক্ত পাতায় তুষারের সাদা রং আরো গাঢ় হয়েছে । এছাড়া আর কোথাও কোন চিহ্ন নেই কিছুক্ষণ আগের তুষার ঝড়ের । মিতির কণ্ঠস্বরে কিছু ছিল, তাই রাফাত আর জোর করল না । ও জানে মিতি এখন একাই থাকবে কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে । থাক ।
চলবে…
……………………………………………………………………… এই করেছো ভাল নিঠুর হে………রবীন্দ্রনাথ
মন্তব্য
এই সিরিজটা যখন পড়ি, প্রতিবার নতুন করে দুঃখবোধে আক্রান্ত হই। কেন যে কারো কারো জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে যায়, কিছু করার থাকে না।
আপু রুদ্ধশ্বাসে তোমার এই সিরিজের সবগুলো লেখা পড়লাম একসাথে।
কিছুই বলার নাই।
এর পরে এই সিরিজের আর কি লেখা দাওনি?
১০ এর পরে ১১ তো আর দেখছিনা!
সাফিনাজ, তুমি আমার এই ছাইভস্মও পড়ে ফেলেছো ? এই পৃথিবী এতো সুন্দ্র কেন ? আর মানুষের হৃদয় এতো ভালবাসায় ভরা কেন ?
না, এই লেখাটা শেষ করা হয়নি । ইচ্ছে আছে আবার ফিরে যাব এই বেদনার কাছে...লিখে ফেলব জীবনের সেই সব দিনের কথা ইনশাল্লাহ ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপু এই সিরিজ টা পড়তে পড়তে এক সময় মনে হচ্ছিলো চারপাশ ঝাপসা হয়ে গেছে। আজ আমার এমনিতেই মনটা খুব বিক্ষিপ্ত, তারপর আপনার এই লেখাটা তো মন ভীষণ খারাপ করে দিলো।
আপনার লেখা পড়ছি আর মনে হচ্ছে সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
আপু এই সিরিজ টা শেষ করেন প্লিজ।প্লিজ।প্লিজ
নতুন মন্তব্য করুন