ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি...০০৫

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি
লিখেছেন জোহরা ফেরদৌসী (তারিখ: সোম, ১৭/১২/২০১২ - ১১:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...

... ...

এই সব অদরকারী স্মৃতির কোন পরম্পরা নেই । তবু যদি কারুর আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়চতুর্থ পর্ব এখানে ।

...

১৫.

আমাদের বাড়িতে দু’টো জিনিষের কোন নিষেধ ছিল না কোন কালেই – চা খাওয়া আর বই পড়া । দিনের শুরুতে “বিসমিল্লাহ” বলে পাহালে (কুমিল্লার ভাষায় “চুলা”) রং চায়ের পাতিল চড়িয়ে দেয়া হ’ত । পাহাল থেকে সেই পাতিল নামত ঘুমানোর সময় । ঘরে চিনি নেই ? কুচ পরোয়া নেই, একটু লবন দিয়ে দাও (কোথায় লেখা আছে যে চা মিষ্টিই হতে হবে ? ) । চা পাতা নেই ? উঠানের ওই ধারের ঘর থেকে চায়ের চামচে দু’চামচ ধার করে নিয়ে আসো, আগামী আড়ংয়ের দিনে ফেরত দেয়া যাবে । লেবু কিংবা তেজপাতাও নেই ? রসুই ঘরের জানালা দিয়ে উকি দেয়া লেবু গাছের দু’টো পাতা ছিড়ে নাও না, সুবাসও হবে, স্বাদও বাড়বে । শুধু চায়ের পাতিলে দেয়ার আগে যেন শীতের ধুলো মাখা পাতা দু’টো ধুয়ে নিতে ভুলো না । কাজেই, পরবর্তী জীবনে আমাকে দেখে “সুশীল” বন্ধুরা যখন বলতো, “ওমা, তুমি (এত) চাও খাও ? বাসায় কিছু বলে না ?” আমিও তাজ্জব হয়ে বলতাম, “চা ? সে তো দুধ খাওয়া বন্ধ হওয়ার পর থেকেই খাই” । অনেক বড় হয়ে শুনেছিলাম, চা খাওয়ার সাথে নাকি মেয়েদের রূপ লাবন্যের, বিশেষতঃ গাত্র বর্ণের একটা বিপ্রতীপ সম্পর্ক আছে । থিওরীটা পুরাই ভুয়া । এই থিওরী যদি সত্য হ’ত, তাহলে আমার গাত্র বর্ণ “আবলুস কাঠ” কিংবা “আলকাতরা”র মত হওয়ার কথা । আমার গাত্রবর্ণ কালো, তবে হারিক্যান হাতে এখনো আমাকে খুঁজে পাওয়া যায় । নেহাত কারুর চোখের “জ্যোতি” কম থাকলে সে অন্য কথা !

আর বই পড়া ? এইবার আমার মায়ের শিক্ষানীতির দুই পয়েন্ট বলি । আগেই বলে রাখি আমার মা ছিলেন ভয়াবহ রকমের “ষড়যন্ত্রকারী” । তাঁর আপাত দৃষ্টিতে সরল শিক্ষানীতির ফলাফল সুদূর প্রসারী । আমার মা জীবনে আমাদেরকে “পড়তে বস্‌, পড়তে বস্‌” বলেননি । তাঁর শিক্ষানীতির প্রথম পয়েন্ট হ’ল, “ছেলে মেয়েদেরকে পড়তে বলতে হবে কেন ? আদর্শ লিপি আর বাল্যশিক্ষার পরেই কোন রকমে বই পড়ার “নেশাটা” ঢুকিয়ে দিলেই তো হ’ল । ওরা নিজেরাই পড়বে ।” ভেবে দেখেছেন, কি পরিমান ষড়যন্ত্র ! আপাত দৃষ্টিতে কি আনন্দদায়ক না ? যা খুশী বই পড়ছেন, মা কিছু বলছেন না...এমন কি পরীক্ষার সময়েও না । ইন্টার মিডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষা চলছে । আমি মন দিয়ে নিউটনের থার্ড ল পড়ছি, পাশের ঘর থেকে মা ডাকছে, “আয় টিভি দেখে যা ।”

মনে মনে খুশী আমি “ভাল মানুষী” দেখাচ্ছি, “মা, আমার পরীক্ষা...আমি পড়ছি ।”

জবাবে মা বলছে, “পরীক্ষা সারা জীবন দিবি (কী ভয়াবহ অভিশাপ ! সারা জীবন পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি...), নজরুল জয়ন্তীর গান সব সময় পাবি না । ফিরোজা বেগমের গান শুনে যা ।” ভেবে দেখুন । কোথায় নিউটনের থার্ড ল ! আমি তখন খালিদ হোসেনের কন্ঠে “আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন...” শুনছি । আমার কি তখন খোঁপা আলগা করার সময় ? নাকি কষে খোঁপা বেঁধে নিউটনের থার্ড ল পড়ার সময় ?

এক অর্থে আমাদেরকে শিক্ষাদানের কাজটা মা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আশুতোষ মুখোপাধ্যয়, নিমাই ভট্টাচার্য্য, রোমেনা আফাজ, শরৎচন্দ্র, বিমল মিত্র, সুকুমার রায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য্য, আবুল মনসুর আহমেদ, শংকর, সৈয়দ মুজতবা আলী আর সেবা প্রকাশনীকে দিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন । দায়িত্ব এড়ানো আর কি ! নিজেও প্রচুর পড়তেন, আমাদেরকেও সেই নেশাতে একদম আকন্ঠ ডুবে থাকতে দিতেন । তবে, একটা দুর্বলতা তাঁর ছিল - সুন্দর হাতের লেখার প্রতি । আমার প্রথম দিককার ভাই বোনদের সবাইকে নিয়ম করে প্রতিদিন হাতের লেখা “মক্‌শ” করিয়েছেন । আমার ভাই বোনদের তাই আর যাই হোক হস্তাক্ষর বড়ই সৌন্দর্য্য (আমার সেজ ভাইয়ের ছাত্র জীবনে পোস্টার আর “চিকা’ লেখার অভিজ্ঞতা আছে )। শুধু ফাঁকি দিয়েছিল আমার “মীরজাফর” ভাই সোহেল । সেজন্য অবশ্য তাকে বিরাট মুল্য দিতে হয়েছে “টিন এজে” । সে কথা কখনো সময় সুযোগ হ’লে পরে বলব ।

১৬.

আমার মায়ের শিক্ষানীতির দুই নম্বর পয়েন্ট হ’ল “সবার মধ্যে একজন হও ।” কখনোই মা “অসাধারন” হতে বলেননি । বলতেন, “মানুষ সবাই সমান । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আইনস্টাইন,গান্ধীজী, নবীজী (সাঃ), গৌতম বুদ্ধ, যীশু, বিবেকানন্দ, রামমোহন রায়, রাম, সীতা, দ্রৌপদী, মাসুদ রানা, আমি, “রবীর মা” চাচী (আমাদের গ্রামের প্রতিবেশী দরিদ্র বিধবা । যিনি আমার মাকে গৃহস্থালী কাজে সাহায্য করতেন), “রবার মা” চাচী (আমাদের গ্রামের আরেক দরিদ্র প্রতিবেশী), কুয়াশা, দস্যু বনহুর, রবিনহুড, ফেলুদা, তোপসে, টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাস, গইরা পাগলা (আমাদের গ্রামে যার মাজার), বেগম রোকেয়া, নিউটন- আমরা সবাই সমান মানুষ ।” তখন যে এই গুঢ় তত্ত্ব বুঝেছি তা’তো নয় । তবে রবীন্দ্রনাথ আর আমি যে এক কাতারে আছি এতেই মন খুশী হয়ে যেত । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ধরাধামে আগমনের কারনে হয়তোবা কাতারের মধ্যে অন্য অনেক “উঁটকো” লোক ঢুকে পড়েছে, কিন্তু একটু ঠ্যালা ধাক্কা দিয়ে এক দিন ঠিক পৌঁছে যাব বুড়োর কাছে । সাদা আলখাল্লাটা ছূঁয়ে দেখার আজন্ম সলজ্জ সাধ আমার !

কাজেই, বুঝতেই পারছেন “লাল পিঁপড়া আর কালো পিঁপড়া”র বিতর্কটা আমার মা নস্যাৎ করে দিয়েছেন একদম গোড়াতেই । আমরা কখনোই এর বিভ্রমে পড়ি নাই । যারা এই অতীব “গুরুত্বপুর্ণ” ও অত্যন্ত “অন্ধকারাচ্ছন্য” বিভ্রমের কথা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি । শৈশবের এক পর্যায়ে “জ্ঞানী” সঙ্গী সাথীদের কাছে জানা যায় যে “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে”র রবীন্দ্রনাথ একটি লাল পিঁপড়া । আর “লিচুচোরে”র নজরুল একটি কালো পিঁপড়া । বর্ণ নির্ধারনটি কিভাবে হ’ল ঠিক নিশ্চিত না । তবে, আবছা একটা “থিওরী” আছে । যেহেতু এইসব জ্ঞানীদের ধারনা মতে রবীন্দ্রনাথ “হিঁদু” ছিলেন (আদতে লৌকিকতার হিসেবে ছিলেন “ব্রাহ্ম”), আর বিবাহিত হিন্দু মেয়েরা যেহেতু “লাল” রংয়ের সিঁদুর পরে, কাজেই রবীন্দ্রনাথ “লাল” পিঁপড়া (কোথায় রবীন্দ্রনাথ আর কোথায় বিবাহিত হিন্দু রমনীর “সিঁদুর” !) । বাকী থাকে কালো রং, সে জন্যই “মুসলমান” নজরুল (যিনি কিনা বৈবাহিক সুত্রে আধা “হিন্দু” !) “কালো” পিঁপড়া । কাজেই “ধর্মপ্রাণ” মুসলমান হিসেবে আমার ঈমানের প্রথম শর্ত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে “বর্জন করা” । আমি যেদিন প্রথম এই “বিভ্রম” এসে মাকে জানিয়েছিলাম, আমার মা হেসে বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ না থাকলে তো আমাদের কোন আলোই আর থাকে না । আলো ছাড়া আমাদের চলবে কী করে ?” আর আমারও ধড়ে প্রাণ ফিরে এসেছিল । তখনতো আর এত বুঝিনি । তবে এখন জানি- আমি ভাই আর যাই পারি, এই বুড়োকে এই জীবনে ছাড়তে পারি না । ব্যাটা আমার দূঃখের রাতের “প্রদীপ”, দ্রোহের দিনের “মশাল” ।

আমরা বড় হয়েছি মার মুখে “লাল পিঁপড়া”র “একলা আমি বাহির হ’লেম তোমার অভিসারে / সাথে সাথে কে চলে মোর নীরব অন্ধকারে...” আর “কালো পিঁপড়া”র “আশীটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু / আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করনি কভু...” শুনে শুনে । দুই পিঁপড়াই মার দু’চোখে সমান জল আনতো, একটুও কম-বেশী না...বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি আমরা এই জন্মের মত...

১৭.

আমার মায়ের ছিল সুরের প্রতি অপ্রতিরোধ্য টান । কোথাও গানের আসর বসেছে শুনলেই ছুটতেন । ছোট্ট আমার ঠান্ডা লাগবে শীতের রাতের হিমে ? কুচ পরোয়া নেই - কাঁথা, চাদর, কম্বল এসব আছে কি জন্য ? পেচিয়ে নিলেই সব মুশকিল আসান । তাছাড়া, মার গায়ের “ওম” তো আছেই ! আরেকটু বড় হয়ে চা, বইয়ের মতই গান শোনার অবাঁধ স্বাধীনতা ছিল আমাদের । বলতেন, “যে কথাটি হাজার বার বলেও শেখানো যায় না, তা শুধু সুরের খেয়ায় মর্মে পৌঁছে দেয়া যায় ।” আমার মায়ের এক্সপেরিমেন্ট সফল । গান বলতেই বুঝি বাংলা গান (কি করা ? অন্য ভাষার গান তো ঠিক মর্মে “পৌঁছায়” না ! আসলে অতোটা ভাষাজ্ঞানই নেই) । দেশে থাকতেও কোনদিন বন্ধুদের মত “জনপ্রিয়” হিন্দি গান শোনা হয়নি । “স্মার্ট” ইংলিশ গান তো অনেক দূরের ব্যাপার (আমার ইংরেজীর দৌড় তো আপনাদের জানাই আছে !) । দেশান্তরী জীবনেও পড়ে আছি সেই বাংলা গানের ভান্ডার নিয়েই । এক রবীন্দ্রনাথই এক সহস্রাংশ বুঝা হ’ল না । তারপরেও আরও কত শত সুরের সাধক আছেন সেই ভান্ডারে !

ফাস্ট ফরোয়ার্ড । আমার মার মত নির্ঝরের মাও একটা “এক্সপেরিমেন্ট” চালাচ্ছে । গাড়ির সিডি প্লেয়ারে বছরের প্রথম দিনে “বিসমিল্লাহ” বলে একটা করে বাংলা গানের সিডি উঠে । সারা বছর ধরে সেই গান বাজতে থাকে । গত বছরটা ছিল শ্রীকান্ত আচার্য্যর । ২০১২ অদিতি মহসীনের । অদিতি কেঁদেই চলেছেন, “মাঝে মাঝে তব দেখা পাই / চিরদিন কেন পাই না / কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে / তোমারে দেখিতে দেয় না...” । হৃদয় আকাশে ঘিরে আসা এই মোহ মেঘের খবর এখন নির্ঝর পাবে না । কিন্তু আমাকে তো জাস্টিন বিবার, রাশ আর ওয়ান ডিরেকশনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হবে...আগামী বছরটা ভাবছি কাদেরী কিবরীয়াকে দেব । তারপর কোন এক বছর পাবেন হেমন্ত মুখার্জী । তিনি গাইবেন সেই ভয়ঙ্কর গান, “মনের জানালা ধরে উঁকি দিয়ে গেছে / যার চোখ তাকে আর মনে পড়ে না...” । এই এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্ট দেখার জন্য বদ্যির মুখে ছাই দিয়ে আমাকে বছর দশেক বেঁচে থাকতে হবে । এখন থেকে দশ বছর পরের এক উইক এন্ডে বিপন্ন মুখ করে নির্ঝর এসে দাঁড়াবে আমার রসুই ঘরের দরজায়, “Maa, what was that Bangla song again? Someone just had a peek on my window. I can’t remember her eyes…” আমি তখন বুঝে যাব আমার ছেলের জীবনে সেই অত্যাশ্চর্য্য “আগুন” এসে গিয়েছে, তাকে এবার আজন্ম জ্বলতে হবে সেই দহনে । কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না...কেউ না...

১৮.

আমাদের গ্রামে একটি দরগা (মাজার) আছে । গ্রামের বাড়িগুলো হয় সারিবদ্ধ । একের পরে এক...বাড়ি আর পুকুর পাশাপাশি । আমাদের গ্রামের দরগা বাড়িটা আমাদের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের এক “চালি” (কুমিল্লার ভাষায় “দৌড়” । কী ছিড়িংখলায় পড়া গেল এই ব্লগ লিখতে বসে ? আদি অকৃত্রিম “মাতৃভাষা” জানান দেয় শুধু !) দূরত্বে । গইরা (মতান্তরে “গফুর”) পাগলা বলে কোন এক সাধক এক সময় কোথা থেকে সেই বাড়িতে এসে আস্তানা গেড়েছিল । তার মৃত্যুর পরে তার কবরটি ঘিরে ভক্তরা একটি মাজার নির্মান করে ও ফাল্গুন মাসে তার মৃত্যুর দিনে “ওরস” করে । সেই সাধকের আধ্যাত্মিকতা বুঝার বয়স আমার তখন হয়নি, আমি বুঝি সেই সময় আমাদের গ্রামে একটা উৎসব হয় । ওরসের সেই সময়ে গ্রামের মেয়েরা শ্বশুর বাড়ি থেকে নাইওর আসে । দরগা বাড়ি ঘেষা ধান কাটা মাঠে তখন বিশাল আয়োজন...সারি সারি দোকান ...কামার, কুমারেরা সাজিয়ে বসে তাদের শিল্পকর্ম । বাণিয়ারা থরে থরে সাজায় তাদের মনোহারি পসরা... মেয়েদের জন্য নানান রংয়ের ডুরে শাড়ি, চুলি (ব্লাউজ), বাহারী রংয়ের সাটিনের ফিতা, আলতা, স্নো, পাউডার, কাজল...আর ছিল বেলোয়াড়ি চুড়ি । মেয়েরা কেউ বাবা, চাচা, জেঠা কিংবা “ঘরের লোকে”র সাথে এসে মনের আশ মিটিয়ে নিজেরা নেড়ে চেড়ে চুড়ি বাছাই করে । তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় বাইদানীর (চুড়ি বিক্রেতা নারী) দিকে । গর্বিত বাইদানী তার অতুলনীয় চুড়ির গুণাগুন বর্ণনা করতে করতে পরিয়ে দেয় সেই নানান রঙ্গের স্বপ্নীল চুড়ির গাছা । দু’হাত ভরে সেই চুড়ি পরে কী যে আনন্দ ! আর যদি সর্ষে রংয়ের পাড় ওয়ালা একটা কলা পাতা শাড়ি আর লাল চুলিও কেনা হয়ে যায় তা’হলে তো কোন কথাই নেই ! নিজের সারা বছরের জমানো মাটির ব্যাংক ভাঙ্গা টাকা দিয়ে এক শিষি আলতা কিনে ফেললেই হ’ল । সেই কলা পাতা শাড়ি পরা মেয়েটি, লাল আর সবুজ কাঁচের চুড়ি পরা মেয়েটি, লাল ফিতেয় চুল বাঁধা মেয়েটি, আলতায় পা রাঙ্গানো মেয়েটি কি আর এই ধুলার পৃথিবীতে পা ফেলতে পারে ?

আমি তখনো এত বড় হইনি যে শাড়ি, চুলি কিনব । তবে ওই যে দেখছেন একটি ছয় বছরের বালিকা হলুদ রংয়ের ফ্রক পড়ে মায়ের হাত ধরে যাচ্ছে কুমোরের দোকানে মাটির “পুতলা” কিনতে সেই হ’ল ভবিষ্যত “নির্ঝরের মা” । কুমোরের দোকান থেকে শুধু পুতুল কিনলেই হবে না, সঙ্গে চাই ক্ষুদে ক্ষুদে পোড়া মাটির হাড়ি-পাতিল, ছোট্ট লাল রংয়ের পাহাল (আহারে অবোধ বালিকা, ঘরকন্যা করার শখ তোমার সেই কবেকার !) । তারপর দু’হাত ভরে লাল আর সবুজ কাঁচের চুড়ি...ও মা ! মা যে দেখছি বাড়ির সবগুলো কুঁচো কাঁচাকেও চুড়ি পরিয়ে দিতে বলছে (আমার বুঝি হিংসে হয় না ?) । বাড়ির কুঁচো কাঁচাদের পরে এবারে “রবীর মা” চাচীর পালা । চাচী লজ্জা লজ্জা ভাব (পান খাওয়া মুখের হাসিতে উজ্বল চোখ কিন্তু বলছে অন্য কথা !) করে বলছেন, “কী যে করেন, মাস্টরের ঝি (আমার নানা স্কুলের গণিত শিক্ষক ছিলেন । সেই সুত্রে আমার মাকে তুলাতলী গ্রামের সবাই “মাস্টরের ঝি” নামেই ডাকত) । বুড়া বয়সে বেলোয়াড়ি চুড়ি পরতাম, মাইনষে কইবো কী ?”

আমার মা তখন জবাব দিচ্ছে, “মাইনষে যা কওনের কইবো । আপনে এখন হাতডা দেন তো দেহি । আপনেরে বাড়ির থিকা লগে আনছি কি জইন্য ?”

চাচীর চুড়ি পরার পরে মা মাঠের মাঝখানের খেলার জায়গাটা (যেখানে “লাট গাছ” নামক “ফেরিস হুইলে”র গ্রামীন সংস্করনসহ আরো কিছু চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা আছে । বানর, বেজি ও সাপ খেলাও ছিল বোধহয় । আমার মা আর আমি দু’জনের কেউই সরীসৃপ সহ্য করতে পারি না) দ্রুত পার করে গগণ ময়রার দোকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন । গনগনে পাহালে চলছে গরম তেলে জিলাপী ভাজা আর চিনির শিরায় রসগোল্লার শেষ পাক । মাটির ক্ষুদে ক্ষুদে খোড়ায় (বাটি) করে গরম রস সহযোগে রসগোল্লা ! আহ্‌, সুরুৎ করে রসটুকুও একবারে খেয়ে ফেললে মুখ কি মিষ্টি ! গগণ ময়রা এবার মাস্টরের ঝিকে খাতির করে বালুসাই (চিনির প্রলেপ দেয়া ছোট ছোট রসগোল্লা) চেখে দেখতে বলছেন । বালুসাইয়ের সেই চিনির প্রলেপ মুখে লাগিয়ে এবারে লাল সালু কাপড়ের শামিয়ানার নিচে বসা গানের আসরের দিকে এগিয়ে চলি । বেলা ততক্ষনে হেলে পড়েছে । মেলায় আসা মানুষের পায়ে পায়ের খুশীর ধুলারা অস্তমিত সুর্য্যের আলোর গায়ে ছড়িয়ে পড়েছে । গোধুলীর সেই আলোর সঙ্গে মিশে আছে গায়ের বৌ-ঝিদের আনন্দ ! আহা, কী সুন্দর সেই গোধুলীর রঙ !

১৯.

সেই সব গানের আসর চলতো সারা রাত । দিনের শেষ আলোটুকু মিলিয়ে গেলেই হ্যাজাক বাতির আলোতে গানে গানে চলতো তর্কযুদ্ধ । সেই তর্কযুদ্ধের বিষয় ছিল বিচিত্র । শরীয়ত-মারেফতের মত গুঢ় দর্শন যেমন থাকতো, তেমনি “মাতৃদেবী” বড় না “ইস্ত্রী” বড় একজন নরের জীবনে সেই রকম প্রায়োগিক বিষয়ও থাকতো । সেই সব গানের আসরে নারী, পুরুষের ভেদাভেদ থাকতো না । সুরের ধারায় যুক্তি বেঁধে, ঝাকড়া চুলের নারী-পুরুষ বাউলেরা নেচে গেয়ে ঢোল, খঞ্জনী আর করতালে চালাতো সেই তর্কযুদ্ধ । তর্কে এক পর্যায়ে দুই পক্ষই মিলে যেত এক জায়গায় । তখন দু’জনেই এক সুরে গেয়ে উঠতো শেষ কথা । সেই রকম কোন এক তর্কযুদ্ধের শেষ গান যখন গাইছে দুই ফকির বাউল, তখন দিগন্তে ভোরের প্রথম আলোর মায়াময় রেখাটি ফুটে উঠছে । আমি নিশ্চিত উর্ধলোকের “ওপরওয়ালা”, তাকে যে নামেই ডাকা যাক না কেন, তিনি থামিয়ে দিয়েছেন স্বর্গলোকের সব সুর । প্রসন্ন মুখে তিনি শুনছেন মর্ত্যলোক থেকে ভেসে আসা বাউলের সমাপনী গান,

“মানুষ থুইয়া খোদা খোঁজ
এই মন্ত্রনা কে দিয়াছে ?
ওরে মানুষ ভজো, খোদা খোঁজ
সর্বশাস্ত্রে বলিয়াছে...”

..................

মাগো, তুমি শিখিয়েছ মানুষ সবাই সমান, এক কাতারে দাঁড়ানো । আমি নিশ্চিত জানি, তুমি কখনোই বোঝাওনি যারা একাত্তরে কড়া নেড়েছিল জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার, ফজলে রাব্বীর, মুনীর চৌধুরীর মত আরো অনেক অনেক মানুষের... (তারপর সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে চালিয়েছে গণহত্যা)... তারাও সেই এক কাতারের মানুষ । যারা সেই দিনগুলিতে কড়া নেড়েছিল, তাদের কেউ বাংলায় কথা বলত, কেউ উর্দুতে...তারা এক কাতারের । কিন্তু আমরা সমগ্র বাংলাদেশ অন্য আরেক কাতার ।

আমার বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনের গায়ে যারা লাগিয়ে দিয়েছে ডাঃ মিলনের বুক নিশানা করে করা গুলির শব্দের মত দূঃস্বপ্ন তারা আর আমি এক কাতারের না ।

এই সেদিন তাজরীন গার্মেন্টসে আগুনের শব্দ ঢাকতে যারা জোরে “গান” বাজিয়ে দিয়েছিল, লোহার গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল...তারা আর আমি এক কাতারের না ।

যারা প্রকাশ্য দিবালোকে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বিশ্বজিতকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারল...আমি কিছুতেই তাদের কাতারের না ।

প্রিয় পাঠক, খুব ইচ্ছে ছিল এবারের পর্বের পাদটীকাতে খুব আনন্দ দায়ক কিছু লিখব । সেই কবে থেকে শুধু মন খারাপ করা দূঃসংবাদ পাচ্ছি । এবারে আসন্ন ক্রিসমাস নিয়ে একটু বিমলানন্দের কথা বলব । কিন্তু, কানেকটিকাটের এই দানবটা এসে আমাকে এমন বিষন্ন করে দিল ! আহ্‌ ঈশ্বর, এত অন্ধকার কেন ? আলো দাও, একটু আলো দাও...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো, স্মৃতিচারণ সবসময়ই আপন অস্তিত্বকে নাড়া দেয়, চিন্তা-ভাবনাকে অনেক দূর নিয়ে যায়।

আমার সবাই আলোর প্রত্যাশী, কিন্তু আমাদের দরকার অনেক অনেক বেশি আলোর পথের দিশারী।

''দিবাকর''

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আমার সবাই আলোর প্রত্যাশী, কিন্তু আমাদের দরকার অনেক অনেক বেশি আলোর পথের দিশারী।

ধন্যবাদ দিবাকর ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তিথীডোর এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ না থাকলে তো আমাদের কোন আলোই আর থাকে না । আলো ছাড়া আমাদের চলবে কী করে?

হ।
তবে ♥বুড়ো বেজায় বজ্জাত! মাথায় ঢুকলে আর বের হয় না।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

বুড়ো বেজায় বজ্জাত! মাথায় ঢুকলে আর বের হয় না।

একদম ঠিক কথা । দশ কথার এক কথা ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চা এর প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, আমার খুব চায়ের নেশা ছিলো। এক সকালে আমার এক মুরুব্বী আমার সামনে চা এর কাপ ধরলেন। চুমুক দিয়ে বললাম, মুরুব্বী এত গুড়ের সরবত। শুধু পানিটা গরম। বললেন, চা-পাতা ফুরিয়ে গিয়েছে, খেয়াল করিনি। তা চায়ের রঙের গরম পানি দিয়ে আপাতত নেশা মেটানো যাক। একটু বেলা হলেই চা-পাতা নিয়ে আসবো। হা হা হা।

লেখাটা ভাল লেগেছে। চলুক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

চায়ের রঙের গরম পানি দিয়ে আপাতত নেশা মেটানো যাক।

অ্যাঁ

কে জানে আমাদের জননীও কখনো তাই করেছেন কি না !

তবে চা, বই আর গান ভাই ভয়াবহ নেশা । সবাই ছেড়ে যায়, এরা কোত্থাও যায় না...মিত্যু পজ্জন্ত সঙ্গে থাকে চোখ টিপি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি

তিব্বতে লবণ চা পান করেছিলাম দেঁতো হাসি

পড়ার ইতিহাস দারুণ লাগল।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এই যে “পায়ের নীচে সর্ষে” চলে এসেছেন । তিব্বতের লবন চায়ের গল্পটা কবে আসবে তাহলে ?

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সৈয়দ নাঈম গাজী এর ছবি

"যে কথাটি হাজার বার বলেও শেখানো যায় না,
তা শুধু সুরের খেয়ায় মর্মে পৌছে দেয়া যায়"
সুন্দর একটা কথা।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এই সব “সুন্দর কথা” যে কী ভয়াবহ “সর্বনাশ” ( মতান্তরে “বাঁশ”) তা তো আর জানেন না ভাই মন খারাপ

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ব্যক্তিগত অস্থিরতার কারনে বেশ কয়েকমাস ধরেই সচলায়তনে এসেছি, প্রতিদিনের অভ্যাসবসে নীড়পাতায় চোখ বুলিয়ে চলে গিয়েছি; কিন্তু আপনার এই লেখা পড়া হয়নি। আজ কী মনে করে জানিনা, পঞ্চম পর্ব পড়তে বসলাম, দুই অনুচ্ছেদ পড়তে যেয়েই বাদ দিয়ে প্রথম পর্ব থেকে পড়া শুরু করলাম। এক নিমিষেই আপনার হাত ধরে চলে গেলাম আপনার পৃথিবীতে যেখা "আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে; তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে"। কেমন লেগেছে আপনার এই লেখা তা বলবনা (আসলে বলতে পারব না)। শুধু এইটুকু বলি, আপনাকে; আপনার হাতদুটিকে আমার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে লেখা পড়ার পর।

আমি এখনো বিশ্বাস করি, আলখেল্লা পরা ভদ্রলোকটি আমার মনের সব অনুভূতি, আবেগ বুঝে গিয়েছেন আমারও আগে, তাই তাঁর লেখাই আমার মনের ভাব প্রকাশের জন্য যথেষ্ট। তাঁর ভাষাতেই বলি "পিপাসা হায়, নাহি মিটিল, নাহি মিটিল"। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

ভালো থাকবেন। অনেক ভালো থাকবেন।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এক নিমিষেই আপনার হাত ধরে চলে গেলাম আপনার পৃথিবীতে যেখা "আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে; তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে"। কেমন লেগেছে আপনার এই লেখা তা বলবনা (আসলে বলতে পারব না)। শুধু এইটুকু বলি, আপনাকে; আপনার হাতদুটিকে আমার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে লেখা পড়ার পর।

ভাইরে, “আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে; তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে” – এই অনন্তের খবর আর করতে পারলাম কই ? ষড়যন্ত্রকারী মা যে কত পই পই করে শুনিয়ে গেল অনন্তের কথা...কথায় কথায় বলে গেল বুড়োর কথা “মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ...” তারপরেও কেন টলে যায় সেই বিশ্বাস, কেন "পাপ" হয়ে যায় ? কোথায় আর পেলাম আমি সমুদ্র মন্থনে অমৃতের সন্ধান...অনন্তের সন্ধান ?

আমার হাত দু’টো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ? আমি এক অকৃতি অধম সন্তান আমার মায়ের । আপনি ভালবেসে আমার দূঃখ ছূঁতে চাইছেন, আপনিতো ছূঁয়েই আছেন আমার হাত...মানুষ আমরা এমনই এক আজব চীজ...দূঃখ দিয়ে ছূঁয়ে থাকি একে অপরকে...

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আপনার অস্থিরতার অবসান হোক । আপনিও ভাল থাকুন ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মগ্ন পথিক এর ছবি

''তবে রবীন্দ্রনাথ আর আমি যে এক কাতারে আছি এতেই মন খুশি হয়ে যেত।'' পড়ে আমিও বেজায় খুশি হলাম। আপনার লেখাটা খুব ভালো লেগেছে। পৃথিবীতে বসে স্বর্গে ঘুরে আসার একটা উপায়ই আমি জানি, সেটা রবীন্দ্র সংগীত।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মগ্ন পথিক । বেশী বেশী যেন স্বর্গ ভ্রমন করবেন না...তাহলে কিন্তু ঘরদোরের কাজ কর্ম পড়ে থাকবে চোখ টিপি । একটু রয়ে সয়ে করবেন ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এত অদ্ভুত বিষাদময় মায়া জড়ানো সিরিজ, খুব ভাল না লেগে কোথায় যাবে বলেন?
চলুক পড়ছি, খুব ভালো লাগছে, মন খারাপ করছি।
মন খারাপেরও অন্যরকম একটা মজা আছে, নয়কি আপু?
পড়ার ইতিহাস হাসি
ভালো থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

মন খারাপেরও অন্যরকম একটা মজা আছে, নয়কি আপু?

অনেক ধন্যবাদ । ওহো আবারো অভিনন্দন জানাই দ্রুত “হাচল” হওয়ার জন্য আরজুমান্দ বানু দেঁতো হাসি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক!

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আচ্ছা চলার “চেষ্টা ও ক্যারেকটার” করা হবে...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সত্যপীর এর ছবি

আর মোটে ৯৬টা পর্ব। গড়গড়িয়ে চলুক!

..................................................................
#Banshibir.

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আপনার কী ক্ষতি করেছি বলেন তো ? আমার সারা জীবনের সকল ব্যর্থতার সুলুক সন্ধান জেনে যেতে চাইছেন...শেষে না আমাকে গাইতে হয় “আমার সকল দূঃখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

খুব ভাল লাগল। অসাধারণ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কবি । এই সাধারন হওয়ার গল্প পড়ার জন্য ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

শাব্দিক এর ছবি

আপু আপনার সিরিজটা প্রথম থেকে পড়ব বলে রেখে দিয়েছি। আজকে মধ্যে থেকেই শুরু করলাম। দারুণ লাগছে!!! বাকি পর্বগুলি পড়ে ফেলব।

"আমার মা ছিলেন ভয়াবহ রকমের “ষড়যন্ত্রকারী” । তাঁর আপাত দৃষ্টিতে সরল শিক্ষানীতির ফলাফল সুদূর প্রসারী । আমার মা জীবনে আমাদেরকে “পড়তে বস্‌, পড়তে বস্‌” বলেননি ।"
আমার বাড়ির ওই দজ্জাল মহিলা ও একি স্ট্রেটেজির অনুসারি ছিলেন, এখনো আছেন আরকি।
“পরীক্ষা সারা জীবন দিবি (কী ভয়াবহ অভিশাপ ! সারা জীবন পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি...)," গড়াগড়ি দিয়া হাসি
আমি অবশ্য বছর খানেক হল ক্ষেমা দিয়েছি, আবার কবে শুরু করতে হয় আল্লাহ জানে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আমার বাড়ির ওই দজ্জাল মহিলা ও একি স্ট্রেটেজির অনুসারি ছিলেন, এখনো আছেন আরকি।

আপনার মাকে আমার সালাম জানাবেন ।

আমি অবশ্য বছর খানেক হল ক্ষেমা দিয়েছি, আবার কবে শুরু করতে হয় আল্লাহ জানে।

পরীক্ষা দেয়া শেষ করে ফেলেছেন ?!?!?! কিভাবে সম্ভব ? যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ, না “পরীক্ষা”...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

স্যাম এর ছবি

আপু আপনার সিরিজটা প্রথম থেকে পড়ব বলে রেখে দিয়েছি। আজকে মধ্যে থেকেই শুরু করলাম। দারুণ লাগছে!!! বাকি পর্বগুলি পড়ে ফেলব।

- আপনি তো আমার কথা লিখে ফেললেন খাইছে
এই শুক্রবার আমার 'ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি দিবস' হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

একেবারে “দিবস” অ্যাঁ

তা কেমন কাটল সেই দিবস ? তৈলাক্ত বাঁশ বাহী বানরের সাথে দেখা মিলল ? চোখ টিপি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব খুব ভালো লাগছে জোহরা। আজকে সব গুলি পর্ব পর পর পড়লাম। চমৎকার!!! চলুক

আসমা খান

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপা পড়ার জন্য ও সময় করে মন্তব্য করার জন্য ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পর সচলায়তনে ঢোকার কারণে অনেকগুলো লেখা একইসাথে পড়ার সৌভাগ্য হচ্ছে। আর আপনার লেখা নিয়ে লম্বা কমেন্ট নতুন লেখাটাতেই করবো। আপাতত অর্ণবের গলায় এই গানটা শুনতে থাকুন। গত এক সপ্তাহ ধরে উঠতে, বসতে, খেতে, ঘুমাতে, ট্যাক্সিতে, অফিসে (এমনকি মিটিঙেও) শুনে যাচ্ছি।

আমি তখনো এত বড় হইনি যে শাড়ি, চুলি কিনব

চুড়ি হবে মনে হয়।

ফারাসাত

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ অর্নবের গানের লিঙ্কটার জন্য । এই গান শোনার সমস্যা একটাই “কী করিলে বল পাইব তোমারে...এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ...” মাথা থেকে বের হয় না । এই প্রাণনাথ যে স্বয়ং ঈশ্বর, সে কেন এত সহজে ছেড়ে দেবে...মগজের দখল ছাড়বে না...

শাড়ির সঙ্গে চুলিই হবে কিন্তু । চুলি (ব্লাউজ) ছাড়া যে শাড়ি পরা যায় না... দেঁতো হাসি

আপনার লেখা নিয়ে লম্বা কমেন্ট নতুন লেখাটাতেই করবো

ভয় পাচ্ছি কিন্তু, ফারাসাত ইয়ে, মানে...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মর্ম এর ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া'য় মহাদেবপট্টির 'চিটাগাং বেকারি'র বালুসাই এর কথা মনে করতে করতে নেমে এসে বিশ্বজিতের সাথে দেখা করতে হল- লেখকরা খুব খারাপ একটা প্রজাতি মন খারাপ

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

লেখকরা খুব খারাপ একটা প্রজাতি

একদম খাঁটি কথা । সেকারনেই আমি তাদের থেকে দূরে থাকি ...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।