বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...
... ...
এই সব অদরকারী স্মৃতির কোন পরম্পরা নেই । তবু যদি কারুর আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্ব এখানে ।
...
২৫.
আমার মেজভাই একজন ভীষণ “কামেল” মানুষ । কামেল মানুষ কেন তা ক্রমশ: পরিষ্কার হবে বলে আশা রাখি । প্রথমেই বলে নিই তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক । জীববিদ্যায় তার দক্ষতা ঈর্ষণীয় । তার অংকন পারদর্শিতা আমার মত না, তার “কোষ” ও “ব্যাং”য়ের আইডেন্টিটির জন্য কোন লেবেলিংয়ের দরকার নেই । আমারগুলোর মত কোষকে “আম”, ব্যাংকে “উড়োজাহাজ” মনে হয় না । প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস তার । আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জাগ্রত অবস্থার সিংহ ভাগ সময়েই দু’টো জিনিষ তার দুই হাতে – বই ও সিগারেট । ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটিতে থাকার সময়ে এই দু’টো জিনিষের সঙ্গে সাময়িক “বিচ্ছেদ” । হাসপাতালের বাইরে গুরুজনরা কেউ আশেপাশে থাকলে শুধু ধুম্রপানের সাথে বিচ্ছেদ ।
আমার সেজভাই ছিল আমার প্রধান গৃহ শিক্ষক । ভুল ভাল যা কিছু শিখেছি, তার কাছেই শিখেছি । ভাল মন্দের সব দায় তার । আমার মেজভাইয়ের কাছে সাকুল্যে দু’বার গিয়েছিলাম অংক শিখতে । প্রথম বারেই ঠিক করেছিলাম, কখনো ওমুখো হব না । তারপরেও দ্বিতীয়বার কেন এই ভুল হয়েছিল, ঠিক মনে নেই । হতে পারে, মাঝখানে পদ্মা-মেঘনার বুকে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছিল...সেই জলে প্রথম বারের স্মৃতির দাগ মুছে গিয়েছিল ।
আমার মেজভাই কিন্তু গণিত শাস্ত্রেও ভীষণ দক্ষ, শিক্ষক হিসেবেও চমৎকার । তারপরেও কি হয়েছিল ? প্রথমবারে চতুর্থ শ্রেনীর আম ভাগাভাগির অংকে মহামতি নিউটন চলে এসেছিলেন । দ্বিতীয় বারে নীল নদের বন্যা হয়ে গিয়েছিল । খুব রহস্যময় লাগছে ? চলুন, আম ভাগাভাগির অংকটা দিয়ে শুরু করি । অংকটা ছিল এরকম, ২৫ টি আম ৫ জন ছাত্রের মধ্যে ভাগ করে দিলে প্রত্যেকে কয়টি আম ভাগে পাবে ? আমার মনে হয়েছিল, এটি সহজ ভাগ । তবুও শত ভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেজভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম । গিয়েই ধরাটা খেলাম । মেজভাই খাতা হাতে নিয়েই দক্ষ হাতে খাতার ডানে-বামে-ওপরে-নীচে মার্জিন দিলেন (রুলার দিয়েও কেউ এমন নিখুঁত মার্জিন দিতে পারবে না )...এবারে ওপরের মার্জিনের নীচে সুন্দর হস্তাক্ষরে অংকের টাইটেল লিখলেন, “আম বণ্টন” ( অংক বলে কি “সাহিত্য” না ? শিরোনামহীন কোন সাহিত্য হয় ? ) । তারপর, নিমেষের মধ্যে খাতার বাম মার্জিন ঘেঁষে এঁকে ফেললেন একটি আম গাছ...গাছ ভর্তি ডাল-পালা-পাতা-পাখি-ঝুলন্ত কাঁচা, পাকা আম...কিছু আম ঝরেও পড়ছে ! হতবাক আমি তাকিয়ে আছি...এবারে কী হয়...এখন কি বিজ্ঞানী নিউটন এসে আসন গ্রহণ করবেন আম্র বৃক্ষ তলে ? আপেলের বদলে পড়ন্ত আম দেখে পদার্থবিদ্যার মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন...আমটি কেন উর্ধমুখে রওনা হইলো না...কে তাহাকে মৃত্তিকার দিকে ধাবিত করিল ? বুঝতেই পারছেন, কেন কান মলে ছিলাম যে আর কখনোই না । এর চেয়ে আমার “যুধিষ্ঠির” সেজভাই ঢের ভাল ।
ক্লাস ফোর থেকে এইটে উঠতে উঠতে চার বছর সময়ের মধ্যে সেই প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গিয়েছিলাম । তাই, আবার একবার সেজ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে হাতের কাছে মেজ ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম - পিথাগোরাসের থিয়োরি বুঝতে । সবাই জানেন সেই থিয়োরি – “সমকোণী ত্রিভূজের অতিভূজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল, অন্য দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দু’টির ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান” । মেজভাই প্রথমে শুরু করলেন “জ্যা” ও “মিতি” থেকে । “জ্যা” মানে ভূমি, “মিতি” মানে পরিমাপ । আচ্ছা, ঠিক আছে । তারপর সুঁচালো পেন্সিল দিয়ে সাদা খাতার ওপর একটি সূক্ষ্ম বিন্দু এঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কী ?”
আমার হতবাক জবাব, “বিন্দু” ।
মেজভাইয়ের প্রশ্ন, “কে বলেছে ?”
এইবারে আমি নিশ্চুপ । তারপর, শুরু হ’ল জ্যামিতির উৎপত্তি কোথায়...কেন...কিভাবে...কারা সেই সব মনীষী যাঁদের খেয়ে দেয়ে আর কিছু করার ছিল না, কাজেই এইসব ভূমি মাপা-মাপির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের জীবনী । বলছেন আর আঁকছেন...খাতার ওপর পাতার পরে পাতা আঁকা হয়ে যাছে মিশরের মানচিত্র...নীল নদ...সেখানে বন্যা...বন্যার পরে জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে “হতচকিত” মিশরবাসী মানুষের মুখের সারি...পিরামিড ছিল কি না এখন আর মনে করতে পারছি না । প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে আমরা পিথাগোরাসের থিয়োরিতে অবতীর্ণ হ’লাম । এর মধ্যে আমার পূর্ববর্তী জীবনের সকল পাপ মোচন হয়ে গেল, আমি মোটামুটি “জ্যা” ও “মিতি”র একজন “বিশেষজ্ঞে” পরিণত হ’লাম ।
২৬.
আমি কিন্তু এখনো ঠিক বলিনি আমার মেজভাই কেন একজন “কামেল” মানুষ । ধরুন আপনি তাকে নিমন্ত্রণ করেছেন আপনার কন্যার জন্মদিনে, সে কি উপহার নিয়ে আসবে জানেন ? উপহারের কথা পরে । আগে আপনার কন্যাকে শুভ জন্মদিন কামনা করতে যে অনন্য কার্ডটি সে দেবে, সেটা দেখেই আপনি “বাকরুদ্ধ” হয়ে যাবেন । কারণ, কোন হলমার্ক, আর্চিসের সাধ্য নেই এই কার্ড বানায় । এটি তার স্বহস্তে অঙ্কিত, লিখিত ও প্রচ্ছদিত কার্ড, এমনকি খামটি পর্যন্ত তার স্বকীয় । সেই কার্ডটি হতে পারে প্রজাপতি, হতে পারে ঘুড়ি, হতে পারে পাখি, হতে পারে হাতি, হতে পারে নৌকা আকৃতির । কাজেই খাম থেকে কার্ডটি বের করতে যেন খুব আলগোছে বের করবেন, নইলে পাখির পাখনা, হাতির শুঁড়, নৌকার মাস্তুল ভেঙ্গে যেতে পারে । প্রজাপতি হলে সেই প্রজাপতির দুই ডানা জুড়ে ক্ষুদে ক্ষুদে ক্যালিগ্রাফিক হাতে লেখা থাকবে সুকুমার রায়ের সমস্ত প্রাণকাড়া শিশুতোষ কবিতা, যা হয়তোবা আপনার দুই বছর বয়সী কন্যাটির বুঝতে আরও দশটি জন্মদিন পার করতে হবে (তবে যখন সে বুঝতে শিখবে তখন সে অহর্নিশি “পাগলা দাশু”, “রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা” কিংবা “ভয় পেও না ভয় পেও না / তোমায় আমি মারব না”র মত অসংখ্য বিমলানন্দের জগতে বিচরণ করবে । পাশের ঘর থেকে আপনি আপনার কন্যার খিলখিল হাসির ধ্বনি শুনতে পাবেন । এক অর্থে, এটি আপনার জন্যেও এক অনন্য উপহার) । কার্ডের একদম নীচে সুন্দর করে লেখা থাকবে শুভ কামনায় “কবিরাজ সালাউদ্দিন” (আগেইতো বলেছি আমার মেজ ভাই পেশায় কবিরাজ মতান্তরে “চিকিৎসক” ) । বলা যায় না, ছোট্ট একটা “উড়ন্ত” বেলুনও থাকতে পারে স্বাক্ষরের পাশে, সেই বেলুনের সুতোটি এসে দন্ত ন-এর মাত্রার সঙ্গে “একাত্ম” হতে পারে ।
একবারের ঘটনা বলি । খুব সম্ভবত: সেটা সীমা আপার (বড় মামার বড় মেয়ে) বিয়ের ঘটনা । আর না হলে সেটা আলমগীর ভাইয়ের (বড় খালাম্মার মেজ ছেলে) বিয়ের ঘটনা । বিয়ে বাড়ির হট্টগোলের মধ্যেও সবার চোখ চলে গেল...মেজভাই ও খোকন ভাই (ছোট খালাম্মার বড় ছেলে) ধরাধরি করে উপহার নিয়ে আসছেন । দু’জনেরই চেহারা বেশ ঘর্মাক্ত । নানান বর্ণিল কাগজে মোড়ানো উপহারটি কী ? একটি নৌকা...মাস্তুল, বৈঠা, পাল, ছই, মাঝিসহ... কাঠের নৌকা । সেবারে অবশ্য মেজভাই স্বহস্তে নির্মাণ করেননি সেই নৌকা । বিয়ের দিন তারিখ যদি সময় মত খেয়াল থাকতো, তাহলে নব দম্পতি এর চেয়ে ঢের ভাল মানের “তরণী” উপহার পেত । নেহাত সময় ছিল না বলেই কুটির শিল্পের দোকান থেকে এই নিম্ন মানের নৌকা উপহার । তবে উপহারের অনন্য রূপসজ্জা ও রবীন্দ্রনাথের “সোনার তরী” কবিতা সহযোগে “একমেবাদ্বিতীয়ম” কার্ড দিয়ে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । ভেবে দেখুন । বিবাহ উপলক্ষে সে আমলের গৎ বাঁধা উপহার ছিল ডিনার সেট, পেতলের ঘটি-বাটি, শাড়ি, ঘড়ি, প্লাস্টিকের কুৎসিত ফুল সহ কদাকার ফুলদানী । মুরুব্বীরা কেউ কেউ “মকসুদুল মোমেনিন”, “বেহেশতী জেওর”, “সোলেমানী খোয়াবনামা” জাতীয় বই দিয়ে নব দম্পতির ইহকাল ও পরকালের সম্ভাব্য সকল সমস্যার সমাধান করে দিতেন । বিদ্যানুরাগী বন্ধু বান্ধবরা বড় জোর “জহির রায়হান রচনা সমগ্র” উপহার দিতেন । কিন্তু কারুর মাথায় আসতো না যে নব দম্পতিকে একটি “প্রমাণ সাইজের” নৌকা উপহার দেয়া যেতে পারে...ইচ্ছে করলেই তারা সেই নৌকাটিকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে পড়ন্ত বেলায় “নৌবিহার” করতে পারে...বেলা পড়ে এলে নব দম্পতি “অন্তরঙ্গ” হতে পারে...নেপথ্যে তখন বাজবে হেমন্ত মুখার্জীর সেই কালজয়ী গান, “এই রাত তোমার আমার শুধু দু’জনের...কুহু কুজনের”...এমন রোমান্টিক উপহার “কামেল” লোক ছাড়া আর কে “উদ্ভাবন” করতে পারে ?
ওহ্, বলতে ভুলে গিয়েছি, আপনার বাসায় যদি মেজ ভাইকে কখনো নিমন্ত্রণ করেন তাহলে, অবশ্যই যেন আপনাদের ফুলদানীটি প্রস্তুত রাখবেন । কারণ, তিনি তাজা মৌসুমি ফুল ছাড়া কোন নিমন্ত্রণে যান না । স্বহস্তে সেই ফুলের তোড়াটিকে আগলমুক্ত করে ফুলদানীতে ফুলের ডগাদেরকে জলমগ্ন করে তবেই তিনি আসন গ্রহণ করবেন । সেই সঙ্গে গৃহকর্ত্রী পেয়ে যাবেন একটি সুসজ্জিত কার্ড । সেখানে যদি স্বাক্ষরের জায়গায় লেখা থাকে “কবি রাজ সালাউদ্দীন”, তাহলে জানবেন কবি ও রাজের মধ্যে অল্প বিস্তর ব্যবধানটি অনবধানতা জনিত নয়, ইচ্ছাকৃত । এই স্বল্প ব্যবধানের রহস্যটি হচ্ছে কবিতাটি তার স্বরচিত । দুই প্যারার ১৪ লাইনের সনেটটি তিনি গত রাতে লিখেছেন । অল্প বিস্তর কাঁটা ছেড়ার (মক্শের সেই প্রমাণ তার ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটের তলায় পড়ে আছে) পরে কবিতাটি এমন অনিন্দ্য সুন্দর “মেঘ”এর রূপ ধারণ করেছে । অন্ত্যমিল নিয়ে একদম ভাববেন না, কবিতার পয়ার মেলানো আমাদের পরিবারের মজ্জাগত । দু’বেলা মায়ের মুখে অন্ত্যমিলের ছড়া, কবিতা, গান, প্রবাদ, প্রবচন শুনতে হলে আর উপায় কি বলুন ? ধন্য আমাদের “ষড়যন্ত্রকারী” মা !
কোন কারণে যদি ফুলের জন্য আপনি তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তখন তিনি আপনাকে কালো মুখের উজ্জ্বল সলজ্জ হাসিতে মনে করাবেন, “জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, দুটি যদি জোটে...
২৭.
জীবনের প্রথমদিকের বেশ কিছু বছর অন্ধকারকে ভয় পেতাম । ভয়ানক ভয় । সরল কৈশোরের গায়ে লেগে আছে অন্ধকারের প্রতি অসহায় আতঙ্ক । জানি না কেন । অথচ গ্রামের ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেইতো শুরু হয়েছিল জীবন ! আমার জীবনের আদিতে যে গ্রাম, সেখানে ছিল না কোন বৈদ্যুতিক আলো । ছিল না কোন নাগরিক কৃত্রিমতা । অন্ধকার ছিল নিশ্ছিদ্র । পূর্ণিমার দু’পাশের কয়েকটা দিন বাদ দিলে বাকী দিনগুলো জুড়ে অন্ধকার অমানিশা । জোনাকি পোকার বিন্দু সম আলোর ফুলকি ছাড়া আর কোন আলো দেখা যেত না জানালা দিয়ে...
কিন্তু আমি অন্ধকার ভয় পেতাম । ভীষণ ভয় পেতাম । অন্ধকারে পর্দা নড়ে উঠলে ভয় পেতাম, বিছানার নীচের “ঘাপটি মারা” অন্ধকারে ভয় পেতাম, লোড শেডিংয়ের জানালা দিয়ে বাইরের “অজানা” অন্ধকারে ভয় পেতাম, হারিকেনের আলোর বিপরীতে দেয়ালের গায়ে নিজের ছায়ার অন্ধকারকে ভয় পেতাম । আমার “মীরজাফর” ভাই আমাকে সেই অন্ধকারের ভয় দেখিয়ে খুব মজা পেত । অন্ধকারের সঙ্গে সে ড্রাকুলা, ভ্যাম্পায়ারের ভয়গুলোও মিশিয়ে দিত । আমি ভয়ে নীল হয়ে যেতাম ।
শীতের এক বিকেলে পড়ছিলাম ওয়েস্টার্ন সিরিজের কোন একটা বই । বাসার সামনের মাঠটায় জমিয়ে কানামাছি খেলছে কুঁচো কাঁচার দল । বারান্দার সামনের সিঁড়িতে বসে ডুবে আছি আমি বইয়ের মধ্যে । রাস্তার পাশের সেই বাসাটায় প্রাচীর ছিল, কোন গেইট ছিল না । বাসার সামনেই ছিল ল্যাম্পপোস্ট । আর ছিল প্রাচীরের এক ধারে একটা ঝাঁকড়া আম গাছ । এক সময় মাগরিবের আজান পড়ে গেল, কুঁচো-কাঁচার দল সেদিনের মত কল-কাকলী অবসান করে ঘরমুখো চলে গেল । শীতের অতিথি পাখির দল আকাশের গায়ে ডেকে ডেকে কুলায় ফিরে যেতে লাগল । আমি বইয়ের মধ্যে ডুবে থেকেও ওদের সেই ডাক শুনতে পেলাম । আবছা হয়ে আসা আলোর শেষ বিন্দু দিয়ে আমি পড়ার চেষ্টা করছি....টেক্সাসের কোন এক দূর্বৃত্তের হাত থেকে এক বুনো সুন্দরীকে বাঁচানো এক সাহসী বীরের গল্প । প্রাকৃতিক আলোর শেষ বিন্দুটিও যখন ফুরিয়ে এলো, আমি চোখ তুলে চাইলাম । প্রতিদিন এই সময়টায় রাস্তার ল্যাম্পপোস্টটা জ্বলে উঠে, আজ কেন জ্বলে নি ?
হঠাৎ উপলব্ধি করলাম, কেউ নেই এই চরাচরে । আচমকা নিঝুম হয়ে গিয়েছে সব কোলাহল । আমার সামনে ক্রমশ: গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকলাম সামনের আম গাছটার দিকে... একটু একটু করে আলো ফুরিয়ে যাচ্ছে...জমছে অন্ধকার...কোন এক অদৃশ্য শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জমছে অন্ধকার...পাতার ফাঁকে ফাঁকে, ডালের গায়ে গায়ে...জমছে অন্ধকার...এক সময়ে সমস্ত গাছটাই একটা নিরেট অন্ধকারে হারিয়ে গেল, আবছা একটা কাঠামো হয়ে...কই আমারতো খারাপ লাগছে না ?...আমি যে নিমজ্জিত হয়ে গেলাম অন্ধকারে, আমারতো ভয় লাগছে না ?...অন্ধকারেরও যে “রূপ” আছে, নৈশব্দেরও যে “সুর” আছে সেই আমি প্রথম জানলাম...প্রকৃতির যে নিজস্ব এক “সংগীত” আছে সে আলোতেই হোক আর আঁধারেই হোক, শুধু মগ্ন চৈতন্যে শোনা যায় সেই সংগীত, আমি সেই প্রথম জানলাম...
......
পাদটীকাঃ একটা সময় ছিল অন্ধকারের ভয়কে অতিক্রম করতে মানুষের সঙ্গ খুঁজতাম । মনে হ’ত মানুষের উপস্থিতিই অন্ধকার দূর করে দেয় । হায়, আমি তখনো জানি না যে, মানুষ প্রকৃতির চেয়ে অনেক অনেক বেশী “অন্ধকার” ধরে...মানুষের অন্ধকার দেখে এমন কি পশুও লজ্জা পেয়ে যায়...
মন্তব্য
আপনার লেখায় দুটো ভাগ পরিস্কার। একটা ভাগে একদম হালকা করে নেন মনটাকে, দ্বিতীয় ভাগে যে "দাগা"টুকু আছে, সেটাকে "মোক্ষম" করার জন্য! কাজেই লেখার প্রতিক্রিয়াও স্বাভাবিকভাবেই "দ্বিবিধ"!
১। 'সেজভাই' আর 'মেজভাই' এর পরিচয় তো পাওয়া গেল। আপনারা ন'ভাই-বোন না? বাকিদের গল্পও আসবে ভেবে ভাল লাগছে!
২। মানুষের দুর্ভাগ্য যে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই 'অন্ধকার'-কে 'অন্ধকার' বলে চিনতে পারে না। 'দৃষ্টিহীন' সেই মানুষগুলোর জন্য সত্যি কষ্ট হয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মর্ম, আমি দেখলাম আপনি এই “আজাইরা” ঘরের চাবি ভাঙ্গা ভাঙ্গির অদরকারী স্মৃতির সবগুলো পর্ব এক টানে পড়ে ফেললেন । শুধু তাই না, আমার মন খারাপ করে দেয়ার মত যথেষ্ট “আর্দ্র” মন্তব্যও করে ফেলেছেন । ভাইরে, জীবন এত অকারন সুন্দর কেন ?
আমার নয় ভাইবোনের কথা বললেন না ? আমার স্বর্গগত বড় আপাসহ আমরা নয় ভাই বোনই । ঈশ্বরের হিসেব খুব ভাল । বড় আপার পরে তিন ভাই, তারপর ছোট’পা, তারপর আবার তিন ভাই । সব শেষে আমি “আহ্লাদের ঢেপি” । ২৯ বছরে চলে গিয়ে বড় আপা অনেক বড় অন্যায় করেছেন, তাই আমরা বাকী ভাই-বোনেরা তাঁকে চিরকাল আমাদের কাছে এই ভাবে রেখে দিয়েছি । বলি, “আমরা নয় ভাই বোন, ছয় ভাই, তিন বোন । শুধু বড় আপা আমাদের কাছে নেই...
আমার অন্য ভাইবোনদের কথা বললেন...আমার “মীরজাফর” ভাই সোহেল কিন্তু আছে সব সময় । চার বছরের ছোট-বড় হলে হবে কি, সারাক্ষন তো ওর সঙ্গেই লেগে থাকতাম । “সিবলিং রাইভালরি” ছাড়া কিন্তু ছেলেবেলা জমে না
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি আপনার এই সিরিজের জন্য। মাঝে মাঝে মনে হয় কোনদিন নিজের জীবন নিয়ে এমন লিখতে পারব-
facebook
শুরু করে দেন ঘণু, শুরু করে দেন । আমার খুব জানার ইচ্ছা পাটিগণিতে কত পেয়েছিলেন আপনি
অটঃ থামবস ডাউন কেনু ঘণু ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অদ্ভুত ভাল লাগল। একি কিবোর্ড থেকে কত রকম অনুভূতি জন্ম দেন আপনি!!!
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অনেক ধন্যবাদ শাব্দিক । আমার কি দোষ বলেন, এক এক সময় এক একটা স্মৃতির ভুত এসে গেড়ে বসে মাথায় । তখনই আর না পেরে বসে পড়ি এই কি-বোর্ডে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
এই সিরিজটা আগে পড়া হয়ে ওঠেনি। ৭-৬-১ পড়লাম আজ। মাইজ্জা ভাইরে খুব ভালো পাইলাম।
মাইজ্জা ভাইয়েরে কমুনে । আপনেরে তার পইক্ষে ধইন্যবাদ ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আহ্ সেবা ওয়েস্টার্ন .....
অজ্ঞাতবাস
আহ্ সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আমি বড় হয়েছি ভাইবোন ছাড়া, তাই এই মেজোভাই টাইপ মানুষগুলো কেমন হয় ঠিক আইডিয়া করতে পারিনা। লেখা আগের নাহান ফ্যান্টাবুলাস হইছে আফা, নয়া বছরের এক বস্তা শুভেচ্ছা নিয়েন।
বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন রে ভাই । বড় বাঁচা...নীল নদের বন্যার হাত থেকে বেঁচে গেছেন
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বেচারা...শুভেচ্ছার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । কি করে যেন ফসকে গিয়েছিল আগের বারে । এখন সাফিনাজ আরজুর কমেন্টের জবাব দিতে গিয়ে চোখে পড়লো আপনার শুভেচ্ছাটিও । আপনাকেও নতুন বছরের এক বস্তা শুভ ইচ্ছা...ভাল থাকুন এই পুরনো পৃথিবীতে...আসুন স্বপ্ন দেখি একদিন এই গ্রহটি সকল নারীর জন্য নিরাপদ হবেই হবে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বড় বাচা বাচলাম কিনা জানিনা, তবে আমার কাছে কিন্তু নদীর ওপারের ঘাসই সবুজ লাগে।
স্বপ্ন দেখে যাই, স্বপ্ন বুনে যাই। আগামীকাল সংসদ ভবনের সামনে টাঙ্গাইলের মেয়েটার জন্য মানববন্ধন করা হবে, যাওয়া সম্ভব না কিন্তু হৃদয় থেকে সমর্থন দিয়ে যাব
আজ ভোর হয়নি, কাল হবে কিনা তাও জানা নেই, তবে ভোর একদিন আসবেই আসবে...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
লেখা ভাল লেগেছে।
অনেক অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
মেজ ভাইকে খুবই মজারু পেলাম জোহরাপু। এমন ক্রিয়েটিভ ভাই থাকাও তো বিশাল ব্যাপার।
ইয়ে মানে আপনি ঠিক কি কি কামেল উপহার পেয়েছেন উনার কাছ থেকে জানতে মন চাই।
এবার লেখার কথায় আসি, আগেই পড়েছিলাম, মন্তব্য করা হয়নি।
লেখা চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক
এই সিরিজটা পড়তে অদ্ভুত ভালো লাগছে।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপু।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
মেজভাইয়ের কাছ থেকে কী কী উপহার পেয়েছি ? কেন এই যে মিশরের মানচিত্র, নীল নদের বন্যা, আম্র বৃক্ষ তলে নিউটন...এ সব ভাল লাগল না ?
লেখা চলুক চলুক তো করছেন, আমার ঘরদোরের কাজগুলো করে কে ? ছেলের স্কুলে লাঞ্চ, নিজের ডিনার, পাড়া-প্রতিবেশীর দাওয়াতের উপহার...বড় ঝালেমা...এর মধ্যে আবার আদি অকৃত্রিম আলখেল্লাধারী রবীন্দ্রনাথ, যখন তখন গেয়ে উঠে গোধুলি গগণে...
যাকগে আপনাকেও নতুন বছরের এক বস্তা শুভ ইচ্ছা...ভাল থাকুন এই পুরনো পৃথিবীতে...আসুন স্বপ্ন দেখি, একদিন এই গ্রহটি সকল নারীর জন্য নিরাপদ হবেই হবে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
গানের জন্য অনেক আপু। এই রবি বুড়োটার যন্ত্রণায় আমিও অস্থির।
আপনারেও এক উদাসী গান দিলাম।
অত কিছু জানিনা, আপনার ঝালেমা নিয়া আপনি থাকেন, আমার কিন্তুক লেখা চাই।
ইয়ে মানে আরেকটি কথা ছিল, আপনি বলার কি দরকার আমাকে, তুমি টাই তো ভালো শোনায়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
লায়লা (সাফিনাজ) আরজুমান্দ বানু (আরজু), উদাসী গান ভালু পাইলাম । তবে বেশী বেশী উদাসী হওয়া স্বাইস্থের জন্য ভাল না । খাওয়া দাওয়া ঠিক মতন করা চাই ।
আমার কিন্তু ভাই তুমি বলতে কুন অসুবিধা নাই । একটাই কন্ডিশন, আমি তুমি শুনতেও ভালু পাই । বড় ভইনেরে “তুমি” বলা জায়েজ আছে আমার ডিকশনারীতে...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আবার কিন্তু শুক্রবার আসছে - আপনার লেখা জমিয়ে রাখছি
শুক্রবার আসলে শুধু পড়লেই হবে ? একটু আধটু বলতে হবে না...বানানগুলো ভুল কোতায় কোতায় হল...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অদ্ভুত সুন্দর একটা লেখা পড়লাম । আপনার সবগুলো লেখা পড়া হয়নি, ভাবছি সব পড়ে ফেলব সময় করে
ভয় ধরিয়ে দিলেন তো...কি সব ভুল্-ভাল্ লিখি । এসব আবার সময় করে পড়েও ফেলবেন
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
হুম বুচ্ছি। লেখালিখি ছাড়া আপনার আর কী কী কামেলত্ব আছে তা জানতে হলে এনাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে।
কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না । নিজেই বলে দিচ্ছি, “ঘুম”এ আমার একটি পিএইচডি ডিগ্রি আছে । আর কোন কাজে কুনই যোগ্যতা নাই
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধুর!! সবাই সব ভালো ভালো মন্তব্য করে ফেলেছে, আর আমার মতো ক-অক্ষর গো-মাংসের জন্য শুধুই অধিক ব্যাবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া জীর্ণ কিছু বিশেষণ! আপনি সত্যিই খুব ভালো লেখেন। অনেকদিন পর সচলে ঢুকে দেখি পাঁচ পাতা বকেয়া হয়ে গেছে। আপনারটা দিয়ে শুরু করলাম কারণ মা বলেন সবসময় ভালো কিছু দিয়ে শুরু করতে আর আপনার লেখাতো শিওর শট্! আপনার ভালো হোক।
বিভূতিভূষণ মনে পড়ে গেলো।
পশু-পাখির রূপ আলো-আঁধারে পরিবর্তন হয়না, মানুষের হয়। শুধু মানুষই পারে এই পরিমান অন্ধকার নিজের মধ্যে ধারণ করতে। কখনো কোন পশুকে দেখিনি অকারণে আরেকটি প্রাণীকে কষ্ট দিতে।
ফারাসাত
কথা ঠিক না ফারাসাত । আপনি একটি হৃদয় আর্দ্র করা মন্তব্য করেছেন ।
মার কথা শোনা ভাল
আপনারও ভাল হোক, ফারাসাত ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নতুন মন্তব্য করুন