বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...
... ...
এই সব অদরকারী স্মৃতির কোন পরম্পরা নেই । তবু যদি কারুর আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পর্ব এখানে ।
... ...
৩১.
আশির দশক । আব্বা রিটায়ার করলেন । মিয়াভাই সুদূর আমেরিকায় রসায়ন শাস্ত্রে পিএইচডির অভিসন্দর্ভ লিখছেন, মেজভাই সদ্য পাস করা “সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে”র চিকিৎসক, পরের তিন ভাই বুয়েট এর ছাত্র, ছোট’পা জাহাঙ্গীর নগরে...বাড়িতে শুধু সোহেল আর আমি । পরিবারের আর্থিক অবস্থা “কুপির সলতে” না হলেও হ্যারিকেনের “কেরোসিন”...আব্বার প্রভিডেন্ট ফান্ডের শেষ বিন্দুটি দিয়ে মিরপুরের জমিটিতে দুই রুমের একটি “প্রাসাদোপম” টিন শেড নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে । মেঝে কাঁচা...বাড়ির দেয়ালের ভেতরের দিকটা পলেস্তারা করা গেলেও বাইরেটা কুলিয়ে ওঠেনি । জলের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন করা হ’ল । বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগের জন্য আবেদন করা হ’ল । আমাদের পাড়ায় তখন সব মিলিয়ে বিশের অধিক বাড়ি ছিল না, কাজেই “উন্নয়নশীল” সেই পাড়ায় জীবন যাপনের এই সব প্রয়োজনীয় জিনিসের সংযোগের জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হ’ত । সে যাক, সে আমলে ধৈর্যের কোন কমতি ছিল না ।
এক শুভ দিনে আমরা “স্বনির্মিত” গৃহে প্রবেশ করলাম । হারিক্যান আমাদের যাবতীয় আলো দান করল, টিউবওয়েল আমাদের সকল পিপাসা নিবারণ করল, খাদ্য প্রস্তুতের জন্য পার্শ্ববর্তী বড় খালাম্মার বাসার রসুই ঘর ব্যবহৃত হ’ল । ক্রমান্বয়ে গ্যাস, জল ও বিদ্যুতের সংযোগ এলো । কিন্তু না এলেও তেমন দুঃখজনক হ’ত বলে মনে হয় না । আমার বাবা ও মায়ের ছিল সুখী হওয়ার এক ঈর্ষনীয় ক্ষমতা । আমরা মহা আনন্দে সেই বাড়িতে “বাড়িওয়ালার” দিনযাপন করতে লাগলাম...বৃষ্টি হলেই টিনের চালে “ঝামমুর ঝুমমুর” শব্দে ময়ূরের “নূপুর” নৃত্য...জানালা দিয়ে শো শো বাতাসের ঝাপটা...বাড়ির সামনের খোলা মাঠটা বুদ্ধদেব বসুর পুরানা পল্টনের মাঠ...মোট কথা জীবনে কোন “অভাব” ছিল না ।
আমার বাবা-মা পূর্ণোদ্দমে স্ব-নিকেতনে বৃক্ষ রোপণ করতে শুরু করলেন...আম, জাম, কলা, সুপারি, নারকেল, জলপাই, পেয়ারা । পুষ্প ছাড়া কোন সৌন্দর্য হয় ? সৌন্দর্য পিয়াসী আমি লাগালাম গাঁদা, গোলাপ, বেলি, গন্ধরাজ, বাগান বিলাস, রজনীগন্ধা আর কৃষ্ণচূড়া । আরও ছিল টাইম ফুল, মোরগ ফুল, পাথরকুচি, মানি-প্লান্ট ও পাতাবাহার । আব্বা শীতকালে লাউ, টমেটো, বেগুন, কাঁচা মরিচ ও ধনে পাতার চাষ শুরু করলেন । প্রতিদিন বিকেলে ছোট ছোট চারা গাছগুলোকে শীতের “ওষ”এর (কুমিল্লার ভাষায়, শিশির) হাত থেকে বাঁচাতে কলা গাছের পাতার “জামা” পরিয়ে দিতেন, সকালে রোদ খাওয়ানোর জন্য সেই জামা খুলে দিতেন । একবার বোধহয় ইক্ষুর গাছও লাগিয়েছিলেন । আমার মা শখ করে বাড়ির একটি নামও ঠিক করলেন, “সরকার কুটির”, নেহাত বাড়ির কোন গেইট ছিল না বলে আমরা সেই নেম প্লেটটি কখনোই লাগাতে পারিনি, কিন্তু জানতাম আমাদের কবিতা প্রেমী জননী তাঁর এই অকিঞ্চিৎকর বাড়িটিতে সুখী ছিলেন ।
সেই রকম সময়ে আমি “আচমকা” (সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে) ক্লাস এইটে সেকেন্ড গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে গেলাম । আমাদের বাড়িতে পরীক্ষা পাশের খবরে মিষ্টি কেনার চল ছিল না সংগত কারণেই । আমি তখনও অর্থের মত “অর্থহীন” জিনিসের চেয়ে আকাশের মেঘেদের হিসাবই ভাল বুঝি, কাজেই মা জননী প্রতি মাসে ক্যালেন্ডারের পাতা উলটানোর জন্য কতটা আকুল প্রার্থনা করেন তার খবর রাখি না । সেই সময়ে আমার মেজভাই বড়ুঢ়া উপজেলা থেকে পত্রপাঠ আমার বৃত্তি পাওয়ার সুসংবাদে ঢাকায় এসে আমাকে নিয়ে গেলেন জিপিও সংলগ্ন পুরানো স্টেডিয়ামের বইয়ের দোকানে । তার আগে অবশ্য দুই ভাইবোনে প্রিন্স হোটেলের গরুর কলিজা ও শিক কাবাব সহযোগে তোফা তন্দুর রুটির আহার করে নিলাম । মিষ্টান্ন ও ঠাণ্ডা কোমল পানীয় সহ খাবারের বিল খুব সম্ভবত: সাইত্রিশ টাকা এলো । তারপর বইয়ের দোকান...আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...এ বইয়ের পাতা উলটাই...ও বইয়ের গন্ধ শুঁকি...আহ্ নতুন সব বইয়ের মলাট কি মনোহর...আর কি মধুর তার সৌরভ !
চোখ আটকে গেল বিশ্বভারতীর একটু মরচে ধরা হলদেটে মলাটের “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” স্বাক্ষরিত বই গুলোর ওপর (এর মধ্যে কিছু বই বাড়িতে ছিল । কিন্তু একান্ত আপন কপি থাকার একটা “একনায়ক-তান্ত্রিক” গর্ববোধ আছে না ? মলাটের পরের পৃষ্ঠায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার একটা “বিমল আনন্দ” আছে না ?) । মেজভাই যা যা বই নিতে চাই তা এক জায়গায় জড়ো করতে বলে নিজের মত বই দেখছেন । আমি তখন এক এক করে জড়ো করছি গল্পগুচ্ছ, গীতবিতান, নৌকাডুবি, গোরা, চিরকুমার সভা, গীতাঞ্জলী...ঠিক জানি না তো মেজভাই কয়টা বই কিনে দেবে ! দোকানদার কি বুঝেছিল কে জানে, মেজভাইকে বলল, “এ রকম খুচরা না কিনে পুরো রচনাবলীটা কিনলে কিন্তু দামে কম পড়বে” । আমি তাকিয়ে আছি মেজভাইয়ের মুখের দিকে । আমার ভাই বলে উঠল, “তাহলে তাই কেন দিচ্ছেন না ? বারবার এত দূর আসতে যেতেও তো সময় যাবে, টাকা খরচ !” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমিতো আরও কিছু বই নিয়েছি তোমার জন্য ” । বলেই রবীন্দ্র রচনাবলীর পাশে রাখলেন লাল মলাটের ওপর বেড়ালের ছবি সহ “সুকুমার রায় শিশু সাহিত্য সমগ্র”, সবুজ কাপড়ের মলাটে “মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা সমগ্র”, পাতলা প্লাস্টিকের লাল মলাটের ভেতরে ফিন ফিনে কাগজে বাংলায় অনূদিত “বাইবেল” ও প্রগতি প্রকাশনীর “রুশ ইতিহাসের কথা ও কাহিনী” । বইয়ের সর্বমোট মূল্য কত এসেছিল এতদিন পরে আর মনে নেই । খুব সম্ভব এক হাজারের এদিক ওদিক কিছু একটা হবে ।
অতঃপর আমরা ভ্রাতা ভগ্নী স্কুটার সহযোগে বাড়ি অভিমুখে রওনা দিলাম । স্টেডিয়াম পাড়া থেকে বের হয়ে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ছাড়িয়ে মিরপুর রোড দিয়ে স্কুটার এগিয়ে যাচ্ছে...বাতাসে শন শন উড়ছে এক কিশোরীর চুল...স্কুটারের জানালা দিয়ে বের হয়ে আছে শাসন না মানা সেই চুল...কেউ কি জানে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী রাজকন্যাটি যাচ্ছে এই পথ দিয়ে ? তার ভ্রাতা তাকে কোন মণি- মাণিক্য উপহার দিয়েছে কেউ কি তা জানে ? হায়, কেউ জানে না । যদি জানতো তাহলে ঈর্ষার আগুনে পুড়ে তারা “ছাই” হয়ে যেত !
অবশেষে আমরা বাড়ি পৌঁছলাম । সবার বিস্মিত চোখের সামনে দিয়ে আমরা ভ্রাতা ভগ্নী কয়েক দফায় বইয়ের বান্ডিল স্কুটার থেকে নামালাম । বই নামানো শেষ হলে আমার মা আর ছোট’পা পাশের ঘরে আমাকে ডেকে নিলেন । চাপা স্বরে ছোট’পার জিজ্ঞাসা, “কত টাকার বই কিনলি ?”
আমার জবাব, “ঠিক জানি নাতো । মনে হয় ন’শ থেকে এক হাজার টাকা ।”
-“তুই জানিস মেজভাইয়ের বেতন কত ?”
-“কত ?”
-“না জেনেই এক হাজার টাকার বই কিনে ফেললি ? মেজভাই সাকুল্যে বেতন পায় মাসে বাইশ শ টাকা । তার মধ্যে এক হাজার টাকা চলে গেলে, তার চলবে কি করে - ভেবেছিস ?”
আমি তখন নির্ঘাত জানি, ছোট’পাটা আমাকে হিংসা করছে । নিজে তো আর কখনো সেকেন্ড গ্রেডে বৃত্তি পায়নি, তাই আমার সঙ্গে এমন হিংসে । আমি তখন সাত তাড়াতাড়ি মাথার মধ্যে হিসেব করে বলি, “তো কি হয়েছে ? এখনো তো বার শ টাকা আছে মেজভাইয়ের । ওতেই খুব তার সিগারেট আর খাওয়া দাওয়া চলে যাবে ।” প্রিন্স হোটেলে কাবাব ও তন্দুর রুটির কথাটা সন্তর্পণে চেপে যাই আমি । হিসাবের মধ্যেও ধরি না তাকে ।
ছোট’পা এই বার মার দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলে, “আম্মা, মেজভাইয়ের কাণ্ডজ্ঞানটাই বা কেমন ? এই বিদ্যাধরীকে দোকানে নিয়ে বলেছেন যত খুশী বই নাও, কিচ্ছু অসুবিধা নেই । ইনি যে পুরা দোকান তুলে বাড়ি নিয়ে আসেন নাই, তাই তো আশ্চর্য !”
এতক্ষণে আমার মা মুখ খুলেন । কেমন এক অদ্ভুত গলায় বলেন, “তুই আমার মেয়ে হয়েও বুঝিস না এক হাজার টাকার বই একবারে কিনলে কি হয় ?”
এই এক সমস্যা বড়দের । কখনো সোজা করে কিছু বলবে না । বই কেনার সঙ্গে নুরজাহান বেগমের কন্যা হওয়ার কি সম্পর্ক ? আর মা এমন আজব ব্যবহার করছেন কেন ? মা নিজেইতো নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত বাবুপুরা মার্কেট থেকে নিয়মিত বই কেনেন । বই কেনা নিয়েতো মাকে কখনো এমন গলায় কথা বলতে শুনিনি !
৩২.
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে । ফাইনাল পরীক্ষার আগের “প্রস্তুতিমূলক” ছুটি চলছে । পরীক্ষার্থীরা সবাই প্রাণপণে টেস্ট পেপার সলভ করছে । যত বেশী টেস্ট পেপার সলভ করা হবে, প্রকৃত পরীক্ষায় সাফল্যের সম্ভাবনা তত বেশী । কিন্তু আমার ঘুমের সমস্যার কি হবে ? যেই মাত্র টেস্ট পেপার খুলে বসছি, অমনি অপ্রতিরোধ্য ঘুমও এসে আমার দু’চোখ বন্ধ করে দিচ্ছে । আমি যে কি ভীষণ অসহায় বোধ করছি ! কোনভাবেই যখন ঘুম সমস্যা সলভ্ করতে পারছি না, তখন জীবনে প্রথম গণমাধ্যমে সাহিত্য চর্চার একটি সুযোগ এলো । আর তাতেই কিছুদিনের জন্য “ঘুম” দু’চোখ থেকে বিতাড়িত হ’ল । এতো আর “নিরানন্দময়” টেস্ট পেপার নয়, রীতিমত “দেশাত্মবোধক” সাহিত্য চর্চা !
মাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষা মার্চ মাসে । তার আগের অক্টোবর মাসে পাড়ায় নতুন আসা শিউলির সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল । শিউলিরাও অনেকগুলো ভাই-বোন । রুবী আপা তখন বাংলা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । তার অনুপ্রেরণায় আমরা বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের প্রজেক্ট হাতে নিয়ে ফেললাম । রুবী আপা সম্পাদকীয় লিখলেন । লাভলী আপার আঁকার হাত ভালো, অংকনের দায়িত্ব নিলেন । শিউলির অন্য ভাই-বোনেরা ও আমি দেশাত্মবোধক “সাহিত্য” রচনার দায়িত্ব নিলাম । দেখা গেল আমরা সকলেই দেশ ও কবিতা ভালবাসি । সবাই গড়পড়তা তিনটি করে দেশাত্মবোধক কবিতা লিখে ফেলেছি (রুবী আপাকে অনেক নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করে কবিতার বাছাই “চূড়ান্ত” করতে হয়েছিল) । সেই সব কবিতার মধ্যে নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, হেলাল হাফিজ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতার তীব্র “ছায়া ও প্রভাব” ছিল দৃশ্যমান । বাঙালি তারুণ্যের সঙ্গে কবিতা, প্রেম (সাধারনতঃ দেশ দিয়েই তার “সূচনা”...অতঃপর...) ও দ্রোহ (মতান্তরে, “যুদ্ধ”) এই তিনে মিলে একাকার । শুধু শুধু তো কবি বলেন নি, “এখন যৌবন যার...”
১৬ই ডিসেম্বরর ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে আমরা সেই দেয়াল পত্রিকাটি পাড়ার বিশেষ দ্রষ্টব্য দেয়ালে লাগিয়ে দিলাম (দোকান থেকে উন্নত মানের আঠা কিনতে হয়েছিল) । ঝকঝকে সেই দেয়াল পত্রিকার মাঝখানে জ্বলজ্বল করছিল শামসুর রাহমানের “স্বাধীনতা তুমি” কবিতা । “দেশপ্রেমিক” সাহিত্যিক আমরা ক’জন যখন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছি পাঠক প্রতিক্রিয়ার (কে জানে, সাহিত্যে “নোবেল”ই না পেয়ে যাই !), সেই সময়ে শিউলির ছোট ভাই রনি ভগ্নদূতের মত খবর আনল, আমাদের দেয়াল পত্রিকাটি পাড়ার ছেলেদের হাতে “নিহত”...কারা যেন সেই পত্রিকাটি শুধু দেয়াল থেকে তুলেই ফেলেছে তাই না, ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে রেখেছে রাস্তার ওপর । পরে জেনেছিলাম যে ছেলেগুলো স্কুলের পথে যেতে-আসতে আমাদেরকে স্ব-কণ্ঠে “মেলোডিয়াস” গান শুনাতো, “তুমি যে আমার কবিতা, আমারও স্বপন, আধো জাগরণ...” তারাই দেশপ্রেমিক দেয়াল পত্রিকা উৎপাটনের কাজটি সম্পন্ন করেছিল । “কবিতা”দের কবিতা ঠিক পছন্দ হয়নি তাদের...যদিও আমরা খুব আহত হয়েছিলাম সেই ঘটনায় ।
৩৩.
চমৎকার ইলাস্ট্রেশনে ভরা সাদা মলাটের এক অদ্ভুত বই সের্গেই আলেক্সেয়েভের “রুশ ইতিহাসের কথা ও কাহিনী” । প্রগতি প্রকাশনীর প্রথম বই আমার জীবনে । একদম অন্য রকম তার সাজসজ্জা । মলাট বেশ পুরো । কাশ ফুলের মত রং প্রতিটি পাতার । আমি এর আগে আর এমন বই দেখিনি ! আমাদের পাঠ্য বইগুলোতো শুধু মাত্র ম্যাড়ম্যাড়ে ইলাস্ট্রেশনের কারণেই বেশ “নিষ্প্রভ” ছিল । বইয়েরও যে অঙ্গ সজ্জার একটি ব্যাপার আছে তা আমি এই বইটি হাতে নিয়েই প্রথম জেনেছিলাম । ভারী অফসেট কাগজের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন কোন এক অচিন পাখির পালকের মত কোমল, পেলব । এ মলাট থেকে ও মলাট পর্যন্ত প্রতিটি পৃষ্ঠায় লেখার পাশাপাশি চমৎকার বর্ণিল সব হাতে আঁকা ছবির সমাহার...আমাকে একটানে না দেখা এক দেশে নিয়ে গেল...
কী ছিল সেই বইতে ? ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে এক দেশের ইতিহাস । রুশ নামে এক জাতির কয়েক শতকের ইতিহাস...মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস... “স্তেপান রাজিন” নামে এক বিদ্রোহী কসাক (কৃষক) থেকে “ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন” নামের এক স্বপ্নবাজ নেতার ইতিহাস...ভূমিদাস আর ভূমির মালিকের বৈষম্য ভাঙ্গার ইতিহাস...জমিদার, অসৎ ব্যবসায়ী আর জারের শৃংখল থেকে সাধারণ শ্রমজীবী কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি অর্জনের ইতিহাস...
সেই বইটিতে ছোট ছোট গল্পের মত করে দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস বলা হয়েছে কৈশোরের ভাষায় । সেখানে আছে ইগর, নিকোলাই, নাদিয়ার মত কিশোর-কিশোরীরা । গ্রামের অপাপবিদ্ধ এই শিশু-কিশোররা বলশেভিক বিপ্লবের পরে “ব্যাক্তি” মালিকানা তুলে “সরকারী” খামার ব্যবস্থার কথা বলছে আর ভাবছে...কেমন হবে নতুন এই ব্যবস্থা ? খড়ের গাঁদায় শুয়ে শুয়ে ওরা রাতের আকাশের গায়ে অদৃশ্য সীমানা নির্ধারণ করছে...এটুকু আকাশ আমার...ওটুকু তোমার...তারপর এক সময় নিজেরাই বলছে, “না থাক, আকাশ অখণ্ডই থাক...একটাই আকাশ...সবার থাক...
এই বইটি আমাকে ভীষণ নাড়া দিয়ে গেল । মনে মনে আমি তার আগে অনেকবার ভেবেছি, এই জগত জুড়ে একটিই পরিবার, তাহলে এতো ঘরবাড়ির কী দরকার ? একটা বিশাল বড় বাড়ি বানালে কি হ’ত, তাহলে সবাই একটা বাড়িতে থাকা যেত ! বহুতল সেই বাড়ির এ তালা থেকে ও তালাতে গেলেই দেখা হয়ে যেত বন্ধুদের সঙ্গে । সারা পৃথিবীর না হোক একটা দেশের মানুষের জন্যও কি একটা বাড়ি বানানো যেত না ? তাহলে তো শৈত্য প্রবাহে, গ্রীষ্মের তাপ দাহে কিংবা বজ্রপাতে কেউ মারা যেত না...যত বড় হয়েছি, তত জেনেছি শ্রেণিভেদের দেয়াল আলাদা করে আমাদের বাড়ি...পাড়া...স্কুল...খেলার মাঠ...পার্ক...কারখানা...হাসপাতাল...লাইব্রেরী...এমনকি নদী...পাহাড়...ঝর্না...আকাশও...
আর তাই মানুষের অধিকার আদায়ের স্বপ্নের চেয়ে মহৎ কোন স্বপ্ন নেই ।
মন্তব্য
ফারাসাত
ফারাসাত, এসব ফাঁকিবাজি মন্তব্যের মানে কী ?
যাকগে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ফাঁকিবাজি না করে উপায় আছে?? আপনি কি আশা করছেন আমি বিশেষণের ভান্ডার নিয়ে বসে আছি যে আপনার একের পর এক ক্লাসিক ডেলিভারী গুলোতে শুধু মন্তব্য করেই যাবো? আমি কি ডিকশনারী??
লেখা যাতে না থামে!!
ফারাসাত
হ।
সামর্থ্য আর প্রয়োজনের চাইতে বেশি ভেবে আর বকে এমনিতেই ডুবে আছি গভীর বিষাদে।
নিত্যনুতন প্রশংসাবাণী কই পাব?
এই সিরিজটার জন্য অপেক্ষা করি না, প্রতীক্ষা করি।
দ্বিতীয় শব্দটা যে খানিকটা বিশেষ অর্থ বহন করে, সেটা জানো নিশ্চয়ই?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কিচ্ছু জানি না, ভইন । শুধু এট্টু শান্তিতে ঘুমাইতাম চাই
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আবার কয় ? এক ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণকে আস্কারা দিয়ে দিয়ে শুধু জাগিয়ে দিয়েছে সচলায়তন তাই না, একেবারে তৈলাক্ত বাঁশের চুড়ায় তুলে দিয়েছে । এখন অসহায় সেই কুম্ভকর্ণ আর ঘুমাতেই পারছে না ...
লিখেই চলেছে সব অখাদ্য জিনিস...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।।
অনেক অনেক ধন্যবাদ স্বপ্ন...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
এবার শুক্রবার এর আগেই পড়ে ফেললাম
যথারীতি
গুড জব...আপনাকে অনেক অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আমিও
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
এতটুক এতটুক লেখায় আবেগ নিয়ে কী খেলাটাই খেলেন!
আপনার এ লেখাগুলোতে 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি' ট্যাগটা যোগ করে দিন, একসাথে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।
আর হ্যাঁ, এ লেখাগুলো নিয়ে বই হয় যদি কখনো, জানাবেন। বইটা বেশ ক'জনকে পড়ানোর ইচ্ছা'
অনেক অনেক শুভকামনা। আরো অনেক অনেক অনেক লিখুন।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মর্ম, বলছেন কী ? বই লিখব আমি ? সে বই কী কাজে লাগবে ? বাদামের ঠোঙ্গা বানাতে ? বইয়ের নাম কী হবে ? একটি কুম্ভকর্নের আত্মকাহিনী ?
মাথা খারাপ ? কান মলেছি, কোন রকমে এই সিরিজ আল্লাহ আল্লাহ করে শেষ হলে বাকী জীবন আর সচলায়তনের ধারে কাছে না...নিত্য নতুন লেখার আইডিয়া পোকার মত মাথার মধ্যে কিলবিল করে আর আমার শান্তির ঘুমটাই শেষ...শেষে কুম্ভকর্ণের অনিদ্রা রোগ হয়ে যাবে
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নিশ্চয়ই বই হবে। আর মাত্র ৯২ কিস্তি, তারপরেই বই কমপ্লিট।
..................................................................
#Banshibir.
মনে করছিলাম সত্যপীর আমারে ভুইল্যা গেছে...তা না কলিকালের এই পীর ভুলে নাই ভুলে নাই...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
এতো ঝরঝরে লেখা! এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মত! বাংলা গদ্যসাহিত্যে যাঁরা সার্থক্ ও তীর্যক্ভাবে Wit কে ব্যাবহার করেছেন তাঁদের মধ্যে আমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আখতারুজ়জ়ামান ইলিয়াস এবং হুমায়ূন আহমেদ| আমি যদি তাঁদের লেখার সাথে আপনার লেখার তুলনা করতে চাই তাতে আমার ধ্্ষ্টতা নেবেন না Please.
যান আপনাকে মাফ করে দিলাম । কারন, আপনি Please বলেছেন । কাজেই এই ধৃষ্টতা ক্ষমা করে দিলাম ।
তবে আপনি ভালবেসে যে “সাহিত্যে নোবেল” প্রাইজটি দিলেন তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । এটি পাওয়ার কোনই যোগ্যতা আমার নেই, কিন্তু তাতে কি ? ভালবাসার উপহার পেতে কার না ভাল লাগে ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপা আপনি মহান!!!
কেন রে ভাই ? আমি কী অন্যায় করলাম ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আই কনে কলাম যে অন্যায় কচ্চেন? আইতো শুধু কলাম যে এইরাম লিখতে থাকেন, আমিও একটু হালকার উপ্রে ঝাপসা তেল দিয়া যাব। প্রত্যেকবার গালভরা মন্তব্য করিতে আই ন পাইরবেক!!
ভালু পাইছি
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
এমন লেখা মানুষ কী করে লিখে ?
আমারও তাই জিজ্ঞাসা । কেমন করে মানুষ এই রকম অখাদ্য লেখা লিখে ? সমস্ত দোষ এই সচলায়তনের । শুধু হাবিজাবি এই সব লেখার আইডিয়া দিতে থাকে...
সাবেকা, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সহৃদয় মন্তব্য করার জন্য ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
লেখা তারায় তারাময় আপুনি।
কিছু বলার ভাষা নাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সাফিনাজ, তোমারেও আমার সব ছাই ভস্ম পড়ে ফেলার জন্য ।
ভালো থেকোরে বোন ভাল থেকো সব সময় ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
তোমার লেখার পুরাই ভক্ত হয়ে গেছি আপুনি। কান্সারের জার্নালটা আবার শুরু কর প্লিজ, খুব জানতে ইচ্ছে করছে এর পরে কি হবে, এর পরে কিভাবে কি হবে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ভইন, তুমিতো জানো “...র জার্নাল লিখতে হইলে আমারে শান্ত হইয়া বসতে হইব । ধীরস্থির হইয়া লিখতে হইব । ইনশাল্লাহ একদিন আবার ফিরে যাব সেই রক্তখরনের দিনগুলোতে...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
দারুন লাগছে আপু, এই হাল্কা শীত শীত আবহাওয়ায় এমন মিষ্টি লেখা পড়তে সত্যি ভাল লাগছে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ভালো লাগলেই ভালো । আমারতো শীতনিদ্রাটা মাঠে মারা যাচ্ছে । এই ঘর ভাঙ্গাভাঙ্গি চাবির খবর করতে করতে
ভালো থাকুন, ভাল থাকুন ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপনি এমনভাবে লেখেন পড়ার সময় মনে হয় ঘটনাগুলো আমার সামনে ঘটছে। বই পড়ে পড়ে যতোটুকু বুঝেছি একজন লেখকের সবচেয়ে বড় সার্থকতাই এখানে। আপনি অসাধারণ লেখেন আপু। এই সিরিজ শেষ করে লেখা থামাবেন না প্লিজ।
আপনার মেজভাইকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা। এরকম একটা ভাই থাকলে আর কি লাগে।
বলেন কী ধুসর ? বরংচ, উল্টোটা বলুন, “জীবনেও আর লিখবেন না” ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কিন্তু পড়ার জন্য আর এত সুন্দর মন ভালো করা মন্তব্যের জন্য ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপনার পরম্পরাহীন, অদরকারী স্মৃতিকথাগুলোর কয়েকটা অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। আপনি অনেক ভালো লেখেন, অনেকেই সেটা ইতিমধ্যে বলে ফেলেছে। সে হোক। আমি আরও একবার বললে ক্ষতিবৃদ্ধি তো নেই!
না ইয়াসির কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই । বরংচ অনেক অনেক “মন ভাল বৃদ্ধি” আছে । অনেক অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
'ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবির' পর্বগুলো পড়ছি তবে নিয়মিত ভাবে পড়া হয়না। আজকের এই পর্ব আগের গুলো পড়ার তাগিদ দিল। অসাধারণ লেখেন আপনি। এত চমৎকার করে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আসেন যে একটানে শেষ না করে ওঠা যায় না। একটানে পড়ে গেলাম সেই সাথে অনেক কথায় মনে পড়ে গেল আমার ব্যক্তি জীবনের।
দারুণ দারুণ। চলুক বাকী পর্ব গুলো।
ছেলেবেলার গল্পগুলো মোটামুটি সবারই এক রকম । বড় হলেই শুধু "ক্যাচাল" শুরু হয়ে যায়
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
এত সুন্দর কি করে লিখেন।
আমার ভাইও আমাকে নিয়ে গিয়ে বই কিনে দিত, জন্মদিনে মিষ্টির দোকানে গিয়ে প্লেট ভর্তি মিষ্টি নিয়ে বলত সব খাবি, আমি একটাই খেতে পারতাম না। বাকী মিষ্টি হোস্টেলের বন্ধুদের জন্যে নিয়ে আসতাম।
ভাই ই আমাকে বুদ্ধদেব বসুর সাথে খুব ছোট বেলাতেই পরিচয় করিয়ে দেয়।
আমরা দুজনেই খুব ভাগ্যবান, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের এত সময় দিয়ে দিয়েছেন ছোটবেলায়।
আপনার অনেক কিছুর সাথে আমার জীবনের মিল আছে। এক দিন নিশ্চয় আমাদের দেখা হবে।
দেখাতো হওয়াই দরকার মনে হয় । আপনি যা ভাল রাধেন, গন্ধ ভেসে আসে...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
চলুক। লেখা খুউব উমদা হয়েছে।
চলছেরে ভাই চলছে...আমার আরামের ঘুম হারাম করে চলছে
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
কীভাবে লেখেন স্মৃতিচারণ এতো সুন্দর করে। বিশেষণে ঘাটতি পড়ে যাচ্ছে আমারও। তাও একই কথা আবার বলি- অসাধারণ।
এই সিরিজের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।
কুম্ভকর্ণের জীবন সার্থক । আর কী লাগে জীবনে ?
আপনাকে অনেক অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপু আপনার বই উপহার পাবার কথা শুনে খুবি হিংসা লাগছে। ঐ বয়সে আমাকে কেউ বই কিনে দেয়নি। অন্নের বই, লাইব্রেরি এর বই এভাবে বই সংগ্রহ করে পড়তাম। আমার আব্বার এই সব আউট বই পড়া ছিল একেবারেই না পসন্দ। কারন অইসব আউট বই পড়ে যে ছেলে মেয়ে রা বখে যায়! আম্মা কখনও কিছু বলতনা। কারন এই রকম বয়সে তিনিও বই পড়তেন অজস্র, এবং তার লিস্টি ও রাখতেন। আর আমি স্কুলে পুরস্কার হিসেবে, স্কুল/ কলেজ থেকে হেটে হেটে বাসায় এসে, টিফিন এর টাকা বাচিয়ে, আম্মার কাছ থেকে চেয়ে নানা রকম ভাবে টাকা জমিয়ে বই কিনতাম। এভাবেই আমার অনেক বই জমে গিয়েছিল। তখন তো বুকশেলফ কিনতে পারিনি তাই বই গুলো ছিল খাটের নিচে একটা বড় বাক্সের ভেতর। আমি আর আমার বড় বোন কম্পিটিশন দিয়ে বই পড়তাম, সংগ্রহ করতাম।
যখন বুকশেলফ হল নিজের তখন তো পড়ার বই এর চেয়ে আউট বইয়েরই দখল ছিল সেটাতে। আর খাটের নিচের সেই বড় বাক্স ভরতি বইগুলা উইপোকা খেয়ে মাটি করে ফেলেছে ততদিনে। আমার জীবনের অনেক আনন্দ ময় সৃতিও বদ উইপোকা শেষ করে ফেলে। আমি অনেক দিন ( এখনো মনে হলে কান্না পায়) পর্যন্ত সেই শোক ভুলতে পারিনি।
যাক, একটা চমৎকার জননী ছিল আপনার । জননীরা সর্বদাই চমৎকার হয়, তাই না ?
বদ উইপোকা
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নতুন মন্তব্য করুন