বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...
... ...
এই সব অদরকারী স্মৃতির কোন পরম্পরা নেই । তবু যদি কারুর আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম পর্ব এখানে ।
... ...
৩৪.
জানুয়ারী মাস । আর মাত্র দেড় মাস বাকী মাধ্যমিক পরীক্ষার । সমগ্র বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীরা তুমুল প্রস্তুতিতে ব্যস্ত । বাংলা পাঠ্য বইয়ের দুর্দান্ত সব চরিত্রগুলোর বিশ্লেষণ, বিজ্ঞান বইয়ের “এসো নিজে করি”র সকল “গায়েবী” এক্সপেরিমেন্ট, যাদব বাবুর তৈলাক্ত বাঁশবাহী বানরের গতিবেগ, স্রোতের অনুকূল-প্রতিকুলে সাঁতারের সকল সমাধান তাদের বল পয়েন্ট কলমের নিবস্থ । শুধু পরীক্ষার ঘণ্টা পড়ার মাহেন্দ্রক্ষণটির অপেক্ষা । ঘণ্টা পড়বে আর সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে শ্বেত, শুভ্র খাতার ওপর তাদের সকল মেধা ও অনুশীলনের প্রমাণ দেয়ার জন্য ।
ব্যতিক্রম শুধু একটি কুম্ভকর্ণের । সে শুধুই নিদ্রা দেবীর উপাসনায় মগ্ন । একে তো ঘুম থেকে উঠছে দেরী করে (সবাই ভাবছে রাত জেগে পরীক্ষার পড়া “পড়ছে”)...তারপরেও দিনের যে কোন সময়ে সে ঘুমিয়ে পড়ছে টেবিলের ওপর মাথা রেখে, সোফার হাতলের ওপর গা এলিয়ে, এমনকি দরজায় হেলান দিয়ে ! তার মীরজাফর ভাই তার নাম “কুম্ভকর্ণ” বদলে “ঘোড়া” রাখার প্রস্তাব করছে । ভাইয়ের মতে, ঘোড়াই একমাত্র প্রাণী যে দাঁড়িয়ে ঘুমায় । এই যখন অবস্থা, তখন সেজভাই কড়া ভাষায় “মার্শাল ল” জারী করলো, “দিনে ঘুম বন্ধ” । হা ঈশ্বর ! দিনেই তো ঘুমাতে হয়, রাতে পড়তে হয় মাসুদ রানা (রোমাঞ্চকর অভিযানের গল্পের জন্য এর চেয়ে উৎকৃষ্ট সময় আর কখন ?), দুর্দান্ত সব ওয়েস্টার্ন সিরিজ (হায়, সেই সব চরিত্র বিশ্লেষণ কেন পরীক্ষার সিলেবাস ভুক্ত হয় না !), মারিও পুজোর “গড ফাদার”, শার্লক হোমস, রকিব হাসানের “তিন গোয়েন্দা”, শিবরাম, একটু আধটু রবীন্দ্রনাথ, আর সেই সঙ্গে ফেলুদা । গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তখনইতো আস্তে করে লেপের নীচ থেকে হাত বের করে মাথার কাছে, মশারির ওপারে টেবিলের ওপর কমিয়ে রাখা (আমার মায়ের ছিল অন্ধকারে ভয় । ক্ষণে ক্ষণে চলে যাওয়া বৈদ্যুতিক আলোর ওপর পুরোপুরি ভরসা তিনি কখনোই করতেন না । মাথার কাছে একটি হারিক্যান সদা প্রজ্বলিত থাকতো । শুধু শিখাটি কমিয়ে রাখা হ’ত) হারিক্যানের আলোর শিখাটি একটু উসকে দিতে হয় । হারিক্যানের চিমনী ঘিরে দেয়া খবরের কাগজের “আড়াল” ব্যূহটিকে একটু পরখ করে নিতে হয় । আলোর শিখাটি যখন শুধুই পড়ছে ইউরোপের “গনডোলা নগরী” ভেনিসের ওপর, তখন সব ভুলে ডুবে যেতে হয় সেই “নিয়ন্ত্রিত” আলোটুকুতে । সেই আলোর রেখাটুকু হাত ধরে নিয়ে যায় অন্য এক রাতে...যার গায়ে লেগে আছে রোমাঞ্চ...রানার দুঃসাহসী অভিযান...আর নীল নয়নার সাথে রানার একটু আধটু “নিষিদ্ধ” প্রেম !
হায়, কালের গর্ভে কোথায় হারিয়ে গেল সেই হারিক্যান...আর তার “রহস্যময়” মায়াবী আলো । এখন আর নেই...পড়ন্ত বিকেলের আলোয় দ্রুত হাতে ঘষে মেজে চিমনীর কাঁচ ঝাঁ ঝাঁ পরিষ্কার করা...সাবান পানি দিয়ে ধোয়ার সময়ে না কুলালে হা করে মুখের শ্বাসের ধুয়া লাগিয়ে পুরানো কাপড়ের ত্যানা দিয়ে ঝট পট মুছে ফেলা...কড়া গন্ধের কেরোসিন ঢেলে হারিক্যানের পেট ভরে ফেলা...তারপরে হারিক্যানের কান ধরে চিমনিটা একটু উঠিয়ে সলতেটা একটু মুচড়ে দিয়ে আগের দিনের পুড়ে যাওয়া সলতেটাকে পরিচ্ছন্ন করে তাতে অগ্নিসংযোগ করলেই হারিক্যান “প্রস্তুত” আলোক দানের জন্য ও রাত জেগে “পরীক্ষার পড়া” পড়ার জন্য !
৩৫.
কোনভাবেই যখন পুরানো এই গ্রহের চলাচলকে থামিয়ে দেয়া গেল না...আহ্নিক কিংবা বার্ষিক কোন একটি গতির (ভুলে গেছি কিনা, তাই হালকার ওপর ঝাপসা সেরে দিচ্ছি । আমার দোষ কী ? সচলায়তনের পাঠককুল শিখিয়েছে আমাকে কী করে “হালকার ওপর ঝাপসা” মন্তব্য দিতে হয়) অমোঘ নিয়মে ১৯৮৬ এর মার্চ মাস চলে এল । কুম্ভকর্ণের হাঁটু ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল, বুক ধড়ফড় করতে লাগল, হজমের গণ্ডগোল দেখা দিল, ঘন ঘন “প্রক্ষালন” কক্ষের দিকে তাকে ছুটতে দেখা গেল, মাথায় শীতল “কদুর তৈল” প্রয়োগ করা হ’ল...সর্বোপরি তার “অনিদ্রা” রোগ হয়ে গেল । যখন পরীক্ষার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী...এখন তো আর দু’বছরের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব না...কুম্ভকর্ণতো আর এমন কোন “প্রডিজি” না...সে শুধুই অতি সাধারণ একটি “কুম্ভকর্ণ”...তাও আবার পড়ায় ভয়াবহ রকম “ফাঁকি দেয়া” কুম্ভকর্ণ...
তখন সেই কুম্ভকর্ণ কাঁদতে শুরু করল...মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এই বারের পরীক্ষার বৈতরণী পার হলে সে ভাল হয়ে যাবে...মন দিয়ে পড়াশোনা করবে...পাজি মাসুদ রানার ধারে কাছে যাবে না...নিষিদ্ধ প্রেমের গল্পে আর মজবে না...রবীন্দ্রনাথ “ঠাকুর” মানুষ, তাঁকে তো ছাড়া যাবে না...তবে রয়ে শয়ে মজবে তাঁর “প্রেম ও পূজা”র প্রেমে । মোটকথা, সে একজন “আদর্শ” কুম্ভকর্ণ হবে, চলমান একটি “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ” হবে । দিনরাত সে প্রার্থনা করতে লাগল, “রাব্বী জিদনী এলমান”...প্রভু, জ্ঞান দাও, আমাকে জ্ঞান দাও (পড়ুন “প্রভু, পরীক্ষা পাশ করাও, পরীক্ষা পাশ করাও”)...
৩৬.
অতঃপর, পরীক্ষার দিন চলে এলো । কুম্ভকর্ণ কান্না রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, “পরীক্ষা না দিলে হয় না, মা ?” তার শ্যামল বর্ণের মায়ের ছিল এক ভূবন ভুলানো হাসি । সেই হাসিতে ছিল প্রশ্রয়, ছিল নিশ্চয়তা, ছিল নির্ভয় । সেই প্রশ্রয়, নিশ্চয়তা আর নির্ভয় দেয়া হাসির সঙ্গে মা তার ফাঁকিবাজ কন্যাটির মাথায় হাত রেখে বললেন, “আল্লাহ ভরসা । পরীক্ষা ভাল হবে । বিসমিল্লাহ বলে লেখা শুরু করবি । কোন ভয় নেই, ইনশাল্লাহ, পরীক্ষা খুব ভাল হবে ।”
পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে রমিজউদ্দীন স্কুলে । ক্যান্টনমেন্টের বেশ ভেতরের দিকে লুক্কায়িত সেই কেন্দ্রে কে নিয়ে যাবে ? আব্বাকে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে “অযোগ্য” ঘোষণা করা হয়েছে । ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার সময় রিক্সা চালকের সাথে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ “মুলামুলি” করার কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে “দিরং” (কুমিল্লার ভাষায়, “পথে হ’ল দেরী”) হয়েছিল । আরেকটু হলেই কুম্ভকর্ণের সেকেন্ড গ্রেডের বৃত্তি ফসকে যেত (হায়, কুম্ভকর্ণ জীবনের এক মাত্র অর্জন !) । কাজেই এবারে মা নিজেই সেই দায়িত্ব নিলেন । আর সেজভাই তো সঙ্গে থাকলোই । বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে আব্বাকে সালাম করতে গেলাম । আব্বা মনে করিয়ে দিলেন, “তোর মাকে সালাম কর” । এই এক গুণ ছিল আমার পিতার, সব সময় মনে করিয়ে দিতেন তার স্ত্রীটি কত অনন্য ।
প্রথম পরীক্ষা । পরীক্ষার হলে ঢুকার আগে মাকে সালাম করতে নিচু হচ্ছি, মা জড়িয়ে ধরলেন, “মাকে সালাম করার দরকার নাই । মায়ের দোয়া সব সময় থাকে । দোয়া করা ছাড়া মায়ের আর কাজ কী ? যা, আল্লাহর হাতে সোপর্দ...” । আমি এগিয়ে যাই পরীক্ষার্থীদের ভিড়ের সাথে...আমি জানি, আমার জননী দাঁড়িয়ে আছেন গাছের নীচে । আমি পরীক্ষার হলের লোহার কেঁচি গেইট পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি এক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবেন । তার স্নেহাতুর চোখ দু’টো এই ভিড়ের মধ্যেও ঠিক চিনে নিচ্ছে আমার স্কুল ড্রেস পরা পিঠ...জননীর চোখ তাকিয়ে আছে আত্মজার পিঠের দিকে...দুই বেণী করা চুল পড়ে আছে সেই পিঠে...জননীর ভালবাসায় সিক্ত সে চোখ গলে পড়ছে আশীর্বাদের জল...সেই জলে লেগে আছে একটি মাত্র শুদ্ধ স্বপ্ন...এক দিন তার আত্মজাটি একটি “সাধারণ” মানুষ হবে...জীবনের চড়াই উৎরাইয়ের সকল পরীক্ষায় শুধু সৎ থাকার অনুশীলন করবে...যত বাঁধাই আসুক, ভেঙ্গে পড়বে না...
জননী কি জানে তাঁর এই অতি সাধারণ আত্মজাটি মায়ের কাছে শেখা আলোর শিখাটিকে আজন্ম অনুশীলন করার “অকিঞ্চিৎকর” চেষ্টা করে যাবে ? মায়াময় এই পৃথিবীতো আর সব সময় “মায়াময়” নয়, আর তাঁর আত্মজাটিও কোন অসাধারণ কেউ নয় । কাজেই জীবনের ঘোর অরণ্যে সে পথ হারাবে...তিমির রাত্রির অন্ধ যাত্রীর মত সে আকুল কাঁদবে...কেঁদে কেঁদে যখন সে নিঃশেষ হয়ে যাবে...নিজের প্রতি, জীবনের প্রতি শেষ বন্ধনটিও যখন তার ঘুচে যাবে...সেই নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ, নিকষ অন্ধকার মুহূর্তটিতেও জননীর এই আশীর্বাদের অশ্রুজল অভয়বাণীর আলো হয়ে ফুটবে, “ওরে, সব শেষ হয়ে যায় না । বাহিরে যখন সব ফুরায়, তখনও অন্তরে কিছু রয়ে যায় । ডুব দিয়ে দেখ নিজের গভীরে, সেখানে কিছু তলানি এখনও আছে...”
৩৭.
প্রথম দিনে দুই বেলায় বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা । বেলা দশ ঘটিকায় প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়ে প্রায় মাসব্যাপী মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচনা । পৌনে দশটার মধ্যে যার যার জায়গায় পরীক্ষার্থীরা আসন গ্রহণ করে ফেলেছে । ইনভিজিলেটররা শিক্ষা বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত খাতা বিতরণ করেছেন...পরীক্ষার হলের পিনপতন নীরবতা ভেঙ্গে সজোরে, কিন্তু ধীর লয়ে বেজে উঠল ঘণ্টা...ঢং... ঢং... ঢং...এই পৃথিবীর কোথাও আর কোন শব্দ নেই...সাড়া নেই...কেউ নেই...পরীক্ষার হল থেকে পালানোর কোন উপায় নেই !
কেমন এক অচেনা ভয় গ্রাস করল আমাকে...কিচ্ছু মনে নেই আমার...পাঠ্য বইয়ের একটি লাইনও মনে নেই...রাত জেগে পড়া বইও না...না মাসুদ রানা...না ফেলুদা...না শার্লক হোমস...রবীন্দ্রনাথের কোন একটি কবিতার একটি চরণও আমার মনে নেই... সবাই আমাকে ছেড়ে গিয়েছে...আমার মানস পট যেন সদ্য নীল দিয়ে ধোয়া এক শ্বেত, শুভ্র থান কাপড়...টান টান মেলে দেয়া আছে শুকানোর জন্য...আমি এক বোধহীন জড় পদার্থ যার কোন জ্ঞান নেই, স্মৃতি নেই, কিচ্ছু নেই...আমি সর্বগ্রাসী আতঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে দু’চোখ বুজে বসে আছি...কখন যে ইনভিজিলেটর প্রশ্নপত্র দিয়েছেন জানি না...ভয়ে চোখও খুলছি না...কতক্ষণ কেটেছে জানি না...কে যেন কথা বলে উঠল ভেতর থেকে, “কোন ভয় নেই, ইনশাল্লাহ, পরীক্ষা খুব ভাল হবে... কোন ভয় নেই...চোখ মেলেই দেখ...” আমি সদ্য প্রসূত শিশুর প্রথম কান্নার পরে মায়ের কণ্ঠ শোনার মত করে করে শুনি সেই অভয়বাণী, “ভয় নেই, কোন ভয় নেই”...খুব ধীরে ধীরে বন্ধ দু’চোখের পাতা খুলি সদ্যোজাত শিশুর মত...আমার দু’চোখের সামনে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র...তার সবটা জুড়ে আমার মায়ের মুখ...শ্যামল বরন মুখে তার ভূবন ভুলানো অভয় দেয়া হাসি...আমার ভেতরের অসহায় কান্নাটা প্রথমবার মায়ের গায়ের গন্ধ পাওয়া শিশুর মতই থেমে আসে...ভেতরের অস্থির কাঁপুনি ধীরে ধীরে কমে আসে...আমি শান্ত হই...দু’চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে আসে...প্রশ্নপত্রের লেখা পড়তে পারি... “কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ উপন্যাস অবলম্বনে তৎকালীন মুসলমান সমাজের আর্থ সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ কর”...
তারপর, আর ভয় পাই না...
.........
পাদটীকাঃ
১. কি আশ্চর্য এই “পাতের দেয়ার অযোগ্য” স্মৃতিচারণের দশ পর্ব লিখে ফেলেছি ! যে জীবনের কোন অর্জনই নেই তারই এত স্মৃতি, কিছু যদি অর্জন থাকতো তা’হলে কি না হ’ত !!!
২. মোটে চার পর্বে এই অদরকারী জিনিষ নিকেশ করব ভেবেছিলাম । এখন দেখছি “আরব্য রজনী” হয়ে যাচ্ছে...উত্তরের এই দেশের শীতকাল আমার মাঠে মারা যাচ্ছে...শীতনিদ্রায় যেতেই পারছি না । হা ঈশ্বর, এই কুম্ভকর্ণের কী হবে ? এবারেও মাধ্যমিক ছাড়াতে পারলাম না !
৩. পাঠক, অনেক বকেছি । আপনাদের মাথাই ধরিয়ে দিয়েছি । হাতের কাছে কদূর তৈল তো আর নেই । নিন, একটি “গোধূলি গগণে”র গান শুনুন । কী ভয়াবহ কথা... “আর কি কখনো কবে এমন সন্ধ্যা হবে / জনমের মত হায় হয়ে গেল হারা... ”?
মন্তব্য
হে হে আপু, প্রতি পরীক্ষার আগের দিন পরের পরীক্ষায় ভাল হয়ে চলার কত যে প্রতিজ্ঞা করেছি, লাভের লাভ কিছুই হয়নি। আমি জন্মের ফাঁকিবাজ লেখাপড়ার ব্যাপারে।
শীতনিদ্রায় যেতে দিবনা, আরও অনেক অনেক পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ক্যান্সারের জার্নাল আবার শুরু কর। এর পরে কি হল জানতে ইচ্ছে করে যে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ক’দিন থেকেই ভাবছি...শুরু করব । আবার ফিরে যাওয়া সেই সব স্বপ্ন ভাঙ্গার দিনগুলোতে, রক্ত ক্ষরণের দিনগুলোতে...কিন্তু মনে হয় এক বার লিখে ফেললে হয়তো হালকা লাগবে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
হারিকেনের কেরোসিন জ্বলা অতি সুখাদ্য লেখা হইছে!!!
আপনার ১৮বছর পর আমারো একই অভিজ্ঞতা, সবারই একরকম হয় মনে হয়। এখনো মনে আছে প্রথম পরীক্ষার সকালে আম্মু ঝাল করে মুরগী রান্না করছিল, সাথে একটা আস্ত রসুন ছেড়ে দিয়েছিল রান্নার সময় আমার খুব প্রিয় বলে।
তবে একদিনে দুইটা পরীক্ষা ক্যামনে দিতেন আপু? আপনার সময় মনে হয় অবজেক্টিভও ছিল না
কেন, আমরাতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই পরীক্ষাতেই বাংলা ও ইংরেজী দু’বেলায় চার পরীক্ষা দিয়েছি । আমরা অনেক পরিশ্রমী শিক্ষার্থী ছিলাম কি না
না, আমাদের সময় ঐ সব ফাঁকিবাজি ব্যপার ছিল না । আমাদেরকে সব কিছু নিজের ভাষায় লিখে লিখে উত্তর দিতে হ’ত । অন্যের লেখা উত্তরে টিক চিহ্ন দিয়ে নম্বর পাওয়ার ফাঁকি ছিল না । তবে “এসো নিজে করি” নামক একটি “কাল্পনিক” বিজ্ঞান গবেষণার বই ছিল
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
কাটা-গোল্লা খেলার যুগ শুরু হয়েছে ১৯৯২ সাল থেকে। তার আগে সব পরীক্ষাই ছিল বর্ণনামূলক। এসএসসি, এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতে সে আমলে বাংলা ও ইংরেজী উভয় বিষয়ের ক্ষেত্রে দুই পেপার একদিনে হতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একটু কী ফাঁকি দিলেন, নাকি আমারই চাওয়াটা অনেক বেড়ে গেছে , ঠিক ধরতে পারছি না
গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তখনইতো আস্তে করে লেপের নীচ থেকে হাত বের করে মাথার কাছে, মশারির ওপারে টেবিলের ওপর কমিয়ে রাখা (আমার মায়ের ছিল অন্ধকারে ভয় । ক্ষণে ক্ষণে চলে যাওয়া বৈদ্যুতিক আলোর ওপর পুরোপুরি ভরসা তিনি কখনোই করতেন না । মাথার কাছে একটি হারিক্যান সদা প্রজ্বলিত থাকতো । শুধু শিখাটি কমিয়ে রাখা হ’ত) হারিক্যানের আলোর শিখাটি একটু উসকে দিতে হয় । হারিক্যানের চিমনী ঘিরে দেয়া খবরের কাগজের “আড়াল” ব্যূহটিকে একটু পরখ করে নিতে হয় ।
একেবারে লাইনে লাইনে মিলে গেল আমার সাথে ।
দিনরাত সে প্রার্থনা করতে লাগল, “রাব্বী জিদনী এলমান”...প্রভু, জ্ঞান দাও, আমাকে জ্ঞান দাও (পড়ুন “প্রভু, পরীক্ষা পাশ করাও, পরীক্ষা পাশ করাও”)...
পড়াশোনায় সারা বছর বিশাল ফাঁকিবাজি করে পরীক্ষার আগে আগে এই 'রাব্বী জিদনী এলমান' যে আমিও কত জপেছি ! তারপর জীবনভর ঠেকে শিখেছি সৎ কর্মের কোন বিকল্প নাই - এই সব 'রাব্বী জিদনী এলমান' জপা পুরাই ফালতু
ঠিক ধরেছেন । আসলে “আমি কুম্ভকর্ণ রণক্লান্ত...” একটু শীতনিদ্রায় যেতে চাচ্ছি তো, তাই
জীবন বহমান...বিশেষতঃ পরীক্ষার আগে মাসুদ রানার প্রেম
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আপু,
লেখা চমৎকার। আপনি আমাকে আবার ২৬ বছর আগের মার্চ মাসে নিয়ে গেলেন, ৭ই মার্চ ১৯৮৭ - যেদিন আমাকেও এই বিভীষিকাময় যাত্রার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। আমিও আপনার মতো বিদেশে থাকি। ভাবলে ভালো লাগে আমার ছেলেদেরকে কখনো আমার মতো পরীক্ষা নামক এমন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যে্তে হবে না। পরীক্ষা মানে তো আমার ছেলেদের কাছে fun। তবে দু:খ শুধু একটাই আমার ছেলেরা কোনদিন পূর্ণিমা রাতে কোন এক সুন্দরীর হাত ধরে জীবনানন্দ দাশের কবিতা আউরানোর সুখ পাবে না (তারা বাংলা লিখতে ও পড়তে জানে না)।
সাহসী, চিমটি। এতোদিনে সচলে আরেকজন পাওয়া গেলো যে আমার বয়সী।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পরীক্ষা বিভীষিকা হবে কেনু গো ? পরীক্ষার ডেড লাইন না থাকলে কি আর নিশিরাতে মাসুদ রানা জমে ? জমে না, জমে না...নিশিরাতের রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের জন্যই পরীক্ষা দীর্ঘজীবি হোক
কেমন মা আপনি, সাহসী ? পুর্ণিমা রাতে সুন্দরীর হাত ধরে ছেলেদেরকে হাত ধরে হাঁটতে বলছেন ? ভেবে চিন্তে বলছেন তো ?
যাকগে, আপনাকে অনেক অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
- বয়েসটা যে আর নুকিয়ে রাকা গেলো না দিদি! যাউজ্ঞা, আপ্নে যে আমার থিকা ইট্টু বড় সেইটা ভাইবা বড়ই আনন্দিত হইলাম। এতোদিন ভাবতাম আমি এক্লাই বুঝি বুড়া!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ওরে পান্ডব, মেয়েদের বয়স নিয়ে যে কথা কইতে হয় না, তা কী আজও শেখেননি...
বয়স নুকোবো কেন গো ? আগেই কিন্তু একবার বলেছি একাত্তরের কোন এক মাসে আমার বয়স ছেল তিন মাস । বয়স নুকোনোর মত নির্বুদ্ধিতায় আমি বিশ্বাস করি নাকো...বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা কেমন বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব আসে না ? সবাই হুকো (এই যা অভ্যেস নেই কো), আসন এগিয়ে দেয়...
শুধু বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাবটাই যা এলো না... এই শুধু পরানের গহীন কোনের দুষ্ক...
তা কেন ? আমাদের "স্মৃতির শহর"ও কিন্তুক আছে
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
মাঝে প্রায় একমাস সচলে ঢোকা হয়নি। কত লেখা যে মিস করছি! কাল থেকে আবার সচল-এ ঢুকা শুরু করেছি।
আপনাদের লেখা পড়ি আর মনটা খুব খারাপ হয় আমি কেন এত সুন্দর করে লিখতে পারিনা।
সিরিজ টা খুবি ভাল লাগছে আপু।
কথা সত্য না । লিখতে শুরু করেন...লেখা ভাল খারাপেরতো কিছু নেই, বাবুনী । বিশেষতঃ স্মৃতিচারনের । আপনার স্মৃতির কথা আপনি বলবেন, ফেলে আসা দিনগুলো...মানুষগুলো...মুহুর্তগুলো...খাতা দেখে নম্বর দেয়ার তো কেউ নেই । স্মৃতিচারনের মজাটা হ’ল আপনার স্মৃতির সঙ্গে আরো অনেকেরই স্মৃতি মিলে যায়...জীবনতো বহমান । তাই না ?
এই কুম্ভকর্ণের স্মৃতিচারন ভাল লাগার জন্য অনেক
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ব্যস্ততার কারণে লেখা ও মন্তব্য দুটোই প্রায় বন্ধ।
দারুণ লাগলো।
আরেকটা ব্যাপার আমিও ওই বছরই এসএসসি পরীক্ষা দেই। ১৯৮৬ সালের মার্চে, তারিখটাও মনে আছে, ৬ ই মার্চ। বলা যায় বয়ঃপ্রাপ্তির প্রথম ধাপ। এর ঠিক ১৯ বছর পরে আরেক মার্চের ৬ তারিখ আমার প্রথম কন্যার জন্ম হয়।
অনেক কিছু মনে পড়ল লেখা পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
৮৬ সালের মার্চে আমার বয়স ছিল এক মাস, হে হে হে...
মার্চ? দুনিয়াতেই আসিনি তখনো।
আমার জন্ম ৮৬ সালের অক্টোবরে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সাধে কি খুকি বলি!
@ কৌস্তভঃ
সে আমার আগেই ক্যামন সন্দ হয়েছিল । আমি যখন ট্রিগনোমেট্রি করছি, আপনি তখন “ওয়া ওয়া” করছেন । আর মার কোলে হিসি করে সব ভাসিয়ে দিচ্ছেন
@ তিথীডোরঃ
আমার কোন দোষ নেই কিন্তু “অভিমানিনী” কবি । আমি এরকম কিছু বলিনি
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অনেক ধন্যবাদ স্মৃতির শহর ব্যস্ততার মধ্যেও পড়ার জন্য ও সহৃদয় মন্তব্য করার জন্য ।
প্রথম সন্তানের পিতা/মাতা হওয়া । বয়ঃপ্রাপ্তির সেটাও আরেক প্রথম ধাপ
আপনার লেখার কাজটি থেকে খুব বেশীদিন ফাঁকি দেয়া ঠিক হবে না । আমার কিছু বন্ধু আছে যারা সচলায়তনের নীরব পাঠক । তারা আপনার “স্মৃতির শহর” ও “শিশুপালন” অলরেডী মিস্ করতে শুরু করেছে । নিতাইগঞ্জে কোনবা পথে গেলেন আবার ফিরেও এলেন, লিখে ফেলুন তাড়াতাড়ি
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
কী চমৎকার দেখা গেল । এক মন্তব্য দু’বার চলে এলো । মনের ভুলে দু’বার হিট করে ফেলেছি । যাকগে, স্মৃতির শহরকে এক কথা দু’বার বললে কিছু মনে করবে না
অনেক ধন্যবাদ স্মৃতির শহর ব্যস্ততার মধ্যেও পড়ার জন্য ও সহৃদয় মন্তব্য করার জন্য ।
প্রথম সন্তানের পিতা/মাতা হওয়া । বয়ঃপ্রাপ্তির সেটাও আরেক প্রথম ধাপ
আপনার লেখার কাজটি থেকে খুব বেশীদিন ফাঁকি দেয়া ঠিক হবে না । আমার কিছু বন্ধু আছে যারা সচলায়তনের নীরব পাঠক । তারা আপনার “স্মৃতির শহর” ও “শিশুপালন” অলরেডী মিস্ করতে শুরু করেছে । নিতাইগঞ্জে কোনবা পথে গেলেন আবার ফিরেও এলেন, লিখে ফেলুন তাড়াতাড়ি
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আমি নিশ্চিত আপনার মা তাঁর অন্যান্য সন্তানের মতো আপনাকে নিয়েও অসম্ভব গর্বিত ছিলেন।
পরীক্ষার আগে আমরা সবাই মাসুদ রানা কেন পড়তাম?? আমি যদি কোনদিন শিক্ষামন্ত্রী হই মাসুদ রানা অবশ্য পাঠ্য করে দিতাম নাইন টেনের সিলেবাসে।
শীতনিদ্রার কথা বলবেন তো ঘটনা খারাপ হয়ে যাবে। এবার ভালোয় ভালোয় পরেরটা জলদি ছাড়ুন দেখি।
ফারাসাত
আপনাকে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া গেল না । জাতির চরিত্র নষ্ট করে ফেলবেন আপনি । নিষিদ্ধ প্রেমের অনুমোদন করার ফলাফল অগ্র পশ্চাত বিবেচনা করতে হবে না ?
কুম্ভকর্ণের জন্য নিদ্রা কত প্রয়োজন তা জানেন ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নতুন মন্তব্য করুন