ধু ধু শৈশব কেটেছে গ্রামে । বিশেষত্বহীন ছোট্ট একটি গ্রাম । সে গ্রামে ছিল বাড়ির পরে বাড়ি, স্বচ্ছ-তোয়া গভীর কালো জলে টইটুম্বুর পুকুর, উদার নীল আকাশ, মাঠের পরে মাঠ, খড়ের গাঁদা । গ্রামের সমান্তরালে বয়ে চলেছে শীতকালের শীর্ণ নদী । সেই নদীর ওপর গ্রামের এক মাত্র ইট সিমেন্টের স্থাপনা - পাকা ব্রিজ । শীতে যে নদীতে থাকে হাঁটু জল, বর্ষায় তার অন্য চেহারা । দুকূল ছাপিয়ে কখনও কখনও বাড়ির উঠোনে উঠে যায় নদীর জল । চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে ব্রিজের রেলিং থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দামাল কিশোরের দল সেই নদীর বুকে । এক নিমিষে কার আগে কে পড়বে নদীর জলে সে এক দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা ।
গ্রামের এক প্রান্তে গ্রামের একমাত্র হিন্দু বাড়ি । ঝকঝকে নিকানো উঠোন, বাড়ির একটা বড় অংশ জুড়ে গাছগাছালি । উঠোনের এক পাশে তুলসী গাছ । প্রবেশ দ্বারে নানা রকম ফুলের গাছ । সন্ধ্যায় শাঁখের শব্দে আরতি । সে বাড়ির মেয়ে সন্ধ্যা’দি । হিন্দু বাড়ির মেয়েদের কেমন মায়া মায়া চেহারা । সন্ধ্যাদির চেহারা এখন আর মনে নেই, তবে মনে আছে তার গায়ে লেগে থাকা সুগন্ধ । ছোটবেলায় অনেক কৌতূহল ছিল হিন্দু মেয়েদের গায়ের সুগন্ধ নিয়ে । কখনো মনে হ’ত হিন্দুবাড়ির বাগানের বেলি, গন্ধরাজ, গাঁদা, জবা, কাঁঠাল চাঁপা, শিউলি, বকুল, সন্ধ্যামালতির মত নানান ফুলই এই সুগন্ধের কারণ । কখনো মনে হ’ত পূজার ধুপই এই সুগন্ধের উৎস ।
গ্রামে আরও ছিল একটি মাজার । কোন এক সুফি সাধক কখনো এসে আশ্রয় নিয়েছিল আমাদের গ্রামে । “গফুর পাগলা” নামের সেই সাধকের মৃত্যু হয় ফাল্গুন মাসে । ফাল্গুন মাসে ধান কাটা মাঠে সেই সাধকের স্মরণে বসতো মেলা । সেই মেলাই ছিল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মিলন-মেলা । নানান মনোহারী দোকানের পশরা । কামার-কুমোরের অনেকেই ছিলেন হিন্দু । হিন্দু কুমোরের মাটির হাড়ি ছাড়া গ্রামের বৌ- ঝিয়েদের মন ভরতো না । যেমন তার নকশা, তেমন টেকসই । আর ছিল গগণ ময়রার মিষ্টান্ন ভাণ্ডার । তার পাকা হাতের দই, জিলাপি, রসগোল্লা, কালোজাম, বালুসাই, নিমকি একবার যে খেয়েছে, সে কোনদিন ভুলবে না । সেই মেলায় হ্যাজাক বাতির আলোয় বসতো আধ্যাত্মিক গানের আসর । মুসলমান বাউল যেমন গাইতো জারি-সারি, মুর্শিদী, তেমনই হিন্দু সাধক গায়ক গাইতো কীর্তন গান । গৈরিক বসনের বোষ্টুমীর কৃষ্ণের প্রেমে আকুল রাধিকার বিচ্ছেদ গানের পরেই মুসলমান বাউলের কণ্ঠের “পড়্ গা নমাজ আপনার মোকাম চিনে...” শোনা যেত ।
...
তখনও উন্মুক্ত বাজার, বিজ্ঞাপন, পণ্য, প্রযুক্তি এমন করে গ্রাস করেনি সব কিছু । তাই সেই অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের জন্য ছিল একটিই বাজার । পালের বাজার । পাল বংশের কেউ সেই বাজারের প্রতিষ্ঠাতা । আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের সেই বাজারে ছিল একজন নরসুন্দর । সারা বছর অঞ্চলের তরুণ, বৃদ্ধ, যুবক সবাই তার কাছে গিয়ে মাথা নুইয়ে দিত । কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে যখন ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠতো, তখন সেই নরসুন্দর গোবিন্দ কাকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার মজুরী নিতেন । বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে যখন হাঁক দিতেন, “কইগো মা জননীরা, কোথায় তোমরা ? ছেলের মজুরীটা যে এবার দিতে হয় ।” তখন এঘর ওঘর থেকে গৃহিণীরা বেতের ধামা ভরে ধান নিয়ে বের হয়ে আসতেন । গোবিন্দ কাকা বিনা বাক্যব্যয়ে সেই ধান তার ধামায় তুলে নিতেন । প্রতি বছরের এই নিয়ম । সেবা দানকারী ও গ্রহীতা কেউই দরদাম করছেন না, সন্দেহ প্রকাশ করছেন না । কিন্তু জীবন তাতে থেমে থাকছে না । দেনা-পাওনা শেষে গৃহিণীরা নতুন চালের চিড়ে, মুড়ি আর বাতাসা দিয়ে জলযোগ করাতেন । গোবিন্দ কাকা গৃহলক্ষ্মীর মঙ্গল কামনা করে রওনা হতেন পরের বাড়িটির উদ্দেশ্যে ।
গ্রামের কারুর অসুখ বিসুখ হ’লে খবর দেয়া হ’ত হিন্দু কবরেজ বাবুকে । তিনি আশেপাশের কোন গ্রামে থাকতেন । গোল ফ্রেমের কাঁচের চশমা চোখের ওপর ঝুলিয়ে রুগীর হাতের শিরা ধরতেন । প্রশ্ন করে উপসর্গ জানতেন । রুগীর মুখে কাঁচের থার্মোমিটার ধরে তাপমাত্রা দেখতেন । তারপর তার সঙ্গের ব্যাগ থেকে কাঁচের ক্ষুদে ক্ষুদে শিশিতে মিষ্টি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতেন । সেই সঙ্গে পথ্য বলে দিতেন । কচি ছেলে মেয়েদের জ্বর হলে প্রায়শই পথ্য হ’ত সাগু, নয়তো বার্লি ।
আর ছিলেন মল্লিকা’দি । আমার মেজবোনের স্কুলের সহপাঠী । মল্লিকা’দির বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে, অন্য কোন গ্রামে ছিল । অনেকবার গিয়েছি বোনের সঙ্গে । মল্লিকা’দির বাড়িতেও সেই রকম তকতকে পরিচ্ছন্ন উঠোন । একধারে ঠাকুর ঘর, সামনে ফুলের বাগান । মল্লিকা’দির মায়ের স্নেহ ভরা মুখ, সিঁথিতে জ্বলজ্বলে সিঁদুর, পরনে পরিপাটি সুতির শাড়ি । কাসার বাসনে পূজার নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ যত্ন করে এগিয়ে দিতেন । আমরা ঠাকুর ঘরের পৈঠা থেকে উঁকি দিয়ে ঠাকুর দেখে ফেলতাম । মাসিমা পূজার নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ বাড়ির জন্য সঙ্গে দিয়ে দিতেন ।
...
ঢাকায় আমার স্কুলের বন্ধু শিউলি । এক পাড়াতেই থাকি । ওরা অনেকগুলো বোন, আর সবাই খুব বই পড়ে । ওদের বাড়িতে আমার অবারিত দ্বার । ওর মেজ আপার নাম রুবী, বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী । মেজ আপার প্রাণের বন্ধু পরমা’দি । পরমা’দির ছোট বোন প্রতিমা আমাদের বয়সী । পরমা’দিরা পুরানো ঢাকার কোথায় যেন থাকতেন । কাজেই সমস্ত শহর উজিয়ে মিরপুরে আমাদের পাড়ায় এলে অনেক সময়ই রাতে থেকে যেতেন । পরমা’দি আর প্রতিমা এলে শিউলিদের বাসায় জমিয়ে আড্ডা বসতো । বেসুরো গলায় কোরাস গান, কবিতা আবৃত্তি চলতো সেই আড্ডায় । আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকবার তাগাদা পেয়ে আমি সেই আড্ডা ছেড়ে বাড়িমুখো হ’তাম । খালাম্মা (শিউলির মা) খুবই ধর্মভীরু মানুষ । বোরখা ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেন না । কিন্তু পরমা’দিকে তিনি নিজের সন্তান মনে করতেন । ঈদের সময় খাসি কোরবানি দিতেন যাতে পরমা’দি খেতে পারে ।
...
একাত্তর থেকে আটাত্তর পর্যন্ত গ্রামে ছিল আমার পরিবার । আটাত্তরের পরেও অনেকবার গ্রামে গিয়েছি । অনেক বদলে গিয়েছে আমার শৈশবের সেই গ্রাম । গ্রামে এখন বেশ ক’টি পাকা বাড়ি, পুকুরে পাকা ঘাট, পাকা স্কুল বাড়ি, আর বিশাল পাকা মসজিদ । ঘরে ঘরে বিজলী বাতি । টেলিভিশনে হিন্দি মুভি । গ্রামেই বসেছে নতুন বাজার, সেখানে ঝকঝকে সব মনোহারি দোকান । শুধু একমাত্র হিন্দু বাড়িটা আর নেই । নেই সেই নিকানো উঠোন, ঠাকুর ঘর, টিনের চাল বেয়ে ওঠা মাধবীলতা, বাগানের কাঁঠাল চাঁপা, বেলি, জবা, রঙ্গন আর হাসনা হেনা । আর নেই সন্ধ্যা’দি ।
কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে সন্ধ্যা’দিদের বাড়ির মত অনেক বাড়ি, উঠান, ঠাকুর ঘর, পুকুর । হারিয়ে গিয়েছে গোবিন্দ কাকা, কবরেজ কাকা বাবু, গগণ ময়রা, মল্লিকা’দিরা, পাল বাবুরা । এই হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আছে রাজনীতি, আছে আমাদের সম্মিলিত জাতিগত উপেক্ষা । যে দেশটি স্বাধীন করতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী সকলে একাত্ম হয়ে যুদ্ধ করেছে একাত্তরে, সে দেশটির একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু তা হয়নি । রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নামে রাষ্ট্রধর্ম, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মত বৈষম্যের বীজ বোনা হয়েছে । একই সঙ্গে “সংখ্যালঘু” নামে দেশের নাগরিককে পরিণত করা হয়েছে “প্রান্তিক নাগরিকে” । বিভিন্ন সময়ে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের । সাম্প্রতিককালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে সূচনা হয়েছে গণ আন্দোলনের । তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্ধ জামাত শিবির গোষ্টী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ।
“হিন্দুদের এক পা ভারতে...” । এই আপাত সাধারণ কথাটা যে কত মর্মভেদী হতে পারে, তা আমি নিজেও দেশান্তরী জীবনের আগে পুরোপুরি অনুধাবন করিনি । নিজের দেশে আমাকে কেউ “সংখ্যালঘু” লেবেল গায়ে এঁটে দেয়নি । তারপরেও আমি স্বেচ্ছায় পরদেশে এসে নোঙ্গর করেছি । কাজ করি, ট্যাক্স দেই, নাগরিক দায়িত্ব পালন করি । তার বিনিময়ে নাগরিক সমস্ত সুবিধা উপভোগ করি । আমার পূর্ব পুরুষ কেউ এই দেশের নাগরিক ছিল না । কিন্তু তারপরেও আমাকে যদি কেউ “সংখ্যা লঘু” বলে, আমি আহত হ’ব । কেউ যদি আমার কোন নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে বাঁধা দেয়, আমি মামলা করবো । তাহলে বাংলাদেশটা যাদের পিতা-প্রপিতামহের দেশ, তাদের ঘর-দোর, মন্দির, বিহার, গির্জা, ঠাকুর ঘর, বাজারের দোকান, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ যখন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, তখন কেমন লাগে তাদের ? বয়সের ভারে ন্যুজ আচার্যের চোখের সামনে যখন ভাঙ্গা হয় প্রতিমা, বুদ্ধ মূর্তি, তখন তার কষ্টের গভীরতা কত হয় ? হাতের শাঁখা ভেঙ্গেও যখন কোন নারী সম্ভ্রম বাঁচাতে পারেন না, তখন কত অসহায় লাগে তার ? কোন মর্মভেদী ভাষায় অভিশাপ দেন তিনি ?
কী বলার আছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমাকে ? স্বাধীন দেশে গণ ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা ছিল না তার । কী বলার আছে রামু, উখিয়ার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ভাই ও বোনদের ? বাংলাদেশের মাটিতে বুদ্ধের মূর্তি ভাঙ্গার কথা ছিল না । কী বলার আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ? কী বলার আছে বাঁশখালির মানুষদের, যাদের ঘর-দোর জ্বালিয়ে দিয়েছে জামাত-শিবিরের গুণ্ডারা ?
ক্ষমা করবেন, মল্লিকা’দি । জানি না কোথায়, কেমন আছেন । শুধু কায়মনো বাক্যে কামনা করছি, নিরাপদে আছেন । স্বাধীনতার লাল সূর্যের মধ্যে মিশে আছে শহীদের রক্ত...মুনির চৌধুরী, আলতাফ মাহমুদের সাথে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতারও রক্ত । নাম না জানা অজস্র শহীদের মধ্যে আছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী আর মুসলমান । সেই সব শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশে কোন “সংখ্যালঘু” ছিল না । তাঁদের স্বপ্নের বাংলাদেশের হওয়ার কথা ছিল সকল ধর্ম-বর্ণের-ভাষার-শ্রেণী-পেশার-লিঙ্গের নাগরিকের সমান অধিকারের । সেই সব শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ এমন হওয়ার কথা ছিল না, মল্লিকা’দি ।
মন্তব্য
কিছুই থামে না। বুকের ভেতরে দলা পাকানো কষ্টটাই শুধু রয়ে যায়।
নীলম, সব অন্ধকারই এক দিন না এক দিন শেষ হয় । হতেই হবে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আমাদের কাজ যেনো শুধু এভাবে লিখে যাওয়া, মুষ্টিবদ্ধ হাতে নীরব আস্ফালন, বুকের ভেতর হাহাকার, আর হতাশার প্রবল স্রোত। আমাদের নষ্ট রাজনীতি আমাদের দেশটাকেও পাতালে টেনে নিয়া যাচ্ছে। এ পতনের শেষ কোথায় কে জানে?
সামি
এক দিন ভোর হবেই ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সেটাতো সবাই বলে, সবাই জানে। কিন্তু কিছু কিছু ভোর যে আধার কালো মেঘে ঢাকা থাকে। আর সূর্যের দেখা পাওয়াই যায় না। কোথায় যে যাচ্ছে দেশ সে কথা ভেবে আর ভরসা পাই না আজকাল।
সামি
দু'চোখ ভিজিয়ে দিলেন জোহরা আপা। আমাদের গ্রামটিও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনার গ্রামটির মতই। আরও বহুদিন পরও আমাদের গ্রামটি থাকবে, হয়ত আমাদের মাটির তেতলা বাড়িটিই খালি থাকবেনা, আর থাকবেনা মানুষগুলো। নিজ দেশে আজন্ম ভয়ে ভয়ে থাকা মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণাকর। ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ভয়, স্ত্রী-বোন-কণ্যার সম্ভ্রমহানির ভয়, ভিটে-মাটি খোয়ানোর ভয়। ভয়, ভয়, আর ভয়। মৃত্যুর অধিক যন্ত্রনাকর এই ভয়। '' কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে দংশেনি যারে কভু আশীবিষে ''
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
সুমাদ্রী, এ যে কী ভীষন ভয়, কিছুটা হলেও বোধহয় বুঝি । নিজের দেশে অহর্নিশি এমন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাঁচা যে কী ভয়ঙ্কর তাতো আমরা একাত্তরে সবাই উপলব্ধি করেছি । দূঃখ এই যে তারপরেও সেই নিরাপত্তাহীনতার অবসান করতে পারিনি । এই নিরাপত্তাহীনতা তো শুধু আপনার নয়, আমাদের সবার । দেশের এক জন নারীও যদি তার ধর্ম, বর্ণের কারনে আক্রান্ত হয়, তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ ধর্ষিতা হয়...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
রোজকার খবরের পাতাগুলোতে তাকাতেও এখন ভয় লাগে! না জানি এরপর আর কোন খবর, কোন চমক অপেক্ষা করে আছে... প্রতিবার মনে হয় এর চেয়ে বেশি বুঝি আর সম্ভব নয়, এর চেয়ে বেশি বুঝি আর হবার নয়, বার বার আমার অনুমান হার মানে। আমার খুব প্রিয় দু'জন বন্ধু ছিল হিন্দু, সোমা আর অঞ্জনা। ছোট বেলার বন্ধু। জানিনা এখন তারাই বা কোথায় আছে, কেমন আছে! দিনাজপুরের ঐতিহ্য কান্তজী মন্দিরটার কথা ভেবেও মাঝে মাঝে অস্থির লাগে! ভালো আছে সবাই, সবকিছু... এটুকু ভেবে স্বস্তিতে থাকতে চাই। অনেকটা চোখ বন্ধ রেখে ভাল থাকার মতো...
রংতুলি, আমাদের সবার মল্লিকা’দিরা ভাল থাকুক, নিরাপদে থাকুক আজকের প্রার্থনা এটাই । কিন্তু, আমাদেরকে সচেতন হতে হবে । ধর্মের নামে দেশের নাগরিককে “সংখ্যালঘু” করা যাবে না । বিবেকবান মানুষেরা যদি জায়গাটা ছেড়ে দেয়, তাহলে তো অন্ধকার এসে সেই জায়গাটা দখল করবেই । আমাদের সন্ধ্যা’দি, পরমা’দি, সোমা, অঞ্জনার নিরাপত্তা বিধানের কাজটি আমাদেরকেই করতে হবে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সাম্প্রদায়িক হামলার মুখে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের হাতে। একজন নমিনাল মুসলমান হিসেবেই বলতে বাধ্য হচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা এই দায়িত্ব পালন করতে না পারছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে মুসলমানেরা দাবী করতে পারবে না।
দেশের সকল নাগরিকের জান-মাল-ধর্ম পালন-সম্পত্তির মালিকানা-রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ ইত্যাদি সকল নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব । একই সঙ্গে সচেতন নাগরিক হিসাবে সকল নাগরিকেরও দায়িত্ব মানবাধিকার বিরোধী যে কোন অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া । সেই কাজটি আমাদের প্রত্যেককেই যার যার জায়গা থেকে করতে হবে । সে কাজটি শুধু আজ, কাল, পরশুর না, সব সময়ের । আমাদের মনস্তত্বেও পরিবর্তন আসা উচিত । কেউ “সংখ্যালঘু” না, সবাই দেশের সমান অধিকারের “নাগরিক” ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধন্যবাদ আপনাকে ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে 'সংখ্যালঘু' শব্দটিই অপমানজনক। এই ক্লাসিফিকেশনটা অবৈধ।
ভালো লাগল।
রাষ্ট্রের চোখে সবাই “নাগরিক” ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
নতুন মন্তব্য করুন