রিপোস্ট : 'জানো খোকা তাঁর নাম?'

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: শুক্র, ১১/০১/২০০৮ - ১:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত দলিল
১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভিডিও

জানুয়ারির দশ, ঊনিশশো বাহাত্তর। থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগে শীতকালের ওই দিনে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ তাকিয়ে ছিলো আকাশের দিকে। একবুক ভরা দুরু দুরু তাদের আশা। আনন্দ-অহংকার- শোক-বিষাদ মিলিয়ে বাংলাদেশে সে এক আশ্চর্য সময়।

মাত্র পঁচিশ দিন আগে শেষ হওয়া যুদ্ধে বিজয়-উল্লাসের সঙ্গে মিলেমিশে আছে ক্রমশ-প্রকাশমান হৃদয়বিদারক নিষ্ঠুর গণহত্যা ও স্বজন হারানোর কাহিনী, নির্যাতিত নারীদের নির্মম স্তব্ধতা। এমন একটি পরিবার সেদিনের বাংলাদেশে ছিলো না যেখানে এইসব বিষাদ-বিষণ্নতার গল্প নেই।

নয় মাসের যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত একটি নতুন দেশ। কিন্তু তারপরেও আমরা সেদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কারণ ওই আকাশপথেই আসবেন পরম নিকট অথচ স্বপ্নের একজন মানুষ। তিনিই পারেন কোটি কোটি বাঙালির শোক ও ক্ষতের উপশম ঘটাতে। সবাই জানে, তিনি ফিরে এলে সব হবে। এই দেশ সোনার দেশ হবে, তিনি বলেছেন। রক্তমাংসের মানুষ হয়েও তিনি সেদিন কিংবদন্তীর সমতুল্য। মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনের আগে দশটি মাস বাংলাদেশের এমন কোনো ঘর ছিলো না যেখানে তাঁর জন্যে প্রার্থনার হাত ওঠেনি। প্রার্থনা ছিলো, ফিরে এসো তুমি আমাদের স্বপ্নপূরণের দূত হয়ে।

হায়, দুঃখ এই যে মানুষের প্রার্থনা চিরদিন শুধু প্রার্থনা হয়েই থেকে যায়। পাওয়া হয় না। সেই মহাপুরুষপ্রতীম মানুষটি শেষ পর্যন্ত রক্তমাংসের আরেকজন সাধারণ মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলন কতো অল্প সময়ের মধ্যে!

যে ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস মানুষ অর্পণ করেছিলো তাঁকে সর্বান্তঃকরণে, কী নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলেন নিজেকে তার যোগ্য প্রমাণ করতে! তাঁকে সামান্যতম অসম্মান না করে বা তাঁর অসাধারণ সাফল্যকে মনে রেখেও বলতেই হবে, শেষ পর্যন্ত তিনি একজন ব্যর্থ শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করেছিলেন। মানুষকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি, সকলকে বিশ্বাস করতেন সর্বান্তঃকরণে, মানুষের মঙ্গলচিন্তায় একাগ্র ছিলেন, তাদের দুঃখকষ্টে কাতর হওয়ার গুণও তাঁর ছিলো।

কিন্তু এইসব মানবিক গুণ সফল শাসক হওয়ার প্রতিবন্ধক, তা তিনি জানেননি। কেবলই পিছুটান ও বোঝা হয়ে ওঠে তাঁর বিশাল মমতাময় হৃদয়টি। সফল শাসকদের কিছুটা অনুভূতিনিরপেক্ষ হতে হয়, আবেগ ও যুক্তির ভারসাম্য রচনা করতে হয়। অথচ সেখানেই তিনি বড়ো বেশি মানুষ ছিলেন, মানবিক ছিলেন। ফলে, শেষ বিচারে তিনি দেশের কাণ্ডারী হয়েও থেকে গেলেন শুধুই একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে, স্বপ্নপূরণের কোনো কৌশলই যাঁর জানা নেই।

ব্যর্থতার অনেক কারণ যুক্তি হিসেবে আনা যাবে _ পারিপাশ্বর্িকতা, জগৎ-রাজনীতি, ক্ষমতাবান বিশ্বের কূটতৎপরতা - এসবই সত্যি। কিন্তু তাতে ভুল ও ব্যর্থতার চিহ্নগুলি মুছে যাবে না। বিজয়ীকেই মানুষ বীরের সম্মান দিয়ে থাকে, পরাজিতকে নয়। সেরা খেলোয়াড়টি খেলেনি বলে আমার প্রিয় দল পরাজিত হয়েছে - এই যুক্তি ভক্তের সান্ত্বনা হতে পারে, ফলাফল তাতে পরিবর্তিত হয় না। পাঁচ-দশ বা পঞ্চাশ বছর পরে ফলাফলটিই শিরোনামে থেকে যায়, পরাজয়ের কারণ সেখানে গৌণ।

শেখ মুজিব তাঁর যুদ্ধের প্রথম অর্ধেকটা জিতেছিলেন প্রবল পরাক্রমে। তাঁর সাহস, দেশপ্রেম, সুবিবেচনা, মানুষকে সংগঠিত করার প্রায় অলৌকিক ক্ষমতা, নিয়মতান্ত্রিকতার গণ্ডিতে থেকেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অনিবার্য করে তোলার কৃতিত্ব - এইসব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার সুযোগ নেই। করলে তা শুধুই কুতর্ক এবং দুঃখের কথা, এরকম কুতর্ক করার মতো মানুষের অভাব বাংলাদেশে আজও নেই।

অকালপ্রয়াত আহমদ ছফা শেখ মুজিবের রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন, কিন্তু যুক্তিবাদী বলেই তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হয়েছিলো : "বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত-পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে। ... বস্তুত বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়, 'আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।' ... শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতির মহান স্থপতি এবং একজন মহান পুরুষ। সমস্ত দোষত্রুটি, রাজনৈতিক প্রমাদ এবং সীমাবদ্ধতাসহ বিচার করলেও তিনি অনন্য। শেখ মুজিবুর রহমানের তুলনা স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান।" বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শেখ মুজিবের ভূমিকা অস্বীকার করা মানুষদের সম্পর্কে ছফা তীব্র ও স্পষ্ট ভাষায় লিখেছিলেন : "বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক না থাকার যে লজ্জা, যে গ্লানি, সেটুকু ঢাকার অপকৌশল হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে তারা অক্ষম।"

কিন্তু শেষ পর্বে শেখ মুজিবের অসহায় পরাজয় ও ব্যর্থতা করুণ এবং অবীরোচিত। আজ তাঁকে নিয়ে যে বিতর্ক, বিক্ষোভ, কিছু বিদ্বেষ - তার কারণগুলিও যে অংশত তাঁর নিজেরই তৈরি তা-ও তো অস্বীকার করা চলে না।

সাহস ও বীরত্বের জন্যে মহাপুরুষের সম্মান তাঁর প্রাপ্য। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার ঘটনা পৃথিবীতে প্রতিদিন ঘটে না, সেই অতি বিরল কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেছিলেন। বাঙালির যুগ-যুগান্তরের অবদমিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাটিকে তিনি বাস্তব করে তুলেছিলেন আপন যোগ্যতার বলে। অথচ বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও তাদের হৃদয়ের নিঃশর্ত আস্থা পেয়েও অনেকটা যেন খেলাচ্ছলেই উদাসীন রাজার মতো সব হারিয়ে ফেললেন।

বাহাত্তরের জানুয়ারিতে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে কী না হতে পারতো এই দেশে। তাঁর মুখের কথায় গণআত্মাহুতি দেওয়ার জন্যে কয়েক লক্ষ মানুষ পাওয়া তখন অসম্ভব ছিলো না। সেই সময়টিকে যাঁরা দেখেননি, তাঁদের পক্ষে এটি অনুমান করাও অতি দুরূহ। তবু তিনি ব্যর্থ হলেন। ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্ত নিতে লাগলেন, পিছু হটতে বাধ্য হলেন। মিত্রদের থেকে একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘেরাও হয়ে থাকলেন পরীক্ষিত অবিশ্বস্তদের মধ্যে। তাঁর অসময়োচিত ও নৃশংস মৃত্যু এক অর্থে আত্মহত্যারই শামিল, তিনি নিজেই তা অনিবার্য করে তুলেছিলেন বলে মনে হয়।

বাহাত্তরের জানুয়ারির দশ তারিখেই সম্ভবত এ দেশের মানুষের সর্ববৃহৎ আশাভঙ্গের বীজটি রোপিত হয়েছিলো। ওই দিনের মতো এমন তীব্র একাগ্রতা নিয়ে বাঙালি আর কোনোদিন কারো কাছে কিছুর আশা করেনি। শেখ মুজিবের মতো একজন মানুষ আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে বাঙালির ইতিহাস গৌরব করতে পারে। আহমদ ছফা লিখছেন : "আজ থেকে অনেকদিন পরে হয়তো কোনো পিতা তাঁর শিশুপুত্রকে বলবেন জানো, খোকা, আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যাঁর দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তাঁর ভালবাসা। জানো খোকা তাঁর নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।"

২০০৬

====================

এই লেখাটি সচলায়তনে আগে প্রকাশিত হয়েছিলো। আজ উপলক্ষ আছে বলে নতুন করে পোস্ট করা হলো। যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। নতুন কেউ কেউ আগ্রহী হয়তো হবেন।


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

হে পিতা! আপনি শান্তিতে ঘুমান। আমরা আছি...
---------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

তানভীর এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল। শেখ মুজিব বিষয়ক লেখা দু'তরফেই সাধারণত একপেশে হয়- চরম স্তুতি অথবা চরম বিদ্বেষ। আপনার লেখাটা এর উর্দ্ধে উঠেছে বলেই ভালো লেগেছে।

"স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"-এ অমোঘ বাণীটি হয়ত স্বাধীনতা পরবর্তীতে বংগবন্ধু বিস্মৃত হয়েছিলেন, যার ফল আমরা আজো ভোগ করে চলেছি। কিন্তু আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্যই সবসময় একাত্তর এবং তার পূর্ববতী শেখ মুজিবকে মনে রাখব, যাঁর নিরন্তর সংগ্রামের ফলেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম তরান্বিত হয়েছিল। এ অবদান কখনো, কোন কিছুতেই ম্লান হবে না। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর ব্যর্থতা না হয় আমাদের দুর্ভাগ্যেরই অংশ হয়ে থাক।

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমিও একমত। লেখাটা ব্যালেন্সড। দুঃখ লাগে যে ৭২ এর মত ৯০ এও এরকম একটা সম্ভাবনাময় সময় এসেছিলো যা আমরা কাজে লাগাতে পারি নি। সাধারণ মানুষ তাদের প্রাত্যহিক সমস্যা নিয়েই জেরবার থাকে, তারাও যখন বাইরে বের হয়ে আসে তখনই সাধারণত নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। আবার কি সেরকম হবে......

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

নিঝুম : অনেক ধন্যবাদ।

তানভীর : স্তুতি বা বিদ্বেষের চরমে যাওয়া সম্ভব হয় তখনই যখন মাথাটি কারো না কারো কাছে বন্ধক রাখা হয়। আমার সে যোগ্যতাই নেই।

স্নিগ্ধা : বাংলাদেশে, বিশেষ করে এক ধরনের বাঙালির চোখে ব্যালান্সড হওয়ার অর্থ হলো "সুশীল" যা আজকাল গালিতে পরিণত হয়ে গেছে। কোনো পক্ষ না নিলেই সুশীল! ব্যাপারটা আমার কাছে দুর্ভাগ্যজনক লাগে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

আবার পড়লাম...


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

নিঘাত তিথি এর ছবি

ভালোবাসা-আবেগ আর যুক্তির মিশেলে চমৎকার একটি লেখা। ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই।
...তবু সব ছাপিয়ে ভালোবাসা আর নিবিড় শ্রদ্ধাই উপচে ওঠে আমাদের অস্তিত্ত্বে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভালোবাসা আর নিবিড় শ্রদ্ধাই উপচে ওঠে আমাদের অস্তিত্ত্বে।

এই অকিঞ্চিৎকর রচনাটি ওইটুকুই দিতে পারে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই লেখাটির জন্য। যখন দেখি একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখছে তখন ভালোলাগে! বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি তিনি মানুষ বলেই, অতি মানব বা মহাপুরুষ হলে তাকে আমি অন্তত ভালবাসতে পারতাম না, যেমন কখনো ভালবাসতে পারিনি কোন মহাপুরুষ বা মহিয়সীকে! বঙ্গবন্ধুকে যে মাসে হত্যা করা হলো তার পরের মাসে, একধরনের ডিপ্রেশনের মাঝে জন্ম আমার! ছোটবেলাথেকে আজ অব্দি যা কিছু জেনেছি তার সম্পর্কে তাতে তার সমস্ত দোষগুন ছাপিয়ে যে সত্যটি আমার কাছে ধ্রুব হয়ে উঠে তা হলো, এত বড় আশ্রয়স্থল আর কোথায় পাব আমরা? আমার পরলোকগত বাবা যেমন তার সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমার গোটা হৃদয়জুরে থাকেন তেমনি আছেন তিনিও! তাই আজও যখন আহমদ ছফার লেখাটি আবারো পড়ি ("আজ থেকে অনেকদিন পরে হয়তো কোনো পিতা তাঁর শিশুপুত্রকে বলবেন জানো, খোকা, আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যাঁর দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তাঁর ভালবাসা। জানো খোকা তাঁর নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।") আমার অশ্রু সংবরন করাটা কষ্টকর হয়ে দাড়াঁই! এই কষ্টের গায়ে লবন ছিটানো হয় যখন আজকের হাসিনার দল আওয়ামিলীগের অধিকাংশ নেতা 'বঙ্গবন্ধু' 'জয়বাংলা' আর 'বাঙ্গালী' শব্দগুলোকে নিজেদের দলের একচ্ছত্র পেটেন্ট করে নেয়! আর হাসি পাই, যখন মুক্তবুদ্ধির দাবীদার অনেকে (ডান কট্টরপন্থীদের কথা বাদই দিলাম) বাঙ্গালীর মুক্তিসংগ্রামে অর্জিত এসব সিম্বলকে দলীয় স্লোগান বলে অস্বীকার করেন বা এড়িয়ে যান! তবে যার যাই ইনটেনশন হোক না কে, বাংলাদেশের মানচিত্র যতদিন থাকবে এই পৃথীবির বুকে ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন আমাদের প্রাণের সাথে মিশে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এত বড় আশ্রয়স্থল আর কোথায় পাব আমরা?

সত্যিই আর পাবো না।

অনেক ধন্যবাদ আপনার আবেগটুকু প্রকাশ করার জন্যে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আচ্ছা, আওয়ামীলীগ কি করে 'জয় বাংলা' ও জয় বঙ্গবন্ধু'র পেটেন্ট নিলো? তারা এই শ্লোগান তো দেয়ই, ঠিক আছে ।
কিন্তু অন্য কোন দল এই শ্লোগান দিলে কি তারা বাধা দেয়? তারা কি বলে যে এটা আমাদের পেটেন্ট করা, আমরা ছাড়া আর কেউ এই শ্লোগান দিতে পারবানা...

আমি তো আর কাউরে এই শ্লোগান দিতেই দেখলাম কোনদিন ।

----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ব্যক্তির নামে জয়ধ্বনি না হয় তোলা থাক, কিন্তু 'জয় বাংলা' ধ্বনিটা কীভাবে যে আওয়ামী লীগের বানিয়ে দেওয়া হলো সেটা আমারও বোধবুদ্ধিতে আসে না। 'জয় বাংলা' বললেই আওয়ামী লীগ - এরকম একটা প্রচারণা বরাবর ছিলো, এখনো আছে।

আমরা যারা ৭১-কে প্রত্যক্ষ করেছি তারা জানি এটা সর্বদলের, সর্বশ্রেণীর মানুষের প্রাণের ধ্বনি ছিলো। আজ হয়তো রূপকথার মতো শোনাবে, কিন্তু গুলি খেয়ে মরার আগেও ‌'জয় বাংলা' বলেছে লোকে, এমন ঘটনা খুব বিরল ছিলো না তখন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

একটা ব্যক্তিগত উদাহরন দেয়, ১৯৯৬ সাল, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র ঐক্য গড়ে তুলেছি, তখন শিবির বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, বিশাল বড় ছাত্র জমায়েত (তারিখ মনে নেই), বিভিন্ন দল থেকে বড় বড় নেতারা একে একে ভাষন দিয়ে গেলেন, দূর্ভাগ্যবশত চবি চলচ্চিত্র সংসদের পক্ষে কিছু বলার জন্য ডাকা হলো আমাকে,আমি জয়বাংলা বলে ব্যক্তব্য শেষ করে নামামাত্র ছাত্রলীগের নেতারা হাসতে হাসতে ফোড়ন কাটলেন, 'আজকাল দেখি বামপন্থী পোলাপাইনো আমাদের শ্লোগান দেয়, ভালো ভালো'। আর আমার বামপন্থী বন্ধুরা রীতিমতো বিকেলে পার্টি হাউসে আমাকে কৈফিয়ত চাইলো কেন আমি জয়বাংলা বলেছি। এরপর থেকে আমার উপর এক ধরনের গোয়েন্দা নজরদারী জারি করা হয়......তারপরতো সে পানি বহুদূর গরালো! আমার ছোট্ট পাড়া থেকে শুরু করে বিভাগীয় রাজনীতি সর্বত্রই মুক্তিযুদ্ধের এসব সিম্বলকে দেখেছি শুধুমাত্র দলীয় প্রয়োজনে ব্যবহার হতে ! এমন অনেককেই দেখেছি এসব ব্যাপার এড়িয়ে যান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সিল পিঠে পড়বে বলে! আজকে স্বাধীনতার এত বছর পরও এসব সিম্বলকে সার্বজনীন করতে না পারা অক্ষমতার দায় আওয়ামী লীগের উপরও কম বেশী বর্তায়। তাই ঐ পেটেন্টের কথা এসেছে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এটা একটা ভালো পয়েন্ট । অন্যরা জয়বাংলা শ্লোগান উচ্চারন করছেনা আওয়ামী সীল পড়ার ভয়ে, এই দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপে কি ভাবে?
বরং আমি তো আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানাবো এ কারনে যে অনেক কিছু ছেড়েছে তারা কিন্তু এই শ্লোগান আঁকড়ে রেখেছে । '৭৫ পর্যন্ত তো বামপন্থী রা ও জ়য়বাংলা বলতেন । তারপর কি হলো তাদের?

যারা জয়বাংলাকে আওয়ামী লীগের পেটেন্ট বলে এড়িয়ে যান তাদের তো উচিত নিজেরা আগে এটা উচ্চারন করে আওয়ামী দখলদারীত্ব মুক্ত করা ।

তা না করে কেবল আওয়ামী জুজুর অজুহাত দেখানোটা কেমন অযৌক্তিক মনে হয়, এই আর কি ।

----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধ্রুব হাসান ও হাসান মোরশেদ,
সত্যি কথাটা হলো এই যে, সংকীর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মের ফলেই এই অবস্থাটি তৈরি হয়েছে। আওয়ামীপন্থী এবং বামপন্থীরা সবাই এখানে কমবেশি সামিল। ইচাছায় হোক বা অনিচ্ছায়, 'জয় বাংলা' এবং আওয়ামী লীগ সমার্থক হয়ে গেছে সাধারণভাবে এবং এই মনোভাবটি স্থায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী-বিরোধিতার নামে বামপন্থীদের তত্ত্ব ও কর্মকাণ্ড। এই অবস্থা পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাও কেউ আর করেনি, করে না। আওয়ামী লীগও কখনো এই কথা বলেনি যে, এই নাও, এ আমাদের সবার অর্জন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বের মতোই এ-ও আমাদের প্রত্যেকের।

দুর্ভাগ্যই বটে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আড্ডাবাজ এর ছবি

আবারও পড়লাম। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভালো লাগলো জেনে আমারও ভালো লাগছে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বিলম্বে সংযুক্ত হলো জালাল ভাইয়ের পাঠানো দুটি মূল্যবান দলিল - স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভিডিও।

অসংখ্য ধন্যবাদ, জালাল ভাই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখাটি আবারো ভালো লাগলো। ....

ফেসবুকের প্রজন্ম'৭১ গ্রুপে এই লেখাটি এবং জালাল ভাইয়ের দলিলটির লিঙ্ক দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ বিপ্লব রহমান। এই কর্মটি করার জন্যে আপনাকে বিপ্লব। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ksamin এর ছবি

খুব ভাল বলেছেন ভাই। পড়ে ভাল লাগলো। সত্য ও বাস্তবতা অনেকে স্বীকার করতে চায় না এদেশে। সকল বিরোধ ভুলে গিয়ে এখন আমাদের উন্নয়নের চিন্তা করা উচিত শুধু।
যারা এর বিরোধী, তারাই দেশদ্রোহী, রাজাকার, শত্রু.... যে নামেই ডাকি না কেন...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ, কিন্তু আপনার মন্তব্য ঠিক বুঝতে পারলাম না। বলছেন সকল বিরোধ ভুলে যাওয়ার কথা, তারপরেই '... যে নামেই ডাকি না কেন' ইত্যাদি বলছেন। আমার মাথায় ঢুকছে না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।