• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন - ০১

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: সোম, ২১/০১/২০০৮ - ১২:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেলিম আল দীনের আকস্মিক তিরোধানের পর অনেকটা হতচকিত অবস্থায় একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম। তার সূত্র ধরে হাসান মোরশেদ, ইশতিয়াক রউফ, সুবিনয় মুস্তফী, সৌরভ, নজমুল আলবাবের মন্তব্যে কিছু প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। সাজিয়ে নিলে মূল প্রতিপাদ্যগুলি এরকম:

  • ভাষা আন্দোলনের উত্তরাধিকার হিসেবে যে ধারার সংস্কৃতিচর্চার সূত্রপাত ও বিকাশ ঘটেছিলো, তা থেকে আমরা হয়তো সরে গেছি বা যাচ্ছি (হাসান মোরশেদ/সৌরভ/নজমুল আলবাব)
  • এই চর্চার উত্তরাধিকার হয়তো সংকটাপন্ন, পরবর্তী আইকন হিসেবে যাঁরা উঠে আসছেন তাঁরা কতোটা যোগ্য (হাসান মোরশেদ/ইশতিয়াক রউফ)
  • সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে বাণিজ্যমুখিতা, ব্লগের মতো উন্মুক্ত প্ল্যাটফরমসহ মিডিয়া আউটলেটের আধিক্য বা সুযোগের অবারিত সহজলভ্য সম্ভার(ইশতিয়াক রউফ)
  • “মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যেই মননকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, সেই বন্দোবস্ত অনেকটাই বদলে গেছে। নতুন আর্থ-সামাজিক এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটা জাতির মনন কোন দিকে এবং কিভাবে বদলে যেতে পারে, সেটার টেস্ট কেস বাংলাদেশ।” (সুবিনয় মুস্তফী)

    ******

    এই প্রসঙ্গগুলি নিয়ে একটি আলোচনার সূত্রপাত করার ভার আমার কিঞ্চিৎ অনিচ্ছুক ও অযোগ্য কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই বলে রাখা দরকার, তাত্ত্বিক আলোচনার জন্যে যে মেধা, জ্ঞান, ধৈর্য, একাগ্রতা, অভিনিবেশ এবং চিন্তার ঐক্য ও ধারাবাহিকতা দরকার হয় তার কোনোটাই আমার নেই। এই ধরনের আলোচনায় আমি বড়োজোর কিছু ফোড়ন কাটতে বা পাঁচফোড়ন-মন্তব্য যুক্ত করতে সক্ষম।

    সুতরাং এই রচনা যথাযথ ওজনদার না হয়ে থাকলে তার দায় সম্পূর্ণ আমার। তবে আশা করা যায় যে, মন্তব্য বা প্রাসঙ্গিক পোস্ট এই আলোচনাটিকে সঠিক রাস্তায় তুলে আনতে সক্ষম হবে। সূত্রপাত হিসেবে আমি নিজস্ব বোধ ও অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে আনছি। বলে রাখা ভালো, প্রাসঙ্গিকভাবে অল্পবিস্তর অন্য বিষয় এলেও এই রচনা মূলত সীমাবদ্ধ থাকছে আমাদের মননচর্চার বিষয়ে।

    ******

    ১. হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প থেকে স্টেপ বাদ পড়ে গেলো

    বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বিস্তারের বিষয়টি আমার কাছে খুব প্রতীকী মনে হয়। প্রথাসম্মত ল্যান্ডফোনের বিস্তারের আগেই একেবারে গ্রাম পর্যায়ে মোবাইল ফোন ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। অজ পাড়াগাঁয়ের যে মানুষটির ল্যান্ডফোন ব্যবহার দূরে থাক কখনো চোখে দেখার সুযোগও ঘটেনি, আচমকা তার কাছে আধুনিকতর প্রযুক্তির মোবাইল সহজলভ্য হয়ে উঠলো। অর্থাৎ ধাপে ধাপে যেখানে আমাদের উপনীত হওয়ার কথা, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় অথবা স্রেফ ঘটনাচক্রে তার এক বা একাধিক স্তর টপকে আমরা মগডালে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। একটু পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাবো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই একই ঘটনা ঘটেছে আমাদের জীবনের প্রায় সর্বত্র – রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনচর্যা এবং সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিতে।

    আমাদের ছোটোবেলায় স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প নামে একটি আইটেম থাকতো। অনেকটা দৌড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে লাফিয়ে উঠে এক ধাপ ফেলে দীর্ঘ একটি লাফ দেওয়ার খেলা। বাংলাদেশে এখন হপ এবং জাম্প আছে, স্টেপটি নেই হয়ে গেছে।

    এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে অর্জন আমাদের যতোটুকুই হোক, তা খানিকটা ফাঁপা, অন্তঃসারশূন্য হয়ে থাকছে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকে পড়ে আসছে যে ১৯৭১ সালের এক সুন্দর সকালে কেউ একজন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়ে গেলো। এই স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রাম ও পূর্ব-প্রস্তুতির বিষয়টি নেই করে দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের শিশুরা বড়ো হয়ে উঠছিলো গাপ করে দেওয়া ইতিহাস খেয়ে, সুতরাং তাদের মানসিক পুষ্টি যা হওয়ার তাই হয়েছে। দায় তাদের ছিলো না, পুষ্টি সরবরাহ করা অভিভাবকদের কাজ। সেখানে মারাত্মক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

    ১৯৭২-এ যখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সমাজতন্ত্র কী বস্তু সে সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না তখন তা বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগী হয় একটি আধা-সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত রাজনৈতিক দল ও তাদের গঠিত সরকার। সমাজতন্ত্র গঠনে যে ধরনের রাজনৈতিক কর্মী ও কর্মসূচী দরকার হয় তার কিছুই চাক্ষুষ করা যায়নি তখন। সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব হিসেবে উপস্থিত করা হলো ‘মুজিববাদ’ নামের ঢাউস গ্রন্থ, যা স্তুতি ও অতিভক্তির রসে কার্যত মুজিবকে বাদ দেওয়ার তত্ত্ব হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছিলো। সমাজতন্ত্রমুখী তৎপরতা ও কর্মসূচী বলতে পাওয়া যায় ব্যাংক-বীমা খাত ও প্রধানত পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত কিছু শিল্পকারখানার রাষ্ট্রায়ত্বকরণ যা প্রকারান্তরে লুণ্ঠন ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার উদাহরণ হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পকারখানাগুলিকে সঠিক ও লাভজনক পরিচালনা হয়ে থাকে রূপকথার মতো অধরা। অথচ এর প্রশাসক ও পরিচালকরা নিজেদের ত্বরিৎ ভাগ্য গঠনের সুযোগ পেয়ে যায়।

    ঠিক এর বিপরীতে পাওয়া গেলো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের (তখনকার বিপক্ষের এক ছাত্রনেতা ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, বানর বললেই বোঝা যায় তার একটি লেজ আছে, লেজওয়ালা বানর বলার দরকার হয় না, সমাজতন্ত্র আবার অবৈজ্ঞানিক হয় কী করে?) বিকট তত্ত্ব, যা বিশাল ভুয়া আওয়াজ বলে প্রমাণিত হয়ে শূন্যে বিলীন হয়েছে অল্পকালের মধ্যেই। রুশপন্থী বাম সমাজতন্ত্রীদের ছিলো অহংকার করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও নিবেদিত কর্মী। যা ছিলো না তা হলো শক্ত মেরুদণ্ডের নেতৃত্ব। সুতরাং এই বিশাল আয়োজন থেকে যায় অব্যবহৃত ও ব্যর্থ। আরেকটি ধারা শতভাগে বিভক্ত, এঁদের ছিলো তত্ত্বসর্বস্ব অতিবাম রাজনীতি। এঁরা চিনপন্থী সমাজতন্ত্রী বলে পরিচিত (আমার এক বন্ধুর মতে এঁদের বাঁ দিক শুধু চিন চিন করে), যাদের বাংলা কথাবার্তাও বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের কাছে অনুবাদসাপেক্ষ। একটি উদাহরণ দিই। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকা মারা হতো – ‘শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাল সন্ত্রাস ছড়িয়ে দাও’। কে বা ক’জন এর মর্ম উদ্ধার করতে পেরেছিলো আমার জানা নেই। ফলাফল দাঁড়ায় এই যে, মানুষের কাছে সমাজতন্ত্র দুর্বোধ্য এক ধরনের শংকা।

    তর্কসাপেক্ষ হলেও বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার ফলে এই শিশু রাষ্ট্রটির মধ্যে অকালজন্মের সমস্ত লক্ষণ পরিস্ফুট ছিলো। ফলে এ দেশের মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে যারা যুদ্ধের মাঠে যায়নি অথবা জীবন ও সম্পদের বিচারে অপেক্ষাকৃতভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে সহজে পেয়ে যাওয়ার একটি বোধ সঞ্চারিত হয়েছিলো ধরে নিলে খুব ভুল হয় না। বস্তুত, অবিলম্বে এই শ্রেণীভুক্ত মানুষরা সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাকেন্দ্রগুলিতে দখল বিস্তার করতে শুরু করে। প্রকৃত ও গিল্টি করা মুক্তিযোদ্ধা চেনার উপায়ও আর থাকে না একসময়। বেশুমার অস্ত্রশস্ত্র ভুল হাতে পড়ে যাওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্তৃত্বের জায়গাগুলি বিপন্ন হয়, বন্দুকের কর্তৃত্ব তখন সর্বময়। লক্ষ্য করার ব্যাপার যে, যুদ্ধের অব্যবহিত পরের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, যখন সর্বত্র শুধুই নেই-এর রাজত্ব, হয়তো এই অস্ত্রের দাপট খুব অস্বাভাবিক ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীকালে কতো ধরনের শাসন এলো-গেলো, বন্দুকের দাপট কিছুমাত্র কমানোর কোনো সৎ চেষ্টা দেখা গেলো না। বরং শাসক ও মন্ত্রীবর্গকে প্রকাশ্যে বন্দুকরাজের সমর্থনে কথা বলতে শোনা গেছে।

    প্রচলিত নিয়মের কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা ক্ষমতাসীন রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা সবার মধ্যেই দেখা গেছে। হয়তো এক ধরনের অঘোষিত প্রতিযোগিতাও ছিলো, কে কতো বেশি নিয়মভঙ্গ করার শৌর্য দেখাতে পারে তার প্রতিযোগিতা। সামরিক শাসকদের কথা আলাদা করে বলা হলো না এই কারণে যে, ওই ব্যবস্থাটিকে কোনো নিয়মতান্ত্রিকতার আওতায় আনা সম্ভব নয়। চরিত্রগতভাবেই তা অবৈধ এবং তার কর্মকাণ্ড কিছুমাত্র নিয়ম-কানুন মানবে তা আশা করাও অনুচিত।

    ভুল বা ঠিক যেভাবেই হোক, যে রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়েছিলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো আদর্শগুলিকে সামনে রেখে, অবিলম্বে সেগুলিকে ক্রমাগত বলাৎকার করা হয়েছে অথবা নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যের খাতা থেকে। উত্থান হয়েছে সামরিক শাসনের ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে হেজাবকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ব্যাপক চর্চা হয়েছে। একসময় এই দুই রাহু পরস্পরের সহায়তায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও তার যা কিছু গৌরব ও অর্জন, তার সবটাই মুছে ফেলতে সর্বাত্মক সচেষ্ট থেকেছে। গালগল্পের ইতিহাস স্বাধীনতাযুদ্ধ না-দেখা নতুন প্রজন্মকে ভুল শিক্ষা দিয়েছে।

    এই নৈরাজ্যের মধ্যে নীরবে, প্রায় সবার অগোচরে আরেকটি ক্ষতি সাধিত হয়ে যায়। আমাদের বাল্যকালে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ছিলো, তাদের পাঠাগার ছিলো। ক্লাব ও পাঠাগারের হর্তাকর্তা পাড়ার যুবকরা। এলাকার উঠতি বয়সীদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চাকে, তা যতো কাঁচাভাবেই হোক, উৎসাহিত করতো তারা। বছর বছর নজরুল-রবীন্দ্রজয়ন্তী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। পাড়ার বালক-বালিকাদের রচনা দিয়ে হতো দেওয়াল পত্রিকা। বছরে একটি নাট্যানুষ্ঠানও খুব দুর্লভ ছিলো না। একুশে ফেব্রুয়ারিতে একটি সংকলন প্রকাশ পেতো এদের হাতে। ক্লাবগুলি এলাকার মানুষদের আনন্দ-উৎসব ও বিপদে-সংকটে অক্লেশে ব্যাগার দিয়ে যেতো। এই যুবকদের উদ্যম ও কর্মশক্তি সামাজিক জীবনকে প্রবহমান রাখার একটি উপাদান ছিলো। তারা ছিলো পরিবারের বাইরে উঠতি বয়সীদের জন্যে এক ধরনের মানস-গঠনের অভিভাবক।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এই সামাজিক শক্তির প্রতিষ্ঠানগুলি অযত্নে এবং বেপরোয়া পেশীর দাপটে ক্রমে বিলীন হয়ে যেতে শুরু করে। কিছু হয়তো টিকে ছিলো বা আছে, তা হয়ে উঠেছে অপকর্মের আখড়া। এই যুবকদের এখন পাড়ার কোনো অসুস্থকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পাশে পাওয়া যায় না, তাদের দেখা হয়তো মেলে কোনো হুজ্জতে, কাউকে টাইট দেওয়ার বীরত্বপূর্ণ কাজে অথবা চাঁদা আদায়ের অক্লেশ লাভজনক কর্মে। পাড়ার ক্লাবগুলির দুর্দশার কারণে পরস্পরের ওপর নির্ভর ও আস্থা স্থাপনের সামাজিক বন্ধনটি শিথিল হয়ে গেছে। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাথমিক চর্চাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা স্বীকার করে নেওয়া চলে।

    (চলবে)


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্যাপক, সর্বগ্রাসী লেখা। বাকিটুকুর অপেক্ষায় থাকলাম।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভয় ধরিয়ে দিলেন। শুরু না হতেই "সর্বগ্রাসী"? বাপরে!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জম্পেশ! পরের পর্বের অপেক্ষায়। টপ উদ্ধৃতি - যাদের বাংলা কথাবার্তাও বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের কাছে অনুবাদসাপেক্ষ। হাহা তত্ত্ববাগীশরা যুগে যুগে দেশে দেশে একই!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই একই কথা আরো অনেক প্রসঙ্গে ঘুরেফিরে বলতে হবে পরের পর্বগুলিতে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

একটি চমৎকার লেখার শুরু ।
চীন পন্থিদের মাঝে মাওলানা ভাষানীও পড়েন , এই বিষয়টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অনেকে একমত হবেন না, এমনকি রুষ্টও হতে পারেন, কিন্তু আমার বিবেচনায় স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাসানীর ভূমিকা ও তৎপরতা খুব ইতিবাচক ছিলো না। অন্ধ ভারত বিরোধিতার প্রথম ও প্রধান উদগাতা ছিলেন তিনি, জাসদ ও অন্য কিছু দল বা গোষ্ঠী তা এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজ ইতিহাসের খাতিরে, সত্যের খাতিরে স্বীকার করতে হবে যে এই বিবেচনাবর্জিত ভারত বিরোধিতার জুজু আমাদের ভালো কিছু দেয়নি। তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট 'হক কথা' কাগজটির প্রচারণাও ছিলো অত্যন্ত ক্ষতিকর, এমনকি ধ্বংসাত্মক, যা ৭৫-এর পটভূমি প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশে ভাসানীর একমাত্র সুকৃতি (অবশ্যই আমার ব্যক্তগত মত) ছিলো ফারাক্কা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, যদিও ফারাক্কা লং মার্চ অনেকটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো।

তবে আমি ভাসানীকে কোনো নির্দিষ্ট ধারার রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করতে অনিচ্ছুক। তিনি চিনপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ঠিকই, কিন্তু 'মাওলানা' শিরোপাধারী ও টুপি-পরা কমিউনিস্ট নেতার ধারণাটি মনে হয় এক ধরনের ইউটোপিয়া। তিনি ছিলেন প্রচলিত ধারার বাইরের, নিজের দলের লোকজনের কঠিন সমালোচনা প্রকাশ্যে করতেও তিনি দ্বিধা করেননি। সুতরাং তাঁকে সাধারণ হিসেবের মধ্যে টেনে আনা অনুচিত হবে।

আমি এই লেখায় শুধু সেই সময়ের সাধারণ রাজনৈতিক প্রবণতাগুলি মোটা দাগে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি মাত্র, চুলচেরা বিশ্লেষণ অন্যত্র করা যেতে পারে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পয়েন্ট নোটেড :)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

jorori lekha soro holo,whn I'm on the way....
Train er Net use kore likchi..
colok, pore hole o jog debo.

All the best 2 all

----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

raisul  musafir এর ছবি

ebaro ki train-e bose kono kobita lekha holo naki?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হায় রে নেটের নেশা! ভ্রমণের কালেও রেহাই দেয় না। ;)

অপেক্ষা করছি আপনার শুভ ভ্রমণ-সমাপ্তির জন্যে। মন্তব্য তখনই শুনবো না হয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুমন সুপান্থ এর ছবি

ভালো লাগছে জুবায়ের ভাই ।
গল্প কি আর লিখছেন না ? ' যাই ' র মতো কোন গল্প ? জানেন , আমি এখন ও ' যাই ' এ আচ্ছন্ন হয়ে আছি ! এমন গল্প ক'টা আর লেখা হয়েছে আমাদের দেশে ,,,,,! আমার অভিবাদন নিন জুবায়ের ভাই ।

---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

প্রশংসায় আপনি খুব উদার। অশেষ কৃতজ্ঞতা। তবে প্রকাশ্যে এভাবে বললে সংকুচিত বোধ করি।

গল্প লেখা হয় কম। সচলায়তনে কয়েকটি তোলা আছে। আগ্রহী হলে দেখতে পারেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

জুবায়ের ভাই দারুন পর্যবেক্ষন! পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। "বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এই সামাজিক শক্তির প্রতিষ্ঠানগুলি অযত্নে এবং বেপরোয়া পেশীর দাপটে ক্রমে বিলীন হয়ে যেতে শুরু করে। কিছু হয়তো টিকে ছিলো বা আছে, তা হয়ে উঠেছে অপকর্মের আখড়া।" ...আমাদের শৈশবেও দেখেছি ছিটেফোটা ভালো উদ্যোগগুলো টিকে ছিলো, আমার এখনো মনে আছে ইয়ারলী দেয়াল পত্রিকা আর শীতকালে একটা নাটক মঞ্চস্থ হতোই কিন্তু ধীরে তাও হারিয়ে গেল......উঠতি দলীয় রাজনীতির গুন্ডাদের কাছে আমরা হারিয়ে গেলাম একসময়! এরপরও যা একটু আদটুকু চর্চা বেচেঁ ছিলো তা একেবারে পারিবারিক পরিমন্ডলে! যাক দ্বিতীয় পর্বটি ছাড়ুন জলদি!
"রুশপন্থী বাম সমাজতন্ত্রীদের ছিলো অহংকার করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও নিবেদিত কর্মী। যা ছিলো না তা হলো শক্ত মেরুদণ্ডের নেতৃত্ব। সুতরাং এই বিশাল আয়োজন থেকে যায় অব্যবহৃত ও ব্যর্থ। আরেকটি ধারা শতভাগে বিভক্ত, এঁদের ছিলো তত্ত্বসর্বস্ব অতিবাম রাজনীতি। এঁরা চিনপন্থী সমাজতন্ত্রী বলে পরিচিত (আমার এক বন্ধুর মতে এঁদের বাঁ দিক শুধু চিন চিন করে), যাদের বাংলা কথাবার্তাও বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের কাছে অনুবাদসাপেক্ষ। একটি উদাহরণ দিই। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকা মারা হতো – ‘শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাল সন্ত্রাস ছড়িয়ে দাও’।"......চালিয়ে যান দাদা।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমাদের শৈশবেও দেখেছি ছিটেফোটা ভালো উদ্যোগগুলো টিকে ছিলো, আমার এখনো মনে আছে ইয়ারলী দেয়াল পত্রিকা আর শীতকালে একটা নাটক মঞ্চস্থ হতোই কিন্তু ধীরে তাও হারিয়ে গেল......উঠতি দলীয় রাজনীতির গুন্ডাদের কাছে আমরা হারিয়ে গেলাম একসময়!

বাংলাদেশে সর্বপ্রকার শুভ উদ্যোগ ও কর্ম বাধাগ্রস্ত হয়ে এসেছে। ছোটো সামাজিক পরিমণ্ডলের এই গল্পগুলি লিপিবদ্ধ করা গেলে আমাদের সমাজ পরিবর্তনের একটা ছবি উঠে আসতে পারে। আপনার গল্পটি লিখবেন?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সবজান্তা এর ছবি

জুবায়ের ভাই এর লেখার শেষাংশের ক্ষেত্রে ভয়াবহভাবে একমত। বর্তমান তরুন/যুব সমাজ নিয়ে একটা লেখার পরিকল্পনা ছিল ( যদিও তা মোটেই এত বিশ্লেষনমূলক হত না )। আশা করছি, ঐ লেখার আর প্রয়োজন হবে না !

জাঝা । দারুন লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার গল্পটি আমরা জানি না। লিখলে আমরা সবাই তার ভাগীদার হতে পারি। :)

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শেষমেষ ঐ পুঁজিবাদটাই এসে পড়ে ,,, পুঁঝিবাদের সাথে তাল মিলানোটাই যেন টিকে থাকার আরেকনাম হয়ে গেছে!

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পুঁজিবাদ/বিশ্বায়ন হয়তো আংশিক কারণ। আমাদের সমষ্টিগত মনোভঙ্গি ও জীবনচর্যার বিষয়গুলিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়া শুরু করলাম।

কনফুসিয়াস এর ছবি

সাধারণের কাছে বাম রাজনীতির দুর্বোধ্যতার ব্যাপারটা শত ভাগ সত্য। কি বলছি, বা কেনো বলছি- কিছু বুঝে উঠার আগেই মিছিলে স্লোগান দিয়েছি চীনের চেয়ারম্যানের পক্ষে। এই স্মৃতিগুলা ইদানীং কেমন গা শিউরানো অনুভূতি এনে দেয় মনে।
----
অনেক দেরী হলো পড়া শুরু করতে। তবে এবার থেকে সাথেই আছি।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই বিভ্রান্তি আপনার একার ছিলো না, ছিলো আরো লক্ষ মানুষের। আরো বিপদ ছিলো এই যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে (বাম সংগঠনে আরো বেশি) কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয় না। প্রশ্ন করলে প্রশ্নকর্তার আনুগত্য নিয়ে কথা ওঠে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নিঘাত তিথি এর ছবি

পড়া শুরু করলাম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আজই প্রথম এর ছবি

এই লেখাটি পড়তে পারছিনা কেনো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।