এইডা কি করলেন, ওস্তাদ!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: শনি, ২২/০৩/২০০৮ - ২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ ২২ মার্চ কবি আজাদের মৃতু্যর তিন বছর হলো। অসময়ে চলে যাওয়া আমাদের সতীর্থ বন্ধুটিকে স্মরণ করে লেখা পুরনো একটি রচনা সচলায়তনে হাজির করি। সঙ্গে আবিদের লেখা একটি কবিতা।


এইরকম কথা ছিলো না, ওস্তাদ। তবে কী কথা যে ছিলো, জিজ্ঞাসা করলে কিন্তু বিপদ। দিনতারিখের লেখাজোখা নাই, মুখে বইলা-কইয়াও হয় নাই, এইসব না-লেখা না-বলা চুক্তির বিষয় - হাওয়ায় কথা চালাচালি। আপনে ঠিকই বুঝবেন।

এখন দেশে গেলে আপনের সাথে আরেকবার দেখা হইবো না, ঢাকা শহরের কোনোখানে আপনে আর নাই। 'শিল্পতরু'-র সাইনবোর্ড তখনো হয়তো ঝুইলা থাকবে, কিন্তু আমার আর সেইখানে যাওয়ার উপায় নাই। কার জন্যে আর যাই? আপনেই লিখছিলেন : যে শহরে আমি নেই, আমি থাকবো না ... আর তোমার মনে হবে, আমি নেই।

মনে কিন্তু এখনই হইতেছে। আপনেরা যারা কবিতা-উবিতা লেখেন ওস্তাদ, অনেকদূরের না-জানা না-দেখা জিনিসও ক্যামনে জানি বুইঝা ফালাইতে পারেন! অবাক মানতে হয়। কিন্তু এতো জলদি কাট মারবেন তা একবারও কন নাই, আমরাও বুঝি নাই। বিদায় দেওয়া-নেওয়ার একটা দস্তুর আছে না?

আপনের সঙ্গে একখান বোঝাপড়ার মামলা ছিলো যে! একদিক দিয়া দেখলে তেমন কিছু না, আমার কাছে কিন্তু অনেকখানি। আপনেরে জিজ্ঞাসা করি তারও কায়দা নাই। করলেন কি, ওস্তাদ? এইডা কি কিছু হইলো, আপনেই কন!


আবিদ আজাদের তিরোধানের খবরে কথাগুলো মনে আসে। এই ভাষায়ই কথা হতো। ঢাকায় অনেক কবি-লেখকদের মধ্যে পরস্পরকে ওস্তাদ সম্বোধন করার একটি প্রথা তখন চালু ছিলো, এখনো আছে কী না জানা নেই। আবিদ প্রায় সবাইকেই ওস্তাদ সম্বোধন করতে ভালোবাসতেন, শব্দটি তাঁর তাম্বুলরঞ্জিত ঠোঁটের ডগায় লেগেই থাকতো।

ঢাকা থেকে ছোটো ভাইয়ের ইয়াহু ইনস্ট্যান্ট মেসেজ : 'আমাদের সময়ের একমাত্র পান খাওয়া কবি আবিদ আজাদ আর নেই'!

অসম্ভব! জবাবে এই শব্দটিই টাইপ করি, অনেকটা অজান্তে। জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছিলো?

আসলে অর্থহীন প্রশ্ন। কী হবে আর জেনে? নেই কেন সেই পাখি নেই কেন...? নেই যে, সেটিই সবচেয়ে বড়ো সত্য। বিশ্বাস না হলে কিছু এসে যায় না, মানতে না চাইলেও তা পাল্টাবে না। আবিদ প্রশ্নাতীতভাবে আমার প্রজন্মের সবচেয়ে উজ্জ্বল কবি। তাঁর কবিতা কালের বিচারে টিকে যাবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আমরা আরো অনেকদিন আবিদকে পড়বো, তা নিঃসন্দেহে জানি। কিন্তু আমার বন্ধু, কিছু দূরের হলেও বন্ধুই, আবিদ আর কোথাও নেই।

আবিদের সঙ্গে অনেক বছর যোগাযোগ ছিলো না। দোষ তাঁর নয়, দেশান্তরী আমি আজ ঊনিশ বছর হয়-হয়। কিছুকাল ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন, দুয়েকবার হাসপাতালও ঘুরে এসেছেন, সামপ্র্রতিক কবিতায় সেসব খবর পাওয়া যাচ্ছিলো। তবু চলে যাওয়ার মতো গুরুতর অসুস্থ, তা জানা হয়নি। শুধু আমি কেন, তার ঘনিষ্ঠতমদের একজন মাহবুব হাসান, যিনি শেষদিন পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন, জানালেন আবিদের প্রস্থান আচমকা ও অপ্রত্যাশিত।

তবু শেষ কথা এই, আবিদ চলে গেলেন।


পরিচয় কীভাবে হয়েছিলো মনে পড়ে না। প্রয়োজনই বা কি? সময় ৭৪ বা ৭৫-এর কোনো একদিন। স্থান শরীফ মিয়া বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি-সংলগ্ন এলাকার বাইরে কোথাও হওয়া সম্ভবই নয়। ওই অঞ্চল তখন আমাদের দিনরাত্রির চারণক্ষেত্র - ওখানেই চরি-ফিরি, খাই-দাই গান গাই তাইরে নাইরে না, আড্ডা দিই, যে কোনো বিষয়ে উচ্চকণ্ঠে তর্ক করি। মনে পড়ে, গুটিপোকারূপী সুমন সরকার তখন রূপান্তরিত হচ্ছেন প্রজাপতি আবিদ আজাদ হিসেবে। সেই হালকা-পলকা গড়নের মাঝারি উচ্চতার আবিদ প্রতিভা ও বা কবিত্বশক্তির বিচারে অনেক বড়ো উচ্চতাকেও অতিক্রম করেছিলেন অনায়াসে। গোঁফের তলায় তার মৃদু হাস্যময় মুখ ভোলা যাবে কোনোদিন? চোখেমুখে তখনো সদ্য কৈশোরের সরলতা ও মুগ্ধতা। আমি তাঁকে বলতাম কিশোরগঞ্জের কবি-কিশোর।

কবি আবিদ অসাধারণ অনুভূতিপ্রবণ, হৃদয়-নিংড়ানো আবেগের নির্যাস তাঁর একেকটি কবিতা। একদিন শরীফ মিয়ায় বসে বলেছিলেন, আমরাই পৃথিবীর শেষ রোম্যান্টিক, ওস্তাদ। এমন দিন আসবে যখন রোম্যান্টিকতার নামগন্ধও কোথাও থাকবে না।

তাঁর সঙ্গে কিঞ্চিৎ ঘনিষ্ঠতা হয় শহীদ কাদরী ও মাহবুব হাসানের সঙ্গে মিলিত হয়ে আবিদের বাণিজ্য অভিযানের সময়। সত্তর দশকের শেষভাগে তিন কবির উদ্যোগে আজিমপুর এলাকায় 'ত্রিকাল' নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা পায়। আড্ডার লোভে যাওয়া-আসা হতো। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘায়ু হয়নি, কবিদের বাণিজ্যঘটিত প্রতিভা বিষয়ে সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণাকে সত্য প্রমাণিত করেই। আবিদ অবশ্য হাল ছাড়েননি। আগাপাশতলা কবি হয়েও মুদ্রণ ব্যবসায়ে সফলভাবে টিকে ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুবাদে কিছু স্বপ্নসম্ভবও ঘটে - সাহিত্য পত্রিকা 'কবি' ও 'শিল্পতরু' প্রকাশে এবং প্রকাশনা ব্যবসায় সাফল্যে।

'ত্রিকাল'-এর কালেই আবিদের প্রথম কবিতার বই ঘাসের ঘটনা প্রকাশ পায়। প্রুফ দেখার সময় হানাবড়ির গান (আঘাত করো আঘাত করো দেখবে কিছু নেই...) কবিতাটি আমার ভালো লেগে যায়। আবিদকে জানালে লাজুক কবির ফর্সা মুখ নিমেষে লালচে হয়ে ওঠে - কী যে কন, ওস্তাদ!

বই প্রকাশিত হলে আশ্চর্য হয়ে দেখি, হানাবাড়ির গান কবিতাটি আমাকে উৎসর্গ করেছেন কবি। কোনো কবিবন্ধুর আমাকে কবিতা উৎসর্গ করার ঘটনা সেই প্রথম এবং শেষ। আবিদ আমাকে আবেগাপ্লুত ও কৃতার্থ করেছিলেন। অভিভূত হই ব্যাপারটি নিঃশব্দে ও আমার অজান্তে ঘটেছিলো বলে। অথচ এই নিয়েই তাঁর সঙ্গে একটি বোঝাপড়া আমার বাকি রয়ে গেলো। ঘাসের ঘটনা-র পরবর্তী এক সংস্করণে দেখি হানাবাড়ির গান কবিতার উৎসর্গটি উধাও। কোনো অভিমান বা অনুযোগ নয়, আবিদকে শুধু জিজ্ঞেস করার ছিলো, উৎসর্গ কি ফিরিয়ে নেওয়ার জিনিস, ওস্তাদ?

এই প্রশ্নটি এখন আর করি কাকে? আবিদ যে আমাকে সুযোগ দিলেন না, এটিই বরং অনুযোগ হয়ে থেকে যাক। অনন্তকাল ধরে। ঠিক যেভাবে কিশোরগঞ্জের কিশোর কবির সলজ্জ হাসিমুখ আমার ভিতরে খোদাই হয়ে আছে।


বন্ধুবিয়োগের সংবাদ কবে আর কার কাছে প্রত্যাশিত ছিলো? মৃত্যু অমোঘ ও অনিবার্য জেনেও বন্ধুর মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হওয়া সম্ভব নয়। এইসব মৃত্যু আমার আত্মার একেকটি খণ্ডাংশ ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এক মনুষ্য হৃদয় আর কতোটা নিতে পারে?

বস্তুত সব মৃত্যুই শেষ বিচারে অনাকাঙ্খিত ও শোকময়। তবু প্রায় সমবয়সী বন্ধুর প্রয়াণ আমাদের শেকড় ধরে টান দেয়। এমন বয়সে উপনীত হয়েছি যে আমাদের পূর্বের প্রজন্মের কারো মৃত্যু, তা যতো শোকাবহ হোক, অনেকটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। অথচ আবিদের বিদায় মানে তো আমার কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখার সময় হয়ে যাওয়া - বাকি আর কয় ঘড়ি?

×××××××××××××××××××××××

যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না
আবিদ আজাদ

যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে যুদ্ধ শেষের
ভাঙা-পোড়ো একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমি
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে স্কার্ট-পরা বুড়ি
বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা;
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ ঝুলে থাকবে তছনছ তারের জটিলতা
লতাগুল্মময় ক্রেনের কংকাল, জং পড়া লোহালক্কড় আর হিংস্র
ঘাসের মধ্যে ধু-ধু করবে তোমার জীবন
ভয়ার্ত সব মিলিটারী ভ্যান আর উল্টে থাকা ট্রলির পাশে ক্ষত-বিক্ষত
একটা চাঁদ ওঠা রানওয়ের মতো

তুমি মুখ লুকিয়ে রাখবে গা ছম-ছম করা জ্যোৎস্নায়।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে জনহীন কোন
পেট্রোল পাম্পের দেয়াল ঘেঁষে
একটা মরা শিউলি গাছের মতো বেঁচে থাকবে তুমি
তোমাকে ঘিরে হা-হা করবে নিদাঘ রাত
দেখবে পর্যুদস্ত একটা হেলমেটের ফাঁটল দিয়ে মাথা
তুলছে একগুচ্ছ সবুজ তৃণ
শুনবে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অর্ধডোবা সূর্যাস্তের মতো
আগুনলাগা বিলুপ্তপ্রায় লাউঞ্জ থেকে ভেসে আসছে
প্রেত হাসির শব্দ
আর তোমাকে ঘিরে নামবে এক জোড়া জনশূন্য বুটের স্তব্ধতা।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে প্রতিদিন
দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু হবে তোমার ভোর
সকাল সাতটা থেকে অনবরত টেলিফোনে আসতে থাকবে
'সান স্ট্রোকে'র সংবাদ
তোমার পাশের সাততলা জানলা থেকে লাফিয়ে পড়বে
কোঁকড়া চুলের যুবক
একদিন গলায় খুর চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়বেন সেই বুড়ো
সবুজ রঙের গলাবন্ধ পরে স্টিক হাতে যিনি মর্নিংওয়াকে
বেরুতেন রোজ
একটি কিশোরী তার আব্বার রেজর থেকে লুকিয়ে নেবে ব্লেড
গভীর জ্যোৎস্নাঙ্কিত স্ট্রীটের মাথায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়বে
কালো রঙের একটা গাড়ি
একজন মানুষ শিরীষ গাছের ভিতরে টিপে ধরবে আরকেজন মানুষের গলা
পার্কের ঝরাপাতার উপর সারারাত ধরে শিশিরে ভিজে যাবে
মৃত তরুণীর হাঁটুর ভাঁজ।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে চরম
দুবোর্ধ্যতম হয়ে বেড়ে উঠবে তোমার বিষণ্ণ সন্তান
বার বার ক'রে বদলাতে হবে তার ঝাপসা চোখের চশমার গ্লাস
তুমি তাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে ভোরের ইস্কুলে

কিন্তু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আর কোনদিন ফিরে আসবে না
নীল হাফ প্যান্ট পরা তোমার ছেলে, আসবে না, আসবে না
তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে ইস্কুল বাড়ির সামনে : রাস্তার ওপারে।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে নিয়মিত
দুধের বোতল দিয়ে যাবে গাড়ি
কিন্তু সে দুধে মেশানো থাকবে গুঁড়ো বিষ
তোমার ফ্রিজের ভিতরে মরে পড়ে থাকবে শাদা ইঁদুর
তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বসে থাকবে একটা তেলাপোকা
তার রঙ হবে মারাত্মক রকম লাল
তোমার ওয়ারড্রোবের ভিতর থেকে হ্যাঙ্গার-শুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়বে
মধ্য রাতে কাপড়-চোপড়।
তুমি পালাতে চাইবে পালাতে চাইবে পালাতে চাইবে
ছুটে পালাবে
ছুটবে
ছুটতে ছুটতে তুমি নিচতলার জানালার একখণ্ড পর্দার
মতো আটকে যাবে বার বার
তুমি ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালাবে ঘুমের ভিতর
কিন্তু মৃতশহর শাণিত ক'রে রাখবে তার সমস্ত রাস্তার বালি
তারার ভিতর থেকে সারারাত ধরে খ'সে পড়বে চূন
হঠাৎ লক্ষ লক্ষ হাতের করতালি বেজে উঠবে আতংকিত মোড়ে মোড়ে
দেখবে শাদা ট্রাফিক দাঁড়িয়ে আছে বাজপড়া তাল গাছের মতো
তার হাত দুটো ঝুলছে চাঁদহীন মরা ডালের মতো
চোখের লোমহর্ষক দুটো গর্তের ভিতর দিয়ে চলেছে
বিষাক্ত পিঁপড়ের বাহিনী
তার মাথার ফাটলে গজিয়েছে একটা বটচারা
তোমার ভয়ার্ত চিৎকারে শুধু সেই মৃত ট্রাফিকের লাল
হা-এর ভিতর থেকে উড়ে যাবে একটা বনটিয়া।
যে শহরে আমি থাকবো না সে শহরে
লিফট তোমাকে নিয়ে সোজা নেমে যাবে পাতালে
তোমাকে নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো
পার্কের ধারের খাদে ছিটকে পড়বে বাস

লেকের হাঁসগুলি গুগলির মতো ঠুকরে খাবে মানুষের চোখ
আর খুব বিকাল বেলায় তুমি ক্লান্ত হ'য়ে
ক্লান্ত হ'য়ে
ক্লান্ত হ'য়ে
ফিরবে ঘরে
কিন্তু তোমার ঘরের নিঃসঙ্গ দরোজা
তোমাকে খুলে দেবে হু-হু শীতার্ত প্রান্তর
তোমার সোফা তোমাকে বসতে দেবে না
পাঠিয়ে দেবে বিছানায়
কিন্তু বিছানা তোমাকে শুতে দেবে না
দাঁড় করিয়ে হিমশীতল জানালায়
তুমি বাথরুমে যাবে, শাওয়ার খুলে দিলে ঝরবে রক্ত
তুমি বেসিনে নুয়ে পড়বে, পানির ঝাপ্টা দিতেই মনে হবে
কার গলা যেন পাঠিয়ে দিচ্ছে যক্ষ্মার ফুল
তুমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে,
দেখবে বীভৎস চিড় ধ'রে আছে আয়নায়।
সেই চিড় ধরা আয়নার ভিতরে তারপর ক্রমশঃ
হারিয়ে যাবে তোমার আর্তনাদ
আর তোমার মনে হবে, আমি নেই।


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

আশির দশকে ময়মনসিংহ থেকে যখন ঢাকা আসতাম তখন দু'একবার কবি আবিদ আজাদ-এর সাথে দেখা হয়েছিলো শিল্পতরুতে। এখনও মনে পড়ে সেই ফর্সা পানখাওয়া ঠোঁটমুখ। তাঁর কবিতা আমাকে বেশ নাড়া দিতো।
...এ পোস্টটির মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করে একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পানের রঙে রাঙানো ঠোঁট আর মৃদু হাস্যময় সেই মুখ ভোলা যায়! আবিদের কবিতায় স্বতস্ফূর্ততা আর অনুভূতিপ্রবণতার দিকটা খুব ভালো লাগে আমার।

ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

স্মৃতি সবসময়ই নাড়া দেয়...
কেন কে জানে?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

নাড়া দেওয়া ছাড়া স্মৃতির আর কী কাজ আছে?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

হৃদয় ছুয়ে যাওয়া কবিতা। আমি খুব বেশী জানিনা কবিকে তবে, আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি।

কল্পনা আক্তার

................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এরকম আরো অসংখ্য মন-ছোঁয়া কবিতা আবিদ লিখে গেছেন।

ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তারেক এর ছবি

পোস্টের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এই যে এত এত লেখকের খোঁজ পাই এটাই বোধহয় সচলের কাছ থেকে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

(থার্ড অ্যাটেম্পট এইটা। আধাঘন্টা ধরে চেষ্টা করছি কমেন্ট লিখবার... নেটের কানেকশন কেটে যাচ্ছে বারবার)

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

নেটসমস্যা নিয়েও পড়ে মন্তব্য করার জন্যে কৃতজ্ঞতা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখাটি পড়েছিলাম আগে।

আমার কৈশোরে আবিদ আজাদ খুব চেনা নাম। দেখা-সাক্ষাৎ কিংবা কবিতায় নয়, রেডিও ম্যাগাজিন 'উত্তরণ' গ্রন্থনা করেছেন 'আবিদ আজাদ' - এ উচ্চারণ প্রায় প্রতি রাতে ভেসে আসতো কানে।

জুবায়ের ভাইকে ধন্যবাদ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

একসময় আবিদ আজাদকে স্বনামে-বেনামে বেতার-টিভিতে প্রচুর স্ক্রিপ্ট লিখতে হয়েছে। মাঝে মাঝে বলতে শুনেছি, এইসব লেখার কোনো মানে হয়? এগুলি লেখার জন্যে আমার জন্ম হয়নি!

কিন্তু কবিদেরও আহার্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান করতে হয়। আমাদের গরিব দেশে কবিরা-লেখকরা সৃজনশীল লেখা লিখে তা উপার্জন করবেন, সে ব্যবস্থা তো নেই!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

কবি আবিদ আজাদের কবিতাটা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! প্রতিটা লাইন যেন আলাদা আলাদা ভাবে অনুভব করতে পেরেছি!

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই কবিতাটি আমার খুব প্রিয়। সত্যিই সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করা যায়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

"সাজিনার বনে কাঁপছে প্রবল পল্লব পলিথিন"

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মন বলে আজ রাজশাহী যাই রাজশাহী যাই
রাজশাহী কে? কোথায় থাকে? সে কি ইংরেজিতে অনার্স পড়ে?
রাজশাহী আর রাজেন্দ্রপুর
এ দুটি কি একই শহর? ...

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ঝরাপাতা এর ছবি

ধন্যবাদ জুবায়ের ভাইকে কবি আবিদ আজাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আর চমৎকার একটা কবিতার স্বাদ উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। সেই সাথে একটা হাহাকার শীর্ষেন্দুর গল্পের সেই লাইনের মতো বাজছে-

গোপাল আর নেই!


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আহা। গোপাল আর নেই! আবিদও না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কোনো কোনো বিয়োগ নিয়ে আসে কিছু যোগ।
এই লেখাটাও তেমনি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার মন্তব্যে মনে পড়ে গেলো, সৈয়দ শামসুল হক তাঁর একটি বইয়ের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন, সকল বিয়োগচিহ্নই একেকটি যোগচিহ্নের শুরু।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।