• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

উপন্যাস : যদি সে ভালো না বাসে – পর্ব ১৩

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: বুধ, ১৬/০৪/২০০৮ - ৯:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৪.৫ জামাল

ছোটো মা কোনোদিন সামান্যতম দুর্ব্যবহার আমার সঙ্গে করেছেন, এমন কথা বলতে পারি না। খাবার টেবিলে নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়ে আমার পাতে কম দেননি কখনো। সুমন-সুখীর জন্যে জামাকাপড় কেনা হলে আমার জন্যেও হয়েছে। তবু কোথায় যেন কী একটা নেই, হয়তো তাঁর ব্যক্তিত্বই ওরকম, খুব কাছে যাওয়া যায় না। ছোটোবেলায় বাবা গ্রামে গেলে তাঁকে সারাক্ষণ কাছে পাওয়া যেতো। এক বাড়িতে বসবাস করতে এসে হয়তো সেরকম মনোযোগ তাঁর কাছে আশা করেছিলাম। কিন্তু বাবার কর্মজীবনের ব্যস্ততা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিলো না। বড়ো চাকরির দায়িত্ব বড়ো, আমি তার কিছু জানতাম না। ফলে, ছুটির দিন ছাড়া বাবার সঙ্গে তেমন দেখাও হয় না।

ওপরতলায় বড়ো বেডরুমে বাবা এবং ছোটো মা থাকেন। আরেক ঘরে সুমন-সুখী। প্রথমদিন ছোটো মা সারা বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন ঘর চাও? ওপরে নিচে যেখানে তোমার পছন্দ।

আমি বেছে নিয়েছিলাম নিচের তলায় কোণের ঘরটি। তখন অন্তত কিছুদিন হয়তো আমি সবার কাছ থেকে একটু দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। সত্যি সত্যি সবার চেয়ে একটু দূরেরই আমি। কিন্তু নিজের ঘরে স্থায়ী হওয়ার পর মনে হতে থাকে, আমি বাইরের একজন। ওরা সবাই ওপরে থাকবে, আমি নিচে। এরকম মনে হওয়ার যুক্তি ছিলো না জানি, তবু ওই বোধটাও সত্যি। মানুষের মন যে কী বিচিত্রভাবে কাজ করে! কিছু আহরিত ও কিছু বানিয়ে তোলা দুঃখের মিলিত পাহাড় তৈরি হয় এইভাবে।

সময় যায়, ঢাকা শহরের সঙ্গে পরিচয় বাড়ে, বন্ধুবান্ধব হয়। বন্ধুরা কেউ কলেজে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কলেজের খাতায় আমার নাম আছে, ক্লাসে যাই না। ইচ্ছে করে না। রাতে ঘুমানোর সময় ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীফ মিয়া, লাইব্রেরি পাড়া আমার স্থায়ী ঠিকানা। হাতখরচের পয়সা যথেষ্ট পাই, কিছু নবাবিও করা চলে। আমি কী করি, পড়াশোনা কেমন হচ্ছে সেসব খবর নেওয়ার কারো দরকার হয় বলে মনে হয় না। বাবা সারাদিনমান কাজকর্ম নিয়ে ছুটছে। ছোটো মা-ও এক কলেজে মাস্টারি করেন, বাকি সময় সংসার ও ছেলেমেয়ের তদারকি নিয়ে থাকেন।

আমি তাঁর নিজের ছেলে হলে সময় হতো কি না কে জানে! আমার অবশ্য তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি আছি আমার মতো। রাতে দেরি করে ফিরলেও কেউ কিছু বলে না, হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমার জন্যে টেবিলে খাবার রাখা আছে। প্রায়ই খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না, একা ডাইনিং টেবিলে বসা যায়! খুব খিদে থাকলে ঠাণ্ডা ভাতই খেয়ে নিই, কাজের লোককে ডেকে গরম করতে বলা যায়। কে করে?

কীভাবে কে জানে, বাবা জানলেন আমি কলেজে যাই না। ডেকে শুকনো গলায় বললেন, কলেজের খাতায় তো নাম কাটা গেছে। প্রাইভেটে বি-কম দিয়ে দে।

আমার সাধ্য কী আদেশ অমান্য করি! পরীক্ষা দিলাম, পাশও হলো। কায়ক্লেশে।

রিনির সঙ্গে দেখা এইরকম সময়ে। বাড়ির কাছে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার, সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারে ছবি দেখানো হয়। যারা এসবের আয়োজন করে, সেই ফিল্ম সোসাইটিগুলিতে আমার ম্যালা বন্ধুবান্ধব। দুটোর মেম্বারও হয়েছিলাম। টিকেট হাতে আসে নিয়মিত। এইরকম একটা ছবির শো শেষে রিনিকে দেখি। সুন্দরী মেয়েকে চোখে না পড়ার কোনো কারণ নেই। আলাপ করতে চাইলে অজুহাতের অভাব হয় না। সুতরাং অবিলম্বে পরিচয়, প্রণয়। আমার বাবা বউ জীবিত থাকা অবস্থায় আবার বিয়ে করেছেন, সুতরাং সেই বাপের ছেলের সঙ্গে রিনির বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি নন। কোর্টে রেজিস্ট্রি না করে উপায় থাকে না। এখন ভাবলে কিছু আশ্চর্য লাগে, রিনির সঙ্গে আমার সম্পর্ক যে টিকবে না, তাঁরা কি আগেই বুঝেছিলেন? কী করে? কিন্তু তাঁদের আপত্তির কারণ তো ছিলো আমার বাবার দুই বিয়ে, জামাই হিসেবে আমার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নয়। তাঁদের কি জানা ছিলো, পিতার পথ পুত্রও অনুসরণ করবে?

বাবা ও ছোটো মা কিন্তু কোনোরকম প্রশ্ন বা আপত্তি ছাড়াই বউকে ঘরে নিলেন। এমনকি বাবা নিজে উদ্যোগ নিয়ে রিনির বাবার সঙ্গে কথা বললেন। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে, এখন সবাই মিলে মানিয়ে নিলে সবদিক থেকে ভালো হয়।

কাজের কাজ কিছু হলো না। বাবা শ্বাস ফেলে বললেন, আমার চেষ্টা করার দরকার ছিলো, করলাম। অন্তত চেষ্টা না করার অনুশোচনা আমার হবে না কখনো।

রিনির সঙ্গে ছোটো মা-র বেশ জমে গেলো। অসমবয়সী সখীর মতো। তাঁকে আর অতো দূরের মানুষ বলে মনে হয় না। বাবারও দেখি রিনি ছাড়া কোনো কথা নেই। ভাবীর ভক্ত হতে সুমন-সখীর বেশি সময় লাগে না। অবস্থা এমন যে আমিই তখন রিনির সবচেয়ে দূরের মানুষ। ঈর্ষা হয়, আর সবাইকে নিয়ে সে ব্যস্ত, আমিই তাকে একা যথেষ্ট পাই না। ঈর্ষার মধ্যে কিছু গর্বও থাকে, বউটা তাহলে খারাপ আনিনি। নূপুর বেজে যায় রিনিরিনি।

ভাবি, আমার মা বেঁচে থাকলে তার সঙ্গে রিনির সম্পর্ক কেমন হতো! ভাবনা একটা ঝলকের মতো দেখা দেয়, বেশিক্ষণ থাকে না। রঙিন স্বপ্নের মতো সুখের দিনে মানুষের যেমন হয়, তখন সব না-পাওয়া ও অতৃপ্তি খুব সুদূর লাগে, প্রিয় মানুষের না-থাকাও বড়ো হয়ে থাকে না। বিয়ের পরের কয়েকটা মাস সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ছিলো।

সুখের দিন স্বল্পকালের হয়। স্কুলে দেখা জাদুকরের কথা মনে পড়ে। আমাকে নিমেষের জন্যে সম্রাট বানিয়ে দিয়েছিলো। এ-ও জাদুবলে সম্রাট শাজাহান বনে যাওয়ার মতো ক্ষণকালের স্বপ্নপূরণ।

বাবা একদিন বললেন, এখানে তোরা আছিস তাতে সত্যিই অসুবিধা কিছু নেই। কিন্তু এখন তোর নিজের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার সময় হয়েছে। কী করবি কিছু ভেবেছিস?

আমি কিছু ভাবিনি। এতো বয়স পর্যন্ত সবসময়ই কারো না কারো দয়ায় এবং ছায়ায় আমার সময় গেছে। ছোটোবেলা থেকে পরগাছা হয়ে আছি, আমার নিজের কিছু নেই। কীসে যোগ্য তা যাচাই করা হয়নি। এসব ভাবতে হবে, তা-ও শিখিনি। কেউ শেখায়নি। আমি উত্তর না দিয়ে বাবার দিকে তাকাই।

বাবা বলেন, আমি চিরকাল থাকবো না। তোর নিজের একটা পরিচয় হওয়া দরকার। নিজের পেশা, নিজের সংসার, ভবিষ্যৎ এইসব ভাবতে হবে। চাকরি-বাকরিতে তোর খুব সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। ভেবে দেখ, কোনো একটা ব্যবসাপত্র করতে পারিস কি না। আগে যেহেতু করিসনি, খোঁজখবর করে কারো সঙ্গে পার্টনারশীপে কিছু একটা করা মনে হয় ভালো হবে। পার্টনারের সঙ্গে থেকে কাজটা শিখতেও পারবি। পুঁজির ব্যবস্থা আমি দেখবো। তবে একটা কথা, টাকা কিন্তু একবারই পাবি। লোকসান দিয়ে পরে আবার টাকা চাইতে আসবি, তখন আমার না করা ছাড়া উপায় থাকবে না। কারণ অফুরন্ত টাকা আমার নেই। সুতরাং যা করবি, সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বুঝেশুনে।

সময়টা সঠিক ছিলো মনে হয়। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা সিদ্দিক, আশরাফ আর তপন একটা অফসেট প্রিন্টিং প্রেস করার চেষ্টায় আছে। ঢাকা শহরে তখন অফসেট প্রেস হাতে গোনা। আমি তাদের চতুর্থ পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দিলে তাদের সাগ্রহ সম্মতি পাওয়া যায়। বস্তুত, ব্যাংকের লোন নেওয়ার জন্যে তাদের যে পরিমাণ পুঁজি দেখাতে হবে সেখানে কিছু ঘাটতি ছিলো। আমার কাছ থেকে টাকা এলে তা আর সমস্যা থাকে না। এই ব্যবসা সম্পর্কে আমার কিছুমাত্র ধারণা নেই। সেই সময়ে কোনোকিছুরই কোনো অভিজ্ঞতা আমার ছিলো না। ভরসার কথা, আশরাফের পৈত্রিক ব্যবসা ছিলো প্রকাশনা, সেই সুবাদে ছাপাখানার সঙ্গে পরিচয় ঘনিষ্ঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি প্রেসে কাজ করার অভিজ্ঞতা সিদ্দিকের হয়েছিলো। তপন ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে, সাধারণ ব্যবসাবুদ্ধি ও তা পরিচালনার ধারণা তার ভালোই আছে।

আনাড়ি বলতে এক আমি। তারা ভরসা দেয়, অতো চিন্তার কী আছে? বুঝে নিতে কোনো সময়ই লাগবে না দেখিস।

(ক্রমশ)


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

আপনি আসলেই গল্প দাদু।
খুব ভালো লাগছে পড়তে।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

:)

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

উপন্যাস আমার একনাগাড়ে না পড়লে ভাল লাগেনা। তাই পত্রিকা বা অন্য কোথাও ধারাবাহিক ছন্দে উপন্যাস থাকলে পড়িনা। শুরুর দুই চারটি লাইন আগ্রহী করলো পড়তে। যদিও তেরতম পর্ব পড়ছি। তবুও বুঝতে কোন সমস্যাই হল না। উপরন্তু আগাম বিচ্ছেদের সূত্র আগ্রহী করে তুলল পরের ঘটনা জানবার।

ক্যামেলিয়া আলম

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দু'চার লাইন পড়ে যে আচমকা এই পর্ব পড়লেন জেনে খানিক অবাক লাগছে। নিজেই বলেছেন, উপন্যাস আপনি একটানা পড়তে চান। তবু পড়লেন এবং মন্তব্য করলেন, সেজন্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়লাম ।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কাজ আছে।
যেতে হবে।
তবু মনে হচ্ছে আরেকটা পর্ব...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।