৫.২ নিশি
আমার পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে যায়, সবাই এসে পড়েছে দেখতে পাই। বরাদ্দ সম্ভাষণ আসে হিমেলের মুখ থেকে, এই যে মিস লেট লতিফা এসে গেছেন। বাচ্চালোগ তালিয়া বাজাও।
একটা হাসির রোল ওঠে। কীভাবে কে জানে, সবখানে আমার সময়মতো পৌঁছানো হয় না। ইচ্ছাকৃত নয়, যতো চেষ্টা করি ঠিক সময়ে যাবো, কিছুতেই হয় না। ছেলেদের বরাদ্দ লেট লতিফ কথাটা আমার জন্যে হয়েছে লেট লতিফা। গায়ে মাখি না, অভ্যাস হয়ে গেছে।
মেহরীন বলে, ও দেরিতে এলো বলে হাসাহাসি করতে পারলি, সময়মতো এসে পড়লে হতো?
ইরফান সুর করে গায়, নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে, চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাসে।
পিংকি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, এঃ, কী গানের ছিরি। এইসব কারা গাইতো বল তো? শোনে কে?
ইরফান বলে, আমাদের পিতামাতা ও পূর্বপুরুষরা। ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে, আমি বনফুল গো শুনেছিস? শুনলে অজ্ঞান হয়ে যাবি।
আমার দাদা পুরনো গ্রামোফোনে এখনো বাজায়।
মিতালি বলে, তোর গোছগাছ কতোদূর হলো রে?
ওঃ সে আরেক কাহিনী। আমার মা তো পারলে পুরো বাংলাদেশটাই সঙ্গে বেঁধে দেয়। সারাক্ষণ শুধু বলছে, এটা নিবি না, ওটা নিবি না? এই করে করে আমার ঘরে যতো জিনিস জড়ো করেছে, সব নিতে হলে গোটা একটা কার্গো প্লেন ভাড়া করতে হবে।
এই না হলে মা? মেহরীন টিপ্পনি কাটে।
জানিস, কাল মা একটা প্যাকেটে করে সুঁই-সূতা এনে বলে, এটা সঙ্গে নিতে ভুলিস না। আমি বলি, এটা দিয়ে কী করবো? মা বলে, শার্টের বোতাম-টোতাম ছিঁড়ে গেলে লাগাতে হবে না?
হিমেল গম্ভীর মুখ করে বলে, ঠিকই তো। তখন কী করবি?
হিন্দি সিনেমার নায়কের কায়দায় বলবো, বাটন তো কেয়া, মেরা জিন্দেগি হি তো টুট গ্যয়া।
আবার তুমুল হাসি। মেহরীন হাসি সামলে বলে, তুই পারিসও। পাস কোথায় এসব?
আমাদের দলে একজন রেসিডেন্ট কবি আছে, সাব্বির আহসান। আমরা সভাকবিও বলি। সে এবার বলে, আচ্ছা আমরা কি ইরফানকে ফেয়ারওয়েল দিচ্ছি নাকি বিয়ে করাতে নিয়ে যাচ্ছি? একটু দুঃখ-দুঃখ মুখ করে একটা ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরি করা দরকার না?
আমি বলি, একদম ঠিক কথা। এতো হাসিঠাট্টা ঠিক হচ্ছে না।
সাব্বির বলে, কিছুদিন আগে একটা পুরনো বাংলা উপন্যাস পড়ছিলাম। এক বন্ধু বিদেশে চলে যাবে, তাকে বিদায় দিতে গিয়ে আরেক বন্ধু কেঁদে অস্থির। এমন হাসি পায়! মনে হয়, অন্য কোনে গ্রহের কাহিনী পড়ছি। দু'জনই কিন্তু পুরুষ।
কেউ একজন ফোড়ন কাটে, গে নাকি?
হাসির হল্লা ওঠে আরেকবার। সাব্বির বলে, শরৎচন্দ্রের নায়িকাগুলো তো মনে হয় হেভি ডিউটি তোয়ালে ব্যবহার করতো। কথায় কথায় এতো ফোঁত ফোঁত করে কাঁদে, রুমালে কাজ হওয়ার কথা নয়।
ইরফান বলে, তাহলে তোরা কেউ আমার জন্যে একটু কাঁদবি না?
আমি বলি, অতো শস্তা পেয়েছিস? এই যুগের ছেলেমেয়ে আমরা, অতো সেন্টিমেন্টাল নই।
মেহরীন সায় দেয়, আজকের দিনে ওরকম হলে চলে না।
আমি এবার বলি, ইরফান তোর প্লুটো-রিসার্চের কী হলো? সবাইকে বলেছিস?
সাব্বিরর বলে, বলেনি আবার? কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। শালা গেলে বাঁচি, প্লুটো কোথাকার।
হিমেল মন্তব্য করে, ভালো গালি আবিষ্কার করেছিস তো, প্লুটো কোথাকার!
ইরফান বলে, আমার ফেয়ারওয়েলে তোদের মানপত্র পাঠ করার কথা। তা তো করলিই না, আমার পেছনে লেগে গেলি। ঠিক আছে, আমিই জাত-যাওয়া প্লুটোকে নিয়ে একটা মানপত্র পড়ি।
মনে হয় সে তৈরি হয়েই এসেছিলো। পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে বলে, ইন্টারনেট থেকে প্রিন্ট করে নিয়েছি। শোন।
ইরফান পড়তে থাকে, "... বিস্ময়-অব্যয়ের গোটা অভিধান ধামসেও এ অবিচারের ঠিকঠাক হাহাকার বোঝাতে পারবে না বস। প্লুটোর হাতও নেই যে মাথার চুল ছিঁড়বে। মাথায় চুলও নেই অবশ্য। কিন্তু এ কী ধরনের ইল্লুতে কারবার! একটা নিপাট ভদ্রলোক নির্বিবাদী গ্রহ, সূর্যের চেয়ে যোজন যোজন লাজুক দূরত্বে একেবারে ঘাড় নিচু করে রুটিন-মাফিক স্পিন খেয়ে যাচ্ছে, যদ্দিন বলবে হাত কচলে নখ রগড়ে মিনমিনিয়ে ঘুরঘুর করে যাবে, কেউ বলতে পারবে না ছিয়াত্তর বছরে একটি দিনও অ্যাবসেন্ট হয়েছে বা আস্তে কোমর ঘোরাচ্ছিল বা আহ্নিকের সময় বিড়ি ফোঁকে – তাকে স্রেফ কতকগুলো হুমদো লোক একটা সেমিনারের ঘরে বসে কী সব অংবং বকে, গ্রহের আসন থেকে ঝট করে নামিয়ে দিলে! 'অ্যাই ব্যাটা, হ্যাঁ হ্যাঁ, ইউ অ্যাট দ্য ব্যাক, কাল থেকে তুই বামন গ্রহ।' তার মানে? কোনও ব্যাকিং নেই বলে কি যাচ্ছেতাই করবে? কে বামন? যখন সাধ করে চাঁদা দিয়ে সৌরমণ্ডল এঁকে বালকবৃন্দের টেক্সট বইয়ে বিলি করেছিলে, তখন মনে ছিল না? যখন যুগ যুগ ধরে কোশ্চেন পেপারে 'হাউ মেনি প্ল্যানেটস আর দেয়ার ইন দ্য সোলার সিস্টেম' ছেপে গোঁপ পাকিয়ে গার্ড দিচ্ছিলে, তখন মনে ছিল না? প্লুটো কি তোমাদের পায়ে ধরে সাধতে গেছিল যে, বাপ আমার, আপিসটাইমে ভাত জুটছে না, আমায় একটা গ্রহের স্টেটাস দে! সে দিব্যি আপনমনে খেলছে, থাকছে যেন বা মহাশূন্যে গড়গড়ানো আত্মভোলা মার্বেল, কালের কপোলতলে কুচো ক্যাম্বিস বল, আবহাওয়াটাও এয়ারকন্ডিশন করে রেখেছে যাতে আরামে গা জুড়িয়ে আসে, মোদ্দাকথা, 'আমি তোমার নিতন্বে লাগছি না তাই তুমিও আমার নিতন্বে লেগো না'-সূচক প্রচণ্ড শিষ্ট ও শালীন ভাবধারা সমন্বিত নিশ্চিন্দিময় জীবন বিতাচ্ছে। হেনকালে তুমি হেব্বি পাওয়ারের টেলিস্কোপ ফেলিস্কোপ দিয়ে রাতদুপুরে কী দেখলে না দেখলে, আচমকা নিজের ক্যালি বিকশিত করার জন্য তাকে নামধাম দিয়ে গ্রহের শিবিরে ভর্তি করে নিলে। যে, কী কাণ্ডটাই কল্লুম, ফের একটি গ্রহ পেড়েছি। এ বার যখন সে শিরোপাটি হজম করে মনে মনে নিজেকে এই সৌরজগতের একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ভাবতে শিখে গেছে, কালের নিয়মে ঘেমো কলারটিও উঁচু হয়েছে পোয়াটাক, পাশ দিয়ে ইনস্যাট স্যাটাস্যাটের হাই-হ্যালোকে আড়ে চেয়েও দেখে না, বরং বলতে নেই নধর সেক্রেটারিও হয়েছে একটি, তার নাম শ্যারন, কাজ বলতে হ্যাঁ স্যর, হ্যাঁ স্যর বলতে বলতে বসকে প্রদক্ষিণ (প্র-উত্তরও বলা যেতে পারে, কারণ সব প্রশ্নের উত্তরই প্রো-প্লুটো) তখন আচমকা বিনা স্কাইল্যাবে ঘাড়ে টিন পড়ার মতন, ভারিক্কি চাড্ডি লোক খেয়ালখুশির বশে সুমহান রদ্দা মেরে তার মেডেলটি ছিঁড়ে নিলে! যে, যা এবার চরে খা। কেন? না, আমাদিগের ভোটাভুটি হয়েছে। বাহবা রে গণতন্ত্রের মহিমে। তা হলে এবার থেকে এরকমটাই চলবে তো? লোকজন একটা করে সেমিনার বাগাবে, ভাল কেটারারের দেওয়া লাঞ্চের পর হেউহেউ করে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে দুটি দুর্বোধ্য বাক্য আউড়ে যে যার রসুনগন্ধী ডান হস্ত তুলে ভোট-টোট দিয়ে সিদ্ধান্ত লিয়ে লেবে কে অদ্য হইতে বামন? এক দিনের খচাৎ সইয়ে ছাঁটাই হয়ে যাবে মেগাস্টার? এ তাহলে সাপলুডোর বাস্তব গেম? কেউ জানে না কবে কোথায় গণতন্ত্রের সাপ ওৎ পেতে আছে, তুমি দিব্য উড়ছ, চকিতে কোঁৎ, ব্যস সিধে নিম্নন্যাজের তলায়! ..."
উঃ পারেও বটে, পাগল একটা।
সাব্বির না থামালে আরো কতোক্ষণ মানপত্র পাঠ চলতো বলা যায় না। সে হাত তুলে গম্ভীর মুখে বলে, ইরফান, আমার মনে হয় লন্ডনে গিয়ে তোর প্রথম কাজ হবে মাথার নাটবল্টুগুলো চেক করানো।
ইরফান হেসে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই খাওয়ার টেবিলে ডাক পড়ে। যা ভাবা গিয়েছিলো তাই। পুরো টেবিল খাবারে খাবারময়, প্লেট রেখে বসে খাওয়ার জায়গাও খালি রাখা হয়নি।
মিতালি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে, সব খেতে হবে?
খালাম্মা হাসিমুখে বলেন, তাহলে কি শুধু দেখার জন্যে? আমি লাঠি নিয়ে এসে পাহারায় বসছি, দেখি কে না খেয়ে পালায়।
হিমেল ফোড়ন কাটে, খালাম্মা এই পরিমাণ খাবার দিয়ে সোমালিয়ায় একটা পুরো শহরকে বাঁচানো যায়। তার চেয়ে পুলিশ ডেকে আমাদের সবাইকে ধরিয়ে দিলে হয় না?
আমরা প্লেটে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাই। ঘুরে ঘুরে টুকটাক কথা চলে। এক ফাঁকে ইরফান আমার পাশে চলে আসে। নিচু গলায় বলে, তোর সঙ্গে জরুরি কথা আছে।
বলে ফেললেই পারিস।
এখানে হবে না। একা বলতে হবে।
খাওয়া শেষ হলে হলঘরে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। ধূমপায়ী ইরফান আর সাব্বির বারান্দায় চলে যায়। সাব্বির ফিরে এসে বলে, নিশি, তোকে ইরফান বাইরে ডাকছে।
অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেউ কিছু ভাববে না। হয়তো খেয়ালও করবে না।
বারান্দায় গিয়ে দেখি ইরফান আরেকটা সিগারেট ধরাচ্ছে।
কী বলবি, বল।
ইরফান উদাস চোখে সামনের দিকে তাকায়। বলে, যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে আর টের পাচ্ছি, তোকে আমি খুব মিস করবো।
এই কথা বলার জন্যে তুই আমাকে আলাদা ডেকে আনলি?
এবার আমার চোখে চোখ রাখে সে। বলে, হ্যাঁ। বলেছি, তোকে খুব মিস করবো, তোদের সবার কথা কিন্তু বলিনি। সেটা সবার সামনেই বলা যায়।
তাতে কী হলো? আমিও করবো। পাঠান, পাঁঠা আর পাগল সবগুলো ইরফানকেই মিস করবো।
ইরফান হাসে। এতো সুন্দর করে সে হাসতে পারে, কোনোদিন খেয়াল করিনি। বলে, ঠাট্টা নয়। আমি কিন্তু তোর জন্যেই ফিরে আসবো।
একটু চুপ করে থেকে বলে, তুই কি বুঝতে পারছিস পাগলি?
আমি নিশ্চুপ থাকি। মনে মনে বলি, বলিস না ইরফান। আমার খুব ভয় লাগে। চোখের সামনে যা প্রতিদিন দেখি, তাতে আমার আর কিছুই বিশ্বাস হয় না। ভালোবাসাশূন্য একটা সংসার কীভাবে দিনের পর দিন বোঝার মতো বয়ে বেড়ায় আমার বাবা-মা। তারা ভালোবেসে সংসার পেতেছিলো, তার কিছুই আর আজ অবশিষ্ট দেখতে পাই না। তুই প্লুটোর কথা বলছিলি। আমার কাছে বাবা-মার অবস্থা প্লুটোর মতো। তারা নিজেদের জায়গায় আছে এখনো, এককালের গ্রহ, শুধু কৌলীন্য খোয়া গেছে। তুই আমাকে যা বলতে চাস, আমি খুব বুঝি। ভাবিস না আমিও একই কথা তোকে বলতে চাই না। তোর কথা শুনতে আমার ভালো লাগছে, আরো হাজারবার লক্ষবার শুনতে ইচ্ছে করছে। তবু বলি, বিশ্বাস করতে ভয় হয়। আমার নিজেরও বলতে সংকোচ লাগে। কারণ, সংশয় নিয়ে বললে তা খুব ফাঁপা আর অর্থহীন শোনাবে। এই বয়সে আমার এতোকিছু জানার কথা ছিলো না ইরফান, দরকারও কি ছিলো? সুতরাং কোনো প্রতিজ্ঞা নয়, ইরফান, কোনো প্রতিশ্রুতি নয়। জীবন বদলায়, খুব দ্রুতই বদলায়। একদিন সময় বলে দেবে তুই কোথায় থাকবি বা আমি কোথায়। তখন যদি আমরা আবার কখনো এক জায়গায় মিলিত হই, এই তুই আর এই আমি কি তখনো এইরকম করে একই কথা বলতে পারবো, না চাইবো? আমি জানি না। তোরও জানা নেই। থাক এইটুকু রহস্য, অমীমাংসিত হৃদয়-বৃত্তান্ত। যদি কখনো আর দেখা না হয়, কোনোদিন জানবি না, তুই আমার জীবনে প্লুটো হয়েই থাকবি। একটা গ্রহ, যেখানে তোকে জায়গা করে দিয়েছি, সেখানে তুই অনড়, অক্ষয়। বাইরের কারো সিদ্ধান্তে কিছু বদল হবে না, তুই আমার প্লুটো। কতোদূরে চলে যাবি, তখন দূর থেকে দেখবো, হয়তো খালি চোখে দেখাও যাবে না। তবু আমি ঠিক জানবো, দেখতে পাবো।
এইসব ভাবতে চোখ ভিজে ওঠে কেন কে জানে! এইসব সেন্টিমেন্টের কোনো মানে হয়? আমরা না নতুন কালের মানুষ!
মন্তব্য
ভাবতেই পারিনি, এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।
আগের পর্বটাও পড়ে ভেবেছি, মাত্র বুঝি ঘটনা শুরু হতে যাচ্ছে!
সমাপ্তিটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত কিন্তু no complain. অন্যরকম ভাল লাগলো।
প্রথমেই শংকা মোচনের কথা বলি।
১৭তম পর্ব পড়ে মনে হচ্ছিলো - বাকী পর্বে কি সম্ভব হবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান পাওয়া!
সব হয়তো হলো না, তবে - একেবারে শেষে - "এইসব ভাবতে চোখ ভিজে ওঠে কেন কে জানে! এইসব সেন্টিমেন্টের কোনো মানে হয়? আমরা না নতুন কালের মানুষ!"
এ প্রশ্ন যখন আসে তখন প্রজন্ম ব্যবধানে পৌণপূঁনিকতা চলে আসে। কিছু উত্তর পাওয়া হয়তো যায়, এবং পাঠককে ভাবায়।
এবার বলি, সব মিলিয়ে 'যদি সে ভালো না বাসে' কেমন লাগলো।
ব্লগ পাঠকের সুবিধার জন্য ১৮ পর্ব পর্যন্ত কাহিনী বিস্তৃত হলেও এতে মূল পর্ব/পরিচ্ছদ ৫টি।
সবগুলোয় স্বকথন ভিত্তিতে বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে।
১ম পর্বে নিশি,
২য় পর্বে জামাল,
৩য় পর্বে নীলা,
৪র্থ পর্বে জামাল, এবং
৫ম পর্বে নিশি।
ব্লগে খন্ডে খন্ডে পড়ে টুকরো ঘটনার ছোঁয়া পাওয়া যায়। ছোট গল্পের আমেজ থাকে। কখনো ভালো লাগে, কখনো মন খারাপ, কখনো কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন।
প্রতি পরিচ্ছদ নিয়ে আলাদা আলাদা মন্তব্য করেছি আগেই।
কিন্তু, সব পর্ব এক মুঠো করে দেখলে - কেমন লাগে?
আমি বলবো - সুখপাঠ্য; সেটা লেখকের লেখনী দক্ষতা। পাঠক ধরার কারিশমা।
-
একটু তীর্যক নজরে তাকালে দেখি - উপন্যাসটি মূলতঃ জামালের জীবন কাহিনী। অতীত।
জামালকে ঘিরে রাখা মানুষগুলো বর্তমানের হলেও - লেখক জামালকে বর্তমানে নিয়ে এসেছেন খুব কম।
৩য় পরিচ্ছদে নীলাকথায় জামালের কাহিনীর আংশিক পূর্ণতা দেয়, তবে নীলা-জামাল পূর্ণতা পায় না।
৪র্থ পরিচ্ছদের আগে পর্যন্ত মনে হয়েছে লেখক চারা রোপন করছেন সযত্নে, আর তখন পাঠক হিসেবে আশা করি সে চারা বড় হবে।
ডালপালায় গল্প শুনবো আরো। কিন্তু হঠাৎ করে সে কাহিনী আরও অতীতে চলে যায়।
জামালের কৈশোর-যৌবন-বেড়ে ওঠা। গ্রাম থেকে শহরে।
এ কাহিনী মন্থরতা দেয় না, তবে গতি বিচ্যুতি ঘটায় - যখন দেখি সাজিদকে লেখক ভুলে যান।
মনে হয় - জামালের বাবার ২য় বিয়ে অথবা সু্খী-সুমনের গল্পের চেয়ে সাজিদের গল্প শোনা যেতো বেশ। সাথে নিশি-ইরফানের কথা।
তারও আগে পাঠককে ইংগিত দেয়া নীলাঞ্জনা সাহা কীভাবে কেনো নীলাঞ্জনা সুলতানা হয়ে গেলো - সে গল্পও শোনা যেতো।
সহ-গায়ক মূসার সাথে কথা বলার মাতাল ইচ্ছেটা শেষতক কতোটুকু উতল হয়েছিলো সেটাও পাঠক জানে না।
রিনিরও হয়তো অনেক কিছু বলার ছিলো, কিন্তু নিউ ইয়র্কের আড়ালে রেখে লেখক রিনিকে গোপন করে ফেলেন। আমরা পাঠকরা রিনির কাছে যেতে পারি না, অথচ - রিনির ভাবনাগুলোও জানতে পাঠকের ইচ্ছে হয়। রিনিকথা জানলে হয়তো জামালকে আরও ভালো করে চেনা যেতো। শহুরে জামালের মেটামরফসিসও স্পষ্ট হতো।
সব কিছুর সমাপ্তি লেখক টেনে দিবেন, এমনটি বলছি না। বলছি - 'যদি সে ভালো না বাসে' উপন্যাসে এরকম বেশ কিছু জীবন সংকট-সম্ভবনার সূত্র উপকরণ তৈরি করে সূচনাতেই থেমে গেছে।
পাঠক নিজে যখন এসবের সমাধান দিতে পারে না, তখন খানিক অতৃপ্তি ভর করে।
-
উপরের কথাগুলো পাঠক হিসেবে আমার অভিযোগ নয়, অনুযোগ ; এমনটিই বলবো।
ভালোলাগার প্রকাশগুলো প্রায়ই উদার মন্তব্যের প্রলেপ পেয়ে যায়। তাই প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ব্যবধান বয়ানে সমাপনী মন্তব্য ভার করলাম।
অন্যান্য পাঠকের সম্পূরক মন্তব্যে কথকথা আরো বাড়তে পারে।
তবে,
জুবায়ের ভাইকে অভিনন্দন -
ব্লগে আরও একটি সুখপাঠ্য উপন্যাস তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন।
মুগ্ধ পাঠকের ভালোবাসা গ্রহণ করুন, প্রিয় জুবায়ের ভাই।
শেষ করলাম। একটি সুন্দর গল্প উপহার দেবার জন্য ভক্ত পাঠকের শ্রদ্ধা। শিমুলের তুলে ধরা প্যেন্ট গুলো আমারও মনে হয়েছে। মনে হয়েছে উপন্যাসের ব্যপ্তি স্বাভাবিক ভাবে ঘটেনি। গল্প আরো বলার ছিলো। জুবায়ের ভাইয়ের ভাষায় যাকে বলা যায় "বনসাই উপন্যাস"।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
পড়া শুরু করলাম। শেষ পর্ব দিলেন বলেই শুরু করলাম। এক পর্ব পড়ে আরেক পর্বের জন্য অপেক্ষা করাটা খুব কষ্টের। এইবার তাই নিয়ত করেই ছিলাম শেষ হোক আগে পরে পড়বো। যদিও এটা মানতে বেশ কষ্টই হয়েছে। ভুল করে মাঝে একদিন প্রথম পর্বের অর্ধেক পড়ে ফেলেছিলাম। যাইহোক, শুরু হলো পাঠপর্ব...
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শেষ করলাম।
সুখপাঠ্য। ভালো লেগেছে।
কিন্তু মন ভরেনি।
মনে হচ্ছে আরো অনেক কিছু জানার ছিলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
- পুরো গল্পটি পাঠ শেষে, বিশ্লেষণে যাবার কঠিন কাজটা শিমুল করে ফেলেছেন।
আমি কেবল মুগ্ধ পাঠকের লিস্টে নিজের নামটা স্বাক্ষর করে গেলাম!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন